ভুলবশত প্রেম পর্ব-১৯

0
1831

#ভুলবশত_প্রেম
#লেখনীতে:সারা মেহেক

১৯

হঠাৎ ইমাদ ভাইয়ার কণ্ঠস্বর শুনে আমি উনার দিকে তাকালাম৷ ইমাদ ভাইয়া কিঞ্চিৎ ভ্রু উঁচিয়ে আদ্রিশকে জিজ্ঞেস করলেন,
” আমার বোনটার সাথে এতো কিসের ফিসফিস করিস?”

আদ্রিশ ইকরাকে জেবা ভাবীর কাছে দিতে দিতে বললেন,
” তা শুনে তোর কি কাজ? তোর বোন আমার বেয়াইন হয়৷ আমার যা ইচ্ছে তাই বলেছি। তোকে এসবের খোঁজ নিতে হবে না। ”
এই বলে আদ্রিশ উঠে গিয়ে ঘরের কোনা হতে গিটার এনে পুনরায় নিজের জায়গায় বসে পড়লেন। ইমাদ ভাইয়ার নিকট হতে প্রত্যুত্তরের অপেক্ষায় না থেকে উনি কামাল আংকেল অর্থাৎ ইমাদ ভাইয়ার আব্বুর উদ্দেশ্যে বললেন,
” আংকেল, শুরু করুন।”

কামাল আংকেল আদ্রিশেরর কথার অর্থ বুঝতে না পেরে বোকা বোকা চাহনিতে উনার দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
” কি শুরু করবো?”

কামাল আংকেলের কথায় সকলেই মৃদু গুঞ্জনে হেসে উঠলো। নাসরিন আন্টী কামাল আংকেলের বাহুতে চাপড় মেরে বললেন,
” বোকার মতো প্রশ্ন করো কেনো? আদ্রিশ গিটার নিয়ে বসে তোমাকে এ প্রশ্ন করবে কি কারণে? গান গাওয়ার কারণে। ”

কামাল আংকেল নাসরিন আন্টীর কথা বুঝতে পেরে মাথা উপর নিচ করে বললো,
” ওও এবার বুঝেছি। তো, আদ্রিশ কি গান শুনতে চাস?”

আদ্রিশ চট করে আমার দিকে চেয়ে তরঙ্গায়িত কণ্ঠে বললো,
” বেয়াইন যে গান শুনতে চায় সে গান……”

উনার কথা শোনামাত্র কামাল আংকেল আমায় জিজ্ঞেস করলেন,
” বলো মা, কি গান শুনতে চাও তুমি?”

হুট করে এহেন পরিস্থিতিতে পড়ে আমি বাকহারা হয়ে পড়লাম। কিয়ৎক্ষণ সকলের দিকে একনজর বুলিয়ে মৃদু হেসে কামাল আংকেলকে বললাম,
” আপনার যেটা ভালো লাগে আংকেল সেটাই গান। আপনার আর আন্টীর সাথে যে গান মানানসই মনে হয় সে গান গাইতে পারেন। ”

আমার কথায় কামাল আংকেল কিয়ৎক্ষণের জন্য ভাবুক দৃষ্টিতে নাসরিন আন্টীর দিকে চাইলো। অতঃপর গলা পরিষ্কার করে আদ্রিশকে বললেন,
” ‘পৃথিবী বদলে গেছে’ গানের টোন বাজা। এটাই আমাদের দুজনের জন্য পারফেক্ট একদম।”

কামাল আংকেলের কথা শেষ হওয়া মাত্রই উপস্থিত সকলের মাঝে করতালির আওয়াজ শুনতে পেলাম। নিমিষের মাঝে আদ্রিশ গিটারে টুংটাং আওয়াজ তুললেন এবং কামাল আংকেল পুনরায় গলা পরিষ্কার করে গান ধরলেন,
” পৃথিবী বদলে গেছে
যা দেখি নতুন লাগে
পৃথিবী বদলে গেছে
যা দেখি নতুন লাগে
তুমি আমি একই আছি
দু’জনে যা ছিলাম আগে
পৃথিবী বদলে গেছে
যা দেখি নতুন লাগে
তুমি আমি একই আছি
দু’জনে যা ছিলাম আগে
পৃথিবী বদলে গেছে
যা দেখি নতুন লাগে।”

কামাল আংকেলের গান শেষ হতেই পুনরায় আমাদের সকলের মাঝে করতালির আওয়াজ শোনা গেলো। ছোট্ট ইকরাও তার গোলগাল হাত দুটো দিয়ে তালি দিচ্ছিলো। কামাল আংকেল জেবা ভাবীর কাছ হতে ইকরাকে কোলে নিয়ে শূন্যে তুলে নাচাতে নাচাতে বললেন,
” আমার গানটা দাদুমনির পছন্দ হয়েছে? হ্যাঁ পছন্দ হয়েছে?”

কামাল আংকেলের এ সাধারণ কথা শুনেই ইকরা খিলখিল করে হাসিতে মেতে উঠলো। কিয়ৎক্ষণ বাদে কামাল আংকেল ইকরাকে কোলে নিয়ে আমার উদ্দেশ্যে বললেন,
” এ গানটি একদম আমাদের সাথে যায়, বুঝেছো মা? তোমার আন্টীকে ভার্সিটি লাইফে যেমন ভালোবাসতাম এখনও ঠিক তেমনই ভালোবাসি। বরং, মাঝেমধ্যে মনে হয়, আগের চেয়ে ভালোবাসা এখন যেনো আরো বেড়ে গিয়েছে। ”

আংকেলের কথা শুনে আমি কিঞ্চিৎ বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
” আপনাদের পরিচিতি ভার্সিটি লাইফ থেকেই ছিলো আংকেল?”

আংকেল ঠোঁটের কোনে তৃপ্তির হাসি সহিত বললেন,
” হ্যাঁ, সেই ভার্সিটি লাইফ থেকে আমাদের প্রেম ছিলো। তোমার আন্টী আমার দু বছরের জুনিয়র ছিলো। একদম প্রথম দেখায় আমি ওর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। তোমাদের নিউ জেনারেশনে যাকে বলে, লাভ এট ফার্স্ট সাইট। এই লাভ এট ফার্স্ট সাইট থেকেই আমাদের এতদূর আসা। সেসময় কি পাগলামিটাই না করতাম আমি।”
এই বলে কামাল আংকেল পাশ ফিরে মুগ্ধ চাহনিতে নাসরিন আন্টীর দিকে তাকালেন। ফলে মুহূর্তেই নাসরিন আন্টী লজ্জায় একদম নুয়ে পড়লেন। তাঁর এমন লাজুকময় হাবভাব দেখে কামাল আংকেল ঝলমলে গলায় বললেন,
” দেখো, দেখো, আমার বেগম সাহেবা সেই পঁয়ত্রিশ বছর আগের মতো লজ্জায় নুয়ে পড়েছে। আহ, সেই লাজুক চেহারা, হৃদয়ে যেনো একদম ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে দেয়। ”

কামাল আংকেলের কথা শুনে আমি বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে উনাদের দিকে চেয়ে রইলাম। এ বয়সেও যে উনাদের এতো প্রেম ভালোবাসা নজর কাড়বে তা অকল্পনীয় ছিলো আমার জন্য। এদিকে কামাল আংকেলের কথা শুনে নাসরিন আন্টী লজ্জায় ওড়না দিয়ে মুখ ঢাকলেন। আংকেলের হাতে চাপড় মেরে লাজুক সুরে বললেন,
” বাচ্চাদের সামনে মান সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিলে দেখছি। চুপ করো এবার।”

কামাল আংকেল আন্টীর কথার তোয়াক্কা না করেই বললো,
” আমাদের বাচ্চাকাচ্চারা তাদের বাপের প্রেমিক মন সম্পর্কে সব জানে। ইভেন আমিই ওদের এসব বলেছি। যেনো আমার কাছ থেকে ‘বউকে কিভাবে ভালোবাসা যায়’ সেসবের টিপস নিয়ে নিজের জীবনেও প্রয়োগ করে ওরা। না হলে তুমিই বলো, এমনটা না করলে তারা একই মানুষের সাথে বুড়ো বয়স পর্যন্ত টিকে থাকবে কি করে?”

কামাল আংকেলের সাথে আদ্রিশ, ইমাদ এবং ইমতিয়াজ ভাইয়া সায় জানালো। কামাল আংকেল তাদের এ সম্মতিতে উৎসাহী হয়ে আমাদের উদ্দেশ্যে বললেন,
” নাসরিন যখন প্রথম প্রথম ভার্সিটিতে আসে তখম একদম চুপচাপ ছিলো আর বরাবরের মতোই সিনিয়রদের দেখে ভয়ে অসার হয়ে যেতো। ওকে প্রথম দেখাতেই পছন্দ করেছিলাম বলে একদিন আমাদের ভার্সিটির ক্যান্টিনে ওর সাথে কথা বলার জন্য ওর পথ আগলে ধরি। ব্যস, এতেই যেনো ওর মরি মরি অবস্থা হয়ে যায়। আমি অনেক কিছু বলার পর ওর অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে আসে। এরপর আর কি, ধীরেধীরে আমাদের কথা বাড়তে থাকে। আমার প্রতি ওর ভয় একদম চলে যায়। আর ওর প্রতি আমার ভালোবাসা আরো বেড়ে যায়। রোজ রোজ ওকে চিঠি লিখতাম। আমাদের সময়ে এসব ফোন ছিলো না। তখন হৃদয়ের হাল বেহাল সম্পর্কে জানাশোনা হতো চিঠির মাধ্যমে। অমূল্য এক কাগজের মাধ্যমে। সে চিঠি লিখার কি যে এক অনুভূতি! একদম অবর্ণনীয়। এই যুগে এসে চিঠিতে চিঠিতে প্রেম নিবেদন কি তা তোমরা বুঝবে না। প্রেমিকাকে চিঠি দেওয়ার পর সে চিঠির জবাবের জন্য কি যে অপেক্ষা করতে হতো! সে অপেক্ষায় যেমন ছিলো কষ্ট তেমনই ছিলো আনন্দ। সে অপেক্ষা ছিলো তিক্ত মিঠাই এর মতো। আহ, কি অপেক্ষা! আমি প্রায় রোজ রোজ ওদের হোস্টেলের সামনে গিয়ে দাঁড়াতাম। এক নজর ওকে দেখবো বলে। ওকে চিঠি দিতে কি বেগ যে পোহাতে হতো তা বলে বুঝানো সম্ভব ছিলো না। এতো কষ্ট করেছি বলেই তো আমাদের ভালোবাসা আজ এতো মজবুত। এখনকার যুগে তো ফোনে ফোনে ইজিলি ভালোবাসা হয়ে যায়। এজন্য এখনকার ভালোবাসার স্থায়িত্ব কম। আর আমাদের ভালোবাসা দেখো! এখনও টিকে আছে। এখনও।”

এই বলে কামাল আংকেল প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ছাড়লেন। এদিকে আমি উপলব্ধি করলাম, আমিসহ সকলেই উনার কথা বেশ মনোযোগ সহকারে শুনছিলাম। কামাল আংকেল নিশ্চুপ হতেই আমার মাথা হুট করে একটা প্রশ্ন উঁকি দিলো। ফলস্বরূপ চট করে আংকেলকে প্রশ্ন করে বসলাম আমি,
” আচ্ছা, আংকেল? লাভ এট ফার্স্ট সাইট কি সত্যিই হয়? আমার মনে হয়, এটা শুধু মুখে বলতেই ভালো শোনায়। তাছাড়া লাভ এট ফার্স্ট সাইট বলে কিছুই হয় না। ”

আমার কথা শুনে কামাল আংকেল স্মিত হাসলেন। আনমনা হয়ে বললেন,
” লাভ এর ফার্স্ট সাইট বলে ব্যাপার আছে মা। লাভ এট ফার্স্ট সাইট হতেই পারে। তবে এর স্থায়িত্ব কেমন হবে তার উপর নির্ভর করেই পরবর্তীতে একে লাভ বা লাইকের কাতারে ফেলা যায়। এই যেমন ধরো, তুমি কাউকে প্রথম দেখায় পছন্দ করে ফেললে এবং একটু আধটু নয়, অনেক পছন্দ করে ফেললে তাকে। তার জন্য তোমার মনে অদ্ভুত কিছু অনুভূতির সৃষ্টি হলো। এবার তুমি বুঝলে হয়তো তুমি তাকে ভালোবেসে ফেলেছো। এবার সেই প্রথম দেখার পর তোমাদের দুজনের আর দেখা হলো না। এসবের পর প্রথম প্রথম একটু তোমার মনটা একটু ছটফট করলেও পরে দেখা যাচ্ছে, তুমি সেই আগের ন্যায় হয়ে যাচ্ছো। এতে কি বুঝা গেলো? এতে বুঝা গেলো, এটা তার প্রতি তোমার লাইক এট ফার্স্ট সাইট ছিলো। কিন্তু বিপরীতভাবে দেখা গেলো, সেদিনের পর তোমাদের রোজ রোজই দেখা হতে থাকে। অথবা নাও বা দেখা হতে পারে। কিন্তু এতেও তার প্রতি তোমার অনুভূতি অনেক গাঢ় হতে থাকে। তাকে ছাড়া তুমি অস্থির অনুভব করো। তার প্রতি দিনকে দিন তোমার অনুভূতি তীব্র হতে থাকছে। তাকে কিছুতেই ভুলতে পারছো না। এক্ষেত্রে এটাই হলো, তোমার তার প্রতি লাভ এট ফার্স্ট সাইট। আমার মতে এই বিষয়টা নির্ভর করে, তার সাথে তুমি কতবার মুখোমুখি হচ্ছো, তাকে কতোটা মনে ধরে রাখতে পেরেছো। বুঝেছো মা ব্যাপারটা?”

আংকেলের কথা শেষ হতেই আমি ঈষৎ মাথা নাড়িয়ে মৃদু স্বরে বললাম,
” জি আংকেল। ”

হঠাৎ আমার পাশ হতে আদ্রিশ বলে উঠলেন,
” তাহলে লাভ এট ফার্স্ট সাইট বলে ইন্সিডেন্সটা সত্যিই আছে?”

কামাল আংকেল বলে উঠলেন,
” হ্যাঁ রে হ্যাঁ। এনি ডাউট? আমি এতক্ষণ যা বললাম, তা শুনেছিস তো? ”

” হ্যাঁ, শুনেছি তো। ”

আংকেল এবার সন্দিহান কণ্ঠে আদ্রিশকে জিজ্ঞেস করলেন,
” কি ব্যাপার আদ্রিশ? কিছু হচ্ছে না কি? তোর বাপকে কি খবর দেওয়া লাগবে?”

আদ্রিশ সরু চোখে চেয়ে বললেন,
” কথায় কথায় বাপের ভয় দেখাও কেনো আংকেল? আর, এ ব্যাপারে কিছু হলে ইমাদের আগে তোমাকেই বলবো আমি। ডোন্ট ওয়ারি।”

ইমাদ ভাইয়া আদ্রিশের কথায় অভিমানী কণ্ঠে বললেন,
” বাহ বাহ, ভালো তো আদ্রিশ। ব্যাটা তুই আমার বন্ধু হয়ে এ ব্যাপারে আমাকে বলার আগেই আমার বাপকে বলবি। গুড গুড। যাহ, আজ থেকে আমার আর তোর ফ্রেন্ডশিপ শেষ।”

আদ্রিশ এবার উঠে গিয়ে ইমাদ ভাইয়ার পাশে বসলেন। ইমাদ ভাইয়ার কাঁধ ধরে দুলাতে দুলাতে বললেন,
” এতো মাইন্ড করিস কেনো রে দোস্ত? তুই তো আমার জানে জিগার। তোকে ছাড়া তো আমি কিছুই না। ”

আদ্রিশের কথায় ইমাদ ভাইয়া বিস্তৃত হাসলেন। অতঃপর আদ্রিশকে কিছু বলতে নিলেই জেবা ভাবীর কোলে আচমকা ইকরা কেঁদে উঠলো। জেবা ভাবী ইকরাকে নিয়ে মুহুর্তেই উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
” ইকরা ঘুমিয়ে গিয়েছিলো। চারপাশের আওয়াজে হঠাৎ করে কেঁদে উঠলো। আমি ওকে নিয়ে রুমে যাই। আপনারা সবাই গল্প করুন। আর ইমতিয়াজ, ইকরার জন্য একটু বিছানা ঠিক করে দিয়ে যাও। ”

এই বলে জেবা ভাবী বেরিয়ে পড়লেন। উনার পিছু পিছু ইমতিয়াজ ভাইয়াও ছুটলেন। তারা দুজন চলে যেতেই কামাল আংকেল ও নাসরিন আন্টীও সময়ের অজুহাত দেখিয়ে চলে গেলেন। ছাদে রইলাম আমি, আদ্রিশ, আপু এবং ইমাদ ভাইয়া।

কিছুক্ষণ বাদে ইমাদ ভাইয়া বললেন,
” এ ঘরের লাইট নিভিয়ে চলো বাইরে বসি। আজকে জ্যোৎস্না আছে। ”

আপু এতে অমত পোষণ করে বললো,
” বাইরে শীত তো। ”

ইমাদ ভাইয়া আপুর কথা শুনলেন না। বরং হুট করে আপুর হাত ধরে টেনে ঘর হতে বাইরে নিয়ে গেলেন। এদিকে আমি অবলার মতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। মন বলছে, ছাদ হতে চলে যাই৷ আপু আর ইমাদ ভাইয়াকে কিছু সময় দেই। এই ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ অনুভব করলাম, আমার চারপাশ আচমকা অন্ধকার হয়ে এলো। কিন্তু পরক্ষণেই চাঁদের রুপালি আলোয় এ ঘর আলোকিত হয়ে পড়লো। আমি কিয়ৎক্ষণের জন্য রাতের এ রূপ দেখে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।

আচমকা কোনোরূপ কথাবার্তা ছাড়াই আদ্রিশ আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন,
” কি ব্যাপার মিশমিশ? দাঁড়িয়ে আছো কেনো? তোমাকেও কি ওভাবে টেনে নিয়ে যেতে হবে না কি?”

আমি আদ্রিশের প্রশ্নের জবাব দিলাম না৷ বরং অকারণেই কিয়ৎক্ষণের জন্য আদ্রিশের দিকে নিষ্পলক চেয়ে রইলাম। এ ঘরে দরজার ব্যবস্থা না থাকায় কিঞ্চিৎ জ্যোৎস্নার আলো ঘরে প্রবেশ করছে। সে আবছা আলোয় আদ্রিশকে অন্য রকম দেখাচ্ছে। এই প্রথমবার আমি উনাকে বেশ নিকট হতে এবং গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলাম। উনার ঘন ভ্রুজুগলের সাথে উনার গভীর চোখ দুটো মানিয়েছে বেশ। আর চাঁদের রুপালি আলোয় উনার উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের চেহারা কেমন এক শুভ্রময় ছোঁয়ায় ছেয়ে গিয়েছে! গালে চাপ দাঁড়ির সাথে লম্বা খাড়া নাকটিও মানিয়েছে দারুন। অতঃপর নিমিষের পর্যবেক্ষণ শেষে যা বুঝলাম, উনার এ মুখশ্রীতে নিশ্চয়ই অনেক মেয়ে পাগলপ্রায় এবং এতে কোনো সন্দেহ নেই।

হঠাৎ চোখের সামনে তুড়ি বাজানোর আওয়াজে ধরাধামে অবতীর্ণ হলাম আমি। তৎক্ষনাৎ নিজেকে সামলে নিয়ে চোরা নজরে এপাশ ওপাশ তাকিয়ে বললাম,
” ইমাদ ভাইয়া আর আপুকে সময় দেওয়া উচিত।”

আদ্রিশ বললেন,
” কিছুটা সময় থাকো। তারপর যেও। একটু না হয় জ্যোৎস্না বিলাস করো। দোষ কি তাতে?”

আমি এ প্রশ্নের জবাব দিতে ব্যর্থ হলাম। অগত্যাই ঘরের বাইরে পা রাখলাম। ছাদে রাখা একটি মাদুরে আপু আর ইমাদ ভাইয়া পাশাপাশি বসে আছেন। আমি গিয়ে উনাদের সামনে বসে পড়লাম। আদ্রিশ আমার থেকে পূর্বের ন্যায় দূরত্বতা বজায় রেখে আমার ডান দিকে বসলেন। কিছুক্ষণ আমাদের মাঝে নিরবতায় সময় কেটে গেলো।৷ হঠাৎ ইমাদ ভাইয়া ধীর কণ্ঠে বললেন,
” মনে হচ্ছে আজকের জ্যোৎস্না যেনো অন্য রাতের জ্যোৎস্নার চেয়ে আলাদা। ”

আদ্রিশ প্রত্যুত্তরে কণ্ঠে মুগ্ধতা মিশিয়ে বললেন,
” প্রিয়তমা পাশে বলে সবটাই অন্যরকম মনে হয়।”

এই বলে আদ্রিশ চট করে আমার দিকে তাকালেন। আচমকা উনার এহেন প্রতিক্রিয়ায় আমি বেশ ঘাবড়ে গেলাম। দ্রুত আমার নজর সরিয়ে বাম দিকে নিতেই শুনতে পেলাম গিটারের টুংটাং আওয়াজ। আমি তড়িতেই সেদিকে ঘুরে তাকালাম। আদ্রিশ গান গাইবার জন্য গলা পরিষ্কার করছেন। অতঃপর আমার দিকে এক পলক চেয়ে আপু আর ইমাদ ভাইয়ার দিকে দৃষ্টিপাত করে গান ধরলেন,
” এখন অনেক রাত
তোমার কাঁধে আমার নিঃশ্বাস,
আমি বেঁচে আছি তোমার ভালোবাসায়!
ছুঁয়ে দিলে হাত
আমার বৃদ্ধ বুকে তোমার মাথা চেপে ধরে টলছি কেমন নেশায়!
এখন অনেক রাত
তোমার কাঁধে আমার নিঃশ্বাস,
আমি বেঁচে আছি তোমার ভালোবাসায়!
ছুঁয়ে দিলে হাত
আমার বৃদ্ধ বুকে তোমার মাথা চেপে ধরে টলছি কেমন নেশায়!
কেন যে অসংকোচে অন্ধ গানের কলি
পাখার ব্লেড-এর তালে সোজাসুজি কথা বলি!
আমি ভাবতে পারিনি, তুমি বুকের ভেতর ফাটছো,
আমার শরীর জুড়ে তোমার প্রেমের বীজ!
আমি থামতে পারিনি, তোমার গালে নরম দুঃখ,
আমায় দুহাত দিয়ে মুছতে দিও প্লিজ!”

আদ্রিশের গান শেষ হতেই আমরা তিনজনে একত্রে করতালি দিলাম। আপু আদ্রিশকে জিজ্ঞেস করলেন,
” কবে থেকে গিটার বাজাতে পারো?”

আদ্রিশ গিটারটা পাশে রেখে জবাব দিলেন,
” স্কুল লাইফ থেকেই। আংকেলের কাছে গিটার শিখেছিলাম আমি আর ইমাদ। আংকেল অনেক ভালো গিটার বাজাতে পারে। একদিন এখানে এসে উনার হাতে গিটার দেখেই আমার মাথা খারাপ হয়ে গেলো। তারপর আর কি, আংকেলের কাছে গিটার শিখে নিলাম।”

আপু মৃদু হেসে জবাব দিলো,
” ওহ”

অতঃপর আমাদের মাঝে পুনরায় নিরবতা বিরাজ করলো। কিছুক্ষণ বাদে হঠাৎ ইমাদ ভাইয়া রাশভারি গলায় আদ্রিশের উদ্দেশ্যে বললেন,
” আদ্রিশ, তোকে কিছু কথা বলবো। নাফিসার সম্পর্কে। ”

ইমাদ ভাইয়ার কথা এবং মুখের হাবভাব দেখে মুহূর্তেই বুঝে গেলাম উনি কি বিষয় নিয়ে আদ্রিশের সাথে কথা বলবেন।
ইমাদ ভাইয়া আপুর দিকে তাকালেন। আপু তখন নতমস্তকে বসে আছে। হয়তো সংকোচে। ইমাদ ভাইয়া আপুর দিকে চেয়েই আদ্রিশকে বললেন,
” নাফিসাকে একজন ভালোবাসে এবং সে এখনও নাফিসার পিছে পড়ে আছে। ”
এই বলে ইমাদ ভাইয়া আদ্রিশকে বিস্তারিতভাবে সবটা বললেন। অতঃপর ক্ষণিকের জন্য নিশ্চুপ রয়ে পুনরায় বললেন,
” আমার অনুপস্থিতিতে যদি কোনো অঘটন ঘটে তাহলে তুই দেখবি আদ্রিশ। যেনো এসব অঘটনের কারণ তোর জানা থাকে সেজন্যই এগুলো বলা। আর আমি বাসার সিকিউরিটি যথাসম্ভব বাড়িয়ে রেখেছি। তবুও আমি যেহেতু শহরের বাইরে যাচ্ছি সেহেতু ওর সব দায়িত্ব তোর উপর দিয়ে যাচ্ছি আদ্রিশ। তুইই আমার ভরসাস্থল। ”

এই বলে ইমাদ ভাইয়া আকুল চাহনিতে আদ্রিশের দিকে চাইলেন। আমিও আদ্রিশের দিকে চেয়ে আছি। আদ্রিশ এ মুহূর্তে গভীর ভাবনায় নিমগ্ন। কিয়ৎক্ষণ বাদে উনি কণ্ঠে কিঞ্চিৎ সন্দেহ এবং বিস্ময়তা বজায় রেখে জিজ্ঞেস করলেন,
” ছেলেটার নাম কি রোহান আহমেদ?”
®সারা মেহেক(নতুন পেজ খোলা হয়েছে। কারণ এ পেজের রিচ কম৷ নতুন পেজে সবাই এড থাকলে কিছু পোস্ট করলেই সহজেই আপনাদের নিকট পৌঁছে যাবে। তবে এজন্য পেজের পোস্টগুলোয় কষ্ট করে রিয়েক্ট করতে হবে। এতে ইজিলি আপনাদের কাছে প্রতিটা পোস্ট পৌঁছে যাবে। নতুন পেজ খোলা হয়েছে লিংক পোস্টের জন্য এবং আমার তোলা ছবিগুলো পোস্ট করার জন্য। সারা মেহেক পেজ)গ্রুপ: সারা’র গল্পকুঞ্জ

#চলবে

(আজকে বিশাল এক পর্ব দিয়েছি। এবার কমেন্ট করুন ঝটপট। আর নতুন পেজ খুলেছি কিন্তু।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here