অন্ধকার মানব পর্বঃ২৩

0
667

#অন্ধকার_মানব(The unpredictable love)
#পর্ব_২৩

লিখা✍️তাজরিয়ান খান তানভি

দরজায় অনবরত কড়াঘাত পরতেই জাদ দরজা খুলে দেখে দ্বিধা দাড়িয়ে।

“আপনি এখানে??

দ্বিধা ওকে সরিয়ে ভিতরে ঢুকে পরে।
“পাপা আমাকে ঘরে বন্ধি করে রেখেছিলো।”

জাদ শান্ত গলায় বলে–
“এখানে কি করে এলেন?

“মাম্মা খাবার দিতে এসেছিল আর তাকেই,,,

“এইটা আপনি ঠিক করেন নি।”

“কি করেছি জানি না।কিন্তু যা করেছি বেশ করেছি।”

জাদ সোফায় হেলান দিয়ে বসে।দ্বিধাও ওর পাশে বসে।
“আপনার এখানে একা আসা উচিত হয়নি।”

“তাহলে কি কনে পক্ষের সবাইকে নিয়ে আসবো!

“সব কিছু বুঝেও কেনো অবুঝের মতো কাজ করেন?

হঠাৎ জাদ এর নাকে তীব্র রক্তের ঘ্রাণ ভেসে আসে।ওর মনে হয় আশেপাশেই কোথাও তার উৎস।

“সুধানিধী,কি করছেন আপনি?

“কিছু নাতো।”

দ্বিধা বাসা থেকে আসার সময় একটা বোতল ভেঙে তার এক টুকরা হাতের মুঠোয় করে নিয়ে এসেছে।আর এতোক্ষন হাতে সেটাই চেপে ধরেছে আর তাই ওর হাত কেটে সেখান থেকে টুপ টুপ করে রক্ত পরছে নিচে।

“সত্যি করে বলুন তো আপনি কি করেছেন??

জাদ ধীরে ধীরে নিজেকে কন্ট্রোল করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে।ওর নীলাভ চোখ গাঢ় থেকে গাঢ় রঙ ধারন করছে।
ওর হাতে রক্ত দেখে ক্ষেপে গিয়ে বলে–
“আপনি কি পাগল হয়ে গিয়েছেন??

দ্বিধার দৃঢ় কন্ঠে বলে–
“আমাকে মারতে এসেছেন তাই না?

“নাহ।”

“তাহলে কেনো এসেছেন?

“আপনাকে বাচাতে।”

“ভালোবাসেন আমাকে?

“নাহ।”

“তাহলে মেরে ফেলুন আমাকে।মিটিয়ে নিন আপনার রক্তের পিপাসা।”

জাদ আর কোনো ভাবেই নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারছে না।দ্বিধার শরীরের তীব্র নেশাভরা রক্তের ঘ্রাণ ওর ভিতরকার দানবকে জাগিয়ে তুলছে।ওর ভয়ংকর দাঁত ঠোঁটের কার্নিশ বেয়ে বাহিরে বেরিয়ে এসেছে।এক ভয়ংকর আওয়াজে দ্বিধা কে বলল–
“চলে যান এখান থেকে।”

“কোথাও যাবো না আমি।”

জাদ আর পারেনি এক নিমিষে পৌছে যায় দ্বিধার ঘাড়ের কাছে।

দ্বিধা এক চিৎকার দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে।ওর নিঃশ্বাসের আওয়াজ বাইরে থেকেও স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে।

কোনো কিছুর সাড়াশব্দ না পেয়ে ও আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকায়।জাদ নেই সেখানে।
জাদ একটা ফার্স্টএইড বক্স নিয়ে আসে।

“বসু এখানে।”

“খাবেন না আমার রক্ত।”

“কি ভাবেন আপনি নিজেকে?ভয় করলো না আপনার?

“মারছেন না কেনো আমাকে?মেরে ফেলুন।”

“বারবার কেনো একই কথা বলছেন?
জাদ ওর হাত ড্রেসিং করে তাতে ব্যান্ডেজ করে দেয়।

“চলে যান এখান থেকে।”

“আমি যেতে আসিনি।ভালো যখন বাসতেই পারবেন না তাহলে নিজেই মেরে ফেলুন আমায়।”

জাদ চিৎকার করে বলে–
“কেন বুঝতে পারছেন না আপনি আমি আপনাকে মারতে আসিনি বাচাতে এসেছি।
কি করে মারবো আমি আপনাকে,আপনাকে যে আমি ভালো,,,,
কেনো বারবার ভালোবাসার কথা বলে আমাকে দুর্বল করে দিচ্ছেন।”

জাদ দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে নিচে বসে পরে।দ্বিধাও ওর পাশেই বসে।

“আমি জানি আপনি আমাকে ভালোবাসেন তাহলে কেনো করছেন এইসব?

জাদ দ্বিধার দিকে নিস্প্রান চোখে তাকায়।
“একটা গল্প শুনবেন?

“বলুন।”

“তাহলে শুনুন,,
আজ থেকে প্রায় ৫০০বছর আগে আমেরিকার একটি ছোট্ট শহর মন্টপিলিয়ার ভার্মন্টটি তে ভয়ংকর ভ্যাম্পায়ার দের তান্ডব চলছিল।তাদের ভবিতব্য রাজা ছিল অনেক হিংস্র।কোনো কিছুতে হারতে শিখেনি সে।সময়ের সাথে সাথে তার হিংস্রতা আরো বেড়ে যায়।
কিন্তু ভ্যাম্পায়ারদের হিংস্রতা ছিলো আধারে আর দিনের আলোতে তারা সাধারন মানুষের মতোই জীবনযাপন করে।তাদের মধ্যে একজন সেখানকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল।অন্যসব মানুষদের মতোই সে সেখানকার একজন সাধারন ছাত্র ছিল।তার অস্তিত্ব সম্পর্কে কেউ জানতো না।
একদিন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মেয়ে এলো।যে সবার থেকে আলাদা ছিল।ভ্যাম্পায়ার ছেলেটি ধীরে ধীরে তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ল।মেয়েটির কথা,হাসি,আচরন সবকিছুই তাকে চুম্বকের মতো আকর্ষিত করতো।ও বুঝতে পারছিল না কি করবে।কারন,মেয়েটি সাধারন মানুষ ছিল।ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠল।ছেলেটি তাকে সত্য বলতে গিয়েও পারেনি শুধু তাকে হারানোর ভয়ে।
জাদ কিছুক্ষন থামল।

“তারপর কি হলো??

“কিন্তু একদিন সে সবকিছুই জেনে যায়।”

দ্বিধা উদ্বেলিত হয়ে বলল—
“তখন কি করলো মেয়ে টি??
সে কি তাকে ছেড়ে চলে গেছে?

“নাহ।ধীরে ধীরে ওদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে শুরু করলো।
মেয়েটি অনাথ ছিলো।তাই একদিন তার জন্মদিন এ ছেলেটিকে আসতে বলল।
কিন্তু,,,,

“কিন্তু কি??

“কিন্তু যতক্ষনে ছেলেটি সেখানে পৌছায় তার আগেই ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের রানী তাকে মেরে ফেলে।”
দ্বিধার চোখের জলপুকুর এতোক্ষনে ভুমি স্পর্শ করেছে।ও ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে জাদ এর দিকে।

“কেনো মারলো ওকে?

“ভালোবাসার কারনে।একজন সাধারন মানুষ হয়ে একজন ভ্যাম্পায়ার কে ভালোবাসার অপরাধ করেছে সে।তার মৃত্যুই তার সাজা।”
জাদ এর কন্ঠ সম্পুর্ন বিধ্বস্ত।
দ্বিধা তার কাপা কাপা ঠোঁটে বলে–
সেইই ছেছছলিলিটিই কি আআপননি??
জাদ এর নিরব সায়।

“হুম।”

“আর মেয়েটি??

“দেখবেন তাকে??

“হ্যাঁ।”
জাদ ওর পকেট থেকে একটা পুরোনো সাদাকালো ছবি বের করে যা অনেকটাই অস্পষ্ট।
একটা মেয়ে যার হাসিতে যেনো মুক্ত ঝরছে।লম্বা চুল কপালের পাশ থেকে পুরো পিঠ জুড়ে রয়েছে।

“এইটা তো,,,
দ্বিধা জাদ এর দিকে গোল গোল চোখে তাকিয়ে আবার বলে—

“ও তো আমার মতো দেখতে!!

“ভুল বললেন সুধানিধী।সে আপনার মতো নয়,আপনি তার মতো দেখতে।”

“কি নাম তার?

“মাহনুর(চাঁদের উজ্জ্বলতা )

“এখনো ভালোবাসেন তাকে?

“চিরকাল বাসবো।”

“তার পাশে কি আমাকে একটু জায়গা দেওয়া যায় না??

“নাহ।”

“কেনো?

“আমি তাকে হারিয়েছি আপনাকে হারাতে পারবো না।তাই আমাকে ভুলে যান।”

“আমার পক্ষে তা সম্ভব নয়।”

জাদ উত্তেজিত হয়ে বলে–
“কেনো সম্ভব নয়।
মাহনুর ও আমার জীবনে পূর্নিমা চাঁদের আলো হয়ে এসেছিলো কিন্তু আমার এই অন্ধকার অভিশপ্ত জীবন ওর প্রান কেড়ে নিয়েছে।”

“এতে আপনার তো কোনো দোষ নেই।”

“সব আমার দোষ।আমি সব জেনেও ওকে ভালোবেসেছি আর তার শাস্তি শুধু সে একাই পেয়েছে।”

“কিন্তু জাদ,,,
দরজা খুলেই সেখানে আসে রিশাল।

“স্পাইসি তুমি এখান কেনো এলো??

দ্বিধা কিছু না বলে উঠে দাড়ায়।সামনে এগিয়ে বলে–
“চলো রিশাল।”

পিছন ফিরে তাকিয়ে জাদ কে বলে–
“আজ আমি চলে যাচ্ছি।
আমি আবার আসবো।আর সেদিন আপনাকে আমাকে গ্রহন করতেই হবে।
জানেন তো,
আত্মা ছাড়া শরীরের কোনো মূল্য নেই।আপনি আমার সেই আত্মা।আপনাকে ছাড়া আমার অস্তিত্ব মূল্যহীন।”
.
.
.
.
পুরো ঘর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ইরাজ ইরাম।পারিজা ইরাম কেও শাসিয়ে যাচ্ছে দ্বিধা কে ঘর থেকে বের হওয়ার সুযোগ দিয়েছে বলে।
দ্বিধা কে বাড়ির দোরগড়ায় দেখে ভিষন চটে যায়।

“তোমার এতো সাহস হলো কি করে ওই ছেলের কাছে যাওয়ার।”

“আই অ্যাম রিয়েলি সরি পাপা।আর এমন হবে না।আজ থেকে আমি কোথাও যাচ্ছি না।কিন্তু আমাকে আমার মতো থাকতে দিন।”
দ্বিধা উপরে যেতেই ইরাজ বলে–

“”রিশাল ওর হয়েছে কি?”

“আমি জানি না।”

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here