বেমানান! পর্ব-৪

0
1959

বেমানান!
পর্ব ৪) একবার বল নেই তোর কেউ নেই!
©মৌপর্ণা

মাস ছয়েক পেরিয়ে গিয়েছে এর মধ্যে,,,,শেষ কয়েক মাসে ঈশানি ও স্নিগ্ধ বেশ অনেকটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে দুজনে, দুজনের ওপর, এখন প্রায় রোজ রাতেই মিনিট পাঁচেক হলেও, কথা হয় ওদের হোয়াটস্যাপে…..

যেদিন ঈশানি ও স্নিগ্ধ – সান্যাল বাবুকে ব্লাড ডোনেট করতে গিয়েছিলো, সেদিন রাতেই প্রথম স্নিগ্ধ পিং করে ঈশানিকে হোয়াটস্যাপে,,,,

তার আগে নম্বর থাকলেও ওদের কথা হয়েছিল শুধু ফোনে বা সামনাসামনি,,,তাও বেশিরভাগ সময়ই ব্যাংকের কাজের কথা বা টুকটাক দরকারি কথা,,,,যেমন শুরুর দিকে স্নিগ্ধ বেশ কয়েকবারই ফোন করতো ঈশানিকে বাজার হাঠ, দোকান পত্র, ডাক্তার খানা, মেডিক্যাল স্টোর্স এই সবের খোঁজ খবর নিতে……
তারপরে মাস চারেক আগে ইশানিই তো স্নিগ্ধর বাড়িতে চম্পার মা কে ঠিক করে দেয় স্নিগ্ধর রান্নাবান্না করে দেওয়ার জন্যে…….স্নিগ্ধর বাইরের খাবারে তখন বেশ অসুবিধে হচ্ছিলো কিনা?
কিন্তু প্রয়োজনের বাইরে তখনও দুজনের সেরকম কথাবার্তা শুরু হয়নি……

কিন্তু সেদিন রাতে স্নিগ্ধই কথাটা শুরু করেছিল কোনো প্রয়োজন ছাড়াই –

“তোকে আমি যতই দেখি, ততই অবাক হয় জানিস ঈশানি,,,ওরা তোকে এতো কষ্ট দেয়,,,,তারপরও আজ তুই যেটা করলি, সেটা বোধহয় খুব কম মানুষিই করতে পারে!”

সেদিন ঈশানি ভীষণ অবাক হয়েছিল এটা ভেবে স্নিগ্ধ এসব খোঁজ কবে থেকে রাখে,,,,,দুবার টাইপ করে, দুবার মুছে,,,তৃতীয়বারে একটা মেসেজ টাইপ করে ঈশানি….
“তুমি কি আজকের ব্লাড ডোনেট করার কথাটা বলছো?….আর ওরা তো সেরম কিছু করেনা,,,মানে আমার সেরম কষ্ট হয়না,,,,কিন্তু এসব তুমি জানলে কবে থেকে? মানে তুমিতো ওপরের ঘরে বসো ,,,নীচের আলোচনার কথা তো তোমার জানার কথা নয়!”

“তুই সত্যি একটা পাগল! দিন রাত্রি ওরা তোকে টন্ট করে,,,,,সবাই সারাদিন টন্ট করছে, আমি সেই একই জায়গাতে থেকে জানবোনা? আমারও তো বছর খানেক হলো এখানে,,,ইন ফ্যাক্ট বছর খানেকের চেয়েও বেশি,,,,অনেকদিন থেকে জানি এটা,,,,কিন্তু কখনো তোকে কিছু বলিনি,,,,,,তুই কিছু প্রোটেস্ট করিসনা কেন ঈশানি?”

“কি প্রোটেস্ট করবো? ওরা কেন আমাকে কালো বলে এটার জন্যে? নাকি কেন বারবার খোঁচা দেয় আমার সেরকম বন্ধু নেই বলে, বা কোনো ছেলে আমাকে পছন্দ করছেনা এটা বলে,,,স্যার আপনি এসব ছাড়ুন,,,,আর ফ্যাক্ট ইস ওরা যা বলে সবইতো সত্যি বলে!”

“ছেলের বাড়ির কথাটা তুই ওদের বলেছিলিস?”

“না! সবাইকে না, শুধু মাধবী দি কে….”

“কেন? পাত্র পক্ষ তোকে দেখতে এসে তোর বোন কৌশানিকে পছন্দ করেছে এই কথাটা মাধবীদি কে বলার খুব প্রয়োজন ছিল? খুব প্রয়োজন ছিল কৌশানি খুব সুন্দর দেখতে এসব বলার? ঈশানি মাঝেমাঝে আমার মনে হয় তুই ভীষণ ম্যাচিওর্ড আর মাঝে মাঝে মনে হয় তুই ভীষণ বোকা?”

“বললে কি হয়েছে? কথাগুলো তো সত্যি! আর এই সব কথা আমি ছোট থেকেই শুনতে অভ্যস্ত ”

“কিন্তু এখন আর তুই ছোট নোশ ঈশানি……তাই
বলবিনা! সব কথা সবাই কে বলার খুব প্রয়োজন আছে কি? শেষ বছরে নেই নেই করে দশটা মেয়ের সাথে বিয়ের কথাবার্তা হয়েছে আমার, এই কথাটা কেউ জানে ওরা? ঈশানি আজ আমি তোকে এটা বললাম কারণ আমি ভরসা করি এখন তোকে একটু একটু! দেখ পাগল,,,দুমদাম সবাইকে সব কিছু বলবিনা,,,,এতে তুই নিজেই কষ্ট পাবি বুঝলি? মনে রাখবি ওরা শুধুই তোর দুর্বল জায়গা গুলো খুঁজে আঘাত করতে চায়, ব্যাস আর কিচ্ছুনা! সিম্পলি ওরা তোকে হিংসে করে!”

“ওকে! আর বলবোনা!”

“গুড গার্ল!”

সেদিন ঈশানির খুব জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছিলো স্নিগ্ধকে যে সত্যি স্নিগ্ধর বাড়ি থেকে মেয়ে দেখছে,,,স্নিগ্ধর গার্ল ফ্রেন্ড নেই? সত্যি নেই?
হমম থাকলে নিশ্চই বাড়ি থেকে মেয়ে দেখতোনা! আর দশটা মেয়ে?
একবার পাত্র পক্ষ দেখতে এসেই ঈশানির যা অভিজ্ঞতা হয়েছে তাতে বছর খানেক আর কোনো বিয়ের কথাবার্তা হোক ঈশানি চায়না! আর স্নিগ্ধর জন্যে ওরা দশটা মেয়ে দেখছে! নিশ্চই স্নিগ্ধই রিজেক্ট করেছে সবাইকে! স্নিগ্ধকে কেউ অপছন্দ করতে পারে নাকি?

সেদিন রাতের পর থেকে টুকটাক কথা বার্তা হতে থাকে ওদের! বেশিরভাগ সময় স্নিগ্ধই কথা শুরু করে যেমন – “কিরে ডিনার হলো? কালকে বাজারে যাবি,,,তাহলে আমিও যাবো! বাড়ি কবে যাবি,,,,পুজোর কি প্ল্যান! আবার কখনো বাড়ির লোকেদের নিয়ে কথাবার্তা,,কোনো কলেজের কোনো আলোচনা,,,,আবার কখনো ব্যাংকের কাজের কথা…..

এতো কথা হওয়া সত্ত্বেও আজও অবধি একটা ছোট্ট প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে উঠতে পারিনি ঈশানি – স্নিগ্ধ কে যে সেই দশজনের মধ্যে স্নিগ্ধর কারুর সাথে বিয়ের কথাবার্তা এগোলে কিনা?

কৌশানি তো কতবার শিখিয়েছে ঈশানি কে “দিভাই, এমনি ক্যাসুয়াল জিজ্ঞেশ করবি! বা একটু ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করবি বা বলবি ****কি! কবে বিয়ে করছো!****” এরকম ভাবে……

কিন্তু ঈশানি তবুও সাহস জুগিয়ে উঠতে পারেনি বরং বারবার কৌশানি কে বুঝিয়েছে যে স্নিগ্ধ শুধুই ঈশানির জীবনে একটা ভালোলাগা মাত্র, এমন একটা ভালোলাগা যেটা কখনো পাওয়া সম্ভব নয়!

সত্যি তো সব সম্পর্ক কি পরিণতি পায় বা বিয়ে থা করার মতন হয়, কিছু সম্পর্কের কোনো ঠিকানা নেই,,,কোনো উদ্দেশ্য নেই,, কোনো চাওয়া পাওয়ার হিসেবেও নেই,, শুধু মানুষটার সাথে সময় কাটাতে ভালো লাগে এটা জেনেও যে এটা চিরস্থায়ী নয়!

*************************************************

আরও হপ্তা খানিক পরের কথা!
সোমবারের সকাল,,,,,ঈশানি ব্যস্ত হলেও বেশ আনমনা তখন!
গতকাল সারাটাদিনে একবারও ফোন আসেনি স্নিগ্ধর, গত পরশুদিন রাতে চ্যাট করেনি তবে ফোন করেছিল স্নিগ্ধ,,,,ফোন করে বলেছিলো যে সে কলকাতায় যাবে পরের দিন মানে রোববার, ভোর রাতে ট্রেন, ব্যাস আর তারপর দুটো একটা কথা বলেই ফোনটা ছেড়ে দেয় স্নিগ্ধ!

ব্যাস তারপর থেকে আর কোনো কথা হয়নি ওদের,,বেলা এগারোটা, এখনো এসে পৌঁছয়নি স্নিগ্ধ ব্যাংকে,,,,,ইদানিং তো প্রতিদিন ঈশানিকে একবার গুড মর্নিং বলে তারপরেই ওপরে যায়! আর এলেতো ঈশানি দেখতেই পেতো, ঈশানি তো সদর দরজার পাশের কাউন্টারেই বসে, তাই ঈশানির চোখ এড়িয়ে কি ভাবে ঢুকলো স্নিগ্ধ?

জুলাই মাসের শুরুর দিক,,,কাউন্টারে লম্বা লাইন,,,,,ঈশানি তখন ব্যস্ত ট্রানসাকশান আপডেট করতে,,হঠাৎ দেখলো স্নিগ্ধ হনহন করে ঢুকে সোজা সিঁড়ি দিয়ে উঠে চলে গেলো,,ঈশানি একটু অবাক হয়ে স্নিগ্ধর দিকে চেয়ে রইলো!

“ম্যাডাম! নিন তাড়াতাড়ি করুন! এক ঘন্টা হলো দাঁড়িয়ে লাইনে…..!”

ঈশানির আর সময় হলোনা সেদিন স্নিগ্ধর সাথে কথা বলার,,,,বেলা তিনটে প্রায়, তখন হারাধন কাকা হঠাৎই নীচে এসে বললো – “কাল স্নিগ্ধ স্যার, বিরিয়ানি খাওয়াবে সবাইকে! তাই বাড়ি থেকে দুপুরের খাবার না আনতে…….”

” তা! হারাধন দা! তোমার স্নিগ্ধ স্যারের বিয়ে থা ঠিক হলো নাকি? হঠাৎ খাওয়া দাওয়ার আয়োজন হলো যে!”
পান চিবোতে চিবোতে জিজ্ঞেশ করলো সুব্রত বাবু!

“তা ঠিক জানিনা সুব্রত স্যার!”

ঈশানির কিরকম যেন মনে হলো কথাটা ঈশানিকে শোনানোর জন্যেই সুব্রত বাবু এটা জিজ্ঞেশ করলেন হারাধন দা কে !
ইদানিং স্নিগ্ধর এই প্রতিদিন ঈশানিকে গুড মর্নিং বলে মিনিট দুয়েক গল্প করাটা ওদের বেশ আলোচনার বিষয় বস্তু হয়ে উঠেছে!

ঈশানি একদিন বলেওছিলো স্নিগ্ধকে এই ব্যাপার টা,,,,কিন্তু লাভ কিছুই হয়নি,,,,উল্টে স্নিগ্ধ রাগ দেখিয়ে অফলাইন হয়ে যায় সেদিন!
তারপরের দিন যদিও নিজেই রাতে ঈশানিকে পিং করে ঘন্টাখানেক জ্ঞান দেয় স্নিগ্ধ ! স্নিগ্ধর চিন্তা ভাবনা একদিক থেকে ঠিক – লোকে কিছু বলবে বলে মানুষ নিজের পছন্দের মানুষ, বন্ধুবান্ধব দেড় সাথে কথা বলতে পারবেনা,,,,এ কেমন কথা! তারাতো কোনো অন্যায় করছেনা……

*************************************************

রাত এগারোটা! খাওয়া দাওয়ার শেষে কিছুতেই ঘুম আসছিলোনা ঈশানির! এপাশ ওপাশ করে যাচ্ছিলো শেষ চল্লিশ মিনিট থেকে,,,,ইদানিং চম্পার মা চলে গেলেই, তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া করে বিছানা গুছিয়ে বাড়ির সাথে এক রাউন্ড কথা বলেই ঈশানি অপেক্ষা করে স্নিগ্ধর পিংয়ের…..আর প্রতিদিন পিং আসেও নিয়মিত,,,তবে আজ কি হলো? এদিকে আজ সকালেও একবারও ঘুরে তাকালোনা স্নিগ্ধ! কি হলো! এর আগেও তো বাড়ি গিয়েছে, কলকাতার বাড়ি থেকেও পিং করেছে,,,,,এবার কি হলো!

এমনি সরাসরি পিং করতে না পারলে, কোনো কাজের বাহানায়, বা ফাইল লোন, এই সমস্ত কিছু কথা দিয়ে কথা শুরু করে ঈশানি,,,,আজও তাই করলো – “আজকের লোন application গুলো দেখেছিলে?”

ঈশানি দেখলো মেসেজে একটা টিক্ দেখালো হোয়াটস্যাপ! মানে স্নিগ্ধর নেট বন্ধ! কখনো তো এটা হয়নি এর আগে……
তবে আজ কেন এরকম হলো! একটা ফোন করবো? তবে এখন রাত এগোরাটা তে! না না থাক……..
আজ রাতে আবার ঘুম আসছিলোনা ঈশানির! কানে হেডফোন গুঁজে ঘুমোনোর চেষ্টা করলো ঈশানি….হঠাৎ গান টা একটু বন্ধ হয়ে মনে হলো কোনো পিঙের আওয়াজ এলো…হরমোর করে ফোনটা হাতে তুলে দেখলো পিংটা কৌশানির!
“কি রে দিভাই? গল্প কিছু এগোলো!”

মনে মনে ভীষণ রাগ হলো কৌশানির ওপর!
ওকে হাজার বার বলেছে তো ঈশানি ওদের মধ্যে ওরম কোনো চাওয়া পাওয়ার হিসেব নেই, শুধু একটু ভালোলাগা, তাও কেন বারেবারে জিজ্ঞেস করে এই এক কথা, নাকি আজকাল কৌশানি ও বাকিদের মতন শুধু ঈশানিকে কষ্ট দেবে বলে…..না না কৌশানি এটা করতেই পারেনা! ওর “দিভাই দিভাই” ডাকটা কি সরল!

কৌশানির মেসেজের কোনো রিপ্লাই না করে ফোনের ইন্টারনেট কনেকশনটা বন্ধ করে দিলো ঈশানি! আর গান শুনতেও ইচ্ছে করলোনা….চুপচাপ চোখটা বন্ধ করে শুয়ে রইলো,,,,তারপর মনে মনে এক থেকে একশো গুনতে শুরু করলো,,,এই অভ্যেসটা দত্ত বাবুর শেখানো…….

রাতে হঠাৎ ভীষণ জোর বৃষ্টি হওয়া তে ঘুমটা ভেঙে গেলো ঈশানির,,,,,বেশ শীত শীত করছিলো,,,বিছানা ছেড়ে উঠে জানালার কাছে যেতেই বুঝলো মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে, খানিকটা জলও জমে গিয়েছে গলির মুখটাতে…ঈশানি জানালা গুলো বন্ধ করে একটা চাদর ঢাকা নিয়েই শুতে যাবে ভাবছিলো কি হঠাৎ ইচ্ছে করলো একবার হোয়াটস্যাপ টা চেক করে নিতে……যদি স্নিগ্ধ অনলাইন থাকে!

রাত তখন দেড়টা,,,,,,,বিছানায় বসে
ফোনটা হাতে নিয়েই অনলাইন হতেই দেখলো স্নিগ্ধর কে করা মেসেজ টা নীল রঙে ডাবল টিকড,,,,মানে মেসেজ টা সীন হয়েছে তবু স্নিগ্ধ কোনো উত্তর দেয়নি কিন্তু কেন? ঈশানির চোখ বেয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে এলো ঠোঁঠে,,,,দুটো হাত দিয়ে ভালো করে চোখের জলটা মুছে,,,,ফোনের নেটটা আবারো বন্ধ করে ও ফোনটা লক করে শুয়ে পড়লো বিছানায়!

আজ কেন চোখে জল এলো ঈশানির! না ওদের সম্পর্কের তো কোনো চাওয়া পাওয়ার হিসেব নেই! তবে কি ভেবে আজকে এতো কষ্ট হচ্ছিলো ঈশানির!
চোখ দুটো বুজেই ভাবতে শুরু করলো হয়তো স্নিগ্ধর ফাইনালই বিয়েটা ঠিক হয়ে গিয়েছে, তাইতো এতো রাতে অনলাইন,,,,কথা বলছে হয়তো অন্য কোনো মেয়ের সাথে!
যাক বাঁচা যায়,,,,,স্নিগ্ধর বিয়েটা ঠিক হলে এই অর্ধেক অর্ধেক আশাটা পুরো নিভে যায়,,,,শুধু একবার বলে দিক ওর জীবনে অন্য কেউ আছে, ব্যাস! সব ভুলে গিয়ে শুধু জাস্ট ভালোলাগাটা কে নিয়ে থেকে যাবো,, আর সত্যি তো স্নিগ্ধর পাশে কি আমায় মানাবে কখনো, হ্যাঁ যদি আমি কৌশানির মতো হতাম তাহলে হয়তো স্নিগ্ধ কবেই বলে দিতো!” কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ঈশানির চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়লো বালিশে,,,,তারপর কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো ঈশানি নিজেও বুঝলোনা!

*************************************************

পরের দিন লাঞ্চ টাইমের কথা,,,স্নিগ্ধর কথা মতন আনা হয়েছে লাঞ্চ প্যাকেট,,,খানিকক্ষণ হলো হোটেলের ছেলেটা সব প্যাকেট ডেলিভারি দিয়ে গিয়েছে, হারাধন দার হাতে,,,,,হারাধন দাও সব প্যাকেটস ভেতরের দিকের ঘরে গুছিয়ে রেখেছে টেবিল এর ওপরে………

সবাই এক জায়গা হয়ে খাওয়া শুরুও করে দিয়েছে কিছুক্ষণ আগেই,,,ঈশানি হাতের কাজটা শেষ করে হাতটা ধুয়ে এগিয়ে গেলো ভেতর ঘরের দিকে…..

ঈশানি যখন ঘরে ঢুকলো তখন দেখলো এক কোণে একটা লাঞ্চ প্যাকেট পরে,,,,এরই মধ্যে মাধবী দি ডাকলো ঈশানি কে “কিরে ? আয় ঈশানি! ওখানে দাঁড়িয়ে কেন?

ঈশানি খাবারের প্যাকেটটা নিয়ে বসতেই যাচ্ছিলো তখনি সুদীপ্ত দার হঠাৎ আগমন….আজ তো ছুটি ছিল….তবে এলো কেন?

“তোরা আমাকে ছাড়াই একা একা খাওয়া দাওয়া করছিস? তাইতো?”

সুদীপ্ত বাবুর কথাটা পুরো শেষ হতে না হতেই ঈশানি নিজের প্যাকেট টা এগিয়ে দিয়ে বললো – “এই নাও সুদীপ্ত দা! আমার এমনিও একদম খেতে ইচ্ছে করছেনা,,,,শরীর টা বিশেষ ভালো নেই!”

“শরীর ভালো নেই না মন ভালো নেই ঈশানি!” সান্যাল বাবু বেশ ভ্রু নাচিয়ে একটা অদ্ভুত হাসি হেসে কথাটা ছুঁড়ে দিলেন ঈশানির দিকে!

“আপনি ঠিকই বলেছেন সান্যাল বাবু,,,মনটাই ঠিক ভালো নেই ঈশানির,,,শরীর ওর দিব্বি ফিট! ফিট রাখতে হয় বৈকি! নাহলে আবার রেগুলার ব্লাড ডোনার হওয়া যায়না তো! আপনার সময় ওই তো আপনাকে ব্লাড ডোনেট করে কেমন বাঁচালো বলুন,,,এরম ফিট ওকে থাকতে হয়তো অনেক জীবন বাঁচাতে…..কি তাইনা ঈশানি!”

স্নিগ্ধ কখন যে ঘরে এলো,,,আবার ঈশানির হয়ে এরকম কোথাও শুনিয়ে দিলো,,,,সব মিলিয়ে ঈশানির সবটা গুলিয়ে গেলো,,,,কিছু বললোনা ঈশানি,,শুধু চেয়ে রইলো স্নিগ্ধর দিকে!

স্নিগ্ধর একটা কটাক্ষের হাসি হাসলো সান্যাল বাবুর দিকে চেয়ে! তারপর ঈশানির দিকে চেয়ে বললো – “ওপরে আয় একটু দরকার আছে…..”

“হমমম…….”

স্নিগ্ধ ও ঈশানি দুজনেই সিঁড়ি বয়ে উঠে গিয়ে বসলো স্নিগ্ধর কেবিনে……….

“হমম স্যার, বলুন!”

“হমম, কোন লোন application এর কথা বলছিলিস?”

“কোন application স্যার?”

“সেটা আমি কি করে জানবো?” খানিক চেঁচিয়ে ও বিরক্ত গলায় বললো স্নিগ্ধ! এর আগে এরকম সুরে তো কোনোদিন কথা বলেনি স্নিগ্ধ!
তবে আজ কি হলো!

ঈশানির চোখদুটো ছলছল করে উঠলো!

এবারে একটু শান্ত গলায় স্নিগ্ধ বললো –
“সরি!
কাল রাতে তুই কিছু একটা পিং করেছিলিস লোন application? কোন application? ‘

“ওঃ! ওই তো স্প্লেন্ডরার ওই ফ্ল্যাটের যেটা বলছিলো…….ঈশানি কোনোরকমে একটা পুরোনো কেস মনে করে ভাঙা ভাঙা সুরে উত্তর দিলো…..!”

“সে তো দুসপ্তাহে আগেই রিজেক্ট করা হয়েছিল….”

“হমম আমার মনে ছিলোনা,,ওটাই বলছিলাম!”

“বুঝলাম!! তোর আর কিছু বলার ছিলোনা তাইতো?”

ঈশানির হৃদ্স্পন্দনটা বেড়ে গেলো,,,কোন কথা বলার কথা বলছে স্নিগ্ধ! ঈশানি একভাবে চেয়ে রইলো স্নিগ্ধর দিকে আর তারপর একটা ঢোক গিলে বললো –
“নাহ! আর কি বলার থাকবে?”

“ভালো! তোর যখন কিছু বলার নেই,,,তাহলে আমিই বলে দি কেমন!”

ঈশানির ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো স্নিগ্ধর দিকে,,,,এক মুহূর্তের জন্যে মনে হলো ঈশানির নিঃশ্বাসের আওয়াজটা পাখার ব্লেডের চেয়ে বেশি আওয়াজ করছে!

“হ্যাঁ বলো……” বলেই ঈশানি ভাবতে শুরু করলো এখন স্নিগ্ধ কি বলবে? প্রপোজ করলেই বা কি করবে? না না …..প্রপোজ কেন করবে?

“গতপরশু আমার জন্মদিন ছিল! আমি ভেবেছিলাম তুই একটা ফোন করবি,,,,,বা কমপক্ষে একটা বার্থডে উইশ!”

“ওওওহহ! স্যার! আমি সত্যি ভুলে গিয়েছিলাম!”

“হমম ঠিক আছে! আমি একটু আশা করে ফেলেছিলাম জানিস,,,, ভেবেছিলাম তুই নিশ্চই একটা মেসেজ করবি! কাল তারপর পিং করলি আমি ভাবলাম হয়তো বিলেটেড বার্থডে উইশ….তারপর দেখলাম লোন application
….ঠিক আছে! নো প্রব্লেম!”

ঈশানির নিশ্বাস নেওয়ার গতিটা আসতে আসতে কমে এলো!

“সরি! স্যার!”

“ডোন্ট বি সরি ফর দিস…..নিন এবারে খেয়ে নিন! দয়া দেখিয়ে তো মুখের খাবার টাও দিয়ে দিলেন…..!”

“একই এক্সট্রা কোথা থেকে এলো?”

“নিয়ে ছিলাম একটা! নিন নিন শুরু করুন,,আর পনেরো মিনিট আছে লাঞ্চ ব্রেক,,,,,,সবার জন্যেই দয়া একদম উতলে উতলে পরে এক্সসেপ্ট মি…..”

“হমম?”

“কিছুনা! শুরু কর এবারে!”

“তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?”

“বলুন madam !”

“তোমার কেউ আছে? মানে স্পেশাল কেউ? মানে সেদিন বলছিলে না দশটা মেয়ে,,,,বিয়ের কথাবার্তা ? মানে……?”

“ধুর! সে পর্ব কবেই শেষ! আমি আর পারছিনা মেয়ে দেখতে! উউফ কি বোরিং! আর তোর কি মনে হয়,,,,,গার্ল ফ্রেন্ড থাকলে আমি তোর মেসেজের অপেক্ষা কেন করবো?”

ঈশানির কান দুটো লাল হয়ে গেলো! হৃদস্পন্দন আবার বেড়ে গেলো! চুপচাপ মাথা ঝুঁকিয়ে খেতে শুরু করলো! স্নিগ্ধও খানিক চুপচাপ বসে খেতে থাকলো! ঈশানির মনে হলো স্নিগ্ধ যেন বারবার ঈশানি কে দেখছে! কিন্তু এই কথাটা মাথা মেনে নিলেও মন বিশ্বাস করছিলো যে স্নিগ্ধ ব্যানার্জী ঈশানির দিকে ফিরে তাকাচ্ছে বারেবারে!

“কি হলো চুপ হয়ে গেলি যে? কিছু ওকবার্ড বললাম কি? মানে আমি বলছিলাম জেনেরালি এসব প্রেম – ট্রেম করলে মানুষ শুধু একজনের অপেক্ষায় করে,,তখন কি বন্ধু – বান্ধব বা অন্য কাছের মানুষের মেসেজের অপেক্ষা করে! দেখ ঈশানি আমার ফ্রেন্ড সার্কেল খুব ছোট! সবার সাথে ওয়েভ লেংথ ম্যাচ করেনা,,,,,তোর সাথে করে! সো, সেই ভালো বন্ধুর মধ্যে কেউ এরম ফর্মালিটি করলে ভীষণ রাগ হয়!”

“আমি ফর্মালিটি করেছি বুঝি?”

“উউফ! কি নেকামি! কাল লোন Application
এর গল্পটা ফর্মালিটি নয় বলছিস?”

ঈশানির ঠোঁটে হালকা হাসির রেখা ফুটে উঠলো! কোনো প্রতিবাদ করলোনা ঈশানি!

খাবার শেষে ঈশানি প্যাকেটটা ফেলতে গিয়ে দেখলো একটা মেডিসিনের খালি শিশি স্নিগ্ধর ঘরের ডাস্টবিনে!

“এটা কিসের ওষুধ?”

“কোনটা বলতো? ওই ডাস্টবিনে যেটা পরে!”

“হমমম,, কিসের গো এটা?”

“থাইরয়েড এর……”

“কত TSH?”

“সিক্স পয়েন্ট সামথিং! সিক্স পয়েন্ট ওয়ান বোধহয়!”

“বর্ডারলাইন তো! হাঁটতে পারতো সকালে! তাহলে এই সব ওষুধ লাগেনা! আমিতো রোজ যাই মর্নিং ওয়াক!”

“কি বলছিস? বলিসনি তো আগে?
আরে মা বাবা কতবার বলেছে ওষুধ ছেড়ে হাঁটাহাঁটি টা শুরু করতে! চল ডান!
চল কাল থেকে আমিও যাবো তোর সাথে!
বল কটার সময় বেরোস?”

“Sharp at সাড়ে পাঁচ!”

“কটা??????”

স্নিগ্ধর কটা জিজ্ঞেস করার সুর ও ভঙ্গিটা শুনে দুজনেই হাসিতে ফেটে পড়লো ওরা!

বিকেলে যখন ব্যাংক থেকে বেরোলো ঈশানি তখন ফর্মালিটি ছাড়া একটা পিং করে দিলো স্নিগ্ধকে –
“বেরোলাম ওকে?”

“হমমম চল টাটা! রাতে ফোন করছি আবার,,,,,,টিল দেন সাবধানে যাবেন এন্ড টেক কেয়ার!”
মুহূর্তে মেসেজটা দেখেই চোখদুটো জ্বলজ্বল করে উঠলো ঈশানির,,,,,,মুহূর্তে মধ্যেই ফোন করলো কৌশানি কে – “বুনু!”

“হ্যালো দিভাই! কি??? খবর আছে নতুন?”

“হমমম………………
……………………….
……………………….”

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here