চুপকথা পর্ব-১৬ ১৭

0
1179

#চুপকথা-১৬
Zannatul Eva

কুহু.
তিয়াশ আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। আজকে ওকে অন্যরকম সুন্দর লাগছে। খুব হ্যান্ডসাম দেখতে লাগছে। যদিও ও সব সময়ই হ্যান্ডসাম। কিন্তু তাও আজ একটু আলাদাই মনে হচ্ছে। নাকি আমিই ওকে অন্যভাবে দেখছি! তিয়াশের পরনে স্কাই ব্লু শার্ট। গলায় এ্যাশ কালার টাই, ফরমাল প্যান্ট, পায়ে ব্ল্যাক শু। ছেলেদের ফরমাল ড্রেসে অদ্ভুত রকমের সুন্দর দেখায়। একদম সত্যিকারের পুরুষ মনে হয়। এভাবে অদ্ভুত দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছি কেন আমি? কী অদ্ভুত!
আমি দ্রুত ওর দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম। ও আমার কাছে এসে বলল, বিজি উইমেন অফিস যাচ্ছো?

হুম।

জাহিদ ভাইয়া আর ভাবি কাল আমাদের বাসায় আসবে।

জানি।

তুমি আসবে না?

আমি গিয়ে কী করবো?

তুমি তো কখনও যাও নি আমাদের বাসায়। না মানে গেলে এই সুযোগে মায়ের গলায় গান শুনতে পারতে। মা কিন্তু অসম্ভব সুন্দর গান গায়। তোমাকে শুনিয়েছিলাম না!

হ্যাঁ শুনেছি। আন্টির গানের গলা সত্যিই খুব ভালো। গেলে অবশ্যই শুনবো আমি। তবে আমার এখন ছুটি নেই। যেতে পারবো না।

সমস্যা নেই। তুমি না হয় অফিস করে তারপরই যেও।

তারপর তো ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে যাবে।

রাত হলে কী! ভাইয়া ভাবি তো রাতে থাকবে আমাদের বাসায়৷ তুমিও না হয় থেকে যাবে।

না না তা কী করে হয়! আমি কী করে থাকবো! মা তো একা বাসায় থাকবে। মাকে ছেড়ে থাকতে পারবো না কোথাও। আগে তো আপার ভরসায় রেখে ট্যুরে গিয়েছিলাম নিশ্চিন্তে। কিন্তু এখন আমি ছাড়া আর কে দেখবে বলো মাকে! আমাকেই তো সবটা সামলাতে হয়। আপাকে, ডাব্বুকে ভীষণ মিস করছি। খুব দেখতে ইচ্ছে করে ওদের।

আর আমাকে?

কিছু বললে?

হ্যাঁ, বললাম, সেই জন্যই তো তোমাকে যেতে বলছি। ওদের সাথে দেখাও হয়ে যাবে, তোমার মনও ভালো হয়ে যাবে। আর আন্টিকে রেখে আসবে কেন? ওনাকে নিয়েই তো আসবে। কোনো সমস্যা নেই। মা আন্টিকে ফোন করে ইনভাইট করবে।

দেখি। তুমি কি এদিকে কোথাও যাচ্ছো?

এই তো যাচ্ছি তোমার সাথে।

আমার সাথে?

হ্যাঁ তোমাকে অফিস পর্যন্ত ছেড়ে দিয়ে আসি।

কেন? আমি কি একা যেতে পারি না! প্রতিদিন তো একা একাই যাই। তুমি কেন যাবে আমার সাথে? আচ্ছা তুমি কি সত্যি সত্যিই আমার সাথে যাবে বলে এসেছো?

হুম।

মানে!

তিয়াশ হেসে বলল, আই এম জাস্ট কিডিং। আমি আসলে এদিকে একটা কাজে এসেছি। পথে তোমার সাথে দেখা হয়ে গেল তাই ভাবলাম একটু গল্প করি। আচ্ছা বাই তাহলে এখন। আমার কাজটা ওদিকে। বাসায় দেখা হচ্ছে টাটা।

টাটা।

মায়াবতী হেঁটে হেঁটে ওর গন্তব্যে চলে যাচ্ছে। আর আমি অবাক দৃষ্টিতে ওর চলে যাওয়া দেখছি আর ভাবছি, আজও ওকে বলতে পারলাম না, হ্যাঁ আমি তোমাকে দেখবো বলেই ছুটে এসেছি। তোমাকে একটুখানি দেখার জন্য আমি সেই সকাল থেকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। অনুভূতি গুলো আজকাল বড্ড বেশি বেখেয়ালি হয়ে যাচ্ছে। হুটহাট তোমাকে দেখার জন্য অস্থির হয়ে ওঠে আমার তৃষ্ণার্ত চোখ দুটো। কবে যে বলতে পারবো! আচ্ছা মায়াবতী কি একটুও বুঝতে পারে না যে আমি ওকে ভালোবাসি। শুনেছি মেয়েরা নাকি এক কিলোমিটার দূর থেকেও বুঝতে পারে কোন ছেলেটা তাকে কিভাবে দেখছে। তাহলে মায়াবতী কেন বুঝতে পারছে না আমার মনের কথা!! কুহু যদি আমাদের বাসায় বেড়াতে আসে তখনই ওকে বলে দেবো সবটা। আর লুকিয়ে চুরিয়ে নয়। এবার ওকে জানিয়েই ভালোবাসবো। কিন্তু ও যদি আমাকে না করে দেয়! আচ্ছা, ও কি আমাকে নিয়ে ভাবে? কিভাবে বুঝবো সেটা? আগে তো ও আসুক। তারপর না হয় ওর সাথে কথা বলে বুঝো নিবো সবটা।
__________________

ওরকম একটা ভিখিরি বাড়ির মেয়ের সাথে আমার বোনের ছেলের বিয়েটা দিয়ে দিলে। একবারো আমাদের বংশের মান সম্মানের কথা ভাবলে না তুমি জাহানারা! আমার বিরুদ্ধে গিয়ে আজকাল অনেক কিছুই করছো দেখছি। আবার ওই মেয়েটাকে বাসায় দাওয়াত করে আনার কী আছে অদ্ভুত! শরীফ আহমেদের বোনের ছেলে সে নাকি বিয়ে করলো মধবিত্ত ঘরের একটা ডিভোর্সি মেয়েকে! ছিঃ ছিঃ লজ্জায় আমার মাথা মাটিতে মিশে যাচ্ছে।

লজ্জা তো সমাজের সেসব মানুষদের পাওয়া উচিত। যারা এখনও চোখে কালো চশমা পরে আছে। টাকা-পয়সা দিয়ে কোনো মানুষকে বিচার করা যায় না। আর একটা সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলেই কেউ খারাপ হয়ে যায় না। মেয়েটা খুবই ভালো। জাহিদ খুব সুখীই হবে। ছেলেটা নতুন বিয়ে করেছে। ওর বাবা-মায়ের অনুপস্থিতিতে আমাদেরই তো উচিত সেই দায়িত্বটা পালন করা। একটু আদর যত্ন করে খাওয়াবো ওদেরকে। তুমি এতো রাগ করছো কেন বলতো? সারা জীবন তো তোমার কথাই শুনে এলাম। কখনও কখনও নিজের মনের কথাও শুনতে হয়। আর তাতে যদি কারো ভালো হয় তাতে ক্ষতি কী!

তিয়াশ আমার অবাধ্য হচ্ছে। আমাকে না বলে ও কক্সবাজার বেড়াতে গেল। তারপর কী হলো? বিপদে পড়লো শেষমেষ। এখন তুমিও আমার অবাধ্য হচ্ছো। দেখো কী হয় আবার। বিরক্তিকর। দাওয়াত করেছো ভালো কথা। কিন্তু আমার সামনে নিয়ে এসো না আবার। মন মেজাজ খারাপ তারপর কী থেকে কী বলে ফেলবো ঠিক নেই।

ভালো করে দুটো কথা বললে তোমার তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। জাহিদের শাশুড়িকেও আসতে বলেছি। তুমি যদি ওনার সাথে কথা না বলো কী ভাববেন বলো তো উনি!!

আজকাল নিজে নিজেই বড্ড বেশি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছো তোমরা মা ছেলে মিলে। বিরক্তিকর।
___________________

হ্যালো মা, এই তো এক্ষুনি বের হবো অফিস থেকে। তুমি রেডি হয়ে থাকো আমি এসেই তোমাকে নিয়ে বেরোবো। ঠিক আছে রাখছি।

উফফ কতটা লেট হয়ে গেল! আপাও কতবার ফোন করে ফেলেছে এর মধ্যে। ফাইলটাইল গুছিয়ে তাড়াহুড়ো করে বের হলাম অফিস থেকে। গটগট করে হেঁটে যাচ্ছি। আশেপাশে কোনো রিকশাও দেখতে পাচ্ছি না। মেঘ করেছে হালকা। মনে হচ্ছে যেকোনো সময় বৃষ্টি নামতে পারে। বলতে না বলতেই ঝপঝপ করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। আমি ব্যাগ থেকে ছাতাটা বের করে খুলে মাথায় ধরলাম। সামনে এগিয়ে যাচ্ছি তরতর করে। দাঁড়িয়ে থাকলে চলবে না। রিকশা পেলে ভালো। না পেলে হেঁটেই এগোতে হবে। আমি হেঁটে চলেছি তো চলেছি হঠাৎ করে কালো রঙের একটা গাড়ি সাইড দিয়ে আমার ক্রস করে যাওয়ার সময় একদম কাঁদায় মেখে দিলো আমাকে।

এমনিতেই আমাকে তাড়াতাড়ি বাসায় পৌঁছোতে হবে। তার মধ্যে কাঁদা মেখে আমার মাথাটা গরম হয়ে গেল। আমি জোরে চেঁচিয়ে বললাম, ধীরে সুস্থে গাড়ি চালাতে পারেন না! এভাবে গাড়ি চালালে তো কখন কাকে পিষে দিয়ে যাবেন তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। আজব মানুষ একটা!

গাড়িটা একটু সামনে গিয়ে থামলো। জানালার কাঁচ তুলে রোগা পাতলা মতো একটা ছেলে মাথা বের করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আই এম সো সরি, আই এম সো সরি। এনিওয়ে, হাই আই এম পিয়াশ। আপনি চাইলে আমি আপনাকে ড্রপ করে দিতে পারি।

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here