অন্ধকার মানব পর্বঃ৬

0
1114

#অন্ধকার_মানব(The unpredictable love)
#পর্বঃ৬
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি

মিষ্টি একটা সকাল।কাক ডাকা ভোর।গ্রীষ্মের দাবদাহ হলেও আজকের সকাল টা অন্যরকম।ঘুম থেকে উঠেই বেডের পাশে রাখা ছোট্ট টেবিলটায় চোখ যায় ওর।এক গুচ্ছ বেলী ফুল রাখা।কিন্তু বেলী ফুল তো ওর ততোটা পছন্দ নয়।ফুল গুলো হাতে নিয়ে ভাবতে থাকে কে দিয়ে গেল।হাটতে হাটতে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়।হঠাৎ কিছু একটা দেখে ওর ঠোটে ফুটে উঠে এক বৃহৎ হাসি।দৌড়ে নিচে গিয়ে পারিজা ইরাম এর হাত ধরে বাগানের সে গোলাপ গাছটার কাছে নিয়ে যায়।রিশাল সবে নিজের রুম থেকে বেরিয়েছে।দ্বিধার পাশের রুমেই ওকে থাকতে দেওয়া হয়েছে।দ্বিধার এমন কান্ড দেখে কি ঘটেছে তা দেখার জন্য ও ওদের পিছু পিছু বাগানে আসে।

“মাম্মা,মাম্মা দেখো আমার গোলাপ গাছে ফুল ফুটেছে”।
পারিজা ইরাম অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে ভাবছেন,যে গাছে এতো বছরে একটা কলিও ধরেনি আর একদিনেই তাতে ফুল ফুটল!!মেয়ের দিকে তাকিয়ে দেখেন তার খুশি যেনো আকাশ ছোঁয়া।কিন্তু তিনি নিজের মনকে বুঝাতে পারছেন না।তাহলে কি নতুন কিছু হতে চলেছে।

“এই কি করছেন?একদম হাত দিবেন না।”
“মিস,স্পাইসি আপনার তো আমাকে ধন্যবাদ জানানো উচিত।”
“কেনো?”
“কেনো আবার,এই যে আমার আসাতে আপনার এতোদিনের ভালোবাসার প্রতিদান পেলেন।”
“মোটেও না(মুখ বাকিয়ে বলল)।
বাড়ির ফটকে পৌছেই ইরাজ ইরাম সব শুনতে পেলেন যাতে করে তার মনে এক আশার আলো জেগে উঠল।আনমনে বলতে লাগলেন”তাহলে কি আমার মেয়ের প্রানদূত এসে পড়েছে?সে কি পারবে আমার প্রিন্সেস কে বাচাতে?

জঙ্গলে কেউ একজন দৌড়াচ্ছে আল্ট্রা স্পীড যেনো সবকিছু দাপিয়ে যাচ্ছে,যার গতি উসাইন বোল্ট অপেক্ষা ৭গুন বেশী।খালি চোখে তা অবলোকন করা মুশকিল।তার পিছনে জাদ।ওর গতি তার চেয়েও ১০গুন বেশি।পলকেই ব্যক্তিটির সামনে গিয়ে ওর গলা চেপে গাছের সাথে পিষে ধরে।ভয়ে ব্যক্তিটির প্রানআত্না বের হবার উপক্রম।চোখ দুটো লাল বর্ন।ঠোঁটের ফাক গলিয়ে দুটো তীক্ষ্ম দাঁত বের হয়ে এসেছে।জাদ এর হাত থেকে বাচার আপ্রান প্রচেষ্টা।কিন্তু সব চেষ্টাই ওর শক্তির কাছে পরাস্থ।জাদ ওর নীল চোখ ধারন করে বলল–
“হাউ ডিড ইউ হ্যাব সো মাচ কারেজ?হোয়াই আর ইউ হেয়ার?
টু ডাই??”
“ফরগিভ মি। দ্যা প্রিন্সেস সেন্ট মি দেয়ার টু কিপ এন আইস অন ইউ।”
জাদ আরো ক্ষেপে গিয়ে বলে-
“টু ওয়ার্ন ইউর প্রিন্সেস।ইউ উইল টেল দ্যা কুইন দ্যাট শি শুড নট মেইক এনি মিসটেক ইন হার ডটার ওয়ার্ড।ইফ দে ডু দিস নেক্সট টাইম আই উইল নট লিভ অ্যানিওয়ান।ইউ নো দ্যাট হোয়াট আই ক্যান ডু।জাস্ট লিভ মি এল।”
“প্লিজ,লিভ মি।”(ব্যক্তিটি ভয়ার্ত কন্ঠে বলল)
জাদ ওর পকেট থেকে একটা সিলভারের চেইন বের করে সামনের ব্যক্তিটির গলায় পেচিয়ে জোরে টান দেয় এতে করে তার গলা প্রায় অর্ধেকে চেইনটি ডেবে গিয়ে সেখান থেকে লাল রক্ত ঝরতে থাকে।হাতের মুষ্টি হালকা করে বলে-
“জাস্ট গো।”মুহূর্তেই ব্যক্তিটি সেখান থেকে হাওয়া হয়ে যায়।জাদ নিজেকে ধীরে ধীরে শান্ত করে।আর বলে–
“মল্লিকায়আলিয়া আপনাকে এই ভুলের মাসুল দিতেই হবে।।হাতের উপর থেকে একটা প্লাষ্টিকের আবরন খুলে নিচে ফেলে।

“মিস,স্পাইসি চুপ করে আছেন যে?”
আজ রিশাল নিজে গাড়ি চালিয়ে দ্বিধাকে ভার্সিটি নিয়ে যাচ্ছে।দ্বিধা সেই বেলী ফুলের কথা ভাবছে।রিশাল এর কথায় ওর হুশ ফিরে।
“এমনি”
“আচ্ছা,আমরা কি একে অপরকে তুমি করে বলতে পারি?বন্ধুত্বে আপনি সম্মোধন টা ঠিক জমে না।”
দ্বিধা হ্যাঁ সূচক উত্তরে মাথা নাড়ায়।রিশাল বেশ খুশি হয়।
“তুমি কি কোনো কারনে চিন্তিত?”
দ্বিধা নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করে।
“তেমন কিছু নয়।সামনে পরীক্ষা তো তাই নিয়ে একটু টেনশন হচ্ছে”
“আচ্ছা।”ওদের গাড়ি ভার্সিটির গেইটে এসে পৌছাতেই ও দরজা খুলে হন্তদন্ত হয়ে চলে যেতে চাইলে পিছন থেকে রিশাল জিঙ্গেস করে–
“কি হলো,কোথায় যাচ্ছো?” ও পিছন ফিরে বলল-
“তুমি ক্যান্টিনে গিয়ে বসো আমি আসছি।”
পুরো ভার্সিটি ও জাদ কে খুজে বেড়ায়।কিন্তু কোথাও পায় না।হঠাৎ করে ওর চোখ যায় ভার্সিটির নতুন বিল্ডিং এর ছয় তালায়।বিল্ডিং টির কাজ সবে মাত্র শেষ হয়েছে।এখনো সেখানে ক্লাস করানো শুরু হয়নি,তাই মানুষের আনাগোনা কম।জাদ ছয়তালা থেকে এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেনো ওকেই দেখে যাচ্ছে।
ক্লাস রুমের বারান্দার হাফ দেয়ালের উপর দুটো হাত রেখে কিছুটা ঝুকে দাড়িয়ে আছে জাদ।প্রায় পাঁচ মিনিট সিড়ি বেয়ে হাপাতে হাপাতে দ্বিধা ওর কাছে আসে।
“আপনি কাল রাতে ও আমার ঘরে এসেছিলেন??”
“আপনার বুঝি তাই মনে হয় সুধানিধি??”
“আপনি এতো আজব কেনো বলুনতো?আর ওই বেলী ফুল,,,,,,
“আপনার বুঝি পছন্দ না।”
“উহু”
“সে খুব পছন্দ করতো।”
“কে সে??”
“চাঁদের রশ্মি”।
“এইটা আবার কে?”
“আছে একজন।” ওর মুখে অন্য কারো কথা শুনে দ্বিধার মুখটা মলিন হয়ে গেলো।দ্বিধার মোবাইলের রিংটন বেজে উঠতেই জাদ তাকিয়ে দেখে প্রফেসর ইতাফের নাম। ও ছো মেরে দ্বিধার হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে ওর দু হাত ধরে ওকে ঝাকিয়ে বলে-
“কি সমস্যা তোমার?কেন যাও ওর কাছে?কতবার বলেছি ওর থেকে দুরে থাকতে।কথা কানে যায়না তোমার?(জাদ রেগে গেলে ওকে তুমি করে বলে এইটা ও সেদিনের ঘটনার পরেই বুঝতে পারে)
“জাস্ট লিভ হার”।রিশাল এসে দ্বিধাকে ছাড়িয়ে নিজের দিকে টেনে আনে।
“মেয়েদের সাথে কিভাবে ব্যবহার করতে হয় শেখেন নি”।জাদ ওর কথায় ওর দিকে তাকিয়ে একটা রহস্যময়ী হাসি দিয়ে পিছন ঘুরে হাটা শুরু করে।
“আজব ছেলে তো!!
“হুম।ওকে বুঝার ক্ষমতা কারো নেই।”(দ্বিধার নিরব উত্তর)
“সে না হয় বুঝলাম।কিন্তু ও তোমার সাথে এমন আচরন কেন করলো?”
“পরে বলছি।আগে প্রফেসরের সাথে দেখা করে আসি।”
“ওকে।চলো।
প্রফেসর ইতাফের ল্যাবে দ্বিধাদের ক্লাস হয়েই যেতে হয়।ক্লাসের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ভিতর থেকে অনেক চেচামিচির আওয়াজ পাওয়া যায়। কি হচ্ছে তা দেখার জন্য দ্বিধা আর রিশাল দুজন ই ভিতরে আসে।ক্লাসের সব মেয়েরা কাউকে ঘিরে বসে আছে আর ছেলেগুলো আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে।
রিপ্তি একদম জাদ এর পাশে ওকে ঘেঁষে নিজের মাথাটা ওর হাতের সাথে হেলান দিয়ে রেখেছে।গিটারে সুর তুলে দ্বিধার দিকেএক পলকে তাকিয়ে গান গাওয়া শুরু করল যেনো আশেপাশে ওরা দুজন ছাড়া আর কেউ নেই।

তুমি আকাশের বুকে
বিশালতার উপমা
তুমি আমার চোখেতে
সরলতার প্রতিমা
আমি তোমাকে গড়
ভেঙে চুরে শতবার
রয়েছো তুমি বহুদুরে
আমাকে রেখে ছলনায়
এ হৃদয় ভেঙ্গে গেলে
জানোকি তা
লাগে না লাগে না জোড়া
লাগে না লাগে না জোড়া

আমার পথে তোমার ছায়া
পড়লে আড়াল করে
থমকে সে যাবে জীবন ও গতি
সে কি তোমার অজানা,,,
রয়েছো তুমি বহুদুরে,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
, ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
শ্রাবন বেলায় তোমার কথা
ভেবে বিষন্ন মন
আশার পথে দিয়েছি পাড়ি
যেথা তোমার বিচরন
রয়েছো তুমি বহুদুরে,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
,,,,,,,,,,,,,,,,,
,,,,,,.,,,,,,,,,-,,,
লাগে না লাগে না জোড়া।।

“মল্লিকায় আলিয়া যা করেছেন তা কিন্তু ঠিক নয়”।(কাঠ কাঠ গলায় বলল জাদ)
“তাহলে তুমি কি করতে চাও।”
“ড্যাড,আপনি ভালো করেই জানেন আমার কাজে অন্য কারো হস্তক্ষেপ আমার একদম পছন্দ না।ওকে আমি ছেড়ে দিয়েছি এর মানে এ নয় যে আমি ওদের ছেড়ে দিবো।”
“তুমি কি তার সাথে লড়তে চাও?তুমি ইচ্ছে করলে তা করতে পারো।”
“আপনি ভালো করেই জানেন ক্ষমতার প্রতি কোনো আকর্ষণ আমার কোনো কালেই ছিলো না।কিং কে জানিয়ে দিবেন আমার কাজে বাধা দিলে তার ফল কিন্তু ভালো হবে না।”
“তুমি ভালো করেই জানো আমাদের তার সাহায্য কতটা প্রয়োজন।আমরা তার সাথে আছি আমাদের স্বার্থে।আর প্রিন্সেস আমাদের সেই পথ তৈরি করে দেবে।”
“মম,আপনি ভুলে যাচ্ছেন,আমার পক্ষে আপনাদের এই আশা পূরন করা কোনোদিন ও সম্ভব নয়।”
“জাস্ট শাট আপ,জাদ।ভুলে তুমি যাচ্ছ।প্রথমবারের ভুলের সাজা থেকে ইশায়া তোমায় বাচিয়েছে।তার জন্য তার প্রতি তোমার কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।”(আইভান চেচিয়ে বলে)।
জাদ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে কঠিন গলায় বলল–
“ভুল!!!!কিসের ভুল।ভালোবাসা কোন ভুল নয়।আর সাজার কথা বলছেন?আমার অস্তিত্ব যে পৃথিবীতে আছে এর চেয়ে বড় সাজা আর কিছু হতে পারেনা।ফ্রিদা ইন্দ্রিয়াজ ছেলের মনের কথা ঠিক বুঝতে পারলেন।কিন্তু ক্ষমতার কাছে যে ভালোবাসার কোনো মৌল নেই সেটা তার চেয়ে ভালো কেও জানে না।জাদ যদি কোনো দিন সেই কথা জানতে পারে তাহলে সেদিন কি হবে তা ভেবে তিনি এখনো কেপে উঠেন।

“একা একা ছাদে কি করছো। আকাশ দেখছো বুঝি?”
“না।সুধানিধি কে দেখছি।”
“সেইটা আবার কে”।
“ওই যে আকাশে যে উদিত রয়েছে তিনি।”
“ওওওও চাঁদ।নামটা তো খুব সুন্দর।”
“হুম।”
দুজনই নিরব।যেনো আকাশ বিলাস হচ্ছে।মন ভরে দেখে যাচ্ছে তাকে।আজ যেনো সে তার হৃদয় নিংড়ে দিচ্ছে তার আভা।রিশাল দ্বিধার দিকে তাকিয়ে ভাবে
“তুমি কি সত্যিই সত্য,নাকি মিথ্যের অজুহাত।কেনো এতো চাপা কষ্ট তোমার।যতবারই তোমাকে দেখি ততবারই নতুন করে জানতে ইচ্ছে করে। কেনো মনে হয় হাজারো রহস্য তোমায় ঘিরে।সত্যিই কি তুমি রহস্যময়ী।নাকি সবকিছু তোমার অজানা।

সকালে খাবার টেবিলে বসতেই রিশাল পারিজা ইরাম কে জিঙ্গেস করল-
“আঙ্কেল এখনো আসেনি?”
“না,উনি তো আটটার আগে ফেরেন না”।
“এই বয়সে ও আঙ্কেল কতো স্বাস্থ্য সচেতন।রেগুলার হাটা,ডায়েট খাওয়া গ্রেট।”
“হুম।অনিয়ম তিনি একদম পছন্দ করেন না।”
“তা আঙ্কেল আসুক।আমি বরং দ্বিধার কাছে যাই।আসলে কি বলোতো,সকাল সকাল তোমার কাচা লঙ্কার চাঁদ মুখখানা না দেখলে পুরো দিনটাই মাটিমনে হয়।”রিশাল চেয়ার থেকে উঠতেই পারিজা ইরাম বলে উঠল–
“না,,,,,,,এখন তুমি ওর ঘরে যেতে পারবে না।”রিশাল অবাক হয়ে জিঙ্গেস করল–“কেন,তুমি কি আমায় বিশ্বাস করো না?
“পাগল ছেলে বলে কি।আসলে বাবা,,,,,,,,,,

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here