তোমাকে
পর্ব 11.1
আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই অনিমা I সামনের দিকে তাকিয়েই বলল মুনির
কি বললে ? অনিমা হতভম্ব হয়ে গেল I মুনির ওকে এই কথা বলতে এখানে নিয়ে এসেছে এটা ও ভাবতে পারছেনা
মুনির এবার অনিমার দিকে ফিরল তারপর বলল
তুমি ঠিকই শুনেছো
অনিমা চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল তারপর উল্টো দিকে ফিরে হাঁটা দিলো
অনিমা দাঁড়াও
অনিমা দাঁড়ালো না, নেমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো I মুনির এগিয়ে এসে অনিমার হাত ধরল
আমার কথা এখনো শেষ হয়নি I তুমি চলে যাচ্ছ কেন ?
এ ধরনের অবান্তর আলোচনা চালিয়ে নিতে চাইছিনা তাই
কোনটা অবান্তর ?
তোমার কেন মনে হল তুমি দয়া করতে চাইলেই আমি সেটা নেব ?
মুনির অনিমার আর একটু কাছে এগিয়ে এলো I অনিমর মনে হল ওর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে I এই লোকটা এত কাছে আসছে কেন ? কি সমস্যা ?
আমি তোমাকে দয়া করছি না অনিমা তোমার কাছে দয়া চাইছি I তুমি কি দয়া করে আমাকে আমার বাকি জীবনটা তোমার সঙ্গে কাটাতে দেবে ?
অনিমার ভেতর হঠাৎসবকিছু কেমন ওলট পালট হয়ে গেল I বহু বছরের জমে থাকা কান্নাটা দলা পাকিয়ে গলার কাছে উঠে এল I অনিমা দুইহাতে মুখ ঢেকে কান্নায় ভেঙে পড়ল I কি আশ্চর্য এতো কান্না ও জমে ছিল ওর ভেতরে I
মুনির ওকে বাধা দিল না I কাঁদতে দিল I তারপর আস্তে আস্তে ওর কাছে এগিয়ে এলো ওর মাথার উপর হাত রেখে বলল
সব ঠিক হয়ে যাবে I আমি সব ঠিক করে দেবো I আমার উপর একটু ভরসা রাখো I
অনিমা হঠাৎ করে নিজেকে সামলে নিল I চোখ মুছে নেমে যেতে লাগলো I মুনির দেখল অনিমা যেন ঠিক নিজের মধ্যে নেই I এলোমেলো পা ফেলছে I মুনির এগিয়ে গিয়ে ওর হাতটা ধরল I দুজন ট্রেইল এ নেমে এল পাথরের ঢাল বেয়ে I অনিমা বারকয়েক চেষ্টা করল হাতটা ছাড়িয়ে নিতে I মুনির ছাড়লো না I গাড়িতে উঠে ও সারা পথ অনিমা চুপ করে বসে রইল বাইরের দিকে তাকিয়ে I একটা কথাও বলল না I গাড়ি যখন বাড়িতে এসে থামল তখন নেমে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে গেল I দরজাটা বন্ধ করে দিল সশব্দে I মুনির কিছু বলল না I হাসল শুধু একটু নিঃশব্দে I
পর্ব 11.2
একটা গান শোনাবে অনিমা ?
তুমি ব্যান্ডের গান ছেড়ে এসে আমার বোরিং গান শুনতে চাইছো
তোমার গান মোটেও বোরিং না
মুনির যখন অনিমাকে ওর বাসায় নামিয়ে দিয়েছিল তখন দুজনেই একেবারে ভিজে জবজবে I অনিমা বলল
তুমিতো একেবারে ভিজে গেছোI এই অবস্থায় স্টুডেন্টের বাসায় যাবে কি করে ?
আজকে আর যাওয়া হবে না I আমি হলে ফিরে যাবো
এই অবস্থায় এতটা পথ গেলে তোমার ঠাণ্ডা লেগে যাবে I তুমি উপর চলো আমি তোমার কাপড় শুকানোর ব্যবস্থা করে দিচ্ছি
না আজকে আর যাব না
অনিমার প্রচন্ড রাগ হলI ও তীব্র কন্ঠে বলল
ঠিক আছে তুমি চলে যাও
মুনির যাবার জন্য পা বাড়াতে গিয়ে দেখল অনিমা ভেতরে যাচ্ছে না ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে
তুমি ভিতর যাও অনিমা
না আমি যাবো না এখন , এখানে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজবো
জেদ করোনা , কদিন আগেই তোমার জ্বর এসেছিলো
বৃষ্টিতে ভিজলে কি শুধু আমারই জ্বর হবে ?
মনির হাল ছেড়ে দিল I এই অভিমানী মেয়েটার সাথে ও কখনো পেরে ওঠে না
আচ্ছা চলো উপরে যাচ্ছি
ওরা যখন বাসায় ঢুকলো তখন হাসান সাহেব তৈরি হয়ে বের হচ্ছিলেন I অনিমা কে এ সময় এই অবস্থায় একটা ছেলের সঙ্গে বাসায় ঢুকতে দেখে বেশ অবাক হলেন I মুনির ও একটু অপ্রস্তুত হলো I অনিমা খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল
বাবা , ও মুনির আমাদের ক্লাসের সেকেন্ড বয় I ওয়েদার খারাপ বলে আমাকে পৌঁছে দিতে এসেছিল I টুর এর দিন ও আমাকে পৌঁছে দিয়েছিল I
থ্যাঙ্ক ইউ মনির I অনেক কষ্ট করলে I
না আঙ্কেল , কষ্ট কি ? অনিমা আমাদের ক্লাসের এসেট , ওর প্রতি আমাদের একটা রেস্পন্সিবিলিটি আছে I
হাসান সাহেবের ছেলেটাকে খুব পছন্দ হল I যেমন সুন্দর দেখতে তেমনি ভালো রেজাল্ট I
আজকে আমি একটু বাইরে যাচ্ছি I একদিন সময় করে এসো আলাপ করব I অনিমা তুমি আবরারের ঘর থেকে ওকে শুকনো জামাকাপড় এনে দাও I তুমি কিন্তু খেয়ে যাবে মনির কেমন ?
জি অবশ্যই আঙ্কেল I
ঠিক আছে থাকো তাহলে
হাসান সাহেব চলে গেলে অনিমা মুনিরকে শুকনো জামা কাপড় এনে দিল I ওকে চেঞ্জ করতে বলে নিজে ও উপরে চলে গেল চেঞ্জ করতে I
অনিমা দের বারান্দাটা অনেক বড় I একপাশে একটা বড় দোলনা রাখা I মাঝখানে একটা বড় টেবিল I তার উপর অনেকগুলো বনসাই I দেখে বোঝা যায় কেউ খুব যত্ন করে রেখেছে এদেরকে I মুনির চেঞ্জ করে বের হয়ে বারান্দায় অনেকক্ষণ গাছগুলো দেখল I সবকিছুতেই রুচির ছাপ I মুনির টেবিলে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বাইরের বৃষ্টি দেখছিল I ঠিক তখনই অনিমা ঢুকলো কফির মগ নিয়ে I
অনিমাএকটা ফুল ফুল স্কার্ট পড়েছে সঙ্গে সবুজ টপস I একটা লাল রঙের শাল জড়িয়েছে I ওকে দেখতে কিশোরী মেয়েদের মত লাগছে I ভেজা চুলে চিকন আভা I মনির মুগ্ধ হয়ে গেল দেখে I এত স্নিগ্ধ সৌন্দর্য সচরাচর দেখা যায় না I অনিমা মুনির কে কফির মগ দিয়ে রেলিঙে হেলান দিয়ে দাড়াল মুখোমুখি Iমুনির কে এইরকম পোষাকে আগে কখনো দেখিনি অনিমা I মুনির একটা কফি কালারের টিশার্ট পড়েছে সঙ্গে ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট চেক ট্রাউজার I ভেজা চুলগুলো পেছনের দিকে ঠেলে দিয়েছে I ওকে একদম অন্যরকম দেখাচ্ছে I অনিমা ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে থাকলো I দুজনেই মনেই তখন অনেক না বলা কথা ভিড় জমিয়েছে I কেউই কিছু বলতে পারছেনা I অবশেষে মুনির বলল
একটা গান শোনাবে অনিমা
এনি রিকোয়েস্ট ?
না তোমার যেটা ইচ্ছা
উইথ মিউজিক আর উইদাউট ?
না তোমার কন্ঠ এমনি সুন্দর মিউজিক দিয়ে আড়াল করো না
ঠিক আছে I তাহলে আমার একটা প্রিয় গান করছি
অনিমার অনেকদিন থেকে ইচ্ছে করছিল মুনিরকে এই গানটা শোনাতে I আজকে এমন ভাবে পারবে সেটা ও ভাবেনি I অনিমা গান শুরু করলো
এমন দিনে তারে বলা যায়,
এমন ঘনঘোর বরিষায়।
এমন দিনে মন খোলা যায়–
এমন মেঘস্বরে বদল-ঝরঝরে
তপনহীন ঘন তমসায়
এমন দিনে তারে বলা যায়
সে কথা শুনিবে না কেহ আর,
নিভৃত নির্জন চারিধার।
দুজনে মুখোমুখি, গভীর দুখে দুখি,
আকাশে জল ঝরে অনিবার–
জগতে কেহ যেন নাহি আর ॥
সমাজ সংসার মিছে সব,
মিছে এ জীবনের কলরব ।
কেবল আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে
হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব–
আঁধারে মিশে গেছে আর সব
তাহাতে এ জগতে ক্ষতি কার,
নামাতে পারি যদি মনোভার ।
শ্রাবণবরিষনে একদা গৃহকোণে
দু কথা বলি যদি কাছে তার,
তাহাতে আসে যাবে কিবা কার
ব্যাকুল বেগে আজি বহে বায়,
বিজুলি থেকে থেকে চমকায় ।
যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে
সে কথা আজি যেন বলা যায়–
এমন ঘনঘোর বরিষায় –
এমন দিনে তারে বলা যায়।
মনির স্তব্ধ হয়ে গেল গান শুনে I প্রশংসা করতেও ভুলে গেল I ঘোর কাটছে না যেন কিছুতেই I মুনির এর কফি শেষ হয়ে গেছে অনেকক্ষণ I কাপটা নামিয়ে রাখতেও ভুলে গেছে I অনিমা ধীরে ধীরে কাছে এগিয়ে এল I মুনির এর হাত থেকে কাপটা নিয়ে টেবিলের উপর রাখল I অনিমা চলে যাচ্ছে না I ওখানে দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে I মুনির দেখল অনিমা ওর খুব কাছে দাঁড়িয়ে আছে I ওর শরীর থেকে একটা মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসছে I মুনিরএর হঠাৎ খুব ইচ্ছে হলো অনিমাকে একবার ছুঁয়ে দেখতে I খুব ইচ্ছে হলো ওর মুখটা দুই হাতের মধ্যে নিয়ে একটু আদর করে দিতে I হঠাৎ করেই বজ্রপাতের শব্দে মুনির সম্বিত ফিরে পেল I এসব কি ভাবছে ওI এই মেয়েটা ওকে বিশ্বাস করে এখানে নিয়ে এসেছে I ওর বাবা ভরসা করে একা বাড়িতে মেয়েকে রেখে গেছেন I অনিমা ওকে ঘৃণা করবে , কোনদিন ওর মুখ দেখতে চাইবে না I আর এক মুহূর্ত এখানে থাকলে সব ওলট-পালট হয়ে যাবে I মুনির উঠে দাঁড়ালো তারপর বিদ্যুৎবেগে ওর জামা কাপড় নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল I মুহূর্তে চেঞ্জ করে বেরিয়ে বলল আমাকে যেতে হবে I অনিমা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল I মুনির অনিমা থেকে বিদায় নিল না একবার তাকালো পর্যন্ত না আমি যাচ্ছি বলে গেট খুলে বেরিয়ে গেল I অনিমা কিছুক্ষণ ওর যাত্রা পথের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল তারপর দুইহাতে মুখ ঢেকে কান্নায় ভেঙে পড়ল I
লেখনীতে
অনিমা হাসান
( আমি একেবারেই কাঁচা লেখক I লেখালেখির বলতে গেলে কিছুই জানিনা I শুধু লিখে আনন্দ পাই তাই লিখি I তবু খুব ইচ্ছে করে আমার পাঠকেরা সুন্দর সুন্দর কমেন্ট করুক I অনেকে করছেন ও তাদের প্রতি আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা I )