মৃণালিনী পর্ব -৪০

0
695

#মৃণালিনী
#পর্ব ৪০
সৌম্য আলোকের বিরুদ্ধে থানা পুলিশ করতে চায় নি প্রথমে, কিন্তু আলোক করুণা কে বিয়ে করতে না চাওয়ায় পারুল বালা নিজেও ক্ষিপ্ত হলেন। অনেকটা তাঁর জোরাজুরিতেই আলোক কে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হলো, শ্যাম সুন্দর কে উদ্যেশ্য করে কড়া গলায় বললেন,

ভালো করে একখান মামলা ঠোকো তো ঠাকুর পো, দেকি তুমি কতো বড়ো উকিল! ও ব্যাটা যেনো কিচুতেই জেলের বাইরে বেরিয়ে আসতে না পারে!

সকালের অতো চিৎকারের পর শরীর খারাপ হয়েছিলো পারুল বালার তাই তিনি নিজের ঘরে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। বাড়িতে একটা অশান্তির পরিবেশ বিরাজ করছিলো, বামুন দিদি তাঁর ভাইঝির ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছিলেন। এই গ্রাম্য রাজনীতি বড়ো কঠিন, একবার এখানে গায়ে কালির ছিঠে লাগলে তাকে ধুয়ে ফেলা খুবই দূরহ ব্যাপার।

কিছুক্ষন পরেই পারুল বালার ভাই, ভাই বউ উপস্থিত হলো, ছেলে কে পুলিশে দেওয়া হয়েছে শুনেই পাড়া জানিয়ে তার মা প্রায় মড়াকান্না কাঁদতে লাগলো। ননদের কাছে ছেলে কে রাখা যে কতো টা ভুল হয়েছে সেই কথাই শুধু বলতে লাগলো আলোকের মা। কিছুক্ষন কান্না কাটির পরে তাদের কত্তা গিন্নি তে গোপন আলোচনা হলো। করুণা র সঙ্গে ছেলের বিয়ে দিয়ে দিলেই যে আশু সমস্যার সমাধান হতে পারে সেটা বুঝেই তারা আপাতত শ্যাম সুন্দরের কাছে বিয়ের প্রস্তাব রাখলেন।

শ্যাম সুন্দর চালাক মানুষ, এই প্রস্তাবে রাজি হওয়া তাঁর অনুকূলেই যাচ্ছিলো। তাতে আলোকের বিরুদ্ধে করা মামলা, মোকদ্দমার খরচও বাঁচে আবার করুনাও ঘাড় থেকে নামে। তাই তিনি সহজেই রাজি হয়ে গেলেন। তাঁর কথাই এ বাড়িতে শেষ কথা, তাই এ ব্যাপারে অন্য কারোর সঙ্গে আলোচনা করা তিনি প্রয়োজন বলেই মনে করলেন না! সোজা রান্না ঘরের উঠোনে দাঁড়িয়ে হাঁক পাড়লেন শ্যাম সুন্দর,

বৌদি, তোমার ভাই করুণা কে তার বাড়ির বউ করবে বলেছে। তাই আলোক কে আমি ছাড়ানোর ব্যবস্থা করছি।

কুমুদ তাড়াতাড়ি কপালে হাত ঠেকালেন, বামুন দিদির মুখে খুশির রেখা ফুটে উঠলো। পারুল বালা অতি কষ্টে তাঁর ঘরের চৌকাঠে হেলান দিয়ে গম্ভীর মুখে দাঁড়ালেন। সৌম্য সুরেশের কাছে গিয়েছিলো, মৃণালিনী দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলো, শ্বশুর মশাইয়ের কথা শুনেই চমকে উঠলো। শ্যাম সুন্দর কথাগুলো বলেই কারো মতামতের অপেক্ষা না করেই দোতলায় নিজের ঘরে উঠে গেলেন। তিনি উঠে যাবার পরে মৃণালিনী আস্তে আস্তে পারুল বালার ঘরের সামনে উপস্থিত হলো। তিনি ততোক্ষনে আবার গিয়ে শুয়ে পড়েছেন, খুব বেশিক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার মতো ক্ষমতা আজকাল তাঁর থাকেনা।

ভেতরে আসবো, বড়ো মা?

মৃদু গলায় অনুমতি চাইলো মৃণালিনী, পারুল বালা হাত বাড়ালেন,

এসো বাছা! তোমার কতাই ভাবছিলুম।

বড়ো মা, কাজ টা কি ঠিক হচ্ছে! এ বিয়ে করুণার সুখের হবে না কিছুতেই! নিজেদের স্বার্থ পূরণ হয়ে গেলেই ওঁরা করুণার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবেন, আলোকদা কিছুতেই ওকে নিজের স্ত্রী বলে মেনে নেবেন না।

খাটে বসে নিচু গলায় বললো মৃণালিনী, পারুল বালা মাথা নাড়লেন,

হ্যাঁ, বাছা! আমিও তাই ভেবেচি! আমার ভাই কে আমার তে আর কে বেশি চেনে কও তো! তোমার শ্বশুর তো তারে ঘাড় তে নামাতে পারলেই বাঁচে! কিন্তু আমি তারে মে র মতন দেকিচি, এই ভাবে তারে হাত পা বেঁধে জলে ফেলে দিতি পারবো নে।

আপনি না বলে দিন বড়ো মা, আপনি অমত করলে বাবা কিছুতেই এগোতে পারবেন না।

মৃণাল আরও কিছু বলতেই যাচ্ছিলো তার আগেই কুমুদ ঘরে ঢুকে এলেন। দুজনকে গম্ভীর মুখে খাটে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন। পারুল বালা তাঁকে হাত বাড়িয়ে খাটে বসতে বললেন, তিনি বসতেই মৃণালিনী তাঁকে সমস্ত কথা খুলে বললো।কুমুদ একটু সহজ সরল মানুষ, জীবনের জটিলতা তাঁকে কমই স্পর্শ করে, তিনি মানুষকে সহজেই বিশ্বাস করতে ভালোবাসেন। সব শুনে একটু চিন্তিত গলায় বললেন,

আলোক এরম করবে নে দিদি, সে তার মা বাবার কতা গেরাজ্জি করবে নে তাই আবার হয়! আর বামুন মেয়ের সঙ্গে এট্টু কতা কয়ে দেকবে নে একবার? ওদেরও তো মত অমত আচে! তারা যদি মে র বে দিতে চায়, আমরা কোন মুকে না করি বলো?

আমরাও তো ওর ভালোই চাই মা! আলোক দা যে নিতান্তই বাধ্য হয়েই এ বিয়ে মেনে নেবেন সেটা কি আপনি বুঝতে পারছেন না?

এবার একটু বিরক্ত গলায় বললো মৃণালিনী, কুমুদ কিছু উত্তর দেওয়ার আগেই বামুন দিদি উপস্থিত হলেন। তিনি সম্ভবত এতক্ষন দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে সবটাই শুনতে পেয়েছিলেন, এবার প্রায় কাঁদো কাঁদো গলায় পারুল বালার সামনে হাত জোড় করলেন,

কত্তা মা! আপনি আর অমত করবেন নি, সে পরে যা হয় হবে, একন তো তারে পার করি! নইলে যে গেরামে একঘরে হবো মা গো!

পারুল বালা বিরক্ত হলেন, মনে মনে গ্রাম্য রাজনীতিতে ভীত হলেও মুখে যথেষ্টই সাহস দেখিয়ে বললেন,

মাতার ওপর ঠাকুর পো তাকতে, কে তোমায় একঘরে করে দেকি! দেকো বাপু, মে তোমার! তাই তোমার কতাই শেষ কতা। তবে মে যেনো বছর ঘুরতেই বাপের বাড়ি ফিরে না আসে, সেটাও তো দেকতে হবে নাকি!

এতো কথার পরেও বামুন দিদি নিজের মতেই অটল রইলেন। পরে যা হয় হোক, কিন্তু এখন তিনি এখানেই করুণার বিয়ে দেবেন। ভাই ঝির জন্যে তিনি সকল কে নিয়ে গ্রামে একঘরে হতে পারবেন না। এই আলোচনায় ততোক্ষনে সৌম্যও সুরেশের বাড়ি থেকে ফিরে এসে যোগদান করেছিলো। তারও এই বিয়েতে একটুও ইচ্ছে ছিলো না, কিন্তু বামুন দিদি সবার কাছেই মিনতি করতে লাগলেন, কোনো রকমে তিনি করুণা কে বিয়ে দিয়ে বিদায় করতে চান। এর পরে আর কোনো উপায় থাকলো না, শ্যাম সুন্দর আলোকের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করলেন।

সেদিন রাত এভাবেই কাটলো, থমথমে পরিবেশের মধ্যে খাওয়া দাওয়া পর্ব মিটলো। পারুল বালা নিজের ঘরেই খেলেন, মৃণালিনী তাঁর খাবার বেশ কিছুদিন ধরেই রাতে ঘরেই পৌঁছে দিয়ে আসছিলো। তিনি ভাই বা ভাই বউ এর সঙ্গে কোনো কথা বললেন না, তারাও তাঁকে এড়িয়েই চলছিলো। একমাত্র কুমুদ তাঁর সাধ্যমতো আপ্যায়নের চেষ্টা করে যেতে লাগলেন। কুটুম মানুষ তাঁরা! তাই তাঁদের আপ্যায়নে যেনো কোনো ত্রুটি না হয় সেটা তিনি বারবার নিশ্চিন্ত করার চেষ্টা চালাতে লাগলেন।

রাতে শুতে এসে সৌম্য কে করুণার কাছ থেকে পাওয়া বড়ো মার গয়নার পুঁটলির কথা জানালো মৃণালিনী। সৌম্য চমকে উঠলো,

সে কি! এতো বড়ো সাহস! বড়ো মা কে জানিয়েছ? তিনি কি বললেন?

মৃণাল মাথা নাড়লো,

নাহ! বড়মা কে কিছু জানাই নি। তুমিও কিছু বলো না। উনি করুণা কে খুব ভালোবাসেন, এসব জানলে আরও দুঃখ পাবেন।

কিন্তু আমাদের তো সাবধান হতে হবে! ভবিষ্যতে এরকম আবার কিছু হতে পারে।

হ্যাঁ, সেই তো! ভুল আমাদেরও তো হয়েছে! আমরা সব দেখেও সাবধান হই নি তেমন। কিন্তু এখন এসব আর বলে নতুন বিতর্ক তৈরি করে লাভ নেই। এমনিতেও তো ওর বিয়েই হয়ে যাচ্ছে! সেটাও তো আটকাতে পারলাম না। জানো তো, এখন মেয়েটার জন্যে খারাপই লাগছে। ওর ভবিষ্যত জীবনটা সম্পূর্ন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই বিয়েতে ও কখনই ভালো থাকবে না!

সৌম্যর কথায় সায় দিয়ে বললো মৃণাল, সৌম্য সহমত হলো। খানিকটা হতাশ গলায় বললো,

হ্যাঁ, সত্যিই ওর বিয়েটা ভালো হবে না। কিন্তু আমরা আর কি করতে পারি! ওর পিসি যদি দিতে চায়, আমাদের তো কিছু করার নেই!

তাই বলে আমরা চুপ করে বসে থাকবো! একটা মেয়ের ইচ্ছাকৃতভাবে সর্বনাশ করা হচ্ছে দেখেও কিছু করতে পারবো না!

মৃনালিনী হতাশ হলো, সৌম্য ঘাড় নাড়লো,

কি করতে চাও বলো? তুমি তো বড়ো মার কাছেও গিয়েছিলে! তবে! এখানে তো বামুন দিদিই রাজি হচ্ছেন না!

উনি গ্রামের মানুষজন কে ভয় পাচ্ছেন, তাই যে করেই হোক করুণা কে বিয়ে দিয়ে দায় মুক্ত হতে চাইছেন। কিন্তু বাবা! বাবা যদি আপত্তি জানাতেন, করুণার পাশে দাঁড়ানোর কথা বলতেন একবার, তাহলে তো ওঁরা ভরসা পেতেন! বিয়ে দিয়ে দিলেই যে হয় না, সেটা যে বিয়ের মতো বিয়ে হওয়া চাই, সেটা ওনাদের বোঝাতে হবে না! কাল যদি করুণা ফিরে আসে, তাতে কি আমাদেরও কিছুটা দায় থেকে যায় না!!

অধৈর্য্য গলায় বললো মৃণালিনী, সৌম্য চুপ করে রইলো। বউয়ের কথার পেছনে যে যথেষ্টই যুক্তি আছে, সেটা বুঝতে পারলেও যেখানে বামুন দিদিই রাজি, সেখানে তার করণীয় কিছু আদৌ আছে কিনা মনে মনে ভেবেও কিছু স্থির করতে পারছিলো না।

পরের দিন সকালে আলোক কে বাড়িতে আনা হলো। পারুল বালার আপত্তি সত্ত্বেও কুমুদ তাকে ভেতর বাড়িতে নিয়ে এসে দালানে বসালেন। পারুল বালা ঘরের বাইরে বেরোলেন না, তিনি তাঁর কুলাঙ্গার ভাই পো র মুখদর্শন করবেন না বলে জানিয়ে দিলেন। বিয়ে সংক্রান্ত আলোচনা শুরু হলো। আলোকের বাবা, মা সম্ভবত তাকে আগেই শিখিয়ে পড়িয়ে রেখেছিলো, তাই এ বার শ্যাম সুন্দরের দেওয়া বিয়ের প্রস্তাবে আর সে অমত করলো না। এতো সহজেই তার রাজি হয়ে যাওয়াতে সবাই স্বস্তির শ্বাস ফেললো। দিনক্ষণের তোয়াক্কা না করেই শ্যাম সুন্দর আজই গ্রামের মন্দিরের পুরুত মশাই কে ডেকে মন্দিরেই বিয়ের জোগাড় করতে বললেন। সব কিছুই দ্রুত শেষ হলো, আলোচনা শেষ করে শ্যাম সুন্দর যখন বেরিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই করুণা সেখানে এসে দাঁড়ালো।

প্রায় দুদিন পরে সে ঘরের বাইরে পা দিলো, বিধ্বস্ত চেহারায় সেখানে তাকে দেখেই সবাই কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকালো। বামুন দিদি ভাই ঝি কে দেখে মুখে হাসি নিয়ে এগিয়ে এলেন,

এসো মা! এসো! আর আমাদের কোনো চিন্তে রইলো না! ওনারা দয়া করে ওনাদের ঘরে তোমায় ঠাঁই দিতে রাজি হয়েছেন! একি কম কতা! কোতা আমরা, আর কোতা তেনারা! ওনাদের পেন্নাম করো মা গো,

হবু শ্বশুর শাশুড়ি কে দেখিয়ে করুণার দিকে ইশারা করলেন তিনি, করুণা থমথমে মুখে তাঁর দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তাকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এবার কুমুদ এগিয়ে এলেন, আস্তে করে তাকে ঠেলে আলোকের বাবা, মা কে প্রণাম করার জন্যে ইঙ্গিত করলেন। হটাৎ করেই করুণা মৃণালিনীর দিকে তাকালো,

বউ দিদি! জানি অনেক অপরাধ করিচি! তাই বলে এরকম হাত পা বেঁধে জলে ফেলে দিও নি! তোমাদের বাড়িতে না হয় একধারে পড়ে থাকবো সারা জেবন, তবু এরে বে করবো নি! এই ছোটনোক রে বে করার তে আমার মরণও ভালো গো!

মৃণাল সৌম্যর দিকে তাকালো, স্বামীর চোখে প্রচ্ছন্ন সমর্থনের দৃষ্টি দেখেই আর এক মুহূর্তও দেরি করলো না সে, করুণা কে জড়িয়ে ধরে উচ্ছসিত গলায় বললো,

তুই বিয়ে না করতে চাইলে, কে তোকে জোর করে দেয় দেখি! যা, ভেতরে যা, এরকম নিচু মানসিকতার ছেলে কে তোকে বিয়ে করতে হবে না।

আলোক চমকে উঠলো, করুণা যে তাকে কখনো প্রত্যাখ্যান করতে পারে এ সম্ভাবনা তার মাথাতেই আসেনি। তার বাবা মা ভীত দৃষ্টিতে শ্যাম সুন্দরের মুখের দিকে তাকালো, বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় ছেলের বিরুদ্ধে পাছে তিনি আবার মামলা শুরু করেন, সেই ভয়ে তারা ভীত হয়ে পড়লো। সমস্ত কথোপকথন শুনে এতক্ষনে পারুল বালা তাঁর ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। ভাইপোর দিকে ফিরেও তাকালেন না, সরাসরি ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বললেন,

যাও! তোমার গুণধর ছেলে কে নে বিদেয় হও! আর কোনোদিনও আমার দরজায় পা দিও নে। তোমার দিদি তোমার কাচে মরেচে!

শ্যাম সুন্দর বিরক্ত মুখে ওপরে উঠে গেলেন, তিনি আলোক কে ছাড়িয়ে আনার জন্যে এখন মনে মনে আফসোস করতে লাগলেন। একটু পরেই আলোকের বাবা, মা তাদের ছেলে কে নিয়ে অনেকটা নিশ্চিন্ত হয়েই বিদায় নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করলো। আলোকের বিরুদ্ধে আর কিছু করা হবে না, এটা বুঝে তারা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। কুমুদ একটু স্নেহপরায়ন, তাদের চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে দেখেই, আস্তে আস্তে বড়ো জায়ের ঘরের সামনে দাঁড়ালেন। ছোটো জা কে ঘরের দরজায় দেখেই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন পারুল বালা,

দিদি! কাল তে বোধ করি ছেলেটার পেটে কিচু পড়ে নে কো! একেবারে খালি মুকে যাবে!

পারুল বালা মুখ ঘুরিয়ে নিলেন, কুমুদ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে বড়ো জায়ের কাছ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে আস্তে আস্তে রান্না ঘরের দিকে রওনা হলেন। তিনি যখন সেখান থেকে কাঁসার রেকাবি তে মিষ্টি আর জল নিয়ে আলোকের কাছে যাচ্ছিলেন তখন তাঁর মৃণালিনীর সঙ্গে দেখা হলো।

এগুলো কার জন্যে নিয়ে যাচ্ছেন মা?

খানিকটা বিস্মিত গলায় প্রশ্ন করলো মৃণালিনী, কুমুদ একটু অস্বস্তিতে পড়লেন, নিচু গলায় বললেন,

ওই! ছেলেটা সোজা জেল তে এলো! কে জানে পেটে কিচু পড়েচে কি না! তাই আর কি!

দিন আমাকে দিন! আমি দিয়ে আসছি!

বউমার হাতে রেকাবি তুলে দিয়ে চলে গেলেন কুমুদ, মৃণাল আস্তে আস্তে দালানে উঠে এলো।

জানি মিষ্টি খাওয়ার মতো মনের অবস্থা আপনার এখন নেই, আজকের করুণার করা অপমান হয়ত আপনি সারা জীবনেও ভুলতে পারবেন না, তবু মা নিজে হাতে পাঠিয়েছেন, আশাকরি ফেরাবেন না,

রেকাবি আর জলের গেলাস আলোকের সামনে রাখা জলচৌকির ওপরে নামিয়ে রেখে খানিকটা শ্লেষের গলায়, মৃদু হেসে বললো মৃণালিনী।

মুখ তুলেই আবার মুখ নিচু করে নিলো আলোক, মৃণাল এর আনা মিষ্টি সে ছুঁয়েই দেখলো না। তার মুখ থমথমে হয়ে রইলো, করুণার প্রত্যাখ্যান তাকে এতটাই অপমানিত করেছিলো যে মামলা তুলে নেওয়ার খুশিও তার মুখে এক ফোঁটা হাসি ফোটাতে পারলো না। বাকি যেটুকু সময় সে চৌধুরী বাড়িতে থাকলো, একবারের জন্যেও মুখ তুলে কারো দিকে তাকালো না।
ক্রমশ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here