অন্ধকার মানব পর্বঃ৩১

0
1365

#অন্ধকার_মানব(The unpredictable love)
#পর্বঃ৩১

লিখা✍️তাজরিয়ান খান তানভি

মাটির প্রায় ৫০কিলোমিটার নিচে এক প্রকান্ড গুহা।অন্ধকারময় সে গুহার একমাত্র আলো মশালে আবৃত আগুন।
তার একটি বড় রুমের মাঝ বরাবর একটি স্টীলের পাটাতনের উপর শুয়ে আছে দ্বিধা।লম্বা হুডি পরা আরো অনেকজন ওকে ঘিরে দাড়িয়ে আছে।তারই এক কোনে দাড়িয়ে আছে আইভান আর ফ্রিদা।
জাদ চলে যাওয়ার পর ওরা দ্বিধা কে আমেরিকা ওদের সেই গুপ্ত জায়গায় নিয়ে আসে।এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
ভ্যাম্পায়ার কিং তার আসন ছেড়ে দ্বিধার কাছে এসে দাড়ায়।এখনি শুরু হবে চন্দ্রগ্রহন।অন্ধকারের মায়া পুরো চাঁদ কে গ্রাস করে নেবে।কিং সেই জাদুকৃত পাথরের কয়েনটি দ্বিধার কপালের উপর রাখে।বিরবির করে কিছু একটা পড়ে ফু দেয় ওর কপালে।আস্তে আস্তে সেটি অদৃশ্য হয়ে দ্বিধার কপালে মিশে যায়।ধম করে চোখ খুলে দ্বিধা।
উঠে বসে চারপাশে আজব ধরনের মানুষদের দেখে চিৎকার দিয়ে উঠে।ফ্রিদা ওর কাছে এসে বলে—

“ক্লাম ডাউন,নবনীযুক্তা।এবরিথিংক ইজ ওকে।”

“আনটি আপনারা আমাকে এখানে কেনো নিয়ে এসেছেন।আর রিশাল কে কেনো মারলেন।আর,আর জাদ কোথায়??প্লিজ আমাকে ওর কাছে যেতে দিন।”

কিং রাগান্বিত হয়ে বলে–
“ইউ সিলি গার্ল,তুমি ভাবলে কি করে তোমাকে যেতে দিবো?

দ্বিধা ঘাবড়ে গিয়ে বলে—
“প্লিজ আমাকে যেতে দিন।”

“আগে বলো ভাসিত এন্চটার ওই আশ্চর্য বই কোথায়??

“দ্বিধা অবাক হয়ে বলে–
“বই,, কিসের বই??

“ডোন্ট এক্ট লাইক এ ক্লেভার ডিয়ার।তুমিই জানো কোথায় সেই বই।”

“আনটি আমি সত্যি বলছি,আমি জানি না কোথায় বই।প্লিজ আমাকে যেতে দিন।”

“দেখো নবনীযুক্তা,তুমি কিং কে বলে দাও কোথায় রাখা সেই বই তাহলে উনি তোমাকে ছেড়ে দিবেন।”

দ্বিধা কাদতে কাদতে বলে—
“আমি সত্যি বলছি আনটি,আমি কিছুই জানিনা।”

কিং দাঁত কিড়মিড় করে বলে—
“সরে যাও ফ্রিদা,তার বলার প্রয়োজন নেই।আমিই জেনে নেবো।”

কিং দ্বিধার হাত চেপে ধরে নিজের চোখ বন্ধ করে নেয়।মাইন্ড রিডিং করা ভ্যাম্পায়ার দের এক আশ্চর্য ক্ষমতা।তারা তাদের সামনে থাকা মানুষের মাথায় কি চিন্তা করছে তা জানতে পারে।কিন্তু কিং কোনোভাবেই দ্বিধার মাইন্ড রিড করতে পারছে না।

আইভান কিং কে বিচলিত দেখে বলে–
“হোয়াট হ্যাপেন্ড কিং??

“আই ডোন্ট নো।আমি কিছুতেই তার মাইন্ড রিড করতে পারছি না।”
কিং চোখ খুলতেই তার দুচোখের নীল মনি জ্বলজ্বল করে উঠলো।দ্বিধা ভয় পেয়ে যায়।তার চোখ যায় দ্বিধার গলার লকেটের দিকে।

“আই সি,,,জাদ ওকে কন্ট্রোল করছে তাই আমি ওর মাইন্ড রিড করতে পারছি না।”

কিং ওর গলার লকেট টা টেনে ছিড়ে ফেলে।সে আবারও চেষ্টা করতে থাকে।কিন্তু কোনো লাভ হয় না।
তার ক্রুদ্ধ দৃষ্টি যেনো দ্বিধাকে এখনি জ্বালিয়ে দিবে।

“সত্যি করে বলতো তুমি মানুষ তো??তা না হলে আমি কেনো তোমার মাইন্ড রিড করতে পারছি না।”

দ্বিধা কেদে কেদে বলে–
“আমি সত্যিই বলছি আমি কিছু জানিনা।কিছু জানিনা।”

“তোমরাই বলো এখন কি করতে হবে??
ফ্রিদা বলে—

“আমার মনে হয় নবনীযুক্তা সত্যি বলছে।ওকে আরেকটু সময় দিন সবকিছু মনে করার জন্য।”

“ওকে।কিন্তু বেশি সময় দেওয়া যাবে না।”

তারা দ্বিধা কে একটা কারাগারে বন্ধি করে।যার সামনের অংশে মাটির তৈরি অটোমেটিক দরজা দেওয়া।যাতে করে সামনে থেকে কেউ দেখলেও বুঝতে পারবেনা ভিতরে কেউ আছে।

দ্বিধা সেখানে বসে কেদেই যাচ্ছে।এমনতো হবার কথা ছিলো না।আঙ্কেল আনটি কি করে পারলো এমন করতে।হঠাৎ সেখানে আসে ইশায়া।ওকে কাদতে দেখে ওর চোখে মুখে এক প্রশান্তি বিরাজ করছে।

“কি ভেবেছিলে তুমি,জাদ কে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিবে??
উচ্চ স্বরে হেসে উঠে ইশায়া।
জাদ শুধু আমার।ওকে আমার কাছ থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।”
দ্বিধা শান্ত ভঙ্গিতে বলে–

“ভুল বললে ইশায়া।জাদ কখনো তোমার ছিলো না আর কখনো হবেও না।ও শুধু আমাকেই ভালোবাসে।আর ও আসবে আমাকে নিতে।”

“আচ্ছা তাই বুঝি!!ও আসতে আসতে না তোমার অবস্থাও মাহনুর এর মতো হয়।”

“মানে??মাহনুর কে মেরেছে তুমি জানো??

“ইয়েস।পাপা আর আইভান আঙ্কেল,আর আনটিও সব জানে।কিন্তু তারা আমার মাম্মাক ফাসিয়ে দিয়েছে।আর তাই জাদ মাম্মা কে ঘৃনা করে।
আর এইসব কিছু আমার মাম্মা আমার জন্য করেছে।মাহনুর এর মৃত্যুর পর জাদ শুধু আমার হবে।”

“ছিঃ,,কেমন মেয়ে তুমি নিজের মাকে এভাবে অপদস্ত করতে লজ্জা করলো না।আর তুমি ভাবলে কি করে তোমার মতো একটা মেয়ে কে জাদ ভালোবাসবে।
জাদ ঠিক বলেছে মাহনুর সবার থেকে আলাদা।আর তুমি ওর পায়েরও যোগ্য না।”

এই কথা বলতেই ইশায়া ঠাস করে একটা চড় মারে দ্বিধার গালে।

ঝিমঝিম করে উঠে জাদ এর শরীর।ও বুঝতে পারে কিছু একটা হচ্ছে তার সুধানিধীর সাথে।বিরবির করে বলতে থাকে–

“ক্ষমা করবেন আমাকে।আমি আপনাকে রক্ষা করতে পারিনি। আমি কখনো ভাবতে পারিনি মম,ড্যাড আমার সাথে বিটরে করবে।
কিন্তু আপনি চিন্তা করবেন না।আমি আসছি।আমি থাকতে আপনার কোনো ক্ষতি আমি হতে দিবো না।জাস্ট ওয়েট ফর মি।”
.
.
.
.
“আইভান,তোমার কি মনে হয় নবনীযুক্তার সবকিছু কেনো মনে আসছে না?

“আই ডোন্ট নো।আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।আর আশ্চর্যের বিষয় কিং কেনো ওর মাইন্ড রিডিং করতে পারছে না।জাদ এর দেওয়া লকেট তো খুলে ফেলা হয়েছে।”

“তাহলে কি হতে পারে বলোতো??

“নবনীযুক্তার আশ্চর্যজনক কোনো ক্ষমতা নেই তো??

“ইয়েস,ড্যাড।আপনি ঠিক ই ধরেছেন।ওর ক্ষমতা ওর ভালোবাসা।”
জাদ কে দেখে আইভান আর ফ্রিদা হকচকিয়ে যায়।

“জাদ,,তুমি এখানে??

“কেনো ড্যাড? আপনি কি করে ভাবলেন আপনি জিতে যাবেন।আমি ভাবতেও পারিনি আপনারা আমাকে ধোকা দিবেন।”

ফ্রিদা তার আওয়াজ ক্ষীন করে বলে—-
“জাদ,,আমরা শুধু ওকে এখানে এনেছি বই এর জন্য।এরপর ওকে তুমি নিয়ে যেও।”

“নিয়ে তো ওকে আমি যাবই।”

“তুমি জানলে কি করে নবনীযুক্তা এখানে??

জাদ ওর ঠোঁটের কোন প্রসারিত করে বলে—
“নবনীযুক্তার সত্ত্বা মিশে আছে আমার সাথে,তাই আমি নিজে যতদিন ওকে আমার কাছ থেকে আলাদা করবো না কেউ ওকে আমার থেকে আলাদা করত পারবে না।”

জাদ সেই স্বয়ংক্রিয় দরজায় এসে একটা চুম্বকের উপর জোরে চাপ দিতেই কড়কড় করে তা উপরে উঠে যায়।ভিতরে লোহার গ্রিলে ঘেরা বন্দিশালায় বসে আছে দ্বিধা।জাদ কে দেখেই উঠে দাড়ায়।কারাগারের তালা মোচড় দিয়ে ভেঙে ভিতরে ঢুকে জাদ।

এক নিমিশে দ্বিধা জাদ এর বুকের সাথে মিশে যায়।জাদ ও শক্ত করে নিজের বাহুতে আবদ্ধ করে নেয়।দ্বিধার মুখ জাদ এর কানের কাছে নিয়ে বলে–

“আপনি এতো দেরি করলেন কেনো??

“ক্ষমা করবেন।আমি ভাবতেও পারিনি এমন কিছু হবে।”

“আমার সব মনে পড়েছে জাদ।আমি জানি বই কোথায় আছে।
দাদাজি বলেছিল,এই বই যেনো কোনো খারাপ লোকের হাতে না পড়ে তাই আমি কাউকে বলিনি।”

“ঠিক করেছেন।”

জাদ ওর হাত ধরে বলে–
“চলুন”।

সেখান থেকে বের হতেই সামনে এসে দাড়ায় আরো অনেক স্বজাতি তাদের।দ্বিধা জাদ এর হাত খামছে ধরে।

“ভয় পাবেন না।আমি থাকতে আপনার কিছুই হবে না।”

কিং তার রূষ্ট কন্ঠে বলে–
“ওকে ছেড়ে দাও জাদ।আমাদের ওই বই প্রয়োজন।”

জাদ এক বৃহৎ হাসি হেসে বলে—
“ওই বই আর আপনারা এই জীবনে পাবেন না।”

“জাদদ,,.

“চিৎকারে কাজ হবে না কিং।”

“তুমি ওকে এখান থেকে নিয়ে যেতে পারবে না।”

“কে বাধা দিবে আমাকে?আমি কি করতে পারি তা আপনি ভালো করেই জানেন।”

কিং এর চোখের ইশারায় একজন ঝাপিয়ে পরে জাদ এর উপর।ও তাকে উরিয়ে ফেলে দেয়।
আরো কিছু সামনে আসতেই ফ্রিদা গিয়ে দাড়ায় জাদ এর সাথে।

আইভান কর্কশ স্বরে বলে—
এটা তুমি কি করছো ফ্রিদা?

“যা আমার অনেক আগেই করা উচিত ছিলো।”
জাদ এর দিকে তাকিয়ে আবার বলে–

“আই অ্যাম রিয়েলি সরি মাই সন। আমি দেখছি,তুমি নবনীযুক্তা কে নিয়ে চলে যাও।”

“বাট মম,,,

“আই নো,তুমি কি ভাবছো।চিন্তা করোনা,তার ড্যাড এখনো আমাকে ভালোবাসেন তাই আমার কোনো ক্ষতি সে করবে না।ইউ গো নাউ ফাস্ট।”

জাদ দ্বিধা মুহূর্তেই সেখান থেকে চলে যায়।
আইভান আর কিং যেতে নিলেই তাদের কে বাধা দেয়ার চেষ্ট করে।

গুহার মুখে আসতে আসতে আরো অনেকের সাথে লড়ে ওরা বেরিয়ে আসে সেখান থেকে।আর গুহার মুখে একটা বড় পাথর চাপা দেয় যাতে করে ওর এখান যেতে একটু সময় পায়।

হাটতে হাটতে দ্বিধা জাদ কে জিঙ্গেস করে–
“আমরা এখন কোথায় যাবো??
“গ্রীস”।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here