চুপকথা পর্ব- ২৬

0
1180

#চুপকথা-২৬
Zannatul Eva

তিয়াস.
ছাদে বসে গিটারের তার গুলো নেড়েচেড়ে দেখছিলাম। কিছুতেই গিটারে সুর তুলতে পারছিনা৷ মনে সুর না থাকলে বাইরের যন্ত্রতে কি আর সুর তোলা যায়! কিচ্ছু ভালো লাগছে না৷ এখন মনে হচ্ছে কুহুর সাথে আমার দেখা না হলেই ভালো হতো। ওর সাথে দেখা হওয়ার সব দিন গুলো যদি একটা দুঃস্বপ্ন হতো তাহলে আমি বেঁচে যেতাম।

ইতোমধ্যেই পিয়াস এসে হাসতে হাসতে বলল, ভাই আই এম সো হ্যাপি ভাই। কাদাবতী আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছে। কাল আমাদের দেখা হবে। আমি জানি কুহু আমাকে না করতে পারবে না। আমি ঠিক বলছি তো ভাই?

নিজের ভাইয়ের খুশি দেখে আমার খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু তাও আমি খুশি হতে পারছি না। কেন? কুহু ঠিক কী করতে চাইছে! ও আবার পিয়াসকে আমার কথা বকে দেবে না তো? ওরা দেখা করার আগে আমাকে একবার কুহুর সাথে কথা বলতে হবে।

এই ভাই কী ভাবছো!

পিয়াসের কথায় আমার ভাবনার ঘোর কাটলো। আমি বললাম, কিছু না। অল দ্যা বেস্ট। সবটা ভালো হবে দেখিস।

ঠিক তো? তুমি বলেছো মানে সব ঠিক হতেই হবে। যদিও আমার একটু নার্ভাস লাগছে। কিন্তু আমি আশা ছাড়ছি না। আমার তো কুহুর জন্য একটা গিফট নিয়ে যাওয়া উচিত। কী নিই বলো তো? মেয়েদের কেনাকাটার ব্যাপারে আমার তেমন আইডিয়া নেই। তুমি কিছু আইডিয়া দাও তো।

আমি! আমি কী আইডিয়া দিবো! তোর যা ভালো লাগে নিয়ে যাস৷ মেয়েরা অল্প কিছুতেই অনেক বেশি খুশি হয়। সাধারণ মেয়েরা ছোটছোট জিনিসের মধ্যেই অসাধারণত্ব খুঁজে পায়। কুহু খুব সাধারণ একটা মেয়ে৷ ওকে খুশি করা খুব কঠিন কিছু নয়। তবে সব কিছুর আগে ওকে সম্মান করবি। যেকোনো সম্পর্ক সম্মান এবং বিশ্বাস ছাড়া টিকিয়ে রাখা খুব কঠিন। এগুলো খুব ইম্পর্ট্যান্ট।

দেখেছো তুমি কত সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারো। আমার ঠিক এগুলো আসে না। গুছিয়ে বলতে না পারলে মেয়েরা বুঝবে কী করে বলো। তবে আমি মিস কাদাবতীতে সম্মান করি আর বিশ্বাসও করি। বাকিটা তো আস্তে আস্তে সম্পর্ক গাঢ় হওয়ার সাথে সাথে হয়ে যাবে৷

কে বলেছে তুই গুছিয়ে কথা বলতে পারিস না? এই তো বেশ গুছিয়ে কথা গুলো বললি।

তোমার সামনে তো বললাম। কিন্তু কুহুর সামনে গেলেই তো সবটা ঘেঁটে ঘ হয়ে যাবে। বলতে চাইবো একটা বলে ফেলবো আরেকটা৷

কম বলাই বেটার। আর কুহু এমনিতেও বেশি বকবক করাও পছন্দ করে না। যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকুই বলবি৷ তার বেশি বলার প্রয়োজন নেই। ঠিক আছে?

লাভ ইউ ভাই। তুমি ছাড়া আমার একটা কাজও ঠিক মতো হয় না। ইউ আর মাই আইডল।

হয়েছে এতোটা ফুলালে তারপর দেখবি গ্যাস বেলুনের মতো কোথায় উড়ে গেছি।

আমি সত্যিই বলছি ভাই। বাড়িয়ে বলছি না। বাড়িয়ে বলা যাবে না এটা তো তোমারই কথা।

আমরা দুজনেই হেসে ফেললাম।
_______________________

কুহু.
তিয়াসকে ফোন করে জানিয়ে দিই কাল আমি আর পিয়াস মিট করছি। ও হয়তো খুব খুশিই হবে খবরটা পেয়ে। কারণ ও তো এটাই চায়।

রিং হওয়ার সাথে সাথেই তিয়াস ফোন রিসিভ করলো। ওপাশ থেকে বলল, এক্ষুনি তোমাকে ফোন করতে যাচ্ছিলাম। আরই তোমার ফোন চলে এলো।

কী বোঝাতে চাইছো? আমার আর তোমার মনের খুব মিল?

আমি সেরকম কিছু মিন করিনি। যে কারণে ফোন করতে যাচ্ছিলাম সেটা বলি।

উমহুম বলবো তো আমি। কাল আমি আর পিয়াস দেখা করছি। সেই রেস্তোরাঁয়। যেখানে আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিলো। আর আমি চাই তুমিও পিয়াসের সাথে আসো।

আমি গিয়ে কী করবো তোমাদের মধ্যে!

কেন? ভাইয়ের সাকসেসফুল প্রেমের দৃশ্য দেখবে না? অবশ্য কাল কী হবে সেটা আমি নিজেও বলতে পারছি না। তবে তোমার ধৈর্যের পরীক্ষা হবে এটা বলতে পারছি। সহ্য করতে পারবে তো?

তিয়াস নিচু স্বরে বলল, এখানে সহ্য করার কী আছে! আমাদের মধ্যে তো কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিল না৷ তাহলে এখানে আমার কষ্ট পাওয়া না পাওয়ার তো কিছু নেই।

তাহলে তো তোমার পিয়াসের সাথে রেস্তোরাঁয় আসতেও কোনো প্রবলেম থাকার কথা না। এম আই রাইট?

পিয়াস বলল, নিশ্চয়ই যাব।

আচ্ছা একটা কথা বলো তো।

কী?

তুমি কি সত্যিই আমাকে ভালোবাসো না?

এক কথা কতবার বলতে হবে? আমাদের মধ্যে কখনোই এরকম কোনো কথা হয় নি।

আমি মনে মনে বললাম, কী সুন্দর গুছিয়ে মিথ্যে বলছে! ইচ্ছে করছে ডায়েরিটা ওর সামনে নিয়ে গিয়ে মুখের ছুড়ে মারতে। কিন্তু না আমিও দেখতে চাই ও কতদিন এই কথা গুলো চেপে রাখতে পারে।

আর কিছু বলবে?

কেন? প্রয়োজনের বাইরে কোনো কথা বলা যাবে না তোমার সাথে? নাকি গার্লফ্রেন্ড বারন করেছে অন্য মেয়েদের সাথে ফোনালাপ করতে।

তুমি ভালো করেই জানো আমার কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই।

হ্যাঁ জানি। আমি আরও অনেক কিছুই জানি। এমন কিছু জানি না তুমি কল্পনাও করতে পারবে না।

কী জানো?

আমি বলতে বাধ্য নই।

বলো না। কে জোর করেছে!

আমি তোমাকে জোর করছি না। তুমিই আমাকে জোর করছো। জোর করে তোমার বাইরের জীবনের সাথে আমাকে জড়াতে চাইছো।

পিয়াস খুব ভালো ছেলে। তাই বলেছি।

আর তুমি? তুমি খুব খারাপ? আসলেই তুমি খুব খারাপ একটা মানুষ। তোমার সাথে কথা বলাই উচিত না।

ঠিক আছে ফোনটা রেখে দিচ্ছি তাহলে।

আমি মনে মনে বললাম, পৃথিবীতে এমন ভাই পাগল ছেলে বোধহয় একটাই আছে। যে কিনা নিজের ভাইয়ের জন্য নিজের পছন্দের মানুষটাকে নিজ হাতে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। এতো সহ্য শক্তি তোমার! এখনও তুমি সত্যিটা আমাকে বলছো না। তাহলে আমিও দেখতে চাই তুমি ঠিক কতটা সহ্য করতে পারো।

তিয়াস বলল, চুপ করে আছো কেন?

আমি রাগি স্বরে বললাম, তাহলে কাল দেখা হচ্ছে। রাখলাম।

একথা বলেই আমি ফোন কেটে দিলাম।
____________________

পিয়াস.
দারুণ একটা গিফট চুজ করেছো ভাই। ইউনিক আইডিয়া দেয়ার জন্য তুমিই সেরা। সবাই যেখানে প্রেমিকাকে গোলাপ, রজনীগন্ধা দিয়ে ভালোবাসার কথা বলে সেখানে আমি কিনা কুহুকে ঘাসফুল দিয়ে প্রপোজ করবো! কুহু নিশ্চয়ই খুব অবাক হবে। তবে যাই বলো ভাই এই গিফটটা কিন্তু আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। সবার থেকে একদম আলাদা৷

গিফট কতটা দামী সেটা মেটার করে না৷ কেউ ভালোবেসে যেটাই দিক না কেন সেটাই অনেক বেশি দামী মনে হয়। আর কুহু দাম দিয়ে কোনো কিছু বিচার করে না। মানে যতটুকু চিনেছি তাতে আমার ওকে এরকমই মনে হয়েছে।

আমার থেকে তুমিই বেশি বোঝো মিস কাদাবতীকে। অবশ্য তুমি না বুঝলে তো আমি এতো কিছু করতেও পারতাম না ওর জন্য। পুরো ক্রেডিটই তোমার।

সারাক্ষণ মিস কাদাবতীর গল্প করবি নাকি এবার নামবি! চলে এসেছি আমরা।

ও হ্যা, চলো চলো।
_____________________
ঠিক ঠিক সময়ে তিয়াস এবং পিয়াস দুজনেই রেস্তোরাঁয় এসে পৌঁছালো। আমার একটু দেরি হয়েছে আসতে৷ তিয়াসের চোখে চোখ পড়তেই ও আমার দিক দেখে চোখ ফিরিয়ে নিলো। এমন একটা ভাব করছে যেন ও আমাকে চেনেই না। জীবনে কোনোদিন আমাদের দেখাই হয় নি। এতো রাগ হচ্ছে। ইচ্ছে করছে এক্ষুনি ওর ভাইয়ের সামনে সবটা বলে দিই। কিন্তু বলার পর ঠিক কী গন্ডগোল বাঁধবে সেটা ভেবেই মাথাটা ঘুরছে।

তিয়াস এতোক্ষণ পিয়াসের সাথেই বসে ছিল। আমি আসা মাত্রই ও অন্য জায়গায় গিয়ে বসলো।

আমি কিছুক্ষণ পর পিয়াসকে বললাম, দেখুন আমি আসলে কোনো সম্পর্কে জড়াতে চাই না।

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here