অন্ধকার মানব পর্বঃ২১

0
688

#অন্ধকার_মানব(The unpredictable love)
#পর্ব_২১

লিখা✍️তাজরিয়ান খান তানভি

মানুষ কি আসলে চেহারা দেখে ভালোবাসে নাকি মন দেখে?কি জানি?এর সংজ্ঞা একেক জনের কাছে একেক রকম।আচ্ছা মানুষের রূপ ভয়ংকর হলেই যে তার ভালোবাসা ভয়ংকর তাতো নয়।তাহলে দ্বিধা কেনো জাদ কে দ্বিতীয়বার সুযোগ দিবেনা??

পর্দার ফাঁক দিয়ে ভোরের আলো দ্বিধার চোখে পরতেই ওর ঘুম ভেঙে যায়।সামনে জাদ কে দেখে চমকে উঠে বসে।
“আপনি??
“জ্বি আমি।”
“এখানে কেনো?
জাদ বিছানায় গা এলিয়ে হাত দুটো মাথার নিচে দিয়ে শুয়ে বলে–
“আপনাকে দেখতে ইচ্ছে হলো তাই।”
“তাই বলে আপনি আমার বেড রুমে চলে আসবেন?
“হবু বউ এর রুমে এসেছি তো এতে সমস্যা কোথায়।”
“হবু বউ মানে??কে আপনার বউ??
কে বলল আমি আপনাকে বিয়ে করবো?
জাদ উঠে ওর মুখের সামনে গিয়ে বলে–
“কেনো এখন বুঝি আর বিয়ে করতে ইচ্ছে হয় না।”
ওর কথায় দ্বিধা কিছুক্ষন ভাবে।
“আপনি ভিতরে এলেন কি করে?
“বাড়ির ভিতরে এসে সিড়ি বেয়ে আপনার রুমে চলে এলাম।”
দ্বিধা বিরক্তি নিয়ে বলে–
“আমি তা বলিনি।নিচে কেউ ছিলনা??
“ছিল তো আমার শাশুড়ি মা।উনিই তো আমাকে এখানে পাঠালেন।”
“আপনি এখানে কেনো এসেছেন সত্যি করে বলুন তো?
জাদ এক ঠান্ডা দৃষ্টিতে ওর দিক তাকায়।
“আজকাল আমার কথা আপনার বিশ্বাস হয় না?
দ্বিধা ভেজা গলায় বলে–
“কি করে হবে বলুন,,,,আপনি যে এতোবড় লুচু তাতো আমি জানতাম না।”
“কি,,,
কি বললেন আপনি??
“যা বলেছি ঠিক বলেছি।আর কোন মেয়ে পেলেন না রিপ্তি কে পটিয়ে নিলেন।”
জাদ মৃদু হাসে।
“সুধানিধী,আজকাল আপনি এইসব কি ধরনের ভাষা ব্যবহার করেন?
দ্বিধা বিছানা থেকে উঠে দাড়ায়।
“বলেছি বেশ করেছি।লজ্জা করলো না আপনার রিপ্তি কে শাড়ী গিফ্ট করতে?
“এখানে লজ্জার কি আছে।রিপ্তি মেয়েটা বেশ মিষ্টি।ওর হাসিটাও।”
“বাহ!!একদিনে তো ভালো এক্সপেরিএন্স হয়েছে আপনার।”
“একদিনে কেনো হবে??
“তার মানে,,,,
দ্বিধা চোখ বড় বড় করে জাদ এর দিকে তাকায়।
আপনি বলতে চাচ্ছেন অনেকদিন ধরে?
“হুম।প্রায় একমাস।”
“ছিঃ লজ্জা করলো না আপনার একটা ভোলাভালা মেয়ের সাথে এমন করতে।”
জাদ মিটিমিটি হাসে।
ও আবার বলে–
“লুচু ব্যাটা কোথাকার।এইজন্যই ওকে শাড়ী গিফ্ট করেন তাই না।কই আমাকে তো কোনোদিন কিছু গিফ্ট করেন নি।”
জাদ উঠে দাড়িয়ে দ্বিধার হাত ধরে ওকে ঘুরিয়ে দাড় করায়।
ওর গলায় একটা কালো ক্রিস্টাল পাথরের লকেট পরিয়ে দেয়।
“দেখুন তো পছন্দ হয় কিনা?
“দ্বিধা আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ায়।
“বেশ সুন্দর তো লকেট টা।আমার জন্য?
“আপনার গলায় যেহেতু পড়িয়েছি তাহলে তো আপনার জন্যই।”

“এই কাপড়েই থাকবেন নাকি চেঞ্জ করবেন?
এতোক্ষন দ্বিধা খেয়ালই করে নি ও রাতে একটা স্লীভলেস গেঞ্জি আর হাটু অব্দি একটা প্যান্ট পরে আছে।মনে পরতেই ভীষন লজ্জা পায় ও।কাভার্ড খুলে একটা ড্রেস নিয়ে জাদ কে ওয়েট করতে বলে ওয়াশরুমে চলে যায়।

কিছুক্ষন পর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ও কাউকে ঘরে দেখতে পায় না।দরজার কাছে গিয়ে দেখে তাতেও ভিতর থেকে লক করা।তাহলে কি ও ভুল দেখলো??
গলায় হাত দিয়ে দেখে লকেট টা এখনও ওর গলায় আছে।তার মানে জাদ সত্যিই এসেছিল।বিছানার উপর চোখ পরতেই দেখে একটা কাগজ আর কিছু বেলি ফুল রাখা।
কাগজে লিখা–
“মৃত্যুর যন্ত্রণা চেয়ে বিরহের যন্ত্রণা যে কতো কঠিন,কতো ভয়ানক তা একমাত্র ভুক্তভোগী অনুভব করতে পারে।””
—কাজী নজরুল ইসলাম।

.
.
.
.
ভার্সিটি তে এসে দেখে জাদ একটা গাছের নিচে বসার জন্য তৈরি করা বেঞ্চগুলো তে একা বসে আছে।দ্বিধা ওর কাছে গিয়ে বলে—
“এইসবের মানে কি?আপনি মিথ্যে কেনো বললেন?
জাদ চুপচাপ বসে আছে।দ্বিধা আবার বলল–
“কথা বলছেন না কেনো??
জাদ উঠে চলে যেতে চাইলে ওকে থামিয়ে বলে–
“কোথায় যাচ্ছেন??অসভ্য,বেয়াদব কোথাকার।সেই কখন থেকে বলছি আপনার কানে,,,,,,,
কথা শেষ হওয়ার আগেই জাদ দ্বিধার অধর নিজের আয়ত্বে নিয়ে নেয়।
আশেপাশের সব স্টুডেন্ড হা করে দেখছে,,অবশ্য তাতে জাদ এর কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।ও এখনো দ্বিধার অধর ছুইয়ে আসে।
দ্বিধা অনেক কষ্টে ওকে ছাড়িয়ে চড় মারার জন্য হাত তুলতেই জাদ তা ধরে ফেলে।
“সুধানিধী,,আপনি এতো তাড়াতাড়ি রেগে যান কেনো বলুন তো?
আপনিই তো তখন বললেন,,,
আআ কি যেনো বলেছিলেন?ও মনে পড়েছে লুচু।
তখন তো তেমন কিছুই করিনি তাই এখন করলাম। এখন আপনি নির্দ্ধিধায় আমাকে লুচু,অসভ্য,বেয়াদব যা খুশি বলতে পারেন আমি কিছু মনে করবো না।
ও আরেক টা কথা আপনার ঠোঁটের স্বাধ কিন্তু বেশ মিষ্টি।”
জাদ এর কথায় আর এইধরনের কাজে ও ভীষন রেগে যায়।
“আপনি,,,আপনি আসলেই একটা,,,,,,,
দ্বিধা রেগে সেখান থেকে চলে যেতে চাইলে জাদ পিছন থেকে বলে–
“কি হলো বললেন না তো আমি কি??
দ্বিধা চিৎকার করে বলে–
“আপনি একটা খবিশ,ন্যাংটি ইদুর,বদমাইশ,কচ্ছপের ডিম,,,,,,

জাদ সেখানে দাড়িয়েই হাসতে থাকে।
.
.
.
.
রিশাল আজ কোনো কাজে বাহিরে গেছে তাই দ্বিধা আর রিপ্তি একাই বাসায় ফিরছে।অনেকদিন দুজনের একসাথে আড্ডা দেওয়া হয় না তাই রাস্তার পাশের ফুটপাত দিয়ে দুই বান্ধবি হাটছে আর কথা বলছে।ঠিক সেই সময় একটা গাড়ি এসে থামে ওদের সামনে।গাড়ি থেকে নেমে ইতাফ ওদের সামনে এসে দাড়ায়।
“মায়াপরী,আপনি এতো সহজে আমাকে ভুলে গেলেন?
“দেখুন প্রফেসর আমি আপনাকে আগেই বলেছি যে আমি আপনাকে একজন শিক্ষক এর চেয়ে বেশী কখনো ভাবিনি।”
“রিপ্তি তুমি কি আমাদের একা ছাড়তে পারবে?
“শিওর প্রফেসর।”
ইতাফের কথায় রিপ্তি একটু দুরে গিয়ে দাড়ায়।
“আপনি কি সবজেনে শুনে জাদ এর সাথে সম্পর্কে জড়াচ্ছেন?
ইতাফের এমন প্রশ্নে দ্বিধা খানিকটা অপ্রস্তুত হয়।ও শক্ত গলায় বলে–
“সব জেনেশুনে মানে???
“আপনি নিশ্চয় জানেন জাদ কোনো সাধারন মানুষ,,,,,
কোথা থেকে জাদ এসে ইতাফ কে ধাক্কা মেরে বলে–
“তোকে না ওর থেকে দুরে থাকতে বলেছি।মরতে চাস আমার হাতে?
দ্বিধার হাত ধরে টেনে ওকে নিজের গাড়ীর কাছে নিয়ে হাত দুটো গাড়ির সাথে চেপে বলে-
“সমস্যা কি আপনার??কথা কানে যায় না নাকি একজন দিয়ে হয় না আপনার??
দ্বিধা নিজেকে ওর থেকে ছাড়িয়ে বলে–
“এইসব কি ধরনের কথা??
“গাড়িতে উঠুন।”
“কেনো??
“বললাম তো গাড়িতে উঠুন।”
“কিন্তু রিপ্তি,,,
“ওর কথা আপনার না ভাবলেও চলবে।”
গাড়িতে বসেই জাদ রিপ্তি কে কল করে বলে—
“হ্যালো রিপ্তি
আমি সুধানিধি কে নিয়ে যাচ্ছি তুমি একটু কষ্ট করে ট্যাক্সি নিয়ে চলে যাও।”

ওরা দুজন আই সি ইউ বাইরে বসে আছে।রিশাল এর অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে।অ্যাকসিডেন্ট বললে ভুল হবে ওর এই অবস্থা ইতাফ করেছে।কিন্তু জাদ তা দ্বিধা কে বলেনি।
“এইসব কি করে হলো জাদ??
“জানি না।”
“ও ঠিক হয়ে যাবে তো।”
“আই হোপ সো।”
“কিন্তু ওকে এখানে আনলো কে?
“মম,ড্যাড।হসপিটালে আসার সময় ওকে রাস্তায় দেখতে পায় রক্তাক্ত অবস্থায় পরে আমাকে জানায়।”
“আজ সকালে কোনো একটা কাজে বেরিয়ে যায়।কে জানতো এমন হবে।”
দ্বিধার চোখ দিয়ে পানি পরছে।ছেলেটা সবসময় ওকে আগলে রেখেছে।
“কাদবেন না ও ঠিক হয়ে যাবে।”

“একটা কথা বলবো??
“বলুন।”
“আঙ্কেল আনটিও কি আপনার মতো,,,
“জ্বি তারাও আমার মতো।দে আর মাই বায়োলজিক্যাল প্যারেন্ট সুধানিধী।আমাকে তারা দত্তক নেইনি।?
“আসলে আমি তা বলতে চাই নি।আপনাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা তো রক্ত।তাহলে আঙ্কেল আনটি এই পেশা কেনো বেছে নিলো??
“হ্যা, এটা ঠিক।তারা নিজেদের কন্ট্রোল করার জন্য সিরাম ইউস করে যার ডোজ তারা এক সপ্তাহ পর পর নিজের শরীরে ইঞ্জেক্ট করে।”
“আপনার এই সিরাম সাথে করে নিয়ে এসেছেন?
“নাহ। এইটা প্রফেসর গোমস তৈরি করে দিতো।”
দ্বিধা অবাক হয়ে বলে–
“তার মানে মি.গোমস জানতো আপনাদের সম্পর্কে??
“হ্যাঁ।”
“কিন্তু এখন তো উনি নেই।”
“কিন্তু তার ফর্মূলা মম ড্যাড এর কাছে আছে তাই তারা নিজেরাই তৈরি করে নেন।”
“ওনাকে তো খুন করা হয়েছে।”
“জানি,,।

ফ্রিদা আর আইভান এসে দাড়ায় সেখানে।দ্বিধা তাদের কাছে গিয়ে বলে–
“রিশাল এর কি অবস্থা?
“হি ইজ আউট অফ ডেঞ্জার।হি উইল ভি অলরাইট মাই গার্ল,নাথিং টু ওয়ারি।”
“ধন্যবাদ আনটি।”

আইভান ছেলের কাছে গিয়ে বলল—
“তুমি দ্বিধা কে বাসায় পৌছে দিও।”
জাদ আইভান এর কাছে গিয়ে বলে—
“আপনারা আজ এখানেই থাকুন।ইতাফ রিশাল কে আবার অ্যাটাক করতে পারে।”
“আমাদের যা করার ছিলো আমরা করেছি।এর বেশি আমাদের দ্বারা পসিবল না।”
“ড্যাড আপনি ভুলে যাচ্ছেন নবনীযুক্তাকে আপনাদের প্রয়োজন সো আমি যা বলেছি তা আপনাদের করতেই হবে।
চলুন সুধানিধী।আপনাকে বাসায় পৌছে দেই।”

বাসায় এসেই সোফার উপর হাত পা ছড়িয়ে বসে জাদ।
“কি হলো বসে পড়লেন যে??
“ইচ্ছে হলো তাই।”
মি.আর মিসেস ইরাম দ্বিধা কে রিশাল এর অবস্থার কথা জিঙ্গেস করলে ও বলে–
“রিশাল ভালো আছে।জাদ এর মা বাবা ওকে অবজার্ভ করছে।”
জাদ দাড়িয়ে অনুনয়ের সুরে বলে–
“আপনাদের সাথে আমার কথা ছিল।
আসলে আপনারা যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আমি কি আপনাদের বাসায় আজ থাকতে পারি??
ইরাজ ইরাম শান্তভাবে বললেন–
“তার কি কোনো প্রয়োজন আছে?
“যদি বলি আছে।”
পারিজা ইরাম স্বামী কে একটু আড়ালে নিয়ে বললেন–
“ও যখন বলছে থাক না আমাদের বাসায় এতে সমস্যা কোথায়?
“পারিজা কেনো বুঝতে পারছো না জাদ ছেলেটা কে আমার কখনই সাধারন মানুষ মনে হয় না। ছেলেটা কে যতই দেখি অদ্ভুত অনুভূতি হয়।”
“আপনি সবকিছু নিয়ে একটু বেশিই ভাবেন।”

সন্ধ্যা থেকে জাদ চুপচাপ বসে আছে।পারিজা অনেকবার খাওয়ার কথা বললেও ও না করে।
ইরাজ ইরাম ওর সাহচার্য তেমন পছন্দ না করলেও নিজের ঘর থেকে কড়া দৃষ্টি রাখছে জাদ এর উপর।

“কি হলো চুপচাপ বসে আছেন যে?
“নাচার কোনো ইচ্ছে এখন আমার নেই।”
“আপনার এই উল্টাপাল্টা কথা না বললে ভালো লাগে না?
“জানিনা।”
“খিদে পেয়েছে??
“নাহ।”
দ্বিধা মিটিমিটি হেসে বলে–
“পিপাসা পেয়েছে তাই না?
“আপনি যান তো এখান থেকে।”
“কেনো???নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছেন না বুঝি??
“কি আজেবাজে কথা বলছেন?
দ্বিধা ওর হাত টেনে বাহিরে নিয়ে আসে।
“যান নিজের পিপাসা মিটিয়ে আসুন।”
“মানে???
দ্বিধা ওর মুখ জাদ এর কানের কাছে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে—
“ব্যাক ইয়ার্ডে দুটো খরগোশ ছানা আছে।”
“তার কোনো প্রয়োজন নেই।”
“কেনো বলুন তো,,,খরগোশ ছানায় হবে না বুঝি আপনার?
(দ্বিধা ওর ঘাড়ের চুল সরিয়ে বলে)তাহলে নিন বাকিটা না হয় আমার রক্ত দিয়ে মিটিয়ে নিবেন।”
জাদ এর চোখ ক্ষীপ্ত হয়ে নীল রঙ ধারন করে।মুহুর্তেই,,,

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here