#তোমার_প্রেমে_পড়েছি
#পর্ব_১৫
#Rimy_Islam
কথায় আছে, ‘ দুষ্টু গরুর চেয়ে শূণ্য গোয়াল শ্রেয়।’ সুতরাং এখন তার উচিত সবকিছু নেত্রকে খুলে বলা। এভাবে প্রিয়মকে সুযোগ দিয়ে হাত গুঁটিয়ে বসে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে তাকে না সব খোয়াতে হয়!
নমনীর নাছোড় আবদারে নেত্র বেশ কুপোকাত হয়েছে। ফলস্বরূপ, নমনীকে নিয়ে বেরিয়েছে বি.জি.বি ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে। এদিকে নমনীর মনে চলছে দূরন্ত ঝড়। নেত্রকে সরাসরি বলবে নাকি কথার প্রসঙ্গে ধীরে ধীরে বলবে তা নিয়ে দূর্দিধা। নেত্র বরাবরের মতো পরিপাটি। থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট, সাথে ব্ল্যাক এ্যন্ড হোয়াইট চেক শার্ট। নেত্র সর্বদা কেন এমন বাচ্চাদের মতো প্যান্ট পরে তা এখনো নমনীর কাছে অস্পষ্ট। নেত্র’র চুলগুলো ঠিক পাখির বাসার মতো অগোছালো দেখে হেসে ফেলে নমনী। সেদিকে একবার চোখ কুঁচকে তাকিয়ে ড্রাইভিংয়ে মন দেয় নেত্র। নমনী চোখ বন্ধ করলো। বাড়ি থেকে বেরনো মোটেও সহজ কাজ ছিলো না। তার উপর প্রিয়মের কড়া নজরদারি থেকে কোনো একটা ছুতো নিয়ে পালাতেও দশবার ভাবতে হয়। মাঝে মাঝে তার মনে হয় নেত্র নয়, যেন প্রিয়মই তার হাজবেন্ড। আজও বাড়ির লোকের সামনে নেত্রকে নিয়ে ঘুরতে যাবার কথা বলতে কেউ আপত্তি করেনি। এটাই প্রাকৃতিক। স্বামী-স্ত্রী একটু একান্তে বেরোতে চাইলে দোষের কিছু নেই। সবাই বুঝলেও বুঝলো না প্রিয়ম। তার ভাষ্য মতে, সে থাকতে কেন নমনী এবং নেত্র একা যাবে। সাথে নিতে হবে তাকেও। তবে আজ সাথে ছিলো নেত্র। সে সবটা সামলে নিয়েছে অকপটে।
‘ নেত্র, তোমার চুলগুলো ঠিক করে দেই?’ বলে অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে রইলো নমনী। কথাটা কানে পৌঁছতেই নেত্র তড়বড় পাশ ফিরে বললো,
— কি বলতে? আর একবার বলো তো!
নমনী লাজুক হেসে বললো,
— বলছি চুলগুলো দেই, ঠিক করে?
— অদ্ভুত মুগ্ধতা তোমার মুখের ‘তুমি’ শব্দটায়। তোমাকে বলেছিলাম যে তোমার মুখে ‘তুমি’ বা ‘আপনি’ প্রতিটা ডাকই সুন্দর লাগে। ওইটা ভুলে যাও। ভুল ছিলো সেই ধারণা। আগে কেন বলোনি বলো তো?
— হয়তো বলতে ইচ্ছে হয়নি। আচ্ছা বলো তো, কতটুকু বিশ্বাস করো আমাতে বা আমার কথাতে?
নেত্র বিস্মিত হয়। নমনীর কম্পিত গলার স্বরে রয়েছে অজানা ভীতি। নেত্র ধাঁধায় পড়ে বললো,
— বিশ্বাসের কথা হঠাৎ আসছে কেন? অবিশ্বাসের কিছু কি দেখেছ আমাতে?
— দেখিনি বলে যে দেখবো না এমন তো না। আমি যদি কিছু বলি, বিশ্বাস করবেন? ভয়ংকর কোনো সত্য?
— অবশ্যই।
নমনীর শরীর ঝাঁকি দিয়ে কেঁপে উঠলো। শিরশির করছে হাত-পা। কি করবে সে? বলে দিলে কি হবে তা শুধু ধারণা করতে পারছে। হয়তো পরিস্থিতি আরো খারাপ পথেও এগোতে পারে। সে জানে না কি হবে। নমনী কম্পনরত রয়েই গতকাল ছাদে ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনা খুলে বললো। নেত্র কড়া ব্রেক কষতে একপ্রকার ছিঁটকে পড়ে যেতে লাগতে নমনীকে ধরে নেয় নেত্র। হঠাৎ কি মনে করে আমার গাড়ি ছাড়ে। এবার নমনীর অবাক হবার পালা। এত বড় একটা ব্যাপার শ্রুত হতেও নেত্র এত স্বাভাবিক থাকে কিভাবে? দেখতে দেখতে গাড়ি গন্তব্যে এসে থামে। নেত্র ইশারায় নমনীকে গাড়ি ত্যাগ করতে বলে। নমনী অপকটে মেনে বেরিয়ে এলো বাইরে।
আবহাওয়া মনোরম। বি.জি.বি ক্যাম্পের এই রাস্তাটা এক কথায় মন গলানো। দু’ধারে অসংখ্য গাছপালা। মাঝে সরু রাস্তা। স্থানে স্থানে বসার জন্য সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে। রাস্তা থেকে বেশ দূরে দৃশ্যমান হয় নদীর চর এবং পানি। ওরা ঢালু রাস্তা দিয়ে নেমে হাঁটতে থাকে চরে। নেত্র’র মুখ এখনও ভাবলেশহীন। যা না চাইতেও ভাবিয়ে তুলছে নমনীকে।
— কিছু বলবে কি তুমি? এভাবে চুপ করে থাকার অর্থ আমাকে অবিশ্বাস করা।
নমনী মুখে বিরক্তি ফুটিয়ে বললো।
নেত্র বললো,
— এত কম ধৈর্য্যশীল নারীরা জীবনে উন্নতি করতে পারে না। ধৈর্য্য ধরো। আমি ভাবছি কি করা যায়।
— সারাজীবন ভেবেই চলুন। এদিকে আমি তিক্ত, বিরক্ত হয়ে ঘরছাড়া হবো বলে দিচ্ছি।
চরের পথে প্রচুর বুনো ঝাড় রয়েছে। নেত্র দিক পরিবর্তন করে সেদিকে যেতে নমনী পেছন থেকে হাঁক ছাড়ে।
— ওইদিকে কি হ্যাঁ?
নেত্র জানে তাকে বাঁধা দিবে। সে হেসে বললো,
— কেন সবাই তো যাচ্ছে!
— সবাই যা করে তোমাকে তাই করা লাগবে? এই দিকটা শুনেছি ভালো না। এতদিন এই শহরে থেকেও কিচ্ছু জানো না!
— That’s the point. সবাই যা করে, আমি করি তার বিপরীত। আমি ধৈর্য্য ধরে ভালোটা ভেবে নির্ঝামেলায় সব পার করতে পারদর্শী।
— আমি কি তবে খারাপটা ভেবে করছি? প্রিয়ম সুবিধার ছেলে না। কখনো কি করে বসে, আমি প্রতিটা মুহূর্ত ওর ভয়ে আতঙ্কিত থাকি।
— প্রিয়মকে আমি চিনি। আর যাই হোক খারাপ কিছু করবে না। এখানে তোমাদের দু’জনেরই কোনো দোষ নেই। সেও তোমাকে পছন্দ করার সময় জানতো না এই মেয়েই একদিন তার ভাইয়ের বউ হবে। আর তুমি তো এসব থেকে বরাবরই অজ্ঞাত ছিলে।
নমনী হা হয়ে যায়। নেত্র’র এত জটিল ব্যাপারকে কেমন গোগ্রাসে গিলে নিয়েছে। সে বললো,
— কিন্তু এখন সে তো সব জানে। তারপরও আমার দিকে প্রেয়সীর নজরে তাকালে সেটা অন্যায় নয়?
— অবশ্যই। তার জন্য আমি আছি তো। তুমি আজ, এখন থেকে তেলে নাক ডুবিয়ে ঘুমোবে। বাকিটা আমি দেখে নেবো।
নমনী খুব ভালোমতোই জানে, চোখ বুজে নেত্র’র কথায় ভরসা করা চলে। সে মারাত্মক এক ছেলে! যে ছেলে নিজের পছন্দের মেয়েকে জোর করে তুলে নিয়ে বিয়ে করতে পারে, সে সব পারে।
চলবে……….