ভুলবশত প্রেম পর্ব-২০

0
1708

#ভুলবশত_প্রেম
#লেখনীতেঃসারা মেহেক

২০

আদ্রিশের মুখে রোহান ভাইয়ার পুরো নাম শুনে আমি ভীষণ অবাক হলাম। বিস্ময়ের সহিত জিজ্ঞেস করলাম,
” আপনি রোহান ভাইয়ার পুরো নাম জানলেন কি করে?”

আদ্রিশ আমার দিকে ফিরে জবাব দিলেন,
” ইমাদ যখন বললো, রোহান নামের কেউ নাফিসা ভাবীর পিছনে পড়ে আছে তখনই নামটা শুনে কিছুটা সন্দেহ করেছিলাম। আবার ওর আচার আচরণও কিছুটা সন্দেহজনক মনে হয়েছিলো। এজন্যই পুরো নাম জিজ্ঞেস করলাম। তো এই রোহানের নাম রোহান আহমেদ না?”

ইমাদ ভাইয়া অবিশ্বাস্যভরা চাহনিতে চেয়ে বিস্মিত কণ্ঠে আদ্রিশকে জিজ্ঞেস করলেন,
” এর মানে এটা সেই রোহান আহমেদ?”

আদ্রিশ যেনো আরেকদফা নিশ্চিত হতে চাইছেন। এ কারণে উনিও পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন,
” তোর খোঁজখবর নেওয়া মতে, এই রোহানের বাবা ওদের এলাকার এমপি৷ রাইট?”

ইমাদ ভাইয়া মাথা নাড়িয়ে বললেন,
” রাইট। ”

ইমাদ ভাইয়া আর আদ্রিশের কথাবার্তার আগামাথা কিছুই বুঝতে না পেরে আমি এবং আপু প্রায় একত্রেই বলে উঠলাম,
” আপনারা রোহানকে চিনেন কি করে?”

আদ্রিশ এবং ইমাদ ভাইয়া নিরবে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলেন আমাদের দিকে। অতঃপর ক্ষণিক বাদে আদ্রিশ আমায় উদ্দেশ্য করে বললেন,
” যেদিন আমি হসপিটালে ব্যান্ডেজ করাতে এসেছিলাম সেদিন তোমায় বলেছিলাম, আমায় যে মেরেছে সে আমার পার্সোনাল এবং প্রফেশনাল লাইফ, দু জায়গারই শত্রু৷ মনে আছে?”

আমি সাথে সাথে মাথা নাড়িয়ে বললাম,
” হ্যাঁ, মনে আছে। ”

” সেই ছেলের নামই হলো রোহান আহমেদ। দ্যাট মিনস, নাফিসা ভাবীর পিছে যে পড়ে আছে সে আর আমার শত্রু একই মানুষ। রোহান আহমেদ। ”

আদ্রিশের কথা শুনে আমরা দুজনে থম মেরে বসে রইলাম। রোহান ভাইয়া কাউকে মারার মতো কাজ করে বসবে তা আমার ধারণার বাইরে ছিলো। রোহান ভাইয়া আপুকে পছন্দ করতো তা মেনে নেয়া যায়। কারণ সে এখনও আপুর সাথে খারাপ কিছু করেনি। কিন্তু উনি যে কাউকে এভাবে মারতে পারে তা আমি আশাও করিনি। ছোট বেলা থেকে রোহান ভাইয়াকে দেখে আসছিলাম। উনি কখনও কারোর সাথে খারাপ ব্যবহার করেননি। সবসময় সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলেছেন। আর আজ সেই মানুষেরই নতুন এক রূপ সম্পর্কে জানলাম। সবটাই অবিশ্বাস্য লাগছে। আপুও যেনো এমন কিছু আশা করেনি। আপু আদ্রিশকে জিজ্ঞেস করলো,
” রোহানের সাথে তোমার পরিচয় কবে থেকে?”

আদ্রিশ প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ছেড়ে জবাব দিলেন,
” ভার্সিটি লাইফ থেকে ওকে চিনি। আমরা ক্লাসমেট ছিলাম। ওর সাথে আমার তেমন পরিচিতি ছিলো না। বন্ধুত্বও ছিলো না। তবে দুটো ঘটনার পর থেকে ওর সাথে আমার শত্রুতার শুরু হয়। প্রথমত একটা জুনিয়রকে খুব খারাপ ভাবে র‍্যাগ দেয়া নিয়ে ওর সাথে বড় রকমের ঝামেলা হয়। দ্বিতীয়ত সেমিস্টার পরীক্ষায় নকল করার সময় আমার কারণে ও হাতেনাতে ধরা পড়ে। এরপর থেকে ওর সাথে কমবেশি ঝামেলা হয়েই থাকে আমার। আর প্রফেশনাল লাইফে এন্ট্রি করার পরপরই আমাদের শত্রুতা যেনো নতুন রূপে চলে আসে। আমি আমার বাবার ফার্মাসিউট্যাকল কোম্পানিতে রিসার্চ ফার্মাসিস্ট হিসেবে ঢুকি। আর রোহান ঢুকে আমাদের রাইভাল ফার্মাসিউট্যাকল কোম্পানিতে। ব্যস আমাদের পাস্ট লাইফের শত্রুতা তখন থেকেই এক নতুন রূপ নেয়। ”

আদ্রিশের কথা শেষ হওয়া মাত্রই আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম,
” রোহান ভাইয়া আপনাকে মেরেছিলো কেনো?”

আদ্রিশ আমার প্রশ্নে যেনো খানিকরা চুপসে গেলেন। কিয়ৎক্ষণ নিশ্চুপ থেকে ব্যস্ততা দেখিয়ে বললেন,
” কিছু প্রফেশনাল কারনে। আচ্ছা, এসব বাদ দাও আপাতত।”

এই বলে উনি ইমাদ ভাইয়ার দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
” কাল কখন বের হচ্ছিস?”

ইমাদ ভাইয়া খানিক চিন্তাযুক্ত কণ্ঠে জবাব দিলেন,
” সকাল সাতটার দিকে বের হবো। সকালে বোধহয় দেখা হবে না তোর সাথে। কারণ তখনও তুই ঘুমাস।”
এই বলে ইমাদ ভাইয়া পরনের হাত ঘড়ির দিকে চেয়ে বললেন,
” চল উঠা যাক। অনেক রাত হয়েছে। কালকে সকালেও তো উঠতে হবে আবার।”

আদ্রিশ ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে জবাব দিলেন,
” হ্যাঁ,চল উঠি। ”
এই বলে উনি উঠে দাঁড়ালেন। উনার দেখাদেখি আমরা তিনজনও উঠে দাঁড়ালাম। আপু এবং ইমাদ ভাইয়া আগে আগে চলে গেলেন। আমিও উনাদের পিছু পিছু যেতে লাগলাম। আমার পিছন হতে হঠাৎ এসে আদ্রিশ আমার পাশাপাশি হাঁটতে লাগলেন। ছাদ হতে দু সিঁড়ি নামার পর আদ্রিশ পকেটে দু হাত গুঁজে আনমনে নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন,
” তাহলে এক সপ্তাহ এখানে থাকা হচ্ছে তোমার। গুড থিং।”

আদ্রিশের কথা শুনে আমি ভীষণ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
” আমি এক সপ্তাহ এখানে থাকবো তা আপনি জানলেন কি করে?”

আমরা ততক্ষণে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় চলে এসেছি। সিঁড়ির সাথে গেস্টরুম লাগোয়া থাকায় আমি গেস্টরুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। কারণ আপাতত গেস্টরুমেই থাকা হচ্ছে আমার।
আদ্রিশ এসে দাঁড়ালেন আমার সম্মুখপানে। ঠোঁটের কোনে এক প্রকার রহস্যময় হাসি এঁটে বললেন,
” সব ঘটনা এবং ঘটনার কারণ জানতে নেই মিশমিশ। জানলে এই ইউনিভার্সের কিছুই তো অজানা থাকতো না। মনে রেখো মিশমিশ, ইউনিভার্স তার অতল গহ্বরে অনেক কিছু লুকিয়ে রাখে। যা সে সবাইকে জানতে দিতে চায় না।”

আদ্রিশের এমন রহস্যভরা কথার অর্থ আমার মাথার উপর দিয়ে চলে গেলো। আদ্রিশ হয়তো আমার চেহারা হাবভাব দেখে ব্যাপারটা চট করে ধরে ফেললেন। এজন্যই পূর্বের ন্যায় হাসি দিয়ে বললেন,
” এত ভাবতে হবে না তোমায় মিশমিশ। আপাতত যাকে নিয়ে বা যা নিয়ে ভাবলে তুমি টেনশন ফ্রি থাকবে তা নিয়ে ভাবো। ”
এই বলে উনি মনোমুগ্ধকর এক হাসি দিয়ে নিচে যাবার সিঁড়িতে পা রাখলেন। কিন্তু কি যেনো ভেবে দু পা পিছিয়ে এসে আমায় বললেন,
” হ্যাভ এ গুড ড্রিমস মিশমিশ। কালকে দেখা হচ্ছে আবারো। ততক্ষণের জন্য বাই বাই।”
এই বলে উনি প্রত্যুত্তরের অপেক্ষায় না থেকে চলে গেলেন। উনি যেতেই আমি দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করলাম এবং না চাইতেও উনার কথা ভাবতে লাগলাম। ভাবতে লাগলাম কি কারণে রোহান ভাইয়া উনাকে ওভাবে মেরেছিলেন।
®সারা মেহেক(নতুন পেজ সারা মেহেক)

#চলবে
(নিজের মতামত জানাবেন আশা করি।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here