গল্প – প্রেমময় তৃষ্ণা
পর্ব – ১৬
লেখিকা – তানিয়া
শুভ সোফাতে পাদুটো টান টান করে বসে আছে।আর তার চারপাশের লোকজন গুলো সবাই শুভর দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।শুভ নিশ্চই কিছু একটা বলবে,একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা সম্পর্কে। কিন্তু না শুভ সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বুঝে আছে,আর এমন বিহেভ করছে মনে হয় কিছুই হয়নি।কিন্তু একটা ছোটখাটো মহা যদ্ধ হয়েগেলো।নিরবতা ভেঙ্গে ফাহিম শুভর কাছে কারন জিঙ্গেস করলো,একটু আগে করা তার কাজের________
||
||
শুভ কলির রুমে প্রবেশ করে দেখে কলি চোখ বুঝে শুয়ে আছে,গত কয়েকদিনে মেয়েটার চেহারাটা একদম শুকিয়ে গেছে,কলির এমন অবস্থা দেখে শুভর মনটা মোচড় দিয়ে উঠে,তবুও শুভ এখন খুশি,কারন সবশেষে কলি সুস্থ আছে,আর এটাই শুভর জন্য অনেক বড় ব্যাপার।শুভ কলির পাশে গিয়ে বসে____কলি বুঝতে পারে শুভ পাশে বসে আছে, তবুও চোখ খুলে না,একরাশ অভিমান কলির মনে বিরাজ করছে,তার এই অভিমান শুভর সামনে নিজেকে অসহায় কখনো হতে দেবে না____শুভ কলির হাতটা ধরতে নিলে, কলি সাথে সাথে হাতটা সরিয়ে ফেলে।শুভ জানে কলি রেগে আছে,শুধু রেগে না,এই মুহুর্তে হয়তো শুভকে অনেক ঘৃর্ণা করছে,আর কারারি কথা,শুভ কলি আর ওর ভালোবাসাকে টাইমপাস বলে ব্যাখ্যা করেছে,যা কলিকে প্রচণ্ড ভাবে আঘাত করেছে।তাই শুভ কলির এখনকার বিহেভিয়ার এ রাগ করছে না,শুভ আবার কলির হাতটা ধরে,আর এবার খুব শক্ত করে,যাতে কলি চাইলেও ছাড়াতে না পারে।______Jan,jan..I’m sorry, please forgive me.Forgive me for hurting you.Forgive me for my mistakes. I was very helpless…but I still love you.I love u many more…
jan pls কথা বল একবার।…আমি ভেবেছিলাম আমি তোকে হারিয়ে ফেলেছি একেবারের জন্য,আমার ভুলের জন্য,তোকে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছে,আমি জানি কিন্তু এর জন্য_____শুভ আর কিছু বলতে পারলো না,আরুশী কারো বাধা না শুনে হনহন করে রুমে ডুকে পড়ে।
_____আর এসেই, এসব কি চলছে শুভ।আর আংকেল বলছে বিয়েটা নাকি কেনশালড। তুমি আবার আমার সাথে এমন করতে পারোনা।এবার কিন্তু…. আরুশী আরো কিছু বলতে চায় কিন্তু শুভর চেঁচানোতে ভয় পেয়ে যায়_____শুভ চোখমুখ খিঁচে বলে how dare you come here.just get out…
||
||
শুভ এসব কি বলছো,এই মেয়ের জন্য তুমি আবার আমার সাথে এমন করতে পারো না,এই মেয়েকে তো আমি, আরুশী কলির দিকে এগিয়ে আসতে নিলে, শুভ ওর গলা চেপে ধরে____সাহস কি করে হলো তোর, ওর কাছে আসার।আমি এতোদিন শুধু কলির কথা চিন্তা করে তোর সব ঢং সহ্য করে আসছি,এখন আর না।তোকে তো আমি এমন শিক্ষা দেবো,জীবনে কোনও দিন আমার কলির নামটা উচ্চারণ করতে ও ভয় পাবি।শুভ খুব শক্ত করে গলাটা চেপে ধরে আছে বলে,আরুশী কিছুই বলতে পারছে না,চোখ দুটো জেনো বের হয়ে যাবে।বার বার হাত সরানোর চেস্টা করছে আরুশী।____রুমে শব্দ শুনে ফাহিম, ইনাম ভেতরে ঢুকে দেখার জন্য।কিন্তু যা দেখলো তাতে দুজনেই শোকড হলো।দৌঁড়ে গিয়ে শুভর কাছ থেকে আরুশীকে ছুটানোর চেস্টা করে।_____কলি শুভর এই রুপ দেখে ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে।শুভর এমন ভয়ানক রুপ কলি আগে কখনো দেখেনি।দুজনে মিলেও শুভকে ছাড়াতে পারছে না।____স্টোপ শুভ,ছাড় ওকে,না হলে ও মরে যাবে।
_____যাক মরে, আমিতো চাই ও মরে যাক,ওর কারনে আজ আমার কলির এই অবস্থা, তাহলে ও কেনো বেঁচে থাকবে।মরে যাক,দুনিয়া থেকে একটা শয়তান কমে যাবে।___আরুশীর অবস্থা সত্যিই খারাপ,এখনো যদি শুভ না ছাড়ে তাহলে ও নির্ঘাত ইন্তোকাল করতে সময় লাগবে না।শুভকে যখন কেউ থামতে পারছে না তখন কলির চিৎকারে শুভর হুশ আসে,সাথে সাথে আরুশীর গলা ছেড়ে দেয়।গলায় শুভর পাঁচ আঙ্গুলের দাগ পরে যায়,আরুশী গলা ধরে কাঁশতে কাঁশতে নিচে বসে পরে ,আর শুভ আরুশীকে ছেড়ে কলির কাছে চলে যায়।
___শুভকে দেখে কলি এই প্রথম এতো ভয় পেলো।শুভ বুঝতে পেরে কলির গাল দুটো ধরে বলে,রিলেক্স জান,এতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই।আমিতো আছি।এই গুলো থেকে তকে কিভাবে সেভ রাখা যায়,তা আমি খুব ভালো করেই জানি।আর আমি বেঁচে থাকতে তোর চুল পরিমান ও ক্ষতি হতে দেবোনা। শুভ কলিকে খুব আলতো করে জরিয়ে ধরেছে।____কিন্তু কলির!!কলির জেনো শুভর কোনও কথা কানেই যাচ্ছে না,ও এক ধ্যানে আরুশী মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে,কলি মনে মনে ভাবছে যাকে কিছুদিন পর বিয়ে করবে তার সাথে শুভ এমন করলো কেনো।____আরুশীর অবস্থা তেমন ভালো না বলে,ফাহিম ও ইনাম মিলে ওকে ডক্তরের কাছে নিয়ে গেলো।
||
||
আর এখন শুভ সোফায় আড়ামে বসে আছে, ওর দিকে সবাই প্রশ্ন ছুড়ে মারছে এমন করার কারন কি।ফাহিমের জোড়াজোড়ি করার পর এতোক্ষন পর শুভ মুখ খুললো। সবাই শুভর দিকে চেয়ে আছে_____
তোর কি মনে হয় ফাহিম, কোনও ছোটখাটো কারনে আমি এতোদিন কলির সাথে এমন করেছি।
____আই নো ব্রো,অবশ্যই কোনও বড় কারন আছে,কিন্তু সেই কারনটা কি
_____শুভ একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে,কলির দিকে তাকিয়ে,কলিকে কয়েকমাস ধরে মারার চেস্টা করা হচ্ছে।আর এর সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে আরুশী ও জরিত আছে।____সবাই শুভর কথায় বিষন শোকড হলো।_____এটা কি করে সম্ভব,মানে, কেউ কলিকে কেনো মারবে।ওর কার সাথে এমন দুষমনি। আসলাম আমীর।
____শুভ কিছুক্ষন নিরব থেকে বললো,ওর না আমার।
____কিন্তু শুভ কেউ তোর আর কলির সম্পর্কের কথাতো জানতো না,শুধু আমরা ফ্যামিলি ছাড়া,তাহলে তোর শত্রুরা কলির কথা কিভাবে জানলো।(ফাহিম)
||
||
কয়েক মাস আগে যখন কলি ঢাকায় এসেছিলো তখন পর্যন্ত সব ঠিকই ছিলো।কয়েকদিন ভালোই কাটছিলো।কিন্তু একদিন আমার একটা ফোন আসলো।আমি যখন রাজনীতিতে জরিতো ছিলাম তখন অনেকেই আমার হাত ধরে উপরে উঠে,আজ তারা যে পাওয়ার পজিশন নিয়ে ঘুড়ছে তার জন্য আমার অনেকটা অবদান আছে,তারই কারনে জানতে পারলাম,আমার পুরানো কিছু শত্রু আমার বিরুদ্ধে কঠিন ষড়যন্ত্র করছে।আমার কাছের মানুষদের টার্গেট করছে,আমার কাছের মানুষ বলতে আমি শুধু আমার পরিবারকেই ধরেছিলাম,তাই আমি সবার সিকোরিটি বাড়িয়ে দিলাম।কিন্তু কিছুদিন পর আবার আমার লোকের ফোন আসে,আর এবার এসেছে গ্রাম থেকে।গ্রামের যে ছেলেগুলোকে কলির দিকে নজর রাখতে বলেছিলাম তারাই ফোন দিলো,আর তারা ফোনদিয়ে জানালো,কিছুদিন ধরে কিছু লোক কলির আগে পিছে ঘুড়ঘুড় করছে,আর লোকগুলো যে এই গ্রামের না,তারা ১০০%সিউর।আর তাদের মতলোব ঠিক মনে হচ্ছে না।এ কথা শুনে আমার বুঝতে আর বাকি রইলো না, ওদের টার্গেট কলি।কিন্তু কিভাবে আর কেনে।আমি তো কাউকে কলি সম্পর্কে জানতে দি নাই,শুধু আমার কাছের মানুষ গুলো ছাড়া,তার মানে আমারি কোনো কাছের মানুষ এর সাথে জরিতো। কিন্তু কে?
||
||
এর পর আমি খুব সাবধানে কলির পিছে কিছু লোক লাগিয়ে দিলাম,যাতে ওরা সারাক্ষণ কলিকে চোখে চোখে রাখে,কোনও বিপদ দেখলে ওকে সেভ করতে পারে।আমি চাইলে কলিকে তখন আমার কাছে নিয়ে আসতে পারতাম,তবে এতে দুটো সমস্যা ছিলো।একতো কলির সামনে পরীক্ষা,আর দ্বিতীয় হলো কে ঐ ব্যক্তি যে কলিকে মারতে চাইছে তা আর জানা হবে না যদি আমি কলিকে নিয়ে আসি।এতে কলিকে নিয়ে সারাক্ষন ভয়ে ভয়ে থাকতে হবে।কিন্তু আমার টেনশন হচ্ছিলো এই ভেবে, কখন কোথায় কে কলিকে ক্ষতি করার চেস্টা করবে তাই বুঝতে পারছিলাম না।
||
||
ফাহিম তোর মনে আছে,সেদিন আমরা সোয়েল এর মেয়ের জন্মদিনের পার্টিতে গিয়েছিলাম।_____হুমমম,তুইতো আমাকে বাসায় ড্রপ করেছিলি।___উমমম,এর পর আমি বাসায় যাওয়ার সময় রাস্তায় ভাগ্যক্রমে আরুশীর সাথে দেখা হয়ে যায়।ওর গাড়ীটা বন্ধ হয়ে যায়।তাই ড্রাইভার রাস্তা দাঁড়িয়ে হেল্প চাচ্ছিলো।আরুশীর ড্রাইভারকে দেখেই আমি চিনে ফেলেছিলাম,তাই গাড়ী থামিয়ে জিঙ্গেস করলে জানতে পারি, গাড়ীতে আরুশী, আর ও একদম ড্রাংক। ওর তেমন কোনও হুসই নেই।একতো রাত,তুফান ও আসবে বলে মনে হচ্ছে তার উপর হাইওয়ে রাস্তা বিপদজনক। তাই মানবতার খাতিরে আরুশীকে নিজের গাড়ীর পেছনে শুয়ে দিলাম।এর পর ওর বাড়ীতে গিয়ে জানতে পারলাম, বাসায় কাজের লোকগুলো ছাড়া আর কেউ নেই,তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই ওকে কোলে করে ওর বেডরুমে নিয়ে জেতে হলো।আরুশীকে বেড এ শুয়ে দিয়ে যখন আমি চলে জেতে নিলাম তখন হঠাৎ জানালা দিয়ে প্রচণ্ড বাতাস আসতে শুরু হলো আর বাতাসের কারনে টেবিলে রাখা কিছু ম্যাগাজিন পরে গেলো।আমি জানালাগুলো বন্ধ করে,ম্যাগাজিন গুলো তুলতে গেলে,কিছু ছবি নিচে পরে যায়।ছবি গুলো দেখে আমি শোকড হয়ে যাই কারন ছবিগুলো আর কারো না কলির।কলি ঢাকায় আসা হতে শুরু করে এখন পর্যন্ত সব ছবি এবং ছবির পিছে সব ডিটেলস দেয়া।আমি বুঝতে পারলাম, আমার শত্রুদের কাছে ইনফোরমেশন কে দিয়েছে কলির। আমার ফ্যামিলি ছাড়া যদি কেউ কলির কথা জানে তাহলে সে হলো আরুশী।
||
কিন্তু সবথেকে বড় প্রশ্ন হলো,কে সে। কার এমন আমি ক্ষতি করেছি যার জন্য আমাকে টার্গেট না করে কলিকে করলো।তাকে বের না করা পর্যন্ত কলিকে সেভ করা সম্ভব না।আমি আরুশীর ফোনটা ছেক করতে চেয়েছিলাম,কিন্তু লক করা ছিলো তাই জানা হলো না আরুশী কার সাথে মিলে এসব প্লানিং করছে।
||
আমি বাসায় এসে সারারাত চিন্তা করলাম কি করা যায়।তাদের উদ্দেশ্য যদি কলিকে মারারি থাকে তাহলে মারছে না কেনো।আমার কানে আসার আগেই মেরে ফেলতে পারতো।কিন্তু তা করছে না, তার মানে ওদের প্লানিং অন্য কিছু,কিন্তু কি?তাইই বুঝতে পারছিলাম না।এর পর দুদিন পর অনেক কাঠ কয়লা পুরে জানতে পারলাম, কলিকে তখনি মারা হবে যখন আমি ওর আশেপাশে থাকবো।তার মানে হচ্ছে আমি কলির সাথে দেখা করতে যাওয়া মানে,কলির বিপদ। আর তারা এটার জন্যই অপেক্ষা করছে।
…………
……………….
[বাকিটা পরবর্তী পর্বে…….]
#প্রেমময়_তৃষ্ণা #তানিয়া #গল্পের_ডায়েরি #TaNiA #GolperDiaryOfficial