#অন্ধকার_মানব(The unpredictable love)
#পর্বঃ৩০
লিখা✍️তাজরিয়ান খান তানভি
প্রায় অনেকক্ষন যাবৎ পায়চারি করছে জাদ।রাত প্রায় বারোটা হতে চলল।ওদের সমস্ত প্ল্যানিং শেষ।দ্বিধা আর রিশাল একসাথে দ্বিধার ঘরে।ওরা সেখানেই থাকবে।জাদ নিচে থেকে ওদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবে।
দ্বিধার মাথাটা সেই কখন থেকে ঝিমঝিম করছে।পুরো ঘরে অসংখ্য মোমবাতি জ্বালানো।আগুন সহ্য করতে পারে না ভ্যাম্পায়ার রা।আর রসুনের বিকট গন্ধ যা ওদের দেহের রক্তের গতিবিধি ধীর করে যাতে করে ওরা দুর্বল হয়ে পড়ে।এছাড়াও রিশালের বাবার তৈরি পবিত্র পানি তো আছেই।
দ্বিধার কেমন যেনো অসহ্য লাগছে।জাদ একা নিচে।যদি ওর কিছু হয়।দ্বিধা দরজা খুলতে গেলেই–
“স্পাইসি কি করছো??
“জাদ এর কাছে যাবো।ও নিচে একা।যদি ওর কিছু হয়,,না আমি ওকে একা ছাড়তে পারবো না।”
“তুমি কি পাগল হয়ে গেছো?এ সবকিছুই তো ও তোমাকে বাচানোর জন্য করছে।
আর তুমি গিয়ে কি করবে?জাদ কোনো সাধারন মানুষ নয়,ও যা পারবে আমরা তা পারবো না।তাই আমাদের এখানে থাকাই উচিত।”
“কিন্তু,,,
“কোনো কিন্তু নয়।শুনোনি ও কি বলেছে যতক্ষন সবকিছু ঠিক না হয় আমাদের রুম থেকে বের না হতে।”
দ্বিধা আবারও বিছানায় গিয়ে বসে।ওর মাথাটা প্রচন্ড ধরেছে।
প্রায় দশ বারোজন লম্বা হুডি পরা অবয়ব ঘরে ঢুকে।পুরো ঘর অন্ধকার।মাথার হুডি নিচে ফেলতেই অবয়ব গুরোর লালচে চোখ জ্বলজ্বল করে উঠে।ঠোটের কার্নিশে ভয়ংকর তীক্ষ্ম দাঁত।
আর সময় নষ্ট নয়।ঝাপিয়ে পড়ে ওরা জাদ এর উপর।ভয়ংকর লড়াই চলতে থাকে।জাদ কোনো ভাবেই ওদের উপরে উঠতে দেয় না।তাই তারা সিদ্ধান্ত নেয় আগে ওকে শেষ করবে তারপর নবনীযুক্তাকে নিয়ে যাবে।দু তিনজন অলরেডি শেষ।ওদের মস্তিষ্ক বিহীন দেহ পড়ে আছে।দ্বিধা আর রিশাল আওয়াজ পেয়ে বুঝতে পারে তাদের আগমন ঘটেছে।দ্বিধা কাদতে শুরু করে।রিশাল ওকে যতটা সম্ভব শান্ত করার চেষ্টা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী চার পাচজন মিলে জাদ কে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।ওর একার পক্ষে চার পাঁচজনের শক্তির সাথে পেরে উঠা সম্ভব নয়।কিন্তু সে তার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।একজন ধীরে ধীরে একটা সিলভারের তৈরি খঞ্জর নিয়ে এগিয়ে আসছে।উদ্দেশ্য এইটা সোজা জাদ এর স্পন্দনবিহীন হৃৎপিন্ডে ঢুকিয়ে দেওয়া।
অবয়ব টি একদম কাছে চলে এসেছে।যেই না খঞ্জর টি ঢুকাতে যাবে পিছন থেকে তাকে আইভান গলা চেপে ধরে আর তার দেহ থেকে মাথাটা আলাদা করে দেয়।বাকিরা জাদ কে ছেড়ে আইভান কে অ্যাটাক করতে গেলে ফ্রিদাও যোগ দেয় তাদের সাথে।
“ডোন্ট ওয়ারি মাই সন।উই আর হিয়ার।”
“থ্যাংকস মম,ড্যাড।”
যেহেতু সাইকিক ভ্যাম্পায়ার থেকে সাঙ্গুরাইন প্রজাতির ভ্যাম্পায়ারদের ক্ষমতা বেশি তাই তাদের তিন জনের সাথে তারা বেশি সুবিধা করতে পারলো না।ভবলীলা শাঙ্গ হলো তাদের।
সবকিছু শান্ত মনে হতেই দ্বিধা রুম ছেড়ে বেরিয়ে আসে।রিশাল গিয়ে ইলেকট্রিক বোর্ডের ফিউজ লাগিয়ে দেয় আর সাথে সাথে পুরো ঘর আলোকিত হয়।
দ্বিধা নরম পায়ে টিপ টিপ করে সিড়ি বেয়ে নামছে।ডাইনিং আর ড্রয়িং স্পেস এর পুরো জায়গা জুড়ে রক্তে বিছিয়ে আছে।আইভান আর ফ্রিদা এক কোনে দাড়ানো।জাদ সামনেই দাড়িয়ে।ওর কালো রঙের টি শার্ট এর উপর গায়ে দেওয়া জ্যাকেট সহ পুরো শরীরে রক্তের দাগ কালচে ভাব ধারন করেছে।হাত আর মুখ রক্তে রাঙানো।নীলাভ চোখ এখনো শান্ত হয়নি।ঠোঁটের কিনার বেয়ে টুপ টুপ করে রক্ত ঝড়ছে।
দ্বিধা কাপছে,ভীষন রকম কাপছে।হাত পা অবশ হয়ে আসছে।প্রতিটি কদম যেনো পা বাড়াতেই সেখানেই স্থির হয়ে যাচ্ছে।রক্তের পিচ্ছিলতাই অতি স্বনর্পনে পা ফেলছে দ্বিধা।
ফ্রিদা আইভান কে শান্ত কন্ঠে বলে–
“তোমার কি মনে হয়,নবনীযুক্তা জাদ কে মেনে নিবে??
“আই ডোন্ট নো।যেই অবস্হায় জাদ দাড়িয়ে আছে কোনো মানুষের পক্ষে ওকে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।”
দ্বিধা জাদ এর কাছে যেতেই ওকে জড়িয় ধরে অঝোড়ে কাদতে থাকে।ফ্যাসেফ্যাসে গলায় বলে–
“আপনি,,আপনি ঠিক আছেন,,আপনার কিছু হয়নি তো??
জাদ ওর চোখের পানি মুছে বলে—
“আই অ্যাম ফাইন।”
আইভান ফ্রিদা কে ফিসফিস করে বলে—
“এই মেয়ে সত্যিই অদ্ভুত!!!
হঠাৎ করে জাদ দ্বিধার গায়ের উপর সেন্সলেস হয়ে পড়ে যায়।
দ্বিধার রুমে এনে বিছানায় শোয়ায় জাদ কে।
“আঙ্কেল কি হয়েছে জাদ এর??
“জাদ এর শরীরে খঞ্জরের আচড় লেগেছে।কিছু ক্ষনের
মধ্যে ক্ষত সেরে যাবে কিন্তু,,,,.
“কিন্তু কি আঙ্কেল???
ফ্রিদা দ্বিধা কে বলে–
“জাদ কে পুরোপুরি ঠিক হতে এখন মানুষের রক্ত প্রয়োজন।”
“মানে??
“জাদ কিছুক্ষনের মধ্যেই জেগে উঠবে তখন ওর শক্তি কে পুনরায় সচল করতে ওকে রক্ত পান করতেই হবে।আর এ কাজটি এই মুহূর্তে তোমাকেই করতে হবে।”
রিশাল ফ্রিদার কথায় ক্রোধে বিস্ফোরিত হয়।ও চিৎকার করে বলে–
“আপনারা কি পাগল হয়ে গেছেন??
স্পাইসি এমন কিছুই করবে না।”
“তুমি চুপ করো রিশাল।”
“আপনি ভাবলেন কি করে আমি চুপ থাকবো?আপনারা ওকে মারার চেষ্টা করছেন।”
আইভান ওর কাছে গিয়ে ধমকের সুরে বলে—
“আর ইউ ক্র্যাজি।নবনীযুক্তাকে কেনো মারতে যাবো আমরা।জাদ কে ঠিক হওয়ার জন্য শুধু কয়েক ফোটা রক্তেরই প্রয়োজন,এতে নবনীযুক্তার কোনো ক্ষতি হবে না।কারন ও নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবে।কিন্তু তার জায়গায় অন্য কেউ হলে জাদ নিজেকে কন্ট্রোল নাও করতে পারে।”
দ্বিধা ভাঙা কন্ঠে বলে–
“আমি রাজি।”
“স্পাইসি এইসব তুমি কি বলছো??
“প্লিজ,,,রিশাল তুমি যাও এখান থেকে।আজ ওর এ অবস্থা আমার জন্য ই।”
সবাই বাইরে এলে দ্বিধা জাদ এর পায়ের কাছে বসে থাকে।কিছুক্ষন পর জাদ উঠে বসে।ওকে দেখে মনে হচ্ছে অনেক ক্লান্ত।
“এখন কেমন লাগছে আপনার?
“আই অ্যাম ফাইন।”
“আঙ্কেল আমাকে সব বলেছে,আমি রাজি।”
জাদ চোখ রাঙিয়ে বলে–
“আপনি পাগল হয়ে গেছেন??
“নাহ,পাগলি।”
“সুধানিধী,এইটা মজা করার বিষয় নয়।”
“আমি তো তা বলিনি।আর আমি জানি আপনি থাকতে আমার কোনো ক্ষতি হবেনা।”
“ভুল বললেন,একবার যদি আমি আমার কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলি তাহলে কি হবে ভাবতে পারছেন?
জাদ এর গলা ধরে আসে।মাথায় ভিষন যন্ত্রণা শুরু হয়।
দ্বিধা ওর কাছে এগিয়ে ওর হাত দুটো নিজের মুষ্টিমেয় করে বলে—
“প্লিজ,,জাদ নিজেকে আর কষ্ট দিবেন না।প্লিজ,প্লিজ,,,
“আপনি কেনো বুঝতে পারছেন না,,,
আহ্ !!!
“প্লিজ,,জাদ।”
জাদ এর অক্ষির নীল মনি জ্বলে উঠে।দ্বিধা ওর ঘাড়ের চুল সরিয়ে দেয়।
জাদ ধীরে ধীরে ওর ঘাড়ের কাছে এগিয়ে যায়।দ্বিধা চোখ বন্ধ করে নেয়। জাদ ওর সুতীক্ষ্ম দাঁত দ্বিধার নরম মাংস ভেদ করে ভিতরে প্রবেশ করে।দ্বিধার বন্ধ চোখ বেয়ে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পরে।ব্যথায় ককিয়ে উঠলেও দাঁতে দাঁত চেপে রাখে যেনো কোনো শব্দ বের না হয়।বিছানার চাদর খামছি দিয়ে ধরে।কয়েক ঢোক গিলতেই জাদ ওর মুখ সরিয়ে নেয়।
সাথে সাথে দ্বিধা বিছানার উপড় নেতিয়ে পড়ে।জাদ
চিৎকার করে উঠে—
“ড্যাড,,,,
আইভান এসে দ্বিধার গলায় হাত রেখে বলে—
“ডোন্ট ওয়ারি জাদ।শি ইজ ফাইন।শি উইল বি ওকে।”
.
.
.
ভোরের আলো ফুটেছে।দ্বিধা কে ওই অবস্থা জাদ দের বাসায় নিয়ে আসে।ওদের বাড়ি এই অবস্থায় নেই যে সেখানে সুস্থ মস্তিষ্কের কোনো মানুষ থাকতে পারে।
দ্বিধা এখনো বেঘোরে ঘুমোচ্ছে।
পর্দার ফাক গলিয়ে নরম রোদ ওর চোখে পড়তেই চোখ খুলে তাকায় দ্বিধা।শরীর কেমন অসস্তিকর মনে হচ্ছে।রুম থেকে বেরিয়ে নিচে এসে দেখে বাকিরাও সেখানে বসে আছে।
“আপনি ঠিক আছেন??
“হুম।”
“আই অ্যাম সরি,আমার জন্য আপনাকে এতো কষ্ট করতে হলো।”
“এতে আপনার কোনো দোষ নেই,জাদ।ভাগ্যবিধাতা যা করেন আমাদের ভালোর জন্যই করেন।”
আইভান জাদ কে বলে—
“এখন তুমি ইচ্ছে করলে মি.আর মিসেস ইরাম কে নিয়ে আসতে পারো।”
দ্বিধাও আইভান এর কথার সুরে বলে–,
“হুম,,জাদ।আপনি মাম্মা,পাপা কে নিয়ে আসুন।তারা হয়তো আমার জন্য অনেক চিন্তা করছেন।”
“ঠিক আছে,আপনি এখানেই থাকুন।আমি তাদের নিয়ে আসছি।”
জাদ বের হয়ে যায়।প্রায় দু ঘন্টা পর ও ইরাজ আর পারিজা কে নিয়ে ফিরে।দরজা খুলে আসতেই দেখে ভিতরে আসবাবপত্র গুলো ওলট পালট।দেখে মনে হচ্ছে কিছু তো হয়েছে এখানে।জাদ রিশাল কে দেখতে পায় সেখানের ফ্লোরে পড়ে আছে।ওর হাত পিছন থেকে বাধা।ঠোঁট কেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।আর দ্বিধা কোথাও নেই।
চলবে,,,