অন্ধকার মানব পর্বঃ১৮

0
686

#অন্ধকার_মানব(The unpredictable love)
#পর্ব_১৮

লিখা✍️তাজরিয়ান খান তানভি

“কিং আপনি ভালো করেই জানেন ইশায়া জাদ কে কতটা ভালোবাসে।আর সব জেনেও আপনি ওকে কেনো পাঠালেন??
“তুমি ভালো করেই জানো এই কাজ জাদ ছাড়া অন্য কেও করতে পারবে না।”
“কিন্তু ইশায়ার কি হবে??
কিং বিরক্তি নিয়ে বলল–
“আহ!আলিয়া কেন বুঝতে পারছো না,জাদ শুধু নবনীযুক্তা কে আমাদের কাছে নিয়ে আসবে। আমাদের কাজ শেষ হলেই জাদ আর ইশায়ার বিয়ে হবে এইটা তো সবাই জানে।”
“এইটা আপনার ভুল ধারনা।ইশায়া আমাদের একজনকে পাঠিয়েছিল জাদ এর খবর এনে দিতে।
আপনি জানেন সে কি বলেছে??
সে বলেছে জাদ ধীরে ধীরে নবনীযুক্তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে।”
“এইটা তোমাল ভুল।আমার সাথে আইভান এর কথা হয়েছে। আর তো মাত্র কয়েকটা দিন।তারপর আসবে সে মাহেন্দ্রক্ষন,পূর্ন চন্দ্রগ্রহন।যার জন্য ২৫০বছর ধরে অপেক্ষা করছি।”
“নবনীযুক্তা কে কি করবেন?
“নবনীযুক্তার মৃত্যু ওর ভবিতব্য।আমাদের কাজ শেষ হলে ওকে মরতেই হবে।”
“জাদ আধৌ কি তা করতে দিবে?
“এই জন্যই ওকে মরতে হবে।মাহনুর ও একই ভুল করেছিল।এক সাধারন মানুষ হয়ে জাদ এর মতো ভয়ংকর ভ্যাম্পায়ার কে ওর ভালোবাসায় দুর্বল করে দিয়েছে।ওর মৃত্যই ওর নিয়তি।”
“মাহনুর কে জাদ আজও ভুলতে পারেনি।
আর ইশায়া ৮০০বছর ধরে ওকে পাগলের মতো ভালোবেসে যাচ্ছে।কিন্তু এইবার আর নয়।শুধুমাত্র ইশায়ার কথা চিন্তা করে যে অপরাধ আমি করিনি তার দায় আজও বহন করছি।”
কিং নিজের আসন থেকে হুংকার দিয়ে উঠে–
“ইশায়া শুধু তোমার একার মেয়ে নয়।ও আমারও মেয়ে।আমিও ওকে তোমার মতই স্নেহ করি।আর ওর জন্যই আমরা এতো কিছু করেছি।”
“আমি এতোকিছু জানি না।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনারা ওদের বিয়ের ব্যবস্থা করুন।নইলে সত্য বেরিয়ে আসলে জাদ কাউকে ছাড়বে না।আর আপনাদের এতো দিনের সব পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে।”
“তার আগে তুমি ইশায়া কে সামলাও।ওর বোকামির জন্য আগেও তুমি ফেসেছো।জাদ ওর কাজে নজরদারি একদম পছন্দ করে না।তাই ইশায়া যেনো ওর এইসব বোকামি কাজ বন্ধ করে।
মাহনুর যেমন জাদ কে ওর কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারেনি,নবনীযুক্তাও পারবে না।
ভরসা রাখো”
“আই হোপ সো।”
কিং আর আলিয়ার একমাত্র মেয়ে ইশায়া যে জাদ কে গত৮০০বছর ধরে ভালোবাসে কিন্তু জাদ তাকে বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছুই ভাবে না।
.
.
.
গত কয়েকদিনে জাদ আর দ্বিধার সম্পর্ক আরো মজবুত হয়েছে।জাদ এখন অনেকটা স্বাভাবিক আচরন করে।দ্বিধার মা,বাবা ও ওকে ধীরে ধীরে পছন্দ করতে শুরু করেছে।রিশাল ও জাদ কে মেনে নিয়েছে।ও ভাবছে যদি ওর স্পাইসি জাদ এর সাথেই হ্যাপি থাকে তাহলে ও তাতেই হ্যাপি।তাই জাদ এর প্রতি রাগ,অভিমান,জেদ কিছুই এখন নেই।কিন্তু দ্বিধার প্রতি ভালোবাসা কমেনি।
এই সবকিছুর মাঝে একজন এর নজর সবসমই ওদের উপর।

ইতাফের দেওয়া একটা অ্যাসাইমেন্ট তৈরি করার জন্য কিছু ইনফরমেশন প্রয়োজন।আর তাই সে সম্পর্কে জানতে কিছু বইয়ের জন্য দ্বিধা লাইব্রেরিতে এসেছে।বুক শেলফ হাতড়ে হাতড়ে দ্বিধা বই খুজছে।
“কেমন আছেন,মায়াপরী??
দ্বিধা দ্রুত পিছন ফিরে তাকায়।
“প্রফেসর আপনি,এখানে?
ইতাফ একদম কাছে এসে বলে–
“এভাবে আমাকে ধোকা দিতে পারলেন আপনি?
“প্রফেসর,,,,,,,
“আমার ভালোবাসা একবারও আপনার চোখে পড়লো না?
দ্বিধা ভয়ে কাপা কাপা কন্ঠে বলল–
“প্রফেসর আপনি ভুল করছেন।আমি আসলে,,,,
ওকে কিছু বলতে না দিয়ে ওকে ধরতে গেলেই জাদ পিছন থেকে ওর গলা ধরে ওকে পিছন দিকে ফিরিয়ে নেয়।ওর গলা চেপে বলে–
“তোর সাহস কি করে হয় ওর সাথে কথা বলার?
ইতাফ ও ওকে পাল্টা আঘাত করে।
“মায়াপরী কে আমার কাছ থেকে তুই কেড়ে নিতে পারবি না।ও আমার জন্যই ফিরে এসেছে।”
জাদ উঠে এসে ওকে ধরে আবার বলে–
“তোর ভাইয়ের সাথে কি হয়েছিল মনে নেই!
আর একবার ওর দিকে হাত বাড়ালে তোর অবস্থাও তোর ভাইয়ের মতো হবে।”
ওকে ছেড়ে জাদ দ্বিধার হাত ধরে লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে আসে।

“এইবার দেখ আমি কি করি,আমার ভাইয়ের মৃত্যু আমি আজও ভুলিনি।”
.
.
.
“আপনি প্রফেসর এর ভাই কে চিনেন?
দ্বিধার প্রশ্নে জাদ একটু ইতস্ততঃ বোধ করে।
“তা আপনার না জানলেও চলবে।”

“আপনি প্রফেসর কে দেখলে রেগে যান কেনো?
জাদ নিশ্চুপ।দ্বিধা আবার বলে–
“হিংসে হয় আপনার তাই না?
“কিসের?
“প্রফেসর ইতাফ আমাকে পছন্দ করে।”
দ্বিধার কথা শুনে জাদ হো হো করে হেসে উঠে।আর বলে–
“ইতাফ পছন্দ করে আপনাকে??
হাসালেন সুধানিধি।
নিজেকে কি ভাবেন আপনি,,রানী ভিক্টোরিয়া নাকি নায়িকা ঐশ্বরিয়া।”
বলে আরও জোরে জোরে হাসতে থাকে।
দ্বিধা একভাবে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।ও কখনো এভাবে হাসতে দেখেনি জাদ কে।
“কি দেখছেন ওমন করে?
“আপনার হাসি।কি মায়াময় হাসি আপনার।
তারপরও কেনো এমন গোমড়ামুখো হয়ে থাকেন বলুন তো।”
দ্বিধার হালকা উচু কন্ঠে আবার বলে–
“হাসতে কি পয়সা লাগে??
“নাহ।”
“তাহলে??
“কষ্ট হয়।”
দ্বিধা জাদ এর মুখ নিজের দিকে ফিরিয়ে বলে–
“কেনো এতো চাপা কষ্ট আপনার??
“জানিনা।

“আর জানতে হবে না। এখন চলুন।”
পিছন থেকে রিপ্তি এসে দাড়ায়।সাথে রিশাল ও।

“কিরে তোরা দুজন একসাথে?
রিপ্তি বলে–
“জ্বি হবু মিসেস জাদ।আপনাদের প্রেমালাপ শেষ হলে এখন আমার সাথে চলুন।”
দ্বিধা ওর কথায় হাসে।
জাদ বলে —
“কোথায় যেতে হবে??
“আজ আমার ভাইয়ের বার্থডে। তাই একটা টি পার্টির আয়োজন করা হয়েছে আর আপনারা সবাই আমন্ত্রিত।বুজলে সুইটিপাই।”
দ্বিধা বলে উঠে–
“ইশরে পিচ্চুটার বার্থডে আর আমার একদম ই মনে নেই।”
“হয়েছে হয়েছে আর ন্যাকামো করতে হবে না।আজকাল তুই জাদ ছাড়া আর কারো কথা মনে রাখিস।”
দ্বিধা লজ্জা পেয়ে বলে–
“তুই চুপ করবি!!
.
.
.
“ব্ল্যাকি ভাইয়া,তুমি এখন আর আমাদের বাসায় আসো না কেনো?
রিপ্তি মজার ছলে বলে—
“আজকাল তোমার ব্ল্যাকি ভাইয়া একটু বেশিই বিজি থাকে।”
দ্বিধা বলে–
“তোর আর পিচ্চুর কানভারি করতে হবে না।”
একটা গিফ্ট এর প্যাকেট এগিয়ে বলে–
“মেনি মেনি হ্যাপি রিটার্নস ওফ দ্যা ডে, পিচ্চু।”

তারপর কিছুসময় ওখানে কাটিয়ে দ্বিধা,জাদ আর রিশাল বাসার দিকে রওনা দেয়।

গাড়ি আপন গতিতে চলছে।হঠাৎ গাড়ি থেকে কিছু দুরে অন্ধকার আবছা আলোয় ওরা কয়েকজন মানুষ দেখতে পায়।জাদ গাড়ি থামায়।

” এরা কারা?
“ক্ষমা করবেন সুধানিধি।”
“মানে?
জাদ রিশাল কে বলে–
“রিশাল তুমি বলেছিলে না সুধানিধি একদিন সত্য জানবে।আজ সেইদিন এসে গেছে।”
রিশাল পিছনের সিটে বসা ছিল।ও জাদ এর কথায় বেশ অবাক হয়ে বলে–
“জাদ এইসব তুমি কি বলছো?
“সত্য সবসময় প্রকাশ্য”।
ও দ্বিধার দিকে তাকিয়ে আবার বলে–
“আজকের পর হয়তো আর কখনো আমায় ভালোবাসতে পারবেন না।”
“আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন?কি বলছেন এইসব।আর ওরা কারা??
“গাড়ির জানালা লক করে নিন।রিশাল,তুমি ড্রাইভিং সিটে আসো।যতক্ষন আমি না বলবো কেউ বাইরে আসবে না।”
“জাদ এইসবের কোনো দরকার নেই।তুমি গাড়ি ব্যাক করো।”
“তা সম্ভব নয়।”

জাদ গাড়ির সবগুলো লক লাগিয়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে আসে।দ্বিধা অনেক চেষ্টা করেও আটকাতে পারে না।ও বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে এইসব।

সামনে থাকা মানুষগুলো ধীরে ধীরে নেকড়ের মানবেব রূপ নেওয়া শুরু করলো।দ্বিধার ভয়ে নিঃশ্বাসের গতি বেড়ে গেলো।জাদও তার ভ্যাম্পায়ার রুপ ধারন করলো।সবকিছু এতো তাড়াতাড়ি হলো দ্বিধার শ্বাসযন্ত্র যেন কাজ করা বন্ধ করে দেয়।ও রোবটের মতো সামনে ঘটা বিভৎস দৃশ্য অবলোকন করতে লাগলো।
জাদ এর ভয়াল রুপ দেখে ওর শরীর হিম হতে শুরু করলো।ভয়ে ওর চোখ যেনো বের হয়ে আসছে চোখ থেকে অনবরত টুপ টুপ করে পানি পরছে।
একটা ভ্যাম্পায়ার কে এতোদিন ভালোবেসেছে ভাবতেই ওর পুরো শরীর শিউরে উঠছে।

জাদ তার কাজে ব্যস্ত।তাকে তো তার সুধানিধি কে বাচাতে হবে।সামনে থাকা নেকড়েদের সাথে প্রানপণ লড়ে যাচ্ছে।দু জন অলরেডি শেষ।এদের মধ্যে একজন
হঠাৎ ওদের গাড়ির জানালার কাছে গিয়ে জানালায় আঘাত করতে গেলে জাদ ওকে পিছন থেকে ঝাপটে ধরে ওর ঘাড়ে নিজের ভয়াল দাঁত বসিয়ে দেয়।
সবকিছুই দ্বিধার একদম সামনে ঘটছে কারন ওর জানালার সামনে হচ্ছে সব।
ওর ঠাণ্ডা দৃষ্টি জাদ এর দিকে নিবদ্ধ কি করে জাদ কারো রক্ত শুষে নিচ্ছে।একসময় নেকড়ে টি নিথর দেহ নিয়ে লুটিয়ে পরে।নেকড়ে টি পরতেই জাদ এর ভয়ংকর রুপ স্পষ্ট দেখতে পায় দ্বিধা।
পুরো শরীরে রক্ত জড়ানো।ঠোঁটের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পরছে কালো রক্ত।

দ্বিধা ধীরে ধীরে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে।দ্বিধা ফাকা ঢোক গিলে।ওর শুকনো গলায় কোনো আওয়াজ নেই।গাড়ি থেকে বেড়িয়ে ও গাড়ির সাথে চেপে দাড়ায়।
এক বিস্ময়কর চোখ তাকিয়ে আছে সামনে থাকা ভয়ংকর এক রক্তচোষা জানোয়ার এর দিকে।

জাদ ধীরে ধীরে ওর কালো রক্তে রন্জিত অধর দ্বিধার ঘাড়ের কাছে নিয়ে আসে।দ্বিধা নিশ্চুপ।শুধু বড় বড় দীর্ঘশ্বাস এর শব্দ ভেসে আসছে জাদ এর কানে।

রিশাল গাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসে বলে–
“জাদ,,, কন্ট্রোল ইউর শেল্ফ।
স্পাইসি জলদি গাড়িতে উঠো।”
দ্বিধার শরীরে একবিন্দু শক্তি নেই নড়ার।ও ঠায় দাড়িয়ে আছে সামনে থাকা তার ভয়ংকর ভালোবাসার মানুষটার দিকে।

রিশাল ওর পাশে এসে একরকম জোর করে ওকে গাড়িতে উঠায়।

গাড়ি চলে যেতেই জাদ এর বুক চিরে বেরিয়ে আসে এক ভয়ংকর আর্তনাদ।যা সবকিছু মুছড়িয়ে দিচ্ছে।

দুরে দাড়িয়ে কেউ একজন সব দেখেছে।তার অট্টহাসি বলে দিচ্ছে সে আজ কতটা তিপ্ত।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here