অন্ধকার মানব পর্বঃ১৪

0
786

#অন্ধকার_মানব(The unpredictable love)
#পর্ব_১৪

লিখা✍️তাজরিয়ান খান তানভি

সকাল হতেই আইভান ইন্দ্রিয়াজ আর ফ্রিদা চিন্তায় মগ্ন।ওরা ভাবতেই পারেনি এমন একটা ঘটনা ঘটে যাবে।

“ড্যাড,আমি আপনাদের আগেই বলেছি আমাদের এই লড়াই এ কোনো মানুষের যেন ক্ষতি না হয়।কিন্তু আপনাদের ভুলের কারনে আজ প্রফেসর গোমস কে তার জীবন দিতে হলো।”
“এইটা তোমার ভুল ধারনা।”
“আমার ভুল ধারনা!!জাদ গর্জে উঠে।
আপনারা ভালো করেই জানেন ইতাফ এখন কতটা সতর্ক।তারপর ও কি প্রয়োজন ছিল অ্যান্ডি গোমস এর বাড়ি যাওয়ার।”

ফ্রিদা ছেলেকে শান্ত হতে বলে।
“জাদ,,যা হয়েছে সেইটা একটা অ্যাকসিডেন্ট।আমরা তো ভাবতেও পারিনি ইতাফ আমাদের পিছু নিবে আর মি.গোমস এর বাড়ি পর্যন্ত পৌছে যাবে।আর ভাগ্য ভালো যে ইতাফ আসার আগেই আমরা সেখান থেকে চলে এসেছি।”
ফ্রিদা হাতে এক গ্লাস রক্ত নিয়ে তাতে চুমুক দিয়ে শান্তির ঢেকুর তুললেন।
“আর ইউ ক্র্যাজি মম??আপনারা শুধু আপনাদের কথাই ভাবছেন,,,
প্রফেসর কে দেওয়া কথার কি হবে??কি করে বাচাবেন তার মেয়েকে?”
আইভান ছেলের কাধে হাত রেখে বললেন–
“প্রফেসর এর মৃতু্র সাথেই তাকে দেওয়া কথা বিলীন হয়ে গেছে।
“হাউ কুড ইউ ডু দ্যাট,ড্যাড?যে মেয়েকে পুনর্জীবিত করার জন্য নিশ্চিত মৃত্যু যেনেও আমাদের সাহায্য করেছে আর এখন আপনারা তার মৃত্যুর পর তার সাথে বিটরে করছেন??”
ফ্রিদা চিৎকার দিয়ে বলে–
“শাট আপ জাদ।এখানে আমাদের কোনো দোষ নেই।তার মৃত্যু তার ভমিতব্য।আর,,,আমরা তো জানিই না সে তার মেয়ের শবদেহ কোথায় রেখেছে।”
“আর ওই সিরাম এর কি হবে?কে দিবে আপনাদের ওই সিরাম?”
“তা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।তুমি তোমার উপর ন্যস্ত কাজ ঠিকভাবে করো।
আইভান তার মোটা পুরুষালী কন্ঠে তীব্রভাবে বললেন।

পানি জীবনের আরেক নাম।ঘন বর্ষার নীর প্রকৃতিকে নতুনভাবে সাজায়।গ্রীষ্মের সকল তপ্ততাকে মুছে দেয়।

বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরের দীঘির চারপাশে গাছপালায় ঘেরা।অনেকটা ছোটখাট উদ্যান এর মতো।মানুষ বিকেলের অবসাদ দূর করতে আর ছোট বাচ্ছারা গুটিগুটি পায়ে বাবা মায়ের হাত ধরে খেলতে আসে এখানে।
প্রায় আধাঘন্টা যাবৎ দ্বিধা ওর পা দুটো দিঘির জলে ভিজিয়ে রেখেছে। মনের সমস্ত কষ্ট,জড়তা,না পাওয়ার বেদনা সব জেনে দীঘি তার নিজের মধ্যে সংবরন করছে।দ্বিধা তার জীবনের মানে খুজে চলছে দীঘির স্বচ্ছ জলে।

“জানো রিশাল,আমরা যখন বাংলাদেশে আসি তখন প্রথম প্রথম আমার সাথে কেউ কথা বলতো না।পাপা যখন স্কুলে এডমিশন করিয়ে দিলো তখন আমাকে সবাই এমনভাবে দেখতো যেন আমি কোন ভিনগ্রহের প্রাণী।বাংলা বলতে পারতাম না তাই হয়তো।আমার খুব কান্না পেতো।
জানো,একদিন পাপা কে বললাম আমি আর স্কুলে যাবো না।পাপা খুব করে বোঝালো নতুন মানুষ,নতুন জায়গা ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে।
সেদিন স্কুলের দরজায় আমার নতুন বন্ধু হলো।জানো কে সে? রিপ্তি।সেদিন থেকে আজ ১০ বছর পর্যন্ত ও আমার প্রানের সাথে মিশে আছে।কিন্তু আজ,,,,,,
সব আমার দোষ।
দ্বিধা ডুকরে কেদে ওঠে।
রিশাল ওর পাশে এসে বসে।
“এতে তোমার কোনো দোষ নেই।যা হয়েছে ভুলে যাও।”

“আমায় ক্ষমা করতে পারবি না??”
পিছন থেকে রিপ্তি বলে উঠে।দ্বিধা ওর কন্ঠ শুনে পিছন ফিরে তাকায়।পানি থেকে পা উঠিয়ে দৌড়ে রিপ্তির সামনে এসে দাড়ায়।দ্বিধা ওর অশ্রুজল ফেলে রিপ্তি কে জড়িয়ে ধরে।রিপ্তি বলে–
“সেদিন এর ব্যবহারের জন্য আমি সরি।রাগের মাথায় কি থেকে কি বলে ফেললাম বুঝতে পারিনি।প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দে।”
দ্বিধা ওর মাথা উঠিয়ে কান্না কান্না কন্ঠে হেসে হেসে বলে–
“আগে তুই কানে ধর।এই দুইদিন তুই আমাকে অনেক কাদিয়েছিস।”
রিপ্তি ওর কান ধরতেই দ্বিধা ওর কান থেকে হাত সরিয়ে বলে–
“আর কখনো এমন করবি না”।
“হুম।”
দুই বান্ধবীর চোখ দিয়ে খুশির জল চুইয়ে পরে।

রিশাল বুঝতে পারলো না এসব কি হলো।রিপ্তি কে এতো করে বুঝানোর পর সব তো ঠিক ই ছিলো।কিন্তু এখন ও এমন কেনো করলো।
“দুই বান্ধবীর মিলন তাহলে হলো!!

জাদ কে দেখে রিশাল আচ করতে পারলো এইসব ওর ই কৃতকর্ম।দ্বিধা জাদ কে দেখে বলে উঠে–
“আপনি??”
“জ্বি আমি।”
রিপ্তি দ্বিধা কে বলা শুরু করে–
“জাদ ই আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে।ও আমার ভুল ভেঙে দিয়েছে।আমার তোর সাথে এমন করা উচিত হয়নি।”

দ্বিধা জাদ এর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ও ভাবছে ওকে তো ও কিছু বলেই নি রিপ্তির ব্যাপারে তাহলে ও কি করে জানলো।
জাদ রিশাল এর দিকে এগিয়ে যায়।রিশাল দ্বিধা আর রিপ্তির কাছ থেকে একটু দূরেই দাঁড়িয়ে আছে।জাদ ওকে বলে–
“এতোটা নাটক না করলে কি হতো না??
রিশাল খানিক চুপ মেরে যায়।একটু পরে বলে–
“আমি যা করেছি স্পাইসির ভালোর জন্যই করেছি।”
জাদ দাঁতের উপর দাঁত চেপে বলল—
“ওও রিয়েলি,,,,,,
তোমার ভালো না তার জন্য বিপদ হয়ে দাড়ায়।
বেচারি রিপ্তি কে এসবে জড়ানোর কোনো মানে হয় না।”
জাদ চলে যেতে চাইলে আবার ফিরে এসে বলে–
“আজকের পর সুধানিধি কে আমার কাছ থেকে আলাদা করার কোনো চেষ্টা করো না”।
রিশাল বলে—
“তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছে তুমি কে??স্পাইসি যখন তোমার আসল পরিচয় জানবে ভাবতে পারছো কি হবে?

জাদ ওর নীল চোখ দেখিয়ে বলে–
“অসম্ভাবনীয় সত্যকে সম্ভাব্য করার প্রচেষ্টা নিদারুন ব্যর্থ।সত্যকে কখনো মিথ্যের আড়ালে ঢাকা যায় না।তা আপন মহিমায় প্ররিস্ফুট।
তাই তোমাকে এসব নিয়ে না ভাবলে ও চলবে।ভুলে যেওনা আমি কে আর কি করতে পারি।”

রিশাল ঠায় স্থির হয়ে আছে।ও ভাবছে জাদ কে বিশ্বাস করে ও কোনো ভুল করেনি তো।সে যাই হোক ওর আগে রিপ্তির সাথে কথা বলা দরকার।

দ্বিধা গাছের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে মাথাটা জাদ এর গায়ে হেলান দিয়ে বসে আছে।
“একটা কথা বলি জাদ??”
“হুম”।
“আপনার শরীর এতো ঠান্ডা কেনো বলুন তো?আপনাকে স্পর্শ করতেই পুরো শরীর কেমন হিম হয়ে যায়।যেনো মনে হয় আইসল্যান্ডে বসে আছি।”
জাদ দুষ্ট হাসি দিয়ে বলে—
“আপনি যে অনেক হট তাই আমাকে এতো কুল মনে হয়।”
“এইসব কি ধরনের কথা!!!
মানুষ মারা গেলে নাকি তাদের শরীর ঠান্ডা হয়ে যায় কারন মানুষের মৃত্যুর পর তাদের দেহের রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে জমাট বাধতে শুরু করে।তার ফলে দেহের উষ্ণতা কমে আসে।তাই শরীর ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে যায়।”
দ্বিধার কথা শেষ হতেই জাদ ওর দিকে ফিরে ওর নীলাভ চোখ দেখিয়ে বলে—-
“ঠিকই বলেছেন।
আমি তো কোনো মানুষ নই।”
ওর কথা শুনে এক মুহূর্তে দ্বিধা ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে যায়।
“আপনি,,,,,,,,
ওর কথা শেষ না হতেই রিপ্তি হাপাতে হাপাতে দৌড়ে আসে।
“এই দ্বিধা শুনেছিস আজ সকালে নাকি প্রফেসর অ্যান্ডি গোমস এর লাশ তার ঘরে পাওয়া গেছে।
“কি বলছিস তুই!!!!!!
“হ্যাঁ,এইমাত্র আমাদের ডিপার্টমেন্টের রিতা কল করে বলল।কি বিদঘুটে সেই দৃশ্য।যে বা যারা তাকে মেরেছে তারা নাকি প্রফেসর এর বুক থেকে কলিজা বের করে তার অর্ধেক খেয়ে বাকিটা ফেলে রেখে গেছে।আর তার শরীরের বিভিন্ন জায়গার মাংস ও নাকি খুবলে নিয়েছে।তার শরীরের সব রক্ত যেনো কেউ বের করে নিয়েছে”
এসব শুনে দ্বিধার গা গুলিয়ে উঠল।ও মুখ ভরে বমি করা শুরু করলো।

“সুধানিধি আপনি ঠিক আছেন??”
“হুম।
দ্বিধা নিজেকে সামলে বড় বড় নিঃশ্বাস নিয়ে বলে–
“কোনো মানুষ এভাবে কাউকে মারতে পারে!!!!

রিশাল জাদ এর দিকে তাকিয়ে বলে—
“সব কাজ মানুষের হয় না,কিছু কাজ মানুষরূপী নরখাদকদেরও হয়।যার অস্বিত্ব পৃথিবীতে এখনো বিদ্যমান।

“আইভান,কাজটা করা কি ঠিক হয়েছে?জাদ যদি জানতে পারে,,,,,
“যা করেছি আমাদের ভালোর জন্যই করেছি।মি.গোমস আমাদের পথের কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।তাকে সরানো দরকার ছিলো।”
“কিন্তু,,,,,,
“ডোন্ট ওয়ারি।ও কিছুই জানতে পারবে না।২৫০ বছর আগেও তো এমন কিছুই হয়ে ছিল।যা আজ পর্যন্ত জাদ জানতে পারেনি।”

ফ্রিদা ইন্দ্রিয়াজ স্বামীর এহেন কথায় চিন্তিত হয়ে পড়েন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here