গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব-৪

0
1840

#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_চার

–ঠোঁটের সাথে যুদ্ধ কেনো করেছো? বললে না তো…

প্রথমবার প্রশ্ন করে উওর না পাওয়ায়। দ্বিতীয় বার প্রশ্ন’টা করে বসলো ফারদিন। ফাইজা মুখে হাত দিয়ে চোখ বড় বড় করে তাঁকিয়ে আছে ফারদিনের দিকে। ফারদিন চেয়ার টেনে বসে চুল ঠিক করতে করতে ভ্রু-যুগল কুচকে তাকালো ফাইজার দিকে। ফাইজা কয়েকবার ঢোক গিলে মিনমিনিয়ে বলতে লাগলো…..

–সোজা আমার ঠোঁটের দিকে নজর দিয়ে দিলো। ব্যা’টা ব’দের হা’ড্ডির সাথে সাথে এক নাম্বার লু’চু…….

ফাইজার মিনমিনে স্বরে বলা কথা ফারদিনের কান অব্দি না গেলেও ফারদিন আন্দাজ করতে পারছে ফাইজা দাড়িয়ে দাড়িয়ে কি বলছে। তাই হালকা করে গলা ঝেড়ে বলে উঠলো…..

—ঠোঁটের মধ্যে সাইনবোর্ড লাগিয়ে ঘুরে বেড়াবে আর আমারা নজর দিলেই দোষ।

ফারদিনের কথা শুনে ফাইজা’র কান্না করে দেওয়া ভাব। ফাইজার মুখের অবস্থা বুঝতে পেরে ফারদিন শান্ত স্বরেই বলে উঠলো……

—কাম এন্ড সিট কুইক..

ফাইজা কাঁপতে কাঁপতে এসে ফারদিনের পাশে চেয়ার টেনে বসে। কাঁপা কাঁপা হাতে বইয়ের দিকে হাত বাড়াতেই ফারদিন আচমকা ফাইজার হাত’টা ধরে ফেলতেই ফাইজা ভয়ে কেঁপে উঠলো। তা দেখে ফারদিন ফাইজার আড়ালে মুচকি হাসলো। পরক্ষণেই রাগী স্বরে বলে উঠলো…..

–হোয়াট হ্যাপেন্ড? এত কাঁপছো কেনো? আমি কি বা’ঘ নাকি ভা’ল্লু’ক খে’য়ে ফেলব তোমাকে? স্ট্যারেঞ্জ…….

বলেই হাত ছেড়ে দিলো। ফাইজার মনে হচ্ছিলো ওর দম বে’ড়িয়ে যাবে। ঠোঁটে ঠোঁট চে’পে চোখ মুখ খি’চে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। নাহ! তাও ওর কাঁপা-কাঁপি কমছে না। ভয়ে ওর চোখে পানি টলমল করতে লাগলো। ফারদিন এইবার বিরক্তি’তে “চ” শব্দ করে কাছে থাকা স্কেল টা নিয়ে টেবিলের উপর জোরে বা’ড়ি মে/রে ধমকের স্বরে বললো…..

—এই মেয়ে, এক্ষুনি যদি কাঁপা-কাঁপি না থামিয়েছো তাহলে ধাক্কা দিয়ে চেয়ার থেকে ফেলে দিব। ননসেন্স….

ফারদিনের ধমকে আর ভয়ে ফাইজার চোখের অবাধ্য জল গুলো এইবার গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগলো। ফাইজা নিজের দিকে তাঁকিয়ে ফারদিনের দিকে বই এগিয়ে দিতেই ফারদিন পড়ানো শুরু করলো। এক ঘন্টা পড়ানোর মধ্যে ফারদিন একশো’বার বেচারী’কে ধমক দিয়েছে। ফারদিন চলে যেতেই ফাইজা’র মনে হলো ওর দে’হে প্রান ফিরে এসেছে। ফাইজা কয়েকবার বুঁকে থু’থু দিয়ে নিজের চুল গুলো দুই হাতে এলোমেলো করে বলতে লাগলো……

—উফফ এই ফারদিন নামক উদ্ভট প্রা’নী’র টা’র জন্য আমার লাইফ’টা দুইদিনেই হেল হয়ে যাচ্ছে। ওহ আল্লাহ প্লিজ হেল্প মি। একদিনেই আমার এই অবস্থা বাকি দিন গুলো’তে আমার কি হবে?

বলতে বলতেই ফাইজা বাচ্চা’দের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে উঠলো। দরজার আড়াল থেকে ফাইজার মা মেয়ের এই অবস্থা দেখে মুখ টিপে হেসে চলে যেতে যেতে বলতে লাগলো….

–একদম ঠিক হয়েছে। এইরকম একটা রাগী টিচার এই দরকার ছিলো তোর জন্য। বেছে বেছে একজন যোগ্য টিচার খুঁজে দিয়েছে আমাদের। আহা শান্তি……
____________________________________________
গভীর রাতে ঘুমের মধ্যে মুখের উপর কারোর গরম নিশ্বাস পড়তেই আচমকা ঘুম ভেঙে যায় ফাইজা। মস্তিষ্কের কাল রাতের ঘটনা মনে পড়তেই চোখে মেলে তাকাতেই দেখলো ওর দিকে একটা ছায়া মানব ঝুঁকে আছে। ফাইজা চিৎকার করার জন্য মুখ খুলতেই ছায়া মানব’টি ফাইজার মুখ চেপে ধরলো। ফাইজার শরীরে ভূমিকম্প শুরু হলো মুহূর্তেই। ছায়া মানব’টির মুখ একদম ফাইজার মুখের কাছাকাছি দুজনের মুখের মধ্যে এক ইঞ্চি পরিমান ফাঁকা জায়গা রয়েছে। ফাইজার চোখ বড় বড় করে হাত দিয়ে ছায়া মানব’টিকে সরানোর চেষ্টা করলো। নাহ জিম করা বডি’তে ফাইজার নরম হাতের ধাক্কার চুল পরিমান এফেক্ট পড়লো। বরং ছায়া মানব’টি এইবার ফাইজার দিকে আরেক’টু ঝুঁকে আসতেই ফাইজা নিজের মুখে দাড়ির সংঘর্ষ হতেই ফাইজা নড়েচড়ে উঠলো। ফাইজা’র গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো। দুই চোখ বেয়ে মোটা মোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়তেই ছায়া মানব’টি হঠাৎ ফাইজার কাছ থেকে সরে গেলো। ছায়া মানব’টি সরে যেতেই ফাইজা লাফিয়ে উঠে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলো। অন্ধকার রুমে পিন-পতন নিরবতার মাঝে নিশ্বাসের শব্দ’টা শুনতে বেশ ভয়ানক লাগছে। ফাইজার হৃদস্পন্দন বেড়ে মনে হচ্ছে এক্ষুনি হার্ট টা বের হয়ে যাবে দেহ থেকে। ফাইজা অন্ধকারের মাঝেও অনুভব করলো ছায়া মানব’টি ওর থেকে খানিক’টা দূরে দাড়িয়ে আছে। তার নিশ্বাসের শব্দ শব্দহীন রুমে শব্দ সৃষ্টি করছে।
ফাইজা লাফিয়ে খাট থেকে নেমে কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে উঠলো…..

—কে আপনি? কেনো এমন করছেন আমার সাথে? আমি জানি আপনি এখানেই আছেন? উওর দিন প্লিজ? কে আপনি?

ফাইজার কাঁপা কন্ঠ শুনতেই ছায়া মানব’টি হুট করে ফাইজা’কে কালকের মতো দেয়ালের চেপে ধরলো। দুই হাতে ফাইজার দুই হাত দেয়ালের সাথে আকড়ে ধরে ফাইজার থুতনিতে নিজের গাল দিয়ে স্লাইড করতে লাগলো। হঠাৎ স্পর্শে ফাইজা কাঁপতে শুরু করলো। ওর কন্ঠনালী থমকিয়ে আছে। শ্বাস-প্রশ্বাস বেড়ে বুক উঠানামা করছে। কানের ঠোঁটে স্পর্শ পেতেই ফাইজার কাঁপুনি দ্বিগুন হয়ে গেলো। ফাইজা নিজের হাত ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে। ফাইজার কাঁপুনি তে ছায়া মানব’টি ফাইজার সাথে আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে অস্ফুট স্বরে ফাইজার কানে নেশালো কন্ঠে বলে উঠলো…..

– এত কাঁপা-কাঁপির কি আছে সুইটহার্ট। এখনো তো কিছু করলাম এই না। সো, ডির্স্টাব করো না সুইটহার্ট প্লিজ। না,হলে ঠোঁট’টের সাথে কাল সারাদিন ঘ’ষা’মা’জা করা লাগবে…….

বলেই দুই হাতে ফাইজার কোমড় জড়িয়ে নিজের সাথে আরো খানিকি’টা মিশিয়ে নিলো। এইবার ফাইজা ছায়া মানব’টির বুকের সাথে মিশে আছে। ছায়া মানব’টির কন্ঠ স্বর ফাইজা’কে ভাবাচ্ছে কে এই লোক? মুহূর্তেই শীতল হাতের স্পর্শে ফাইজার শরীরের কম্পন তীব্র গতীতে বাড়তে লাগলো। ছায়া মানব’টির উষ্ণ নিশ্বাস ফাইজার ঘাড়ে পড়ছে। ছায়া মানব’টি ফাইজার ঘাড়ে গভীর ভাবে চুমু খেলো। ফাইজা ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলছে। এতে ছায়া মানব’টি অস্পষ্ট স্বরে বললো….

–এমন করে না সুইটহার্ট। নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছিনা যে……

বলতেই ফাইজার গলায় মুখ ডুবিয়ে কয়েকবার চুমু খেয়ে খেলো। ফাইজা সা’পের মতো মুচড়া-মুচড়ি করেই যাচ্ছে। ফাইজার মুচড়া-মুচড়িতে বিরক্ত হয়ে ছায়া মানব’টি ফাইজার ঘাড়ে আস্তে করে কা’মড় দিয়ে পূর্বের মতো অস্পষ্ট স্বরে বললো….

–বেশি নাড়াচাড়া তো সুইটহার্ট। তাহলে পরের বার লাভ বাইট’টা ঠোটে হবে আর এত জোরে হবে যে বাইরে বের হতে পারবে না……

ফাইজা বিদ্যুৎ গতীতে কেঁপে উঠলো। মনে হলো ও বিদ্যুৎ এর শক খেয়েছে। ফাইজা অজানা ভয়ে শিউরে উঠে বাচ্চা’দের মতো কেঁদে উঠলো। ফাইজার কান্নার স্বরে ছায়া মানব’টি ফাইজার থেকে একটু দূরে সরে কয়েকবার ঘন ঘন নিশ্বাস ছেড়ে। ফাইজার সামনে এসে ওর দুই গালে হাত রেখে শান্ত কন্ঠে বললো…..

—প্লিজ কান্না করো না। স্যারি। এক্ষুনি চলে যাচ্ছি…..

ফাইজার সেদিকে ধ্যান নেই ও ফুঁপিয়ে কেঁদেই চলেছে। ছায়া মানব’টি ফাইজার থেকে দূরে গিয়ে এক প্রকার শাসিয়ে বলে উঠলো…..

–ঐ ফারদিন আবসার তাজ এর থেকে যত’টা সম্ভব দূরে থাকবে সুইটহার্ট। নয়তো…….

বলতেই আর শব্দ শুনতে পেলো না ফাইজা। হঠাৎ করেই রুম’টা আগের মতো নিস্তব্দ হয়ে গেলো। ফাইজা দেয়াল ঘেঁষে বসে নিজেকে হাটুর ভাঁজে গুটিয়ে নিয়ে কেঁদে উঠলো। কি হচ্ছে ওর সাথে এসব? ফাইজার বুক এখনো কাঁপছে। তীব্র বেগে শরীর কাঁপছে। মস্তিষ্ক অজানা কোনো ঝড়ের সংকেত দিচ্ছে। কে এই ছায়া মানব? কেনো আসে ফাইজার কাছে? ভাবতেই ফাইজা আবারো কেঁদে উঠলো। হঠাৎ ম্যাসেজের শব্দে ফাইজা মাথা উঠিয়ে কৌতুহল বশত ফোন’টা ধরতেই একটা ম্যাসেজ ভেসে উঠলো……

“আমি কে খোঁজার চেষ্টা করো না সুইটহার্ট। ডোন্ট নো, তোমাকে দেখলে কেনো নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনা”

#চলবে…..

[একটা গঠনমূলক মন্তব্য করবেন প্লিজ। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here