তুমি আমার ভালোবাসা পর্ব-২

0
5028

#তুমি_আমার_ভালোবাসা
#পর্ব_২
#লেখিকা_Munni_Akter_Priya
.
.
সকাল সকাল প্রিয়া ফ্রেশ হয়ে স্কুলে চলে যায়। দুইটা ক্লাস নিয়ে বের হতেই মৃন্ময় ফোন দেয়।
“হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছেন প্রিয়া?”
“আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভালো আছি। আপনি?”
“আমি ভালো নেই।”
“কেন?”
“মনটা চুরি হয়ে গিয়েছে।”
“ওহহ।”
“ওহহ মানে কি?”
“এটার কোনো মানে নেই তো।”
“তাই বলে একবার জিজ্ঞেস করবেন না কে চুরি করলো?”
“জিজ্ঞেস করলে কি মন ফেরত পাবেন?”
“আমি তো মন ফেরত পেতে চাইনা। আমি তো তাকে চাই।”
“আচ্ছা।”
“কি আচ্ছা?”
“আপনি যা বললেন তা আচ্ছা।”
“উফফ! বাবা এমন অনুভূতিহীন কেন আপনি?”
“জানিনা তো।”
“কোথায় আপনি?”
“স্কুলে।”
“দেখা করতে পারবেন বিকালে?”
“চেষ্টা করবো।”
“চেষ্টা নয়। দেখা করতে হবে প্লিজ প্লিজ প্লিজ।”
“আচ্ছা ঠিক আছে। রাখছি এখন।”
প্রিয়া কলটা কেটে দেয়। মৃন্ময় ফোন হাতে নিয়ে মুচকি হেসে বলে,
“ওগো প্রেয়সী প্রিয়া তোমায় তো আমার করবোই।”
.
.
বিকালের দিকে প্রিয়া মৃন্ময়ের সাথে দেখা করে। প্রাইভেট কারের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। প্রিয়াকে দেখেই এগিয়ে আসলো। এক পলক তাকিয়ে বললো,
“আপনি কি স্কুল থেকে সোজা এখানে এসেছেন?”
“হ্যাঁ।”
“এজন্যই তো এত ক্লান্ত দেখাচ্ছে।”
“হুম। গরম লাগছে খুব।”
“গাড়িতে বসো। এসি অন করে দেই।”
“না।”
“কেন?”
“দম বন্ধ হয়ে আসে আমার।”
“মানে কি?”
“কঠিন কিছু বললাম নাকি? আমার প্রকৃতির বাতাসই ভালো লাগে।”
“আপনি এত সাধাসিধা?”
“তাই মনে হলো?”
“দেখে এবং কথা বলে এটাই মনে হচ্ছে।”
“হবে হয়তো।”
“আপনি কি আগে থেকেই এমন?”
“না।”
“তবে?”
“ঐযে আমার অতীত।”
“সেটা কি আমি জানতে পারিনা?”
“পারেন।”
“তাহলে বলেন।”
“ইচ্ছে করছেনা এখন।”
“অদ্ভুত তো।”
“আমার খুব টায়ার্ড লাগছে। আমি বাসায় যাই এবার?”
মৃন্ময় হতাশ চোখে তাকায় প্রিয়ার দিকে। তারপর ভাবলেশহীনভাবে বলে,
“হুম।”
প্রিয়া আর অপেক্ষা করেনা। হাঁটা শুরু করে। মৃন্ময় তাকিয়ে আছে সেদিকে। বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
“এই মেয়ের মন জয় করবো কিভাবে!”

বন্ধুদের আড্ডামহলে সবাই হাসিখুশি থাকলেও মৃন্ময় একদম মনমরা হয়ে বসে আছে। মৃন্ময়ের বন্ধু সাদিক ধাক্কা দিয়ে বললো,
“কিরে শালা বসে বসে শোক দিবস পালন করছিস নাকি?”
“সেরকমই।”
“বলিস কি রে? এতদিন পর সবাই একসাথে হলাম আর তুই শোক পালন করছিস?”
“তাছাড়া আর কি করবো বল? যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে তার মন জয় করতে পারছিনা।”
“কি বলছিস মৃন্ময়? তোকে তোর হবু বউ পাত্তা দিচ্ছে না?”
“না। বিষয়টা সেরকম নয়। মেয়েটা কেমন যেন চুপচাপ। প্রয়োজন ছাড়া একটা কথাও বলেনা।”
“মেয়ে কি খুব সুন্দরী?”
“খুব সুন্দর নাকি জানিনা তবে মায়াবিনী।”
“কই ছবি দেখা তো।”
মৃন্ময় পকেট থেকে ফোন বের করে প্রিয়ার ছবি বের করে দেখায়। সাদিক বেশ ভালো করে দেখে বললো,
“এই মেয়ে চুপচাপ হয় কিভাবে? ছবিটা ভালোমত দেখেছিস? চোখে-মুখে হাসির, দুষ্টুমির ঝিলিক স্পষ্ট।”
“ছবির সাথে বাস্তবে ওর কোনো মিলই খুঁজে পাইনা। হাসেনা একটুও।”
“এমন কেন জিজ্ঞেস করিসনি?”
“করেছি তো।কেমন যেন অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলে।”
“তোর কি মনে হয়? এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে।”
“বলে তো কিসের নাকি অতীত আছে। কিন্তু কি সেটা তা বলেনা।”
এবার মেয়ে বান্ধবীরা মুখ খুললো। বললো,
“দোস্ত একটা আইডিয়া আছে।”
“কি?”
“মেয়েরা সবসময় গিফ্ট পেতে পছন্দ করে। গিফ্ট বলতে সারপ্রাইজ আরকি!”
“তো?”
“তুইও ওকে সারপ্রাইজ দে।”
“কি সারপ্রাইজ দিবো?”
সুবাহ্ বললো,
“গাধা একটা! কি সারপ্রাইজ দিবি সেটাও আমরা বলে দিবো?”
“মেয়েদের ব্যাপারে আমি আনাড়ি।”
“ইশ! রিমিকে মনে হয় কখনো গিফ্ট দেসনি।”
“দিয়েছি। তবে রিমি যেটা চেয়েছে সেটাই দিয়েছি।”
“বুঝলাম। তুই ওকে শাড়ি, চুড়ি এসব গিফ্ট করতে পারিস।”
“পড়বে বলে মনে হয়না।”
“আরে দিয়ে তো দেখ।”
“ঠিক আছে। চল তাহলে শপিংমলে যাই।”

মৃন্ময় বন্ধুদের নিয়ে শপিংমলে যায়। পছন্দমত ৩টা শাড়ি কিনে। তার সাথে ম্যাচিং চুড়ি। তবে সেগুলো সরাসরি দেয়নি। পার্সেল করে পাঠিয়েছে। একদিন পরই প্রিয়ার বাসায় পার্সেল পৌঁছে যায়। পার্সেল পেয়ে বেশ অবাক হয় প্রিয়া। নামহীন গিফ্ট আবার কি করে হয়! কার গিফ্ট কার কাছে এসেছে। প্যাকেট খুলে প্রিয়া ‘থ’ মেরে বসে থাকে। শাড়ি, চুড়ি এসব কার! সাথে একটা চিরকুট। তাতে লেখা,
“ওগো প্রেয়সী সামান্য গিফ্ট তোমার জন্য।”
শাড়িগুলো নেড়েচেড়ে প্রিয়া রেখে দেয়। ঐদিকে মৃন্ময় অধিক আগ্রহে বসে আছে কখন প্রিয়া ফোন দিবে। মৃন্ময় বসে বসে ভাবছে,
“এতক্ষণে প্রিয়া নিশ্চয়ই বুঝে গেছে গিফ্টগুলো আমি পাঠিয়েছি। কিন্তু এখনো ফোন করছেনা কেন? মেয়েটা এমন কেন? এত অবুঝ! আমি যে কখন থেকে ফোনের অপেক্ষা করছি সেটা কি বুঝেনা ও।”
এভাবে তিন ঘন্টা পাড় হয়ে যাওয়ার পরও যখন প্রিয়ার ফোন আসেনা তখন বাধ্য হয়ে মৃন্ময়ই ফোন দেয়।
“হ্যালো।”
“কি করছেন প্রিয়া?”
“এইতো বসে আছি। আপনি?”
“আমিও।”
মৃন্ময় একটু ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“আজকে কি মন খুব খুশি নাকি হুম?”
“না তো! কেন?”
“না। মনে হলো।”
“ওহহ।”
“আচ্ছা আপনার প্রিয় রং কি?”
“নাই।”
“মানে?”
“মানে সব রংই ভালো লাগে।”
“আপনার কোন জামা ভালো লাগে? মানে শাড়ি, থ্রি পিছ?”
“এসব প্রশ্ন কেন করছেন?”
“করতে পারিনা?”
“কারণ?”
“তেমন কিছুই না।”
“জানেন, আজ না একটা পার্সেল এসেছে।”
এবার মৃন্ময়ের মনে লাড্ডু ফুটলো। মনে মনে একবার লুঙ্গি ডান্সও দিয়ে ফেললো। এরপর খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,
“ওহ তাই? পার্সেলে কি ছিল?”
“শাড়ি আর চুড়ি।”
“কে পাঠিয়েছে?”
“কি জানি কোন পাগলে পাঠিয়েছে।”
এবার মৃন্ময়ের হাসিমাখা মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। শেষমেশ কি না পাগল উপাধি নিতে হলো! মৃন্ময় কিছু বললো না। চুপ করে রইলো। প্রিয়া বললো,
“আপনি আছেন?”
“না, আমি গেছি।”
“মানে?”
“মানে মানে আমি ছাদে গেছি।”
“ওহহ।”
“আচ্ছা আমি একটু পর ফোন দেই কেমন?”
“আচ্ছা।”
মৃন্ময় ফোন রেখেই চেঁচিয়ে বললো,
“সুবাহর বাচ্চা!”
সাথে সাথে মৃন্ময় সুবাহকে কল দিলো।
সুবাহ কল রিসিভড করে বললো,
“হ্যালো দোস্ত।”
“রাখ তোর দোস্ত। শাঁকচুন্নি যেন কোথাকার। তোর তিনটা ফুটবল টিম হবে দেখে নিস।”
“আরে! এত রেগে আছিস কেন?”
“রাগবো না তো কি করবো রে? তোকে কোলে নিয়ে ধেই ধেই করে নাচবো?”
“কি হয়েছে বলবি তো?”
“হারামি তোকে আমি কচুরীপানা ভর্তি পুকুরে চুবাবো। ঐরকম বুদ্ধি তোকে কে দিতে বললো রে? জানিস প্রিয়া আমায় কি বলেছে?”
“কি বলেছে?”
“পাগল উপাধি দিয়েছে পাগল।”
সুবাহ্ এবার শব্দ করে হাসতে লাগলো। মৃন্ময় রাগে গজগজ করতে করতে বললো,
“একেই তো এক আজাইরা বুদ্ধি দিছিস। এখন আবার আমার এই অসময়ে বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হাসছিস।”
সুবাহ কোনো রকমে হাসি থামিয়ে বললো,
“কি আর করবো বল!”
তোদের আর কিছু বলতে হবেনা।
“রাগ করিসনা। তুই বরং এক কাজ কর। একদিন প্রিয়াকে আমাদের আড্ডায় নিয়ে আয়।”
“কেন? কোন নতুন কেলেঙ্কারি বাঁধাবি শুনি?”
“আরে আগে আনতো।”
পরেরদিন প্রিয়াকে নিয়ে গোল মিটিং বসানো হয়। সবার মধ্যমনি হচ্ছে প্রিয়া। একেকজন একেক কথা বলছে। কেউ গল্প বলছে, কেউ কবিতা বলছে, কেউ গান গাইছে, কেউ জোক্স শোনাচ্ছে। প্রথম প্রথম বিরক্ত লাগলেও আস্তে আস্তে ভালো লাগা কাজ করছিল। কখনো কখনো কারো গল্প শুনে ইন্টারেস্ট বাড়ছিল, কখনো কারো কবিতায় মুগ্ধ হচ্ছিলো, কখনো কারো গানে অনুভূতিরা হাতছানি দিচ্ছিলো আবার কখনো কারো জোক্স শুনে প্রাণ ভরে হাসছিল। আর এই সবকিছুই মনে ভরে দেখছিল মৃন্ময়। মনে মনে হাজারটা ধন্যবাদ দিচ্ছিলো বন্ধুদের। শুধু তাই নয়, বন্ধুদের বড় করে একটা ট্রিটও দিয়ে দিয়েছে। এরপর থেকে প্রায়ই প্রিয়া সবার সাথে আড্ডা দিতো। হাসিখুশিতে মেতে থাকতো। আগের মত স্বাভাবিক হতে লাগলো। আস্তে আস্তে বিয়ের ডেটও এগিয়ে আসলো। না চাইতেও এক ভালোলাগার অনুভূতি ছুঁয়ে যাচ্ছিলো দুজনের মনেই।
আগামীকাল গায়ে হলুদ। প্রিয়া আজ মৃন্ময়ের দেওয়া একটা শাড়ি পড়েছে।ম্যাচিং করে চুড়ি পড়েছে। আজ মৃন্ময়কে সারপ্রাইজ দিবে। কিন্তু মৃন্ময়ের বাড়িতে গিয়ে প্রিয়া নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে যায়। পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছিলো। বিশ্বাসই হচ্ছিলো না এটা হতে পারে…

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here