না_চাইলেও_তুমি_আমার
পর্বঃ ২৩
জাহান আরা
কুয়াশাচ্ছন্ন চারপাশ,হাঁড় কাঁপানো শীত পড়ছে।রাস্তায় লোক চলাচল কমে গেছে। খেতে বসবে নিষাদ সেই সময় নিশানের কল এলো,এক্ষুনি বাসায় যেতে বলছে নিশান চন্দ্রকে নিয়ে।
নিশানের গলার স্বর কেমন যেনো শোনাচ্ছে,চন্দ্র এখনো চাদর মুড়ি দিয়ে বসে আছে,এতো ঠান্ডা লাগছে তার যে হাত ই বের করছে না।
নিষাদ উঠে খাবার সব ফ্রিজে রেখে দিলো,তারপর চন্দ্র কে বললো,”তাড়াতাড়ি রেডি হও,আমরা বাসায় যাচ্ছি এখনই।”
নিষাদের কণ্ঠে কিছু একটা ছিলো,চন্দ্র বুঝে গেলো কোনো সমস্যা হয়েছে নিশ্চয়।
কিন্তু বসা থেকে উঠতে ইচ্ছে করছে না চন্দ্রর।কেমন আলসেমি পেয়েছে চন্দ্রকে।
নিষাদ চেঞ্জ করে এসে দেখে এখনো চন্দ্র জবুথবু হয়ে বসে আছে।
গায়ে পারফিউম ছড়াতে ছড়াতে বললো,”৫ মিনিট সময় দিলাম,৫ মিনিটের মধ্যে যদি রেডি হয়ে না নাও,তাহলে কিন্তু একটু পরে তোমার ফরজ গোসল করে বের হতে হবে,এবং ঠান্ডা পানি দিয়ে।
কোনটা করবে সিদ্ধান্ত নাও,আমি অবশ্য খুশি।”
নিষাদ কি বলতে চাইছে চন্দ্র বুঝতে পেরে লাফিয়ে উঠে যায় চেয়ার থেকে,চন্দ্র বুঝে গেছে নিষাদ সত্যি সত্যিই করে ফেলতে পারে,”অস..”
চন্দ্র আর কথা শেষ করতে পারে না।নিষাদ সামনে এসে চন্দ্রর কোমর জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে আনে,তারপর টান দিয়ে চন্দ্রর শরীর থেকে চাদর ফেলে দেয়।
ঠান্ডায় কেঁপে উঠে চন্দ্র।
চন্দ্রর ঘাড়ে চুমু খায় নিষাদ,তারপর গলায়।জামার উপর দিয়েই চন্দ্রর বুকে চুমু খায়।
উত্তেজিত হয়ে উঠে চন্দ্র আস্তে আস্তে,শক্ত করে খামচে ধরে নিষাদের পিঠ।
বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে চন্দ্রর কপালে,নাকে,ঘাড়ে।নড়তে পারছে না আর চন্দ্র যেনো,বুক থেকে নিষাদের মুখ উপরে উঠে এলো,চন্দ্রর গালে একটা,ঠোঁটে একটা কামড় বসায়।
চন্দ্র গুঙিয়ে উঠে আবেশে।
নিষাদ চন্দ্র কে জড়িয়ে ধরে বলে,”শীত কি এখনো বেশি লাগছে? ”
লজ্জায় রাঙা হয়ে চন্দ্র মাথা নেড়ে অস্ফুটে না বলে।সাথেসাথে নিষাদ চন্দ্র কে ছেড়ে দিয়ে সোফায় বসে জুতার ফিতা বাঁধতে থাকে আর বলে,”শুধু শুধু আমাকে অসভ্য বলো তুমি,এই যে তুমি এতোক্ষণ শীত লাগছে বলে জড়োসড়ো হয়ে ছিলে,দেখেছো আমি কেমন ২মিনিটে তোমার শীত দূর করে দিলাম,এখন অন্তত বলো না আমি অসভ্য,শুধু শুধু তোমাকে ছুঁই।”
নিষাদের কথা শুনে চন্দ্র আহাম্মক হয়ে গেলো যেনো,তারপর তোতলাতে তোতলাতে বললো,”আ..আপনি এতোক্ষণ এসব ক..করেছেন…..”
কথা শেষ করতে পারে না চন্দ্র তার আগেই নিষাদ বলে উঠে,”হ্যাঁ তোমার শীত দূর করার জন্য করেছি।”বলেই একটা শয়তানি হাসি দিলো চন্দ্রকে উদ্দেশ্য করে।
অথচ চন্দ্র ভেবেছিলো কি!
চন্দ্র কে ঠাঁয় থাকতে দেখে নিষাদ বললো,”তুমি চাইলে আমি তোমার ড্রেস চেঞ্জ করে দিতে পারি,ফাঁকতালে একটু আমার সব দেখে নিতে পারবো,তোমার শীত ও দূর করে দিবো,তুমি আবার ভেবো না তোমাকে আদর করার বাহানা খুঁজছি,নো,আমি শুধু তোমাকে হেল্প করতে চাইছি একটু।”
তেড়ে এসে চন্দ্র নিষাদের পিঠে একটা কিল বসিয়ে দিয়ে বললো,”আপনি খুব,খুব,খুবই খারাপ একজন লোক। শুধু শুধু অসভ্যতা করার বাহানা খোঁজেন।”
নিষাদ চন্দ্রকে বুকে টেনে নিয়ে বললো,”আমি যখন খারাপ সার্টিফিকেট পেয়েই গেলাম,তাইলে চলো না বউ,আরেকটু খারাপ হই,তোমার শীত দূর করে দিবো প্রমিস।”
নিষাদের থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে চন্দ্র উঠে আলমারি থেকে নিজের জামা বের করতে করতে বলে,”আমার যেনো আর কাজ নেই,আমাকে ঠান্ডা পানিতে গোসল করানোর চক্রান্ত এসব,আমার শীত এমনিতেই চলে গেছে।”
জামা নিয়ে চন্দ্র ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।তারপর চেঞ্জ করে আসতেই নিষাদ বলে,”চন্দ্র,আমার সাথে বাজি ধরবে একটা বিষয় নিয়ে?”
চুল বাঁধতে বাঁধতে চন্দ্র বলে,”কি বিষয় নিয়ে?”
কিছুক্ষণ ইতস্তত করে নিষাদ বললো,”না থাক বাদ দাও,তুমি পারবে না,হেরে যাবে।”
চোখ পাকিয়ে চন্দ্র বললো,”কি বললেন আপনি,আমি হেরে যাবো?
কখনোই না,বলেন আপনি,আমি রাজি?”
নিজের ফোন,চন্দ্রর ফোন,ওয়ালেট চন্দ্রর সাইড ব্যাগে রাখতে রাখতে বললো,”ভেবে চিন্তে বলেছো তো?পরে আবার কান্নাকাটি করো না,রাগারাগি ও করতে পারবে না।”
আগের চাইতে তেজি গলায় বললো,”আপনি বলুন,আমি রাজি,আগে বাজি ধরবো তারপর বাসায় যাবো,এই আমি বসলাম বিছানায়।”
নিষাদের খুব হাসি পাচ্ছে,হাসতে হাসতে বলে,”চলো দেখি কে কতোটা সাহসী,আমি তোমার সামনে দাঁড়িয়ে চেঞ্জ করবো বাসায় ফিরে,তুমি আমার সামনে দাঁড়িয়ে,রাজী?”
মুহূর্তেই রাজ্যের সব লজ্জা এসে ভীড় করেছে চন্দ্রের চোখেমুখে,লজ্জায় লাল হয়ে উঠে চন্দ্র,দুই কান গরম হয়ে যায় শুনে।তারপর মাথা নিঁচু করে বলে,”আপনি খুব খারাপ মানুষ,আমাকে শুধু শুধু লজ্জা দেন।”
নিষাদ হাহাহা করে হেসে উঠে বলে,”চন্দ্রাবতী যখন লজ্জাবতী,আমার লজ্জাবতী কে তো লজ্জা পেলে আরো বেশি সুন্দর লাগে,এখন তো আমার আরো বেশি লজ্জা দিতে ইচ্ছে করছে।”এই বলে নিষাদ এগিয়ে গিয়ে চন্দ্রর ঘাড়ে চুমু খায়,টা দিয়ে খুলে দেয় চন্দ্রর খোপা।চন্দ্র কেঁপে উঠে,এবার আর শীতে না কাঁপে না।
খামচে ধরে নিষাদের চুল,কিছুক্ষণ পর নিষাদ উঠে চন্দ্রর ব্যাগ হাতে নিয়ে বলে,”ফ্রী তে তোমার অনেক সেবা করেছি বউ,তোমার সব শীত দূর করে দিয়েছি দেখেছো,এখন আর তোমার শীত করছে না,এবার চলো,দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
আবারও বোকা হয়ে গেলো চন্দ্র,তোতলাতে তোতলাতে বললো,”আপনি আবারও? ”
“হ্যাঁ আবারও ম্যাডাম,ড্রেস চেঞ্জ করে আসার পর আপনার শরীর হালকা কাঁপছিলো শীতে,কষ্ট আপনার শরীর পেলে সেই কষ্ট আমার কলিজায় এসে বিঁধে ম্যাডাম,এবার সুয়েটার পরেন,চাদর নেন,ওড়না দিয়ে কান পেঁচিয়ে নেন,তুমি শীতে কেনো কাঁপবে,তুমি মোটেও কাঁপতে পারবে না অন্যকোনো কারনে,তোমাকে শুধু কি কাঁপাবো লজ্জাবতী থুক্কি চন্দ্রাবতী”
অজান্তেই চোখ বেয়ে ২ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে চন্দ্রর।এতো ভালো লাগছে কেনো তার নিষাদের এসব দুষ্টুমি,আদর,যত্ন বুঝতে পারে না চন্দ্র।তারপর সুয়েটার পরে নেয়,নিষাদ উপর দিয়ে চাদর দিয়ে মুড়িয়ে দেয়।
★
নিশানদের বাসায় রান্নাবান্নার ধুম পড়ে গেছে,মনোয়ারা বেগম নিজে রান্না করছেন,আজ নতুন অতিথি আসার খুশির খবরে এই পরিবারের সবাই অনন্দে আত্মহারা।
হাসনাত সাহেবের পছন্দ মতো বিরিয়ানি রান্না করছেন মনোয়ারা বেগম।অনলাইনে নিশান আরো অনেক খাবারের অর্ডার দিয়েছে।
হাসনাত সাহেব দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না স্থির হয়ে।তার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে তিনি অতি আনন্দিত।
ড্রয়িং রুমে সোফায় নিশান রাত্রিকে নিয়ে বসে আছে।রাত্রির মাথা নিশানের বাম কাঁধের উপর।
এরইমধ্যে রাত্রিকে ২ গ্লাস দুধ,৩টা ডিম খাওয়ানো হয়ে গেছে।
হাসনাত সাহেব আবার ফ্রিজ খুললেন,আঙ্গুর বের করে এক থোকা ধুয়ে নিলেন।তারপর পিরিচে নিয়ে রাত্রির সামনে দিয়ে বললেন,”চট করে আঙ্গুর গুলো খেয়ে নাও তো মা,তোমার শাশুড়ি আবার কমলা নিয়ে আসছে।”
রাত্রি অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো নিশানের দিকে,এতো খাওয়া সম্ভব না তার পক্ষে।
হাসনাত সাহেব নাছোড়বান্দা,অগত্যা বাধ্য হয়ে একটা আঙ্গুর খেলো রাত্রি,মনোয়ারা বেগম কমলা একটার কোয়া খুলে এনে হাসনাত সাহেবের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,একটা কোয়া যদি অবশিষ্ট থাকে কমলার,তবে আমি বৌমা কে কিছু বলবো না তোমার খবর করে ফেলবো।”
তারপর চুলে গেলেন কিচেনের দিকে,বিরিয়ানির সুঘ্রাণ ছড়িয়েছে চারদিকে,রাত্রির মনে পড়লো চন্দ্রর কথা তখন।চন্দ্রর ভীষণ প্রিয় বিরিয়ানি।
“চন্দ্র টা যদি এখন থাকতো,খুব ভালো লাগতো আমার জানো।”
রাত্রির কথা শুনে নিশান মুচকি হাসে,রাত্রিকে বলে না চন্দ্র যে আসছে,সারপ্রাইজ দিতে চায় রাত্রি কে।
হাসনাত সাহেব দাঁড়িয়ে থেকে রাত্রিকে খাওয়ালেন
★
আমির চন্দ্রর হোস্টেলে যায়,সন্ধ্যার পর দেখা করতে দেওয়া হয় না কিন্তু আমিরের রিকুয়েস্ট শুনে ভিতরে ঢুকতে দিলো গার্ড।হোস্টেলের অফিস রুমে গিয়ে আমির চন্দ্রর খোঁজ করে জানতে পারে গতকালই চন্দ্রর সব কিছু নিয়ে গিয়েছে নিশান এসে,চন্দ্র না-কি আর হোস্টেলে থাকবে না।
আমির ভাবে একবার চন্দ্রকে কল দিবে,তার পর পরই মনে হয় একবার নিশানদের বাসায় গিয়ে চেক করে আসলেই হয়।
ভেবেই আর কল দেয় না।গাড়ি নিয়ে নিশান দের বাসার দিকে ছুটে।
যদি চন্দ্রকে নিশানদের বাসায় পায় তবে ভালো,কিন্তু যদি না পায় তবে কি করবে চন্দ্রকে আমির ভেবে উঠতে পারে না।নিজেদের বংশের মান সম্মানের কথা মনে পড়ে আমিরের,জবাই করে দিবে সে চন্দ্রকে অন্যকোনো ছেলের সাথে পেলে।
গাড়ির এসি অন করে দেয় আমির,এই শীতেও তার মাথা প্রচন্ড গরম হয়ে আছে,চন্দ্রকে না পাওয়া পর্যন্ত মাথা ঠান্ডা হবে না কিছুতে আজ।
একটু একটু করে নিশানদের বাসার দিকে এগুচ্ছে আর আমিরের অস্থিরতা বাড়ছে।
বোনদের দিকে তাকিয়ে বিয়ের ৫ বছরে ও কোনো সন্তান নেয়ার কথা ভাবে নি আমির,চন্দ্রকে বিয়ে দেয়ার পর তারপর ভাববে বলে বাসর রাতেই সুরমা কে বলেছে আমির,বাসায় মা নেই বলেই আমির কে বিয়ে করিয়ে দেয় অল্প বয়সেই।
সেই বোনেরা যদি পরিবারের কথা না ভাবে তবে সেও ভুলে যাবে বোনের কথা,নিজ হাতে কেটে ফেলবে বোনকে,বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দিবে।
পরক্ষণেই আবার ভাবে আমির কি ভাবছে এসব সে!
তার বোনকে সে এটুকু বিশ্বাস করে না কেনো?
কোথায় যাবে চন্দ্র,নিশ্চয় রাত্রির কাছে আছে।
নিজেকে নিজে বুঝানোর চেষ্টা করে,কিন্তু বুঝ মানে না নিজের মন।
★
বাসায় পৌঁছে কলিং বেল বাজাতেই নিশান রাত্রি কে পাঠায় দরজা খুলে দেখতে কে এসেছে।রাত্রি গিয়ে দরজা খুলতেই দেখে চন্দ্র দাঁড়িয়ে আছে।চন্দ্রকে দেখেই রাত্রি জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়।
চন্দ্র নিজেও কান্না শুরু করে বোনকে দেখে,কতোদিন পর দেখা হলো।
একই মায়ের পেটে জন্ম নেওয়া,একই বিছানায় পাশাপাশি শোয়া,একই টেবিলে খেতে বসা,একই ছাদের নিচে বাস করা দুটো মানুষ যাদের আমরা বোন বলে জানি,সময়ের স্রোতে ভেসে একসময় কে কোথায় চলে যায়,কেউ জানে না।
চাইলেই তার সাথে মারামারি করা যায় না,একই ড্রেস নিয়ে রাগারাগি করা যায় না।
আইসক্রিম,ফুসকা নিয়ে আর কাড়াকাড়ি হয় না,বিছানা গুছানো,মশারী লাগানো নিয়ে আর ঝগড়া হয় না।
একে অন্যের তেল,শ্যাম্পু,ক্রিম দেওয়া নিয়ে কথা কাটাকাটি হয় না।একজনের বিরুদ্ধে আরেকজনের বিচার দেওয়া হয় না।
হয় না রাত পোহালেই একে অন্যের মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠা,অথবা একে অন্যের মুখ দেখে ঘুমুতে যাওয়া।
কালের অবর্তনে চলে যায় একজন এক জায়গায়,নিজনিজ সংসারে জড়িয়ে ভুলে যায় আস্তে আস্তে সেই মায়ার সম্পর্ক।বয়স বাড়ে,নতুন নতুন সম্পর্কে জড়ায়,অথচ বোনের সাথে যে আত্মার সম্পর্ক,রক্তের সম্পর্ক তাতে অনেকের ধুলো পড়ে যায়।
নতুন সম্পর্কের গোড়ায় পানি ঢালতে ঢালতে,নিবিড় পরিচর্যা করতে করতে বোন বোনের সম্পর্কে একফোঁটা পানি দেওয়া হয় না।
অথচ বিধাতার কি অদ্ভুত খেয়াল,হাজারো অনাদর হওয়ার পরেও যখন বোনে বোনে দেখা হয়,মুহূর্তেই মুছে যায় সম্পর্কের ধুলো,একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে ফিরে যায় সেই ছোট বেলায়,সেই শৈশবে,কৈশোরে।দুই দেহ এক প্রাণ হয়ে যায়।
লোকে বলে,”গাঙ্গে গাঙ্গে দেখা হলেও বোনে বোনে দেখা হয় না।”মিথ্যা বলে না।
অথচ তবুও বোন,এই একটা মানুষ যথেষ্ট ১ যুগ পরে দেখা হলেও বুকের ভিতরে জমে থাকা বহুবছরের পুরনো ক্ষত সারিয়ে দেয়ার জন্য।মায়ের কাছেও বলা যায় না যেসব সমস্যা,বোন সেটা এক তুড়িতে সমাধান করে দিতে পারে।
২ বোনের কান্না দেখে পিছন থেকে নিষাদ বলে,”ভাবী,আমাকে কি ভিতরে আসতে দিবে না,না-কি ২ বোন সারারাত এখানেই দাঁড়িয়ে কান্না করবে?”
নিষাদের কথা শুনে রাত্রি চন্দ্রকে ছেড়ে দিয়ে ভিতরে নিয়ে আসে।
নিষাদ গিয়ে সোফায় বসতে বসতে বলে,”তারপর বলো,কি খবর তোমাদের,এতো জরুরি তলব কিসের ছিলো?”
প্রশ্ন শুনে রাত্রি লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠে,রাত্রিকে লজ্জা পেতে দেখেই নিষাদ হেসে বলে,”বুঝে গেছি আমি।”
চন্দ্র কিছু না বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করে,”কি হয়েছে রে আপা?”
রাত্রি লজ্জায় মাথা নিঁচু করে ফেলে।নিষাদ উঠে বলে,”আমি কিচেনে যাচ্ছি,আমার সামনে ভাবী বেশি লজ্জা পাচ্ছে,তবে ভাবী শুনো,ভাতিজা হোক আর ভাতিজি নাম যেনো তাদের চাচ্চুর মতো সুন্দর হয় দেখতে,এর জন্য আমার অনেকগুলো ছবি তোমাদের রুমে লাগিয়ে দিবো,তুমি সারাদিন আমার ছবি দেখবা,আমার গুল্লুরা আমার মতো হবে তাইলে।”
বলে হাসতে হাসতে নিষাদ কিচেনের দিকে যায়।চন্দ্রর মুখ খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠে,চন্দ্র গিয়ে রাত্রির পাশে বসে বলে,”আপা,নিষাদ ভাই যা বলে গেছে তা কি সত্যি? ”
রাত্রি হেসে মাথা উপরনিচ করে।চন্দ্র জড়িয়ে ধরে আবার।
কলিং বেল আবার বেজে উঠতেই চন্দ্র উঠে যায় দরজা খুলতে।দরজা খুলেই দেখে আমির দাঁড়িয়ে আছে,চন্দ্র আমির কে দেখে প্রচন্ড ভয় পায়,চন্দ্রর শরীর মুহূর্তেই জমে যায় যেনো বরফের মতো।
আমির চন্দ্র কে দেখে স্বস্তি পায় ভীষণ।চন্দ্রর মাথায় গাট্টা মেরে বলে,”হোস্টেল থেকে এই বাসায় চলে এসেছিস যে একেবারে, একবার আমাদের বলে এলে কি হতো? বাবা আমি কতো চিন্তায় ছিলাম জানিস তুই?”
তারপর ভিতরে ঢুকে নিশানের সাথে কোলাকুলি করে,ভাইকে দেখে রাত্রি সালাম করে,ভীষণ আনন্দ লাগছে রাত্রির,আজকের এই খুশির দিনে ভাই বোন দুজনেই তার কাছে আছে।
মনোয়ারা বেগম আর হাসনাত সাহেব টেবিলে খাবার দাবার রেডি করে সবাইকে ডাকতে লাগলেন।আমির তাদেরকে সালাম করে।
“যাক বাবা,এসেছো তুমিও,ভালোই হলো,নাও আগে মিষ্টি খাও।”
“খালাম্মা আমি মিষ্টি খাই না যে।”
“আরে বাবা নাও,এটা খুশির মিষ্টি,এটা খেলে কিছু হবে না।”
টেবিলে সাজানো খাবারের বহর দেখে আমির জিজ্ঞেস করে,”কি হয়েছে খালাম্মা,আপনাদের দেখে মনে হচ্ছে বাসায় কোনো উৎসব হচ্ছে?”
“ও মা,ওরা এখনো তোমায় বলে নি বুঝি?আরে তুমি তো মামা হতে চলেছো বাবা।”
শুনেই আমিরের দুচোখ জলে ভরে যায় মুহূর্তে,ঘাড় ফিরিয়ে রাত্রির দিকে তাকায় আমির,রাত্রির মুখে কেমন লজ্জার আভা,অনেক বছর এরকম খুশির খবর শোনে নি আমির।ইচ্ছে করছে এখনই গিয়ে বোনকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে তার।এতো আনন্দ লাগছে কেনো আমির বুঝতে পারছে না।
বাবাকে ফোন করে সাথে সাথে,ফোন করে জানায় খুশির খবর,চন্দ্র এখানে আছে সেই খবর।
মাইনুল সাহেব ও খুশি হয়ে যান শুনে,তারপর বলে,”তাহলে ঠিকই আছে,আনন্দের খবর শুনেই বোনের বাসায় চলে গেছে,ওদের মা থাকলে তো ওদের মা-ই যেতো,হয়তো নিশান ওর ফোন রিসিভ করেছে,আমি শুধু শুধুই ভুল বুঝেছি।”
আমির ফোন রেখে দেয়।
খাবার টেবিলে আমির,নিশান,নিষাদ,হাসনাত সাহেব এক সারিতে বসে,অন্যসারিতে হাসনাত সাহেবের মুখোমুখি মনোয়ারা বেগম,নিশানের মুখোমুখি রাত্রি,নিষাদের মুখোমুখি চন্দ্র বসে।
খেতে বসেই নিষাদ চন্দ্রর পায়ে পা দিয়ে একটা গুঁতো মারে,চন্দ্র চমকে উঠে চারদিকে তাকায়।সবাই যার যার মতো খাচ্ছে আর কথা বলছে,নিষাদ হাসনাত সাহেবের সাথে খুব মনোযোগ দিয়ে কথা বলছে।
চন্দ্র আবার খেতে নেয়,নিষাদ আবারও গুঁতো দেয় পা দিয়ে।চন্দ্র চুপ করে তাকায় নিষাদের দিকে।নিষাদ কথা বলতে বলতে খাচ্ছে আর পা দিয়ে চন্দ্রর পা ঘষছে।
তারপর আড়চোখে তাকায় চন্দ্রর দিকে,চন্দ্রকে অগ্নিমূর্তি ধারণ করতে দেখে ভেংচি দিয়ে উঠে।
রেগে গিয়ে চন্দ্র নিষাদের পায়ে লাথি বসায় না দেখেই,তারপর অনবরত লাথি দিতেই থাকে।
নিষাদ তার পা সরিয়ে রেখেছে,নিষাদ বুঝতে পেরেছে আগেই চন্দ্র এরকম করবে।চন্দ্র ভুল করে হাসনাত সাহেবের পায়ে লাথি বসাতে থাকে।
হাসনাত সাহেবের কয়েক মুহূর্ত লাগে বুঝতে বিষয় টা,তারপর তিনি গম্ভীর গলায় বলে উঠেন,”রঙ নাম্বার,রঙ নাম্বার,আপনি রঙ নাম্বারে ডায়াল করেছেন,দয়া করে নাম্বার টা পুনরায় চেক করে নিন।”
চন্দ্র তখনও বুঝতে পারে না হাসনাত সাহেব কি বুঝাতে চাইছেন,তাই হাসনাত সাহেব আবারও বলে,”এই পা সেই পা না,এই পা হাসনাত সাহেবের পা,বিরাট মিস্টেক করে ফেলছেন আপনি। ”
চন্দ্র বুঝতে পেরে চমকে উঠে।নিষাদ হাসতে হাসতে চেয়ার থেকে পড়ে যায়।লজ্জায় লাল হয়ে যায় চন্দ্র।
মনোয়ারা বেগম ভ্রু কুঁচকে হাসনাত সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলেন,”খুশির চোটে কি তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেলো না-কি?
কি বলছো এসব রঙ নাম্বার টাম্বারের কথা?”
“তুমি বুঝবে না মনু,যা বুঝার আমি বুঝে গেছি,প্রস্তুতি নাও দুই ছেলের ঘরের নাতিপুতির সেবাযত্ন করার জন্য,আমি শীঘ্রই সব ঠিক করে দিবো।”
মনু বলে ডাকায় মনোয়ারা বেগম আবার রেগে গেলেন,তার উপর হাসনাত সাহেবের অর্থহীন কথাবার্তার কোনো মানে খুঁজে পেলেন না।
ছেলেদের দিকে তাকিয়ে দেখেন,নিষাদ ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে হাসতে হাসতে,নিশান চেয়ারে বসে মুচকি মুচকি হাসছে।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনোয়ারা বেগম বলেন,”এরা সব বাপের মতো আধা পাগল হইছে”
নিশান গেয়ে উঠে,”হরেক রকম পাগল দিয়ে মিলাইছো মেলা,বাবা তোমার দরবারে সব…..”
চলবে…..???