হিমি
লেখনী- সৈয়দা প্রীতি নাহার
৬৭.
তখন মধ্যরাত। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সবাই। কোনো কোলাহল নেই, শব্দ নেই। ফ্যানের ক্যাট ক্যাট আওয়াজ ছাড়া আর কোনো আওয়াজও নেই। গভীর ভাবে খেয়াল করলে গাছের পাতা নড়ার আওয়াজ পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু এই সময়ে কেউ সে চেষ্টা করছে না। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে শ্রান্ত শরীরকে বিশ্রাম ব্যস্ত। হিমি বোধ হয় সবচেয়ে সুখকর কোনো স্বপ্ন দেখছিলো। ঘুমের মধ্যেও মিটিমিটি হাসছিলো সে। চেহারায় খুশি খুশি ভাব। দু হাতে জড়িয়ে আছে মোটাসোটা এক কোলবালিশ। গায়ে পাতলা কাঁথা। ঘরের জানালা ভেজানো। পর্দা গুটিয়ে রাখা। চাঁদের মৃদু আলো হিমির ঘরে প্রবেশ করে ঘরটা আবছা অন্ধকার করে রেখেছে। খোলা চুল বালিশের উপর এলিয়ে রাখা তার। খানিক পর পরই ঠোঁটে হাসি প্রশস্ত হচ্ছে। স্বপ্ন হারিয়ে যাওয়া হিমির ঘুম ভেঙে যায় মুঠোফোনের বিকট রিংটোনে। নিরবতা ভেঙে গুড়িয়ে যায়। ধরফরিয়ে উঠে বসে হিমি। হাত বাড়িয়ে বেড সাইড টেবিল থেকে মুঠোফোন হাতে উঠায়। স্ক্রিনের দিকে না তাকিয়েই কর রিসিভ করে সে। আবারও সব নিস্তব্ধ হয়ে পরে। যেনো এই নিরবতাই কাম্য এসময়। হিমি ক্ষীণ গলায় বলে,
‘কে?’
অপর প্রান্ত থেকে ভরাট গলায় জবাব আসে,
‘আমি।’
হিমি চমকায়। মুঠোফোন কান থেকে না সরিয়েই বলে,
‘আপনি এতো রাতে কল করলেন কেনো? বাড়িতে সব ঠিক আছে?’
তাহির জানায়,
‘হ্যা। ঠিক আছে।’
‘তাহলে মাঝরাতে কল দিয়ে আমায় জাগানোর মানে কি বাচ্চা ডাক্তার?’
‘আপনি ঘুমাচ্ছিলেন?’
আশ্চর্যান্বিত গলায় প্রশ্ন করে তাহির। হিমি অবাক হয়। বলে,
‘এই সময় না ঘুমিয়ে আমি কি ফুটবল খেলবো?’
রাগ হয় তাহিরের। গম্ভীর কর্কশ ধ্বনিতে বলে,
‘ঘুমান তাহলে। রাখছি।’
কথাটা বলেই ফোন কেটে দেয় তাহির। হিমি কান থেকে ফোন সরিয়ে স্ক্রিনে সময় দেখে। রাত দুটো বেজে পঞ্চাশ মিনিট। এমন সময় তাহির তাকে কেনো কল দিলো? দরকার ছিলো কিছু? কি দরকার থাকতে পারে তাহিরের? তাহিরের গলা শুনে তো মনে হলো না সে ঘুমাচ্ছিলো। তবে কি সে জেগে ছিলো? জেগে থেকে কাজ করছিলো? হিমির হঠাৎ মনে হয় তাহির বোধ হয় নাইট ডিউটি করছে। কাজের কোনো দরকারেই হয়তো তাকে ফোন করেছিলো। হিমি আবার তাহিরের নাম্বারে ডায়াল করে। একবার রিং হতেই ফোন উঠায় তাহির। হিমির ফোনের অপেক্ষাতেই ছিলো না কি লোকটা? কে জানে?
‘আপনি এখন কোথায়? হাসপাতালে?’
‘না। বাড়িতে। কেনো?’
ভ্রু কুঁচকায় হিমি। কৌতুহলী গলায় বলে,
‘আপনি ডিউটি থেকে কখন ফিরেছেন?’
‘এসব কেনো জিজ্ঞেস করছেন? আগে তো কখনো করেন নি?’
‘আগে ইচ্ছে করে নি তাই করিনি। এখন ইচ্ছে করছে তাই করছি। বলুন না!’
হিমির কন্ঠে কিছুটা বিরক্তি অনুভব করলো তাহির। শান্ত গলায় বললো,
‘এগারোটায়।’
‘তাহলে এখন জেগে আছেন কি করে? মানে কেনো জেগে আছেন? ঘুম নেই?’
‘না।’
‘কেনো? না কেনো?’
‘জানি না। সব কথার উত্তর দিতে পারবো না আমি।’
তাহিরের বিরক্তিমাখা কথা শুনে হাই তুলতে তুলতে হিমি বলে,
‘দিতে পারবেন না ভালো কথা। দিতে হবে না। ফোন কেনো করেছিলেন সেটা বলুন। এর উত্তর না দিতে হবে আপনাকে।’
তাহিরের স্পষ্ট জবাব,
‘ঘুম আসছিলো না আমার।’
‘তো?’
‘তো আর কি! আমি ভেবেছিলাম আপনারও হয়তো ঘুম আসছে না। তাই ফোন করেছিলাম।’
‘আপনার ঘুম আসছে না বলে আমার ঘুম আসবে না? এটা কোনো কথা? আজব!’
কিছুটা অভিমান মিশ্রিত শুনা যায় তাহিরের কন্ঠ,
‘সম্পর্ক তো আমার ঘুম আর আপনার ঘুমের নয়। আমাদের দুজনের।’
তাহিরের কথা বুঝে না হিমি। শুকনো ঠোঁটে জিহ্বা চালিয়ে বলে,
‘মানে?’
‘কিছু না। আপনার ঘুম পাচ্ছে নিশ্চয়। ঘুমান।’
এই কথা বলার পরও ফোন কাটে না তাহির। হিমিও কাটে না। কিছুক্ষন নিশ্চুপ হয়ে বসে থেকে চোখ উজ্জল করে তাকায় হিমি। প্রয়োজনীয় কিছু মনে পরেছে এমন ভাব করে বলে উঠে,
‘জানেন, একটু আগে একটা স্বপ্ন দেখছিলাম।’
‘ভালো করেছেন। ফোন কলের জন্য স্বপ্নটা পুরোপুরি দেখতে না পারলে ফোন কেটে ঘুমিয়ে পরুন। বাকি টুকুও দেখতে পারবেন।’
‘তার দরকার নেই। যতটুকু দেখেছি ততটুকুই বেস্ট।’
কথার পিঠে কিছুই বলে না তাহির। হিমি নিজ থেকেই বলে,
‘স্বপ্নে আপনি এসেছিলেন বাচ্চা ডাক্তার।’
‘আমি?’
‘হ্যা আপনি। আমি দেখলাম আপনি বিয়ে করছেন।’
‘হুয়াট?’
চটে যায় তাহির। এই মেয়েটা তাহিরের বিয়ে দেখে এতোটা খুশি হচ্ছে কি করে? সামান্য জেলাসি হচ্ছে না রাগ হচ্ছে না। নিজের বর অন্য মেয়েকে বিয়ে করছে সে স্বপ্নে সেটা দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে পরছে। অদ্ভুত!
‘হ্যা। আপনি খুব সুন্দর একটা পাঞ্জাবী পরেছিলেন। রঙটা হয়তো খয়েরি বা কমলা ছিলো। মনে নেই। আমি দেখলাম আপনি হাসছেন। শাশুড়ি মাও খুশি ছিলেন। আপনি হেঁটে এসে স্টেজে উঠলেন। স্টেজে লাল টকটকে বেনারসী পরে সেজে গুজে বসে আছে কনে। আর আপনি তাকে মালা পরাচ্ছেন। কনেও আপনাকে মালা পরাচ্ছে। কি কিউট লাগছিলো! জানেন কনে কে ছিলো?’
তাহির ধমকে উঠে বললো,
‘জানতে চাই না আমি। বোকা মেয়ে একটা। কার সাথে কার বিয়ে স্বপ্নে দেখে আনন্দে লাফাচ্ছে! একটুও মায়া দয়া হয় না? বুঝেন না কিছু? এসব আবোল তাবোল স্বপ্ন দেখেন কি করে?’
ভড়কে যায় হিমি,
‘স্বপ্ন কি আমার হাতে না কি? যে আমি যা দেখতে চাইবো তাই দেখাবে? স্বপ্ন তো স্বাধীন। যখন তখন যার তার ঘুমের ভেতর ঢোকে পরে। আমি কি করে বুঝবো?’
‘সেটা বুঝতে বলি নি। বলেছি আপনার স্বামীর সাথে অন্য একটা মেয়ের বিয়ে দেখে আপনার কষ্ট হয় নি? হিংসা লাগে নি?’
‘না। হিংসা কেনো লাগবে?’
‘কেনো লাগবে না? আপনি জানেন কাল থেকে আমার ঘুম হচ্ছে না। আপনি আমার কাছে নেই বলে শান্তি পাচ্ছি না। অস্বস্তি হচ্ছে। একটাবারও কল করেন না আপনি। জানেন, কতোটা রাগ লাগে? নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে অবহেলিত প্রাণী বলে মনে হয়। যাকে তার স্ত্রী নূন্যতম পছন্দ করে না। সময় দেয় না। ভালোও বাসে না। আশ্চর্য! আমি এদিকে রাতের পর রাত, দিনের পর দিন ওনার কথা ভেবে ভেবে অস্থির আর উনি ওদিকে আমার বিয়ে আরেক মেয়ের সাথে দেখে উৎফুল্ল হচ্ছেন। এসবের কি মানে হিমি? ইউ নো হুয়াট, আমি যদি আপনার জায়গায় থাকতাম আর স্বপ্নে আপনার সাথে অন্য কারো বিয়ে দেখতাম তাহলে স্বপ্নে দেখা আপনার বরকে বাস্তবে খুঁজে বের করে খুন করে দিতাম। মেজাজ টাই খারাপ করে দিলেন।’
হিমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। তাহির তার কথা ভেবে ঘুমাতে পারছে না ভেবেই আনন্দে লাফাতে ইচ্ছে করছে হিমির। তাহির রাগ করে কথা গুলো বললেও তার প্রত্যেক কথায় হিমির প্রতি তার ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। আর তাতেই লজ্জায় লাল হয়ে উঠছে হিমির মুখ। এদিকে ভেতরের সমস্ত রাগ ঝেড়ে ফোন কেটে রাগে ফুঁসতে লাগলো তাহির। হিমি বোকা বনে গেলো। এটা কি হলো? হিমির তো বলাই হলো না স্বপ্নে তাহিরের যার সাথে বিয়ে হচ্ছিলো সেই কনে হিমি নিজে। হিমি তাহিরের সাথে নিজের ধুমধাম করে হওয়া বিয়ে দেখে খুশি হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সুখ সে পেয়ে গেছে। কিন্তু তাহির তো তাকে ভুল বুঝলো। কি করে ভাবলো সে হিমি তার বরের সাথে অন্য কাউকে দেখবে? যদি এটা সত্যি হতো তবে হিমিও তাহিরের কথা মতো বাস্তবে ওই মেয়েকে খুঁজে বের করে খুন করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। কত্তবড় সাহস! হিমির স্বপ্নে এসে তারই বরকে বিয়ে করে? ভাগ্যিস এমনটা হয় নি। নয়তো হিমি সেই মেয়ের সাথে সাথে তাহিরকেও মেরে দিতো। তাহির তো এসব বলার সুযোগ দিলো না তাকে। উল্টো রেগে গেলো। রেগে গেলে আগে বুঝা যেতো না। স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতো। যেনো কিছুই হয় নি। কিন্তু এখন ধমকায়। মাঝে মাঝেই চোখ মুখ শক্ত করে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। লোকটা বদলে যাচ্ছে। হিমির বদলে যাওয়ার মতো করেই বদলে যাচ্ছে।
_________________
বারান্দায় দাঁড়িয়ে সকালের স্নিগ্ধ পরিবেশ দেখছিলেন মুহিব রহমান। পাখির কিচিরমিচির ধ্বনি শুনে মাঝে মাঝে পাখি খুঁজছিলেন। ঠিক তখনই পেছন থেকে ডেকে উঠে হিমি,
‘বাবা?’
মুহিব রহমান ফিরে তাকালেন। মুখটা হাসি হাসি করে বললেন,
‘এখানে আয়। দেখ, কি সুন্দর সূর্য!’
হিমি মৃদু হেসে চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বললো,
‘তোমার চা।’
মুহিব রহমান চায়ের কাপ হাতে নিলেন। গ্রিলের কাছ থেকে ফিরে এসে কাঠের চেয়ারে বসলেন। হিমি ততক্ষনে বারান্দার গ্রিল ঘেষে দাঁড়িয়েছে। বাইরের দিকে দৃষ্টি দিয়ে বললো,
‘বাবা? তোমার সকাল ভালো লাগে না কি রাত?’
‘সকাল। কেনো বলতো?’
‘এমনি। জানতে ইচ্ছে করলো।’
‘আর কিছু জানতে ইচ্ছে করছে না?’
হিমি ভরসা পেলো। মুহিব রহমানের দিকে স্থির দৃষ্টি দিয়ে বললো,
‘তুমি গান শুনো?’
মুহিব রহমান চায়ে চুমুক বসালেন। হাসি হাসি মুখে বললেন,
‘শুনি। তোর মতোই আমার বাংলা গান পছন্দ। রবীন্দ্র সঙ্গীত মাঝে মাঝেই শুনি।’
হিমি কিছুটা অবাক হলো। বললো,
‘তুমি কি করে জানলে আমার বাংলা গান পছন্দ?’
জবাবে ঠোঁট চওড়া করে হাসলেন মুহিব রহমান। হিমি উল্টো ঘুরে গ্রিলে পিঠ ঠেকালো। কৌতুহলী গলায় বললো,
‘তুমি আমার ব্যাপারে আরো অনেক কিছু জানো। না?’
‘হ্যা তো। জানি। মেয়ের ব্যাপারে বাবা জানবে না তা তো হয় না। এটা ঠিক যে তোর সাথে আমার সহজ হতে সময় লেগেছে। বহু বছরের মান, অভিমান, আড়ষ্টতা কাটতে দেরি হয়েছে। জড়তা কাটিয়ে উঠতে দেরি করে ফেলেছি আমি। সেই সাথে এটাও সত্যি তোর পছন্দ, অপছন্দ, ইচ্ছা, সবটাই জানার চেষ্টা করেছি। তোকে বুঝতে চেয়েছি। বুঝেওছিলাম। শুধু মুখ ফুটে বলতে পারি নি।’
‘দেখলে তো! তুমি আমার থেকে দূরত্ব বজায় রেখেও আমায় বুঝো, জানো। আর এদিকে আমি তোমার কাছাকাছি আসতে চেয়েও তোমায় বুঝে উঠতে পারি না। আমি ভালো মেয়ে নই।’
মুহিব রহমান স্মিত গলায় জানতে চাইলেন,
‘চা তুই করেছিস?’
সতেজ হাসলো হিমি। উৎফুল্লতা বজায় রেখে বললো,
‘কি করে বুঝলে?’
‘চায়ে চিনি বেশি হয়েছে।’
মুখ মলিন হয়ে গেলো হিমির। মুহিব রহমান চুপ করে পুরো কাপ খালি করলেন। তারপর ধীর স্থির ভাবে বললেন,
‘আমি জানি তুই চা বানাতে পারিস না। চা খেতে তোর যতোটা আগ্রহ চা বানাতে আর এক ফুটাও নেই। তবুও বানিয়েছিস। আমি খাবো বলেই বানিয়েছিস। ভাবির থেকে জেনেছিস আমি কেমন চা পছন্দ করি। তুই আমার পছন্দ অপছন্দের খেয়াল রেখেছিস। অর্থাৎ তুই ভালো মেয়ে। তুই বাবাকে ভালোবাসিস।’
হিমির মুখে খনিকের খুশি খেলে গিয়ে আবারও মলিন হয়ে উঠলো। মুখ ফুলিয়ে বললো,
‘চা তো তোমার স্বাদ অনুযায়ি হয় নি। বাজে হয়েছে।’
‘মোটেও না। বরঞ্চ আমার খাওয়া পৃথিবীর সবচেয়ে স্বাদ ছিলো এই চায়। জানিস, আমি এমন চা পছন্দ করতাম। ভীষন পছন্দ করতাম। তোর মা এমন চা করতো। হাসি চলে যাওয়ার পর বহু দিন চা খাই নি আমি। দেশে ফিরে যে যেমন দিতো খেতাম। কখনো বলি নি আমার এটা ভালো লাগে না। কেনো জানিস?’
হিমি মাথা নাড়ে। মুহিব রহমান বলেন,
‘আমি চাই নি হাসির হাতে বানানো চায়ের স্বাদ ভুলতে। এ বাড়িতে এক একজন এক একরকম চা বানায়। তোর বড়মা চায়ে চিনি কম দেয়। ছোটমা দুধ কম দেয়। আমি বানাই না। বড়ভাই বানালে দুধ চিনি সব বেশি বেশি। মিশ্মির চায়ে লিকার বেশি হয়ে যায়। এসবের মধ্যে আমি হাসির চায়ের স্বাদ খুঁজি নি কখনো। চোখ বুজে কল্পনায় স্বাদ নিতাম। হাসি সবার থেকে আলাদা ছিলো। সেটাও উপলব্ধি করতাম। আজ তুই তোর মায়ের হাতের সেই বেশি চিনি দেয়া চা বানিয়েছিস। আমার মনে হচ্ছে হাসিই বানিয়েছে। দুই যুগ পর আবারও হাসির হাতের ছুঁয়া পেলাম। বড় শান্তি পাচ্ছি। হাসিও শান্তি পাচ্ছে। অন্য জগতে আমাদের বাবা মেয়ের ভালোবাসা দেখে খুশি হচ্ছে। আফসোস, এই ভালোবাসাটা সরাসরি দেখলো না হাসি। জানিস মা? হাসির বড় লোভ ছিলো। তোকে কোলে নিবে, তোর হাঁটা দেখবে। তোকে বড় হতে দেখবে। হাসি বলতো তোর চুল হাসির মতোই বড় ঘন হবে। ওর লোভ ছিলো। সেই লোভ সইলো না। সে জানলোই না সত্যি সত্যি তার একটা মেয়ে হয়েছিলো। সেই মেয়ে আজ বড় হয়েছে। বিয়ে করেছে। সংসার করছে। হিমি হাসির মেয়ে। আমাকে একলা করে দিয়ে তোর মা চলে গেলো। উচিত হয় নি। এতো লোভ না করলে নিশ্চয় ও আজ জীবিত থাকতো। তোর মা লোভী।’
কথা শেষ করে শব্দ করে হাসলেন মুহিব রহমান। ওনার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরলো। সাবধানে সে জল মুছে নিয়ে হাসিতে মত্ত হলেন তিনি। হিমির চোখেও কিছুটা পানি। মাকে ভীষন কাছে পেতে ইচ্ছে করছে তার। হিমি এগিয়ে এলো মুহিব রহমানের কাছে দাঁড়িয়ে পাশ থেকেই জড়িয়ে ধরলো ওনাকে। কান্না ভুলে সেও হাসলো। বাবার কপালের কোনায় ছোট্ট চুমু দিয়ে ধীর গলায় বললো,
‘ভালোবাসি বাবা।’
মুহিব রহমান হাত বাড়িয়ে মেয়ের মাথায় রাখলেন। হাসি থামিয়ে বললেন,
‘আমিও মা।’
চলবে,,,,,,,,,,