#ভালোবাসা_বারণ
#পর্বঃ১০
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
* রিয়াদ কিছু বলার আগেই অয়ন রিয়াদের মুখের কাছে মুখ নিয়ে রাগে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলো
— যদি ঈশাকে খুঁজে না পাই আর ঈশার কিছু হলে। এই বার আর তোর অপরাধের কোনো ক্ষমা আমি করতে পারবো না রিয়াদ।
কথাটা শেষ করতেই রিয়াদ অয়নের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। অয়ন গ্রীন প্যালেসের থেকে বেরিয়ে যায়। গ্রীন প্যালেসের সামনে আড্ডা দেয়া কিছু লোককে ঈশার ছবি দেখিয়ে জ্বিগাসা করে তারা ঈশাকে দেখেছে কিনা? কিন্তু হতাশা জনক উত্তর আসে। সবাই না বলে দেয়। অয়নের প্রতিটা মূহুর্ত এখন বেশ যন্ত্রণা ও চিন্তার মধ্যে কাটছে। চোখের সামনে সব কিছু অন্ধকার হয়ে আসছে যেনো। অয়ন বুঝতে পারছে না কি করবে সে বা কি করা উচিত এই মুহূর্তে? পাগলের মতো এদিক ওদিক খুঁজে চলেছে ঈশাকে। হঠাৎ করে অয়নের চোখে পরলো দূরে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বয়ফ্রেন্ড নিয়ে আড্ডা দিচ্ছে হয়তো। অয়ন তাদের দিকে দৌড়ে ছুটে যায়।
— হ্যালো মিস। আমাকে একটু সাহায্য করবেন প্লিজ!
অয়নের কান্না ভেজা বিচলিত কন্ঠে এক সেকেন্ডে উপস্থিত দুজনের মন গলিয়ে দিলো। মেয়েটি অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— জ্বি অবশ্যই। বলুন কি সাহায্য করতে হবে?
অয়ন ফোনটা তাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বিচলিত কন্ঠে বলল
— এই মেয়েটিকে দেখেছেন এখানে?
মেয়েটি হাত দিয়ে ইশারা করে বলল
— হ্যাঁ। এই মেয়েটিকে দেখেছি কিছুক্ষণ আগে। ঐ দিকে গেছেন উনি।
অয়ন মেয়েটির ইশারা করা জায়গাটার দিকে তাকিয়ে দেখে একটা রেস্টুরেন্টে। অয়নের চোখ জোড়ায় স্পষ্ট আনন্দ উঁকি দিচ্ছে। অবশেষে একটা ভালো খবর পাওয়া গেলো। অয়নের ছলছল চোখে আনন্দের আবেশ দেখে তারা দুজন খুব না হলেও একটু খুশি হয়েছে। অয়ন ধন্যবাদ দিয়ে দৌড়ে ছুটে যায় রেস্টুরেন্টের দিকে। রেস্টুরেন্টের ভিতর যেতেই অয়ন দেখতে পায় ঈশা কেক হাতে বসে আছে। কিছু ছেলে ঈশাকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলছে হয় তো। ঈশা হাস্যজ্বল মুখে তার উত্তর দিচ্ছে। অয়ন তীব্র প্রতিক্ষার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সব কিছু ঠিক আছে। অয়ন রেস্টুরেন্টের ভিতরে চলে আসে। ধিরে ধিরে এগোচ্ছে ঈশার দিকে অয়ন। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ঈশার দিকে। মনে হচ্ছে চোখের তৃষ্ণা মিটাতে ব্যস্ত সে। ঈশা কথা বলার মাঝে অয়নকে দেখতে পেয়ে বেশ অবাক হয়ে যায়। হঠাৎ করে অয়ন চৌধুরী এখানে কেনো এলো? ভাবছে ঈশা। ঈশা অয়নকে এগিয়ে আসতে দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। অয়ন যে এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে বেশ উপলব্ধি করতে পারছে ঈশা। ঈশা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। অয়নের চোখ জোড়া আজ ভিশন অদ্ভুত লাগছে তার। এমন তো কখনও তার চোখ জোড়া হয়নি। অয়ন ঈশার কাছে আসতেই থমকে দাঁড়ায়। ঈশা কিছু বলতে যাবে অয়নকে এমন মুহূর্তে অয়ন ঈশাকে সহ সবাইকে অবাক করে দিয়ে ভিশন শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তাকে। ঈশা যাস্ট থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একি অদ্ভুত অনুভূতি। অয়নের স্পর্শে এমন কেনো হচ্ছে আমার? কি হচ্ছে? কেনো হচ্ছে? কি জন্য এমন হচ্ছে? কোনোটাই বোধগম্য হচ্ছে না তার। অয়ন চুপ করে আছে। অয়নের এমন অদ্ভূত ব্যবহার ঈশাকে ভাবিয়ে তুলেছে। “অয়ন কি নেশা করে এমন করছে? অয়ন আশার পর এই লোক গুলো চুপসে গেলো কেনো? তার মানে কি অয়ন আমাকে এখানে এই জন্য কি রিয়াদ কে দিয়ে অয়ন আমাকে সবার থেকে দূরে এই নির্জন জায়গায় নিয়ে এসেছে। অয়ন কি তার সেই জঘন্য ইচ্ছে পূরণ করতেই এসব করছে?” কথাটা ভাবতেই ঈশার মনটা কেঁপে উঠলো। ছিঃ শেষে কিনা এতোটা নিচে নেমে গেলো অয়ন? ঈশা তীব্র ঘৃণা নিয়ে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— কি করছেন অয়ন চৌধুরী? ছাড়ুন আমাকে।
ঈশার কথার বিপরীতে অয়ন নিশ্চুপ হয়ে আছে। ঈশাকে আরো শক্ত করে জাপটে জরিয়ে ধরে অয়ন। ঈশা চরম বিরক্তি নিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলো
— ছাড়ুন বলছি। আমাকে এমন করে জরিয়ে ধরে আছেন কেনো? একা কোনো মেয়েকে পেলেই নিজেকে সামলাতে পারেন না? মনের মধ্যে সেই নোংরা ইচ্ছে জেগে উঠে? ছাড়ুন বলছি।
কথাটা অয়নের কানে আসতেই হাত জোড়া আলগা হয়ে যায়। সত্যি তো কেনো ওকে জড়িয়ে ধরলাম আমি? ঈশার মুখে বলা কথাটা বুকে এসে সজোরে আঘাত করলো অয়নের। ঈশা অয়নের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রাগি কন্ঠে অয়নকে উদ্দেশ্য করে
— ঠাসসসসসসসস, ঠাসসসসসসসস, আমাকে সবার সামনে জরিয়ে ধরার সাহস হয় কি করে আপনার? মেয়ে দেখলেই সুযোগ খোঁজেন কেনো? আপনার ও তো বোন আছে, স্ত্রী হবে। তাদের কে যদি কেউ এমন করে জরিয়ে ধরে। তাদেরকে বাজে মন্তব্য করে? তখন আপনার কেমন লাগবে? একটুও কষ্ট হবে আপনার বুকে? হবে না। কারন আপনি মানুষ না। আপনি একটা নর্দমার কীট। যাকে মানুষের সাথে তুলনা করা যায় না।
অয়ন নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিজের উপর বড্ড হাসি আছে তার। এতোটাই ছোট সে হয়েছে যে মানুষ নয়। এখন একটা কীটের সঙ্গে তুলনা করা হয় তাকে। ঈশা এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে কয়েকজন ছেলে ছাড়া কেউ নেই আশেপাশে। ঈশা মাথাটা নিচু করে বেরিয়ে যায়। ঈশা সামনে থেকে চলে যাবার পরও অয়ন মাথাটা আর তুলতে সাহস পায়নি। রক্ত বর্ণ ধারণ করা চোখ জোড়া দিয়ে কয়েক ফোঁটা নোনা জল টপ টপ করে পরছে। রেস্টুরেন্টের সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। ওদের ঐ তাচ্ছিল্য কর হাসি অয়নকে উপহাস করছে। অয়ন মাথাটা তুলে এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজতে লাগলো কিছু। এমন কিছু যা মনটাকে হালকা করতে পারে। ভূলিয়ে দিতে পারে ঈশার করা অপমান। ভূলিয়ে দিতে পারে ঈশা নামক একটা নাম। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে কপাল সত্যি সত্যি খারাপ। তেমন কিছু এখানে নেই। উজ্জ্বল বর্ণের চেহারাটা রক্ত বর্ণ ধারণ করে আছে। অয়ন চুপচাপ রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যায়। চলে আসে গ্রীন প্যালেসে। গ্রীন প্যালেসে আসতেই অয়ন দেখতে পেলো সবাই তার জন্য অপেক্ষা করছে। ফারজানা অয়নকে দেখতে পেয়ে ছুটে চলে আসে তার দিকে। অয়নের কাছে আসতেই ফারজানা বলে উঠলো
— এই অয়ন কোথায় ছিলি এতোক্ষণ? জানিস আমরা তোকে সব জায়গায় খুঁজেছি। এইভাবে চলে যাস কেনো? তোর জন্য এখনও রিয়াদ কেক কাটেনি।
অয়ন বেসুরো কন্ঠে ফারজানাকে বলল
— হুম। আমি আছি। তোরা শুরু কর।
অয়নের কথা শেষ হতেই রিয়াদ চিৎকার করে বলে উঠলো
— এই অয়ন তোর গালে এটা কিসের দাগ? মনে হচ্ছে কেউ থাপ্পর মেরেছে। ইশশশশরে কতটা ফুলে গেছে।
রিয়াদের কথাতে সবার দৃষ্টি এক সাথে অয়নের দিকে পরলো। অয়ন বেশ বিব্রত হয়ে যায়। “কি বলবে এখন? সবাই তো এখন একসাথে কারন টা জানতে চাইবে। কি উত্তর দিবো আমি?” আপন মনে ভাবছে অয়ন। অয়নকে বিব্রত দেখে ফারজানা সবটা আঁচ করতে পারলো। ফারজানা পরিস্থিতি বুঝতে পেরে খিল খিল করে হেসে উঠলো। সবাইকে উদ্দেশ্য করে ফারজানা বলতে লাগলো
— আরে কেউ থাপ্পর মারতে যাবে কেনো? ইফতি আর অয়ন অনেক ফাজলামি করে। ইফতির উপর রেগে গিয়ে হয়তো চেহারা লাল হয়ে গেছে ওর। আচ্ছা অয়ন তুই বরং উপরে যা। মেজাজ গরম আছে তোর। মেজাজ ঠান্ডা হলে নিচে আসিস কেমন। আমরা পার্টি স্টার্ট করি।
অয়ন ফারজানার কথার বিপরীতে কোনো জবাব না দিয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল।
* সোফায় বসে ড্রিংক্স নিচ্ছে অয়ন। এতো ড্রিংক করার পরেও নেশা হচ্ছে না তার। সোফায় একটু হেলে অয়ন চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয়। মাথার নিচের অংশের ভিতর হাত রেখে অয়ন চিন্তা করছে রিহানকে জরিয়ে ধরার সময় তো ঈশা এমন করেনি। দিব্বি আনন্দের সাথে রিহানকে জরিয়ে ধরে ছিলো সে। আর আজ আমি ছুঁতেই এতোটা রিয়েক্ট করলো! আহহহহহ! আমিও যাচ্ছে তাই ভাবছি। রিহান ওর ভালোবাসার মানুষ আর আমি একটা ৩য় ব্যক্তি। ওকে টাচ তো দূরের কথা। ওকে নিয়ে ভাবাটাও আমার অন্যায়। নিজের থেকে বেশি কাউকে মূল্য দিতে নেই। সে অন্যকারো এটা মেনে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। অনেকটা ছোট আমি নিজেকে প্রমান করেছি কিন্তু আর না। আজ থেকে নিজের ইচ্ছে মতো করে ভাববো। অধিকার ছাড়া কাউকে নিয়ে ভাবার সময় আমার হাতে নেই। অয়ন বোতলের শেষ প্যাগ নিঃশেষ করে দিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। ব্লেজারটা কাঁধের উপর ফেলে নিচে নেমে আসতে লাগলো। বাড়ি যেতে হবে তাকে। অয়ন ড্রিংক করার দৃশ্য শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখলো ঈশা। ঈশা অয়নের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সিরি দিয়ে নামার সময় অয়ন ঈশাকে দেখতে পেয়ে মাথা নিচু করে তাকে এড়িয়ে বেরিয়ে আসে গ্রীন প্যালেস থেকে। পার্টি ওভার। সবাই এখন চলে যাবে। অয়ন গাড়িতে বসে ড্রাইভারকে বাসায় যেতে বলল। ড্রাইভার অয়নের কথা মতো গাড়ি স্টার্ট করে বেরিয়ে যায়। অয়ন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দূর ঐ আকাশটার দিকে। আচ্ছা তার জন্য মনের মধ্যে এমন অদ্ভূত অনুভূতি কোনো কাজ করে? তার কিছু হয়ে যাবে, সে কি কোনো বিপদে পড়েছে কিনা! তা ভেবে মনের মধ্যে এমন করে উঠে কেনো? আচ্ছা সে কি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু আঁচ করতে পারেনি? বুঝতে পারেনি এই মনের ব্যকূলতা? হয়তো না। কারন তার মনের মধ্যে অন্য কারোর বসবাস।
* বাসায় ফিরে অয়ন সোজা নিজের রুমে চলে আসে। অতিরিক্ত মদ্যপানের জন্য অয়নের ঘুম পাচ্ছে অনেক। অয়ন ফ্রেশ না হয়ে শুয়ে পরে।
সকালে ঘুম থেকে একটু লেট করে উঠে ফ্রেশ হয়ে অফিসের জন্য বেরিয়ে যায় অয়ন। অফিসে আসতেই চমকে যায় সে। এটা কি হচ্ছে? অয়ন দেখতে পেলো……………………………
#চলবে………………………..