প্রেমময় তৃষ্ণা পর্ব – ০১

0
3443

গল্প – প্রেমময় তৃষ্ণা
পর্ব – ০১
লেখিকা – তানিয়া

ঘুম ভাঙ্গার পরই জানালার দিকে চোখ পড়লো কলির।পুবের জানালা চিরে সূর্যের আলোর ছোঁয়ায় খুব ভোরেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো।চারদিকে এখনো কুয়াশা ভরা।ঠিক মতো কোনও কিছু এখনো দেখা যায় না।মেঘের মতো কুয়াশা গুলোও জেনো ভাসছে।কনকনে শীতের কারনে এখনো লেপ মুড়ি দিয়ে বসে আছে কলি।হঠাৎ হিমেল বাতাসে ভেসে আসা মিস্টি গন্ধ কলিকে মুগ্ধ করে।ছোট ছোট চোখ গুলো কচলে,আড়মোড়া দিয়ে বিছানায় থেকে নামার সময় ঘরের চারদিকে তাকিয়ে একবার দেখে নিলো,মা-বাবা কেউ নেই।নিশ্চই মা রান্না ঘরে,আর বাবা উঠানে বসে আছে।তাই আর কিছু না ভেবে ছোটছোট পা গুলো দিয়ে ঘরের বাহিরে চলে গেলো কৌতূহল নিয়ে কলি।বাহিরে এসে দেখে উনুনে খেজুর রস জাল দেয়া হচ্ছে,শীতের পিঠার জন্য।কলি দৌঁড়ে গিয়ে বাবাকে জরিয়ে ধরলো, আজ পিঠার নাস্তা হবে।কি মজা কি মজা বলে কলি উঠানে লাফাতে লাগলো।আর ছোট দুহাত দিয়ে তালি দিতে লাগলো।

কলির বাবা আসলাম আমীর,মেয়ের এই পাগলামি গুলো দুচোখ ভরে উপভোগ করে।একমাত্র মেয়ে তার।তাইতো মেয়েকে অনেক বেশি আদর করে।

মা কলি পিঠার খুশিতে এভাবে লাফালে হবে,এবার শান্ত হও।স্কুলে যাবার জন্য তারাতারি রেডি হয়ে নেও।তার পর আমরা পিঠা দিয়ে নাস্তা করতে বসুম,ঠিক আছে।

স্কুলের জন্য রেডি হবো,এতো তারাতারি কেনো বাবা,
এখনোতো অনেক সময় আছে।
না মা,আমার কাজ আছে স্কুলে। তাই একটু তারাতারি যেতে হবে।তাই তুমিও তারাতারি করো।

বাবার কথা মতো কলিও বাধ্যমেয়ের মতো রেডি হয়ে বাবা আর মায়ের মাঝখানে বসে নাস্তা করে নিলো।এর পর বাবার হাত ধরে রওনা দিলো স্কুলের পথে।

শীত মৌসুমে বাংলার গ্রামে আসে বিশাল পরিবর্তন।তাইতো কলি বাবার সাথে স্কুলের পথে অগ্রসর হচ্ছে আর রাস্তার দুপাশে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠের শীতের সবজি গুলো দেখছে।ফসলের মাঠ পাড় হলেই দূর দূরান্তে যতো দূর চোখ যাচ্ছে হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে সরষে ফুলে মাঠ।এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে দেখতে বাজারের সামনে এসে পরলো কলি আর কলির বাবা।সামনে একটা চা দোখান থেকে কলিকে একটা চিপস কিনে দিলো টিফিনে খাওয়ার জন্য।কারন কলি এ ছাড়া আর কিছুই খেতে চায়না।দুজনেই স্কুলে প্রবেশ করে,কলি নিজের ক্লাশ রুমে চলে যায়।আর আসলাম আমীর নিজের কক্ষে।আসলাম আমীর এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক।আজ চৌধুরী বাড়ীর কিছু লোক আসবে স্কুল তদারকির জন্য।তাই আসলাম আমীর কে আজ স্কুলে তারাতারি আসতে হলো।

গ্রামের এই স্কুল,গ্রামের সব থেকে বড় হসপিটাল, এমনকি বাজারের অর্ধেকের মলিক চৌধুরী পরিবার।গ্রামের বাগান বাড়ীতে বছরের প্রায় সময় পুরো পরিবার ঘুরতে আসে।তবে এবার চৌধুরী পরিবারের ছেলেরা আর তার কিছু ফ্রেন্ডসরা এসেছে।আরো অনেক কিছু আছে যা আসলাম আমীর জানেও না।আর আজ চৌধুরী পরিবারের ছেলেরাই আসবে স্কুল তদারকির জন্য।

এই গ্রামের ধনী পরিবারের মধ্যে তারাই আছে।তবে এই পরিবারের সবাই শহরে থাকে।চৌধুরী পরিবারে আজমাল ও আজহার দুভাই। আজমাল চৌধুরীর এক ছেলে ও এক মেয়ে।আর আজহার চৌধুরীর দুছেলে এক মেয়ে।

কলি টিফিন প্রিয়ডে স্কুলের মাঠে দাঁড়িয়ে চিপস খাচ্ছিলো আর শিলার সাথে গল্প করছিলো।শিলা কলির বান্ধবী। পুরো স্কুলে কলির এই একটা মাত্রই বান্ধবী।কলি কারো সাথে তেমন মিশে না,বা মিশতে চায়ও না।

হঠাৎ কলির কানে আসলো,প্রিন্স এসেছে দেখ। কিছু মেয়ে স্কুলের মাঠে দাঁড়িয়ে স্কুলের বারান্দায় দেখছে আর হাসাহাসি করছে।আমাদের প্রিন্স,অনেকদিন পর এসেছে।

কলিও সে দিক তাকালো।প্রিন্স এসেছে।আমার প্রিন্স।কলি চিপসের পেকেটটা ফেলে দিয়ে বারান্দার দিকে দৌঁড় দিলো।সেখানে শুভ,তার কাজিন ইনাম,আর মাহির দাঁড়িয়ে ছিলো।

আমি ইনাম আর মাহিরের সাথে কথা বলছিলাম,এমন সময় একটা ছোট মেয়ে আমার সামনে এসে হাজির হলো_____তুমি কি আমার প্রিন্স, আমাকে নিতে এসেছো।মা বলছে একদিন একটা প্রিন্স সাদা ঘোড়া তে করে এসে আমাকে সাথে করে নিয়ে যাবে।তুমি কি সেই প্রিন্স।

মেয়েটির কথা শুনে বিষণ হাসি পেলো আমার। হাসি পাওয়ারই কথা।ছোট একটা মেয়ে,কিন্তু দেখতে অনেক মিস্টি। ছোট হলে হয়তো ক্রাশ খেতাম মেয়েটার উপর কয়েকবার।তবুও নিজেকে সামলিয়ে মেয়েটিকে জিঙ্গেস করলাম তোমার নাম কি,,,,,[শুভ]

আমার নাম কলি।

কলি,তুমিতো গোলাপ ফুলের কলির মতোই।আর তোমাকে কে বলছে আমি প্রিন্স, আমার নাম শুভ।তুমি আমাকে শুভ ভাইয়া বলে ডেকো।

না না না তুমি আমার প্রিন্স, আমি জানি,এখন বলো তুমি আমাকে বিয়ে করবে।

কলির কথা শুনে এবার ইনাম আর মাহির না হেসে পারলো না।দুধের দাঁত এখনো পরেনি,সেই মেয়ে নাকি শুভ চৌধুরী কে বিয়ের জন্য প্রপোজ করছে।

শুভ কলির সামনে হাটুগেড়ে বসে কলিকে জিঙ্গেস করলো___তোমার বয়স কতো কলি।
ছয় বছর…..অনেকটা এটিটিউট নিয়ে।
ছয় বছর মেয়ের মুখে বিয়ের কথা শুনে জিঙ্গেস করলাম _____বিয়ে করার কথা কে শিখিয়েছে তোমাকে।

কলি আবাক করে বললো,পাশের বাড়ীর শিউলির গত সপ্তাহে বিয়ে হয়েছে ওই আম চোরা মামুনের সাথে।আমি দেখেছি।সবাই বললো,ওটাই নাকি ওর রাজকুমার।তাহলে আমার টা আসছে না কেনো বলো।

আম চোরা মানে……ইনাম জিঙ্গেসা করলো কলিকে।
ওই মামুনের বাচ্চা আমাদের গাছের আম চুরি করে খায়,জানো।তাই ওকে আম চোরা বলি।

আচ্ছা মামুন আর শিউলী কোন ক্লাশে পরে বলতো।

আমার সাথেই পড়ে।

[শুভ বুঝতে পারলো,এই গ্রামে এখনো বাল্যবিবাহ হয়ে থাকে,ছোটছোট ছেলে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেয় তাদের বাবা মা,কলি নিশ্চই এমন কিছু দেখেছে।]

ওরা দুজনই তো ছোট তাই দুজন ছোট্ট মানুষের বিয়ে হয়েছে।আমি তো অনেক বড় তোমার থেকে তাই এটা সম্ভব না।তুমিও তোমার বয়সে কাউকে খুঁজে নেও।

না,আমার তো তোমাকেই পছন্দ হয়েছে। আমি বিয়ে করলে তোমাকেই করবো তা না হলে করবোই না।
কলি অভিমান করে গাল গুলো ফুলিয়ে কান্না করছে।

তোমার বয়স ছয়, আর জানো আমার কতো ২০ বছর।আমি তোমার থেকে ১৪ বছরের বড়।তাই এটা কি সম্ভব বলো।

কেনো সম্ভব না???

আমি এই মেয়েকে কিভাবে বুঝাবো।নিজেরি মাথায় কিছু আসছে না।ওকে দেখো কলি তুমি আগে আমার মতো একটু বড় হও,মন দিয়ে লেখাপড়া করো।তার পর আমরা বিয়ে করবো….ওকে।কলিকে শুধু সান্ত্রনা দেওয়ার জন্য শুভ এই কথাটা বলেছে।

সত্যিই বলছো তুমি।

একদম পিচ্ছিওয়ালা সত্যি।[শুভ]

এমন সময় কলিকে কেউ ডাক দিলো।কলি ও শুভ দুজনেই পিছনে তাকালো।

কলি মা তুমি এখানে কি করছো।

আমি তো আমার প্রিন্স কে দেখতে আসলাম।

প্রিন্স…. মানে।এর পর শুভ আসলাম স্যারকে সব খুলে বললো।

আসলাম স্যার মেয়ের এ ধরনের আচরনের জন্য শুভর কাছে ক্ষমা চাইলো।আসলে কলির মা প্রতি রাতে ঘুমানোর সময় কলিকে গল্প শুনায়।রাতে গল্প না শুনলে কলি ঘুমায় না,আর সেখান থেকেই এসব…..হয়তো তুমি কিছু মনে করো না শুভ।

কি বলছেন স্যার,ও তো এখনো ছোট,তাই আমি কিছুই মনে করেনি,আপনে এমন ভাবে বলবেন না।প্লিজ।

কলি তুমি এখনো দাঁড়িয়ে আছো,যাও ক্লাশে যাও।

কিন্তু বাবা আমি চলে গেলে,প্রিন্সও আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে যাবে।তুমি বরং বাবা আমাকে একটা রশি এনে দেও।

রশি দিয়ে কি করবে।[মাহির]

আমি প্রিন্সকেও আমার লালির মতো বেধে রাখবো।যাতে কোথায়ও যেতে না পারে।

এই লালিটা আবার কে।[শুভ]

লালি আমার বাছুর এর নাম।

এবার শুভ না হেসে পারলো না।শুভর সাথে সাথে ইনাম ও মাহির ও হেসে গড়াগড়ি।অবশেষে শুভকে এই হাটুর বয়সের মেয়ে নাকি রশি দিয়ে বাঁধবে।যে শুভর নাম শুনলে বাড়ীর মানুষও ভয়ে কোনও কথা বলে না।সে শুভকে আজ একটা পিচ্ছি এসব কথা বলছে।

কলিকে তার বাবা একটা ধমক দিলো।বাবার ধমকে কলি আবারও কান্না করতে লাগলো।

কেনো জানি শুভর কলির কান্নাটা একদম ভালো লাগছে না।কেনো এমন হলো শুভ নিজেও জানে না।কলির কান্না বন্ধ করার জন্য শুভ কলিকে ওয়াদা করলো কলির সাথে দেখা না করে ও কোথায়ও যাবে না।কলিও তাই বিনা টেনশনে এ ক্লাশ করতে গেলো।

এদিক দিয়ে শুভও আসলাম স্যারের সাথে স্কুলের চারপাশে ঘুরে দেখতে লাগলো,আর স্কুলের সব সমস্যা নিয়ে আলোচনা করছে।

কলির ক্লাশ ছুটি হলে,কলি বাহিরে গিয়ে শুভকে খুঁজতে লাগলো।কিন্তু স্কুলে কোথাও শুভকে পেলো না।তাই কলি মন খারাপ করে শিলার সাথে স্কুল থেকে বের হয়ে গেলো। হঠাৎ কলিকে কেউ ডাক দিলে কলি পেছনে ফিরে তাকায়।

শুভ গাড়ীতে হেলান দিয়ে মোবাইল টিপছিলো,এমন সময় কলিকে স্কুলের গেট থেকে বের হতে দেখে।আসলে শুভ কলির জন্যই ওয়েট করছিলো।কলির সাথে দেখা না করে যাবে না ওয়াদা করেছিলো।তাই এখনো ওয়েট করছে।

শুভকে দেখে কলি দৌঁড়ে গিয়ে তার সামনে যায়।তুমি এখনো যাওনি প্রিন্স।আমি তো ভেবেছিলাম চলে গেছো।

প্রিন্স কি তার প্রিন্সেস এর সাথে দেখা না করে যেতে পারে বলো।তাই অপেক্ষা করছিলাম তোমার জন্য,আর দেখো তোমার জন্য কি এনেছি।শুভ অনেক গুলো চকলেট এনে কলিকে দিলো।

কলি এতোগুলো চকলেট দেখে খুশিতে চিল্লাতে লাগলো।দেখ শিলা প্রিন্স আমার জন্য কতোগুলো চকলেট এনেছে।আমি তোকে বলেছিলাম না।

কলির খুশি দেখে ভালোই লাগলো শুভর,সামান্য কিছু চকলেট পেয়ে কলির খুশির সীমা নেই।বাচ্চা বলে কথা।

কলি তুমি বাসায় যাবে না।[শুভ]

হুমমম,তুমি কিন্তু কাল আমার সাথে দেখা করতে আসবে।ঠিক আছে।

কলির আবদার শুনে হাসতে লাগলো শুভ।কলি শিলার সাথে চকলেট খেতে খেতে বাসায় চলে গেলো।

এভাবে শুভ যতোদিন ছিলো ততোদিনই কলির সাথে দেখা হতো।কারন স্কুলের কাজের জন্য শুভকে স্কুলে আসতেই হতো রোজ।আর কলির সাথেও দেখা হতো।আর শুভ কলির জন্য কখনো
চকলেট,চিপস,আইসক্রিম,জুশ নিয়ে আসতো।কখনো কখনো কলির জন্য খেলনা নিয়েও আসতো।দিন দিন কলির আবদার গুলো বেড়েই যাচ্ছিলো,কখনো কানামাছি, আবার কখনো ঘুড়তে নেওয়ার জন্যও বায়না করতো।তার পরও শুভ পিচ্ছি বলে কখনো মানা করতো না।আর কখনো মানা করলেই পিচ্ছি কান্না শুরু করে দিতো।এভাবে ২০-২১ দিন পার হয়ে গেলো।

শুভকে এখন ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হতে হবে।কারন ভার্সিটির ক্লাশ শুরু হবে।তাই লাস্ট বার যেদিন কলির সাথে দেখা করতে গেলো শুভ,পিচ্ছিটা কান্না করতে করতে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছিলো।আসলাম স্যার অনেক বুঝানোর পর একটু থেমে ছিলো।কিন্তু শুভর কিছুই করার ছিলো না।এর পর চলে গেলো শুভ ঢাকায়, জানে না কবে দেখা হবে,তবে ওর আবদার গুলো অনেক মিস করবে শুভ।

শুভ আর তার কাজিনরা বাড়ী চলে এলো।বাড়ীতে এসেই পুরো বাড়ী জেনো তারা মাথায় তুলে ফেলে।শুভর মা রাহেলা বেগম এসে ইনাম আর মিহির এর কানমালাই দিয়ে দিলো।

এসেই বাড়ীঘর মাথায় তুলে ফেলছিস এতোদিন তো শান্তিতে ছিলাম।

তার মানে কি বড় মা, আমরা কি বাড়ী আসবো না।আর আমাদের মতো এমন ভদ্র ছেলে তুমি কি আর পাবা।

তোরা ভদ্র…… এ কথাও যে এই জীবনে শুনতে হবে আমাকে জানা ছিলো না।

উফফফ বড় মা রাগ করো কেনো।একটা লেটেস্ট নিউজ বলি।বড় ভাইয়ার জন্য বউ পেয়েছি।

শুভ এতোক্ষন মাহির আর ইনাম এর প্যাঁচাল শুনছিলো চোখগুলো বন্ধ করে সোফায় হেলান দিয়ে।কিন্তু মাহিরের কথা শুনে অবাক দৃষ্টিতে মাহিরের দিকে তাকালো।

কি যা তা বলছিস।আমার শুভর বউ।কে সে…

এই দেখো…..মাহির মোবাইল থেকে কিছু পিক দেখালো বড় মাকে।মাহির চুপ্পে কলির কিছু পিক তুলেছিলো।আর তাই দেখাচ্ছে।

আরে এতো একটা পিচ্ছি মেয়ে।[রাহেলা বেগম]

বড় মা এই পিচ্ছি মেয়ে তোমার রাগী ছেলেকে বিয়ের জন্য প্রপোজ করেছে জানো।আর এতোদিন ভাইয়ার কাছে কতো ধরণের আবদার করছে।তা তো বলে শেষ করা যাবে না।জানো বড় মা ভাইয়াকে তো রশি দিয়ে ওর বাছুরের সাথে বেধে রাখতে চাইছিলো, যাতে ভাইয়া কোথায়ও না যায়।

শুভ রাগী লুক নিয়ে মাহিরের দিকে তাকালো।পাশে থাকা একটা বালিশ উড়িয়ে মারলো,আর মাহিরও সাথে সাথে ক্যাচ করে নিলো।

এতোক্ষন এ বাড়ীর সবাই কলি আর শুভর কাহিনী শুনতে এসে বসলো।শুভ এদের কান্ড দেখে পুরাই অবাক।ওওও হ্যালো এবরিওয়ান,কি শুরু করেছো।এমন ভাবে শুনছো মনে হয় কোনও রোমিও জুলিয়েট এর কাহিনী চলছে।ছয় বছরের একটা বাচ্চা মেয়েকে আদর করে ওর আবদার গুলো পূরণ করা কি দোষ।আর এসব নিয়ে এমন সিনক্রিয়েট করার কি আছে আমি বুজলাম না।যতোসব আবালের দল।

শুভ রাগ করে চলে গেলো।ওখান থেকে।
ভাই দাঁড়া আমরাতো এমনেই একটু দুষ্টুমি করেছিলাম।

মাহির তুই জানোস না শুভ এসব একদম পছন্দ করেনা তাহলে কেনো এমন করেছিস।[মাহির আর ইনাম এর মা রেনু বেগম।]

সরি মা, আমরা এখনি ভাইয়াকে সরি বলে আসি।

থাক এখন ওকে একা থাকতে দে,জানোসই তো ওর রাগ উঠলে কারো সাথে কথা বলতে চায় না।পরে কমলে সরি বলে দিস।

এদিক দিয়ে কলি রাতে ঘুমানোর সময় বার বার হেচকি দিয়ে উঠছে।সারাদিনই কলি কান্না করেছিলো বলে।প্রিয় খেলনা কেড়ে নিলে যেমন বাচ্চারা কাদে কলিও ঠিক সেই জন্যই কাঁদছিলো।কারন তার কাছে খেলনা আর শুভর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।কলির মনে হচ্ছে তাকে এখন আর কেউ চকলেট এনে দেবে না।খেলনা এনে দেবে না।

কয়েক বছর পর……

এভাবে কয়েক বছর কেটে গেলো।কলি এখন নবম শ্রেনীতে পড়ে।অনেকটা বড় হয়ে গিয়েছে।শৈশব এর গন্ডি পার হয়ে কিশোরীতে পা দিয়েছে কলি।

এ কয়েক বছর শুভ যতোবারই গ্রামে এসেছিলো।কলির সাথে দেখাও করছে।তবে গতো দুবছর ধরে শুভ গ্রামে আসছে না।এর মধ্যেই শুভ পড়াশুনা শেষ করে, ছোট চাচার সাথে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছে।

আর এতো বছর পর শুভ আর তার কাজিনরা আবারও এসেছে গ্রামে এখানকার কিছু জায়গা নিয়ে ভেজাল চলছিলো বলে এবার শুভকে আসতেই হলো।তবে এখন আর কলি এতো ছোট না,তাই জ্বালায়ও না আগের মতে।তবে শুভ কলির জ্বালাতন গুলো খুব মিস করে।

আজও কলি স্কুল থেকে যখন বের হয় তখন ইনাম আর মেহের কে গাড়ীর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে।চারপাশ তাকিয়ে দেখে কিন্তু শুভ নেই।এ কয়েক বছর শুভর সাথে কলির খুব কমই কথা হতো।কারন শুভর রাগ সম্পর্কে কলির আগে কোনও ধারনাই ছিলো না,আর কলি ছোট ছিলো বলে তেমন রাগ কলির উপর শুভ কখনো দেখাতোও না।

আর গত দুবছর তো কলি শুভকে দেখেই নি।তবে মেহের আর ইনামের সাথে কলির কথা হতো।আর শুভর সম্পর্কে তাদের কাছ থেকেই অনেক কিছু জানতে পারে।শুভ কতোটা রাগী বর বদমেজাজি তারা না বললে হয়তো কলি জানতোই না।তাই কলি এখন শুভ নামটা শুনলেই ভয় পেয়ে যায়।

এখনতো কলিকে পিচ্ছিও বলা যায় না,মিহির ও ইনাম পিচ্ছি বলে ডাক দিলেই কলি খুব রাগ করে।ইনাম ভাইয়া আমাকে পিচ্ছি একদমই বলবে না।আমি কিন্তু এখন পিচ্ছি না।

তাইইই …. তাহলে তোমাকে এখন কি বলে ডাকবো ভাবী।ভাইয়াকে বিয়ে করার জন্য তো পাগল হয়ে গিয়েছিলে।তো এখন করবেনি বলো।এখনতো অনেকটা বড় হয়ে গিয়েছো,তাহলে কাজী ডেকে এনে আজিই বিয়ে করে দি কি বলো। তবে কলি বলে রাখি শুভ ভাইয়া কিন্তু আগের থেকে অনেক বেশিই রাগী হয়ে গিয়েছে।তাই সাবধান।কলিকে একটু রাগানো আর ভয় দেখানোর জন্যই ইনাম ও মাহির এসব বলছিলো।

কিন্তু কলির তাদের কথায় রাগ না হলেও ভয় পেয়ে যায় শুভর রাগের কথা শুনে।কারন এর আগের বার মানে দুবছর আগে যখন কলি শুভ কে লাস্ট বার দেখে ছিলো তখন শুভ বাজারে কয়েকজন ছেলেকে একাই অনেক মারছিলো।শুভর এমন রুপ সম্পর্কে কলির কোন ধারনাই ছিলো না।আর ছেলেগুলোকে কেনো মেরেছিলো এটা কেউ বলতেও পারেনি।তাই কলি এখন শুভকে দেখলেই ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে।আর সেদিনই শুভ গ্রাম থেকে চলে গিয়েছিলো, কলির সাথেও দেখা করেনি।

আজ দুবছর পর আবার আসলো।

কি হলো কলি কি চিন্তা করছো।[মেহের]

না কিছু নাতো,শুভ ভাইয়া আসেনি।

ওও তাহলে তুমি এতোক্ষন তোমার উনির চিন্তায় মগ্ন ছিলা।

কিসব বলো না, আমি যাই এখন, দেরি হলে মা বকবে।

আরে তোমার উনার সাথে দেখা করবে না।

দুবছর দেখা না করে যেহেতু থাকতে পারছে,,তাহলে এখন আর দেখা করার দরকার নাই কলি যেতে যেতে কথাটা বলছিলো।

এদিকদিয়ে গাড়ীতে বসে শুভ কলিকেই দেখছিলো, আর কলির বলে যাওয়া কথা গুলোর মধ্যে কতোটা অভিমান ছিলো তাও শুভ খুব ভালো করে বুঝতে পারছিলো।

শুভ গাড়ীর সিটে হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে ঠোঁটের কিনারায় একটু হাসি টেনে মনে মনেই বলে উঠলো আমার পিচ্ছিটা আসলেই অনেক বড় হয়ে গিয়েছে।
…………
……………….
[বাকিটা পরবর্তী পর্বে…….]

#প্রেমময়_তৃষ্ণা #তানিয়া #গল্পের_ডায়েরি #TaNiA #GolperDiaryOfficial

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here