#ভালোবাসা_বারণ
#পর্বঃ১৯
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
রুমে আসতেই অয়ন সোফার উপর হেল দিয়ে বসে পরে। আনমনে হেসে ফেলে অয়ন। ঈশার অবাক করা হাসি মুখটা ভাসছে অয়নের চোখে। অতটা অবাক হয়ে গিয়েছে সারপ্রাইজ টা পেয়ে। পাগলিটা হয়তো ভেবেছে রাস্তাটা নির্জন। কিছু বিপদ হলেও তো হতে পারে! ধূর আমিও না কি সব ভাবছি। ভার্সিটিতে রেগিং এর সময় ঈশা ম্যাম এর আসল রূপ দেখা হয়েছে আমার। মানে সে যেমন কথা দিয়ে মানুষকে মেরে ফেলার ক্ষমতা রাখে ঠিক তার কথার মতোই তার হাতের জোর। ছেলে গুলোকে কি মারটাই না মেরেছে ও দিন। ওর ক্লাসমেটরাও ওকে ধরে রাখতে পারেনা। উফফফফ কি ডেন্জার মেয়েরে বাবা। ওর কোনো বিপদ হতেই পারে না।
* ঈশার কথা ভাবতেই মনের মধ্যে অজানা আনন্দের স্রত বয়ে গেলো অয়নের। অয়ন ফ্রিজ থেকে ড্রিংক্সের বোতল নিয়ে প্যাগ বানাচ্ছে। আজ কাল গলাকে ভিজানোর অসাধারণ কৌশল হিসেবে এটিই তার প্রিয় হয়ে গেছে। অয়ন ড্রিংক করছে আর ঈশার কথা গুলো মনে করছে। মেয়েটা ভূল কিছু বলেনি। আমি সত্যি ক্ষমার অযোগ্য।
সকাল হতেই ঈশা নিজের বিছানা থেকে উঠে যায়। অয়নকে যতটাই ঘৃণা করি না কেনো সত্যি বলতে ওর পাগলামি গুলো বড্ড ভালো লাগে। রেস্টুরেন্টের সেই ঘটনাটা মনে পড়তেই আনমনে খিল খিল করে হেসে ফেললো ঈশা। আমার কিছু যাতে না হয় সেটা ঠিক ভাবে। কেউ আমাকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করলে তার কষ্ট হয়। অথচ সে নিজে যখন আমাকে ভূল বুঝে অযথা আঘাত করে আমার বুকে। তখন তার কোনো কষ্ট হয় না। একটিবার চিন্তা করে না আমি যাকে এতোটা অপমান করছি আসলে কি সেই মানুষটি আমার অপমান সহ্য করতে পারবে তো? সরি ভূল বললাম সে তো ভাবে আমি মানুষ না। আমার অনুভূতি নেই। আমার বোধ শক্তি হয় না। তাই তার করা সব অপমানে জবাব সরি। একটা ছোট্ট সরি।
ঈশা উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলো সে। রেডি হতে গিয়ে হঠাৎ করে তার চোখ পরলো একটা সাজানো গোছানো গিফটের দিকে। এমনিতে কাল অনেক গিফট পেয়েছে তবে এই গিফটা একটু অদ্ভুত। ঐ যে হয় না হাজার জিনিসের মধ্যে কিছু জিনিস সবার আগে দৃষ্টি আকর্ষণ করে! ঠিক তেমন কিছু। ঈশার এই গিফটের প্যাকেটটা দৃষ্টির অগোচরে রইলো না। ঈশা গিফটের প্যাকেটটা হাতে নিয়ে আপন মনে চিন্তা করছে।
— কে দিতে পারে এটা? উপরে নাম ও লিখা নাই। আচ্ছা খুলে দেখি কি আছে এতে। যদিও গিফটা আমার জন্য পাঠানো হয়েছে তবুও খুলতে কেমন যেনো একটু ইতস্ত বোধ হচ্ছে।
কিছুটা সময় থমকে থেকে ঈশা গিফটের প্যাকেট খুলতেই লাগলো। প্যাক খুলে ঈশা ভিশন চমকে যায়। তার সব চেয়ে প্রিয় রং এর একটা শাড়ি তার সাথে ম্যাচিং করা অনেক গুলো চুড়ি আছে। সাথে একটা ছোট্ট চিরকুট। শাড়িটা বিছানায় রেখে চিরকুটা খুলতেই ঈশার চোখে পড়ে একটা বড় অক্ষরে লিখা লাইন। লাইনটিতে ছিলো ” জীবনের প্রতিটি সকাল এমন ভাবেই তোমার তোমার ঠোঁট জুড়ে হাসি উঁকি দিক। ভালো কাটুক তোমার প্রতিটি মূহুর্ত। শুপ্রভাত প্রিয়” আনমনে হেসে ফেলে ঈশা। চিরকুট টা মুঠো বন্দি করে ভাবছে ঈশা কে লিখতে পারে এটা? অয়ন! না সে তো হতেই পারে না। কারণ এই সব ছোট্ট জিনিসের মধ্যে কতটা আনন্দ লুকিয়ে থাকে সেটা তার জানার কথা নয়। তবে কে লিখতে পারে?
* চিরকুট টা টেবিলের উপর রেখে ঈশা শাড়ি পরতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ঈশা শাড়ি পরে হালকা মেকাপ করে নিলো। ঠোঁটের উপরে খয়রি কালার এর লিপস্টিক। চোখে কাজল দিতেই মনে হচ্ছে কোনো এক অপূর্ব সুন্দরী নারী দাঁড়িয়ে আছে আয়নার সামনে। নিজের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো ঈশা। সত্যি এই শাড়িটা তার সৌন্দর্যকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে তুলেছে।
* অয়ন তৈরি হয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। গাড়ি চলছে আপন গতিতে। অয়ন পিছনের সিটে চোখ জোড়া বন্ধ করে কল্পনা করছে ঈশাকে। শাড়িতে তাকে বেশ সুন্দরী লাগবে। উহু ঈশা তো এমনিতেই সুন্দরী। তা শাড়িতেও আর রেগুলার ড্রেসেও। কিন্তু কথা হচ্ছে আদু কি সে শাড়িটা পরবে? নাকি তার চোখেই পড়বে না আমার দেয়া এই সামান্য উপহার টুকু! হয়তো পড়বে না। কারন সে আর আমাকে নিয়ে ভাবছে না। যদি ভাবতো তবে অবশ্যই কাল একটি বারের জন্য হলেও বলতো থাকার জন্য।
অফিসের সামনে আসতেই ড্রাইভার গাড়ি ব্রেক করলো। অয়ন চোখের পাতা খুলে ব্লেজারটা হাতে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে কেবিনের দিকে হাঁটা শুরু করলো। অফিসে ঢুকে একটু অবাক হলো অয়ন। তেমন কোনো লোক এখন ও আসেনি। তার মানে কি সে আজ তারাতাড়ি চলে আসছে? হ্যান্ড ওয়াচ এর দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো, হ্যা একটু আগেই চলে এসেছে সে। অয়ন সামনের দিকে দু পা এগিয়ে আসতেই পিছন থেকে কারো হেঁটে আসার শব্দ তার কানকে স্পর্শ করে। অয়ন পিছন ফিরে তাকালো দেখার জন্য কে এসেছে? পিছন ফিরতেই অয়ন যাস্ট থ হয়ে যায়। একি দেখছে সে? তার বর্ণনা মিথ্যে প্রমান হলো। অয়ন দেখতে পেলো ঈশা চলে এসেছে। ঈশার পরনে তার দেয়া শাড়িটি দেখে অয়ন খুশি হওয়ার থেকে অবাক হয়ে যায় বেশি। এতোটা সুন্দরী কেউ হতে পারে? বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে সামনে ঈশা দাঁড়িয়ে আছে। ঠোঁটের উপর গাঢ় খয়েরী রঙের লিপস্টিক টা অয়নের দৃষ্টিকে করেছে সিক্ত। অয়ন অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ঈশার দিকে। ঈশা অয়নকে দেখতে পেয়ে ও না দেখার ভান করে তাকে এড়িয়ে গেলো। অয়ন কে ক্রস করে ঈশা একটু এগিয়ে যেতেই ফিসফিস করে অয়ন বলে উঠলো
— অসম্ভব সুন্দরী লাগছে তোমায়। ধন্যবাদ শাড়িটা পরার জন্য।
অয়ন কথাটা বেশ ধিরে বললেও ঈশার কান উবদি পৌঁছায় কথাটা। ঈশা অয়নের দিকে তার দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই অয়ন চুপ করে যায়। অয়ন ভাবছে এই বুঝি রেগে যাবে ঈশা। আবারও ভিশন কড়া কথা শুনিয়ে দিবে সে। ঈশা অয়নের দিকে এগিয়ে এসে মৃদু হেসে বলতে লাগলো
— যদিও জানতাম না শাড়িটা আপনার দেয়া। যদি জানতাম তবে কখনোই পড়তাম না। আর যদি ব্যবস্থা থাকতো চেঞ্জ করার তবে এখনি চেঞ্জ করে নিতাম। আপনার দেয়া প্রতিটি উপহার বরাবর যন্ত্রণা দিয়েছে আমায়। আর চাই না কোনো আঘাত পেতে।
অয়ন ঈশার চোখের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি করে হাসছে বলল
— এতোই যখন আমার উপর রাগ তোমার তবে খুলে ফেলে দিলেই হয় শাড়িটা। কোনো সমস্যা নেই আমার। এমনিতে তুমি শাড়ি না পারলেও বেশ মানাবে।
অয়নের কথা শুনে ঈশার মাথায় রক্ত উঠে যায়। ঈশা রাগে গজগজ করতে করতে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— মানুষ এতোটা নিচু কথা বলতে পারে তা আমার আগে থেকেই জানা ছিলো। তাই আমি বিকল্প ব্যবস্থা করেই এসেছি।
অয়ন মৃদু হেসে জবাব দিলো
— রাগলে খুব একটা খারাপ দেয়ার না তোমায়। একটু রাগানোর জন্য কথাটা বলেছি। চেঞ্জ করতে হবে না।
ঈশা কি উত্তর দিবে ভেবে পাচ্ছে না। সকাল সকাল এই লোকটা তার বাজে মন্তব্য করা শুরু করে দিয়েছে। আর দিবে নাই বা কেনো? নিচু মানসিকতার লোকদের কি আর মুখে লাগাম থাকে নাকি? ঈশা অয়নকে উদ্দেশ্য করে তাচ্ছিল্য কর হাসি দিয়ে বলল
— আপনি ভাবলেন কি করে আপনার দেয়া নোংরা উপহার আমি শরীরে জড়াবো? আমি শুধু মাত্র আপনাকে না আপনার দেয়া সব কিছুকেই ঘৃণা করি। সেটা আপনার নাম হোক বা আপনার দেয়া কোনো উপহার। ব্লাডি মাইন্ডেড পিপল।
রাগে গজগজ করতে করতে ঈশা অয়নের সামনে থেকে চলে যায়। অয়ন ও কম কিসে? পিছন পিছন ঈশার পিছু সেও চলে আসে। ঈশা ওয়াস রুমে ঢুকতে যাবে এমন সময় অয়ন ইশারা হাত ধরে নিজের দিকে টেনে নিয়ে আসে। ঈশা অয়নের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলছে
— এই সব কি হচ্ছে? এটা অফিস অয়ন চৌধুরী। আপনার বাড়ি নয় যে যেমন ইচ্ছে তেমন ব্যবহার করবেন আপনি।
— হ্যাঁ, জানি এটা অফিস আমার বাড়ি না। আর এটাও তোমার বোঝা উচিত আমি তোমার বস, স্বামী না।
— মানে? কি বলতে চান আপনি?
— আমি বলতে চাই আমাদের ঘরের ঝগড়া, রাগ, অভিমান এখানে দেখানোর কি প্রয়োজন আছে? শাড়িটা বাসায় গিয়ে চেঞ্জ করবে। এখানে না।
ঈশা অয়নের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলছে
— লিসেন মিস্টার অয়ন চৌধুরী আমি যাস্ট বাধ্য হয়ে এখানে পড়ে আছি। তা না হলে মরে গেলেও আপনার এই ভালো মানুষের মুখোশ পরা চেহারাটা দেখার জন্য কখনও আসতাম না এখানে। হাত ছাড়ুন বলছি।
— হুম ধরে রাখার ইচ্ছে বা আগ্রহ কোনটাই নেই আমার। ছেড়ে দিবো একটা শর্তে। শর্তে রাজি না হলে এই হাত সারা দিন ধরে রাখবো আমি।
— উফফফফ! অসহ্য কর। আপনার শরীরে মনে হয় গন্ডারের চামড়া। তাই লজ্জা লাগে না আপনার।
— এই পুরোনো কথা গুলো শুনে শুনে অভ্যাস হয়ে গেছে। স্টকে কি নতুন কোনো কথা নেই তোমার? থাকলে বলতে পারো। আমি প্রস্তুত আছি শোনার জন্য।
এই লোকটা এভাবে মানবে না। কিছু একটা করতে হবে। ঈশা চরম বিরক্তি নিয়ে অয়নকে বলতে লাগলো
— কি শর্ত?
— আহহহহহ, এইতো সোনা লাইনে এসেছো তুমি। আচ্ছা এতোটা সেলফিস কেনো গো তুমি? মানে আমি হাত ধরে রেখেছি তোমার সহ্য হচ্ছে না। আচ্ছা শুনো শর্তটা হলো এই শাড়িটা খুলে ফেলা চলবে না। যদি মানো তবে আমি কথা দিচ্ছি বিরক্ত করবো না তোমায়।
ঈশা কোনো উপায় না পেয়ে অয়নের শর্তে রাজি হয়ে যায়। এই লোকের শর্তে রাজি না হয়ে উপায় কি? যে কোনো সময় বদলে যেতে পারে। তাই রাজি হয়ে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। অয়ন ঈশার হাত ছেড়ে দিতেই ঈশা অয়নকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে চলে যায় নিজের ডেক্সের দিকে। অয়ন ঈশার চলে যাওয়ার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আপন মনে বলছে অয়ন
— আমার হতেই হবে। জীবনটা এমন করে নষ্ট আমি করবো না। ভূল করেছি তার শাস্তি দিবে সমস্যা নেই। তবে এইটা ভেবো না আমি মুক্তি দিবো তোমায়।
সারা দিন কাজ করে সন্ধ্যের দিকে ঈশা অফিসের গাড়ি করে বাসায় ফিরলো। বাসায় আসতেই ঈশা বেশ অবাক হয়ে যায়। এইসব কি হচ্ছে? ঈশা বাসায় আসতেই দেখতে পায়…………………………
#চলবে……………………….