প্রেমময় তৃষ্ণা পর্ব – ২০

0
1857

গল্প – প্রেমময় তৃষ্ণা
পর্ব – ২০
লেখিকা – তানিয়া

ভয়ে কলির হাত পা কাঁপছে,গলা শুকিয়ে আসছে,মনে মনে দোয়া দরুদ পরতে লাগলো।কলি দাদীর কাছে ছোটবেলায় শুনেছিলো গায়ে হলুদে, হলুদের ঘ্রাণে নাকি অশুভ জিনিস গুড়গুড় করে কনের আসেপাসে,তাই গায়ে হলুদের পর নাকি কনেকে ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হতো না।কিন্তু আমি তো এখনো গায়ে হলুদই দিনাই, তাহলে………।তবে কলি এগুলো বিশ্বাস করে না,কিন্তু আজ মনে হয় দাদীর কথাই ঠিক।কারন কিছু একটা হেটে এই অন্ধকারে তার সামনে আসছে সে এটা অনুভব করতে পারছে,বার বার জিঙ্গেস করার পরও যখন সামনের ছায়াটা কিছুই বলছে না দেখে, ভেবে নিলো এটা কোনও মানুষ হতেই পারে না।আর চারদিকে এতোক্ষন যে শোরগোল আসছিলো তাও এখন নেই। কলি ভয়ে চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে রাখলো,আর বিড়বিড় করে আল্লাহকে ডাকছে,হঠাৎ কপালে কারো উষ্ণ ঠোটের স্পর্শ পেলো।কলির কাছে এই স্পর্শ কেনো জানি চেনা চেনা লাগছে। সেই উষ্ণ ঠোট দুটি কলির দুগালেও কিস করলে,কলির মুখে অস্পষ্টভাবে বের হয়ে যায়……শু…শুভ।
||
||
কিন্তু কলি তখনো চোখ খোলার সাহস পেলো না।এবার কারো হাতের শীতল স্পর্শ তার কপালে,গালে অনুভব করলো।কলি ভয়ে এবার একটা চিৎকার দিলো।সাথে সাথে কারেন্ট চলে এলো,বাহিরের শোরগোল ও আবার আগের মতো শোনা যাচ্ছে,কলি চোখ খুলে দেখে সামনে কেউ নেই,পুরো রুমে ভালো করে দেখে,কিন্তু কিছু নেই।হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে কলি আবারও ভয় পেয়ে যায়।সামনে তাকিয়ে দেখে।শিলা ও মিলি রুমে প্রবেশ করছে।
||
||
এসেই চল কলি,বাহিরে সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে,_____তোরা এতোক্ষন কোথায় ছিলি,চিন্তিতো হয়ে।___কেনো,আমরাতো বাহিরেই ছিলাম।কি হয়েছে,কিছু লাগবে।____বাহিরে থাকলে কারেন্ট যাবার পর কেনো আসলি না,তুই জানিস না শিলা আমি অন্ধকারে ভয় পাই।____কারেন্ট!!, কারেন্ট কখন গেলো।আর কারেন্ট যাবেই বা কেনো,চাচা তো বাড়ীতে জেনারেটোর ও লাগিয়েছে,কারেন্ট গেলেও সাথে সাথে এসে পরবে।
তুই এসব কি বলছিস, তুই ঠিক আছিস তো।(মিলি)____তুই বলছিস কারেন্ট যাইনি তাহলে আমার সাথে একটু আগে ঘটে যাওয়া ওসব কি ছিলো, কল্পনা!!


বাদ দে তো কলি,হয়তো তুই জেগে থেকে কোনও স্বপ্ন দেখেছিস।এখন নিজেকে ঠিক করে বাহিরে চল।


কলিও নিজেকে রিলেক্স করার চেস্টা করছে,হয়তো আমার কল্পনা,আমি একটু বেশি টেনশন করছি তাই হয়তো,যাবার আগে আয়নায় নিজেকে আবার দেখে নিলো,আর আয়নায় তাকিয়ে শোকড হয়ে গেলো কলি।
সোজা মিলির কাছে গিয়ে জিঙ্গেস করলো।

______আপু আমি যদি স্বপ্নই দেখি তাহলে এসব কে করেছে।আমার মুখে হলুদ কে দিলো।____মিলি বিস্ময়ের চোখে কলির দিকে তাকিয়ে আছে,কলির মুখে হাত দিয়ে জিঙ্গেস করলো,কলি তুই ঠিক আছিস তো বোন।এমন আজব আজব কথা কেনো বলছিস,তোর মনে নেই।এই হলুদতো খালা আমাদের সামনে তোকে লাগিয়ে গেলো।খালা কাজের জন্য হয়তো হলুদ দিতে পারবে না তাই। তুইতো জিদ করলি সবার আগে খালাই জেনো তকে হলুদ দেয়।আর তুই কিসব বলছিস।
||
||
_____আমার মনে হয়কি মিলি আপু,ও শুভর শোকে পাগল হয়ে গিয়েছে,ও এই বিয়েতে রাজি হবার পর থেকেই আমার মনে হয়েছিলো,এক্সিডেন্ট এ কলির মাথাটা মনে হয় গেছে।এবার আমার ধারনা টাই ঠিক হলো,দেখছো না কখন ধরে কি আবলতাবল বলছে।দেইখো বাহিরে গেলে বলবে, আরে শুভ এখানে কি করে।
||
||
কলি কিছুক্ষন ড্যাবড্যাব করে মিলি আর শিলার দিকে তাকিয়ে বুঝার চেস্টা করছে,আসলেই কি আমার মাথা খারাপ হয়ে গেলো নাকি।আমি এমন আজগুবি কথা কেনো বলছি।আমি কি সত্যিই শুভর শোকে পাগল হয়ে যাচ্ছি,তাহলে তো শুভকেও দেখতাম,কই সকাল থেকে তো শুভকে একবারও দেখেনি।
||
||
মিলি ও শিলা তারাদিতে লাগলো কলিকে বাহিরে যাওয়ার জন্য,তাই কলিও নিজের মনকে কোনও রকম বুঝ দিয়ে বাহিরে বের হলো।ঘর থেকে বের হয়ে কলি অনেকটা অবাক,এতো আয়োজন হলুদের জন্য।সামিয়ানা টানিছে,তার নিচে সবাই বশে আছে, সিরিজ বাতির মতোই চারদিকে লাইন ধরে সাজানো ছোট ছোট বাল্ব।কিছু কিছু জায়গায় ফুল দিয়েও ডেকোরেশন করেছে,অদ্ভুত সুন্দর লাগছে সব কিছু।কিন্তু এতো কিছু রেখে তাদের সবার দৃষ্টি এখন কলির দিকে,কলি এক পা এক পা করে সামনে বাড়াচ্ছে বিভিন্ন ফুলদিয়ে তৈরি স্টেজটার দিকে।আর সবাই কলির দিকে ফুলের পাপড়ি ছুড়ে মারছে,ব্যাক সাইডে গান বাজছে—–

হলুদ বাঁটো, মেন্দি বাঁটো, বাঁটো ফুলের মৌ,
বিয়ার সাজে সাজবে কন্যা নরম নরম ব’রে

হলুদ বাঁটো, মেন্দি বাঁটো, বাঁটো ফুলের মৌ,
বিয়ার সাজে সাজবে কন্যা নরম নরম ব’রে

সুরমা-কাজল পরাও কন্নার ডাগর নয়নে,
আলতা বিছপ রাঙা দুটি, রাঙা চরণে
ভরা কলস ছলাৎ ছলাৎ ডাঙা এ নিতল ।

হলুদ বাঁটো, মেন্দি বাঁটো, বাঁটো ফুলের মৌ,
বিয়ার সাজে সাজবে কন্যা নরম নরম ব’রে

ঢেঁকি তোমার বিয়ার বাড়ির নতুন ঝামেলা,
সরু পিঠার মিঠার ক্ষীরে নতুন ঝামেলা,
তালে তালে সুর তুলে আজ মধুর কথা কও ।

হলুদ বাঁটো, মেন্দি বাঁটো, বাঁটো ফুলের মৌ,
বিয়ার সাজে সাজবে কন্যা নরম নরম ব’রে

রঙিন পারের শাড়িতে বউ সাজবে যতনে,
কন্যা সাজবে যতনে ,
মন ময়ূরী পেখম মেলে নাচবে তখনি,
কন্যা সাজবে তখনি,
পাল দুলিয়ে মাঝ গাঙ্গেতে চলছে যেন নাও ।

হলুদ বাঁটো, মেন্দি বাঁটো, বাঁটো ফুলের মৌ,
বিয়ার সাজে সাজবে কন্যা নরম নরম ব’রে
——————————————শাহানাজ রহমতুল্লাহ

কলির কাছে এসব স্বপ্ন মনে হচ্ছে,আর এখন চিৎকার পেরে কান্নাও করতে মন চাইছে।শাহিনকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি,তাই বলে এতো জাঁকজমক এর কি ছিলো,এরা কেউ কি আমার মনের অবস্থা টা বুঝার চেস্টা করে না।নিজেকে কতো কস্ট করে বিয়ের জন্য রাজি করেছি,যাতে শুভ সুখে থাকে।শুভ কখনো আমার সাথে সুখে থাকবে না।কোনও দিক দিয়ে আমি ওর যোগ্য না।তা আমি একটু দেরিতে হলেও বুঝতে পেরেছি,তাইতো বিয়েটা তারাতারি করতে চাইলাম।আমি জানি আমি অন্যকারো না হওয়া পর্যন্ত শুভও অন্য কাউকে নিজের জীবনে জায়গা দেবে না।এসব কিছুতো শুভর জন্যই।এরা কি একটু বুঝে না।এসব ভাবতে ভাবতে এক ফোটা চোখের পানি কলির অজান্তেই মেহেদি লাগা হাতটার মধ্যে পরলো।
||
||
চৌধুরী বাড়ীর সবাই অনেক সেজেগুজে কলির গায়ে হলুদে উপস্থিত হলো।আমীর সাহেবও পুরো চৌধুরী পরিবারকে সযত্নে আপ্যায়ন করে নিলো।____কলি ভাবনায় ছিলো,কিন্তু মাহির এর ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে ৪২০ ভোল্ট ঝটকা খেলো।চোখের সামনে পুরো চৌধুরী পরিবার।তারা কি সুন্দর আমার বাবা মার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে,এরা আমার বিয়ে খেতে এসেছে।কি আজব মানুষ,তার মানে এরা ও খুশি আমি শুভকে ছেড়ে শাহিনকে বিয়ে করছি বলে।আর শুভ,ওই ব্যাটাও কেমন নাচতে নাচতে আমার গায়ে হলুদে এসে পরেছে।একে দেখে কে বলবে,এই ব্যাটা ছেঁকা খাইছে।উফফ আল্লাহ এসব দিন দেখার আগে আমাকে উঠাইয়া নিলা না কেনো।আমি নাকি এর জন্য নিজের সব কিছু ত্যাগ করছি,এরতো কোনও চিন্তাই নেই।আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে অন্য কারো সাথে অথচ দেখো উনিতো আমার বান্ধবী আর কাজিনদের সাথে গায়ে পরে পরে কথা বলছে, একটু লজ্জা নেই,আর থাকবে বা কি করে উনিতো বরাবরই নির্লজ্জ টাইপ মানুষ।
||
||
কলি এতো কিছু মনে মনে ভেবেই চলছে,আর আড় চোখে শুভকে বার বার দেখছে।রাগে কলির শরীল জ্বলছে।মন চাইছে সামনের পুকুরে তিনটা ডুব দিয়ে আসি,না হলে এই শুভর বাচ্চাকে পুকুরে চুবাইতে মন চাইছে।
||
||
এদিক দিয়ে সবাই একে একে কলিকে হলুদ দিয়ে গেলো।শুভর বাবা মা হতে শুরু করে চৌধুরী বাড়ীর সবাই কলিকে হলুদ দিলো,শুভ বাদে।কলির আশ্চর্যের আরেক সীমা হলো,মাহির,রাহি,মিলা,শিলা,জুই জবা,আর আরো কিছু কাজিন অনুষ্ঠানে নাচ গান গেয়ে পুরো অনুষ্ঠানে আনন্দ করে যাচ্ছে।কলির এখন কাঁদতে মন চাইছে, খুব বেশি কাঁদতে মন চাইছে,কলির সব থেকে বিরক্তের কারন হচ্ছে শুভ,কারন শুভ আসার পর থেকে একবারও কলির দিকে তাকায়নি,বরং পুরো অনুষ্ঠান ইনজয় করছে।এ কেমন প্রেমিক আমার। কলি মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।____শিলা কলির কাছে এসে জিঙ্গেস করছে,কি হলো দোস্ত, তোর কি মাথা ব্যাথা করছে।____কলি মাথা তুলে শিলার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো,হয়তো অনেক কথা বলতে চাইছে।কিন্তু এখন কলি আর কিছুই বলবে না।কারন কলির এসব কিছু বিশ্বাস হচ্ছে না।সব কিছু কল্পনা মনে হচ্ছে। আর এখন কিছু বললে হয়তো শিলা চিৎকার করে বলবে কলি পাগল হয়ে গিয়েছে,তার থেকে ভালো চুপ থাকা।
…………
……………….
[বাকিটা পরবর্তী পর্বে…….]

#প্রেমময়_তৃষ্ণা #তানিয়া #গল্পের_ডায়েরি #TaNiA #GolperDiaryOfficial

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here