#ভালোবাসা_বারণ
#পর্বঃ২২
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*অফিসে এসে অয়ন দেখতে পায় ঈশা সবাইকে কার্ড বিতরণ করছে। অয়ন গভীর দৃষ্টিতে তাকালো ঈশার হাতের দিকে। হুম বিয়ের কার্ড এটা। অয়ন মুখটা মলিন করে ব্লেজারটা ঠিক করে চলে যায় নিজের কেবিনে। ঈশা অয়নকে দেখতে পেয়ে মৃদু হাসলো। অয়ন নিজের কেবিনে বসে আনমনে ভাবছে ঈশার কথা। বার বার মনে হচ্ছে ঈশাকে কি সে হারিয়ে ফেলবে? অয়ন ভাবনায় মগ্ন হয়ে গেলো। হঠাৎ করে অয়নের কেবিনে আসে ঈশা। দরজার ওপার থেকে মৃদু কন্ঠে বলছে সে
— আসতে পারি স্যার?
অয়ন ঈশার কন্ঠ স্বর শুনে মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে বলল
— হ্যাঁ।
ঈশা কেবিনে এসে অয়নের টেবিলের উপর বিয়ের কার্ডটা রেখে মিটমিটিয়ে হেসে বলতে লাগলো
— স্যার, এই নিন আমার বিয়ের কার্ড আবির আর আমার বিয়ের কার্ড। উফফফফ! আপনাকে কিন্তু আসতেই হবে। আপনি হলেন চিফ গেস্ট।
ঈশার কথা শেষ হতেই অয়ন টেবিলের উপর থেকে কার্ডটা তুলে নিলো। অয়নের মুখ দেখে বেশ বোঝা যাচ্ছে তার মনের অবস্থা। ঈশা খোঁচা মেরে বলতে লাগলো অয়নকে
— আবির ছেলেটা বেশ ভালো জানেন। আমাকে অনেক ভালোবাসে। শুধু কি তাই? আমিও তাকে ভিশন ভালোবাসি। আমরা তো আমাদের ছেলে মেয়ের নাম ও ঠিক করে ফেলেছি।
অয়ন ঈশার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল
— তাই না!
— জ্বি তাই। আবির আর যাই হোক না কেনো কোনো দিন আমাকে ছোট করে কথা বলে না। অপমান তো দূরের কথা। আবির অনেক ভালো ছেলে।
— ওয়েট, ওয়েট আমি কখন বললাম যে ও খারাপ ছেলে? আর এই সব কথা আমাকে কেনো বলেন? লাইক জেইলাস ফিল করাতে চান আমায়? আমি তো জেইলাস হইনা।
— তাই? না হলেই ভালো। আসছি আমি আর শুনুন মিস্টার অয়ন চৌধুরী বিয়েতে অবশ্যই আসবেন কেমন।
ঈশার কথা শেষ হতেই অয়ন খিট খিট করে হেসে ফেললো। ঈশা অয়নের হাসির কারন বুঝতে পারছে না। পাগল হয়ে গেলো নাকি? ঈশা অয়নের দিকে কৌতুহল পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অয়ন বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ঈশার দিকে একটু ঝুঁকে বলতে লাগলো
— পাগল ভাবছেন বুঝি? আরে না না আমি পাগল হয়ে যাই নি। যাস্ট ভাবছি আপনার বিয়ে আর আমি উপস্থিত থাকবো না তা কি করে হয়? সপরিবারে আসবো চিন্তা করিয়েন না মিস ঈশা। আমি না আসলে বিয়ে হবে কি করে?
— হুম সেটাই তো। আপনার আসতেই হবে।
— জ্বি।
* ঈশা অয়নের কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। অয়ন ঈশার চলে যাবার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। অতঃপর আপন মনে বলছে সে
— আবির কে নিয়ে যত ইচ্ছে হয় উড়ো শেষ সময় বাজিমাত করবো আমি। এখন চাপ না নিয়ে একটু চিল করি।
ঈশা নিজের ডেক্সে বসে কাজ করছে। তবে যত চাইছে মন দিয়ে কাজ করতে তত কাজে ভূল হচ্ছে। অয়নের সেই রহস্যময় হাসির কথা মনে পরছে তার। লোকর সাথে পরিচয় বহুদিনের হলেও এখনও তাকে চিনতে পারিনি আমি। সত্যি একটা গোলক ধাঁধা লোক উনি।
— হ্যালো, কিরে এতো কল করছিস কেনো? দেশে কি আগুন লেগেছে নাকি? অসহ্য!
— আগুন লাগলে তোকে কেনো কল করবো? তুই কি রেসকিউ টিমের সদস্য নাকি। আজব।
— না আমি কোনো টিমের সদস্য না। সদস্য কেমনে হবো? এখন উবদি টিম বানাইতে ফেল মারছি আবার সদস্য! হাস্যকর বিষয়।
— আহহহহরে তোর বাবা তো তোকে টিম বানাতে সাহায্য করতে চায়।
— ওয়াট?
— অবাক হচ্ছিস কেনো অয়ন? মনে হয় তুই কিচ্ছু জানিস না।
— আরে সত্যি কিছু জানি না। বাবা আবার কি করলো?
— কি করবে? আমাদের বাসায় এসে বলে তোর আর আমার বিয়ের কথা। আমার বাপ তো এমনিতেই তোর উপর ক্রাশ খাইছে এখন তোর বাপ বলার সাথে সাথেই আমার বাপ হ্যাঁ হ্যাঁ আমাদের সমস্যা নেই। আমরা রাজী। এই সব বলা শুরু করেছে।
— আহহহহ এতো ভালো ছেলেকে কেউ হাত ছাড়া করতে চায় না। তাই আরকি হ্যাঁ হ্যাঁ করে।
— হুম কত্ত ভালো তুই! জানা আছে আমার।
— জানলেই ভালো। এখন কল করেছিস কেনো?
— তোর মতামত জানতে কল করেছি।
— ওহহহহ গড! তোর মতো একটা জিনিসকে বিয়ে করবো আমি? ঐ ঈশার কি হবে তাহলে?
— মানে? আমি জিনিস মানে? এই বলে কি করছি আমি?
— কি করিস নাই? কলেজে শুধু মাত্র সিনিয়র না। জুনিয়রদের কেও ছাড়িস নাই। আবার বলিস কি করেছি?
— ঐ জুনিয়র ছেলেদের তো আর রিলেশন করার এক্সপিরিয়ান্স নাই। তাই ওদের শিক্ষাচ্ছিলাম আমি।
— ওরে তুই তো আবার জাতীয় রিলেশন শিক্ষা একাডেমীর শিক্ষিকা। আমি তো ভূলেই গিয়েছিলাম।
— হয়েছে হয়েছে আর কিছু বলতে হবে না। তুই ঈশা কে নিয়ে থাক।
— জ্বি সেটাই। রাখছি
কলটা কেটে দিয়ে একটা প্রশান্তির শ্বাস ফেলে অয়ন। বিরবিড় করে আপনমনে অয়ন বলছে
— বাবার ও তর সইছে না আমাকে বিয়ের করানোর। আমার ও দোষ আছে। তখন যদি ঈশা কে সন্দেহ না করে বিয়েটা করে নিতাম। তা হলে আজ ঐ আবিরকে সহ্য করতে হতো না। দেখতে দেখা যায় কেমন? উফফফফ মনে হয় জঙ্গল থেকে উঠে এসেছে জঙ্গলি একটা। ঈশার ও পছন্দ। আল্লাহ বাহ বাহ দিতেই হয়।
অয়ন কথাটা শেষ করে বিয়ের কার্ডটা হাতে নিলো। বিয়ের ডেট আসতে আর সাত দিন বাকি আছে। এই সাত দিনের মধ্যেই কিছু একটা করতে হবে।
— হ্যালো ঈশা কোথায় আছো তুমি?
নিজের ডেক্সে বসে কাজ করছে ঈশা। হঠাৎ করে আবিরের কল আসে। বিরক্তি থাকা সত্ত্বেও কলটা পিক করলো ঈশা। অনইচ্ছে থাকার পরেও আবিরের প্রশ্নের উত্তর দিলো সে
— অফিসে আছি।
— এখনি বেরিয়ে আসো।
— হঠাৎ করে অফিস থেকে চলে আসবো কেনো?
— আরে বেরিয়ে আসো তো তারপর বলছি।
— আচ্ছা।
ফোনটা কেটে দিয়ে ঈশা আনমনে ভাবতে লাগলো কিছু সময় পরেই তো অফিস শেষ হয়ে যাবে। এখন কোথায় নিয়ে যাবে আবির? ধূর ভালো লাগে না এই ছেলের যন্ত্রণা। কি করবো আমি? অয়নকে শাস্তি দেয়ার জন্য নিজে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছি।
* ঈশা ডেক্স থেকে উঠে ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে যায় অফিস থেকে। আবার এড্রেসটা সেন্ড করে দিয়েছে অনেক আগেই। ঈশা রিক্সায় করে চলে যায় আবিরের দেয়া এড্রেস অনুযায়ী। অপরিচিত একটা জায়গা। তবে ঈশার কোনঝ ভয় করছে না। আবিরের দেয়া এড্রেস অনুযায়ী চলে আসে ঈশা। ঈশা রিক্সা থেকে নামতেই বেশ অবাক হয়ে যায়। এটা কোন জায়গা? ভাবছে ঈশা। হঠাৎ করে ঈশার ফোনে আবিরের কল চলে আসে। ঈশা কলটা পিক করতেই আবির বলতে লাগলো
— কতদূর আছেন?
— এই তো চলে এসেছি। আপনি কোথায়?
— আমি আছি। একটা কাজ করুন সামনে যেই নাইট ক্লাবটা দেখতে পাচ্ছেন ওখানে চলে আসুন।
— মানে? ওখানে কেনো আসবো?
— উফফফফ তুমি বড্ড বেশি প্রশ্ন করো ঈশা। আগে এসেই তো দেখো।
— হুম
* ঈশা ফোনটা কেটে দিলো। নাইট ক্লাবে আসার জন্য আবির আমায় বললো কেনো? ও কি অয়নের মতো! না না এসব কি ভাবছি? সবাই কি আর অয়ন নাকি? এটা আমার ভূল।
ঈশা নাইট ক্লাবে প্রবেশ করলো। নাইট ক্লাবে আসতেই ঈশা ভিন্ন এক আবিরকে দেখতে পেলো। বন্ধুদের সাথে ড্রিংক্স করছে বসে বসে। এই দৃশ্যটা দেখা ঈশার জন্য বরাবরের মতো কষ্ট কর। ঈশা এই সব পছন্দ করে না। ঈশা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো আবিরকে। আবির ঈশাকে দেখতে পেয়ে বন্ধুদের কাছ থেকে উঠে ঈশার দিকে চলে আসে। ঈশা আবিরের দিকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
— এইসব কি? এখানে কেনঝ ডেকেছেন আমায়?
আবির মৃদু হেসে ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— তেমন কিছু না। ঐ বন্ধুরা মিলে একটু ইনজয় করছি এই আরকি। আসো সবার সাথে তোমায় পরিচয় করিয়ে দেই।
আবির ঈশার হাত ধরে ঈশাকে ওর বন্ধুদের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো। ঈশা নিজের হাত আবিরের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল
— আমার এই হাত ধরে হাঁটা পছন্দ না। সো প্লিজ
— আচ্ছা ঠিক আছে। চলো
ঈশার হাত ছাড়িয়ে নেয়াতে আবির যে খুশি হয়েছে তা কিন্তু নয়। আবির ঈশাকে একে একে তার সকল বন্ধুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। আবির সোফায় বসে আছে। ঈশা চলে যেতে চেয়েছে কিন্তু আবির ঈশাকে অনেক অনুরোধ করে থাকার জন্য। ঈশাও আর কোনো উপায় না দেখে বাধ্য হয়ে থাকলো ক্লাবে। ডান্স ফ্লোরে সবাই ইনজয় করছে। আবির ঈশাকে ড্রিংক অফার করে। ঈশা না করে দিলো। আবির জোর করতে লাগলো
— উফফফ খাচ্ছো না কেনো?
— আমি এই সব খাই না। প্লিজ জোর করবেন না।
— তা বললে হয়? একবার ট্রাই তো করে দেখো অনেক মজা লাগবে।
— প্লিজ।
— খেতে তো হবেই। আমি আছি ভয় নেই। আজ কোনো বারণ শুনছি না।
আবির জোর করে ঈশাকে ড্রিংক করাতে চেষ্টা করছে। ঈশার ঠোঁটের উপর গ্লাসটা চেপে ধরে আবির। ঈশা প্রান পণ চেষ্টা করছে আবিরকে আটকাতে কিন্তু পারছে না। হঠাৎ করে আবিরকে ভিশন অবাক করে দিলো………………………..
#চলবে……………………………..