হিমি পর্ব-১৭

0
1039

হিমি
লেখনী- সৈয়দা প্রীতি নাহার

১৭.

নির্জন রাস্তায় বড়সড় সাদা রঙের গাড়ি এসে থামতেই গেইট পেরিয়ে উঁকি দিলেন আমিনা বেগম। এই গাড়িতে হিমি আছে? হিমি এসে গেছে? এসব ভাবনার মাঝে ড্রাইভিং সিটের দরজা খোলে বেরিয়ে এলো সুঠাম বলিষ্ঠ এক যুবক। পড়নে কালো রঙের ট্রাউজার, গায়ে বাদামী টিশার্ট। চোখে চশমা। চেহারায় উদ্বিগ্নতা স্পষ্ট। দ্রুত পায়ে অপর প্রান্তের দরজা খোলে কাউকে আলতো করে ডাকতে লাগলো সে সুদর্শন যুবক। আমিনা বেগম তাহিরকে পর্যবেক্ষন করতে করতেই পা টিপে টিপে এক দু পা এগুলেন। তাহিরের হাতে ভর দিয়ে হিমি বেরুলো গাড়ি থেকে। ল্যাম্প পোস্টের আলোয় দেখা গেলো তার শুকিয়ে যাওয়া ফর্সা মুখটা। জ্বরে কাতর হয়ে পরেছে সে। তাহির নিজের শরীরের উপর হিমির ভার নিয়ে তার কোমর জড়িয়ে ধরে এগিয়ে এলো গেটের কাছে। আমিনা বেগম দৌড়ে এলেন। হিমিকে এক হাতে জড়াতেই তাহির হিমিকে ছেড়ে সরে দাঁড়ালো। আমিনা বেগম উত্তেজিত গলায় বললেন,

‘হিমি? ‌তাকা না! ও তাকাচ্ছে না কেনো? আহা,,, গা কি গরম হয়ে আছে।’

তাহির আমিনা বেগমকে আশ্বস্ত করে বললো,

‘ঘুমে ঢুলছে। জ্বরের কারনে হুশ‌ও খুব একটা নেই। ওকে ঘরে নিয়ে কিছু খাইয়ে শুইয়ে দিন। রেস্টের প্রয়োজন।’

কথাটা বলে গাড়িতে ফিরে গেলো তাহির। পেছনের সিট থেকে ছোট একটা প‌্যাকেট এনে ধরিয়ে দিলো আমিনা বেগমের হাতে। তিনি কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকালেন। তাহির বললো,

‘এতে মেডিসিন আছে। কখন খাওয়াতে হবে সেটাও লিখা আছে। সময় মতো খেলে তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে। খেয়াল রাখবেন ওর। আসি।’

আমিনা বেগম উজ্জল চোখে তাকিয়ে মাথা দুলালেন। তাহির ফিরে যেতে গিয়েও পিছু ফিরে তাকালো। নম্র গলায় বললো,

‘হিমি শারীরিক ভাবে যতোটা অসুস্থ মানসিক ভাবে তার চেয়েও অধিক অসুস্থ। আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি ওর খুব কাছের কেউ। আপনি হয়তো সবটা জানেন ওর ব্যাপারে। ওর সাথে কি করে থাকতে হবে, কি করে ওকে সামলাতে হবে কিছুই অজানা নয় আপনার। তবুও বলবো, আরো একটু বুঝুন ওকে। নিজেকে খুব একা ভাবে হিমি। ওর মতে ও সত্যিই একা। জ্বরের ঘোরে অনেক গোপন কথা বলে ফেলেছে আমায়। যা আমার জানা উচিত হয় নি। গাড়িতেও এক সেকেন্ডের জন্য মুখ বন্ধ করে নি। অনেক কথাই এখনো ভেতরে জমা আছে। সময় নিয়ে সেগুলো শুনুন। একজন সাইকিয়াট্রীস্ট হিসেবে আমার বিশ্বাস যেদিন মন খোলে সব কথা বিশ্বস্ত কাউকে বলতে পারবে, সেদিন ওর মনের অসুখ দূর হবে। ও ভালো থাকবে। সত্যিই ভালো থাকবে। আল্লাহ্ হাফেজ!’

আমিনা বেগম মুগ্ধ হয়ে শুনলেন ওর কথা। বুক ভরে নিঃশ্বাস টানলেন। এর আগে তো কেউ হিমিকে নিয়ে এসব ভাবে নি। এই ছেলে কেনো ভাবলো? কি করেই বা ভাবলো? সাইকিয়াট্রীস্ট বলে? সাইকিয়াট্রীস্টরা সব বুঝে যায়? তাহলে তো হিমিকে সাইকিয়াট্রীস্টের কাছে নিয়ে যেতে হবে। হিমি কাউকে কিছু বুঝতে দিতে চায় না। ওরা ঠিক বুঝে যাবে। ওদের থেকেই সব জানবেন নাহয়। তারপর হিমিকে সামলে নেবেন। জন্ম না দিলেও বড় করেছেন। মা তো। কথাগুলো ভেবে মৃদু হেসে হিমির হাত কাধে নিয়ে জড়িয়ে ধরে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করলেন। হিমি বিরবির করে কথা বলছে। আমিনা বেগম স্মিত গলায় বললেন,

‘শরীর বেশি খারাপ করছে মা? এক্ষুনি ঘরে চলে যাবো আমরা। মাথা ব্যাথা করছে? হিমি? জেগে আছিস?’

হিমি এসবের উত্তর দেয় না। একা একাই বকবক করে। বলতে থাকে কিছু কথা। আমিনা বেগম শুনতে পান না তার শব্দগুলো। শুনলেও বুঝতে পারেন না কথার তাৎপর্য। হিমির গলা জড়িয়ে যায়। কন্ঠ আড়ষ্ট হয়। সব কথাই গুলিয়ে ফেলে। হুট করেই ফুঁপিয়ে উঠে। আবার হাসে। হাত নাড়ায়। মাথা দুলানোর চেষ্টা করে। পা দুটো অবস হয়ে আসে। আমিনা বেগম টেনেই ঘরে নিয়ে যান তাকে। খাটে শুইয়ে আলমারি থেকে কম্বল বের করেন। গলা থেকে পা অব্দি মুড়িয়ে দেন। ডিম লাইট জ্বালিয়ে রান্নাঘরে ছুট লাগান। গরম গরম ভেজিটেবল স্যুপ করে নিয়ে আসেন। হিমির মাথা কিছুটা উচু করে কয়েক চামচ স্যুপ খাওয়ান তাকে। হিমি বাঁধা দেয় এবার। মুখ সরিয়ে নেয়। আমিনা বেগম বিরক্তি নিয়ে বেরিয়ে যান। একটা বাটিতে জাউভাত নিয়ে হাজির হন। এবার‌ও দু এক চামচের বেশি খায় না সে। আমিনা বেগম হাল ছেড়ে দেন। তাহিরের দেয়া ঔষধ দেখে ট্যাবলেট খোলে জোর করে মুখে ঢোকান। ছোট থেকেই ঔষধ খেতে চায় না। ছুড়ে ফেলে দেয়। নাহয় মুখ থেকে বের করে দেয়। বড়মাই তার জোর জবরদস্তি করে মুখ টিপে খাওয়ান। এবার‌ও তাই। হিমিকে পানি খাইয়ে মুখ আঁচলে মুছিয়ে দিয়ে খাটে আগের মতোই শুয়ান তিনি। ঠান্ডা পানি আর ছোট্ট তোয়ালে এনে কপালে জলপট্টি দিতে শুরু করেন। হিমির জ্বর কমছে না। বাড়ছে। শরীরের তাপ বেড়ে আগুনের মতো হচ্ছে। হিমির বকবকানি বাড়ে। আমিনা বেগমের হঠাৎ‌ই ভয় হয়। হিমি কপালে উষ্ণ পরশ দিয়ে চোখের জ্বল ফেলেন তিনি। মুহিব রহমানকে ডাকবেন কি না ভেবে পান না। নিজেকে অসহায় মনে হয় ওনার।

ভোরের আলো ফুটেছে কয়েক ঘন্টা হলো। হিমির মাথার কাছে এখনো বসে আছেন আমিনা বেগম। নির্ঘুম রাত কাটিয়ে ক্লান্ত চেহারায় উদ্বিগ্নতা ছেয়ে আছে। এখনো জ্বর ছাড়ে নি। চোখ খোলে নি হিমি। আমিনা বেগম এক মিনিটের জন্য‌ও তাকে একা ছাড়েন নি। সকালের নাস্তাটাও তৈরি করেন নি। জেদি গলায় জা কে বলে দিয়েছেন যে যা খেতে চায় যেনো নিজে বানিয়ে নেয়। হিমিকে ছেড়ে এক চুল‌ও নড়বেন না তিনি। রাদিবা দরজার কাছ থেকেই ফিরে গেছেন তৃতীয় বারের মতো। মতিউর রহমান ফজরের নামাজের পর হিমির জ্বরের খবর পেয়েছিলেন। ছোট ব‌উমাই দিয়েছেন। কিন্তু দেখতে আসেন নি তিনি। যে মেয়ের কাছে পরিবারের সম্মানের কোনো দাম নেই তার অসুস্থতায় উতলা হয়ে কাজ নেই। জ্বর ঠিক হয়ে যাবে। বেশিদিনের ব্যাপার নয়। ঠিক হলেই আবার শুরু হবে তার লাফালাফি। মতিউর রহমান দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। ছোটবেলায় মেয়েটাকে বেধে রাখলে এ দিন দেখতে হতো না ওনার। ভুল হয়ে গেছে। অনেক বড় ভুল।

__________________

ক্যাফেতে চেনা পরিচিত টেবিলে পাঁচজন বসে আড্ডায় মশগুল। তাদের আড্ডার টপিক হলো ‘টাকা’! টাকা ছাড়া পৃথিবীতে টিকে থাকা বৃথা এমন টাইপ নয় বরং টাকা অর্জনের সহজ উপায় টাইপ। বাবা মায়ের সাথে এক প্রকার যুদ্ধ করেই শহরে পড়তে এসেছিলো সোহিনী। প্রথম দু মাস বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে থাকতো সে। কিন্তু বোনের বাড়িই বা কদিন থাকা যায়? বাধ্য হয়েই হোস্টেলে রোম নিতে হলো তাকে। টাকার জোগার করতে কয়েকটা টিউশনি করাতো। নিজের খরচ নিজেকেই চালাতে হবে। যদিও বড় বোনের স্বামী মাসে কিছু টাকা তাকে পাঠাতো তাও বন্ধ হয়েছে বাচ্চা হ‌ওয়ার পর। এখন তাদের সংসারে একজন সদস্য বেশি। তার জন্য‌ও কিছু খরচ করতে হয়। এসবের মধ্যে সোহিনী এক উটকো ঝামেলা। খুব কষ্ট করেই চলছিলো সে। ঠিক সেই সময়টায় সুইসাইডের মতো বিশ্রী কাজটা করে ফেললো। ফলাফল হোস্টেল কর্তৃপক্ষ সোহিনীকে ওখানে ফিরে যেতে মানা করলো। হোস্টেলের একটা মান সম্মান আছে! তাছাড়া ওকে দেখে যদি আরো মেয়েরা আত্মহত্যার প্ররোচনা পায়? তখন কি হবে? সোহিনী অকুল পাথারে পরেছিলো। দেবদূতের মতো দোহা এসে দাঁড়ালো। নিজের পরিবার ছেড়ে ছুড়ে ছোট্ট একটা এপার্টমেন্ট ভাড়া নিলো। একসাথে দুই বান্ধবী থাকতে শুরু করলো। টাকার পরিমাণ বেশি হলেও দুজনে মিলেমিশে ভাড়া দিতে পারতো। হুট করেই দুইটা টিউশনি চলে গেলো সোহিনীর হাত থেকে। এক হাজার টাকার লস! কয়েক জায়গা থেকে মাসের শেষেও টাকা পাচ্ছে না। চাইতেও লজ্জা লাগছে।স্যামিস্টারের ফি দেয়ার‌ টাকা নেই তার কাছে। বাসার টাকাটাও দিতে পারবে কি না জানে না সে। সামনে আরো দু একটা টিউশনি যেতে পারে বলে মনে হচ্ছে। বাচ্চাগুলো শয়তানের লিডার। রাগি গলায় কিছু বললেই শহুরে বাবা মা তেড়ে আসে!

‘টিউশনি খুঁজা লাগবো না কি?’

সূর্যের কথায় সোহিনী উৎকন্ঠা নিয়ে বললো,

‘যা পারিস কর দোস্ত! আমারে বাঁচা!’

ইমন বাঁধা দিয়ে বললো,

‘আজাইরা কথা! আর কতো টিউশনি করাবি তুই? সময় পাবি এতো?’

‘সময় বের করে নেবো। দরকার পরলে ভোরের আলো ফোটার আগেই পড়াতে চলে যাবো। মাঝরাত হলেও চলবে।’

মেঘ সোহিনীর মাথা চাটি মারলো। বললো,

‘তুই পড়াতে গেলেই যে ওরা পড়তে বসবে এমন তো না। এতো ভোরে কেউ পড়ে? না কি মাঝরাতে পড়ে? আর তোদের বাড়ির মালিক নাকি স্ট্রিক্টলি বলে দিয়েছে রাত নয়টার পর বাইরে থাকা যাবে না!?’

‘হ্যা তো!’

‘যদি তাই হয় তবে তুই রাতে পড়াবি কি করে? গাধী!’

সোহিনীর মুখ ছোট হয়ে যায়। দোহা অসহায় গলায় বলে,

‘কতো করে বললাম এ মাসের টাকা আমি দিয়ে দেই পরে জোগার করে মিটিয়ে দিস। না চলবে না ওনার! ধারেও টাকা নেবে না। এসবের মানে কি বলতো?’

সোহিনী মুখ ফুলিয়ে বললো,

‘ইটস এবাউট মাই সেল্ফ রেস্পেক্ট!’

সূর্য হাই তোলে বললো,

‘তোর সেল্ফ রেস্পেক্টরে গুল্লি মার তো। বেশি ক্ষনের জন্যে না। একটু সময়ের জন্যে। পরে আবার অপারেশন করে গুলি বাইর করিছ।’

সোহিনী ভ্রু কুঁচকালো। সূর্য টেবিলে দু হাত রেখে সোহিনী আর মেঘকে দেখলো। হুট করেই বললো,

‘ওই মেঘ? তুই বিয়া কবে করবি?’

‘মেয়ে পাইলে!’

‘মাইয়া পাইয়া গেছি। কবুল বলার লাইগা তৈরি হো!’

মেঘসহ বাকিরাও গোল গোল চোখে তাকালো। সূর্য ভাবলেশহীন গলায় বললো,

‘বিষয়টা খুব সিম্পল। মেঘের নিজস্ব বাড়ি ঘর বাবা মা থুক্কু ভালো বাবা মা মানে পরিবার। ভবিষ্যতের এইম‌ও ঠিক করে রাখছে ব্যাটা। খালি দরকার ব‌উ। আমাগো সোহিনীর আবার থাকার জায়গার দরকার, একজন বিশ্বস্ত ভালা মানুষ ভালোবাসার জন্য দরকার। তো এই দুইজন এক হ‌ইলেই সমস্যা ডিসমিস। তোরা বিয়া কর। আমরা আছি।’

সোহিনী আর মেঘ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। দোহা আশ্চর্যান্বিত গলায় বললো,

‘তোদের মধ্যে কিছু চলে না কি? আমি দেখি কিছুই জানি না!’

‘জানবিও না বেক্কল। চুপ কর। এসব কিছুই না। সূর্য একদম মজা করবি না। মন ভালো নেই আমার।’

সোহিনীর বিরক্তি ভরা কথার জবাবে সূর্য টেবিলে আঙুল দিয়ে তবলার মতো বাজনা তুলে শব্দ মাথা দুলিয়ে বললো,

‘বিয়ে করে ফেল দোস্ত। বিয়ে করলে মন ভালো হয়। আমি দেখছি। আমার বোনের‌ও মন খারাপ থাকতো। যেইদিন বিয়া করছে বিশ্বাস কর আজ অব্দি মন খারাপ অবস্থায় দেখি নাই তারে। ক‌ইরা ফালা বিয়া। ইমন? কাজি ধ‌ইরা আন!’

ইমন হাসলো। মেঘ গর্জে উঠে বললো,

‘থাপ্ড়াইয়া দাঁত ফালাই দিবো। শালা চুপ কর!’

‘উফ, ক‌ইছি না আমার ব‌ইনরে তোর লগে বিয়া দিমু না। এরপর‌ও শালা ডাকোছ ক্যারে? হারামী! আমার ব‌ইন ছোট। তোরে একটা ভালা মাইয়া দিলাম তাতেও হয় না? সোহিনী সামলা তোর হবু জামাইরে। সবার দিকে নজর ক্যান ওর?’

সোহিনী ব্যাগ উঠিয়ে দু তিনবার আঘাত করলো সূর্যকে। সূর্য বেসুরো গলায় গাইলো,

‘বুঝেনা সে বুঝেনা
সে তো আজ‌ও বুঝেনা
ভালো বুদ্ধিটারে
ছুড়ে ফেলে দিয়ে,,,,

সূর্যকে থামিয়ে দিয়ে উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো দোহা আর ইমন। হাসতে হাসতেই ইমন বললো,

‘সূর্যের কথার পিছনে লজিক আছে। জানিস তো, ছেলে মেয়ে দুজন কখনোই শুধু বন্ধু হয়ে থাকতে পারে না। এক না এক সময় ঠিক‌ই ভালোবাসে একে অন্যরে!’

‘সোহিনী ছাড়াও হিমি, দোহা আমার বন্ধু। এবার বল! আমি কি ওদেরকেও ভালোবাসবো?’

‘অবশ্য‌ই বাসবি! তবে ভালোবাসা টাইপ ভালোবাসা না বন্ধু টাইপ ভালোবাসা। সবার প্রতি ফিলিং আসে না মেঘ।’

‘তোরে কে বললো সোহিনীর প্রতি আমার কোনো ফিলিং আছে?’

‘তোর চোখের দৃষ্টি ফলো করে সেদিন দেখলাম ত্যারা চোখে সোহিনীরে দেখোস তুই! শাড়ি প‌ইরা যেদিন আইলো, উফ, তোর তো চোখ‌ই সরে না। কাহিনী কি মামা?’

সূর্যের ঠেস মারা কথায় বিষম খেলো মেঘ। সোহিনী চোখ নামিয়ে নিজের অস্বস্তি কাটাচ্ছে। মেঘ কথা ঘুরাতে বললো,

‘হিমি কোথায় রে? এখনো এলো না কেনো?’

দোহা ব্যাগ থেকে ফোন বের করে ডায়াল করলো হিমির নাম্বারে। রিং হতে হতে কেটে গেলো। আরো দু একবার ট্রাই করার পর ফোন উঠালো কেউ। দোহা শুধু ‘হিমি’ নামটা উচ্চারণ করেছিলো। আর কিছু বলতে হয় নি। আমিনা বেগম হিমির অসুস্থতার কথা জানিয়ে বলে দিয়েছেন কদিন আসবে না ওদের সাথে দেখা করতে। দোহার মুখটা কালো হয়ে গেলো। মুখ ফুলিয়ে বললো,

‘হিমি খুব অসুস্থ কাল থেকে। জ্বর। এখনো কমে নি। আন্টি বললেন কদিন আসবে না। ফোন করে যেনো না জ্বালাই।’

পাঁচটা চেহারায় খেলে গেলো তীব্র কষ্ট। হিমিকে দেখার আকুলতা। সোহিনী আবদার করেই বসলো,

‘হিমিকে দেখতে যাবো?’

ইমন থমথমে গলায় বললো,

‘না। আমরা নট এলাউড!’

দোহা ঠোঁট কামড়ে বললো,

‘তোরা নট এলাউড। আমরা না। আই মিন, আমি আর সোহিনী যেতেই পারি। উই আর গার্লস!’

‘মানে কি? তোরা যাবি আমরা যামু না? এইডা কোনো কথা?’

‘আর কি করা যাবে সূর্য? জানিস‌ই তো, দাদু রাগ করবে!’

‘বুড়া মানুষের এতো রাগ কেনো বুঝি না। এই লোকের লাইগা কলিজার দোস্তটারে দেখতেও যাইতে পারুম না? ধুর শালা।’

সূর্যের রাগের সাথে তাল মিলিয়ে রাগ লাগলো মেঘ আর ইমনের‌ও। তবে সোহিনী আর দোহা কবে, কখন দেখতে যাবে সেটাও ঠিক করে ফেললো।

চলবে,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here