ভালোবাসা বারণ পর্ব-২১

0
2258

#ভালোবাসা_বারণ
#পর্বঃ২১
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*কাঁধ থেকে ব্যাগটা নামিয়ে অয়ন চোখের উপর থেকে ব্লাক কালারের সানগ্লাসটা নামিয়ে ভালো করে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো রাস্তার ওপারে দাঁড়িয়ে থাকা এক জোড়া লাভ বার্ডের দিকে। ওপস সরি লাভ বার্ড না এটা তো ঈশা। কিন্তু ঈশার পাশে থাকা ছেলেটা কে? অয়ন দ্রুত রাস্তা পার হয়ে ঈশার দিকে এগিয়ে আসছে। ঈশা আর আবির একসাথে গল্প করতে করতে একটা গাছের নিচে এসে বসেছে

— আচ্ছা মিস ঈশা একটা কথা বলার ছিলো।

— জ্বি বলুন।

— আসলে আপনার পছন্দ, অপছন্দ সব কিছু আমার জানা থাকলে আমাদের বিবাহিত জীবনে অশান্তি আসবে না কখনও। তাই যদি আপনি আপনার পছন্দ অপছন্দ গুলো আমার সাথে শেয়ার করতেন। তবে ভালো হতো।

— জ্বি। আমার কোনো পছন্দ অপছন্দ নেই। আপনি বলুন আপনার কি কি পছন্দ, অপছন্দ।

— আমি একা বলবো?

— না আগে আপনি বলুন। তারপর আমি বলছি।

— আচ্ছা ঠিক আছে বলছি তা হলে। আসলে আমার খুব ইচ্ছে এমন কাউকে পাওয়া যে আমাকে পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করবে। এমন একজন মানুষকে আমার চাই যে ভিশন ডিসিপ্লিন মেনে চলে। বড় দের কে সম্মান করবে। ঈনফ্যাক্ট আমার মুখে মুখে তর্ক করা চলবে না। কেউ আমার উপর কথা বললে আমি সেটা পছন্দ করি না। আমি…………

আবির বকবক করে নিজের পছন্দ, অপছন্দের বিষয় গুলো খুব সুন্দর ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে প্রকাশ করছে ঈশার কাছে। কিন্তু ঈশা আবিরের কোনো‌ কথাই শুনছে না। এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে খুঁজছে সে। ঈশার অন্যমনস্ক ভাব আবির বুঝতে না পেরে নিজের মতো করে বকেই যাচ্ছে। হঠাৎ করে ঈশা আবিরের কথার মাঝে তাকে থামিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠে

— আচ্ছা শুনেছি সব। এখন এক কাজ করি চলুন আমরা অন্য কোথাও গিয়ে বসি।

ঈশার কথায় আবির একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলে উঠলো

— ওমা আমি তো কথা বলা শুরু করেছি আর আপনি সব কিছু না বলতেই বুঝতে পারলেন। স্ট্রেন্জ। কিন্তু এই জায়গাটা তো ভালোই। আহহহহ কি নিরিবিলি পরিবেশে। আমার বেশ ভালো লাগছে। কিন্তু আপনার সমস্যা হচ্ছে কি জন্য?

ঈশা বিরক্তি মাখা কন্ঠে বলতে লাগলো

— উফফফফ আপনি তো বড্ড বেশি কথা বলেন। আমার এখানে ভালো লাগছে না। তাই চলে যাবো। আপনি থাকার হলে থাকুন।

ঈশা বসা থেকে উঠে হাঁটতে লাগলো। ঈশার পিছন পিছন আবারও হাঁটতে শুরু করলো। ঐ দিকে অয়ন ঈশা কে পাগলের মতো খুঁজে চলেছে। কিন্তু পাচ্ছে না।

— এখানেই তো ছিলো! গেলো কোথায়? উফফফফ এতো তারাতাড়ি কোথায় চলে যেতে পারে?

গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আনমনে কথা গুলো ভাবছে অয়ন। না এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে চলবে না। ওটা ঈশাই ছিলো আর হাতের ছেলেটা কে তা আমার জানতে হবে। অয়ন আবারও ঈশাকে খুঁজতে লাগলো।

— এখানে কেনো আসলেন?

ঈশাকে উদ্দেশ্য করে কৌতুহলী কন্ঠে বলল আবির। আবিরের প্রশ্নের বিপরীতে ঈশা বলল

— রেস্টুরেন্টের ভিতর আমাদের কেউ দেখবে না। তাই আরকি এখানে এসেছি।

ঈশার কথা আবিরের মনের মধ্যে কৌতুহল সৃষ্টি করে দিলো।

— কেউ দেখবে না মানে? সরি আমি বুঝতে পারিনি।

ঈশা জিভে আলতো করে কামড় দিয়ে মনে মনে চিন্তা করছে

— ইশশশশ যা কি বলতে গিয়ে কি বলে ফেললাম! এখন কি করে এরে বুঝাই?

ঈশা আমতো আমতো করে বলতে লাগলো

— আরে আপনি দেখেন নাই গাছের নিচে বসে কথা বলার সময় কতটা ডিসটার্ব হচ্ছিলাম। উফফফফ পাখি গুলো কিচিরমিচির শব্দে আমার মাথাটা গরম করে দিচ্ছিলো। তাই এখানে এসেছি। কিছু খেতে খেতে কথা বলা যাবে। আচ্ছা কি অর্ডার করা যায় বলুন তো!

ঈশার কথা শুনে আবির কি বুঝলো কে জানে? তবে তার মুখে হাসির রেখা দেখে ঈশা আঁচ করতে পারছে যে তার মিথ্যে কথা আবির বিশ্বাস করেছে। আবির আবার বকবক করা শুরু করলো আর ঈশা তার কথা শুনতে লাগলো। আবির বলছে

— আপনি দেখতে অপূর্ব সুন্দরী। আমার আপনাকে বেশ পছন্দ হয়েছে। আমার কি মনে হয় জানেন? আল্লাহ আপনাকে আমার জন্য সৃষ্টি করেছেন। আপনার রূপে আমি মুগ্ধ। আচ্ছা আমাকেও কি আপনার পছন্দ হয়েছে? সত্যি করে বলুন তো!

— জ্বি আসলে আমি কতটা সুন্দরী না। কথায়
আছে না যে যাকে যতটা পছন্দ করে। তার চোখে সে ততটা সুন্দরী লাগে। আপনার ও তেমন হয়েছে।

— ওমা তাই? তা হলে এক কাজ করি ঈশা তোমার দুটো ছবি ওর দু চোখের বিপরীতে বসিয়ে দেই। বেচারা সারা জীবন ধরে দেখতে থাকবে। অন্য কিছু দেখার প্রয়োজন নেই ওর। কি বলো? ঠিক বললাম তো?

ঈশার পিছন থেকে এই কন্ঠটা ভেসে আসতেই ঈশা চমকে যায়। অবাক চোখে মাথাটা পিছনে ঘুরাতেই দেখতে পায় অয়ন চৌধুরী তার পিছনে বসে ৩২টা দাঁত বের করে আছে। অয়নকে হঠাৎ করে দেখতে পেয়ে ঈশা অপ্রস্তুত হয়ে বলে উঠলো

— আপনি! এখানে কি করেন?

অয়ন নিজের টেবিল থেকে উঠতে উঠতে বলল

— আহহহহ অবাক হচ্ছেন কেনো? আপনি তো আর আমাকে ইনভাইট করে ডাকবেন না। তাই নিজ দায়িত্বে হাজির হলাম আমি।

অয়নের একি নতুন রূপ? আমার পাশে‌ অন্য কাউকে দেখার পরেও সে এতোটা নরমাল কি করে? অয়ন ঈশাকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে কিছু বলল না। অয়ন আবিরকে উদ্দেশ্য করে হাস্যজ্বল মুখে বলতে লাগলো

— হ্যালো ব্রো। আমি আয়ান আহম্মেদ শুভ। ঈশা আমার ফ্রেন্ড হয়। আপনার পরিচয় কি?

* আবার বেশ অবাক হলো অয়নের উপস্থিতিতে। আবির একবার অয়নের দিকে আবার ঈশার দিকে তাকাচ্ছে। অয়ন মৃদু হেসে ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— আহহহহহ মনে হচ্ছে বেশ বিভ্রান্ত উনি।আহহহহ ঈশা আমার সম্পর্কে ওকে অবগত করা উচিত ছিলো তো না কি!

ঈশা আবিরের দিকে মৃদু দৃষ্টিপাত করে বলল

— হ্যাঁ, উনি‌ আমার বন্ধু হয়।‌ বিশেষ বন্ধু আরকি।

আবিরে শান্ত হয়ে একটা প্রশান্তির শ্বাস ফেলে বলল

— আমি আবির আহম্মেদ। আবির টেক্সটাইল এর ওনার।

— আহহহহ আচ্ছা। তো কিছু খাচ্ছেন না কেনো? উফফফফ আপনি তো ভাই বেশ কেয়ার লেস লোক। মানে আপনার সামনে একটা কোল্ড ড্রিংক একটু একটু করে গরম হয়ে যাচ্ছে আর আপনি ঠান্ডা মাথায় সেটা দেখে যাচ্ছেন।

অয়ন কোল্ড ড্রিংক্স এর গ্লাসটা আবিরের দিকে এগিয়ে দিলো। আবির গ্লাসটা হাতে নিবে এমন সময় অয়ন গ্লাসটা ধপাস করে আবিরের গা এর উপর ঢেলে দিলো। আবির লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। অয়ন আবিরের দিকে বিষন্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে করুন কন্ঠে বলতে লাগলো

— সরি সরি আসলে আমি খেয়াল করতে পারিনি। আপনি তো ধরতে পারতেন গ্লাসটা। আপনি হুদাই লজ্জা পাবার নাটক করতে গিয়ে সবটা শরীরের ফেলে দিলেন।

অয়নের কথা শেষ হতেই আবির মৃদু হেসে বলল

— না না তেমন না। আসলে অসাবধানতাবশত! আমি বরং ফ্রেশ হয়ে আসছি।

— ইয়া অফকোর্স। টেক ইউ টাইম। সরি ব্রো।

আবার চলে যায় ফ্রেশ হতে। অয়ন শব্দ করে হেসে দিয়ে বলল

— আহহহহ কি ছেলেরে বাবা একটা গ্লাস ঠিক মতো সামলাতে পারে না আবার আসছে ঈশাকে সামলাতে। উফফফফ এদের জন্যই দেশে অতৃপ্ত নারীর সংখ্যা বেশি।

অয়নের কথা শেষ হতেই ঈশা রাগে গজগজ করতে করতে বলল

— মানে? অতৃপ্ত নারীর সংখ্যা বেশি মানে কি?

— আহহহহ কুল। এই সব আপনার বোঝার ক্ষমতা নেই। এখন বলুন এই ছেলের সাথে এখানে কেনো? আমাকে দেখে পালিয়ে আসছেন কেনো?

ঈশা ভিশন রেগে গিয়ে অয়নের দিকে কর্কশ গলায় বলল

— এই ছেলে আমার হুবু বর। আর আমি আপনাকে দেখে এই জন্যই পালিয়েছি কারন আমি চাই না আপনি আবার আপনার নোংরা মানসিকতা দিয়ে আমাদের সম্পর্ককে বিচার করুন।

— আহহহহ তাই গো? মানে আমি এমন একটা জিনিস যে কেউ যদি আমাকে না প্রত্যাশা করে আমি সেখানে বেশি উপস্থিতি জানান দেই। আফসোস হচ্ছে এই ভেবে যে আপনি ব্যর্থ চেষ্টা করছেন। আমি মোটেও আবিরকে দেখে কষ্ট পাচ্ছিনা। আর কষ্ট পাবো কেষ জোকার কে দেখে কি কেউ কষ্ট পায়? জোকার তো বিনোদন দেয় সব সময়।

ঈশা অয়নের কথা শুনে বেশ রেগে গেলো। একটা অপরিচিত লোককে নিয়ে কথা বলতেও তার বাঁধে না! ঈশা রাগে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলো অয়নকে

— আবির যদি জোকার হয়ে থাকেও তবুও সে আপনার মতো একটা বেয়াদব, নর্দমার…..

— আহহহহ হয়েছে তো। বাকি লাইন গুলো আমি জানি। নতুন কি কোনো কালেকশন আছে? থাকলে বলতে পারো।

অয়ন কে কি বলবে সে সত্যি ভেবে পাচ্ছে না। ঈশা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অয়নকে উদ্দেশ্য করে চিৎকার করে বলতে লাগলো

— নির্লজ্জ বেহায়া লোক একটা। এখান থেকে যাবেন কি না বলুন?

— যদি বলি যাবো‌ না তো কি হবে?

— আমি নিজে চলে যাবো।

— ওকে বায়। সাবধানে যাবেন কেমন।

ঈশা সাইড ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে হনহন করে বেরিয়ে যায় রেস্টুরেন্ট থেকে। অয়ন চেয়ারে বসে বসে হাসতে থাকে।
— এতো সহজে অয়ন চৌধুরী হার মানবে না মিস ঈশা। অপেক্ষা করো আর দেখো কি কি হয়।

* অয়ন অফিসে আসতেই বেশ চমকে যায়। অফিসে এসে অয়ন দেখতে পায়…………………….

#চলবে……………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here