গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব-১০

0
1906

#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_দশ

সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতেই আচম’কা কেউ ফাইজা’র হাত ধরে টেনে অন্ধকার রুমে নিয়ে আসলো। চারদিকে অন্ধকার দেখে ফাইজার বুক হয়ে কেঁপে উঠলো। একটা চেনা স্পষ্ট ফাইজা’র কোমর জড়িয়ে ধরতেই ফাইজা শা’ন্তির নিশ্বাস ফেলে সামনের ব্যাক্তি’টির শার্ট খামচে বললো….

—আরেক’টু হলে ভয়ে হার্ট অ্যাটাক করতাম…..

বলতেই চারদিক’টা আলো ফুটে উঠলো। কলেজের দ্বিতীয় তলার ল্যাব রুম এটা। ফারদিন ফাইজার নাকে নাক ঘষে বললো…..

—আমাকে কেনো এড়িয়ে যাচ্ছো সকাল থেকে সুইটহার্ট? কষ্ট হচ্ছে তো….

ফারদিনে’র কথা শুনে ফাইজা নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করতেই ফারদিন ফাইজা’কে নিজের সাথে আরো চে’পে ধরলো। ফাইজা চোখে মুখে বিরক্তি ভাব এনে বললো…..

–প্লিজ ছাড়ুন কেউ এসে দেখে ফেললে বাজে কান্ড হবে। এটা কলেজ ভুলে যাচ্ছেন আপনি…..

ফাইজার এহেতুক কথায় ফারদিন মুখের ভঙ্গিমা চেঞ্জ করে গম্ভীর কন্ঠে বললো….

–আমি একটা কুয়েশ্চন করেছি। এন্সার মাই কুয়েশ্চন…..

ফাইজা ফারদিনের দিকে এক নজর তাঁকিয়ে বুঝলো ফারদিন রেগে যাচ্ছে। তাই ফাইজা মাথা নিঁচু করে সোজা উওর দিলো……

–আমি আপনার সব প্রশ্নের উওর দিতে বাধ্য নই। সো, ছাড়ুন আমাকে। আমার ক্লাসে লেট হয়ে যাচ্ছে…..

ওর কথা শুনে ফারদিনের রাগে কপালের রক’টা খানিক’টা ফুলে উঠলো। ফারদিন ফাইজা’কে জোরে চে’পে ধরে বললো…..

–রাগিও না জান। ভালো মুখে আমার প্রশ্নের উওর’টা দিয়ে দাও। কেনো ইগ্নোর করছো আমাকে? হোয়াই জান হোয়াই?

ফাইজা একটা শুকনো ঢোক গিলে বললো….

–কারনে-অকারনে আমাকে যেখানে সেখানে ছুঁবেন না। বিরক্ত লাগে আমার……

ফাইজার এমন উওরে ফারদিনের হাত’টা সরে এলো ফাইজার কোমর থেকে। ফাইজা কয়েক’পা পিছিয়ে দাড়ালো। ফারদিন এখনো ওর দিকে অবাক চাহনী নিক্ষেপ করে আছে। রাগে হাত’ দুটো মুঠোয় বন্দি করে দেয়ালে সজোরে ঘু”ষি মে”রে বসলো। ফাইজা ফারদিনের কান্ডে চোখ বড় বড় করে তাঁকিয়ে আছে। ফারদিন দ্বিতীয় বার দেয়ালে ঘু”ষি মা”রা”র জন্য হাত উঠাতেই ফাইজা তৎক্ষনাৎ হাত’টা ধরে এক প্রকার চেঁচিয়ে বললো…..

–পা”গ”ল হয়ে গেছেন আপনি। কি করছেন টা কি?

ফাইজার কথা শুনে ফারদিন আগুন ঝড়া দৃষ্টিতে ফাইজার দিকে তাঁকিয়ে ঝাড়ি মে”রে ফাইজার থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো। ফারদিনের কান্ডে ফাইজা’র চোখের কোনে পানি এসে জমতে শুরু করেছে। ফাইজা আবারো ফারদিনের হাত ধরতে নিলে ফারদিন চিৎকার করে বললো…..

–ডো’ন্ট টার্চ মি। আমার ছোঁয়া তোমার বিরক্ত লাগে সিরিয়াস’লি। ওকে ডান, এই মুহূর্ত থেকে যতক্ষন না অব্দি তুমি নিজে এসে আমার কাছে ধরা দিচ্ছো। ততক্ষন অব্দি তোমার গায়ে সামান্য টার্চ অব্দি করব না। প্রমিস…….

বলেই হনহন করে বেড়িয়ে গেলো। ফাইজা’কে একটা কথা বলার সুযোগ অব্দি দিলো না। ফারদিন চলে যেতেই ফাইজার চোখ থেকে দুই ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। চোখ বন্ধ করতেই কাল রাতের কথা মনে পড়লো।
~~~~~~~~~~~~~~
“কাল রাতে”

–আপনার সাথে আমার বিয়ে কবে হয়েছিলো? আর আমাদের বিয়ে হয়েছে আমি কেনো জানিনা? আপনিই বা কেনো আমার সাথে বাজে বিহেভিয়ার করেছিলেন এতদিন? আবার রাতের আধারে কেনো লুঁকিয়ে এসেছিলেন আমার ঘরে? প্লিজ উওর গুলো দেন। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে…..

ফাইজা কয়েকবার একি প্রশ্ন করতেই ফারদিন হঠাৎ করে উঠে বসে ফাইজার দিকে রাগী চাহনি দিয়ে দাতে দাত চে’পে বললো……

–তোমাকে আমি বলেছিলাম যখন সময় হবে আমি সব’টা বলব। তোমার সাথে কেনো সবার সামনে বাজে বিহেভিয়ার করতাম? কেনো লুঁকিয়ে আসতাম? সব প্রশ্নের উওর জানতে চাচ্ছো? কিন্তু একবার ও ভাবছো না নিশ্চয়ই কোনো কারন আছে দেখে আমি এখন উওর দিচ্ছি না। বার বার এক প্রশ্ন করে বিরক্ত করছো কেনো? তোমাকে তো আমি প্রুভ হিসেবে ম্যারেজ সার্টিফিকেট দেখালাম। তাও বিলিভ হচ্ছে না?

ফাইজা ফারদিনের আচরনে হা হয়ে তাঁকিয়ে আছে। সামান্য কয়েক’টা প্রশ্ন’ই তো করেছিলো। তার উওর এইভাবে দিতে হবে। কেনো যেনো ফাইজা’র মনে অভিমানেরা এসে হা’না দিলো। ফাইজা শান্ত কন্ঠেই বললো…..

–সামান্য কয়েক’টা প্রশ্ন’ই তো করেছিলাম। এত’টা রেগে যাওয়ার মতো কিছু বলিনি?

ফাইজার কথা শুনে ফারদিন আরো দ্বিগুন রাগ নিয়ে বললো…..

–ওহ রিয়ে’লি,, বার বার এক কুয়েশ্চন করে বলছো সামান্য কুয়েশ্চেনের জন্য আমি কেনো রেগে যাচ্ছি
? বুঝতে পেরেছি প্রশ্নের উওর জানার জন্য’ই তুমি আমাকে এখন সহ্য করছো? ওকে ফাইন, সহ্য করতে হবেনা আমাকে। চলে যাচ্ছি……..

বলেই ফারদিন বেড়িয়ে গেলো। ফাইজা এখনো অসহায় মুখ করে ফারদিনের যাওয়ার দিকে তাঁকিয়ে আছে। ফারদিন রেগে দরজা খুলেই চলে গেছে। ফাইজা’ কিছু একটা মনে করে ফারদিনের পেছন পেছন যেতেই দেখলো ফারদিন ততক্ষনে মেইন দরজা খুলে বেড়িয়ে গিয়েছে। ফাইজা কিছু না ভেবে দরজা আটকে বেলক’নিতে এসে দাড়াতেই দেখলো ফারদিনের গাড়িটা ওদের গেট দিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে। ফারদিনের যাওয়ার দিকে কিছুক্ষন তাঁকিয়ে থেকে ফাইজা অভিমানে চুপ করে এসে সুয়ে পড়লো। সকালে কলেজে এসে ফারদিন’কে যথাক্রমে ইগ্নোর করে চলছিলো ফাইজা। কাল রাতে ফারদিনের ব্যবহারে অভিমান করেছে আর অভিমান থেকেই ফাইজা ফারদিন’কে ইগ্নোর করছিলো। ছুটির পর ফাইজা’র ক্লাস’মেট এসে বললো আরজা ফাইজা’কে উপরে ডেকেছে। আর আসতেই….
~~~~~~~~~~
কাঁধে কারোর স্পর্শ পেয়ে ফাইজা’র ভাবনার ছেদ ঘটলো। ফাইজা তড়িঘড়ি করে চোখের জল টুকু মুছে পেছনে ফিরতেই আরজা’কে দেখতে পেলো। আরজা ফাইজার দিকে অবাক নয়নে তাঁকিয়ে বললো……

–তুই এখানে একা একা কি করছিস ফাইজু?

ফাইজা মুখে হাসির রেখা টেনে বললো…..

—তোকে খুঁজতে খুঁজতে এখানে এসে পড়েছি।

আরজা ও আর কথা না বাড়িয়ে ফাইজা’কে নিয়ে নিচে নেমে আসলো। নিচে নেমে ফাইজার চোখ দুটো চাতক পাখির মতো কাউকে খুঁজছে। কিন্তু,চারদিকে তা দেখা অব্দি মিললো না। আরজা’কে বিদায় জানিয়ে ফাইজা চলে আসলো।
____________________________________________
ফারদিন এলোমেলোহীন ভাবে গাড়ি চালাচ্ছে। রাগে বার বার শরীর কেঁপে উঠছে। ফাইজার বিরক্ত ভরা কন্ঠস্বর বাজছে কানে। ফারদিনের গাড়ির পেছনে’ই একটা ট্রাক ছুটচ্ছে৷ ট্রাকের ড্রাইভারের মুখে রুমাল বাঁধা। ট্রাক ড্রাইভারের ফোন’টা বেজে উঠতে’ই সে রিসিভ করে কানে ধরলো। ওপাশ থেকে কেউ একজন কিছু বলতেই ড্রাইভার নিঁচু স্বরে বলল…..

–কাজে হয়ে যাবে ম্যাডাম। চিন্তা করবেন না…..

বলতেই ফোন’টা রেখে নজর দিলো ফারদিনের গাড়ির দিকে। সজোরে ট্রাক’টা এসেই ফারদিনের গাড়ি’টাকে ধাক্কা মা’র’তেই ফারদিনের গাড়ি’টা উল্টে গিয়ে রাস্তার ধারে পড়লো। হঠাৎ করে কি হলো ফারদিন বোঝার আগেই ঘটনা’টা ঘটে গেলো। গাড়ি’টা উল্টে পড়তেই ফারদিনের মাথা ফে’টে গলগল করে রক্ত পড়তে লাগলো। ফারদিন এক হাতে মাথা চে’পে ধরে পা দিয়ে দরজা ধাক্কিয়ে খুলে অর্ধেক বের হতেই ওর চোখ দুটো বুঝে আসলো। আরেক’টা পা ভেতরে কিছুর সাথে আটকে গেছে। ফারদিন চোখ বন্ধ করার আগে অব্দি ফাইজার চেহারা’টা ভেসে উঠলো। ফারদিনের কাঁধের দিক দিয়ে বেশ খানিক’টা খুবলে উঠে গেছে। মুখ’টা রক্তে মে’খে গেছে। টকটকে লাল র’ক্ত গুলো গড়িয়ে পড়ছে। চারপাশের মানুষ জন দৌড়ে ছুটে এলো। ট্রাক’টা ধাক্কা দিয়েই আর থামলো না। চোখের পলকে হাওয়া হয়ে গেলো। চারপাশের লোকজন ফারদিনের অবস্থা দেখে ধরতে সাহস পেলো না। সবার মনে মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। কেউ কেউ বলছে “ছেলে’টা বোধহয় বেঁচে নেই” আবার কেউ কেউ বলছে “ছেলে’টা বেঁচে আছে নাকি বুঝতে পারছিনা” কয়েকজন সাহস করে এগিয়ে গেলো। পেছন থেকে কেউ কেউ বলে উঠলো “ধরো না পুলিশ ডাকি” একটা মধ্য বয়স্ক লোক ওদের কথার পাত্তা না দিয়ে ফারদিনের সামনে এগিয়ে গিয়ে ওর নাকের সামনে হাত দিয়ে দেখলো নিশ্বাস পড়ছে না। লোক’টা এবার ফারদিনের পার্লস চেক করে সবার উদ্দেশ্য চিন্তির ভঙ্গীতে বললো……

–ছেলে’টা বেঁচে নেই??

#চলবে

(আসসালামু আলাইকুম। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। অনেকের মনে অনেক প্রশ্ন আছে প্লিজ একটু ধৈর্য ধরুন। সবার সব প্রশ্নের উওর পেয়ে যাবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here