#অন্ধকার_মানব(The unpredictable love)
#পর্ব_২০
লিখা✍️তাজরিয়ান খান তানভি
ইশায়া সে কখন থেকে জাদ কে জড়িয়ে ধরে আছে।জাদ বারবার না করার পরও ওর কোনো তাল নেই।তাই বাধ্য হয়ে ওকে ধাক্কা মারে।
“এমন করছো কেনো তুমি?
“তুমি ভালো করেই জানো এইসব আমার পছন্দ না।
জাস্ট স্টে এওয়ে ফ্রম মি।”
“জাদ তুমি ভালো করেই জানো আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি।”
“বাট আই ডোন্ট লাভ ইউ।”
“জাদদদ
“আমার কাছে আসার একদম চেষ্টা করবে না।”
কিং এসেই জাদ এর উপর চড়াও হয়।
“কি বলতে চাও তুমি?
“সেইটা আপনার অজানা নয়।”
“জাদ ইশায়া তোমার হবু স্ত্রী।”
জাদ হেসে উঠে বলে–
“স্ত্রী,,,…কে বলল আপনাকে?আমি কখনই ইশায়া কে বিয়ে করবো না।”
ইশায়া অনবরত কেদেই যাচ্ছে।ও জাদ কে ছোট বলা থেকেই ভালোবাসে।
“জাদ,,তুমি আমায় বিয়ে করবে না?
জাদ ওর গলায় চেপে ধরে বলে–
“তুই ভাবলি কি করে আমি তোকে বিয়ে করবো। তোর জন্য আমি মাহনুর কে হারিয়েছি।”
কিং ক্ষীপ্ত হয়ে এসে জাদ এর কাছ থেকে ইশায়া কে ছাড়িয়ে বলে–
“জাদ ইশায়া আমার মেয়ে।”
“মাহনুর ও কারো মেয়ে ছিলো।কিন্তু তার মৃত্যুতে আপনাদের একটুও কষ্ট হয়নি।”
“দেখো জাদ অতীত কে ভুলে যাও।ইশায়ার সাথে
তোমার বিয়ে হলে তুমি এই ভ্যাম্পায়ার কিংডমের একচ্ছত্র অধিকারী হবে।”
“ক্ষমতার লোভ আমার কোনোকালেই ছিল না,আজও নেই। আপনাদের আমি কেনো বাচিয়ে রেখেছি জানেন?
মাহনুরের জন্য।আমার মতো এক জানোয়ারের মনে জাগিয়ে দেওয়া মনুষ্যত্ব এখনো আমি ভুলে যাইনি।”
জাদ ইশায়ার দিকে তাকিয়ে আবার বলল–
“তুমি কি ভেবেছো আমি ওর ভালোবাসা ভুলে গেছি।ও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু ওর ভালোবাসা এখনো আমার মনে জীবন্ত।
আমি ওকে ভালোবেসেছি,ভালোবাসি আর ভালোবাসবো।
আর আপনার মেয়েকে বলে দিবেন ও যেন আর ভুল না করে।আরেকবার যদি কাউকে আমার উপর নজর রাখতে পাঠায় আমি ভুলে যাবো ইশায়া ভ্যাম্পায়ার কিং এর মেয়ে।”
জাদ চলে যায়।ইশায়া একপানে চেয়ে আছে।ও আবার ডুকরে কেদে উঠে।কিং ওকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে–
“নো মাই গার্ল,নো।ডোন্ট ক্রাই,,,,জাদ শুধুই তোমার।তোমার জন্যই আমরা এতো কিছু করেছি।
নবনীযুক্তা কে মরতেই হবে।আর তখন বাধ্য হয়ে জাদ তোমায় বিয়ে করবে।আইভান আর ফ্রিদা আমাদের সাথে আছে।
সো ইউ ডোন্ট ওয়ারি।হি উইল বি ইওরস।”
“আই ওয়ান্ট হিম,পাপা।আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না।”
.
.
.
.
আজ দ্বিধাদের ক্যাম্পাসে অ্যানুয়াল ফাংশন।প্রতিবছর ই এর আয়োজন করা হয়।বর্ষসেরা দের পুরস্কৃত করা হয়,এছাড়াও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
দ্বিধা আজ মেরুন রঙের সেলোয়ার কামিজ পরেছে।ফর্সা শরীরে গাঢ় রঙ যেনো ওর সৌন্দর্য দ্বিগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।রিশালও কম না।তার স্পাইসির সাথে মানাতে হবে তো।অ্যাশ রঙের শার্ট তার উপর গাঢ় নীল রঙের কোর্ট ,গাঢ় নীল রঙের প্যান্ট ,স্পাইক করা চুল।হাতাটাও কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা।
অনেকক্ষন হলো ওরা রিপ্তির জন্য অপেক্ষা করছে।ওরা ওকে সাথে নিয়ে আসতে চেয়েছিল কিন্তু ও বলেছে ও নিজেই আসবে।
কিছুক্ষন পর রিপ্তি কে দেখেই ওদের চোখ ছানাবড়া।সাদা ব্লাউজের সাথে পা পর্যন্ত আচল ছড়ানো আকাশ রঙা শাড়ি পরেছে ও।কানে বড় ঝুমকো।আর সাথে জাদ।সাদা শার্টের সাথে আকাশি রঙের ব্লেজার,তার সাথে পকেটের উপর সাদা আর আকাশী মিশেলে স্টোনের ব্রোচ।চোখে তার সেই সুপরিচিত কালো সানগ্লাস ।দেখে মনে হচ্ছে,শরতের সকালে এক টুকরো আকাশ নেমে এসেছে মাটিতে।সবাই হা করে দেখছে ওদের,যেনো আজকের বেস্ট কাপল ওরাই।
দ্বিধা গিয়ে ওদের সামনে দাড়ায়।জাদ এর দিকে তাকিয়ে রিপ্তি কে বলে–
“ওও তাহলে এই ব্যাপার!আগে থেকেই বডিগার্ড ঠিক করে রেখেছিস তাই আমাদের আর প্রয়োজন হয়নি?
“আরে ও বডিগার্ড হতে যাবে কেনো।ও বলল আমাকে ড্রপ করে দিবে তাই।”
“একদম মিথ্যে বলবি না।আর,,এইসব কি পড়েছিস??
এইগুলো তো কাপল সেট তুই কেনো পড়েছিস?
“আরে আমি কি করবো বল,,জাদ এনে বলল এইটা পরতে তাই পরে নিলাম।কেনো ভালো লাগছে না আমায়??
দ্বিধা রিপ্তির হাত টেনে একটু দূরে এনে বলে–
“আর কোনো ছেলে পেলি না তুই।ওকেই পছন্দ হলো তোর?
“প্লিজ রাগ করিস না।ও এমনভাবে বলল তাই আর না করতে পারিনি।”
অনুষ্ঠান কিছুক্ষনের মধ্যে শুরু হবে।দ্বিধা সামনের সারিতে একটা খালি চেয়ারে বসল।একটু পর জাদ ওর পাশের চেয়ার বসে পরে।
“আপনি এখানে কেনো বসেছেন?
“চেয়ার টা খালি ছিল তাই।”
“লজ্জা করে না আপনার।”
জাদ নিজেকে একবার আপাদমস্তক দেখে সানগ্লাসটা খুলে দ্বিধার মুখের কাছে গিয়ে বলে–
“লজ্জা পাবো কেনো।আমি তো আর জামা কাপড় ছাড়া আসিনি।”
“অসভ্য কোথাকার”।
জাদ চেয়ারে হেলান দিয়ে বলে–
“কোথাকার তা জানিনা।কিন্তু এখন আপনার পাশেই আছি।
“আপনি এখান থেকে যাবেন?
“নাগিনির মতো এতো ফোস ফোস করছেন কেনো?
কামড়ে দেবেন নাকি আমায়?
“আপনি আসলেই একটা অসভ্য।”
“আপনার মুখে অসভ্য শুনতে বেশ ভালোই লাগছে।আরেকবার বলুন তো।”
দ্বিধা চেয়ার থেকে উঠে বলে–
“পাগল কোথাকার!!
জাদ পিছন থেকে ডেকে বলে–
“সুধানিধি,,রাগলে কিন্তু আপনাকে বেশ মিষ্টি লাগে।”
প্রোগ্রাম শুরু,কিন্তু যে ছেলেটার গান গাওয়ার কথা ছিল কোনো কারনবশত সে আসতে পারেনি।তাই সবাই জাদ কে গান গাওয়ার জন্য অনুরোধ করছে।আর জাদ ও তার সুধানিধির রাগ ভাঙানোর জন্য এর চেয়ে ভালো উপায় আর কোথায় পাবে।স্টেজে উঠে একটা বেঞ্চে বসে।সামনে মাইক্রোফোন আর হাতে গিটার।
গান শুরু হলো,,,,,,
তুজে পায়া নেহি হ্যায়
ফির ভি
খোনে সে ডাররাহা হু
ছুপ ছুপ কে
তুজ সে
তেরা চেহেরা
ম্যায় পার রাহা হু।।
থোরে আশুউ,থোরি ইয়াদে
থোরি চাহাত,থোরে বাদে
মুজমে বাকি আব তালাক
কিউ তেরে জাজবাত হ্যায়
ইয়ে প্যায়ার নেহি তো কেয়া হ্যায়।।
ইয়ে প্যায়ার নেহি তো কেয়া হ্যায়,,,,।।
ছায়া বানকে,সাঙ তেরে
ধূপ মে চালনা
খুদছে ই তারিফে তেরি
রাত ভার কার না।।
ভুলু কেছে,বিতি বাতে
ডুনডে তুজকো ভিগি আখে
গুজতি কানোমে আব তাক
বাছ তেরি আওয়াজ হ্যায়
ইয়ে প্যায়ার নেহি তো ক্যায়া হ্যায়।।
ইয়ে প্যায়ার নেহি তো ক্যায়া হ্যায়,,।।
হে তুজ সে ভাসতা বাছ
ঘের সারা জাহান
তু মিলে বাছ তু মিলে
অর কুছ ভি চাহু না।।
টুটে টুটে,খাবও সারে
বুজগায়ে এহসাছ ইয়ে সারে
ইয়াদ ফিরভি আব তালাক মুজকো
তেরি হার বাত হ্যায়
ইয়ে প্যায়ার নেহি তা ক্যায়া হ্যায়।।
ইয়ে প্যায়ার নেহি তো ক্যায়া হ্যায়।।
দ্বিধার চোখের পানি উপচে পরছে।ও আর সেখানে বসে থাকতে পারলো না।দৌড়ে কলেজের ব্যাক ইয়ার্ডে গিয়ে গাছের সাথে হেলান দিয়ে পা মুড়ে তার উপর মাথা দিয়ে অনবরত কেদেই চলছে।
“এখনো আমার উপর রেগে আছেন?
দ্বিধা মাথা তুলে তাকায়।জাদ এর সামনে এসে বলে–
“কেনো আমায় ধোকা দিলেন?
“আমি তো আপনাকে ধোকা দেইনি সুধানিধি।আমি তো আপনাকে আগেই বলেছি আপনার আর আমার জীবন এক সুতোয় বাধা নয়।”
“কেনো এমন করলেন?কেনো এলেন আমার জীবনে?
“এটাই যে নিয়তি ছিল।কিন্তু এখন তো আপনি সব জানেন।জীবনকে নতুন করে গুছিয়ে নিন।”
“মানে??
“রিশাল এখনো আপনার পানে চেয়ে আছে।ওকে একটা সুযোগ দিন।”
“ও শুধুই আমার বন্ধু,এর চেয়ে বেশি নয়।”
“শেক্সপিয়র বলেছেন–
একজন ছেলে কখনো একজন মেয়ের বন্ধু হতে পারে না,কারন এখানে আবেগ আছে,দৈহিক আকাঙ্খা আছে।
আইরিশ কবি Oscar Wilde কি বলেছে জানেন?
বলেছেন– নারী ও পুরুষের মাঝে বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকা অসম্ভব।যা থাকতে পারে তা হলো আকাঙ্খা,দূর্বলতা,ঘৃণা কিংবা ভালোবাসা।
সেই হিসেবে রিশালেরও তো একবার সেই অধিকার পাওয়া দরকার।”
জাদ এর কথা শেষ হতেই দ্বিধা সজোরে একটা চড় বসিয়ে দেয় ওর গালে।রেগে বলে–
“আই হেট ইউ
আই হেট ইউ মি.জাদ ইন্দ্রিয়াজ।
আর কখনো আমার সামনে আসবেন না।”
চোখে ভরা সমুদ্র নিয়ে দ্বিধা চলে যায়।
“আপনি তো আমাকে ছাড়া থাকতে পারবেন না সুধানিধি।”
পিছনে ইতাফ বলে উঠে–
“বুঝলাম না মানুষের মাঝে তোর এতো ইন্টারেস্ট কেনো?
“কেনো এসেছিস এখানে?
“কেনো শুধু শুধু একটা মেয়ের পিছনে সময় নষ্ট করছিস।অলরেডি যার মৃত্যু অবধারিত।”
জাদ ওর কলার চেপে বলে–
“ওর গায়ে একটা আচড় লাগবে তোর অবস্থা তোর ভাই এর চেয়ে ভয়ানক হবে।”
“রিল্যাক্স জাদ।
“মাহনুর এর সাথে কি হয়েছিল মনে নেই?
নবনীযুক্তার সাথেও তাই হবে।আর এর জন্য তুই দায়ি।
এখনো সময় আছে ইশায়া কে বিয়ে পুরো ভ্যাম্পায়ার কিংডম নিজের হাতের মুঠোয় পেয়ে যাবি।”
“তা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে।”
জাদ চলে যেতেই এক পৈশাচিক হাসি হাসে ইতাফ।
“আর তো মাত্র কয়েকটা দিন।নবনীযুক্তা ফিরে পাবে তার অতীত সত্ত্বা।মনে পরে যাবে ওর সব।আর সেই রহস্য উদঘাটন হলেই ওকে যে মরতেই হবে”
.
.
.
.
“স্পাইসি এবার তো তুমি আমাকে একটা সুযোগ দিতেই পারো।জাদ এর মতো এতো হ্যান্ডসাম না হলেও আমিও কিন্তু কম না।”
দ্বিধা আর রিশাল রিপ্তিদের বাড়ি থেকে ফিরছে।
“বাজে কথা না বলে ঠিক করে ড্রাইভ করো।”
“একবার কি আমাকে সুযোগ দেওয়া যায় না?
“দ্বিতীয়বার আমার পক্ষে কাউকে ভালোবাসা সম্ভব নয়।”
“দ্বিতীয়,তৃতীয়,চতুর্থ,পঞ্চম প্রেম বলে কিছু নেই।মানুষ যখন প্রেমে পড়ে তখন প্রতিটি প্রেমই প্রথম প্রেম।
(কার্টেসি:হুমায়ুন আজাদ)
দ্বিধা চোখ রাঙিয়ে ওর দিকে তাকায়।
“ওকে,,ওকে।
রিশাল আবার বলে–
“আরে গাড়ির কি হলো??
“কি হলো মানে?
“আই থিংক ব্রেক ফেল।”
“হোয়াট??
এখন কি হবে?
“আই ডোন্ট নো।আমি তো কন্ট্রোল করতে পারছিনা।”
হঠাৎ ওদের গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের একটা বড় গাছের সাথে ধাক্কা খেতে গেলে ভয়ে ওর চোখ বন্ধ করে ফেলে।
কিছুক্ষন পর সবকিছু ঠিক আছে ভেবে ধীরে ধীরে ওরা চোখ খুলে।দেখে গাড়িটা গাছ থেকে দু তিন ইঞ্চি দুরেই থেমেছে।
ওরা গাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে।ওদের মনে হয়েছিল কেউ গাড়িকে পিছন থেকে টেনে ধরেছে।কিন্তু আশেপাশে কেউই ছিল না।
“এইটা কি করে হলো??
দ্বিধা শান্ত গলায় বলে–
“জাদ করেছে।”
“মানে??
“হুম।জাদ ছিলো এখানে।আমি ওকে অনুভব করতে পারি।”
রিশাল অবাক চোখে তাকায় দ্বিধার দিকে।
“চলো এখন।”
“হুম।
দ্বিধার নজর এখনো জাদ কেই খুজে বেড়াচ্ছে।
চলবে,,,