সেদিনও জ্যোৎস্না ছিল পর্ব-২৪

0
7968

#সেদিনও_জ্যোৎস্না_ছিল

#তানিয়া

পর্ব:২৪

.আদ্যর মাথা ঝিমঝিম করছে। আদ্য চোখ খুলে রাখতে পারছে না অথচ তার চোখ থেকে ঘুম পুরোপুরি সরে গেছে।তবুও কেনো চোখ খুলতে পারছে না আদ্য বুঝলো না।আদ্য ঢুলে ঢুলে বিছানা থেকে নামতে হঠাৎ তার গায়ের দিকে নজর পরলো।আর নজর পড়তেই সে দেখলো কিছু আঁচড়।তাড়াতাড়ি আয়নার সামনে যেতেই শরীরের অন্যান্য জায়গাগুলোতেও নখের দাগ পড়ে গেছে। আদ্য চোখ খুলে দেখার চেষ্টা করছে তখনি দেখে তার গায়ে কাপড় নাই। একটা খোলা কাপড় জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তাও সেটা খুলে পড়ার মতো অবস্থা। আদ্য চট করে সেটা শক্ত করে আটকে ধরে তারপর পেছন দিকে আসতেই কিছুতে তার পা আটকে যায়। নিচে তাকাতে দেখে কাপড় পড়ে আছে। সেগুলো হাতে নিতেই মনে পড়ে গতকাল এ কাপড় গুলো তার গায়ে ছিল যেগুলো সে এনগেজে পরেছে।শুধু তাই নয় এ কাপড় গুলো পরেই সে মেহুর ঘরে এসেছিল।কিন্তু এ মুহুর্তে সেগুলো মেঝেতে পড়ে আছে তাও মেহুর ঘরে কিন্তু মেহু কোথায়?

আদ্যর মাথা যন্ত্রণা করছে সে ভাবার চেষ্টা করছে গতকাল কি হয়েছিল? কিন্তু সবকিছু আবছা আবছা মনে আসছে।কোনো কিছু পুরোভাবে মনে করতে পারছে না।আদ্য ঘরের বাইরে উঁকি দিলো যদি মেহু ছাদে থাকে। না কোথাও নেই, আদ্য তাড়াতাড়ি কাপড়গুলো হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। সেগুলো পরিধান করে মেহুর ঘরের দরজা আটকে দিয়ে নিচে নেমে আসে তখনি সোহানা দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে।

“হেই ডার্লিং! তোমাকে সেই সকাল থেকে খুঁজছি তোমার রুমেও গেলাম কিন্তু তোমাকে পেলাম না।বাইরেও গেলাম সেখানেও পেলাম না,শেষ মেশ ছাদে যাচ্ছিলাম যদি তুমি থাকো আর দেখো সেই তুমি ছাদ থেকেই নামছো।তা ছাদে কি করছিলে? ”

ভাগ্যিস সোহানা ছাদে যায় নি।যদি যেত আর আদ্যকে ঐ অবস্থায় দেখতো তাহলে কি কেলেঙ্কারিই না হয়ে যেত।আদ্য ভেতরে ভেতরে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।

“কি হলো উত্তর দিচ্ছো না কেনো?ছাদে কি করছিলে?”

“আসলে সোহানা গতকাল এত বেশি টায়ার্ড ছিলাম যে সারারাত ঘুমানোর পর হুট করে ভোররাতে ঘুম ভাঙলো।তুমি হয়তো জানো না আমি ভোর হতেই উঠে পড়ি।প্রতিদিনের নিয়ম অনুযায়ী আজও তাই হলো।তাই বাগানে হাঁটার পর একটু ছাদে গেলাম।তুমি হয়তো দেখেছো ছাদে কতো সুন্দর ফুলের গাছ আছে সেগুলো পরিচর্যা করছিলাম।সোহানা আমার না মাথা ধরেছে তুমি নাশতা করে নাও আমি তোমার সাথে পরে কথা বলবো।”

আদ্য ব্যস্ততার অযুহাত দেখিয়ে সোহানাকে এড়িয়ে চলে গেলো।সোহানা হতভম্ব হয়ে গেলো আদ্য ব্যবহারে।মনে হলো তাকে এড়াতেই এ ব্যস্ততা।

আদ্য তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলো।আলমারি থেকে কাপড় বের করে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।শাওয়ারাটা ফুল ছেড়ে দিয়ে তার নিচে দাঁড়িয়ে আছে আদ্য।ঝরঝর করে পানি পড়ছে কল থেকে আর আদ্য চোখ বন্ধ করে ভাবছে কি হলো সবটা?

মেহু সকালবেলায় খালি পেটে বাসা থেকে বের হয়েছিল। প্রথমে ভেবেছিল ভার্সিটি যাবে কিন্তু সারা শরীর এতটা অসাড় হয়ে এলো যে মেহুর ইচ্ছে হলো না আর ভার্সিটি যেতে।আবার ঘরেও ফিরতে ইচ্ছে করছেনা। সব মিলে মেহু সিদ্ধান্ত নিলো সিমরানের কাছে যাবে।ট মুহুর্তে সিমরানের সাথে তার খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। অন্তত গতরাতের ব্যাপারটা তাকে জানানো অনেক বেশি দরকার।

আদ্য শাওয়ার নিয়ে এসে বিছানায় শুয়ে পড়েছে। গায়ে এখনো টাওয়াল জড়ানো।সারা শরীরে এত বেশি আলসেমি কাজ করছে যে কাপড়টাও পরতে ইচ্ছে হচ্ছে না।ফ্যানটা ফুল স্পিডে দিয়ে আদ্য বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে। এরমধ্যে একবার সোহানা ডাকতে এলে আদ্য বিরক্ত মাখা কণ্ঠে তাকে চলে যেতে বলে।তবুও সোহানা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো যদি আদ্য দরজাটা খুলে দেয় কিন্তু আদ্য উঠলো না।আগের মতোই বিছানায় পড়ে রইলো।আদ্য চোখ বুঝে চিন্তা করছে গতকাল এক্সেলি কি হয়েছে।

এনগেজমেন্টের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগেই আদ্য অনুষ্ঠান ছেড়ে নিজের রুমে চলে আসে।আসার সময় এক বোতল হুইস্কি নিয়ে আসে।সবসময় এটা পান করা হয় না খুব বেশি আনন্দ বা খুব বেশি কষ্ট হলে তখনি আদ্য এ পানীয়টা পান করে।তবে আজ তার মনের অবস্থা কেমন সেটা বোঝা মুশকিল।

বাইরে হঠাৎ ঝড় উঠেছে।ঠান্ডা বাতাস বইছে।ঝিরিঝিরি করে বৃষ্টি পড়ছে।বৃষ্টির ছাট এসে লাগছে মেহুর গায়ে।মেহু সেসব তোয়াক্কা করছেনা।মেহু রাত জেগে জানলার পাশে বসে রইলো।দরজায় আওয়াজ শুনেই মেহু বুঝতে পারছিল এত রাতে কে এসেছে? তবুও দরজা না খুলে বসে আছে। বারবার দরজায় যখন আওয়াজ পরছিল তখন না পারতে দরজা খুলে কারণ দরজা না খুললে বাড়ি পরতেই থাকবে।কিন্তু দরজা খুলেই মেহুর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো কারণ তার সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে তাকে মেহু চেনে না।রক্তিম চোখ, এলোমেলো চুল,ভয়ংকর চাহনি। মনে হচ্ছে এক্ষুনি কাউকে মেরে এসেছে। মেহু ভয় পেতে লাগলো তবুও শক্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো এতরাতে আদ্যর কি চায়?আদ্য উত্তর না দিয়ে ঠেলে ভিতরে ঢুকে যায়। মেহু আটকাতে গিয়েও পারলো না মনে হচ্ছে আদ্যর ওপর অসুর ভর করেছে।তাছাড়া আদ্যর সারা শরীর থেকে এক ধরনের ভোটকা গন্ধ আসছে কিন্তু কীসের গন্ধ মেহু সেটা বুঝতে পারছে না কিন্তু আন্দাজ করছে।আদ্য কি ড্রিংক করেছে।ভাবতেই মেরুদণ্ড বেয়ে একটা শীতল স্রোত বয়ে গেলো।মেহুর এবার মারাত্মক ভয় করছে সে কি কাউকে ডাকবে?কিন্তু কাকে ডাকবে আর ডেকেই বা কি বলবে?মেহু আদ্যর থেকে দূরত্ব বজায় রেখে তাকে জিজ্ঞেস করলো,

“আপনি এতরাতে এখানে কি করছেন?সবাই তো ঘুমিয়ে পড়েছে তাহলে আপনি জেগে আছেন কেনো?”

“তুমি জেগে আছো কেনো?”

পাল্টা প্রশ্ন হকচকিয়ে যায় মেহু।আদ্য চট করে তাকো এমন প্রশ্ন করবে মেহু আশা করে নি।

“কি হলো উত্তর দিচ্ছো না যে তুমি কেনো জেগে আছো?ওকে আমি বলছি,যে কারণে তুমি জেগে আছো ঠিক একি কারণে আমিও জেগে আছি।ইউ নো হোয়াট আজ আমার জীবনের একটা সুখময় দিন ছিল কিন্তু কেনো জানি আমি সুখ পেলাম না তুমি কি জানো কারণ টা কি?”

মেহু লক্ষ্য করলো আদ্যর পা টলছে শুধু তাই নয় আদ্যর কথা গুলো কেমন জড়ানো।তবুও আদ্য কথা বলছে।

“আচ্ছা আজ তুমি আমার এনগেজমেন্টে এলে না কেনো বলো তো?তোমাকে চারদিকে খুঁজছিলাম কিন্তু কোথাও দেখলাম না।মনটা এত খারাপ হলো যে ভাবলাম আংটি না পরিয়ে চলে যায় আবার ভাবলাম যার জন্য এতকিছু তা না করলেই বা কীভাবে হবে তাই আংটিটা পরিয়েই দিলাম।”

“আপনি কি এত রাতে আমাকে আপানর আংটি বদলের গল্প শুনাতে এসেছেন কিন্তু আমি তো শুনতে চাই না।তাছাড়া আপনার শরীর ভালো নয় আপনি বাসায় যান আমার এ মুহুর্তে আপনারা সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা। ”

“ভয় পাচ্ছো।আমি ড্রাংক বলে।হা হা ভয় পেও না।মেহু আমি তোমার স্বামী আমাকে ভয় পেলে তুমি আর কার কাছে নিরাপদ হবে বলো তো?”

“আর কার কাছে হবো জানি না তবে আপনার কাছে প্রথমে নিরাপদ মনে হলেও এখন সেটা ভাবি না।কারণ আপনি তো আমাকে আর আজীবন নিরাপত্তা দিবেন না তাই চেষ্টা করছি আপনার দায়িত্ব থেকে বের হয়ে নিজেকে প্রটেক্ট করার।আপনার দায়িত্ব এখন সোহানা।আপনি দয়া করে তার কাছে যান।”

“ও আচ্ছা এখন তাহলে আমার দায়িত্বে থাকতে তুমি ভয় পাও তাই না।তা কার দায়িত্ব ভালো লাগে ঐ ছেলেটা যার সাথে ভার্সিটি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা করছিলে?খুব বেশি মনে ধরেছে তাকে তাই না?এখন আর আমাকে ভালোই লাগছে না।”

মেহু হতভম্ব হয়ে যায় আদ্যর কথায়।নেশার ঘোরে এসব কি বলছে?কোন ছেলে কার কথা বলছে সে?

“কি আবোলতাবোল কথা বলছেন আপনি?কার কথা বলছেন, কোন ছেলের সাথে তামাশা করেছি আমি?”

আদ্য কিছু না বলে ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে উঠে। মেহু আদ্যর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।কটমট দৃষ্টি দিয়ে আবারও জিজ্ঞেস করে কোন ছেলের সাথে মেহু তামাশা করেছে কার কথা বলছে আদ্য?আদ্য হেসে জবাব দেয়,

“এতো ন্যাকামি করছো কেনো মেহু?তুমি কি বুঝতে পারছো না কার কথা বলছি।সেদিন ভার্সিটিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যার সাথে ফুসকা খাচ্ছিলে যে তোমাকে টিস্যু দিলো সবটা কি ভুল? ”

মেহু থ হয়ে যায়। সেদিন তো আদ্য ভার্সিটি যায় নি তাহলে জানলো কি করে সে কি করছে?তাছাড়া চোখের দেখার ওপর কোনো বিষয়কে ভুল উপস্থাপন করে দোষ দেওয়ার অর্থ কি?

“মেহু এখনো বুঝতে পারছো না কখনের কথা বলছি?”

“বেশ বুঝতে পারছি তার মানে কি আপনি সেদিন ভার্সিটি গিয়েছিলেন কিন্তু ড্রাইভার তো বললো,”

“হু আমি ওকে নিষেধ করেছি।তোমাদের আনন্দময় মুহুর্তে বিরক্ত করতে চাইনি।তাছাড়া তুমি এত হেসে কথা বলছিলে যদি আমাকে দেখে তোমার হাসি বন্ধ হয়ে যেত,যদি আমার প্রতি তুমি বিরক্ত হতে যদি…. ”

“প্লিজ আপনি চুপ করুন আপনার নোংরা চিন্তার কথা গুলো শুনতে ভালো লাগছে না।আপনি কি সবাইকে নিজের মতো ভাবেন নাকি স্বামী থাকা সত্ত্বেও পরপুরুষে আসক্ত হবো?কি ভাবেন নিজেকে সামান্য আশ্রয় দিয়ে বাচিয়েছেন বলে যাচ্ছে তাই ট্যাগ লাগাবেন।চোখের দেখা সবকিছু নিয়ে গল্প বানানো আপনাদের মতো মানুষের সাজে আর আমার নয়।যাকে দেখেছেন সে আমার খুব ভালো বন্ধু শুধু বন্ধু নয় বেস্ট ফ্রেন্ড। তার সম্পর্কে না জেনে না বুঝে যা তা ভেবে নিলেন।আমি তো শুধু মাত্র দাঁড়িয়ে ফুসকায় খেয়েছি আর আপনি কি করলেন?সোহানাকে নিয়ে দরজা বন্ধ করে সময় কাটালেন,তাকে নিয়ে ডিনারে গেলেন, শপিং এ গেলেন আর আজ তার সাথে এনগেজমেন্টও সারলেন।আর কি বাকি আছে আপনার এবার তো শুধু বিয়েটা বাকি সেটাও বাদ রেখেছেন কেনো?সেরে ফেলুন।যদি আমাকে নিয়ে সমস্যা হয়তো তো কালই আপনাকে ডিভোর্স দিবো আপনাদের তো অনেক টাকা চাইলেই তিনমাসটা তিন মিনিটে রূপান্তর করতে পারেন।এই তো ভালো আপনি তাড়াতাড়ি সোহানাকে বিয়ে করবেন। তাছাড়া আপনার তো খুব গায়ে লেগেছে রাহাতের সাথে কথা বলাই এবার আপনার চোখের সামনেই আমি ওকে বিয়ে করবো।দেখি আপনি কি করেন?আমি কালই রাহাতকে বিয়ের প্রস্তাব……. ”

ঠাসস্!এক চড়ে ছিটকে পরলো মেহু।খাটের এককোণে লেগে ঠোঁট ছিলে গেছে। সেখান থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।মেহু উঠার আগেই আদ্যক গিয়ে মেহুকে তুলে ধরলো।

“কি বললি তুই আরেকবার বল,তুই শুধু আরেকবার বল তোর ঐ জিভ আমি টেনে ছিড়ে ফেলবো।রাহাতকে বিয়ে করবি তাই না।আমার সামনে করবি তাই তো?এত সাহস থাকলে করে দেখ তো তোকে মেরে এ বাড়িতে পুঁতে রাখবো।তুই কি আমাকে কখনো বুঝবি না?কেনো রে শুধু আমার রাগটাই চোখে পড়ে আর আমি যে তোকে এত ভালোবাসি তার কোনে মূল্য রইলো তোকে তো আমি সেই দিনই ভালোবেসেছিলাম যেদিন জ্যোৎস্নার আলোয় তোর স্নান হয়েছিল। আমি এতদিন যা যা করেছি সবটা তোকে জ্বালানোর জন্য। ভাবতাম হয়তো তুইও আমাকে ভালোবাসিস।বাবা যেদিন আমাদের ডিভোর্স এর কথা বলেছিলেন সেদিন আমি প্রাণ ভরে কান্না করেছিলাম। পুরুষের কান্না নাকি দেখাতে নেই তাই নিরবে কেঁদেছি।বাবা যখন সোহানার কথা বললেন তখনই আল্লাহকে শুধু তোমার কথা বলেছি যেন তিনি তোমাকে আমার থেকে আলাদা না করে।যখন এক রুমে থাকতাম তুমি আরামে ঘুমতো কিন্তু এমন একটা রাত যায় নি যখন তোমাকে দেখতে দেখতে আমি ঘুমাই নি।সোহানাকে যখন দেখলাম তখনি ভাবলাম তাকে দিয়ে তোমাকে একটা পরীক্ষা করে দেখি তোমার মনে আমার জন্য কি চলছে?তাই সোহানাকে নিয়ে তোমাকে জেলাস করাতাম। এমনকি যেদিন তোমাকে ঘর ছাড়তে বললাম সেদিন সারারাত না ঘুমে পার করেছিলাম।কতবার ছাদে এসেছি তোমাকে দেখার জন্য।বুদ্ধি করে জানলার একটা পাল্লা লুজ করলাম যাতে তোমাকে দেখতে পারি।সবসময় ভাবতাম এ বুঝি তুমি এসে আমাকে তোমার মনের কথা বলবে,এ বুঝি আামকে শাসাবে সোহানাকে নিয়ে যেন বাড়াবাড়ি না করি কিন্তু না আমি যা করতাম তুমি তারচেয়েও বেশি স্বাভাবিক আচরণ করলে।তার ওপর তো ভার্সিটির ঐ ছেলের সাথে তোমাকে দেখে রক্ত চড়ে গেলো মাথায় তাই তোমার ওপর রাগ করে এনগেজমেন্টে রাজি হলাম।শেষ ভরসায় ছিলাম যদি তুমি ফিরে আসো কিন্তু না তুমি এলে না।কেনো মেহু ভালোবেসে আমি কি বড় অপরাধ করেছি?তোমাকে ভালোবেসে আমি কি না করেছি তবুও তুমি বলছো কিনা আমাকে ছেড়ে দিবে।মেহু আমি খুবই গম্ভীর ছেলে কাউকে নিজের প্রেম ভালোবাসা মায়া বোঝাতে পারি না।কিন্তু তোমাকে ইনিয়েবিনিয়ে কত কি করলাম আফসোস তুমি বুঝলে না।আমার দোষটা কোথায় বলবে মেহু,বলো না আমার অপরাধ কি?”

আদ্য ছলছল চোখে মেহুর দিকে তাকিয়ে আছে। আর মেহু সে তো পাথর হয়ে গেছে। ভালোবাসার মানুষটার কাছ থেকে সে এমন কিছু জানবে কল্পনাও করে নি।তার জন্য আদ্য এতকিছু করেছে আর সেই কিনা শুধু কষ্টই দিয়ে গেলো। কেনো মেহু বুঝলো না আদ্যর এ ভালোবাসা, কেনো মেহু বুঝলো না আদ্যর এ মমতা!আদ্য উত্তরের আশা না করে অন্য পাশে গিয়ে মুখে হাত দিয়ে কান্না করছে।মেহু ধীর পায়ে সেদিকে গেলো।আদ্যর কাঁধে হাত রাখতে আদ্য ফিরে মেহুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।

“মেহু অনেক ভালোবাসি। আমার জ্যোৎস্না কন্যা অনেক ভালোবাসি।আমাকে ছেড়ে যেও না প্রিয়সী।আমি কাঙাল হয়ে যাবো।মরে যাবো মেহু প্লিজ এতটা নিষ্ঠুর হয়ো না।’

মেহু কি বলবে ভেবে পাচ্ছ না।তার কাঁধ ভিজে যাচ্ছে আদ্যর চোখের জলে।মেহুও কাঁদছে কিন্তু আদ্য হয়তো বুঝতে পারছে না।আজকে আকাশের সাথে সাথে দুজন মানুষ তাদের ভালোবাসা জানান দিচ্ছে চোখের জলে যে ভালোবাসা লুকিয়ে ছিল সুপ্ত অভিমানের আড়ালে।

আদ্য মেহুকে ছেড়ে মেহুর মুখটা দেখে। বুঝতে পারে এ মুখের আদলে কতো কষ্ট জমে আছে। আদ্য দেখে মেহুর ঠোঁটের কোণে লাল রঙ এখনো ঝরছে।আদ্য খুব স্নেহ নিয়ে সেটা লেহন করে। মেহু পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে।আদ্য মেহুর ঠোঁটে হালকা ঠোঁট ছোয়াতে মেহু ব্যাথায় শব্দ করে।আদ্য মেহুর কানের কাছে গিয়ে শুধু একটা বাক্য বলে,

“মেহু আমি ভালোবাসার কাঙাল,তোমার প্রেমের কাঙাল, এ কাঙাল কি আজ তোমাকে ভালোবাসতে পারবে!”

আহ্ কতটা মমতাভরা আবেদন।এ আবেদনে মেহু শত হাজার বার আদ্যর আঘাত সইতে রাজি।এ প্রেম নিবেদনে মেহু শতবার মরতে রাজি।মেহু চোখের জল ফেলে আদ্যকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। এ মানুষটা তাকে পাওয়ার জন্য কতো কষ্ট করেছে। আজ না হয় এ মানুষটার ভালোবাসায় সাড়া দিবে খুব একটা তো অন্যায় হবে না তাই না!!
,
,
,
চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here