মনের_অন্দরমহলে পর্ব ৩৩
#আনিশা_সাবিহা
–“এভাবে বাকহারা হয়ে পড়লে যে? সময় চেয়েছিলে। আমি দিয়েছি। তোমায় কোনোভাবে জোর করিনি। আজ জানতে এসেছি আর কত সময় লাগবে তোমার?”
নীলাদ্র বেশ জোরে কথাগুলো বলে উঠল। আমি খানিকটা কেঁপে উঠলাম তার কথায়। চোখ বুঁজে উত্তর খুঁজতে লাগলাম। একটা দম ফেলে এক নিশ্বাসে বলে ফেললাম,
–“আমি আয়াশকে কোনোরকম মৌখিক তালাক দিচ্ছি না। ইভেন উনাকে আমি ছেড়ে যেতে চাইছি না। এই বিষয়ে জোরাজুরি করতে এসো না নীলাদ্র।”
বলেই চোখ খুলে ফেললাম আমি। আচমকা আমার বাহু চেপে ধরতেই থতমত খেয়ে গেলাম আমি। ও স্পর্শে অস্বস্তি যেন রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ল। আমায় ঝাঁকিয়ে বলল,
–“তাহলে কি হলো তোমার কথার? কথার তো দামই নেই তোমার। এই ছিল তোমার আত্মসম্মান?”
–“আমি নিজের আত্মসম্মান বজায় রাখতে জানি। তোমার থেকে জ্ঞান নিতে চাইছি না। এই মূহুর্তে আয়াশ অর্থাৎ যার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছে তার হাত ধরে থাকতে চাই আমি। এটা আমার কাছে সব থেকে আত্মসম্মানের। এবার আমাকে যেতে দাও। আয়াশ যেকোন সময় উঠে পড়তে পারেন ঘুম থেকে। উনি তোমায় দেখলে ভালো হবে না।”
–“আজ এসে তুমি এসব কথা বলছ? আজ এসে তোমার মনে হলো নিজের বরের সঙ্গে থাকায় তোমার কাছে সবথেকে বেশি আত্মসম্মানের। তাহলে আগে কেন মনে হয়নি?”
নীলাদ্রের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম আমি। দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে অনুশোচনার সুরে বললাম,
–“এটা আমার ভুল ছিল। আমি ভুল স্বীকার করছি। কারণ আমি তখন আয়াশকে ভুল বুঝেছিলাম। এখন যখন আমি বুঝতে পারছি মানুষটা ততটা খারাপ নয়। উনার জীবনের অতিত নিয়ে উনি আজও এতোটাই ডিপ্রেসড যে উনি কখন কি করেন বোঝেনই না। একটা কথা কি জানো? মানুষ খারাপ হয়ে জন্ম নেয় না। তাকে খারাপ বানানো হয়। আর খারাপ বানানোর পেছনে আমাদের এই আশেপাশের পরিবেশ, মানুষের ঘটনাই দায়ি থাকে। আমার কাছে এখন এসে মনে হচ্ছে বিয়ে করা স্বামীকে ফেলে রেখে প্রেমিকের সঙ্গে হাত ধরে চলে যাওয়া ঠিক নয়। একবার হলেও তাকে বোঝার বা শোধরাবার চেষ্টা তো করাই যায়। আর আমার কি মনে হয় জানো? আমি এই শোধরানোর চেষ্টায় সফল হচ্ছি। অনেক রাত হয়েছে। তুমি ফিরে যাও। আমি যাচ্ছি।”
বলেই নীলাদ্রের পাশ কাটিয়ে যেতে শুরু করলাম আমি। দুইধাপ পা ফেলেই আবারও পিছু ফিরে বললাম,
–“অযথা ঢাকায় পরে না থাকায় ভালো। আমার মনে হয় তোমার ফিরে যাওয়া উচিত। আর না ফিরে যেতে চাইলেও সমস্যা নেই। শুধু আমার পিছু করা ছেড়ে দাও প্লিজ।”
আরো কয়েকধাপ পা ফেলে চলে আসতে নিলাম। তৎক্ষনাৎ বেশ শক্ত ভাবে পেছন থেকে আমার হাতটা ধরে নিল নীলাদ্র। মনে হচ্ছে এবার আমার হাতের ভেতরের সব হাড় ভেঙে যাবে। চোখমুখ ব্যথায় জড়িয়ে এল।
–“আমার হাত ছাড়ো। কি করছ তুমি? যেতে দাও আমাকে। এটা কেমন অসভ্যতা নীলাদ্র?”
–“অসভ্যতার কি দেখলে আনিশা? এইতো কয়েকদিন আগেই তো আমার হাত ধরে পালিয়ে আসতে চাইতে। এখন আমি নিজ থেকে হাত ধরছি বলে অসভ্য হয়ে গেলাম?”
–“হ্যাঁ। বিবাহিত নারীর হাত পরপুরুষ ধরা উচিত নয়। এতে বিবাহিত নারীর অস্বস্তি লাগে। এটা বোঝা উচিত।”
কথাটা না বলতে চাইলেও যেন অজান্তে মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল। কথাটা কিভাবে বললাম সেটা নিজেরও জানা নেই আমার। তবুও নীলাদ্র ঠাঁই আমার হাত ধরে থাকল আমার হাত আরো শক্ত করে মুচড়ে ধরতেই ওর ফোনের মেসেজের টোন বেজে ওঠায় আমার হাত ছেড়ে দিল সে। আমি নিজে থেকে ছিটকে দূরে এসে হাঁপাতে লাগলাম। এই নীলাদ্র সম্পূর্ণ পাল্টে গিয়েছে। আগে আমার মতের বিরুদ্ধে কখনো স্পর্শ করার কথা ভাবেও নি। আজ ওকে ভয় লাগছে আমার। ভয়াতুর দৃষ্টিতে ওর দিকে চাইলাম। ওর মনোযোগটা ফোনে। যেন খুব গুরুত্বপূর্ণ কোনো কিছু দেখছে। কয়েক সেকেন্ড বাদেই ফোনটা পকেটে নিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল,
–“আই এম সরি আনিশা। তুমি ঠিক। আমি ভুল। ঠিকই তো। এখন আমার তোমায় স্পর্শ করা উচিত নয়। আমি আর তোমায় ফলো করব না। যেটুকু আশা ছিল সেটা ভেঙেচুরে দিলাম। আশেপাশে পাবে না আমায়।”
–“ভালো এটাই হবে তোমার, আমার আর আয়াশেরও পক্ষ থেকেও। আমিও ক্ষমাপ্রার্থী তোমার কাছে।”
বলেই ভয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে এলাম। আর পেছন ফিরে তাকানোর সাহসটা হলো না আমার। ঢোক গিলে একপ্রকার ছুটে এসে এপার্টমেন্টের লিফটের সুইচ চাপলাম। যদিও একা লিফটে উঠতে ভয় লাগবে। তবুও তাড়াতাড়ি যেতে চাই আমি। লিফটের দরজা খুলতেই যেই ভেতরে পা রাখতে যাব সাদা আলোয় চকচক করে উঠল একটা স্পর্শ পুরুষের চেহারা। ভয়টা যেন বেড়ে দ্বিগুন হয়ে গেল। এক আকাশ বিস্ময় নিয়ে আয়াশের মুখের দিকে চেয়ে থাকলাম। আমায় আরো হতবিহ্বল করে দিয়ে আয়াশ স্মিত হেঁসে বললেন,
–“তাড়াতাড়ি এস ভেতরে। লিফট বন্ধ হয়ে যাবে।”
–“আ… আপনি! আপনি তো ঘুমিয়েছিলেন আয়াশ। কখন ঘুম ভে…ভেঙেছে আপনার?”
আয়াশের ভাবান্তর হলো না। লিফটের চকচকে দেয়ালে ঠেস লাগিয়ে বুকে দুটো হাত জড়িয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন উনি। মুখে এখনো সেই হাসি। অন্যসময় হলে হাসিটা আমার কাছে স্বাভাবিক ও সুন্দর লাগতো। কিন্তু আজ ভয়ানক লাগছে উনার হাসি। আচমকা উনি এগিয়ে এসে আমার হাত ধরে টেনে লিফটের ভেতরে ঢুকিয়ে নিলেন। সঙ্গে সঙ্গে লিফটের দরজা লেগে গেল। আমাকে নিজের বাহুডোরে জড়িয়ে নিলেন উনি। আমি পালাক্রমে ঢক গিলে যাচ্ছি।
–“চোখমুখ ফ্যাকাশে কেন তোমার? মনে হচ্ছে ভূত দেখেছ! আমি কি দেখতে আগের থেকে খারাপ হয়ে গেছি?”
–“না ওই আসলে…”
–“নীলাদ্র কিন্তু বেশ ননসেন্স ছেলে। ডাফার একটা। নয়ত এতো জোরজবরি কেউ করে বল তো! তাও অন্যের বউয়ের ওপর?”
স্থির হয়ে গেলাম এবার আয়াশের কথা শুনে। হঠাৎ মনে হলো উনি বোধহয় আমাদের কথোপকথন শুনে ফেলেছেন। তৎক্ষনাৎ উনাকে আসল ব্যাপারটা বোঝানোর জন্য উঠেপড়ে লাগলাম।
–“না আয়াশ। আসলে ও তো শুধু দেখা করতে এসেছিল আর এটা জিজ্ঞেস করতে এসেছিল যে…”
মাথা নাড়িয়ে আমার ঠোঁটের ওপর আঙ্গুল দিয়ে চুপ করে দিয়ে আয়াশ। মুচকি হেঁসে একটু নিচু হয়ে বললেন,
–“কোনো অযুহাত দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আমি সব শুনেছি। এ টু জেড। ভাগ্যিস তুমি বলেছ যে আমার সঙ্গে থাকতে চাও সেকারণে ওই ডাফার সঙ্গে তুমিও বেঁচে গেলে। আমি তো হাতে থাকা একটা লোহার লাঠি নিয়ে যাচ্ছিলাম সবে। আজ আমার হাতে খুনখারাপি হয়ে যেত। সেটা তুমি বাঁচিয়ে নিলে নিশাপাখি।”
বলেই আমায় নিজের বুকের সঙ্গে জড়িয়ে নিলেন আয়াশ। আমার ঘাড়ে নিজের ঠোঁটজোড়া দিয়ে অসংখ্য চুমু দিয়ে তৃপ্তিদায়ক কন্ঠে বলেন,
–“তুমি কি জানো আজ আমি খুব খুশি?”
–“তাই কিন্তু কেন?”
–“তোমার জন্য। আজ তুমি আমার আর নীলাদ্রের মাঝে আমাকে বেছে নিয়েছো। যেন আমি চাঁদ হাতে পেয়েছি। কিন্তু তুমি আমার জীবনে চাঁদের থেকে কম নও। আর এই চাঁদকে আমি নিজের সঙ্গে বেঁধে রাখব। ছেড়ে দেব না। একমুহূর্তের জন্যও না।”
আমি হেঁসে দিয়ে বললাম,
–“আপনার সঙ্গে থাকব বলেছি। ভালোবেসে থাকব সেটা তো বলিনি। তাহলে এতো খুশি কিসের মি. রায়হান?”
–“ও তুমি বুঝবে না। বিয়ের আগে তুমি বলেছিলে তুমি নীলাদ্রকে ভালোবাসো। সেই হিসেবে ধরতে গেলে আজও যদি তুমি তাকে ভালোবাসতে তাহলে ওর হাত ধরে চলেই যেতে হয়ত। ওর কথা মানতে। তুমি তা করো নি। তুমি আমাকে ভালোবাসো বল কিংবা না বলো! আমি তোমার কর্মকান্ডে বুঝে নেব তুমি আমায় ভালোবেসেছ।”
লিফটের দরজা খুলে গেল। আমরা পৌঁছে গেছি সাত নম্বর ফ্লোরে। আয়াশ আমায় ছেড়ে দিয়ে আমার হাত ধরে বেরিয়ে এলেন। ডান দিয়ে এসে দরজা খুলে ঢুকে পড়লাম আমরা। ঘরে ঢুকতেই অতিরিক্ত আলো চোখে পড়তেই চোখ বুঁজে ফেললাম আমি। কেমন জানি লাগছে চোখে। একটু জ্বালাপোড়া করছে চোখে। হাত দিয়ে চোখ ঢেকে ফেলতেই আয়াশ কিছুটা ঘাবড়ে গেলেন। সব লাইট ওফ করে নিয়ে সফট লাল আর নীল লাইট জ্বালিয়ে দিলেন। আর চোখের ওপর থেকে হাত সরিয়ে আমায় এক হাত দিয়ে জড়িয়ে নিলেন আয়াশ।
–“আর ইউ ওকে? তোমার চোখে তো প্রবলেম হচ্ছে!”
–“একটু জ্বালাপোড়া করছে আয়াশ।”
–“এটা মনে হয় দিনের বেলা এমনি ঘর থেকে বেরিয়েছিলে আমার পিছু নিয়ে সেকারণেই হচ্ছে। তোমায় বলেছিলাম তো যে অতিরিক্ত আলোর দিকে আসবে না। এতো অবাধ্য কেন তুমি?”
ধমকের সুরে বলে উঠলেন আয়াশ। আমি উত্তরে অসহায় মুখে বললাম,
–“আমি তো আপনার জন্যই…”
–“আমার জন্য অনেক ভেবেছো তুমি। এখন একটু নিজের জন্য ভাবলে খুশি হতাম। চলো ঘরে চলো।”
আমার হাত ধরে নিয়ে এলেন ঘরে। বেডে বসিয়ে দিয়ে টিমটিমে আলো জ্বালিয়ে দিলেন। এই ঘরে উজ্জ্বল আলো জ্বালানোর ব্যবস্থা নেই। লাল লাইটের ওপর হার্ট শেপের আবরণ দেওয়া। আমার চোখ দিয়ে পানি পড়তেই অস্থির হয়ে উঠলেন আয়াশ। দ্রুত ডক্টরকে কল করে জেনে নিলেন এই পরিস্থিতিতে কি করা উচিত।
–“সারাদিনে কিছু খেয়েছো?”
নিরব চোখে তাকালাম। যদিও উনাকে ঝাপসা দেখছি। আমার তাকানোর মানে বুঝে নিলেন উনি। প্রথমে চোখে একটা ড্রপ দিয়ে চলে গেলেন খাবার আনতে। আমি চোখ বুঁজে বসে রইলাম।
একসঙ্গে খেয়ে আমায় শুইয়ে দিলেন আয়াশ। আমার চোখের পাতায় চুমু খেয়ে এসির টেম্পারেচার বাড়িয়ে দিয়ে আমার পাশে শুয়ে পড়লেন উনি। বাড়িতে একটাই বেডরুম হওয়ার কারণে বর্তমানে আমাদের একই বিছানায় থাকতে হয়। আমিও তাতে আপত্তি করিনি। কারণ আপত্তি করার সব রাস্তা তো আয়াশ নিজে বন্ধ করে দিয়েছেন। পাশে একটা পুরুষ ঘুমিয়ে থাকা যেন অন্যরকম অনুভূতি! যতই হোক সে স্বামী। রাত কাটানোর ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আলাদা। অদ্ভুত সেই মূহুর্ত। কিছুটা ভালো লাগা আর কিছুটা অস্থিরতা মিশে থাকে।
গভীর রাতে যখন গভীর ঘুমে মগ্ন তখন পাশের আয়াশের নড়াচড়া করায় ঘুমটা হালকা হয়ে এলো আমার। উনি একবার এদিক আর একবার সেদিক করছেন। যেন শুয়ে থেকে শান্তি পাচ্ছেন না।
আমি কোনোমতে ঘুম ছাড়িয়ে বলার চেষ্টা করলাম,
–“কি হয়েছে? এমন করছেন কেন?”
–“আমার মাথাব্যথা করছে। প্রচন্ড ব্যথা করছে।”
ঘুমটা এবার এমনিতেই ছুটে গেল। তড়িঘড়ি করে উঠে বসলাম। পাশের ড্রিমলাইটের হালকা আলোতে স্পষ্ট আয়াশের চেহারা দেখা যাচ্ছে। ফর্সা মুখটা কুঁচকে রেখেছেন উনি। আর লাল টকটকে হয়ে গিয়েছে একেবারে। চুল একহাত ধরে টেনে ধরে রয়েছেন। আমার হাত নিজের হাতের কাছে টেনে নিলেন উনি। নিজের বুকের সাথে ঠেকিয়ে কাতর কন্ঠে বললেন,
–“খুব অস্থির লাগছে। কি করব বলে দাও!”
উপায়ন্তর না পেয়ে আয়াশের মাথার চুলে হাত দিয়ে বুলিয়ে দিলাম আমি। আয়াশ চোখ বুঁজে শুয়ে থাকলেন। আশপাশটা নিরব। একটা সময় ছটফট করতে করতে ঘুমিয়ে গেলেন উনি। মনে মনে ভেবে নিলাম কাল ডক্টরের কাছে যাওয়া দরকার।
আমিও শুয়ে পড়লাম আয়াশের পাশে। আমার একটা হাত এখনো উনার বুকের সঙ্গে লাগিয়ে রেখেছেন উনি। আমি মুচকি হেঁসে চোখ বুঁজে নিলাম।
পরেরদিন সকালে,
–“আপনার ধারণা একদম ঠিক মিসেস. রায়হান। মি. রায়হান এতোদিন ড্রাগ এডিক্টেড হয়ে পড়েছিলেন। আর আপনি আমাকে যেসব ইনজেকশনের সিরিজ আর ব্যাগ দিয়েছেন সেখানে ড্রাগস ভর্তি। আর এসব ড্রাগস একেবারে মানুষের কোনো ক্ষতি করে না। কিন্তু ধীরে ধীরে আপনার মন, মাথা, মস্তিষ্ক কাবু করে নেবে। আপনি নিয়মিত যদি এটা নিতে থাকেন তবে একদিন এই ড্রাগস না পেলে আপনি অস্বাভাবিক আচরণ করে ফেলবেন। পাগল হয়ে যাবেন। মাঝে মাঝে আপনার কিছুই মনে থাকবে। এভাবে ধীরে ধীরে জীবনটা শেষ হয়ে যেতে পারে।”
ডক্টরের কথায় দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে আয়াশের দিকে তাকালাম আমি। আয়াশও আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। উনার দৃষ্টি বেশ তীক্ষ্ণ। যেন ভেতরে ভেতরে রেগে উঠছেন উনি। কিন্তু কার ওপর রাগছেন সেটা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।
ডক্টর থেমে আবারও বললেন,
–“আর মি. রায়হান বিগত কয়েক বছর ধরে এই ড্রাগস নিয়ে আসছেন। উনার ভেতরে যত ক্ষতি হয়েছে তা আন্দাজও করা সম্ভব নয়। উনাকে সারিয়ে তোলা একটু কঠিন বটে তবে অসম্ভব নয়। তবুও যে সময়ের আগেই উনি আমার কাছে এসেছেন সেটা কিন্তু ভালো। সঠিক মেডিটেশন আর কিছু সামান্য মেডিসিন নিলেই হয়ত ঠিক হয়ে যাবেন। মাঝে মাঝে অস্বাভাবিক আচরণ করে উঠতে পারেন ঠিক হবার আগে সেটা কিন্তু আপনাকেই সামলাতে হবে মিসেস. রায়হান।”
আমার উদ্দেশ্যে শেষ কথাটা বলে উঠলেন উনি। আমি নিচু সুরে বললাম,
–“আমি সামলানোর সম্পূর্ণ চেষ্টা করব।”
–“আর হ্যাঁ মি. রায়হানের আরো বেশ কিছু চেক-আপ করেছি। সেটার রিপোর্ট এলে বোঝা যাবে উনার কেমন মেডিসিনস আর মেডিটেশন দরকার। তবুও এখন কিছু মেডিসিন লিখে দিচ্ছি আর ঘুমের ঔষুধ। এসব উনার মস্তিষ্ক শান্ত রাখবে।”
আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে আয়াশের দিকে তাকালাম। উনার হাবভাব ঠিক লাগছে না আমার। উনার ঘাড়ের রগ ফুলে গিয়েছে। ভেতরে ভেতরে ফুঁসছেন।
ডক্টরের চেম্বার থেকে বেরিয়েই আমায় এপার্টমেন্টে পৌঁছে দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেলেন কোথাও। আমায় কিছুই বলে গেলেন না। সারাটাদিন আমার চিন্তায় কাটল। বিকেলের দিকে পিহুর সঙ্গে যখন বসে ছিলাম তখনই কলিংবেল বেজে ওঠায় আয়াশ এসেছেন ভেবে ছুটে যাই। আর সত্যিই উনি এসেছেন। ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত অবস্থা উনার। ধীর পায়ে ঘরে প্রবেশ করলেন উনি। পায়ের জুতো ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে সোফায় এসে গা এলিয়ে দিলেন। আমি চিন্তিত সুরে উনাকে জিজ্ঞেস করলাম,
–“কোথায় গিয়েছিলেন?”
–“মানুষকে ঠকানো কতটা সহজ তাই না?”
আমার কথার উত্তর না পেয়ে উনার অন্য কথায় চোখজোড়া স্থির হয়ে এলো আমার। হঠাৎ এসব কথা কেন বলছেন বুঝছি না আমি। আমি প্রশ্ন করলাম,
–“এসব কথা কেন বলছেন হঠাৎ?”
–“আকাশ কলেজে লাইফের ফ্রেন্ড ছিল। এতো দিনের বন্ধুত্বের এই ফায়দা তুলবে জানা ছিল না। ব্লাডি, ইডিয়ট! ওর সঠিক স্থান আজ দেখিয়ে এসেছি।”
–“লোকটার সঙ্গে কি করেছেন আপনি?”
–“ও এখন পুলিশ কাস্টারিতে। সময়মতো পারমানেন্টলি জেলে থাকারও ব্যবস্থা করে দেব। বিশ্বাসঘাতক মানুষের কোনো ক্ষমা হয় না।”
বলে কিছুক্ষণ বড় বড় শ্বাস নিলেন উনি। তারপর উনার হাতে থাকা দুটো কাগজ আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। আমি ভ্রু কুঁচকে আয়াশের দিকে তাকাতেই ইশারায় কাগজগুলো নিয়ে দেখতে বললেন। আমি উনার কথামতো কাগজ নিয়ে প্রথম কাগজটা খুললাম। তৎক্ষনাৎ চোখজোড়া সেখানেই থমকালো। আমি কি ঠিক দেখছি না ভুল সেটা ভাবতে শুরু করলাম। বিস্ময় নিয়ে আয়াশের দিকে তাকালাম।
চলবে….
[বি.দ্র. গল্পের মোড় এখনো আসেনি। ভেবেছিলাম এই পর্বে মোড় আনতে পারব কিন্তু হলো না। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]