#রহিবে_মনের_গহীনে
#পর্ব_৩৩
#Nishi_khatun
অরিন রুহানিকার সাথে কিছু পারোসোনাল কথা বলবে বলে তাকে ছাঁদে ডেকে আনে।
ছাঁদের আসতেই দরজা বন্ধ করে দেয় অরিন।
তারপর ইফান আর অরিনের কাঁপল ছবিটা রুহানিকার সামনে ধরে বলে,
“আপু এই লোকটার সাথে তোমার কি কোন সম্পর্ক ছিল?”
এতো বছর পর নিজের অতীত সামনে দেখে রুহানিকা একটু চমকে ওঠে। দ্রুত বলে,
“তুই এই ছবিটা কোথায় পেয়েছিস? জানিস আমি এই ছেলেটার সাথে খুব অন্যায় করেছি। জানি কোনদিন তার সামনে দাঁড়াতে পাড়বো না। সেই মুখটা আমার নেই রে বোন। তবে তুই ছবিটা কোথায় পেলি বলবি?”
অরিন তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,
“আপু ছবিটা কোথায় পেয়েছি ওটা বড় বিষয় নয়! তুমি যে এতিম খানাতে বড় হয়েছো এটা আগে জানতাম না। তুমি বড়লোকের মেয়ে হয়ে কি করে স্বার্থপরের মতো ঐ নিরিহ লোকটার স্বপ্ন ভেঙ্গে খান- খান করেছিলে। জানো তোমার করা বিশ্বাস ঘাতকতার জন্য আজও কাউকে বিশ্বাস করতে
পারে না। কেন তাকে নিজের স্বার্থে মিথ্যা কথা বলে চিট করেছিলে? কেন তাকে জীবন্ত লাশে পরিণত করেছিলে?”
তখন রুহানিকা চিৎকার করে বলে,
“এসবে জন্য তুই দায়ী। তোর জন্য আমি বাড়ি ছেড়ে চলে গেছিলাম। তোর জন্য বাবা- মা’র উপর রেগে নিজেকে এতিম গরিব বলে পরিচিত করেছিলাম ঐ ইফানের সামনে।”
অরিন- আমি কি করেছি? আমাকে কেনো শুধু শুধু দোষী বানাতে চাইছো?
রুহানিকা তখন তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,
“তোর পৃথিবীতে আগমনের খবরটা আমি হজম করতে পারি নাই। ভাইয়া আমার থেকে সাত বছরের বড় ছিল। আমি ভাইয়া, বাবা- মা আমাদের চার জনের ছোট একটা পরিবার। খুব সুখেই দিন যাচ্ছিল আমাদের। না ছিলো কোন অভাব, না ছিলো হিংসা করার কোন কারণ। হুট করে একদিন দেখি বাবা- মা খুব খুশি।”
তারা আমাদের দু জনকে ডেকে বলল- আচ্ছা আদিত্য তোমরা দুজনে এখন অনেক বড় হয়েগেছ। আচ্ছা এখন যদি তোমাদের কোন ছোট ভাই অথবা বোন আসে তখন কি তুমি খুশি মনে তাকে মেনে নিতে পাড়বে?
আদিত্য সাথে সাথে আলহামদুলিল্লাহ্ বলে, তারপর সে বাবা- মা কে উদ্দেশ্য করে বলে,
“আমরা বড় হয়ে যাচ্ছি। কিছুদিন পর হয়তো লেখাপড়ার জন্য তোমাদের ছেড়ে দূরে চলে যেতে হবে। তখন তোমরা দুজনে একলা থাকবে কি করে? বাড়িতে শুধু কাজের মানুষদের সাথে সময় পাড় করা সম্ভব না। এমনকি মুঠোফোনের দুই পাঁচ মিনিটের কথায় অন্তরে শান্তি পাবে না। আর তাছাড়া কয়েকবছর পর যখর রুহানিকার বিয়ে হয়ে যাবে তখন আমাদের বাড়িটা পুরো ফাঁকা থাকবে। তখন না হয় এই বাড়িটা কে মুখরিত করার জন্য ঐ ছোট পরী অথবা রাজপুত্র রইবে।
তবে যখন তোমাদের সাথে ছোট আরেকজন থাকবে তখন ঠিকি সময় কেটে যাবে। আর সন্তান আল্লাহ দান। আমি আর রুহানিকা যেমন তোমাদের আদরের তেমনি তৃতীয় জন ও আমাদের সকলের আদরের নয়নমণি হবে।”
বাবা- মা আদিত্যের কথা শুনে খুব সন্তুষ্ট হন। কারণ ছেলেমেয়ে যখন বড় হয়ে যায় তখন তারার তাদের বাড়িতে ছোট ভাইবোনের আগমনে লজ্জা বোধ করে। তবে আদিত্যের মন মানুষিকতা সবার থেকে আলাদা। সে খুব সহজ ভাবে এই বিষয়টা মেনে নিয়েছে। আসলেই তো বাবা- মা’র কাছে কারো একজনের থাকা দরকার।
বাবা- মা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“রুহ মামুনি তুমি কি আদিত্যের সাথে সহমত? ”
আদিত্য রুহানিকার চুল টেনে বলে,
“ধুর ও কেন দ্বিমত হতে যাবে? রুহ তো আমার থেকেও বেশি খুশি কারণ, আমি বড় বলে সারাক্ষণ ওর উপর খবরদারি করি। তা-ই ম্যাডাম কত আফসোস করে, সে যদি বড় হতো তাহলে
সেও এমন ভাবে তার ছোটদের উপর খবরদারি করতো। তাই আমার থেকেও বেশি খুশি রুহানিকা তা-ই না রে?”
সেদিন মুখে মিথ্যা হাসি ঠোঁটে ফুঁটিয়ে তুলতে হয়েছিল। কেনো জানি তৃতীয় কারো আগমনের খবরটা মন থেকে মেনে নিতে পারি নাই। কেন দুজনে ত বেশ ভালোই আছি। তৃতীয় কারো কি খুব দরকার? সে এই দুনিয়াতে না আসলে এমন কোন ক্ষতি ত হবে না। তাহলে তাকে আমাদের মাঝে এনে আমাদের ভালবাসার ভাগিদার কেন বৃদ্ধি করছে? এমনিতে সবাই ভাইকে বেশি ভালোবাসে, সেখানে আবার তৃতীয় জন তাও ছোট বাচ্চা। তাকে পেলে আমাদের কথা মনে থাকবে তো সবার?
সময়ের সাথে সাথে তোর আগমনে বাড়িটা পুরো মুখরিত হয়ে ওঠে। তবে এসবের মধ্যে কোথাও আমি নিজেকে খুব অসহায় ভাবে শুরু করি। বাবা- মা সারাক্ষণ তোকে নিয়ে ব্যস্ত আমার জন্য তাদের আর সময় ছিলো না। আমি তাদের সাথে আগের মত একা সময় কাটাতে পারতাম না। একটা সময় তোর জন্য আমি বাবা- মা’র উপর প্রচুর রেগে যায়।
কারণ যখন মাধ্যমিক পরিক্ষা দিব তখন তোকে মা সাথে করে স্কুলে নিয়ে যায়। আমার সকল সহপাঠীরা সেদিন এত বড় মেয়ের তিন চার বছরেে পিচ্চি বোন দেখে বহুত উপহাস করে। তা আমি সহ্য করতে পারি নাই। সেদিন যত রাগ ক্ষোভ ছিল সব কিছু মূহুত্বের মধ্যেই ঘৃণায় পরিণত হয়।
পরিক্ষার পর আর এবাড়িতে থাকবো না বলে মনস্থির করি। বাবা- মা কখনোই আমাকে তাদের থেকে দূরে লেখাপড়া করতে দিবে না। তা-ই তাদেরকেও কিছু কটু কথা শুনিয়ে দিয়েছিলাম।
“তোমাদের বাচ্চার দরকার ছিল একটা পেয়েছ। তাকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকো! আমার কথা এতো চিন্তা করার দরকার নেই তোমাদের। আমাকে একা নিজের মতো থাকতে দাও। শুধু সময় মত আমার প্রাপ্য টাকা পাঠিয়ে দিও তাহলেই হবে।”
বাবা- মা সেদিন আমার এমন দাম্ভিক ব্যবহার দেখে মনে বড় আঘাত পায়। এরপর আর কি মাধ্যমিকের রেজাল্ট দেওয়ার পর নিজের ইচ্ছাতে দূরের একটা কলেজে ভর্তি হয়। সেখানে নিজের পরিচয় গোপন রাখি। কি দরকার যে পরিচয় দিলে আমাকে লজ্জিত হতে হবে, সে পরিচয় না হয় নাই বা দিলাম কাউকে।
ওখানে ভর্তি হবার পর আমার ইফান নামের একটা ছেলের সাথে পরিচয় হয়। ছেলেটা অনেক ভাল আর ভদ্র। বেচারা আমি বলতে পাগল। তার আবার স্বপ্ন বিদেশে যেয়ে লেখাপড়া কমপ্লিট করা। বাড়িতে তোর জন্য লজ্জিত হতে হত আর কলেজে ঐ ইফানের জন্য। সারাক্ষণ আমার আগেপাছে মাছির মত বনবন করতো। সবাই ভাবত আমাদের দু জনের মধ্যে গভীর প্রেম। তবে ইফানের তরফ থেকে প্রেম ভালোবাসা থাকলেও আমার তরফ থেকে কিছুই ছিল না।
একটা সময় বাড়ি থেকে আমাকে জানানো হয়। বাবার কোন এক বন্ধুর ছেলের সাথে তারা আমার এইচএসসি পরিক্ষা শেষ হলে বিয়ে দিবে। আরে কিসের বিয়ে? এখনো নিজের মত করে দুনিয়া দেখলাম না। সেখানে বিয়ের প্রশ্ন আসে না। সে বিয়েতে না করে দেওয়াতে তারা আমার হাত খরচের টাকা কমিয়ে দেয়। তাতে আমার কি? ইফানের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে আমি চলতে শুরু করি।
একদিন হুট করে মাথায় শয়তানি বুদ্ধি আসলো এই গাধাটা পারবে আমার ভবিষ্যৎ এর ইচ্ছা গুলো পূরণ করতে। ওর কাছে জিদ করে শর্ত দিলাম আমাকে বিদেশে লেখাপড়া করাতে যেতে দিতে হবে। বোকাটা আমার সেই শর্ত পূরণের জন্য নিজের স্বপ্ন বিষর্জন দিয়ে আমাকে বিদেশে পড়ানোর সকল ব্যবস্থা করে।
তবে বিদেশে যাবার আগে আমি তার হৃদয়টাকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়ে যায়। সাথে পরিবারের উপর থাকা ক্ষোভের জন্য নিজেকে এতিম দাবী করি। ছেলেটা সেদিন প্রচুর কেঁদেছিল। তবে আফসোস আমার পাষাণ হৃয়দে একটু নাড়া দিতে পারে নাই। তারপর বিদেশে গিয়ে লেখাপড়া করার সময় ডেবিটের সাথে পরিচয়। তাকে বিয়ে করে এইতো সুখেই আছি দুজনে।
অরিন বোনের এসব কথা শুনে এতো সময় চোখের জল বিষর্জন দিচ্ছিল! এবার চোখের জল মুছে সে বড় বোন কে উদ্দেশ্য করে বলে,”নিজের মনে এতো রাগ ছিল আমার জন্য? যে রাগের আগুনে তুমি ঐ নিরিহ লোকটার হৃদয়টাকে ক্ষতবিক্ষত করতে একটু পিছপা হও নাই। জানো প্রকৃতি তোমার বিচার করেছে। এত বছর বিয়ে করে সংসার করছ। আফসোস এখন পর্যন্ত মাতৃত্বের স্বাদ পাওনি।
কী করে পাবে আপু? পাপ কখনো পিছন ছাড়ে না।
তুমি এক মায়ের সন্তানের স্বপ্ন ভেঙ্গেছ, তার হৃদয়টাকে করেছ ক্ষতবিক্ষত! তাকে জীবন্ত লাশে পরিণত করে রেখে গেছো। তা-ই জন্য প্রকৃতি তোমাকে আজ পর্যন্ত মা হবার সৌভাগ্য দান করে নি।”
এসব বলে অরিন দ্রুত ছাদ থেকে প্রস্থান করে।
(গঠনমূলক মন্তব্য করবেন সবাই! সামনের পর্বে সারপ্রাইজ থাকলেও থাকতে পারে)
”
”
”
চলবে….