#রহিবে_মনের_গহীনে
#পর্ব_১৭
#Nishi_khatun
পরেরদিন সকালে নাস্তা করে ইফান আর অরিন বেড়িয়ে যাবে, ঠিক সে সময় অরিন ইফান কে উদ্দেশ্য করে বলে,
-“লেকচারার সাহেব আপনার এতো তাড়া কিসের?”
ইফান ভ্রূ কুঁচকে বলে,
–“কালকে না তুমি আমাকে বললে আজকে তোমাদের বাড়িতে যাবে। তাহলে এখন আবার উল্টা আমাকে বলছো আমার এতো তাড়া কিসের? জানো না তোমাদের বাড়ি থেকে আসা-যাওয়া তে কতোটা সময় লাগে?”
“হুম জানিত তা-ই জন্য তো বলছি এতো তাড়াতাড়ি করার দরকার নেই। দরকার পড়লে আজকে না হয় আমাদের বাড়িতে থেকে আসবো।
আচ্ছা বাদ দিন সে কথা।”
এরপর অরিনস জোড়ে ডাক দিয়ে বলে,
“এই আজরিন আপু কই তুমি?
জলদি বেড়িয়ে আসো আমাদের দেড়ি হয়ে যাচ্ছে। ”
ইফান গম্ভীর সুরে বলল- এই আজরিন কে দিয়ে তোমার কি দরকার? ওকে কেনো এতো ডাকাডাকি করছো?
-“আহা আমি একলা যাব সে কথা তো কালকে বলি নাই। আপু যাবে আমাদের বাড়িতে তা-ই তো তাকে নিয়ে যাবো।”
আজরিন রেডি হয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে আসছিল তখন ইহান আজরিন কে উদ্দেশ্য করে বলে,
“এই মিষ্টির ঢোপ তুই সাতসকালে এতো সাজগোজ করে কই যাচ্ছিস?”
আজরিন রাগী দৃষ্টিতে ইহানের দিকে তাকিয়ে বলে,”আমার ওজন ৪৫ কেজি হবে না। সেখানে আমাকে তোমার কোনদিক দিয়ে মিষ্টির ঢোপ মনে হয়?
বিদেশে থেকে যে চোখটা হারিয়ে এসেছো এটাই তার বড় প্রমাণ। ”
ইহান মুখ ভেঞ্চি দিয়ে ঠোঁটের কোণায় মিষ্টি হাসির রেখা টেনে বলে,
-” আমাকে নিয়ে তোর চিন্তা করার দরকার নেই। সাতসকাল এই সাজ-সজ্জার রহস্য কি জানতে পারি?”
আজরিন হাসি মুখে উত্তর করে,
আমি অরিনের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছি। অরিন এতো মিষ্টি একটা মেয়ে তাইতো ওর বাবা- মা’র সাথে দেখা করার জন্য মনটা উশখুশ করছিল। অরিনকে বলতেই মেয়েটা ওদের বাড়িতে যাবার জন্য রাজী। তা-ই এতো সকালে কষ্ট করে এতটুকু সাজসজ্জা করেছি ওদের বাড়িতে যাবার জন্য।”
ইহান -তা কে কে যাবে অরিনদের বাড়িতে?
“তা অরিন ভালো জানে!”
ইহান আজরিনের পেছনে পেছনে বাড়ির ড্রয়িংরুমের সামনে চলে আসে।
ইহান অরিনকে দেখে চিৎকার করে বলে ওঠে,
–“উফফফফফপ মাশাল্লাহ্ কী সুন্দর শুভ্রপরী আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। উফফ অরিন তোমার কি আমাকে খুন করার ইচ্ছা হয়েছে? কেনো সেজেছ এভাবে শুভ্রপরী বলতে পারো?”
অরিন একবার নিজের দিকে তাকিয়ে ভালো করে দেখে বলে,
“কই আমি তো পরী সাজি নাই? সাদাসিধে একটা সিম্পল শুভ্ররং এর ড্রেস পরেছি। আর সব সময়ের মতো হিজাব এইতো আমার সাজগোজ। আমি এত রং-চং মাখি না ভাইয়া। যার জন্য কোন ছেলে আমাকে দেখে উষ্টা খেয়ে পড়বে।”
ইহান- উষ্টা খেয়ে পড়ার জন্য এতো সাজগোজ এর দরকার হয় না। কিছু মানুষকে সিম্পল সাজে আহামরি সুন্দর লাগে। আবার কিছু মানুষ বাহারি সাজসজ্জা করার পরেও তাদের পেত্নী ছাড়া আর কিছু মনে হয় না।”
–“আমি এতোশত কাহিনী জানি না ভাইয়া।”
এদের দু জনের কথা শেষ হতে না হতেই ইফান আজরিনের কাছে গিয়ে বলে,
“মাশাল্লাহ্ রিন তোরে খুব সুন্দর লাগছে। তুই সব সময় এভাবে চলাফেরা করবি। কেউ কিছু বললে শুনবি না। নিজের যেমন থাকতে ইচ্ছা হবে তেমন থাকবি অন্যের জন্য নিজেকে বদলাতে যাবি না।”
ইহান ইফান কে উদ্দেশ্য করে বলে,”ভাই লক্ষ একদিকে দৃষ্টি তো অন্য কোথাও! ”
-মানে কি বলতে চাইছিস?
মানেটা খুব সোজা! তুই বকতিতা দিচ্ছিস আজরিন কে উদ্দেশ্য করে তবে তোর দৃষ্টি কিন্তু অরিনের দিকে? তাহলে কি বুঝবো বলবি?’
অরিন বলে,
“আসলে লেকচারার দের যা কাজ স্যার তা-ই করছে। একসাথে দুই কাজ করছে স্যার এক তো প্রশংসা করছে অন্যদিকে জ্ঞান দিচ্ছে। যাতে আমাদের সবার উপকার হয় তা-ই না স্যার?”
ইফান বলে,”তোমরা কি জানো? মনে করো অরিন আমার মনের মতো হতে চাইছে যাতে আমি তাকে পছন্দ করি। কিন্তু একটা সময় দেখা যাবে অরিন ঠিক নিজেকে বদলে নিবে ততোদিনে আমার পছন্দ বদলে যাবে। কী দরকার শুধু শুধু অন্যের মনের মতো হবার জন্য নিজেকে পরিবর্তন করার? যে তোমাকে পছন্দ করবে, তুমি যেমন ঠিক সে রুপে পছন্দ করবে।আহামরি কিছু থাকার দরকার হবে না।”
ইহান চিৎকার করে বলে,
“ওরে আমার লেকচারার ভাই তুই এবার থেমে যা।
এটা তোর ভার্সিটি না আর আমরা তোর স্টুডেন্ট না।”
আজরিন বলে,
“আচ্ছা অনেক হলো জ্ঞান আদানপ্রদান এবার আমাদের যাওয়া দরকার নয়তো দেড়ি হয়ে যাবে।”
তিনজন যাবে তখন ইহান বলে,
“কি গো শুভ্রপরী আমাকে তোমার সঙ্গে নিবে না?'”
অরিন আনন্দিত হয়ে বলে, “সত্যি যাবেন আপনি?”
“যদি সঙ্গে যাবার আমন্ত্রণ দাও তাহলে যাবো নয়তো যাবো না!”
অরিন – কী যে বলেন না ভাইয়া!
আমাদের সাথে গেলে ভালোই হবে।
কারো কোন সমস্যা নেই।
ইফান হ্যা না কোন কথায় বলে না।
ওর তো ইচ্ছা করছিল এদের কাউকে সাথে না নিয়ে যেতে। কিন্তু কি আর করবে কোন কিছু করার উপায় নেই।
এদিকে গাড়িতে আজ ড্রাইভার নেই। তাই ইফান নিজে ড্রাইভ করবে। ইফানের পাশে আজরিন বসেছে পেছনের শিটে ইহান আর অরিন। দুজনে বসতে না বসতেই গল্পের ঝুড়ি খুঁলেছে। সেখানে যে আরো দু জন আছে সেদিকে কারো খেয়াল নেই।
ইফান প্রচুর বিরক্ত আজ। কই সারাবছর তো সামনের ফ্রন্ট শিটে বসে ম্যাডাম। আজ আমি যখন গাড়ি ড্রাইভ করছি তখন ম্যাডাম আমাকে ড্রাইভার বানিয়ে পেছনের শিটে গিয়ে আয়েশ করে বসে গল্পগুজব করছে।
আহা কী ভালো স্টুডেন্ট আমার।
এমন স্টুডেন্ট আমার আরো দুই তিনটা থাকলে
মৃত্যু নিশ্চিত ছিলো। একটার জ্বালায় আমি শেষ।
এদিকে গাড়ি চলছে বিরামহীন গতিতে।
হঠাৎ করে অরিন ইফান কে উদ্দেশ্য করে বলে,
–“লেকচারার সাহেব! আপু আর ভাইয়ার খুব শখ আমার বাবা- মা’র সাথে দেখা করার। প্লিজ গাড়িটা কে তাদের ঠিকানাতে নিবেন। ”
গাড়ির সামনের কাঁচে একবার অরিন কে দেখে ভাবতে থাকে, “মেয়েটা সত্যি অনেকটা বড় হয়ে গেছে
আর অনেক বুদ্ধিমতী হয়েগেছে। নিজের অনুভূতি গুলো কি সুন্দর আড়ালে রেখেছে। সত্যি শুভ্রপরী মায়াবতী হয়ে যাচ্ছে। কখন যে তার মায়াজালে জড়িয়ে গেছি বুঝতেই পারি নাই। তবে তার মায়াটা এবার ছাড়তে হবে নয়তো মেয়েটার ভবিষ্যৎ নষ্টা হয়ে যাবে।”
সময়টা কখন যে পাড় হয়ে গেছে কেউ জানে না।
ওদের গাড়িটা তাদের গন্তব্যে পৌঁছে গেছে।
(পর্ব বড় করে দেওয়া সম্ভব না তাহলে রেগুলার দিতে পাড়বো না। ছোট করে রেগুলার দিতে চেষ্টা করবো দুদিন ব্যস্ত ছিলাম অনেক।)
‘
‘
‘
চলবে….