গল্পের_নাম_অনুভূতি পর্বঃ১০
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
জাবেদা বেগম তৈরি হচ্ছেন আরফিদের বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে ১৫দিনে মাত্র ১দিন তাদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন আর সময় হয়ে উঠেনি।
হ্যাঁ ১৫টা দিন কেটে গেছে এই ১৫দিনে আস্তে আস্তে সবকিছুই স্বভাবিক হচ্ছে।জাবেদা বেগম ব্যাগটা হাতে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে দেখলো আবরার দাড়িয়ে আছে।আবরারকে দেখে জাবেদা বেগম ভ্রুকুচকে বললো,
~তুই এইসময় বাসায়?অফিসে থাকার কথা তোর এসময়
আবরার বললো,
~আরফানের বাসায় যাবো তাই চলে আসলাম।
জাবেদা বেগম আবরারের কথা শুনে মুচকি হেসে বললো,
~১৫দিনে তো একবারও সে বাড়ি যাসনি কারো উপর কী অভিমান করেছিস?
আবরার ১৫দিনে আরফিদের বাড়ি যাইনি কিন্তু খোজখবর ঠিকই রেখেছে।সেদিনের কথায় আরফির উপর খানিকটা অভিমান নিয়েই সে আর তাদের বাসায় যায়নি।আবরার বললো,
~কারো উপর অভিমান করার সময় আমার নেই।চলো বের হই আমরা।
জাবেদা বেগম মুচকি হেসে ছেলের পিছে চললেন।
আরফি বারান্দায় দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে মনটা তার বড্ড উদাস।বাবা হারানোর ব্যাথাতো মনে তো রয়েছেই পাশাপাশি একজন ব্যক্তির অনুপস্থিতি তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।কাঙ্খিত ব্যক্তিটিকে একনজর দেখার জন্য তার মন আনচান করছে।আরফি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বারান্দা থেকে রুমে চলে আসলো তখনই রুকাইয়া রুমে এসে হাজির হলো।রুকাইয়া আরফিকে বললো,
~আবরার এসেছে
রুকাইয়ার মুখের বচন শুনে আরফির মনে একটা ঝড় বইতে লাগলো কতোদিন হলো লোকটাকে সে দেখে না।আরফি নিজেকে সামলে বললো,
~তো কী করবো?
রুকাইয়া বললো,
~এভাবে বলো না আমি জানি তোমার মন খারাপ।
আরফি এবার রাগী গলায় বললো,
~আমার মন খারাপ না তুমি যাও রান্নাঘরে আমি আসছি।
রুকাইয়া আর কথা বাড়ালোনা ধীর পায়ে রুম থেকে বের হয়ে আসলো।আরফি হাতের কাজ শেষ করে রান্নাঘরে চলে আসলো সেখানে উপস্থিত হয়েই দেখলো রুকাইয়া শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছছে হয়তো আরফি তখন রাগীভাবে কথা বলেছে তাই।আরফি রুকাইয়াকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~সরি ভাবি এভাবে বলতে চাইনি।
রুকাইয়া ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে আরফি বললো,
~সরি বললাম তো ভাবি এখন কী কানে ধরবো?
আরফির কথা শুনে রুকাইয়া ফিক করে হেসে দিলো আরফিও হেসে দিলো।
নাস্তার ট্রে নিয়ে রুকাইয়া আর আরফি আবরারদের সামনে চলে আসলো।জাবেদা বেগম সায়েদা খানমের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত আবরার মোবাইল নিয়ে বসে আছে কিন্তু আড়চোখে আরফিকে দেখছে।
জাবেদা বেগম আরফিকে দেখে বললেন,
~আরফি নিজের খেয়াল রাখতে হয় এটা কী ভুলে গেছো?তুমি কতোটা শুকিয়ে গেছো
আরফি নিজের দিকে একবার তাকিয়ে বললো,
~না আন্টি ঠিকই আছি আসলে ঘুমটা কম হয়।
জাবেদা বেগম বললেন,
~নিজের প্রতি খেয়াল রাখবে।
আরফি মুচকি হেসে রুকাইয়ার পাশে বসে পরলো।সায়েদা খানম বললেন,
~আপা,আপনি একটু রুমে আসুন কিছু কথা আছে।
জাবেদা বেগম মাথাদুলালেন তারপর তারা রুমে চলে গেলেন।রুকাইয়াও কিছু কাজের জন্য রান্নাঘরে চলে গেলেন আরফি আর আবরার দুজনই বসে আছে মুখোমুখি।
সায়েদা খানম বিছানায় বসে আছে জাবেদা বেগম ঠিক তার পাশে বসে আছেন।সায়েদা খানম বললেন,
~আপা,আমি চাই আবরার আর আরফির বিয়ের কথাটা আগে বাড়াতে।
জাবেদা বেগম কথাটা শুনে অবাক হলেন সায়েদা খানম বললেন,
~আপ,আমি জানি আপনি অবাক হয়েছেন কিন্তু আমার এটাই ইচ্ছে।
জাবেদা বেগম বললেন,
~আরফান রাজি হবে?আর সবচেয়ে বড় কথা আরফি কী মতামত দিবে?
সায়েদা খানম বললেন,
~আপা,আপনার এতো চিন্তা করতে হবে না সে আমি দেখে নিবো আপনি শুধু আবরারকে কথাটা জানিয়ে দিন।
আবরার আর আরফির মাঝে এক নীরবতা সমাবেশ পালন হচ্ছে।আরফি সেই নীরবতা ভেঙ্গে বললো,
~আপনি কী কোনো কারণে রাগ করেছেন?
আবরার বললো,
~আমি কেন রাগ করবো?
আরফি বললো,
~তাহলে কোনো রাগ নেই আপনার মনে।
আবরার বললো,
~আচ্ছা আরফি আমার রাগের বিষয়টা তোমাকে এতো ভাবাচ্ছে কেন?আমি হলাম পরমানুষ এতো না ভাবলেও চলবে।
আরফির কেন যেন কথাটা ভালো লাগলো না আরফি বললো,
~আপনি কী মানুষের মন পড়তে জানেন?আবরার সাহেব
আবরার অবাক নয়নে আরফির দিকে তাকালো আরফি চোখ তুলে তাকিয়ে বললো,
~আপনাকে সময় দিলাম আমার মন পড়ার।
এতটুকু বলে আরফি উঠে পরলো আর বললো,
~আপনার জন্য অপেক্ষা করবো।
বলেই সে চলে গেলো আবরার এখনো হতবিহ্বল আরফি কী বুঝাতে চাইছে সে যেটা ভাবছে তা কী ঠিক?আরফি কী তাকে ভালোবাসে?এই কথাটি ভাবতেই আবরারের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো
তখনই জাবেদা বেগম চলে আসলেন আর বললেন,
~আবরার চল,যাওয়া যাক।
আবরার আর জাবেদা বেগম সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলে বাড়ির বাহিরে শুধু আরফির সাথে দেখা হলোনা।আবরার বাসার বাহিরে আসতেই আরফির রুমের বারান্দার দিকে তাকালো আর দেখলো আরফি সেখানে দাড়িয়ে আছে।আরফির সাথে চোখাচোখি হতেই আরফি বারান্দা থেকে চলে গেলো।আবরার মুচকি হেসে গাড়িতে উঠে পরলো।
আবরারের কথা শুনে রাতুল খুশিতে পাগল হয়ে গেছে ফাইনালি আরফি হয়তো রাজি হবে।আবরার বললো,
~আরফির বলা প্রতিটি কথা আমার মনে আলাদা শিহরণ বয়ে গেছে।বিশ্বাস কর আরফি যদি মুখ দিয়ে একবার বলে সে আমাকে ভালোবাসে একমূর্হুর্ত দেরি করবো না ওকে সেদিনই বিয়ে করবো।
রাতুল বললো,
~ওহে মজনু নিজের মনের আকুলতাকে একটু সামলে রাখে সময় আসতে দেও।
আবরার বললো,
~তোর ডায়লগ তোর কাছে রাখ।আমার ভিতর কী চলছে?তা শুধু আমি জানি।
রাতুল বললো,
~তোর বিয়ের পরই আমি বিয়ে করে ফেলবো এতোদিন সিংগেল থেকেছি আর না বাবা।
আবরার বললো,
~তোর জন্য আমাদের অফিসের রুপালিকে পছন্দ করেছি আমি কী বলিস?
রাতুল বললো,
~ওরে ভাই এই তুই কার কথা কইতাসোস ওই মাইয়ার তো ৫টা বয়ফ্রেন্ড প্রতিদিন একটার লগে ঘুরতে যায়।তুই করবি এতো ভালো মাইয়ার লগে বিয়া আর আমারে ৫টা বয়ফ্রেন্ড আলা মাইয়া দিবি।যা থাকুম না তোর লগে।
রাতুলের কথা শুনে আবরার হো হো করে হাসা শুরু করলো।তখনই জাবেদা বেগম আবরারের রুমে চলে আসলো আবরার মাকে দেখে বললো,
~মা তুমি আসো বসো।
জাবেদা বেগম বিছানায় বসে পরলেন আর বললেন,
~আবরার আমি চাই আরফির সাথে তোর বিয়ের কথাটা আগে বাড়ুক।
মায়ের কথায় আবরার একটু অবাক হলো জাবেদা বেগম বললেন,
~আপার সাথে এ বিষয়ে আমি কথা বলেছি বাকিটা তোর ইচ্ছা।
আবরার বললো,
~আরফি রাজী হবে?
জাবেদা বেগম বললেন,
~সায়েদা আপা তা পরে জানাবে বলেছে।
আরফান সায়েদা খানমের উপর অনেক রেগে আছে।একই কথা বার কেন বলছে তাই বুঝতে পারছেনা আরফান।আরফান বললো,
~মা তুমি বার বার একই কথা বলছো কেন?
সায়েদা খানম বললেন,
~একই কথা বলছিনা।আর শোন যা ভেবেছি তা ভালোর জন্যই ভেবেছি।
আরফি ভাত খাচ্ছে নিশ্চুপে সায়েদা খানম বললেন,
~আরফি তুই কী বলিস?
আরফি তরকারি নিতে নিতে বললো,
~আবরার সাহেবের সাথে দেখা করতে চাই।
আরফান অবাক হয়ে আরফির দিকে তাকালো আরফান বললো,
~আরফি কোনো প্রকার চাপে পরে কিছু করতে হবে না।
আরফি বললো,
~কোনো চাপে পরে বলছিনা।
সায়েদা খানম বললেন,
~আমি জাবেদা আপাকে জানিয়ে দিচ্ছি।
আরফি টেবিল ছেড়ে উঠে দাড়ালো তখনই রান্নাঘর থেকে কিছু পরে যাওয়ার আওয়াজ আসলো সবাই ঘাবড়ে গেলো আরফি দৌড়ে রান্নাঘরে গিয়ে দেখলো রুকাইয়া ফ্লোরে পরে আছে অজ্ঞান হয়ে।আরফান রুকাইয়াকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিলো আরফি আর সায়েদা খানম রুকাইয়ার মাথার কাছে বসে রইলো।আরফান ডাক্তার ডাকতে চলে গেলো কিন্তু এতো রাতে ডাক্তার কোথা থেকে পাবে?অনেক কষ্টে একটা ডক্টর নিয়ে বাসায় আসলো আরফান রুকাইয়াকে চেক করলো ডক্টর সবার মুখে চিন্তা ছাপ।
ডক্টর চেক করা শেষ করে বললো,
~পেশেন্ট প্রেগন্যান্ট।
আরফান সহ সবাই বাকরুদ্ধ রুকাইয়া মা হতে চলেছে এবাসায় ছোট্ট প্রাণের আবির্ভাব ঘটছে।সায়েদা খানম খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলেন আরফি রুকাইয়ার হাতটা শক্ত করে ধরে রাখলো।ডক্টর বললো,
~রোগীর শরীর অনেক দুর্বল তাই একটু যত্নের প্রয়োজন।
আরফান ডক্টরকে বিদায় দিয়ে রুমে এসে বিছানার একপাশে বসে রইলো।কিছুক্ষণ পর রুকাইয়া পিটপিট করে চোখ খুলে দেখলো সবাই তার পাশে বসে আছে।রুকাইয়া উঠে বসতে নিবে তখনই সায়েদা খানম বললেন,
~উঠে না মা।তুমি শুয়ে থাকো
রুকাইয়া বললো,
~আমার কী হয়েছিল?
আরফি বললো,
~ভাবি এইবাসায় ছোট নতুন সদস্য আসতে চলেছে।
রুকাইয়া লজ্জায় মাথানত করে ফেললো।সায়েদা খানম রুকাইয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
~নিজের খেয়াল রাখবে মা আর কোনো দুশ্চিন্তা করবে না।
রুকাইয়া মাথাদুলালো আরফি আর সায়েদা বেগম রুম থেকে চলে যেতেই আরফান দরজা লাগিয়ে রুকাইয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আর বললো,
~ধন্যবাদ এতো দুঃখের মাঝেও একটুকরো খুশির ঝলক দেখানোর জন্য।
আরফি আজ বিকেলে আবরারের সাথে দেখা করতে যাবে।আবরার নিজে তাকে নিতে আসবে আরফান অনেকটাই রাগ কিন্তু রুকাইয়ার জন্য তা প্রকাশ করছেনা।রুকাইয়া আরফির রুমে এসে বললো,
~এই যে ননদীনি আমার জন্য আইসক্রিম আনতে ভুলবেন না যদি ভুলেন তাহলে বাসায় no entry.
আরফি রুকাইয়ার কথায় হেসে উঠলো আর বললো,
~আজ যদি বাবা বেঁচে থাকতো অনেক খুশি হতো।
রুকাইয়ার চোখে পানি চলে আসলো তাই আরফি টপিক বদলানোর জন্য বললো,
~চকলেট আইসক্রিম খাবে আর তেঁতুলের আচার খাবে।
রুকাইয়া বললো,
~তোমার ভাইকে বলেছি সে নিয়ে আসবে।
আচ্ছা আরফি আজ আবরারকে কী বলার জন্য দেখা করবে?
আরফি বললো,
~কিছু কথা গোপন থাক পরে জানলে মজা বেশি পাবে।
রুকাইয়া বললো,
~পঁচা মেয়ে।
বলেই সে চলে গেলো আরফি খিলখিল করে হেসে উঠলো।
বিকেলবেলা রেডি হয়ে আরফি বসে আছে তখনই রুকাইয়া বললো,
~এই যে ম্যাডাম আপনার আবরার সাহেব এসেছে।
আরফি বললো,
~আমার আবরার সাহেব কেন হতে যাবে?
রুকাইয়া বললো,
~তাহলে কী বলবো?বাবুর ফুপা এসেছে এটা বলবো যাও কারো সাথে কথাই বলবোনা।
আরফি হেসে বাহিরের দিকে চলে গেলো আরফি বাসার বাহিরে যেতে দেখতে পেলো আবরার গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।আরফি ধীরপায়ে আবরারের কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।
চলবে
(বিদ্রঃ কেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)