মেঘের পরে রংধনু পর্ব-২৭

0
889

#মেঘের_পরে_রংধনু
#পর্ব_২৭
লিখা: Sidratul Muntaz

অরিন ধীরে ধীরে সিঁড়ি থেকে নামছে। অর্ণভ তার থেকে কয়েক সিঁড়ি এগিয়ে রয়েছে। অর্থাৎ অরিন পেছনে আর অর্ণভ সামনে। অরিন ভালো করে মাইক্রোফোনটা চুল দিয়ে ঢেকে নিল। সে শুধু অ্যাংকারের কণ্ঠ শোনার চেষ্টা করছে। কিন্তু অ্যাংকার কিছু বলছে না কেনো?
অর্ণভের মাথায় এখন বহু প্রশ্নের বিচরণ। সবগুলো প্রশ্নের উত্তর নিশ্চিত করতে সে মনে মনে একটা ছক কষে রেখেছে। অরিনের এই রাতেরবেলা ইলহানের সাথে দেখা করতে যাওয়ার কথা শুনেই অর্ণভের মাথায় চট করে বুদ্ধিটা এসে গেল। সে এখন অরিনকে নিয়ে ইলহানের কাছে যাবে। তারপর নিশিতার স্ক্রিনশটে পাঠানো নাম্বারটায় ডায়াল করবে। এই কাজ সে একদম ইলহানের সামনে দাঁড়িয়ে করবে। যদি ইলহানের মোবাইল বেজে উঠে তাহলে সে ধরা খেয়ে যাবে। অর্ণভ অরিনকে হাতে-নাতে প্রমাণ দেখাতে পারবে যে নিশিতার প্রেমিক আর অরিনের হবু বর একই মানুষ! ইলহানের প্রতারণা অরিনের সামনে স্বচ্ছ পানির মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে। কিন্তু যদি ইলহানের মোবাইল না বাজে? যদি নাম্বার বন্ধ দেখায়? অথবা অন্যকেউ ফোন ধরে? অর্ণভ মনে-প্রাণে চাইছে যেনো ফোনটা অন্যকেউই ধরে। তাহলে ইলহানের উপর নড়বড়ে হয়ে যাওয়া বিশ্বাসটা পুনরায় শক্ত হয়ে যাবে। কিন্তু যদি নাম্বারটা বন্ধ থাকে তাহলে যে বিভ্রান্তি রয়েই যাবে! মনের খচখচানিটা কিছুতেই কমছে না অর্ণভের। অরিন আর অর্ণভ তাদের ভবন থেকে বের হয়ে প্রায় দশ কদম হেঁটেই ইলহানকে পেয়ে গেল। ইস্পাতের রঙের মতো পাজেরো গাড়িটার সাথে হেলান দিয়ে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে ছিল ইলহান। দূর থেকে অরিনদের আসতে দেখেই সে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। তার গাঁয়ে এখনও হলুদের পাঞ্জাবী। অরিনের সাথে অর্ণভকে দেখেই ইলহানের মুখের ভাব-ভঙ্গি বদলে গেল নিমেষে। অরিনরা কাছে আসতেই ইলহান জোরপূর্বক মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
” আসসালামু আলাইকুম, ভাইয়া।”
তারপর পাঞ্জাবীর পকেট থেকে হাত বের করে অর্ণভের সাথে হ্যান্ডশেক করলো। অর্ণভ বললো,
” কোথায় যাচ্ছো তোমরা? আমাকে কি বলা যায়?”
ইলহান একহাতে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বললো,
” নিশ্চয়ই। বলা যাবে না কেনো? আসলে আমরা স্পেসিফিকেলি কোথাও যাচ্ছি না। এমনি একটু কথা বলার জন্য ওকে বের হতে বলেছিলাম।”
অর্ণভ খেয়াল করেছে, সে যখনি ইলহানের সামনে যায় ইলহান কিছুটা ঝুঁকে তার সাথে কথা বলে। এইটা কি ভদ্রতার বহিঃপ্রকাশ নাকি অর্ণভ উচ্চতার দিক থেকে এতোই খর্ব যে ইলহান নিচু না হয়ে কথা বলতে পারে না? কিন্তু অর্ণভ তো মোটেও খর্ব নয়। পাঁচ ফুট এগারো ইঞ্চি হাইট তার। ইলহান অবশ্য ফয়সাল সাহেবের সাথেও একইভাবে কথা বলে। বিষয়টা অর্ণভের কাছে ভদ্রতাই মনে হয়।
অর্ণভ সামান্য হেসে বললো,” আমি আশেপাশেই আছি। তোমরা দূরে কোথাও যেও না।”
ইলহান মুখের হাসিটা আরও একটু প্রসারিত করে বললো,” জ্বী ভাইয়া,থাকুন আপনি। এই রোডেই আমরা আছি। দূরে আর কোথায় যাবো?”
অর্ণভ ওদের সামনে থেকে সরে এলো। সে যেই পরিকল্পনাটা ভেবে রেখেছিল সেটা এখন একদমই করতে ইচ্ছে করছে না। ইলহানকে দেখেই অর্ণভের ধারণা বদলে গেছে। এই রকম অমায়িক আচরণের একটা ছেলে কখনও প্রতারক হতে পারে না। অসম্ভব! তাছাড়া অর্ণভের মনে হয় ইলহান ওকে দেখে যথেষ্ট লজ্জা পেয়েছে। লজ্জায় ইলহানের দৃষ্টি অপ্রস্তুত হয়ে যাচ্ছিল। সে সরাসরি চোখের দিকে তাকাতেও দ্বিধান্বিত হচ্ছিল। বার-বার ইতস্ততভাবে পাঞ্জাবীর পকেটে হাত গুঁজে আবার বের করে ফেলছিল। এক কথায় কিভাবে কি বললে ব্যাপারটা স্বাভাবিক দেখায় সেটাও বোধ হয় স্থির করতে পারছিল না বেচারা। এটাই তো স্বাভাবিক। ইলহান তো অরিনের সাথে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে এসেছে। এইখানে অর্ণভকে সে প্রত্যাশাই করেনি। তাই হঠাৎ দেখে লজ্জা পাওয়াটা অসমীচীন নয়। অর্ণভের এখন মনে হচ্ছে তার অরিনের সাথে এখানে আসাই উচিৎ হয়নি। শুধু শুধু এসে নিজেরও অস্বস্তি বাড়ালো আবার ইলহানকেও লজ্জায় ফেলে দিল। সব দোষ নিশিতার। অর্ণভ নিশিতাকে ম্যাসেঞ্জারে ফোন করলো।
” হ্যালো অর্ণভ ভাইয়া।”
” ঘুমিয়ে পড়েছিলি নাকি?”
” না, মাত্র সাড়ে এগারোটা বাজে। এতো জলদি ঘুমাবো কেনো?”
” আচ্ছা শোন, একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করতে ফোন দিয়েছি তোকে।”
” আচ্ছা বলো।”
” তোর ক্যাটবেরির বিষয়টা নিয়ে অনেক চিন্তা করলাম বুঝলি? এখন আমার মনে হচ্ছে শুধু নাম ক্যাটবেরি দিলেই হয় না। সেটা আসলেই খাঁটি ক্যাটবেরি কি-না যাচাই করে নিতে হয়। ”
” মানে?”
” মানে হচ্ছে, ক্যাটবেরি কিনতে গেলে আমরা কি দেখি? কোয়ালিটি, কোন দেশী, দাম ইত্যাদি বুঝে আসল-নকল বাছাই করে কিনি। তুই তোর ক্যাটবেরিটা বাছাই করে কিনেছিলি তো?”
” ধূর, রাতেরবেলা ফোন দিয়ে তুমি এসব কি অদ্ভুত কথা বলছো? আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না।”
” ঢুকবে কিভাবে? তুই তো মাথামোটা। ছাগল,ভেঁড়া। ওহ স্যরি, তুই তো ফিমেল। তাই হবে ছাগী,ভেঁড়ী।”
নিশিতা রেগে-মেগে দাঁত-মুখ খিচে বললো,
” হোয়াট দ্যা.. আমি ছাগী, ভেঁড়ী মানে?”
” মানে হচ্ছে তোর মস্তিষ্ক হাঁটুর জায়গায় আর হাঁটু মস্তিষ্কের জায়গায়। জীবনে কখনও সিটিস্ক্যান করিয়েছিস মাথার? তাহলে নিশ্চিত হওয়া যেতো আসলেই মস্তিষ্ক বলতে কিছু আছে নাকি তোর।”
” ভাইয়া! আমার কিন্তু খুব মেজাজ খারাপ লাগছে।”
” আরে শোন, আমি এতো বুদ্ধিমান প্রাণী হওয়ার পরেও মা আমার নাম দিয়েছে হামবলদ। তাহলে তোর ঘটনা শুনে কি বলবে বলতো? হামবলদি স্কয়ার নাকি হামবলদি স্কয়ার টু দ্যা পাওয়ার স্কয়ার?”
নিশিতা রাগের চোটে ফোন কেটে দিল। অর্ণভ তখন নিশিতাকে ম্যাসেজ করলো,
” আরে আবুলরাণী চেতিস কেনো? পুরো কথা শোন আগে। নাম-পরিচয় না জেনে শুধু একটা ফোন নাম্বারের উপর ভিত্তি করে কাউকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে তোর মতো বলদীকেই আমি প্রথম দেখেছি। তাহলে তোকে ছাগী, ভেঁড়ী ছাড়া আর কি বলবো? তুই তো হামবলদী টু দ্যা পাওয়ার ইনফিনিটি!”
নিশিতা এবার নিজেই অর্ণভকে ফোন দিল। অর্ণভ উপহাস করে ডাকলো।
” হ্যালো, হামবলদী!”
” ভাইয়া তোমার সমস্যাটা কি আমাকে বলবে? আমি যাকে যেভাবে খুশি বিয়ে করি তাতে তোমার কি আসে-যায়?”
” আমার অনেক কিছু আসে-যায়। এখনও সময় আছে নিশিতা। ভালো করে যাচাই করে নে। ওইটা কি আসলেই ক্যাটবেরি নাকি ক্যাটবেরির মতো দেখতে গুয়ের লেদা!”
” ছিঃ, তুমি কাউকে না জেনে এইভাবে অপমান করতে পারো না।”
” আচ্ছা, তুই কি কখনও ভিডিওকলে কথা বলেছিস ওর সাথে?”
” না। ভিডিওকলে কেনো কথা বলবো? আমাদের চুক্তির নিয়ম ভঙ্গ হবে না এতে? চুক্তির প্রধান শর্ত হলো বিয়ের আগে আমরা কেউ কারো মুখ দেখতে চাইবো না।”
” আজাইরা চুক্তি। এইসব চুক্তি-ফুক্তি ভেঙে প্র্যাকটিক্যাল কথা শোন। যদি বিয়ের দিন দেখিস তুই যাকে মনে মনে এঁকে রেখেছিস সেই ব্যক্তির সাথে ফোনে কথা বলা ব্যক্তিটির কোনো মিল নেই। তখন কি করবি?”
” এইটা হতেই পারে না।”
” এত্তো কনফিডেন্স? ঠিকাছে, তাহলে ভিডিওকল দে। দেখি সে ধরে কি-না। প্রমাণ হয়ে যাক সবকিছু। যদি সে আসল মানুষ হয় তাহলে চেহারা দেখাতে অসুবিধা কোথায়?”
” তোমার এতো চিন্তা কিসের? সে নকল হলে হবে। বিয়েটা তো আর তুমি করবে না।”
” আরে, আমারই তো আসল সমস্যা। বিয়ের দিন যদি ঘটনা বদলে যায়? তখন দেখা যাবে তুই পালিয়ে না গিয়ে শোক পালন করতে ফিরে এসে মায়ের পা ধরে কান্নাকাটি করছিস। তখন আমার হিটলার বাপ আর তোর হিটলার মা মিলে আমাদের বেঁধে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। আমার সুমনার কি হবে তখন? বেচারির কপাল ভাঙতে চাস তুই? তোর এক জীবনের সাথে আরও দুইটা জীবন প্যাঁচানো। এই কথা ভুলে যাস কেনো?”
নিশিতা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
” আচ্ছা ভাইয়া, তোমার হঠাৎ ক্যাটবেরিকে কেনো সন্দেহ হচ্ছে আমাকে একটু বলবে?”
” সন্দেহের কারণ আছে বলেই সন্দেহ হচ্ছে! বেটা কেনো চেহারা দেখাবে না? কেনো বিয়ের আগে তোর সঙ্গে দেখা করবে না?”
” আমিও তো দেখা করছি না। তাহলে সেও তো আমাকে সন্দেহ করতে পারে।”
” তোর বিষয়টা আলাদা। শোন আমার যেটা মনে হচ্ছে আমি বলে দেই। এইবার বিশ্বাস-অবিশ্বাস তোর উপর। তুই যেই পিজ্জাশপের ছেলের থেকে ক্যাটবেরির ফোন নাম্বার নিয়েছিস ওই বেটা চালাকি করে নিজের নাম্বারই তোকে ধরিয়ে দিয়েছে। নতুবা তারই পরিচিত অন্যকারো নাম্বার। কিন্তু এইটা আসল ক্যাটবেরির নাম্বার জীবনেও না।”
” ভাইয়া, তুমি আমাকে কি মনে করো? আমি এমনি এমনি বাইশ বছরের যুবতী হয়ে গেছি? বুদ্ধি আমার এখনও ষোল বছরের কিশোরীদের মতো? শোনো, যে ভাইয়ার থেকে আমি ফোন নাম্বার নিয়েছি তার কণ্ঠ আমার ফোনে রেকর্ড করা আছে। তার সঙ্গে আমি যতবার ফোনে কথা বলেছি ততবার রেকর্ড করে রেখেছি। আর ক্যাটবেরির কণ্ঠ তো আমার প্রথমদিনই মুখস্ত হয়ে গেছে। ওই কণ্ঠস্বর আমি জীবনেও ভুলবো না। এখনও ক্যাটবেরির সাথে কথা বললে আমি রেকর্ড করে রাখি। বার-বার রেকর্ডিংগুলো শুনি। সেই একই ভয়েস! আমার একদমই ভুল হচ্ছে না ভাইয়া। ইটস ইম্পসিবল। ”
” তাই নাকি? আমাকেও একটু দে তো। তোর ক্যাটবেরির ভয়েসটা শুনি!”
” আচ্ছা, অপেক্ষা করো।”
দুই মিনিটের মাথায় নিশিতা অর্ণভকে ভয়েস ম্যাসেজ পাঠালো। পুরুষ কণ্ঠটা শুনে বিস্ময়ে অর্ণভের গলা কাঁপতে লাগলো। সে ভীতদৃষ্টিতে ইলহানের দিকে তাকালো। অনেকটা দূরে ইলহান আর অরিন গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। অর্ণভ নিশিতাকে বললো,
” হ্যালো নিশু, তুই কি শুনতে পাচ্ছিস?”
” ভাইয়া, ভাইয়া, এক মিনিট। না, না দশমিনিট। আচ্ছা একঘণ্টা পরে ফোন দিও। হঠাৎ আমার ইন্ডিয়ান সিমে ক্যাটবেরি ফোন করেছে। আমি একটু ফোনটা ধরি হ্যাঁ? তোমার সাথে পরে কথা বলবো।”
নিশিতা ফোন রেখে দিল। অর্ণভের আঙুলগুলো মৃদু কাঁপছে। বুক ধড়ফড় করছে। সে এই অবস্থাতেই নিশিতার স্ক্রিনশটের সেই নাম্বারটা দ্রুত হাতে ডায়াল করলো। আরে, মোবাইল ওয়েটিংএ দেখাচ্ছে। মানে নিশিতা এখন ওই ছেলের সঙ্গেই কথা বলছে। কিন্তু ছেলেটা যদি আসলেই ইলহান হয় তাহলে অরিনের সাথে দাঁড়িয়ে যে কথা বলছে সে কে? ইলহানের ভূত?

অরিনের প্রায় মাথা ঘুরছে। মনে হয় আর কিছুক্ষণ ইলহানের সামনে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে সে নির্ঘাত মাথা ঘুরে পড়েই যাবে। ইলহানকে লেমন কালার পাঞ্জাবীতে এতোটাই মোহনীয় লাগছে যে অরিনের বার-বার দৃষ্টি বিভ্রম হচ্ছে। চারদিকে সে কয়েকটা ইলহান একসাথে দেখতে পাচ্ছে। অরিনের বুঝে আসে না এই মানুষটি কিভাবে এতো সুন্দর? তার ব্রাউনিশ চুলগুলো কাঁধ পর্যন্ত লম্বা হয়ে গেছে। ইলহান চুলগুলোকে আজকে অন্যরকমভাবে আঁচড়েছে। এই হেয়ারস্টাইল পাঞ্জাবীটার সাথে একদম খাপে খাপ মিলে গেছে। কোনো ছেলে মানুষকে পাঞ্জাবী পড়লে এতো ভালো লাগতে পারে? অর্ণভ ভাইও তো পাঞ্জাবী পড়ে। কিন্তু তাকে দেখলে তো মাথা চক্কর দেয় না। চারিদিক ঘোলাটে হয়ে আসে না। অরিনের মনে হয় তার চোখ দু’টো আজকে ক্যামেরা হয়ে গেছে। সেই ক্যামেরা আশেপাশের জিনিস ঝাপসা বানিয়ে শুধু ইলহানকেই ফোকাস করছে। ইলহানের চোখগুলো আজকে ভালো মতো লক্ষ্য করলো অরিন। শান্ত, স্থির তবে প্রখর দৃষ্টি! চোখের মণির রঙ বাদামি। আর চোখের আকৃতিটা সবচেয়ে আকর্ষণীয়। কিছুটা ডলফিনের অবয়বের মতো মাঝারি আকৃতির চোখ। ইলহান যখন শান্ত হয়ে তাকিয়ে থাকে তখনও তার গালের বামপাশের ওই টোলটা ভেসে উঠে। আর হাসলে তো ওই বামপাশের টোলের দ্বারা কারো বুকের বামপাশ ছিদ্র করে ফেলাও সম্ভব! ইলহানের থুতনির দিকটা অনেক চৌখা। যে কারণে স্বাভাবিক মুখ করে থাকলেও ওকে মাঝে মাঝে মনে হয় রাগান্বিত। ওর ভ্রুযুগল ঘন, বাদামী। ক্লিন শেভ করলে ওর গালের চামড়ায় একটা অসাধারণ সবুজ আভা সৃষ্টি হয়। দেখতে তখন আরও ভালো লাগে। আর ওর ঠোঁটগুলো থেকে মনে হয় যেনো অবিরাম রক্ত ঝরছে। এতোটা লাল! তবে ঠোঁটের আকৃতি অনেকটাই সরু। চাঁদের মতো উজ্জ্বল মুখে টকটকে একজোড়া লাল ক্ষুদ্র ঠোঁট কতটা সুন্দর লাগতে পারে সেটা ইলহানকে না দেখলে বোঝা অসম্ভব। তার নাকটা সোজা, উঁচু এবং সরু। নাকের ডগা তীক্ষ্ণ। সেইখানে মাঝে মাঝে রাগ অথবা অভিমান জমে হালকা গোলাপী বর্ণ ধারণ করে। সে তো আরেক মুগ্ধতা! কিন্তু অরিন ইলহানের সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ না হলেও বিস্মিত হয়। একটা মানুষের মধ্যে আল্লাহ এতো মাধুর্য কেনো দিলেন? আর দিলেনই যখন তার সৌন্দর্য্যের মতো চরিত্রটাও কেনো মোহনীয় করে দিলেন না? কেনো পৃথিবীর সবচেয়ে মাধুর্যপূর্ণ মানুষটির হৃদয় নিকৃষ্ট পশুর চেয়েও কলুষিত? অরিনের অবাক লাগে। এই মানুষটির কোনো অধিকার নেই এতো সুন্দর হওয়ার। আচ্ছা, ইলহানের এই মুখ এসিড নিক্ষেপ করে ঝলসে দেওয়া যায় না?
ইলহান অরিনের কাছে এসে কপালে, গলায় হাত ছুঁইয়ে চিন্তিত স্বরে বললো,
” তোমার কি জ্বর এসেছে অরিন? চোখ-মুখ এমন লাগছে কেনো? শরীর খারাপ?”
অরিন কোনো জবাব দিল না। যথাসম্ভব চেষ্টা করলো স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার। ইলহানকে দেখেই তার শরীর খারাপ হয়ে গেছে এইটা ওকে বুঝতে দিলে চলবে না। কিন্তু অরিনের আসলেই মাথা চক্কর দিচ্ছে। এই ছেলে মাথা ধরিয়ে দেওয়ার মতোই সুন্দর। ইলহান তার কাজ শুরু করল। ওর সাথে যে বেঁতের ঝুড়িটা ছিল সেখান থেকে হলুদের বাটি না তুলে চন্দনের বাটি তুললো। একটুখানি চন্দন অরিনের গালে লাগানোর আগে বললো,
” আমার মনে হয় হলুদের চেয়ে তোমাকে চন্দন মাখালেই বেশি সুন্দর লাগবে। এজন্য দু’টোই সাথে এনেছি।”
ইলহান চন্দন লাগিয়ে দিল অরিনের গালে। অরিন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। ইলহান কাছে এসে অরিনের গালে নাক ঠেকিয়ে গভীরভাবে ঘ্রাণ নিল। তারপর নিজের তপ্ত শ্বাস অরিনের ঘাড়ে ছাড়তে ছাড়তে মগ্ন কণ্ঠে বললো,
” চন্দনের এই সুভাষ আমার কাছে ততক্ষণ প্রিয় যতক্ষণ তোমার শরীরের মিষ্টি সুভাষ এর সাথে মিশে থাকে।”
অ্যাংকার এতোক্ষণ পর কথা বললো,” অরিন প্লিজ, ওর এইসব কথায় তুমি কিন্তু গলে যেও না। নিজেকে শক্ত করো। পারলে ইলহানকে এক ধাক্কায়..”
অ্যাংকার আরও কিছু বলার আগেই সহসা ইলহান টান মেরে অরিনের কান থেকে মাইক্রোফোনটা খুলে নিল। অরিন চকিতে তাকাতেই দেখলো ইলহান মাইক্রোফোনটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। অরিন আতঙ্কে কেঁপে উঠলো। একদৌড়ে যখন পালাতে নিবে তখনই ইলহান অরিনের হাত টেনে অরিনেরই ব্যাগ থেকে ধারালো চাকুটা বের করে ফেললো। অরিনের তখন ভয়ে আত্মা ফেটে যাওয়ার উপক্রম। ইলহান কিভাবে জানলো অরিনের ব্যাগে চাকু আছে? চোখের পলক ফেলার আগেই ইলহান অরিনকে সামনে ঘুরিয়ে পেছন থেকে একহাতে জাপটে ধরে অন্যহাতে সেই ধারালো চাকু অরিনের গলায় চেপে ধরলো। অরিন ছটফট করতে লাগলো ডানাকাটা পাখির ন্যায়। ইলহান রগে কাঁপন ধরানোর মতো ভয়ংকর কণ্ঠে বললো,
” একটা টু শব্দ করলেও আজ মেরে ফেলবো অরিন। সত্যি মেরে ফেলবো! জাস্ট গেট ইন দ্যা কার।”
ইলহানের তুষ্টপুষ্ট বিশাল দেহের কাছে অরিনের ছোট্ট, নরম শরীর আবদ্ধ হয়ে নিমেষেই এক ভয়াবহ শ্বাস রুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করলো!

চলবে

(সকালে এক পর্ব দেই রাতে এক পর্ব দেই। মানে দিনে দুইবার কইরা দেই। আমারে কি থ্যাঙ্কিউ কইতে মন চায় না আপনাদের?👀😪😏😵)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here