#ভালোবাসা_বারণ
#পর্বঃ০৯
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
অয়ন দেখতে পায় ঈশা সবার আড়ালে বসে ফোন হাতে কাউকে কল করছে। ঈশাকে দেখে বেশ চিহ্নিত দেখাচ্ছে। কাকে কল করছে ঈশা? রিয়ানকে নাকি অন্য কাউকে? অয়ন ঈশার দিকে একটু এগোতেই রিয়াদ এসে অয়নকে জরিয়ে ধরে। রিয়াদ অয়নকে জরিয়ে ধরে বলছে
— দোস্ত তুই এসেছিস? আমি ভেবেছি আসবি না।
অয়ন রিয়াদের কথায় একটু অবাক হয়ে যায়। অয়নের যতদূর মনে আছে অয়ন তো রিয়াদকে বলেনি যে আসবে না। বরং বলেছে যে সবাইকে নিয়ে আসবে। অয়ন রিয়াদকে প্রশ্ন করে বসলো
— মানে? আমি কেনো আসবো না?
রিয়াদ একটু হতাশার কন্ঠে বলল
— ভূলে গেলি এমন একটা পার্টিতে আমাদের দুজনের মাঝে কি হয়ে ছিলো?
অয়ন রিয়াদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলতে লাগলো
— ঐ সব কথা থাক না। আমি চাই না ঐ সব ভাবতে বা মনে করতে।
— হুম। আচ্ছা ওখানে গিয়ে বস।
— আচ্ছা ঠিক আছে।
অয়ন রিয়াদের কাছ থেকে চলে যায়। রিয়াদের কথায় আবারও মনে পরে যায় অয়নের পিছনে ফেলে আসা কিছু অতিতের কথা। অয়ন সোফার উপর পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। মানুষ কতটা সার্থপর হতে পারে তাই না। একটা সময় যাকে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসতো। তাকে সময় ও সুযোগ বুঝে ঠিক ছেড়ে দিয়ে অন্য কাউকে আপন করে নেয়। আচ্ছা তবে কি এটাকে ভালোবাসা বলে? ভালোবাসা কি প্রয়োজন শেষে তাকে দূরে ঠেলে দেয়াতে সিমাবদ্ধ? প্রয়োজন! হ্যাঁ, এই শহরের মানুষ গুলো প্রয়োজনে কাছে আছে। যখন আর প্রয়োজন পরে না। তখন আর কাছে রেখে লাভ কি? তবে কিছু মানুষ বোকা হয়। হ্যাঁ ভিশন বোকা হয়। তারা সত্যি মানতে চায় না। ভাবে সেও তাকে তার মতো ভালোবাসে। ঐ বোকা মানুষ গুলোই দিন শেষে কষ্ট পায়। একটা সময় ঐ মিথ্যে ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি শেষ হয়ে গেলেও তারা আর তা ভেবে কষ্ট পায় না। তারা তখন বুঝতে শিখে যায় যে বাস্তবতা বড্ড কঠিন। তারা আর সেই প্রয়োজনে প্রিয়জন বানানো মানুষের কাছে নিজের অনুভূতি গুলো প্রকাশ করে না। দূরত্ব বজায় রাখতে শিখে যায় তারা।
অয়ন অতিতের কথা গুলো ভাবছে আনমনে। অয়নের ভাবনার অবসন ঘটায় ঈশা। ঈশা এসে অয়নের পাশে বসে অয়নের দিকে একটা হেলে তার চোখ বরাবর তাকিয়ে থাকে। অয়ন বিষয়টা বুঝতে পেরে একটু রাগি কন্ঠে বলে উঠে
— এই সব কি হচ্ছে? এই ভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো আমার দিকে? আমি রিহান না অয়ন।
ঈশা সোজা হয়ে বসে একটু শান্ত গলায় বলল
— হ্যাঁ, আমিও তাই ভাবছি আপনি রিহান না। কারন রিহানা আপনার মতো একদৃষ্টিতে তাকিয়ে কোনো কিছু ভাবে না। তা কি ভাবছেন স্যার? ম্যাম এর কথা কি বড্ড মনে পরছে নাকি?
ঈশার কথা শুনে অয়ন রেগে যায়। রাগে গজগজ করতে করতে বলে উঠে অয়ন
— ওয়াট? ম্যাম কে? আমি কারো কথা কেনো ভাবতে যাবো?
— না মানে এই যে সামনে এতো গুলো বিয়ারের গ্লাস দেখে আপনার ম্যামের কথা মনে পরবে এটা স্বাভাবিক ব্যাপার।
— সমস্যা কি আপনার? মানে কথা বলার কোনো রিজন না পেয়ে এই সব উল্টা পাল্টা কথা বলছেন। ভূলে যাবেন না আমি আপনার বস। মাইন্ড ইট। আর আপনার মতো একটা বেয়াদব মেয়ের সাথে কথা বলতে আমার লজ্জা লাগে। যত্তসব।
অয়নের কথা শুনে ঈশার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। এই লোকটা এমন কেনো করে আমার সাথে? সব সময় আমাকে নিয়ে বাজে কথা বলা ছাড়া আর কি কোনো কাজ খুঁজে পায়না উনি? মানে দুনিয়াতে তো আরও অনেক মানুষ আছে। তাদের কে নিয়ে বল। আমাকে কেনো উল্টাপাল্টা বলে আমার মেজাজ খারাপ করে দিস? বদমাইশ এর হেড অফিস একটা। ফিসফিস করে বলল ঈশা। অয়ন ঈশার কোনো কথার পাত্তা দিলো না। রিয়াদ অয়ন আর ঈশার দিকে এগিয়ে আসছে। অয়ন ব্লেজারটা ঠিক করে নিলো। রিয়াদ এসে অয়ন ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— কি হলো? তোমরা বসে আছো কেনো? ড্রিংক নিও। আজ তো ইনজয় করার দিন। এই অয়ন তুই নিচ্ছিসনা কেনো?
অয়ন একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলল
— আমি এই সব নেই না। অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছি এই সব।
— ওহহহ। আচ্ছা ঈশা আপনি নিন ভালো লাগবে আপনার।
রিয়াদের কথা শেষ হতেই অয়ন অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো রিয়াদের দিকে। রিয়াদ বিষয়টা বুঝতে পেরে একটু হেসে বলল
— আচ্ছা তোমাদের জন্য সফ্ট ড্রিংক পাঠিয়ে দিচ্ছি।
কথাটা শেষ করতেই রিয়াদ চলে যায়। ঈশা অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— আচ্ছা ড্রিংক করতেন আগে। এখন কেনো করেন না? আচ্ছা ঐ ড্রিংক করলে কেমন ফিল হয়? আমার না খুব ইচ্ছা করে খেতে। আপনিতো নিয়েছেন আগে। বলবেন প্লিজ কেমন খেতে হয়?
অয়ন চরম বিরক্তি নিয়ে ঈশা কে বলল
— একদম জঘন্য। তারপরেও যদি টেস্ট করতে ইচ্ছে হয়। তা হলে রিহানকে সাথে নিয়ে যত ইচ্ছে টেস্ট করুন। তারপর বুঝে নিন ফিল কেমন হয়।
— এই সব সময় ত্যারা ত্যারা কথা আমার ভালো লাগে না। আপনি বাজে ছেলে বলে জ্বিগাসা করেছি। আর আমার ইচ্ছে ছিলো টেস্ট করার কিন্তু আপনি যেটা খেয়েছেন তা তো আমি মরে গেলেও খাবো না। কারন আমি চাই না আপনার মতো বাজে হয়ে যেতে।
ঈশার কথা শুনে অয়ন তার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। বিরক্তিকর। অফিস হলে মুখে লাগাম টেনে ধরতাম। কিন্তু এখানে কিছু বলা যাবে না। অয়ন দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে নিচ্ছে ঈশার অপমান। অয়নের রাগ দেখে ঈশা হাসছে।
— রিয়াদ ভাইয়া আমার ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গেছে। এখানে কি চার্জ দেয়া যাবে?
ঈশা রিয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলল কথাটা। রিয়াদ একটু হেসে বলল
— কেনো চার্জার আনেননি বুঝি?
— না। আসলে হুট করেই ফোনটা ডেড হয়ে গেছে। বাবার সাথে কথা বলতে হবে।
— ওহহহ আচ্ছা। ঠিক আছে ফোনটা আমাকে দিন আমি চার্জে দিয়ে আসছি।
— ঠিক আছে ভাইয়া এই নিন। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
রিয়াদ একটু রহস্য জনক হাসি দিয়ে বলল
— শুধু মাত্র ধন্যবাদ? আমার তো ধন্যবাদ এ চলবে না। আমার একটু সাহায্য লাগবে।
ঈশা একটু অবাক হয়ে যায় রিয়াদের কথায়। ঈশা ভ্রূ কুঁচকে জ্বিগাসা করলো রিয়াদকে
— কি সাহায্য ভাইয়া? বলুন
— আসলে ঈশা এখানে পাশেই একটা রেস্টুরেন্টে আছে। ওখান থেকে কেক আসার কথা। এখনও আসছে না। আর আমি যেতেও পারছি না। তুমি কি একটু দেখবে?
— আমি দেখবো?
— না থাক তবে। আসলে যদি সম্ভব হয় তবে সাথে অন্য কাউকে নিয়ে যদি যেতে তবে খুব সাহায্য হতো আমার।
— কিন্তু ভাইয়া!
— আচ্ছা থাক তবে। আমি দেখছি কি করা যায়।
রিয়াদ মন খারাপ করে ফেলে ঈশার না যাওয়ার কথা শুনে। ঈশা সেটা বুঝতে পেরে মৃদু হেসে রিয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলল
— আরে ভাইয়া মন খারাপ করছেন কেনো? আমি দেখছি কি কেকটা এখনও আসছে না কেনো।
— সত্যি! অনেক ধন্যবাদ তোমাকে।
— ঠিক আছে। আসছি এখন।
ঈশা কিছু না ভেবেই কেক আনতে চলে যায়। সাথে কাউকেই নিলো না সে। আসলে কি করে নিবে? সবাই তো সবার মতো ব্যস্ত। তার সাথে যাওয়ার সময় কি কারো হাতে আছে?
* অয়ন বসে বসে সবার সাথে কথা বলছে। ওয়েটার সফ্ট ড্রিংক নিয়ে চলে আসে। সবাই সফ্ট ড্রিংক নিয়ে নিলো। অয়ন ও নিজেরটা নিলো। ঈশাকে কোথাও দেখতে পেলো না অয়ন। সবাই ড্রিংক নিচ্ছে আর কথা বলছে। অয়ন কিছু সময় ওদের সাথে কথা বলে উঠে যায়। ঈশাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না কেনো? সবাই এখানে কিন্তু ঈশা কোথায়? অয়ন পকেট থেকে ফোনটা বের করে ঈশার নাম্বারে ডায়েল করলো। ফোনটা সুইচ অফ আসছে। অয়নের মনে একটা ভয় কাজ করছে। সেই আগের মতো কোনো কিছু যেনো না হয়। অয়ন তার অফিসের কিছু মেয়ে স্টাফকে জ্বিগাসা করলো ঈশাকে দেখেছে কি না? তারা সরাসরি না করে দেয়। অয়নের ভয় এবার সত্যি সত্যি ভাবাচ্ছে তাকে। ঈশা ঠিক আছে তো? অয়ন গ্রীন প্যালেসের সব জায়গায় খুঁজে দেখলো কিন্তু ঈশাকে কোথাও পেলো না। অয়ন পার্টিতে ফিরে এলো। পার্টিতে এসে অয়ন দেখতে পেলো রিয়াদকে।অয়ন রিয়াদকে ভিশন কর্কশ গলায় জিজ্ঞেস করে
— ঈশা কোথায়?
* রিয়াদ কিছু বলার আগেই অয়ন রিয়াদের…………………………
#চলবে…………………………..