#ভুলবশত_প্রেম
#লেখনীতে:সারা মেহেক
৪৪(দ্বিতীয় অংশ)
আদ্রিশের হাতে গান দেখে আমার চোখজোড়া বিস্ময়ে চক্ষু কোটর হতে বেরিয়ে আসতে চাইলো যেনো। উনার কাছে গান কিভাবে এলো তা কিছুতেই আমার মাথায় এলো না।
এদিকে আদ্রিশ রোহান ভাইয়ার দিকে গান তাক করে শক্ত কণ্ঠে বললেন,
” ফুললি লোডেড গান। শুধু একবার ট্রিগার চাপবো। টার্গেট মিস হবে না রোহান৷ এজন্য যা করবি ভেবেচিন্তে করবি। তোর একটা স্টেপ আমার বিরুদ্ধে হবে, আর আমি এক সেকেন্ডও দেরি না করে ট্রিগার চেপে দিবো। ব্যস, তোর খেল ওখানেই খতম৷ সো, মাথার মধ্যে যা চলছে, সব ভুলে যা। কারণ এখন আমার সাথে পেরে উঠতে পারবি না তুই।”
রোহান ভাইয়া মাটিতে পরে থাকা গানটি হাতে নেওয়ার চেষ্টা চালাতেই আদ্রিশ পা দিয়ে গানটি দূরে সরিয়ে দেন। তন্মধ্যে শাহেদ সাহেব নিজের গান নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন। কিঞ্চিৎ বিস্মিত কণ্ঠে আদ্রিশকে জিজ্ঞেস করলেন,
” আপনার কাছে গান কিভাবে মিস্টার আদ্রিশ?”
আদ্রিশ রোহান ভাইয়ার দিকে চেয়ে বললেন,
” চিন্তা করবেন না অফিসার। এটা লাইসেন্সড গান। ”
এই বলে আদ্রিশ শাহেদ সাহেবের উদ্দেশ্যে বললেন,
” রুমের দরজাটা খুলে দিন৷ আপনার টিম মেম্বার্সের কাউকে যে দেখতে পেলাম না?”
শাহেদ সাহেব মৃদু হাসার চেষ্টা করে বললেন,
” ওরা রোহানের চ্যালা-প্যালাগুলোকে কব্জা করে ফেলেছে। আমিই ওদের বলেছিলাম, আমার সিগন্যাল না পাওয়া পর্যন্ত নাফিসা যে রুমে আছে সে রুমে যেনো না আসে ওরা। ”
এই বলে শাহেদ সাহেব রুমের দরজা খুলে দিলেন। এই সুযোগে রোহান ভাইয়া মাটি থেকে উঠে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু এর পূর্বেই শাহেদ সাহেব সুযোগ বুঝে উনাকে পাকড়াও করলেন৷ এক হাতে রোহান ভাইয়ার হাত দুটো পেঁচিয়ে পিছনে ধরলেন এবং অপর হাতে গনা নিয়ে রোহান ভাইয়ার মাথায় ঠেকিয়ে বললেন,
” এতো সহজে পালাবি কোথায় রোহান? তোকে জেলের হাওয়া না খাওয়ানো পর্যন্ত আমি শান্তিতে বসে থাকবো না।”
রোহান ভাইয়া নিজেকে ছুটিয়ে নিতে প্রাণপণ চেষ্টা করলেন। কিন্তু শাহেদ সাহেবের শক্তির সাথে পেরে উঠতে পারলেন না। উনার এ প্রচেষ্টা দেখে আদ্রিশ বললেন,
” আর কতক্ষণ পরিস্থিতি নিজের দখলে রাখতে চাস! আর পারবি না দোস্ত। এবার ভালোয় ভালোয় নাফিসা ভাবীর ভিডিওটা দিয়ে দে। ”
আদ্রিশের কথা শোনামাত্র রোহান ভাইয়া ঠোঁট বাঁকিয়ে ক্রুর হাসিতে মেতে উঠলেন। বিজয়ী ভঙ্গিতে হেসে বললেন,
” এবার তো আমার পায়ের তলায় এসে পড়েছিস আদ্রিশ। আমি ঐ ভিডিও না দেওয়া পর্যন্ত তো সেটা পাচ্ছিস না তুই। এবার? এবার কি হবে?”
এই বলে রোহান ভাইয়া উন্মাদের ন্যায় অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন। উনার এ হাসির শব্দ আমার কানে আঘাত করার মুহূর্তমধ্যেই আপুর ফুঁপিয়ে কান্না করার আওয়াজ আমার কানে গিয়ে ঠেকলো। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে আপুর দিকে তাকাতেই আপু কাঁদতে কাঁদতে ইমাদ ভাইয়ার বুকে মুখ গুঁজলো। ইমাদ ভাইয়া মায়াভরা দৃষ্টিতে আপুর দিকে চেয়ে মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলো৷ এ মুহূর্তে তার বলার কিছু নেই। কিন্তু আমার বলার এবং করার অনেক কিছু বাকি আছে। যে মানুষটার জন্য আপুর এ অবস্থা তাকে কিছু পাওনা না দিয়েই কি করে ছেড়ে দেওয়া যায়! অন্ততপক্ষে ঐ শ’য়’তানের গালে কষে একটা থাপ্পড় না মারা পর্যন্ত সারাজীবন আমার আফসোস রয়ে যাবে।
আমি আপুর উপর হতে নজর সরিয়ে রোহান ভাইয়ার দিকে চাইলাম। কে বলবে ঐ সুন্দর মুখশ্রীর আড়ালে এতো বড় একটা শ’য়’তান লুকিয়ে ছিলো! আসলে কি উনার জন্য এই থাপ্পড়টা যথেষ্ট? মোটেও নয়। এই থাপ্পড় যথেষ্ট নয়। আমার উচিত, উনাকে ইচ্ছামতো মেরে র’ক্তা’ক্ত করে রাস্তায় ফেলে রাখা। কিন্তু চাইলেই কি আর সব সম্ভব!
আমি ধীর পায়ে রুমের মধ্যে প্রবেশ করে রোহান ভাইয়ার সম্মুখপানে দাঁড়ালাম। আমায় দেখে আদ্রিশ সাথে সাথে আমার পাশে দাঁড়িয়ে পড়লেন। কিঞ্চিৎ উদ্বিগ্নতার সহিত বললেন,
” তুমি এখানে এসেছো কেনো? নাফিসা ভাবীকে নিয়ে ইমাদদের সাথে গাড়ির কাছে গিয়ে দাঁড়াও। আমি আসছি। ”
আদ্রিশের কথা কানে তুললাম না আমি। রোহান ভাইয়ার দিকে তীব্র ঘৃণাভরা চাহনিতে কিয়ৎক্ষণ চেয়ে রইলাম আমি। রোহান ভাইয়া আমায় দেখে চেয়ে পূর্বের ন্যায় সে বিশ্রী হাসিটা হাসলেন। ঠোঁট বাঁকিয়ে বললেন,
” কি পিচ্চি! আজ তুইও এসেছিস! তা তোর বোনকে ওভাবে পড়ে থাকতে দেখে কেমন লাগলো তোর?”
এ মুহূর্তে রোহান ভাইয়ার একটি কথাও আমার সহ্য হলো না। দাঁতে দাঁত চেপে উনার চোখ বরাবর চাইলাম। অতঃপর তীব্র আক্রোশে শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে কষে একটা চড় বসিয়ে দিলাম উনার গালে। ঘটনার আকস্মিকতায় রোহান ভাইয়া হতভম্ব হয়ে গেলেন। অপমানে উনার মুখমণ্ডল কালো হয়ে এলো। উনি যে এমন কিছু কখনোই ভাবেননি তা উনার বদলে যাওয়া চেহারার রঙরূপ দেখেই স্পষ্ট বুঝতে পেলাম আমি। রোহান ভাইয়ার এরূপ অপমানিত চেহারা দেখে আমি প্রচণ্ড স্বস্তি অনুভব করলাম। বললাম,
” যখন থেকে আপনাকে চিনি, খুব ভালো হিসেবেই চিনতাম। আমার আপন কোনো ভাই না থাকায় আপনাকেই বড় ভাই হিসেবে মানতাম। কিন্তু আপনি সেটার যোগ্য নন। আজকের এ ঘটনায় আপনি সব লিমিট ক্রস করে দিয়েছেন। আপনার সাহস কি করে হয় একটা ফর্মুলার জন্য আপুর ভিডিও কালেক্ট করে আমাদের ব্ল্যাকমেইল করার? উচিত ছিলো, নোংরা জুতো দিয়ে আপনার গালে কয়েকটা চড় বসানো। কিন্তু এই থাপ্পড় পর্যন্তই সীমিত রইলাম আমি। খবরদার আর একবারও আমার আপুর আশেপাশে যেনো না দেখি আপনাকে৷ না হলে আমি আমার লিমিট ভুলে যাবো৷ সাধ্যমত আপনাকে বেইজ্জত করে রাস্তায় ঘুরাবো।”
রোহান ভাইয়া আমার কথা শুনে রাগে গজগজ করতে লাগলেন। শাহেদ সাহেবের কব্জা হতে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেন উনি। কিন্তু আদ্রিশ এগিয়ে এসে রোহান ভাইয়ার টিশার্টের কলার চেপে ধরে রাগত স্বরে বললেন,
” পাপ করে আবার এতো তেজ আসে কোথা থেকে? তোকে তো ভালোভাবে চিনি আমি। তুই যে কখনো শুধরানোর মানুষ না সেটাও জানি। কিন্তু এখন শুধরে যাবি। জেলের হাওয়া পানি খা কয়েকদিন। তারপর যদি লাইনে আসিস তুই।”
এই বলে উনি রোহান ভাইয়ার কলার ছেড়ে দিলেন। রোহান ভাইয়া তীব্র আক্রোশে বললেন,
” দেখি কয়দিন জেলে রাখতে পারিস তুই। আমাকে বন্দি করা এতো সহজ না। আর মিম, তোর তো সাহস কম না! আমায় চড় মারলি তুই! এ অপমান জীবনেও ভুলবো না আমি। তোদের জীবন নরক না বানানো পর্যন্ত আমি শান্তিতে বসবো না। আর ঐ ফর্মূলার কথা মনে রাখিস আদ্রিশ। খুব শীঘ্রই ফর্মুলাটা আমার নামে হবে। যাস্ট ওয়েট এণ্ড ওয়াচ।”
আদ্রিশ পুনরায় রোহান ভাইয়ার কলার চেপে বললেন,
” এসব হুমকি তখনই কাজে দিবে যখন তুই জল থেকে বের হবি। লজ্জা করে না, এতো বড় বড় কথা বলতে! ”
এই বলে উনি শাহেদ সাহেবের উদ্দেশ্যে বললেন,
” অফিসার, আপনি এখন ওকে থানায় নিয়ে যান। আমি সন্ধ্যায় এসে এফআইআর করবো। ”
শাহেদ সাহেব উনার টিমের দুজন মেম্বারকে ডেকে রোহান ভাইয়ার হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে রুম থেকে নিয়ে গেলেন। যেতে যেতে রোহান ভাইয়া তীক্ষ্ণ চাহনিতে আমাদের দিকে চেয়ে দাঁতে দাঁতে চেপে বললেন,
” তোদের দুইটাকে দেখে নিবো আমি। অপমান জিনিসটা আমার একদম সহ্য হয় না। আর সেই অপমানই করলি আমায়! দেখে নিব তোদের। ”
®সারা মেহেক (গতকাল রাতে দেওয়ার কথা হলেও প্রচণ্ড ঘুমের জ্বালায় লিখতে পারিনি। আবার সেহরিতেও সেই একই কারণ। দুঃখিত আপনাদের অপেক্ষা করানোর জন্য। আজ রাতে খুব সম্ভবত ৪৫ নং পর্ব পাবেন। আমি দেওয়ার চেষ্টা করবো। এ গল্প নিয়ে আপনাদের অনেক অপেক্ষা করিয়েছি। তবে আর খুব বেশি একটা পর্ব নেই। আর অপেক্ষা করতে হবে না আপনাদের। গল্পের ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)
#চলবে