মনের_অন্দরমহলে পর্ব ২_৩
#আনিশা_সাবিহা
গায়ে লাল ভারি বেনারসি সঙ্গে গয়না পড়ে হাঁটতে একটু কষ্টই হচ্ছে। ক্লান্ত হয়ে পড়েছি একপ্রকার। আমার হাত ধরে হাঁটছে একটা নয়-দশ বছরের মেয়ে। তার নাম সাবু। বাড়ি থেকে বের হতেই ওদের বাড়ি পরে। আমি একটা যেতে পারব না বলে আমায় ধরে সাথে নিয়ে যাচ্ছে সাবু। আমার পায়ে নেই জুতো। হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে। সন্ধ্যে নেমে রাত হয়ে এসেছে বোধহয়। হঠাৎ থেমে গেলাম আমি। পায়ের তলায় মনে হলো কিছু একটা ফুটেছে। যন্ত্রণার চোটে চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করলাম। সাবুর আওয়াজে চোখ খুললাম।
–“আপা, কি হলো দাঁড়ালে কেন? যাবে না?”
–“হ্যাঁ রে চল।”
বলেই হাঁটা দিলাম আমি। এখন থামলে চলবে না। খুব একটা বেশি দূরে যেতে পারিনি এখনো। এভাবে আমায় পালাতে হবে আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। তাও বিয়ের সাজে। ইচ্ছে করছে মা-বাবার কথা ভেবে ফিরে যেতে। কিন্তু আয়াশের কথা ভেবে আঁটকে যাচ্ছি আমি। বুঝতে পারছি না এটাকে ভাগ্য নাকি আয়াশের দোষ দেব? আমার জীবনে আয়াশ রায়হান নামক লোকটার উদয় না হলেই চলছিল না? ভালোই তো ছিলাম। আয়াশ যতটা ভয়ানক মানুষ ঠিক তেমনটাই ভয়ানক ছিল উনার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ!
ফ্ল্যাশব্যাক…..
জায়গাটা ব্যাংকক। একটা সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ শহর। সকলের মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো জায়গা। এই শহরের এক নামি-দামি রিসোর্টের সুইমিংপুলে নাচগান করছে অর্ধনগ্ন বিদেশি মেয়েরা। মিউজিকটাও বাজছে বেশ জোরে জোরে। হাতে রেড ওয়াইনের গ্লাস নিয়ে অর্ধেক পানিতে ডুবে তাদের সঙ্গে তালে তাল মেলাচ্ছে এক সুদর্শন পুরুষ। হালকা পানির ছিটা পড়ে কপালের সঙ্গে লেগে নেতিয়ে গেছে পুরুষটির চুল। মাঝে মাঝে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে দিচ্ছে গ্লাসে। এক অদ্ভুত হাসি মুখে লেগেই থাকে সবসময়। যখনই তার দিকে কেউ তাকাবে তখনই তাকে হাসতেই দেখবে। তার চেহারাটাই এমনটাই যে মনে হয় সবসময় হাসির রেশ লেগে থাকে। ফর্সা ধবধবে গায়ের চামড়া বিদেশীদের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। খাঁড়া নাক এবং তার ডগায় একটা ছোট্ট কালো তিল। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ঘন চোখের পাপড়ির মাঝে তীক্ষ্ণ চোখজোড়া। সেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব! প্রশস্ত দেহ বেশ ধৈর্য নিয়ে এক্সারসাইজের ফল। লম্বায় প্রায় পাঁচ ফুট নয় ইঞ্চি। তার বেশিও হতে পারে। সব মিলিয়ে নজরকাঁড়া এক পুরুষ!
মুখে হাসির রেখা টেনে সকলে মেয়ের দিকে নিজের প্রখর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আবার চোখ সরিয়ে নিল আয়াশ। একজনকেও তার মস্তিষ্ক টানল না। এরা শুধু মনোরঞ্জনের জন্যই ঠিক এর বেশি কিছুই না।
–“স্যার, আপনার কল এসেছে। গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে নাকি আপনার সাথে।”
ঘাড় ঘুড়িয়ে পেছনে তাকায় আয়াশ। তার এসিস্ট্যান্ট লইয়ার জুহায়ের ফোন এগিয়ে দেয় তার দিকে। ছেলেটার বয়স অনেকটা কম আয়াশের থেকে। আয়াশ তার সিনিয়র। বর্তমানে তার সঙ্গে থেকে যুক্তিতর্ক শিখে চলেছে জুহায়ের। তার সঙ্গেই বেশিভাগ সময় থাকে।
–“বাড়ি থেকে কল এসেছে? তাহলে কল কেটে ফোন ফেলে দাও।”
আয়াশের বিরক্তি মাখা কথায় জুহায়ের দ্রুত মাথা নাড়িয়ে ভীতি সুরে বলে…..
–“আরে না না স্যার। আমি তো জানি আপনি ফ্যামিলির কারো কল ধরেন না বা পছন্দ করেন না। এটা বাইরে থেকে কল। মনে হয় কোনো কেসের জন্য আপনাকে হায়ার করতে চায়।”
–“জুহায়ের? আমরা ব্যাংককে আছি। ইনজয় করছি। কেস-হিস্ট্রির ব্যাপারে আমাকে ঘাঁটাতে মানা করো।”
–“ওরা নাকি যা যত এমাউন্ট চাইবেন তাই দিতে রাজি আছে।”
বলেই আয়াশের দৃষ্টি দেখে চুপ হয়ে গেল জুহায়ের। আয়াশ গ্লাস রেখে সুইমিংপুল থেকে উঠে আসে। এক কর্মচারি ওর গায়ে সাদা বাথরোব জড়িয়ে দেয়। সেটা পরে আয়াশ জুহায়ের এর থেকে ফোনটা নিয়ে কানে ধরে। গম্ভীর গলায় বলে…..
–“হ্যালো! আয়াশ রায়হান ইজ হেয়ার।”
–“হ্যালো, মি. রায়হান। আমি রক্তিম বাহাদুর।আপনার অনেক নামডাক শুনেছি। তাই ভাবলাম একবার তো আপনার সঙ্গে কথা বলা যেতেই পারে।”
আয়াশ বাঁকা হাঁসে। তোয়ালে নিয়ে নিজের চুল মুছতে মুছতে বলে….
–“কাম টু দ্যা মেইন পয়েন্ট মি. বাহাদুর।”
ওপরপাশে মি. বাহাদুর থতমত খেয়ে জবাব দেয়….
–“ওহ ইয়েস। আসলে আমি আপনাকে একটা কেসের জন্য হায়ার করতে চাই। বিষয়টা খুব জটিল। ভাবলাম আপনি হলে কেসটা আমাদের পক্ষে আসা কঠিন না।”
–“হুমম বুঝলাম। কিন্তু এতে আমার লাভ? আমি বর্তমানে দেশে নেই। এখন কেস হাতে নিলে আমায় দেশে ফিরতে হবে। আপ্লিকেশন করতে হবে কোর্টে, কেস নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে হবে মহা ঝামেলা! এতো কিছুতে আমার লাভ কোথায়?”
মি. বাহাদুর উদ্বিগ্ন হয়ে বলে….
–“আপনি যা যাইবেন তাই দেব।”
আয়াশ ভ্রু কুঁচকায়। তারপর হঠাৎ হাসে। হাসিতে দুইগালে টোল পড়ে তার। তবে চুপ থাকে। ওপাশ থেকে মি. বাহাদুর চিন্তিত হয়ে বলেই ফেলেন…..
–“২৫ থেকে ৫০ লাখ! এর মাঝে চা চাইবেন তাই দেব মি. রায়হান।”
–“ওকে দেন। আমি দেশে ফিরে বাকি কথা শুনছি। বাই।”
বলেই কল কেটে দেয় আয়াশ। ফোনটা জুহায়ের এর হাতে ধরিয়ে দিয়ে আয়েশ করে মাথা মুছতে মুছতে রিসোর্টের দিকে পা বাড়ায়। জুহায়ের এর উদ্দেশ্যে জোরে বলে ওঠে….
–“টিকিট বুক করে নাও এজ সুন এজ পসিবল! দেশে ফিরছি।”
জুহায়ের শুধু মাথা নাড়ায়।
৩ দিনের মাথায় দেশে পা রাখে আয়াশ। কেস সম্মন্ধে খোঁজখবর নেয় ভালো ভাবে। রক্তিম বাহাদুরের সঙ্গে দেখাও হয় তার। আয়াশ জানতে পারে রক্তিম একটা মেয়ে পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে কেস করেছে। যেটা একশত ভাগ সত্যি। আর এটাও জানতে পারে কক্সবাজারে সেই মেয়ে পাচারকারী চক্রের পরের টার্গেট। যদি সেখানে যাওয়া যায় হাতেনাতে প্রমাণ পাওয়া যাবে। এই প্রমাণ কেস জিতিয়ে দিতে সক্ষম! আয়াশ সুযোগটা হাতছাড়া করে না। চলে যায় সকলের সঙ্গে কক্সবাজার।
কক্সবাজার! পৃথিবীর সবথেকে বড় সমুদ্রের অবস্থান এখানে। সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ জায়গাটির ভাঁজে ভাঁজে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন আদিবাসী সমাজেরও বসবাস সেখানে।
–“মা আমি বাইরে যাচ্ছি। দুপুরে চলে আসব। আজকে তো ছুটি হোটেলে কাজও নেই। ছোটরা আমাকে নিতে এসেছে।”
বলেই ছোটদের হাত ধরে বের হতে নিলাম আমি। মা কিছু না বললেও বাঁধ সাধলো দাদিমা।
–“এই মেয়ে! হোটেলে কাজ নেই বলে বাইরে কই যাইবি এই সময়? সকাল সকাল এমন জোয়ান মেয়েদের বের হতে নেই তাও একা একা। বাড়িতে বসে থেকে মায়ের কাছে রান্নাবান্না শিখে নে যা।”
–“সপ্তাহে একটা দিনই তো পাই দাদিমা। এমন করো কেন সবসময় আমার সাথে বলো তো? তুষারের সাথে তো এমন করো না। তুষার এখনো কত ছোট। তবুও সারাদিন বাইরে থাকলেও ওকে কিছু বলো না। অথচ আমি বাইরে পা বাড়ালেই দোষ!”
দাদিমা জোরে চেঁচিয়ে বলে ওঠে……
–“কারণ তুই মেয়ে মানুষ। মেয়েদের এতো বাইরে গিয়ে ধিঙ্গিপনা দেখাতে নেই। তার ওপর চোখের মাথাও তো খেয়ে বসেছিস। সেটাও আমার কথা না শোনার ফল।”
বিরক্তিতে অতিষ্ঠ হলাম আমি। দাদিমার কাছে সব কথার একটাই উত্তর, ‘কারণ তুই মেয়ে।’
এই একটা বাক্য সবসময় সব মেয়েদের মনোবল ভেঙে দেয়। আমি আর কথা বাড়ালাম না। ছোটদের উদ্দেশ্যে বললাম…..
–“চল নিয়ে চল আমাকে। আজ নাকি তোদের কোনো অনুষ্ঠান আছে? নাচগান নাকি হবে সমুদ্রের ধারে?”
ছোটদের মাঝে একজন মিষ্টি করে উত্তর দিল…..
–“আরে হ্যাঁ তো। আজ অনেক মজা হবে। চল না চল!”
আমিও তাদের জবাবে হাসলাম। দাদিমা বিড়বিড় করতে থাকলেন। আমায় সকলে ধরে বের করিয়ে নিয়ে এলো। আমরা এলাম সমুদ্রের পাড়ে। এই জায়গাটা মেইন পয়েন্টের থেকে বেশ দূরে। মেইন পয়েন্টে অনেক লোকজনের ভীড় থাকে। এদিকে তেমন কেউ আসে না। আমার আন্দাজ ঠিক হলে এখান থেকে একটু দূরে ঝোপঝাড় আছে, ডাবগাছ রয়েছে লাইন করে। বিশাল বড় বড় সমুদ্রের ঢেউ উপচে পড়ার শব্দ কানে আসছে। জোরালো হাওয়া এলোমেলো করে দিচ্ছে সব। এটাই একমাত্র জায়গা যেখানে এসে আমি নিজের নিঃশ্বাস নিশ্চিন্তে ফেলতে পারি। অন্যদিন তো হোটেলে কাজ করেই সময় কাটে। বাবাও আগে হোটেলে কাজ করতেন। উনার অসুখের পর বেড রেস্ট দেওয়া হলে আমায় কাজটা করতে হয়। যদিও কাজটা হোটেলের মালিক আমায় দিতে চাননি। কারণ একটাই আমি অন্ধ। তবুও জোর করে একপ্রকার সেখানে রয়েছি। এরই মাঝে বিভিন্নভাবে অপমানিত হতে হয়েছে। সামনে হাতাতে হাতাতে কারো মুখে, গায়ে হাত পড়েছে। হোটেলের মালিক আমার ওপর সবসময় রেগেই থাকেন।
এসব ভেবে মন খারাপ হয়ে এলো আমার। সকলের নাচগান আমার কানে এসেছে। আমি বসার জায়গায় সকলের সাথে বসে আছি। হঠাৎ করেই নাচগান করার মাঝে বিন্দু নামের এক মেয়ে আমার উদ্দেশ্যে বলল….
–“এই আনিশা? তুমিও তো আমাদের সাথে প্রায় অনেক দিন ধরে আছো। আজ সবাই গাইছে। তুমিও গাও একটা গান।”
হকচকিয়ে গেলাম আমি। মাথা আর হাত দুটোই নাড়িয়ে বললাম….
–“কি বলছো? আমি তোমাদের মতো এতো সুন্দর করে গাইতে পারি নাকি?”
আমি বারণ করা সত্ত্বেও কারো কানে গেল না। সকলের জোড়াজুড়িতে ‘পাগলা হাওয়া বাদল দিনে’ গানটা ধরলাম। মনটাও হালকা হলে হতে পারে। সকলে ধরে আমায় দাঁড় করালো। তাদের কাঁধে আমার হাত রেখে তালে তালে নাচতে লাগল। আমার বেশ লাগল। ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটল।
সেখান থেকে কিছুটা দূরের ডাবগাছের ভীড়ে এক ডাব গাছে ঠেস লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে আয়াশ। পরনে কালো লং কোট আর কোটের ভেতরে গেঞ্জির কলারের সাথে ঝুলানো আছে সানগ্লাস। তার হালকা বড় বড় চুলগুলো বাতাসে মৃদু উড়ছে। গাছের ফাঁকফোকর দিয়ে সূর্যের আলো মুখে পড়ছে। বেশ ক্লান্ত সে। চোখেমুখে রাজ্যের বিরক্তি। এভিডেন্স জোগাড় করতে কি না কি করতে হয়। পাশে জুহায়ের কথা বলতে ব্যস্ত তার প্রেমিকার সাথে। হঠাৎ গানের আওয়াজে চোখ খোলে আয়াশ। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে এগিয়ে আসে। জুহায়ের ফোন রেখে এগিয়ে আসে।
–“জুহায়ের? সারাদিন গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে এতো প্যাঁচপ্যাঁচ করে কি কথা বলো? এতো কথা কি করে পাও?”
আয়াশের অদ্ভুত প্রশ্নে ভীরু চোখে তাকায় জুহায়ের। অতঃপর মুচকি হেসে বলে….
–“স্যার? আসলে হয়েছে কি! শর্মিলা রাগ করেছে। দেশে ফিরেছি কিন্তু দেখা করিনি। রেগে একেবারে বম হয়ে গেছে। খুব ঝাড়ছে আমায়।”
–“তাহলে প্রেম করো কেন? ঝাড় খেতে হলে মায়ের হাতে খাবে। গার্লফ্রেন্ড রোমান্স করার জন্য থাকে। এমন হলে প্রেমিকা রাখার প্রয়োজন কি?”
–“স্যার এটা মনের ব্যাপার। মন না মানলে কি করবেন বলুন?”
আয়াশ উচ্চস্বরে হেসে দেয়। যেন জুহায়ের কোনো মজার কথা বলে ফেলেছে। জুহায়ের ভ্যাবাচেকা খেয়ে তাকাতেই ওর হাতে থাকা দূরবীন নিজের কাছে নিয়ে চোখের সামনে ধরে মেয়েরা যেদিকে নাচগান করছে সেদিকে তাক করে। তারপর ব্যস্ত কন্ঠে বলে…..
–“আচ্ছা জুহায়ের? সকলে কি বলে? মনের অবস্থা ঠিক বুকের বাম দিকে? ঠিক কি না?”
–“ঠিক স্যার।”
–“কিন্তু বুকের বাম পাশে হার্ট বলে একটা জিনিস আছে। যাকে বাংলায় বলে হৃৎপিণ্ড। যেটা সবসময় বিট করতে থাকে। প্রসারণ আর সংকোচন হয়। তাহলে এর মাঝে মনের অবস্থান কোথায়? হৃদপিণ্ডকে মন বলা বোকামি। এটা অবাস্তবিক। ছেলেরা মেয়েদের খুশি করতে বলে, ‘আমি তোমায় মন থেকে ভালোবাসি।’ আদোও মন বলে কিছু হয়ই না। সবই চোখের আর্কষণ। চোখ আমাদের গোলকধাঁধায় ফেলে। সেটা কাটাতে পারলে আর্কষণ কেটে যায়। মেইন পয়েন্ট হচ্ছে, ভালোবাসা বলতেও কিছু হয় না।”
জুহায়ের আয়াশের এতো যুক্তি শুনে কনফিউজড হয়ে পড়ে। এতো যুক্তি মিলাতে মিলাতে ওর মাথাটা ভনভন করে ওঠে। কিভাবে পেলো এতো যুক্তি? এজন্যই হয়ত সবাই আয়াশের কোথায় ঘোল খায়। এই ভেবে শ্বাস ছাড়ল জুহায়ের।
আয়াশ জুহায়ের এর কথা ভেবে বাঁকা হাসল। মনোযোগ দিল মেয়েগুলোর দিকে। একমাত্র এদের ওপরে হামলা চলতে বেশি সময় লাগবে না। গানের আওয়াজ জোরে জোরেই হচ্ছে। বাদ্যযন্ত্র বাজছে। তার দূরবীন আঁটকে গেল একটা মেয়ের ওপর। মেয়েটা সকলের সঙ্গে কাঁধে হাত দিয়ে পা মেলাচ্ছে। হলুদ রঙের একটা লং জামা পরনে। বয়সটা বেশ কম। ১৫-১৭ এর মধ্যে হবে। পায়ের ছন্দে দুলছে তার কানে থাকা রিং আর চুল। দূরবীনটা ঘুরিয়ে আরেকটু বড় করে মেয়েটার দিকে মনোযোগ দিল সে। খুব ফর্সা গায়ের রঙ নয়। আবার শ্যামলাও বলা চলে না। এইধরনের গায়ের রঙ কে হলুদ ফর্সা বলে বোধহয়। নাকটা একটু বোঁচা, ছোট দুটো চোখ, গোলগাল গালদুটো আর সব থেকে সেই ঠোঁটজোড়া। যেখানে অদ্ভুত হাসি মাতিয়ে রাখা। হাসিটা যেন আয়াশকে আহত করছে। মাঝে মাঝে সুন্দর করে ঠোঁট নাড়াচ্ছে মেয়েটা। ঠোঁট নাড়ানোর ধরনটাও চমৎকার লাগলো আয়াশের কাছে।
–“স্যার? আপনি কি তাই দেখছেন যা আমি দেখছি?”
আয়াশ উত্তর দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই। সে তো মেয়েটাতে মগ্ন! জুহায়ের আবার বলে…..
–“স্যার, কিছু লোক মেয়েদের দিকে যাচ্ছে। দেখে সুবিধার মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে ওই মেয়ে পাচারকারীদের দল।”
আয়াশের ধ্যান এবার ভাঙ্গে। হকচকিয়ে তাকায় জুহায়ের এর দিকে। দূরবীন দিয়ে দলবলকে দেখে নেয়। চেহারায় গুন্ডা গুন্ডা ভাব।
–“স্যার প্রুফ নেওয়ার সময় এসেছে। এতে ভালো এভিডেন্স পাওয়া যাবে।”
আয়াশের কানে কথাগুলো যায় না। ওর মনটা অস্থির হয়ে পড়ে এই ভেবে যে এখন যদি ওই মেয়েটার কোনো ক্ষতি হয়ে যায় তাহলে কি হবে? ওকে যদি ওরা তুলে নিয়ে যায়? আয়াশের বুক ধক করে ওঠে। মস্তিষ্ক একটাই কথা বলে, এটা হতে দেওয়া যাবে না। মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে ওর। ও ছুট লাগায় সেদিকে। পেছনের সকলে বিস্ময়ের মাঝে রেখে না জানি কি করতে চলেছে সে!
বর্তমান……
সেদিন প্রানের বাজি রেখে আমাকে বাঁচালেন সকলকে। উনার কাঁধে ছুড়ি মারা হয়েছিল। সেখান থেকেই আমাদের প্রথম সাক্ষাৎ। আমি সেদিন ভয়ে কুঁকড়ে গেছিলাম। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল সাবু।
–“আপা, ওইতো নীলাদ্র ভাই দাঁড়িয়ে আছে।”
চলবে……
[বি.দ্র. অন্ধ মেয়ে কি করে এতোকিছু করতে পারে? কি করে ফোন করতে পারে? বাটন ফোনে চোখ বন্ধ করেও কল করা যায় নম্বর ডায়াল করে এটা কঠিন ব্যাপার না। আর বাকি রইল চিঠি লিখার কথা? আনিশা পড়ালেখা শিখেছে। কোন অক্ষর কি করে লিখতে হয় সে জানে। আর অন্ধদের চোখ বাদে সকল ইন্দ্রিয় বেশি সচল থাকে। এটা নিশ্চয় জানেন! ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]
#মনের_অন্দরমহলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৩
–“একটা তিন আঙ্গুলের চোখে দেখতে না পাওয়া মেয়ে সে কিনা আয়াশ রায়হানের নাগাল থেকে পালিয়ে গেল? এতোবার করে সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলাম যে আমি ছাড়া অন্য কারো নাম মাথায় আনা যাবে না। আমার বোঝা উচিত ছিল। কিছু মানুষ ভালো কথা নয় শক্ত কথাতেই বোঝে।”
রাগে কটমট করতে করতে চেয়ারের ওপর লাথি মেরে দূরে সরিয়ে দিল আয়াশ এবং তার হাতে থাকা আনিশার লিখা চিঠি দুমড়েমুচড়ে ফেলে দিয়ে পায়ের জুতো দিয়ে পিষতে থাকল। চিঠিতে স্পষ্ট লিখা, “আমাকে সকলে ক্ষমা করে দিও। আয়াশ রায়হানের মতো লোককে বিয়ে করা সম্ভব নয়। একজন মানসিক রোগীর সঙ্গে ঘর করা যায় না। তোমরা হয়ত উনার রুপ দেখোনি। মুখোশ পড়া লোক যে! আসল রুপটা আমি দেখেছি। এরপরেও এই বিয়ে করা আমার কাছে আত্মহত্যার সমান।”
–“আমাকে পাগল বলে কোন সাহসে? বিয়ে করতে চেয়েছি বলে মাথায় উঠে গিয়েছে। মানসিক রোগী আমি? (একটু থেমে) হেই ওয়েট! আমি মানসিক রোগী। এই কথাগুলো কে বলেছে ওকে?”
আশেপাশে সকলে ওর ভয়ানক আর তুখোড় দৃষ্টি দেখে সকলে কুকিয়ে গেল ভয়ে। আয়াশ সবার দিকে তাকিয়ে নিজের দৃষ্টি স্থির করল তার সৎমা এর দিকে।
–“সাক্ষীর জন্য আপনাকে আমি আসতে বলিনি মিসেস. মালিহা রায়হান। কিন্তু আপনি এসেছেন। আমার ভালো করতে নয়। আমার নামে যত বদনাম করা যায় সেসব করতে। এম আই রাইট?”
মিসেস. মালিহা বিস্ময় নিয়ে তাকালেন। কি বলবেন এর উত্তরে বুঝলেন না। কি বলা উচিত? আয়াশের বাবা সাহাদ রায়হান উপস্থিত ছিলেন সেখানে। এই দশা দেখে মিসেস. মালিহা সাহাদ সাহেবের কানে ফিসফিস করে বললেন….
–“এসব কি করছে তোমার ছেলে অন্যের বাড়িতে এসে? একে তো গরীবের ঘরের মেয়েকে পছন্দ করেছে। চয়েস বলতে কিচ্ছু নেই। আর এসব অভদ্রতা? থামতে বলো ওকে।”
সাহাদ সাহেব স্ত্রীর কথা শুনে আয়াশের দিকে তাকান। আয়াশ নিজমনে কিছু বিড়বিড় করছে আর এদিক-সেদিক তাকাচ্ছে। ওর চোখে রাগের মাত্রা অনেকটা। কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না সাহাদ সাহেব। কেননা, ছেলের রাগের সামনে তিনিও ফিকে পড়ে যান। সাহসটার লেভেল একেবারে জিরো হয়ে যায়। তবুও গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন…..
–“আয়াশ? কি হচ্ছে টা কি? এসব কি পাগলামি করছো? ভুলে যেও না এটা তোমার হবু শ্বশুড়বাড়ি।”
আয়াশ ঘাড় কাঁত করে সাহাদ সাহেবের দিকে তাকায়। সাহাদ সাহেব অজান্তেই একটা ঢক গিলেন। কেননা আয়াশ অন্তত রেগে থাকলেই এভাবে তাকায়।
–“হবু শ্বশুরবাড়ি মাই ফুট! তোমাকে এখানে জ্ঞান দিতে নয় বিয়েতে সাক্ষী লাগবে সেজন্য আসতে বলেছি। চুপচাপ সাক্ষী দেবে আর চলে যাবে।”
আয়াশের কড়া গলার কথাগুলো আরেক ঢক গিলে হজম করলেন সাহাদ সাহেব। সকলে তার দিকে ভীরু চোখে তাকিয়ে আছে। আনিশার মা-বাবা মাহমুদ আহমেদ এবং হেমা আহমেদ বিশ্বাস করতে পারছেন না এটা সেই ছেলে যে কিনা অতি নম্র ভাবে বিয়ের প্রস্তাব এনেছিল। একই মানুষের কত রুপ! তাদের হঠাৎ করে মনে হলো তারা সত্যিই মেয়ের বিয়ে আয়াশের সঙ্গে দিতে চেয়ে ভুল করছেন না তো? উনারা দুজন দুজনের দিকে তাকালেন। আয়াশের কথাতে চমকালেন উনারা।
–“আর আপনারা? আনিশা নাকি অন্ধ? তাহলে পালিয়ে গেল কি করে? আপনারা কেউ সাহায্য করেছেন?”
আয়াশের কথায় থতমত খেয়ে জবাব দেন শিউলি আহমেদ(আনিশার দাদিমা)।
–“ও তো জন্মান্ধ নয়। আনিশা আগে স্বাভাবিক ছিল। সকলের মতো স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করত। কিন্তু ক্লাস এইটে যখন পড়ে তখন ওর এক্সিডেন্ট হয়। সেখান থেকে চোখে দেখার ক্ষমতা হারায়। সেকারণেই তো লিখতে পারে এখনো। এমনকি আরো অনেক কাজই পারে যা স্বাভাবিক মানুষ পারে। আমরা কেউ ওকে সাহায্য করিনি। আমরা কি জেনেশুনে নিজের মুখে চুনকালি লাগাবো তুমিই বলো আয়াশ বাবা?”
আয়াশ নিজের প্রখর বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে ভাবল শিউলি আহমেদ কিছু ভুল বলেনি। উনারা যদি কেউ সাহায্য করতেন তাহলে আয়াশের সঙ্গে বিয়েতে কেন মত দিতেন?
এসব আগপাছ ভাবতে ভাবতে জুহায়ের ঘরে প্রবেশ করে। তাড়াহুড়োর সঙ্গে বলে ওঠে…..
–“আনিশা ম্যামের খোঁজ পাওয়া গেছে। লোকেশন ট্র্যাক করতে পেরেছি।”
আয়াশের চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে। মুখে ফোটে এক রহস্যময় হাসি। তারপর সকলের দিকে তাকিয়ে নিজের বাবার দিকে তাকিয়ে বলে যায়….
–“তোমরা নিজেদের গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারো। কারণ আমি আর এখানে ফিরছি না।”
হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল জুহায়ের এর সঙ্গে আয়াশ।
আয়াশ যাবার পরপরই আয়াশের মা-বাবাও আনিশার পরিবারের সঙ্গে কোনোরকম কথা না বলেই চলে এলেন। প্রথম থেকেই তাদের বিয়েতে কোনো মত ছিল না। মিসেস. হেমা তাদের থামাতে গিয়েও পারলেন না। কান্নায় ভেঙে পড়েন মিসেস. হেমা। উনার মেয়ে নিখোঁজ। এবার সত্যি সত্যি মনে হচ্ছে এসবের জন্য উনারাই দায়ি। কান্নারত অবস্থায় উনি বলেন…..
–“আমার মনে হচ্ছে আমরা সত্যিই কোনো ভুল করে ফেলেছি। আনিশা ঠিক বলছে নাতো? আজ জামাইয়ের আচরণ দেখেছো?”
–“আমিও একই কথা ভাবছি হেমা।”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন মাহমুদ আহমেদ। কিন্তু তাদের ধমক দিয়ে চুপ করালেন শিউলি আহমেদ।
–“কি বলছো তোমরা? নাতজামাইয়ের কি না রাগ করা স্বাভাবিক না? কত আশা নিয়ে বিয়ে করতে এসেছিল। সব ঠিক ছিল কিন্তু তোমাদের আশকারা পাওয়া মেয়ে এই রাতে উধাও হয়ে গেল। বিয়ের আসর থেকে যদি পাত্রী উধাও হয় তাহলে পাত্রপক্ষের খারাপ লাগা স্বাভাবিক না? আর ওরা ওতো বড়লোক মানুষ ওদের তো রাগ হবেই। তোমরা অযথা বেশি বুঝছো। চুপ করো তোমরা। নাতজামাই ঠিক মেয়েটাকে খুঁজে বের করবে।”
শিউলি আহমেদের কথায় নিজেকে আশ্বস্ত করতে পারলেন না মিসেস. হেমা। হাঁসফাঁস করতে থাকলেন। তুষারকে কাছে টেনে এনে জড়িয়ে ধরলেন উনি।
অনেকক্ষণ ধরে নীলাদ্রের হাত ধরে কেঁদে চলেছি আমি। কান্না যেন ফুরচ্ছেই না। কোথায় যাব কি করব কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। নীলাদ্র আমাকে শান্তনা দিয়ে বলল….
–“কান্নাকাটি করলে তো চলবে না আনিশা। এভাবে করতে থাকলে তো ধরা পড়ে যাব। তুমি কি এখান থেকে যেতে চাও না?”
–“এখান থেকে যাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই। কিন্তু আয়াশের জন্য আমায় যেতে হবে। বুঝতে পারছি না কোথায় লুকাবো?”
–“তুমি এখানেই দাঁড়াও আমি গাড়ি নিয়ে আসছি। তোমার পায়ে লেগেছে যেতে পারবে না।”
ভয়ে ভয়ে ছেড়ে দিলাম নীলাদ্রের হাত। হয়ত সে চলেও গেল। সমুদ্রের পাড়ে গা ছমছমে পরিবেশে থাকতে ভয়ও করছে। পায়ে করছে যন্ত্রণা। রাতের জোয়ারভাটায় সমুদ্রের পানি আরো কাছে চলে এসেছে। হারহিম করা বাতাসে দুটো বাহু ধরে ঠকঠক করে কাঁপছি আমি। আর কারণ খুঁজছি হঠাৎ কেন আমার মতো অন্ধ মেয়েকেই বিয়ে করতে হবে আয়াশকে। এর আগে উনি যেমন আমার উপকার করেছেন তেমনই বদনামও করে ছেড়েছেন। আমি নিশ্চিত উনিই আমায় তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন। যার কারণে বদনাম হয়েছি আমি। এজন্যই দাদিমা আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য এতো তাড়াহুড়ো করছেন। সেই সঙ্গে আমার মা-বাবাও!
প্রায় দশ-পনেরো মিনিটের মতো দাঁড়িয়ে আছি একা। কিন্তু নীলাদ্র আসছে না। একসময় ভয় আমার মনে জমা হতে শুরু করল। এখন সাবুও নেই। আস্তে করে ডাক দিলাম…..
–“নীলাদ্র? নীলাদ্র? কোথায় তুমি?”
কোনে সাড়াশব্দ পেলাম না। ভয়ে আঁতকে উঠলাম। আজ যদি নীলাদ্র না আসে তাহলে জানি না কি হবে আমার! আস্তে করে পায়ের ধাপ ফেলতে লাগলাম। আর জোরে জোরে নীলাদ্রকে ডাকতে লাগলাম। কিন্তু কোনো লাভই হলো না। বিপাকে পড়ে কান্না পেলো আমার। চোখে ভরে এলো অশ্রু। আবারও চিৎকার করে ডাকলাম…..
–“নীলাদ্র?”
কোনো লাভই হলো না। সোজা হাঁটতে হাঁটতে কীসের সঙ্গে যেন ধাক্কা খেলাম আমি। পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচতে যেই বস্তুর সঙ্গে ধাক্কা খেলাম তাকেই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। অতঃপর আবিস্কার করলাম এটা কোনো বস্তু নয় আস্ত একটা মানুষ। তবে কি এটা নীলাদ্র? হবে হয়ত। এই রাতে ও ছাড়া কে থাকবে? ঝটপট করে ভয়ের চোটে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। এবার শব্দ করে কেঁদে দিলাম।
–“এতোক্ষণ কেন একা দাঁড় করিয়ে রেখেছিলে? আমি তো ভেবেছিলাম তুমি আসবে না আর।”
–“আর ইউ লস্ট মাই বিউটিফুল উডবি ওয়াইফ?”
কন্ঠস্বর শুনে আমার শরীর সহ আত্নাও কেঁপে উঠল। এটা নীলাদ্রের কন্ঠ নয়। লোকটার গরম নিশ্বাস আমার কাঁধে পড়ছে। হয়ত আমার দিকে ঝুঁকে আছেন। এক ঝটকায় ছেড়ে পিছিয়ে এলাম আমি। পিছিয়ে যেতেই থাকলাম। পায়ের নিচে বালিতে আমার বেনারসি গড়াগড়ি খাচ্ছে। নীলাদ্র কোথায়? মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে আমার। কোনোকিছু ভাবনাচিন্তা না করেই পেছন দিকে ছুটতে শুরু করলাম। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই আবিষ্কার করলাম পায়ের নিচে পানি। আমি সমুদ্রের দিকে দৌড়াচ্ছি। সেখানেই থেমে গেলাম। ডান দিকে দৌড়াতে নিলে শাড়ির পায়ের নিচে পড়লে পেঁচিয়ে পড়ে যাই আমি সমুদ্রের পাড়ে হালকা পানিতে। ভিজে যাই জোয়ারভাটার বড় ঢেউয়ের কারণে।
–“শুধু শুধু পালানোর চেষ্টা করলে। লাভটা কি হলো? তোমার চিন্তাভাবনার প্রশংসা করতে হয়। বড্ড সাহস আছে তোমার।”
–“আ….আপনি কি করে আমায় খোঁজ পেলেন?”
আয়াশের কথায় পাল্টা প্রশ্ন করলাম আমি। কেননা এই প্রশ্নটাই মাথায় আমার ঘুরছে। নিজেকে ক্লান্ত লাগছে। আয়াশের হাসির শব্দ পেলাম।
–“তুমি ইন্টেলিজেন্ট! তবে কি জানো? আমি তোমার চেয়ে দ্বিগুন ইন্টেলিজেন্ট। টিনএজ মেয়ে তুমি। এমন পদক্ষেপ নিতে যে দুইবারও ভাববে না সেটা আমার জানা ছিল। তোমার ঘরে গিয়েছিলাম মনে আছে? তোমার একটা গয়নার সঙ্গে লোকেশন ট্র্যাকার লাগিয়ে দিয়েছিলাম। তবুও একটা বিশ্বাস ছিল তুমি পালাবে না। কিন্তু তুমি সেটাই করলে। অন্য একটা ছেলের হাত ধরে পালিয়ে গেলে।”
বেশ চিল্লিয়ে কথাগুলো বললেন উনি। এসব উনি করতে পারেন আমার ধারণারও বাইরে ছিল। চোখ বড় বড় করে সমুদ্রের নিচের বালি চেপে ধরে বসে আছি। একসময় প্রশ্ন করলাম…..
–“নী…নীলাদ্র কোথায়?”
সঙ্গে সঙ্গে আবারও আমার মুখ চেপে ধরলেন উনি। অন্যহাতে চেপে ধরেছেন আমার চুলের খোঁপা।
–“হুঁশশ…. নাম নেবে না ওর। মুখ সেলাই করে দেব তোমার। ভুল তুমি অনেক করে ফেলেছো। আমাকে আর রাগিও না ডার্লিং। আর ওই ছেলেটাকে অজ্ঞান করে রাস্তার মাঝখানে ফেলে দিয়ে এসেছি। এখন গাড়ির নিচে চাপা পড়লে সেটা গাড়ির দোষ হবে। তাই না?”
আমি কথায় বলতে পারছি না। নিজের চুল ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে দুর্বল হয়ে পড়লাম আমি। মাথাটা ভার হয়ে আসছে। শক্তি কমে আসছে। একসময় চোখজোড়াও বন্ধ হয়ে এলো আমার। নেতিয়ে পড়লাম একেবারে। শেষবারের মতো অনুভব করলাম উনি আমাকে তার বুকে জড়িয়ে নিলেন। আমার কানে আসছে উনার চমৎকার কন্ঠে বলা কিছু অস্পষ্ট কথা।
–“যার হাসিতে আহত হয়েছি
তাকে এতো সহজে ছাড়ি কি করে বলো?
যার চোখে নিজের ভালো থাকা দেখেছি
তাকে এভাবে হারায় কি করে বলো?
তাকে যে রেখেছি #মনের_অন্দরমহলে
সেই অন্দরমহল থেকে তাকে কেউ বের করতে পারবে না।”
চলবে…..
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]