#তুমি_আমার_ভালোবাসা
#পর্ব_২১
#লেখিকা_Munni_Akter_Priya
.
.
প্রিয়া অফিসে গিয়েই ফাহাদের কাছে যায়। কিন্তু ফাহাদ প্রিয়াকে দেখেও না দেখার ভান করে রইলো। ফাহাদের এমন ব্যবহারে প্রিয়া অবাক হয়। চোখ পিটপিট করে ফাহাদের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমার দিকে তাকাচ্ছেন না কেন?”
ফাহাদ হাতের কলমটা ঘুরাতে ঘুরাতে বলে,
“তুমি কি রাণী ভিক্টোরিয়া? তোমাকে এত দেখার কি আছে বুঝলাম না।”
“ফাহাইদ্দা!!!!”
প্রিয়া তেড়ে যায় ফাহাদের কাছে। দু’হাত দিয়ে গলা চেপে ধরে বলে,
“আমি কি? কি আমি বলেন?”
প্রিয়ার হাত সরিয়ে ফাহাদ কাঁশতে কাঁশতে বলে,
“বাবারে! বউ তো নয় যেন অগ্নিকন্যা!”
“জেনেশুনে আগুনে পা রাখলেন কেন শুনি?”
ফাহাদ প্রিয়াকে হ্যাঁচকা টান দিয়ে নিজের কোলে বসায়।
“আরে আরে কি করছেন?”
“চুপ! তোমার ভালোবাসার আগুণে পুড়তে চাই। তাই জেনেশুনেই ভালোবেসেছি।”
“পুড়ে যদি ছাই হয়ে যান?”
“কবি বলেছেন, ‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখো তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন!”
“ঢং।”
“আমি কি সবার সাথে ঢং করি?”
“আমি কি জানি?”
“কে জানে?”
“আপনি জানেন।”
“আচ্ছা শুনো।”
“কি?”
“একটা সারপ্রাইজ আছে।”
“কি সারপ্রাইজ?”
“বলে দিলে কি সেটা সারপ্রাইজ থাকবে নাকি পাগলি!”
“তাও তো ঠিক।”
“হুম। চলো।”
“কোথায়?”
“সারপ্রাইজ দেখবে না? নাকি কোলেই বসে থাকবে? শুধু তুমি কোলে থাকলেই হবে? একটা বাবুও আনি চলো।”
“নির্লজ্জ।”
ফাহাদ হাসলো। প্রিয়ার চোখ ধরে বাহিরে নিয়ে যাচ্ছে।
“আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?”
“চলো তো তুমি।”
এক জায়গায় স্থির দাঁড়িয়ে প্রিয়ার চোখ ছেড়ে দিলো। সবকিছুই কেমন যেন ঝাপসা লাগছে। চোখ কচলিয়ে সামনে তাকাতেই প্রিয়া হা হয়ে যায়। পৃথা এসেছে! পৃথা প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরলো।
“তোর হানিমুন শেষ পৃথা?”
“সারা বছর কি হানিমুনই করে যাবো?”
“যাহ্ ফাজিল। তুই যে আজ থেকেই
অফিসে জয়েন করবি। বলিসনি তো।”
“তোকে কেন বলবো? তুই কি আমায় সব বলিস?”
“আমি আবার কি লুকালাম?”
“ডুবে ডুবে জল খাও আর এখন বলো কি লুকালাম?”
পৃথার ইঙ্গিত বুঝতে পারে প্রিয়া। কান চুলকে বলে,
“আসলে…মানে..কি বলতো আমি না তোর হানিমুনের সময় নষ্ট করতে চাইনি তো তাই ফোনে বলিনি। বাট আমি ভেবেছিলাম পরে তোকে বলবো পাক্কা।”
“হয়েছে হয়েছে তোকে আর বলতে হবেনা। স্যার আমায় সব বলেছে।”
“রাগ করেনা আমার পৃথা সোনা!”
“যা সর। আগে বল বিয়ে কবে করছিস?”
বিয়ের কথা শুনতেই প্রিয়ার মুখটা মলিন হয়ে যায়। যতদিন’না ফাহাদের বাবা মেনে নিবে ততদিন তো বিয়েও করতে পারবেনা। পৃথা হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে,
“এমন চুপসে গেলি কেন?”
“হ্যাঁ? খুব শিঘ্রয়ই করবো বিয়ে।”
কথার মাঝে প্যাঁচ কেটে ফাহাদ বলে,
“আমি বুড়ো হয়ে গেলে তখন বিয়ে করবে?”
“হ্যাঁ করবো। তখন আপনি হবেন আমার বুড়ো বর।”
সবাই প্রিয়ার কথায় হেসে ফেললো।
.
প্রতিদিনই ফাহাদ প্রিয়াকে বাড়িতে এগিয়ে দেয়। কিন্তু আজ আর্জেন্ট কাজ থাকায় অফিসের একটা গাড়িতে ওঠিয়ে দিলো। আজ অফিসও ছুটি হয়েছে দেড়ি করে। মাঝ রাস্তায় হুট করেই গাড়ি খারাপ হয়ে যায়। বিপদের ওপর বিপদ। হাত ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে ১১:৩৯ বাজে। এতরাতে তো গাড়ি পাওয়াও মুশকিল। ড্রাইভার বাহির থেকে বলে,
“ম্যাম গাড়ির ইঞ্জিন খারাপ হয়ে গেছে।”
“তাহলে এখন কি হবে?”
“আপনি গাড়িতে বসেন। আমি দেখি কোনো গাড়ি পাই কি না।”
“ঠিক আছে।”
প্রিয়া ফাহাদকে ফোন দিলো। কিন্তু ফোন সুইচড অফ। অদ্ভুত তো! আজ হচ্ছে কি এসব। এভাবে গাড়িতে বসে থাকতেও বোরিং লাগছে। আবার ভয়ে বেরও হতে পারছেনা। বলা তো যায়না মানুষরূপী পশু আবার কখন ঝাঁপিয়ে পড়ে। এত সময় ধরেও কোনো গাড়ির হদিস পেলো না। কিছুক্ষণ পরই কিছু লোক হুড়মুড়িয়ে গাড়ির কাছে এলো। প্রিয়াকে টেনে-হিঁচড়ে গাড়ি থেকে বের করলো। কারোরই মুখ দেখতে পারছেনা। কারণ সবারই মুখ কালো কাপড় দিয়ে বাঁধা। একজন লোক প্রিয়ার নাকের কাছে কিছু একটা চেপে ধরতেই প্রিয়া সেন্সলেস হয়ে যায়।
যখন জ্ঞান ফিরে তখন প্রিয়াকে একটা চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। চারপাশে তাকিয়ে দেখে ওরা রাস্তায় আছে। দুপাশেই বড় ঘন জঙ্গল। এখানে মেরে ফেলে রাখলেও কেউ টেরই পাবেনা। একদম মানবশূন্য জায়গা। প্রিয়া ফাঁকা ঢোক গিললো। তবে কি আজই জীবনের শেষ দিন! প্রিয়ার সামনে একজন চেয়ারে পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে। হাতে ছুড়ি। প্রিয়া কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
“ক…কে… আ…আপ…নি?”
লোকটি উত্তরে কিছু না বলে মুখের কালো কাপড়টা সরিয়ে ফেলে। প্রিয়া পুরো শকড হয়ে যায়।
“আপনি!!!!!”
লোকটা অট্টহাসিতে মেতে ওঠে। প্রিয়া ভয় পেয়ে যায়। লোকটি আর কেউ নয়। ফাহাদের বাবা।
“আঙ্কেল আপনি? আপনি এটা করেছেন? কিডন্যাপ করেছেন আমায়?”
“এছাড়া তো আমার আর কিছুই করার ছিলনা মামণী। সেদিন তো ভালোভাবেই তোমায় বোঝালাম। কিন্তু তুমি তো বুঝলেনা। তাই আরকি! বাধ্য হলাম।”
“ছিহ্ আঙ্কেল! এসব করে কি লাভ? ফাহাদের লাইফ থেকে আমায় সরানোর জন্য এতকিছু?”
“ঐ কে আছিস? একে নিয়ে যা তো। আর কাজটা জলদি সেড়ে ফেল।”
প্রিয়া এবার প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়। কি করার কথা বলছেন উনি। একটা লোক এসে প্রিয়ার হাত পায়ের বাঁধণ খুলে প্রিয়াকে টেনে নিয়ে যায় জঙ্গলের দিকে। প্রিয়া লোকটার সাথে ধস্তাধস্তি করেও পারছেনা। মনে মনে আল্লাহ্ কে ডেকে যাচ্ছে। আল্লাহ্ ছাড়া আর কেউই এখন বাঁচাতে পারবেনা। প্রিয়া আর্তনাদ করে বলে,
“কি ক্ষতি করেছি আমি আপনাদের? কেন আমার ক্ষতি করছেন?”
জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে প্রিয়াকে ছেড়ে দিলো। ঘুটঘুটে অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। প্রিয়া ভাবে, এই সুযোগ। যেভাবেই হোক এই অন্ধকারেই পালাতে হবে। প্রিয়া দৌড় দিতে গেলে কিছু একটার সাথে হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়। আর তখনই সাথে সাথে চারদিকে লাইট জ্বলে ওঠে। ঝাড়বাতিতে চারপাশ আলোকিত হয়ে ওঠেছে। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে ফাহাদ প্রিয়াকে ধরে রেখেছে। ভূত দেখার মত ভয়ে চিৎকার দিয়ে ওঠে প্রিয়া। চারপাশ থেকে অনেকের স্বরে ভেসে আসে,
“হ্যাপি বার্থডে টু ইউ প্রিয়া। হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।”
প্রিয়া এবার চারপাশে তাকায়। ফাহাদের বাবা-মা, ফুল, প্রিয়ার মা, ভাইয়ারা, পৃথা,আকাশ সবাই উপস্থিত। প্রিয়া যেন কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। সবাই জোরে জোরে হেসে বললো,
“সারপ্রাইজ!!!”
প্রিয়া কেঁদে দিলো। কাঁদতে কাঁদতেই বললো,
“এটা কেমন সারপ্রাইজ? আর একটু হলেই তো আমি ভয়ে মরে যেতাম।”
ফাহাদ চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বললো,
“তোমার ছোট ভাইয়ার কাছে শুনেছিলাম, তুমি নাকি সারপ্রাইজ পেতে পছন্দ করো? আর তাই তো তোমার জন্মদিনে এই ছোট্ট সারপ্রাইজ?”
“এটা সারপ্রাইজ? একটু হলেই তো মরতাম। তখন আমার জন্মদিন আর মৃত্যুবার্ষিকী একসাথেই পালন করতেন।”
“চুপ পাগলী। আমি ছিলাম তো।”
“হ্যাঁ। এজন্যই তো ভয় পেয়েছিলাম।”
“কিহ্?”
“চিল্লান ক্যান? ভয় তো আপনারাই দেখিয়েছেন তাহলে দোষ আপনার না?”
“এই আইডিয়া কিন্তু আমার না। ফুলের আইডিয়া এটা।”
চোখ কচলাতে কচলাতে প্রিয়া ফুলের দিকে তাকালো।
“কাজটা ভালো করোনি ননোদিনী। তোমার জন্মদিনে যদি তোমায় নাকানিচুবানি না খাইয়েছি তো আমিও তোমার ভাবী নই হুহ।”
ফুল প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“স্যরি ভাবী। এই নাও তোমায় একটা কিসি দিয়ে দিলাম। তবুও রাগ করো না প্লিজ। আর আমি তো শুধু আইডিয়া দিয়েছিলাম। কাজে তো লাগিয়েছে বাবা আর ভাইয়া।”
বাবা কথাটা শুনে প্রিয়া থমকে যায়। ভয়ের কারণে এতক্ষণে খেয়ালই ছিলনা ফাহাদের বাবা এখানে। তাও আবার সবার সাথে মিলে প্রিয়াকে সারপ্রাইজ দিলো! হোক ভয়ংকর সারপ্রাইজ তবুও! প্রিয়া ফাহাদের বাবার দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। তিনি তাড়াহুড়োয় বললেন,
“আমার কোনো দোষ নেই মা। আমি প্রথমে ওদের প্রস্তাবে রাজি ছিলাম না। ওরা জোর করে আমাকে দিয়ে এটা করিয়েছে। বিশ্বাস করো আম্মু।”
সবাইকে অবাক করে দিয়ে প্রিয়া তাকে জড়িয়ে ধরে। ঘটনার আকস্মিকতায় তিনিও চমকে যান। প্রিয়ার মাথায় তিনি হাত বুলিয়ে দিলেন। প্রিয়াকে কাঁদতে দেখে বললেন,
“বাবা হই না আমি? এবারের মত ক্ষমা করে দাও। আর কখনো ওদের কথা শুনবো না।”
কান্নারত অবস্থায় প্রিয়া বললো,
“আপনি যদি আমার প্রতিটা সারপ্রাইজে থাকেন তাহলে আমি হাজারও ভয়ংকর সারপ্রাইজ পেতে চাই বাবা। আমার বার্থডের বড় সারপ্রাইজ’ই তো আপনি বাবা। আমি ভাবতেও পারিনি এত সহজে আপনি আমায় মেনে নিবেন।”
“তোমার কথাগুলো সেদিন আমার মন ছুঁয়ে গিয়েছিল। আমি সেদিনই বুঝেছিলাম এই মেয়ে কোনো সাধারণ মেয়ে নয়। এটা তো সাক্ষাৎ মায়াবিনী। তোমাকে হারাতে দেওয়া যাবেনা। আমার ফাহাদ সঠিক মানুষকেই জীবনসঙ্গিনী হিসেবে বেছে নিয়েছে। জীবনে বেঁচে থাকার জন্য টাকা পয়সার প্রয়োজন আছে। কিন্তু মনের শান্তির জন্য ভালোবাসা প্রয়োজন। যেটা তোমার চোখে দেখেছিলাম। ঐদিন বাড়িতে গিয়েই আমি বলে দেই আমি রাজি। তারপর তুমি অফিসে থাকা-কালীন তোমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাই। যেটা ফাহাদও জানতো না শুধু ফাহাদের মা ছাড়া। কাল যখন ফাহাদ ফুলের সাথে ডিসাইড করছিল কিভাবে তোমাকে সারপ্রাইজ দিবে তখনই আমি ওদের সবটা জানাই। আর আমিও সারপ্রাইজ দিতে অংশগ্রহণ করি।”
প্রিয়ার চোখের পানি আজ বাঁধা মানছেনা। এটা সুখের অশ্রু। সত্যিই মানুষের সব সময়টা খারাপ যায়না। একটা সময় সুখ ঠিকই হাতছানি দেয়।
কেক কাটার জন্য এগিয়ে যেতেই দেখে মায়ের চোখে পানি। এই মানুষটার চোখে প্রিয়ার সব মুহুর্তেই পানি থাকবে। তবে প্রিয়া জানে মায়ের চোখের পানিও আনন্দের। প্রিয়া মায়ের কপালে একটা চুমু খেলো। কেক কাটার পর সবাই মিলে কিছুটা সময় কাটালো। তারপর যে যার মত শুয়ে পড়লো। ওরা যেই বাগানে গিয়েছিল তার পাশেই ফাহাদদের বাংলো বাড়ি। এখানেই সব আয়োজন করা হয়েছে। রাত দুইটা বাজে। বাংলো বাড়িতে সুন্দর একটা ফুলের বাগান আছে। তার পাশেই ছোট্ট একটা পুকুর। পুকুর আর ফুলের বাগানের মাঝামাঝি একটা দোলনা। ফাহাদ আর প্রিয়া পাশাপাশি দোলনায় বসে আছে। আজও আকাশে থালার মতন সম্পূর্ণ একটা চাঁদ ওঠেছে। সাথে তো অজস্র তারা আছেই। প্রিয়া আকাশের দিকে তাকিয়েই বললো,
“একটা কথা বলি?”
“বলো।”
“আপনার কোলে একটু মাথা রাখি?”
“না।”
প্রিয়া অবাক হয়ে ফাহাদের দিকে তাকালো।
“না কেন?”
“কারণ আমি তোমার ওপর রেগে আছি।”
“কি করেছি আমি?”
“এক. তুমি এখনো আমায় আপনি করে ডাকো। দুই.বার্থডেতে কোনো গিফ্ট পেলাম না।”
“প্রথমত আমার তুমি ডাকতে লজ্জা লাগে। তবে চেষ্টা করবো। আর দুই, বার্থডে তো আমার ছিল তাহলে আমি গিফ্ট দিবো কেন?”
“এত কষ্ট করে সবকিছুর আয়োজন করেছি। আমি তো একটা গিফ্ট পাই’ই।”
“আচ্ছা কি গিফ্ট চান?”
“আবার আপনি?”
“আচ্ছা কি গিফ্ট চাও?”
ফাহাদ প্রিয়ার মুখের কাছে নিজের মুখটা এগিয়ে নিয়ে বললো,
“চুমু।”
“ধুর।”
“ধুর না। আমি আমার গিফ্ট চাই।”
“আমি পারবোনা।”
“যাও তোমার পারতে হবেনা।”
ফাহাদ অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলো। প্রিয়া ফাহাদের গালে হাত রেখে বললো,
“ঠিক আছে দিচ্ছি। তবে একটাই।”
গালের কাছে ঠোঁট এগিয়ে নিতেই ফাহাদ বললো,
“এই দাঁড়াও দাঁড়াও। গালে দিচ্ছো কেন?”
“তাহলে কোথায় দিবো?”
“ঠোঁটে।”
“না, না, না। আমি পারবোনা এটা।”
“পারতে হবে।”
“না।”
“হ্যাঁ।”
“না।”
“ওকে যাও। লাগবেনা।”
ফাহাদ মুখ গোমড়া করে বসে রইলো প্রিয়ার খুব আনইজি লাগছে। মুখটা মলিন করে বললো,
“দিচ্ছি।”
অনেক কষ্টে নিজের মধ্যে সব জড়তা কাটিয়ে নিজের ওষ্ঠদ্বয় ফাহাদের ওষ্ঠদ্বয়ের কাছে এগিয়ে নিতেই ফাহাদ প্রিয়ার ঠোঁটে আঙ্গুল রাখলো। প্রিয়া চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। ফাহাদ হেসে বললো,
“আজ নয়। বাসররাতের জন্য সব তোলা রইলো। তোমার আনইজি লাগবে এমন কিছুই আমি চাইনা।”
প্রিয়ার চোখে পানি চিকচিক করছে।
মনে মনে বলছে,
“এই মানুষটা আমায় এত বুঝে কিভাবে।”
ফাহাদ প্রিয়ার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে বললো,
“এখন থেকে শুধু তুমি করে ডেকো।”
প্রিয়া ফাহাদের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ফাহাদ বললো,
“কোলে মাথা রাখবে না?”
প্রিয়া সঙ্গে সঙ্গে ফাহাদের কোলে মাথা রাখে। পুরো বিস্তৃত আকাশটা এখন প্রিয়ার সামনে। আকাশ সমান সুখ যেন আল্লাহ্ প্রিয়ার আঁচলে ঢেলে দিয়েছে। ফাহাদ প্রিয়ার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। ফাহাদের এক হাত প্রিয়া নিজের হাতের মুঠোয় নেয়। হাতে চুমু খেয়ে বলে,
“আমার সেই অতীতের পর আমি কাউকেই ভালোবাসতে পারিনি। চেষ্টাও করিনি কখনো। পরীক্ষা শেষে জব নিয়েছিলাম আর পাশাপাশি অনার্সে ভর্তি হই। সাত মাস চাকরী করার পর সবাই মিলে ভালো ছেলে দেখে আপুর বিয়ে দেই। আল্লাহ্ এর রহমতে আমার আপু অনেক সুখী হয়। আমার দুলাভাই অনেক ভালো একটা মানুষ। দুই ভাইয়া-ভাবিও তখন আমাদের সাথে থাকতো। সবার জীবনেই সুখ ফিরে আসে। শুধু সুখের দেখা মেলেনি আমার। অনেক প্রপোজাল পেয়েছিলাম কিন্তু আমার মন কাউকেই সায় দেয়নি। আমার শুধু মনে হতো এরা কেউই আমার জন্য নয়। এত অবিশ্বাসের মাঝেও আমার মন আপনার ভালোবাসার ডাকে সায় দিলো। আমি যতবার আপনার থেকে দূরে সরে যেতে চেয়েছি আমার মন ততবারই আপনার কাছে গিয়েছে। বারবার বলেছে একে বিশ্বাস করা যায়। সত্যি বলছি, না চাইতেও খুব বেশিই ভালোবেসে ফেলেছি আপনাকে।”
“বিশ্বাসের সম্পূর্ণ মর্যাদা রাখবো আমি। এতবেশি ভালোবাসবো যে, অতীতের কথা মনে পড়লে তুমি হাসবে।”
“একটা গান শোনাবেন?”
“আগে তুমি করে বলো।”
“একটা গান শোনাও।”
ফাহাদ হেসে গান ধরলো।
“অনেক সাধনার পরে আমি পেলাম তোমার মন,
পেলাম খুঁজে এ ভূবনে আমার আপনজন।
তুমি বুকে টেনে নাও না প্রিয়া আমাকে,,
আমি ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি তোমাকে।”
“এই গানে তো প্রিয় বলে, তুমি প্রিয়া বললে কেন?”
“গানটা তো আমি আমার প্রিয়াকে ডেডিকেটেড করেছি তাই প্রিয়া বলেছি। গানের প্রত্যেকটা কথার সাথেই আমার মনের কথা একদম মিল আছে।”
“পাগল।”
“হুম। তোমার পাগল।”
.
.
অবেশেষে প্রিয়া আর ফাহাদের বিয়ের দিন এসে পড়ে। অনেক সাধনার পর ফাহাদ আর প্রিয়া ভালোবাসার মানুষকে পেতে চলেছে। আজ ওদের গায়ে হলুদ। গাঢ় হলুদ শাড়ি পড়েছে প্রিয়া। সাথে ফুলের গয়না। ফুলের ঘ্রাণে প্রিয়ার শরীর মো মো করছে। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরুর আগেই ফাহাদ ফোন দেয়। প্রিয়ার বুকটা ধক করে ওঠে। আগের গায়ে হলুদের কথা মনে পড়ে যায়। ফাহাদও কি মৃন্ময়ের মত একই কাজ করবে নাকি। অনেক চিন্তাভাবনার পর প্রিয়া ফোন রিসিভড করে। ওপাশ থেকে ফাহাদ বলে,
“ও বউ, বউ তুমি ফোন ধরো না কেন?”
ফাহাদের কথার ভঙ্গিতে প্রিয়ার জানে পানি ফিরে আসে।
“একটু পর গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে। আর আপনি এখন ফোন দিয়ে ঢং শুরু করেছেন?”
“আমার বউয়ের গায়ে হলুদ। আমি একশোবার ফোন দিবো। আর আমি কি তোমার পর? এখনো আপনি আপনি করে বলো কেন?
“কেন ফোন করেছো?”
“ইশ! তুমি করে বললে কি মিষ্টি লাগে।”
“এত মিষ্টি ভালো না। ডায়াবেটিস হবে।”
“হলে তোমার জামাইর হবে। আমার কি?”
“উফফ আল্লাহ্! তোমার কি তাই না? তাই তো তোমার কি! বিয়ে তো আমি পাশের বাড়ির কুদ্দুসকে করবো।”
“আমি থাকতে কুদ্দুস কেন বউ?”
“কেন ফোন দিছো বলবা নাকি রেখে দিবো?”
“রাগ করেনা বউটা আমার। কাল তো বিয়ে হয়েই যাবে। তাই বিয়ের আগে দুষ্টুমিষ্টি প্রেম করে নিচ্ছি।”
“হয়েছে প্রেম করা?”
“না। ভিডিও কলে আসো। তোমায় দেখবো।”
“পারবোনা এখন।”
“আমার বউ গায়ে হলুদে কেমন করে সেজেছে আমি দেখবো না? এত্ত মানুষ দেখবে আর আমি দেখলেই দোষ? তাড়াতাড়ি ইমোতে আসো।”
“ইমোতে আসবো কেন? আমার স্বামী কি বিদেশ থাকে নাকি?”
“ইমোতে আসার সাথে স্বামী বিদেশ থাকার কি সম্পর্ক?”
“আমার ওমোনি লাগে ইমোতে কথা বললে। সবাই বলে ইমোর আরেক নাম নাকি স্বামী বিদেশ এপস!”
প্রিয়ার কথা শুনে ফাহাদ হো হো করে হেসে দিলো।
“আমার বউ দেখি একটা বাচ্চা। সমস্যা নেই আদর-ভালোবাসায় বড় হয়ে যাবে। এখন তাহলে হোয়াটসএপে আসো।”
“আসতেই হবে?”
“হু। আমার পরীটাকে দেখবো।”
“ঠিক আছে।”
প্রিয়া ডাটা কানেক্ট করে হোয়াটসএপে যায়। ফাহাদ ভিডিও কল দেয়। প্রিয়া তো লজ্জায় তাকাতেই পারছেনা। আর ঐদিকে ফাহাদ চোখ সরাতেই পারছেনা। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রিয়ার দিকে…
চলবে…