গল্পের_নাম_অনুভূতি পর্বঃ১১
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
আরফি আবরারের সামনে দাড়িয়ে আছে আবরার আরফির দিকে নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে আছে।মেয়েটাকে কালো শাড়িতে অনেক সুন্দর লাগছে আবরার আরফির থেকে নজর সরিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ আরফির দিকে তাকিয়ে নেই তো।আরফি আবরারের এমন আচরণ দেখে বললো,
~আপনি ঠিক আছেন?
আরফির চিন্তিত কথা শুনে আবরার বললো,
~তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে বসো।
আরফি বললো,
~আপনার যদি প্রয়োজনীয় কোনো কাজ থেকে থাকে তাহলে আজ বাদ দেই অন্য কোনোদিন দেখা করি।
আরফির এহেন কথায় আবরার এবার বিরক্ত হয়ে আরফির হাত ধরে বললো,
~তুমি অতিরিক্ত কথা বলো চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বসে পরো।
বলতে বলতে গাড়ির দরজা খুলে আরফিকে ভিতরে বসিয়ে দিলো।আরফি একটু অবাক হলো শাড়িটা ঠিক করে বসে পরলো গাড়িতে আবরার গাড়ির দরজা বন্ধ করে আরফির পাশে বসে পরলো।আবরার একবার আরফির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে গাড়ি ড্রাইভ করা শুরু করলো।আরফি বাহিরের দৃশ্য দেখতে ব্যস্ত আবরার আড়চোখে আরফিকে দেখছে খোলা চুলগুলো বাতাসে উড়ছে মুখের এক অজানা সজীবতা প্রকাশ পাচ্ছে যা গত ১৫দিনে ছিলনা।হয়তো মেয়েটা শোক কাটিয়ে উঠছে আপনজন হারানোর ব্যাথাটা ধীরে ধীরে কেটে উঠে।সময় পরিবর্তন নিয়ে আসে হঠাৎ আরফি বলে উঠলো,
~আমরা কোথায় যাচ্ছি?
আবরার বললো,
~নিড়িবিড়ি জায়গায় গেলে কেমন হয়?তোমার ভালো লাগতে পারে।
আরফি বললো,
~হুমম
বলেই সে আবার বাহিরের দিকে নজর দিলো কিছুক্ষন নীরবতা বজায় রাখলো তারা দুজনই আবরার সেই নীরবতা ভেঙ্গে বললো,
~আরফি তোমার ভয় করছে না?
আরফি ভ্রুকুচকে বললো,
~ভয় কেন করবে?
আবরার বললো,
~এই যে আমার মতো একটা অচেনা ছেলে যাকে তুমি মাত্র ২মাস ধরে চিনো যে তোমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিল।তার সাথে একা কোথাও যাচ্ছো যা তোমার জন্য অজানা।
আরফি মুচকি হেসে বললো,
~আপনি কোনোদিন আমার সাথে খারাপ কিছুই করবেন না।
আবরার বললো,
~কেন?
আরফি বললো,
~কারণ আপনি আপনার মাকে অনেক সম্মান করেন।আমি এতটুকু বিশ্বাস করি যে ছেলেরা মাকে সম্মান করবে সে প্রতিটি মেয়েকে সম্মান করতে পারে।
আবরার মনে মনে আরফি কথা শুনে খুশি হলো আবরার বললো,
~আর কোনো কারণ নেই?
আরফি বললো,
~আছে তো নিজের ভালোবাসার মানুষদের কেউ ক্ষতি করতে পারেনা।
আবরার অবাক নয়নে আরফির দিকে তাকালো আরফি নিজের ধ্যান বাহিরের দিকে দিলো।আবরার নিজেকে ঠিক করে গাড়ি চালানো তো খেয়াল দিলো।
গাড়ি থামলো একটা রেস্টুরেন্টের সামনে আবরার বললো,
~এই রেস্টুরেন্টটা এখন অনেকটাই নিড়িবিড়ি থাকবে আমরা এখানে বসে কথা বলতে পারবো।
আরফি কিছু না বলে গাড়ি থেকে নেমে পরলো তখনই আরফির মোবাইলটা বেজে উঠলো আরফি পার্স থেকে মোবাইলটা বের করে দেখলো আরফানের ফোন।আরফি রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে উদ্বিগ্ন হয়ে বললো,
~আরফি তুই ঠিক আছিস?কোথায় তুই এখন?
আরফি বললো,
~আমি ঠিক আছি ভাই।আর রেস্টুরেন্টে আমি
আরফান বললো,
~নিজের খেয়াল রাখিস।সন্ধ্যার আগে বাসায় চলে আসিস
আরফি বললো,
~ঠিক আছে ভাই।
আরফি ফোন রাখতেই আবরার গাড়ি পার্ক করে এসে পরলো আরফিকে দেখে বললো,
~আরফান ফোন করেছে?
আরফি বললো,
~জ্বী।
আবরার বললো,
~চলো ভিতরে যাওয়া যাক।আজ মনে হয় বৃষ্টি হবে।
আরফি আকাশপাণে তাকিয়ে দেখলো,
~মুষুলধারে বৃষ্টি পরবে মনের সেই জোয়ার ভাটায়।
আবরার বললো,
~ভিতরে আসো।
আরফি আর আবরার রেস্টুরেন্টের ভিতরে ডুকে পরলো।আরফি ভিতরে যেতেই সে অবাক হয়ে গেলো পুরো রেস্টুরেন্টে কোনো মানুষ নেই।আর সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো রেস্টুরেন্টই ফুলে ভর আছে ফুলের সুবাস চারদিকে ছড়িয়ে পরেছে।
______________
আরফি ফুলের ঘ্রাণে মন ভরে গেলো আরফির মুগ্ধ চেহারা দেখে আবরারের খুবই ভালো লাগছে।এসব করা হয়েছে শুধুমাত্র আরফির জন্য আবরার আরফিকে বললো,
~চলো টেবিলে গিয়ে বসি।
আরফি মাথাদুলালো আবরার হাঁটতে শুরু করলো আরফি তার পিছনে।আবরার আর আরফি টেবিলের সামনে পৌছাতেই একজন মধ্যবয়সী লোক তাদের কাছে এসে কুশলাদি করে আবরারকে উদ্দেশ্য করে বললো,
~স্যার অ্যারেজমেন্ট কেমন হয়েছে?
আবরার মুখের হাসি চওড়া করে বললো,
~অনেক ভালো হয়েছে।আপনাদের ম্যাডাম খুব খুশি হয়েছে।
সেই লোকটি আরফির দিকে তাকিয়ে বললো,
~ম্যাডাম আপনার জন্যই এতোকিছু করেছে স্যার।
আরফি আবরারের দিকে তাকাতেই সে মাথা চুলকে বললো,
~এখন আমরা একটু একা থাকতে চাই।
লোকটি বললো,
~অবশ্যই স্যার।
লোকটি চলে গেলো আবরার চেয়ার টেনে আরফিকে বসতে বললো আরফি বসে পরলো।তারপর আবরারও আরফির মুখোমুখি বসে পরলো।আরফি বললো,
~এতকিছু করার কী দরকার ছিল?
আবরার বললো,
~আমার মন চেয়েছে তাই আমি করিছি।
আরফি বললো,
~মনের কথা শোনা ভালো তাহলে এখন বলুন আমার মনের কথা কী আপনি পড়তে পেরেছেন?আবরার সাহেব।
আরফির এমন সোজাসাপটা কথায় আবরার একটু বিচলিত হলো সে আরফির দিকে তাকিয়ে বললো,
~তোমার মনে প্রবেশ করতে পেরেছি তাই এখন তোমার মনও পড়তে পেরেছি।
আরফি টেবিলের উপর হাত রেখে বললো,
~কী পড়তে পেরেছেন?
আবরারের কপাল বেয়ে ঘাম পরলো আবরারের অবস্থা দেখে আরফি মুখ টিপে হাসলো। তা দেখে আবরার বললো,
~হাসছো কেন?
আরফি বললো,
~আমার মন চেয়েছে তাই।
আবরার বললো,
~ওহ।
আরফি বললো,
~আমার প্রশ্নের জবাবটা?
আবরার বললো,
~কী খাবে?
আরফি আবরারের এহেন কথায় দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
~বিরিয়ানি আর লাচ্ছি
আবরার বললো,
~আমি অর্ডার করে আসছি।
বলেই সে উঠে চলে গেলো আর আরফি সেভাবেই বসে রইলো।
রুকাইয়া আরফানের সাথে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।আরফান বুঝতে পারছেনা বউ কেন রাগ করেছে?আরফান রুকাইয়ার পাশে বসে বললো,
~আমও বুঝতে পারছিনা কী হয়েছে?
রুকাইয়া বললো,
~আমাকে কেন মায়ের কাছে পাঠাচ্ছেন?এখানে থাকলে কী সমস্যা?
আরফান বুঝতে পারলো সমস্যাটা কী সে মুচকি হেসে বললো,
~মা তোমাকে নিজের কাছে রাখতে চায় কিছুদিন এতে সমস্যা কোথায়?
রুকাইয়া বললো,
~আলবাত আছে আমার আরফির সাথে অনেক কথা আছে।
আরফান বললো,
~আচ্ছা তোমার যেতে হবে না খুশি।
আরফানের কথা শুনে রুকাইয়া খুশিতে তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~অনেক খুশি এখন আমাকে আচারের প্যাকেটটা দিন।
আরফান মুচকি হেসে আচার এনে রুকাইয়াকে দিলো রুকাইয়া তা খাওয়া শুরু করলো।
আবরার খাবারের অর্ডার দিয়ে আসলো তারপর আরফির মুখোমুখি বসে পরলে আবরার বললো,
~আরফি,আরফান কী তোমাকে নিয়ে বেশ চিন্তিত?
আরফি টেবিলে রাখা ফুলগুলোতে হাত বুলিয়ে বললো,
~প্রত্যেক ভাই নিজ বোনের জন্য চিন্তিত থাকে যেমন আপনি অবনি আপুর জন্য চিন্তিত থাকেন।
আবরার বললো,
~তাতো ঠিক।আচ্ছা তোমার কী মনে হয় না প্রকৃতি আমাদের সাথে খেলা করছে এই যে দেখো কিছুক্ষন আগে মেঘে ভরতি আকাশ এখন দেখো সেই মেঘ সরে রোদের আলো ফুটে উঠেছে।
আরফি বললো,
~জানেনে আবরার সাহেব আমার মনটাও এই মেঘের মতো বিষন্ন আর কালো ছিল কিন্তু এখন সেই মেঘ ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে আর আলো ফুটে উঠছে।আপনি কী বলতে পারবেন কেন এমন হচ্ছে?
_____________
আবরার আরফির কথার মনে বুঝতে এক দন্ডও ভুল হলোনা আবরার শীতল কন্ঠে বলে উঠলো,
~তোমার মনে যে অচেনা অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য।
আরফি বললো,
~তাহলে কী সেই অনুভূতি সঠিক নাকি এতেও কোনো ভুল আছে যাকে বলে আবেগীয় ভুল।
আবরার ফিচেল হেসে বললো,
~অনুভূতি ভুল হয় না কিন্তু সেটা যদি বুঝতে দেরি হয় তাহলে অবশ্যই ক্ষতি হতে পারে।
আরফি বললো,
~কেন এতো ভালোবাসলেন আবরার সাহেব?
আরফির কথায় আবরার চোখ তুলে তাকালো আরফির চোখের দিকে।যেই চোখে সে অনুভূতি গুলো দেখতে পারছে একটা মনের আকুতি দেখতে পারছে।আবরারের চোখে যে সেই আকুতিতে ভরা আরফির দিকে তাকিয়েই আবরার বললো,
~কেন বেসেছি তাতো জানি না কিন্তু এই ভালোবাসাটাকে আগলে রাখবো।
আরফি বললো,
~যদি আজও আপনাকে আমি ফিরিয়ে দেই?
আবরার বললো,
~ফিরাতে পারবেনা ভালোবেসে ফেলেছো আমায়।তোমার মনেও এখন সেই অনুভূতি
আরফি হেসে বললো,
~তাহলে বুঝতে পেরেছেন।
আবরার বললো,
~না বুঝার কথা ছিল না আরফি তোমার মনের প্রতিটা আকুতি আমি গভীর থেকে উপলব্ধি করছি।
আরফি আবরারের হাতের উপর হাত রেখে বললো,
~তাহলে কী জীবনের এই যুদ্ধে একসাথে চলার জন্য আমাকে আপনার সঙ্গিনী করবেন?
আবরার আরফির কথা শুনে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে আরফির হাতটা শক্ত করে ধরে বললো,
~অবশ্যই প্রিয় তোমাকে সঙ্গিনী করতে পারলে জীবনের যুদ্ধ হয়তো একটু সহজ হবে।
আরফি বললো,
~কখনো ছেড়ে যাবেন না তো?আমি একাকিত্বকে ভয় পাই আবরার সাহেব।কাছের মানুষের অবহেলা সহ্য করতে পারিনা কাছের মানুষদের আগলে রাখতে চাই।
আবরার বললো,
~তোমার সকল কথা আজ থেকে মেনে চলার দায়িত্ব আমার।
আরফি বললো,
~ওয়াদা করলেন আমায়?
আবরার বললো,
~ওয়াদা রইলো প্রিয় মৃত্যু ছাড়া তোমাকে ছেড়ে যাওয়ার কল্পনা আমি করবো না।
বলেই আবরার নিজ পকেট থেকে আংটি বের করে আরফির আঙ্গুলে পরিয়ে দিয়ে বললো,
~তোমার জন্য
আরফি বললো,
~আন্টির পছন্দ?
আবরার বললো,
~হ্যাঁ মায়ের পছন্দ।
সায়েদা খানম অনেক চিন্তিত জাবেদা বেগম চুপচাপ সোফায় বসে আছে।আরফান একটু পর পর দরজার দিকে তাকাচ্ছে অবনি আর রুকাইয়া কথা বলছে
রাতুল মোবাইল টিপছে আবরার সবাইকে একসাথে থাকতে বলেছে।সায়েদা খানম বললেন,
~এখনো কেন আসছেনা তারা?
জাবেদা বেগম বললেন,
~সময় হলেই চলে আসবে।
সায়েদা খানম বললেন,
~আমার তো টেনশন লাগছে।
রুকাইয়া বললো,
~মা আমি চা বানিয়ে নিয়ে আসি।
সায়েদা খানম বললেন,
~না মা তুমি এখন বিশ্রাম নেও আমি যাচ্ছি।
জাবেদা বেগম বললেন,
~এই সময় একটু বিশ্রাম করা প্রয়োজন।
রুকাইয়া আবারও নিজ জায়গায় বসে আরফির অপেক্ষা করতে লাগলো।
________________
আবরার আরফি সিড়ি বেয়ে উপরে উঠলো তারপর কলিংবেল টিপতেই আরফান দরজা খুলে দিলো।আরফানকে দেখে আরফি মুচকি হেসে ভিতরে চলে গেলো।আবরারের দিকে আরফান তাকিয়ে বললো,
~আপনাদের আসতে দেরি হলো কেন?
আবরার ভিতরে ডুকে বললো,
~রাস্তায় জ্যাম ছিল তাই।
আবরার সোফা বসে পরলো সায়েদা খানম উত্তেজিত হয়ে বললেন,
~তোমরা কী সিদ্ধান্ত নিয়েছো?
আরফি মুচকি হেসে তার রুমে চলে গেলো সবাই তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো তারপর আবরারের দিকে তাকালো আবরার বেচারা হতবিহ্বল হয়ে বললো,
~আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন?
আরফান বললো,
~সিদ্ধান্তটা কী জানানো যাবে?
আবরার হেসে জাবেদা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,
~মা বিয়ের তারিখ ঠিক করো।তোমার বউমা রাজি হয়ে গেছে।
আবরারের কথা শুনে রাতুল আর অবনি চিল্লিয়ে উঠলো সবাই খুশি হলো শুধু আরফানের মুখটাই অন্ধকার হয়ে আছে।আরফান উঠে আরফির রুমের দিকে চলে গেলো আবরার তা দেখে নিজেও উঠে তার পিছে চলে গেলো।সবাই যার যার কথায় ব্যস্ত তাই আবরারের দিকে কেউই খেয়াল করিনি।
চলবে
(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)