গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব-৭

0
2006

#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_সাত

কলেজের ক্যাম্পাসে সবার সামনে আচমকা ফাইজার গালে থা’প্পড় পড়লো। মুহূর্তেই ওর কান গরম হয়ে চিনচিনে ব্যাথা শুরু হলো। গালের হা’ড্ডি গুলো বোধহয় ভেঙে গেছে এমন লাগছে। গাল জ্বলে যাচ্ছে। ব্যাথায় চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়তো। ফাইজা’র সামনেই ফারদিন রাগী দৃষ্টি’তে তাঁকিয়ে আছে। ফারদিন’কে দেখেই মনে হচ্ছে ও অনেক রেগে আছে। কলেজের ক্যাম্পাসে আরজা আর ফাইজা বসে গল্প করছিলো। ওদের পাশেই দুইটা ছেলে বসে গল্প করছিলো। আর, তখনি হুট করে ওর গালে থা’প্পড় পড়ায় সবাই ভরকে গেলো। ফারদিন’কে দেখেই ওরা তিন জন চুপ করে রইলো। আরজা ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাড়িয়ে ফাইজা’র পেছনে লুঁকিয়ে পড়লো। আর ফাইজা অশ্রু ভর্তি চোখে সারা ক্যাম্পাসে একবার চোখ বুলাতেই দেখলো উপস্থিত সবাই ওদের দিকে চেয়ে আছে। কিছু মেয়ে মিটমিটিয়ে হাসচ্ছে। লজ্জা আর অপমানে ফাইজার মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। হঠাৎ, করেই ফারদিনের প্রতি রাগে ফাইজার চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। চোখ দুটো মুহূর্তেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিলো ফারদিনেফ দিকে। রাগে ফেটে পড়ে আচমকা সবাই’কে অবাক করে দিয়ে ফারদিনের কলার চে’পে ধরলো। ফারদিন ফাইজার এহেতুক আচরণে অবাক হয়ে দাড়িয়ে রইলো। ফারদিন নিজের কলার ছুটানোর জন্য ফাইজার হাত চে’পে ধরতেই ফাইজা চেঁচিয়ে বলে উঠলো…..

—কেনো আমার গায়ে হাত দিলেন? কথায় কথায় আমার গায়ে হাত তোলার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে? কি ভেবেছেন? আমার কোনো আত্মমর্যাদা নেই। সব সময় চুপ থাকি বলে আমার সাথে যখন যেখানে ইচ্ছে যেমন খুশি তেমন ব্যবহার করবেন। হাউ ডেয়ার ইউ মিস্টার ফারদিন আবসার তাজ। আজকে আপনাকে আমার সব প্রশ্নের উওর দিতেই হবে। কে আপনি? কোন অধিকারে আমার গায়ে হাত তুলেন সব সময়? শুধুমাত্র আপনাকে ভালোবাসি আর আপনি আমার স্যার বলে এতদিন সব’টা মুখ বুঝে মেনে নিয়েছি। আজকে আপনাকে জবাব দিতে হবে। এন্সার মি…….

রাগে ফাইজা কি বলছে ও নিজেও বুঝতে পারছে না। রাগে আর লজ্জা অপমানে ফাইজা চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। আর ফারদিনের কানে এখনো একটা শব্দ বাজচ্ছে” আপনাকে ভালোবাসি”। ফারদিন যেনো নিজের কান’কেই বিশ্বাস করতে পারছে না। ফাইজা হঠাৎ করেই সবার সামনে ফারদিন’কে জড়িয়ে ধরে জোরে কান্না করতে লাগলো। এইবার উপস্থিত সবাই বিস্ময়ের শেষ সীমানায়। আরজা মুখ’টা হা করে তাঁকিয়ে আছে ওদের দিকে। ফারদিন এখনো ঘোরের মধ্যে আছে। ফাইজা যখন আরজার সাথে কথা বলছিলো তখন ওর ওড়না’টা বুকের এক সাইড থেকে সরে গিয়েছিলো। আর তখন ফাইজা’র পাশে বসে থাকা ছেলে’টা লোভাত্তুর দৃষ্টি’তে সেদিকে তাঁকিয়ে পাশের ছেলে’টাকে কিছু একটা ইশারা করে ফাইজা’র দিকে হাত বাড়াতে লাগলো। ফাইজা কথায় এতই ব্যস্ত ছিলো যে সেদিকে ওর কোনো ধ্যানেই ছিলো না। ফারদিন ক্যাম্পাসে ঢুকতেই এই দৃশ্য দেখে ওর রাগে কপালের রক’টা ফুলে উঠলো। ফাইজা এতটা কেয়ার লেস ভাবতেই রাগ কন্ট্রোল করতে না পে’রে এসে ফাইজার গালে থা’প্পড় মে’রে’ছিলো। ফাইজা এখনো ফারদিন’কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে যাচ্ছে। ফারদিন ফাইজার মাথায় হাত রাখতেই ফাইজা’র হুশ ফিরে আসলো। ফাইজা তৎক্ষনাৎ ফারদিন’কে ছেড়ে দিয়ে ওর থেকে খানিক’টা দূরে গিয়ে দাড়িয়ে পড়লো। আড় চোখে দেখলো সবাই ওদের দিকে তাঁকিয়ে আছে। নিজের বো’কা’মির জন্য এখন নিজের উপর রাগ উঠছে ওর। ফারদিন ফাইজা’কে কিছু না বলে রাগী চাহনী নিক্ষেপ করলো ছেলেদুটোর দিকে। বা’ঘের মতো দুই হাতে ছেলে’টার কলার চে’পে ধরলো। ফারদিনের কান্ডে ফাইজা এইবার বিস্ময়ের চরম পর্যায়। শরীরের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে ঘু-ষি মে/রে বসলো ছেলে’টার নাকে। ছেলে’টা ছিটকে গিয়ে মাঠের মধ্যে পড়লো। ফারদিন রাগে কাঁপছে। ছেলে’টা ব্যাথায় কুঁকিড়ে উঠতেই ফারদিন রাগে ছেলেটা’র গলা চে’পে ধরে মাটির সাথে মিশিয়ে নিয়ে রাগে চিৎকার করে বলতে লাগলো……

–তোর সাহস কি করে হলো ওর দিকে হাত বাড়ানো?

বলেই আরেক’টা ঘু’ষি বসিয়ে দিলো। একাধারে মে/রেই যাচ্ছে। কয়েক’জন শিক্ষক ছুটে এসে ফারদিন’কে থামানোর চেষ্টা করছে। ফাইজা এখনো অবাক হয়ে তাঁকিয়ে আছে ফারদিনের দিকে। ভয়ে ওর বুকের ভেতর ঢিপঢিপ করছে। ফারদিন’কে সবাই মিলে টেনে আনলে ফারদিন পা দিয়ে লা/থি মা/রা শুরু করলো। ছেলে’টার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। কয়েকজন ছেলে এসে ওই ছেলে’টাকে ধরে হসপিটালে নিয়ে যেতে লাগলো। সবাই ফারদিনের রাগ দেখে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে আছে। ফাইজা আর আরজা দুইজন একসাথে দুইজনের হাত ধরে দাড়িয়ে আছে। আরজার ভয়ে প্রান যায় যায় অবস্থা। রাগে ফারদিনের মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে। সবাই ফারদিন’কে টেনে দূরে সরিয়ে এনে ছেড়ে দিতেই ফারদিন সোজা এসে ফাইজার হাত চেপে ধরলো। এইবার ফাইজা ভয়ে প্রান বেড়িয়ে যেতে লাগলো। ফারদিন কাউকে কোনো উওর না দিয়ে ফাইজার হাত চেপে ধরে হাটা শুরু করলো। ফাইজা রোবটের মতো ফারদিনের সাথে হাটা শুরু করলো। ফারদিন ফাইজা’কে টেনে এনে গাড়িতে বসিয়ে শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দিলো। আজ তিনদিন পর ফাইজা কলেজে এসেছিলো। আর কলেজে এসেই এই অবস্থায় পড়বে ও ভাবতেও পারছেনা। ফাইজা ভয়ে হাত কচলাচ্ছে। ফারদিন গাড়িতে উঠেই গাড়ি স্ট্যাট দিলো। ফাইজা ভেবে ছিলো ফারদিন ওকে বাড়ি নিয়ে আসবে কিন্তু যখন দেখলো গাড়ি অন্য রাস্তায় যাচ্ছে তখন ফাইজা ভয়ার্ত স্বরে বলে উঠলো….

–এটা তো আমার বাড়ির রাস্তা না। আমি বাড়ি যাব। স্যার, প্লিজ গাড়ি থামান। আমি বা…..

আর বলার আগেই ফারদিন জোরে ব্রেক করলো। আচমকা ব্রেক কসাই ফাইজা ঝুঁকে পড়তেই এক হাত ওর কপালে ছুয়ে দিতেই ও মাথায় ব্যাথা পাওয়ার হাত থেকে বেঁচে গেলো। কিন্তু, হাতের ব্যাক্তি’টার হাতে যে প্রচন্ড ব্যাথা লেগেছে তা বেশ বোঝা যাচ্ছে। ফাইজা ভয়ে চোখ মুখ খিচে রেখেছিলো। যখন দেখলো ও ব্যাথা পায়’নি তখন চোখ খুলতেই দেখলো ওর কপাল ফারদিনের হাতের উপর। ফাইজা নিজেকে সামলে নিতেই ফারদিন হাত সরিয়ে নিলো। ওর হাত’টা ব্যাথায় লাল হয়ে উঠেছে তা ফাইজার দৃষ্টি এড়ালো না। ফারদিন শান্ত কন্ঠে বললো…..

–নো কুয়েশ্চন। গাড়ি যতক্ষন না থামবে ততক্ষন অব্দি একটা সাউন্ড আমার কানে আসলে খুব খারাপ হবে। মাইন্ড ইট…..
বলেই আবার গাড়ি স্ট্যাট দিলো। ফাইজ ভয়ে আর প্রশ্ন করতে পারলো। অজানা এক অভিমান এসে মনের কোনে জড়ো হলো। ছলছল চোখে জানালার দিকে দৃষ্টি দিলো। রাগের বশে আজ সত্যি’টা ফারদিনের সামনে বলে দিয়ে যে ভুল করেছে তা এখন বেশ বুঝতে পারছে। ফারদিন তো ওকে সহ্যই করতে পারেনা। আর এখন ছাত্রী হয়ে স্যার কে ভালোবাসে এই কথা’টা শুনে নিশ্চয়ই একে অভদ্র,নির্লজ্জ ভাবছে। আজ নিশ্চয়ই সেদিনের মতো হাজার’টা কথা শুনাবে। হয়তো গায়েও হাত তুলবে আবার। আজ যদি ফারদিন ওকে আবার অপমান করে তাহলে ও কিছুতেই মুখ বুজে সহ্য করে নিবে না। ফারদিনের মুখের উপর পাল্টা জবাব দিবে। ভালোবাসার মধ্যে তো কোনো ভুল নেই। হোক না সে বয়সে বেশ কয়েকবছরের বড় আর সম্পর্কে টিচার। তাতে কি ভালোবাসা তো এসভ দেখে হয়না। এক বছর ধরে নিজের মনের মধ্যে এই কথা লুঁকিয়ে রেখেছিলো আজ এইভাবে নিজের অজান্তেই সেই কথা’টা প্রকাশ পাবে বুঝতে ও পারেনি ফাইজা। গাড়ি’টা থেমে যেতেই ফাইজার ভাবনায় ছেদ ঘটলো৷ ফাইজা চোখের জল টুকু মুছে নিয়ে জানালা দিকে তাঁকাতেই ওর মাথায় বাজ ভেঙে পড়লো। কারন ফাইজার চোখের সামনে স্পষ্ট লেখা আছে “কাজী অফিস”। হঠাৎ, কাজী অফিসের সামনে এসে গাড়ি থামতেই ফাইজার বুকের ভেতর’টা মুচড়ে উঠলো। ফারদিন কি করতে চলেছে? কি ঘটবে? কোন অপ্রত্যাশিত ঘটনার সাক্ষী হতে চলেছে ফাইজা………

#চলবে

[আসসালামু আলাইকুম। আজকের পর্ব টাও ছোট তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু কিছু করার নেই, অনেক ঝড় হচ্ছে কারেন্ট ও নেই চার্জ ও প্রায় শেষ তাই আর লিখতে পারেনি। সারাদিন রোজা রেখে শপিংয়ে গিয়ে সময় পাইনি। কালকে ইয়া বড় একটা পার্ট দিব। প্রমিস]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here