তোমার প্রেমে পড়েছি পর্ব-১৬

0
2981

#তোমার_প্রেমে_পড়েছি
#পর্ব_১৬
#Rimy_Islam

যে ছেলে নিজের পছন্দের মেয়েকে জোর করে তুলে নিয়ে বিয়ে করতে পারে, সে সব পারে।

নমনী চা হাতে প্রিয়মের কামরার দিকে এগোচ্ছে। পেছন পেছন আসছে নেত্র। তাই বার বার নমনী পেছন ঘুরে দেখছে আর মনে সাহস সঞ্চার করছে। ঘরের সামনে এসে হঠাৎ সে থেমে যায়। নেত্র বেবাক হয়ে বললো,
— কোনো প্রবলেম? থামলে কেন? যাও!
নমনী দু’পাশে মাথা দুলিয়ে বললো,
— হবে না আমার দ্বারা। ওই ছেলেটাকে দেখলেই রাগ ও ভয় একই সাথে জেঁকে বসে মনে। কিভাবে তার মুখোমুখি হব ?
— হবে হবে। যা বলেছি করো।

নমনী দীর্ঘঃশ্বাস ছাড়ে। তারা দু’জনে এক গভীর পরিকল্পনা করেছে। নমনীকে একা প্রিয়মের ঘরে পাঠানোতে সে যদি ভুল কোনো পদক্ষেপ নেয়, নেত্র হাতে নাতে ধরে ফেলবে। পরবর্তীতে প্রিয়মকে বাড়িছাড়া করাটা কঠিন হবে না। তবে ভয়টা এখন নমনীকে নিয়ে। প্রিয়মের ঘরে গিয়েও এভাবে পেছনে তাকাতে থাকলে পরিকল্পনা সফল হবে না। তাই প্রথমে নেত্র ওকে শান্ত করে। শাড়ির আঁচলে ভালোমতো শরীর ঢেকে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে ছোট্ট হাসি দিতেই নমনীর বুক শীতল হয়ে যায়। ভয়টাও এক নিমেষে কোথায় যেন পালিয়ে যায়। দরজায় বেশিক্ষণ কড়া নাড়তে হলো না। একবার নাড়তে দরজা খুলে যায়। নেত্র একপাশে নিজেকে এমনভাবে আড়াল করে নিয়েছে, যেন প্রিয়মের দৃষ্টিগোচর না হয়। নমনী ঘরের ভেতর ঢুকতেই প্রিয়ম ব্যস্ত হয়ে পড়লো তাকে বসবার জায়গা করে দিতে। সমস্ত ঘর এলোমেলো। কোথাও কোনো জিনিস সুষ্ঠুভাবে রাখা নেই। এমনকি বিছানাটাও অগোছালো দেখে নমনী বিতৃষ্ণা মুখে দাঁড়িয়ে রইলো।
প্রিয়ম আধো হেসে বললো,
— একটু দাঁড়াও।
বলেই বিছানা পরিপাটি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। নমনী দায়সারা গোছে বললো,
— আমি বসবো না। এই চায়ের কাপটা ধরুন। আমি বিদেয় হই।
— এত তাড়া কিসের? ওই বই পাগল নেত্র’র জন্য হয়তো? ওই ব্যাটা বই ছাড়া আর কিছু জানে! না জানে প্রেম- ভালেবাসার গল্প, না জানে বউকে সময় দিতে, না পারে মেয়ে পটাতে। কি দেখে বিয়ে করলে ওকে?
নমনী তীব্র আক্রোশে বললো,
— ঠিকই বলেছেন। নেত্র সব পারলেও আপনার মতো মেয়ে পটানো স্বভাব তার নেই। এই স্বভাবের জন্য আমি ওকে পছন্দ করি। খবরদার ওর সম্বন্ধে খারাপ কিছু বলেছেন তো আমি বাড়ি কাঁপিয়ে চিৎকার দিবো।

প্রিয়ম থতমত ভঙ্গিতে বললো,
— তুমি সবার সাথেই এমন, না-কি শুধু আমার সাথে এমন?
— আপনি বিদায় কবে হবেন?
— স্যরি?
— বলছি নিজ দেশে কবে ফিরবেন?
প্রিয়ম এবার হো হো করে হেসে বললো,
— আমি স্বদেশেই রয়েছি।
নমনী অধৈর্য্য হয়ে বললো,
— জন্ম থেকে যেখানে বড় হয়েছেন, যে সংস্কৃতিতে চলেছেন। ওইটাই নিজ দেশ। এখন অস্ট্রেলিয়াই আপনার দেশ। এবার বলুন কবে যাচ্ছেন?
— তুমি যবে রাজি হবে তবে।
— আমি বিবাহিত। লজ্জার মাথা খেয়ে এসেছেন?
প্রিয়ম আনন্দিত স্বরে বললো,
— যেদিন থেকে তোমাকে দেখেছি সেদিন থেকে লজ্জা ভুলে গেছি। আর কিছু?

নমনী আছাড় দেবার ভঙ্গিতে টেবিলের উপর চায়ের কাপ রাখতে তা থেকে খানিক চা পড়ে যায়। কিছু গরম চায়ের ছিটে জুড়ে বসে নমনীর কোমল হাতে। ‘ইশ’ বলে শব্দ করতেই প্রিয়ম তড়িঘড়ি এসে তার হাতটা ধরে নেয়। এবার আর চুপ থাকতে পারে না বাইরে অবস্থানরত নেত্র।
সে দ্রুত ঘরে ঢুকে পড়তেই অপ্রস্তুত প্রিয়ম ধরে রাখা নমনীর হাতটা ছেড়ে দিয়ে বললো,
— নেত্র তুমি হঠাৎ?
নেত্র সেদিকে কর্ণপাত না করে নমনীকে নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে চলে যায়। নিজ ঘরে ঢুকে নমনীর হাত উল্টে-পাল্টে দেখতে থাকে নেত্র। তা দেখে নমনী হেসে বললো,
— কোথাও কিছু হয়নি। তুমি অযথা ব্যস্ত হচ্ছ।
— তাহলে আর্তনাদ করলে যে? আমি তো ভয় পেয়ে ভাবলাম কি না কি হয়ে গেছে!
— আসলে অনেকক্ষণ ধরে থাকায় চা তো একেবারে ঠান্ডা শরবত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ হাতের উপর পড়ায় চমকে উঠেছিলাম আর কি!

পুরো বাড়ি জুড়ে গোরস্থানের নিরবতা। বাড়ির চৌকোণ উঠোনে জমায়েত হয়েছে সকলে। রয়েছেন নীলুফা বেগম এবং রেহান সাহেব। রয়েছে মুমু, নিলয়, নমনী, নেত্র এবং প্রিয়ম। আমিরা আর নদীও বাদ যায়নি। তবে সকলের চোখে ধুধু মরুভূমির মতো শূণ্যতা। কে এবং কেন ডাকা হয়েছে কেউ জানে না। দেখতে দেখতে কুড়ি, পঁচিশ মিনিট অতিবাহিত হতেও যখন কেউ কথা বললো না, তখন রেহান সাহেব হাক ছাড়লেন,
— কই রে? কেউ কিছু বল! আমিরা বললো বাড়ির সবাইকে এখানে আসতে। কে আসতে বলেছে? কেন বলেছে? কিছুই জানি না।
এতক্ষণে মুখ খুললো নিলয়। তার মুখ হাসিহাসি। সে বললো,
— বাবা, খুশির খবর আছে। কানাডা যাবার জন্য মাইগ্রেশন করেছিলাম। সেটা সফল হয়েছে। আমি আর মুমু খুব শীঘ্রই কানাডা চলে যাচ্ছি।

নীলুফা বেগম বেড়ালের কান্না কেঁদে বললেন,
— আবারো এ বাড়ির এক ছেলে চিরতরে বিদায় হবে?
রেহান সাহেব বললেন,
— আমাদের না জানিয়ে সব যখন করেই ফেলেছ তখন কি আর করা! সবাই চলে যাও। নেত্রকেও দেশের বাইরে চলে যেতে বলবো। শুধু শুধু আমাদের দুই বুড়ো- বুড়ির মাঝে তোমরা পঁচে মরবে কেন?
নেত্র বললো,
— আমি কোথাও যাবো না বাবা। যার প্রয়োজন সে যাবে।
মুমুর মুখটা পানসে হয়ে গিয়েছে। মনে শঙ্কার জন্ম নিয়েছে। শেষ অব্দি কানাডা যাবার সুযোগটা না হাতছাড়া হয়ে যায়!

ছাদে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নেত্র এবং প্রিয়ম। নেত্র’র দৃষ্টি অসীমে গিয়ে ঠেকেছে। অপরদিকে প্রিয়মের দৃষ্টি নেত্রতে সীমিত। হঠাৎ নেত্র তাকে এভাবে কেন ডেকেছে? জানে না প্রিয়ম। দুই ভাইয়ের মাঝে গলায় গলায় ভাবের সম্পর্ক কোনো কালে তাদের ছিলো না। আজও নেই। বরাবরই নেত্র আপন জগতে ব্যস্ত থেকেছে। কাজেই, ছাদে ডেকে সুখ-দুঃখ বা হাসি-আনন্দের গল্প করবে, এমন ভাবনা অযৌক্তিক। তবে এতদিন বাদে যখন ডেকেছে, বিশেষ কোনো প্রয়োজন নিশ্চয়ই আছে। এটা বুঝতে দেরি করেনি প্রিয়ম।

চলবে……………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here