#মেঘের_পরে_রংধনু
#পর্ব_৩৪
লিখা: Sidratul Muntaz
অরিন দুইহাতে মুখ থেকে কান পর্যন্ত ঢেকে একদম গুটিশুটি মেরে রইল। কারণ সে নিশ্চিত যে নিশিতা এখনই একটা ভয়াবহ চিৎকার দিবে। জ্ঞানও হারাতে পারে। নিশিতা ভীত কণ্ঠে বললো,” এই অরিন, একটু দেখ তো খাটের নিচে কিছু আছে নাকি?”
অরিন তাকিয়ে দেখলো নিশিতা চাদর উল্টিয়ে খাটের নিচে উঁকি মেরেছে ঠিকই, কিন্তু সে চোখ খুলে তাকাচ্ছে না। অরিন সাথে সাথে নিশিতাকে সরিয়ে খাটের চাদর ঠিক করে দিয়ে বললো,
” কিচ্ছু নেই আপু। এতো ভয় পাচ্ছো কেনো?”
নিশিতা মনে মনে দোয়া ইউনুস পড়লো। তারপর বুকে থুথু মেরে বললো,” সত্যি নেই? তুই ভালো করে দেখেছিস?”
” হ্যাঁ দেখলাম। আসলেই কিছু নেই। কি থাকবে বলো?”
নিশিতা সম্পূর্ণ শরীর একবার ঝাড়া দিল। এরপর বললো,
” জানিস, আমার মাঝরাতে খাটের নিচে তাকাতে এতো ভয় লাগে! তার উপর ইদানীং আমি একটা দুঃস্বপ্ন দেখছি। খাটের নিচে.. ”
” প্লিজ দুঃস্বপ্নের কথা বলতে হবে না। পরে আমারও ভয় লাগবে।”
” আচ্ছা থাক, বলবো না। কিন্তু আমি এখন কি করবো অরিন? সকাল হলেই তো আমার বিয়ে। কালকের প্ল্যানটা ওয়ার্ক আউট করবে তো? যদি না করে?”
” নিশিপু, আমার মনে হয় না ভাইয়া সুমনাকে রেখে তোমাকে জীবনেও বিয়ে করবে। তাই নিশ্চিন্ত থাকো।”
” বললেই কি নিশ্চিন্ত থাকা যায়? আমিও কি ক্যাটবেরিকে রেখে তোর ভাইকে জীবনে বিয়ে করবো? ইম্পসিবল। কিন্তু আমার বাপ তো সেটা বুঝবে না। আমি ক্যাটবেরিকে কিছুতেই ভুলতে পারবো না অরিন। ওকে ছাড়া আমি থাকতেই পারবো না। প্রেমে পড়ে গেছি একদম। সাংঘাতিক প্রেম। এইযে মাত্র কয়দিন ধরে কথা হচ্ছে না আমাদের। এতেই আমার এতো অসহ্য লাগছে! মনে হচ্ছে এই জীবনের কোনো অর্থই নেই। ওকে ছাড়া জীবন অর্থহীন।”
” কার প্রেমে পড়েছো? যাকে একদিনের জন্য দেখেছো নাকি যার সাথে দেড়মাস ধরে কথা বলেছো?”
” দুইজন তো একজনই।”
” যদি আলাদা হয়? ধরো, দুইজন আলাদা মানুষ হলো। তুমি কাকে বেছে নিবে?”
নিশিতা ভ্রু কুচকে তাকালো। তারপর ধীরে ধীরে মাথা নেড়ে বললো,
” না, না, না, এ অসম্ভব। দুইজন একজনই। কখনও আলাদা হতে পারে না। ক্যাটবেরি আমার সাথে মিথ্যে বলতেই পারে না। ও অনেক ভালো তুই জানিস? ও মিথ্যে বলবে না।”
” তুমি কিভাবে নিশ্চিত যে ও মিথ্যে বলবে না? হতেই তো পারে সবকিছুই মিথ্যে ছিল। এ পৃথিবীতে তো ধোঁকাবাজের অভাব নেই।”
” আমি ওকে বিশ্বাস করি বলেই ভালোবেসেছি অরিন। সন্দেহ করলে জীবনেও ভালোবাসতে পারতাম না। নিজেকে অবিশ্বাস করতে পারি কিন্তু আমি ওকে কখনও অবিশ্বাস করতে পারবো না। ওর প্রতি আমার ভরসার জায়গাটা এতোই শক্ত যে কেউ সেটা ভাঙতে পারবে না। আর যদি আসলেই সব মিথ্যে হয় তাহলে সেই মিথ্যে’র পেছনের সত্যিটাও আমি জানতে চাই না। মিথ্যেটা জেনেই যদি ভালো থাকা যায় তাহলে সত্যির দরকার নেই। আমি কখনও এই আঘাত সহ্য করতে পারবো না যে ক্যাটবেরি আমাকে ধোঁকা দিয়েছে। আমি মরেই যাবো বিশ্বাস কর! ভালোবাসার মানুষকে ভরসা করার মতো তৃপ্তি এই পৃথিবীতে কিচ্ছু হতে পারে না। তেমনই ভালোবাসার মানুষকে অবিশ্বাস করতে বাধ্য হওয়ার চেয়ে অসহায় অবস্থা এই পৃথিবীতে আর কিচ্ছু নেই। তুই তখনি সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণা অনুভব করবি যখন তুই দেখবি তোর মন আর মস্তিষ্ক তোর নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। অর্থাৎ মন এক কথা বলছে কিন্তু বাস্তবে তুই ভিন্ন জিনিস দেখতে পাচ্ছিস। ”
নিশিতা থামলো। ওর চোখ দিয়ে গড়গড় করে জল পড়ছে। এখন আর টিস্যু দিয়ে জল মুছছেও না সে। অরিন ভাবলো, আসলেই নিশিতার কথাগুলো ঠিক। সে এতোদিন ইলহানকে একটুও ভরসা করতে পারেনি। তাই ভালোবাসতেও পারেনি। কিন্তু ইলহানের ওই এক্সিডেন্টের পর অরিনের বিশ্বাসটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে এসেছে এবং সে উপলব্ধি করেছে, ইলহানের জন্য তার মনে অনেকটুকু ভালোবাসা জমা ছিল। শুধুমাত্র একফোঁটা বিশ্বাসের অভাব ভালোবাসার মতো শক্তিশালী অনুভূতিকেও তুচ্ছ বানিয়ে রাখতে পারে। বিশ্বাসে চিড় ধরলে ধীরে ধীরে ভালোবাসাটাও নিঃশেষ হয়ে যায়। নিশিতা কেঁদেই চলেছে। ইশশ, সে নিশ্চয়ই তার অদেখা, অজানা ক্যাটবেরিকে খুব বিশ্বাস করে। এই বিশ্বাসে যখন চিড় ধরবে, সহ্য করতে পারবে তো মেয়েটা?অরিন নিজহাতে নিশিতার চোখের জল মুছে দিল। নিশিতার অগোছালো চুল হাত দিয়ে গুছিয়ে দিতে দিতে বললো,
” তুমি কেঁদো না নিশু আপু। দেখো, ভাইয়া একটা না একটা উপায় ঠিক বের করবে। যেটা সবার জন্য ভালো হবে।”
নিশিতা কাঁদতে কাঁদতে অরিনকে জড়িয়ে ধরে বললো,” আমি ক্যাটবেরিকে শেষবার কি বলেছিলাম জানিস? বলেছিলাম আমার পাপা-মা’র সাথে এসে দেখা করতে৷ তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে। তাঁরা যদি না মানে তখন আমরা পালিয়ে যাবো। কিন্তু সেই সৎসাহসটুকু মনে হয় তার মধ্যে নেই৷ এরপর থেকে সে আর একবারও আমার সাথে যোগাযোগ করেনি। গত দুইদিন ধরে তার ফোন বন্ধ। আমি প্রতিদিন তার নাম্বার ডায়াল করি। একেকটা মুহুর্ত যে কত কঠিনভাবে কাটছে তোকে আমি বুঝাতে পারবো না। সে কিভাবে থাকছে আমাকে ছেড়ে? নাকি খুব সহজেই আমাকে ভুলে গেল?”
নিশিতার কান্না অরিনের গলায় ব্যথার সৃষ্টি করছে।সে কথা বলতে গেলেও কথা আটকে আসছে। নিশিতা হঠাৎ অরিনকে ছেড়ে দরজা খুলে বেরিয়ে গেল। সে কি আবার তার ক্যাটবেরিকে ফোন করতে যাচ্ছে?
” অরিন।”
খাটের নিচ থেকে ফিসফিস ডাক শুনে অরিন দরজা বন্ধ করলো। ইলহান বের হয়ে বললো,
” তুমি কি কাঁদছো নাকি অরিন?”
অরিন দৌড়ে এসে ইলহানকে জড়িয়ে ধরলো। খুব ব্যথিত স্বরে বললো,” আমি তোমাকে সারাজীবন বিশ্বাস করতে চাই ইলহান। যদি সত্যিই কখনও আমার বিশ্বাস ভেঙে ফেলো, তাহলে সেটা আমাকে জানতে দিও না প্লিজ। আমি সহ্য করার আগেই মরে যাবো।”
ইলহান অরিনকে উঠিয়ে বললো,” এই মেয়ে, এইসব কি বলছো? আমি তোমার বিশ্বাস ভাঙবো? তার আগে যেনো আমি নিজেই মরে যাই।”
অরিন অশ্রুপূর্ণ দৃষ্টিতে তৃপ্তি নিয়ে ইলহানের দিকে তাকালো। ইলহান অরিনের চোখের পানি মুছে দিল। অরিন হঠাৎ করেই নিজ উদ্যোগে ইলহানের ঠোঁট দুটো আঁকড়ে ধরলো নিজের ঠোঁট দিয়ে। ইলহানকে নিচু হতে হলো। তাদের বিশাল ব্যবধানের উচ্চতার সামঞ্জস্যতা ঠিক রাখার জন্য ইলহান কয়েক মিনিট পর চুম্বনরত অবস্থাতেই অরিনকে কোলে নিয়ে ফেললো। পাঁজাকোলার মতো না, অরিনের দুই উরু উঠিয়ে বাচ্চাদের মতো কোলে নিল। তারপর সরাসরি অরিনকে টেবিলে নিয়ে বসালো। দীর্ঘক্ষণ ওরা একে-অপরকে চুম্বন করে গেলো। কেউই যেনো থামতে চাইছে না। দু’জনই প্রচন্ড বেসামাল হয়ে পড়েছে। অরিন ক্লান্ত হয়ে ছেড়ে দেওয়ার পরেও ইলহান তার নাকে-মুখে, গলায় চুমু দিয়ে যাচ্ছিল। একসময় অরিনের গলার কয়েক ইঞ্চি নিচে ইলহান মুখ ডুবিয়ে দিল। অরিন কেঁপে উঠে বললো,
” প্লিজ থামো এইবার।”
ইলহান থামলো না। অরিনকে বিশেষভাবে স্পর্শ করতে লাগলো। অরিন বললো,
” ছি, এইসব কি শুরু করেছো এখন?”
ইলহান প্রচন্ড আসক্ত কণ্ঠে বললো,
” আমার জীবনের সবচেয়ে বিশেষ রাতটি ছিল হসপিটালের শেষ রাত। আজকের রাতটাও কি সেরকম বিশেষ হতে পারে না অরিন?”
অরিনের স্মৃতিতে ভেসে উঠলো সেই রাতের দৃশ্য। সেদিন শুধু শারীরিক সম্পর্ক ছাড়া অন্য সকল প্রকার গভীর সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছিল তারা। কিন্তু পরে অরিনের মনে হয়েছে, এইটা অনেক বড় ভুল ছিল। লজ্জা আর অপরাধবোধ অরিনকে এখনও গ্রাস করে রেখেছে। ইলহান সেই লজ্জা, অপরাধবোধের পরিমাণ আরও বেশি বাড়াতে চাইছে কেন? পরে কোনো অঘটন ঘটে গেলে? বিয়ের আগেই নিজেদের ভালোবাসার সম্পর্কটা কলুষিত করে ফেলতে চায় না অরিন। সে অনুরোধ করলো,
” প্লিজ ইলহান, ছেড়ে দাও।”
” আমি চেষ্টা করলেও ছাড়তে পারবো না। এই ক্ষমতা আমার নেই।”
ইলহান অরিনকে পাঁজাকোলায় তুলে বিছানায় নিয়ে এলো। অরিন বিষণ্ণ হয়ে বললো,
” যদি ভুল হয়ে যায়?”
” আমাকে বিশ্বাস করো। কোনো ভুল করবো না।”
অরিন ইলহানকে বিশ্বাস করতে পারে। কিন্তু সর্বনাশকে না। সে এইবার অধৈর্য্য হয়ে ধাক্কা মেরে ইলহানকে সরিয়ে উঠে বসলো। রুক্ষ গলায় বললো,
” লজ্জা করে না? বিয়ের আগেই হবু বউয়ের শরীর ব্যবহার করার এতো তৃষ্ণা কেনো? এতোই যখন ভোগের ইচ্ছা তাহলে বিয়ে করে নিন। সেটা তো পারবেন না। পারবেন চোরের মতো লুকিয়ে আমার ঘরে আসতে। আপনার কি কোনো আত্মসম্মানবোধ নেই?”
অরিন কথাগুলো বলে কয়েক মুহুর্তের জন্য থামলো। মাথায় মালিশ করে নিজেকে শান্ত করলো। তারপর হঠাৎ ওর হুশ আসলো যে কি বলে ফেলেছে এসব? একবার মুখ খুললে অরিন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এটা তার খুব বাজে অভ্যাস৷ যা নয় তাই বলে ফেলে। সামনের মানুষটি কি ভাবলো সেটাও তৎক্ষণাৎ মাথায় আসে না। অরিন ইলহানের দিকে তাকাতেই দেখলো সে বারান্দা থেকে মই বেয়ে নেমে যাচ্ছে। অরিন দ্রুত ছুটে গেল। ইলহানের দুই হাত চেপে ধরে প্রায় কেঁদে ফেললো।
” প্লিজ ইলহান যেও না। আই এম স্যরি।”
” ছাড়ো অরিন। এখন আমার অনেক কাজ। আমার আত্মসম্মানের যে ঘাটতি আছে বলে তোমার মনে হয় সেটা কালকের মধ্যেই পূরণ করতে হবে।”
অরিনের হৃৎপিন্ডটা যেনো কেউ দুমড়ে-মুচড়ে দিচ্ছে। সে হুঁ হুঁ করে কেঁদে বললো,
” ইলহান প্লিজ, আমি আর কখনও এমন বলবো না প্রমিস।”
” আমিও তোমাকে প্রমিস করছি, কালকের মধ্যে আমি তোমাকে বিয়ে করবো। আর সেটা যদি না পারি তাহলে আর কখনও এই মুখ নিয়ে তোমার সামনে আসবো না।”
ইলহান চলে গেল। কোনোভাবেই আটকাতে পারলো না অরিন তাকে। বারান্দায় বসে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাঁদতে লাগলো সে। রুম থেকে মোবাইল এনে ইলহানকে ফোন করলো। কিন্তু ইলহান মোবাইল বন্ধ করে দিল। অরিনের রাতে আর ঘুম হয়নি৷ সে সারারাত অবিরাম কেঁদে গেল। ইলহানের মনে আঘাত দেওয়ার জন্য নিজেকেই আঘাত করলো। সকাল আটটা বাজে অরিনের রুমের দরজায় কেউ কড়া নাড়লো। অরিন বারান্দায় বসে ছিল ভাবলেশহীন মুখে। অনেকক্ষণ পর সে গিয়ে দরজাটা খুললো। অর্ণভ এসেছে। অরিন দরজা খুলে দিয়ে নির্বিকারভাবে বিছানায় এসে বসলো। অর্ণভ রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
” কিরে দরজা খুলতে এতো দেরি কেনো?”
তারপর অরিনের চেহারা দেখে বললো,
” এই, তুই কি ঘুমাসনি রাতে? চোখ ফুলে আছে কেনো? কেঁদেছিস নাকি?”
অরিন মুখে মালিশ করে বললো,” কিছুই হয়নি।”
” ওই, মিথ্যে বলবি না একদম।”
অরিন বিরক্তগলায় বললো,” একটা মুভি দেখেছিলাম। অনেক ইমোশোনাল। তাই কাঁদতে কাঁদতে আর ঘুমাতে পারিনি।”
” এখনও মুভি দেখে কাঁদিস? বলদ নাকি? আচ্ছা শোন, নাকে-মুখে পানি দিয়ে আয়। একটা ফ্রেশ নিউজ শোনাবো তোকে।”
” আমি ফ্রেশ আছি। তুমি বলো।”
” ইউসুফ আঙ্কেল আজকে তার বাড়িতে ডেকেছেন তোকে আর আমাকে।”
” ভাইয়া আমি আজকে কোথাও যেতে পারবো না প্লিজ।”
” কি বলিস এসব? চটকানা খাবি। তোর আপন ভাইয়ের সাথে খালাতো বোনের বিয়ে। আর তুই যাবি না?”
অরিন চমকে তাকালো।
” তুমি কি আসলেই নিশিতা আপুকে বিয়ে করবে?”
” পাগল মনে হয় আমাকে? তবে আজকে আমি যেটা করবো সেজন্য বাবা আমাকে বাড়ি ছাড়া করার আগেই ইউসুফ আঙ্কেল আমাকে শহর ছাড়া করবে নিশ্চিত। তুই লিখে রাখ। আমি তো বান্দরবানের টিকিটও কেটে রেখেছি। সুমনাকে নিয়ে সোজা বান্দরবান চলে যাবো।”
” মানে? কি করতে যাচ্ছো তুমি ভাইয়া?”
” মানে আজকে বর সেজে নিশিতার বাসায় যাবো ঠিকই। কিন্তু বিয়ে আমি করবো না। ইউসুফ আঙ্কেল বিয়ের সব দায়িত্ব আমার হাতে দিয়েছে। আমিও ব্যবস্থা করে ফেলেছি। আমার সাথে নিশিতার বিয়েটা হবে নকল। তারপর নাসিরের সাথে আসল বিয়ে হবে। এরপর ওরা ওদের মতো যেখানে খুশি পালিয়ে যাবে আর আমি সুমনাকে নিয়ে আমার মতো। ”
” সুমনা তোমার সাথে যেতে রাজি হবে?”
” রাজি হবে না মানে? ওর ঘাড় রাজি হবে।”
” তুমি যে নাসির ভাইয়ের সাথে নিশিতা আপুর বিয়ে দিবে, তুমি কি জানো মানুষটা ভালো না খারাপ? যে এতোবড় মিথ্যে নাটক করতে পারে সে কি ভালো মানুষ হওয়ার যোগ্যতা রাখে? সে নিশিতা আপুর যোগ্য না।”
” এ পৃথিবীতে কেউই কারো যোগ্য না। যোগ্য বানিয়ে নিতে হয়। আমি নাসিরের সাথে দেখা করেছি। সে হাউমাউ করে আমাকে ধরে কেঁদেছে। কেনো জানিস? ভয়ে। নিশিতার সামনে দাঁড়াতে না পারার ভয়ে। চেহারা দেখে যদি নিশিতা তাকে মেনে না নেয় সেজন্য ও নিশিতার সামনে আসার সাহস পাচ্ছে না। আবার নিশিতাকে ছেড়ে থাকতেও পারছে না। অথচ নাসির নিজেও কিন্তু নিশিতাকে স্বচক্ষে দেখেনি। ও যে কত বড়লোকের মেয়ে সেটাও জানতো না। তার মানে কিছু না জেনেই ভালোবেসেছে। লোভে পড়ে নয়। ছেলেটা ধুরন্ধর আছে। এর আগেও ইলহানের কণ্ঠ নকল করে অনেক মেয়ের সাথে ফ্লার্ট করেছে। কিন্তু ফেসে গেছে একজনের মধ্যেই। সে হচ্ছে নিশিতা। আর নিশিতার অবস্থাটা দেখ। প্রেমে পড়ে অহংকারী, জেদি মেয়েটা কেমন আবুল হয়ে গেছে। ওকে দেখলে তো এখন আমারই হাসি পায়। যারা না দেখেই দু’জন-দু’জনকে এতো ভালোবাসতে পারে তাদের মিলিয়ে না দেওয়াটা বিরাট অন্যায় হবে।”
” কিন্তু নিশিতা আপু যদি নাসির ভাইকে সরাসরি দেখার পর রিজেক্ট করে দেয়? নাসির ভাই নিশ্চয়ই এতো সুন্দরী মেয়েকে রিজেক্ট করবে না। সে তো তখন ছ্যাকা খেয়ে বসবে।”
” এইটাও আমার কাছে একটা পরীক্ষা। আমি আসলে দেখতে চাই। নিশিতা কোন দেখাকে বেশি প্রাধান্য দেয়। ক্ষণিকের চোখের দেখা নাকি সত্যিকারের মনের দেখা।”
অরিনের ফোন বেজে উঠলো। ইলহান ফোন করেছে। অরিনের হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেল। এক মুহুর্তে সে অস্থির হয়ে উঠলো ফোন ধরার জন্য। কিন্তু ভাইয়ার সামনে থাকলে কথা বলা যাবে না। অর্ণভ উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললো,
” অনেক বড় একটা মিশন শুরু করেছি। দোয়া করতে থাক। যদি সাক্সেসফুল হই তাহলে সবার লাইফ সেট হয়ে যাবে। তোরটা তো আগে থেকেই সেট আছে। আমাদের জন্য দোয়া কর। আর একটু পরেই নিশিতাদের বাসায় যাবো। অরিন তুই ব্রেকফাস্ট করে রেডি হতে থাক। আমার সাথে কিন্তু তুই অবশ্যই যাবি।”
অরিন হাসার চেষ্টা করে বললো,” আচ্ছা ভাইয়া।”
অর্ণভ বেরিয়ে যাওয়ার পরই অরিন দ্রুত এসে মোবাইল হাতে নিল।
” হ্যালো ইলহান, আই এম এক্সট্রিমলি স্যরি। সারারাত আমার ঘুম হয়নি বিশ্বাস করো। তোমাকে কষ্ট দিয়ে. ”
ইলহান অরিনের কথার মাঝেই অকপটে বললো,” আমি তোমাদের বাসার নিচে আছি অরিন। এখনি বের হও। আমরা বিয়ে করতে যাচ্ছি। সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে। ”
অরিন থতমত খেয়ে বললো,” হোয়াট? পাগল হয়ে গেছো? বিয়েটা তো আমাদের আজ-কালকের মধ্যে এমনিই হবে। এখন লুকিয়ে বিয়ে করার কি দরকার?”
ইলহান চোয়াল শক্ত করে একরোখা উত্তর দিল, ” সেটা আমাকে বিয়ে নিয়ে খোঁটা দেওয়ার আগে ভাবা উচিৎ ছিল। এখন কি তুমি নিচে আসবে?”
” পাগলামি করো না প্লিজ। এইটা অনেক ভুল সিদ্ধান্ত। রাগের মাথায় আমাদের এতোবড় একটা কাজ করা উচিৎ হবে না।”
” অরিন তুমি যদি এখন না আসো তাহলে আই সুয়্যের, আর কখনও আমি তোমার সামনে আসবো না। আমার এই চেহারা আর দেখবে না তুমি।”
অরিন বুকের ভেতর তীব্র চাপ অনুভব করলো। এক নিঃশ্বাসে বললো,” আচ্ছা, আমি আসছি।”
ফোন কেটেই অরিন উপলব্ধি করলো তার হাত-পা কাঁপছে। খুব ভয়ানকভাবে কাঁপছে। গলা অনবরত শুকিয়ে আসছে। অরিন এই অবস্থাতেই জামা বদলে হাতব্যাগ আর মোবাইল হাতে নিল। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে একটা ফ্যামিলি ফটোও ব্যাগে ভরে নিল। বিয়েতে তো সে সবাইকে সাথে রাখতে পারবে না। অন্তত সবার ছবিটা সাথে থাকুক! অরিন বের হওয়ার সময় মনে মনে চিন্তা করলো, আজ শুধু নিশিতা আর অর্ণভ ভাইয়ের পালিয়ে যাওয়ার কথা। তাদের শক বাড়ির সবাই কিভাবে সামলাবে সেটা নিয়েই দুশ্চিন্তা শেষ হচ্ছে না। তার উপর অরিন নিজেও পালিয়ে যাচ্ছে। যেটা সে কোনোদিন চিন্তা করেনি। নিয়তির খেলা বড়ই অদ্ভুত। কখন কোনদিকে নিয়তির মোড় ঘুরে যায়, একদম বোঝা যায় না।
চলবে