তোমার প্রেমে পড়েছি পর্ব-২২ শেষ

1
3865

#তোমার_প্রেমে_পড়েছি
#শেষ_পর্ব
#Rimy_Islam

ধুমধাম বা আহামরি বিশেষ কোনো পার্টির আয়োজন নৌরা করেনি। ছোটখাটো ঘরোয়া পরিবেশে বন্ধুদের নিয়ে এক মিলনমেলা চলছে। নমনীকে একটা জনমানবহীন একলা কামরায় রেখে চলে গেছে নেত্র। যাবার সময় বলেছে, ‘ পাঁচ মিনিটের মধ্যে ফিরবো।’ কিন্তু এদিকে নমনী কম করে হলেও আধা ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করছে। নেত্র আসার কথা যেন ভুলেই গেছে। নৌরাদের বাসাটা চার কামরার। যে ঘরটায় সে বসেছে তা দেখে অনুমান করা যায় এটা কারো বেডরুম। একটা মাঝারি গড়নের খাট, পাশে টেবিল-চেয়ার। যেখানে শোভা পাচ্ছে অসংখ্য বই। সবচেয়ে বড় দেয়ালটায় স্থান নিয়েছে চার পাল্লার আলমারি। বিছানা বরাবর সোজা সামনের দেয়ালে একটা টিভি। মোটামুটি সচ্ছল পরিবার বলা চলে।
‘ এটা বাবা-মার রুম। ‘ বলতে বলতে ভেতরে ঢুকলো নৌরা। তার পেছনে হাসিমুখে এলো নেত্র।

নমনী খানিক অস্বস্তি বোধ করলো। হাসার চেষ্টা করে বললো,
— ও। সুন্দর করে সাজানো। কে করেছে?
নৌরা বললো,
— আমার মা।
— তোমার পার্টিতে উনারা কোনো আপত্তি করেননি? আই মিন……
— তাঁরা বাসায় নেই। আচ্ছা তোমরা কথা বলো, আমি পরে আসবো।

নৌরা চলে যেতেই নমনী বললো,
— দেখেছ কি সাংঘাতিক মেয়ে! মা-বাবার অনুপস্থিতিতে ছেলেদের নিয়ে ফুর্তি করছে। এমন একটা মেয়ে তোমার পছন্দ হলো?
নেত্র দরজা লাগিয়ে নমনীর সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
— নৌরা একটু ডোন্ট কেয়ার টাইপ মেয়ে হলেও মন ফ্রেশ। তেমন কিছু ভেবে সে এসব করেনি। তাছাড়া তুমি ভালোমতো লক্ষ্য করলে বুঝতে পারতে এখানে ছেলে মাত্র আমরা তিনজন। অপরদিকে মেয়েদের সংখ্যা বেশি, পুরো পাঁচজন। আর দ্বিতীয় কথা, আমি নৌরাকে পছন্দ করি। তবে শুধু বন্ধু হিসেবে।
— তোমাকে আমি বুঝিনা নেত্র। পুরো মাস জুড়ে তোমাকে খেয়াল করছি। না তুমি ঠিকমতো বাড়ি ফেরো, না আমার সাথে কথা বলো। এত পরিবর্তন কেন?

নেত্র আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করে নিতে নিতে বললো,
— কারণ সম্পর্কে ঘুন ধরলে হয় সেটা শেষ করে ফেলতে হয়। নয়তো সময় দিতে হয়। আমি শেষ করতে পারিনি, পারবোও না কোনোদিন। কিন্তু সময়ের হাতে ছাড়তে তো পারি! দেখতে চেয়েছিলাম আমার কমতি তুমি কখন অনুভব করো। যেদিন অনুভব করবে সেদিন থেকে সব আগের মতো হবে। আমি পুরো তোমাতে মগ্ন হবো।

নমনী বিরক্তি নিয়ে নেত্র কাছে এগিয়ে গেলো। তারপর নিমেষেই মুখচ্ছবি পরিবর্তন করে নেত্র’র একটা হাত ধরে বললো,
— আমি অনুভব করছি নেত্র। তোমার কমতি গুরুত্বর ভাবে অনুভব করেছি। প্রতিটা সময় নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চেয়েছি তোমাকে ভুলে থাকতে। কিন্তু পারিনি। তোমার পড়ার টেবিল, তোমার বই-পুস্তক, তোমার জামা-কাপড় আমাকে প্রতিটা মুহূর্ত তোমার সাথে জুড়ে দিতে চাইছিলো। তারা ভীষণভাবে তোমার কমতির কথা আমাকে জানান দিচ্ছিলো। মাঝে মাঝে রাতেও তুমি বাড়ি ফিরতে না। সেসব রাতগুলো আমি নির্ঘুম কাটিয়ে দিতাম। তোমার প্রতি প্রেম থেকে কখন যে ভালবাসা জন্মেছে এই কয়দিনে তা বুঝতে পেরেছে। হয়তো আমাদের সম্পর্কের জন্য এই দূরত্বটুকু সত্যিই খুব দরকার ছিলো। তাই বলে তোমার জীবনে অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গ সহ্য করবো না।

নেত্র হাসলো। এরপর বললো,
— প্রথমেই তোমাকে বলেছি, জড় বস্তুর মধ্যে বই আমার প্রথম প্রেম। আর জীবজ বস্তুর মধ্যে তুমি আমার প্রথম প্রেম। আমার জীবনে দ্বিতীয় কিছুর স্থান নেই। নৌরাকে নিয়ে খারাপ কিছু ভাবা আসলেই অযৌক্তিক। আমার প্রতি তোমার যে ভালবাসা আছে, তুমি সেটা অনুভব করতে পেরেছো। এটাই আমার জন্য অনেক। আর কিছু চাই না। মাঝে মাঝে পুরনো সম্পর্কগুলোর মাঝে নতুনত্ব আসাটা খুব জরুরী। তার জন্য নতুন কিছু পন্থা যদি মানুষ অবলম্বন করে। আমার মনে হয় প্রতিটা সম্পর্কই অনেক মধুর হবে। যাকে বলে, পুরনো প্রেমকে নতুনভাবে জাগ্রত করা।
নমনী ঝট করেই প্রশ্ন করে বসলো,
— কখনো যদি আমি তোমার কাছে পুরনো হয়ে যাই? তখন?
— উহু….. হবে না।
— কেন?
— কারণ প্রতিদিন আমি তোমাকে নতুনভাবে আবিষ্কার করবো। প্রতিটা দিন আমার চোখ তোমার মাঝে নতুন কিছু খুঁজে বের করবে। পুরনো হবার চান্স-ই নেই।
— সত্যি এমন হবে তো?
— কেন নয়? ইচ্ছা শক্তিই সব।

নমনী মৃদু হেসে নেত্র’র বুকে মাথা রাখে। তারপর চোখ বন্ধ করে ভাবে, সুখ খুঁজতে দেশ থেকে দেশান্তরে যাবার প্রয়োজন নেই। একটা শান্তিময় বুকে মাথা রাখলেই স্বর্গসুখ।

#সমাপ্ত।

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here