পাগল প্রেমিকা পর্ব-৯

0
755

#পাগল_প্রেমিকা
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
#পর্ব_০৯
______
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফোন হাতে নিয়েই দেখি রাইটার বাবুর মেসেজ আর সেটাও হচ্ছে..
“গুড মর্নিং… ”
সকালে খুশি হয়ে ভার্সিটি চলো আসলাম।
সারাদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেই আর সন্ধ্যার পর বোনদের সাথে আড্ডা দেই।
ওরা তো রীতিমতো নিলয়কে দুলাভাই বানাইয়া ফেলছে।
রাতে মোবাইল নিয়ে ঘাটাঘাটি করছি এবার আর ইচ্ছা করলেও আগে থেকে মেসেজ দেইনাই।
রাতে হঠাৎ নিজে থেকেই মেসেজ দেয়।
অন্য দিকে ওই বজ্জাত ছেলেটাও মেসেজ দেয়। এদিকে নিলয় দুইটা মেসেজ দিয়ে বলে ও ব্যস্ত পরে কল দিবে।
এই দিকে এই ছেলে আমাকে জ্বালিয়ে খাচ্ছে।
নিলয় ভালো না ওর সাথে রিলেশনে যেও না পস্তাতে হবে তোমাকে কষ্ট দিবে ঠকাবে। এই সেই উল্টা পাল্টা কথা বলছে কিন্তু আমার সহ্য হচ্ছে না উনার সাহস হয় কি করে আমার রাইটার বাবুকে নিয়ে উল্টা পাল্টা কথা বলতে। আমিও কতগুলা শুনাই দিলাম।
আমি নিলয়কে ভালোবাসি আমার নিলয় কখনো আমাকে কষ্ট দিবে না আপনাকে না ভাবলেও চলবে।
এদিকে বর্ষা রিমা তো আছেই ওরাও মেসেজ দেখে বলছে, আগেই বলেছিলাম এমন টাইপের ছেলেরা ভালো হয় না বেশি ভালোবাসা দেখাইস না এখন হলো তো প্রমান। ওদের কথা শুনে আমার আরও রাগ হচ্ছে
ওইদিকে নিলয়কে জিজ্ঞেস করি ওই দীপ্ত চৌধুরী আইডি কার। নিলয় উত্তর দেয় চিনি না। ও নাকি চিনে না এদিকে একই গ্রুপের এডমিন দু’জন।
ও-ই দীপ্ত হারামী টাকে জিজ্ঞেস করি নিলয়কে কিভাবে চিনেন দীপ্ত ও বলে আমি চিনি না। কেমনডা লাগে।😬
এদিকে ছেলেটা এখন বেশি বেশি করছে বলছে ও নাকি আমার সাথে প্রেম করবে আরও কত কিছু বলছে ওর মেসেজগুলা পরে মেজাজ বিগড়ে গেলো। আমিও বারবার বলছি আমি নিলয়কে ভালোবাসি দীপ্ত বলে। আরে নিলয়কে ছাড়ো তো আমার সাথে রিলেশন করো পরে তো দিলাম একটা মেসেজ।
“সমস্যা কি বুঝেন না নাকি আমি শুধু নিলয়কে ভালোবাসি আর আজাইরা কথা বলবেন না। ”
ওইদিকে আমার মেসেজটা দেখে দীপ্ত রিপ্লাই দিলো।
“Sw”
এখন এই sw এর মানে কি তাই জিজ্ঞেস করলাম এটার মানে কি?
দীপ্তর উত্তর শুনে আমি তো রাগে লাল পিলা হয়ে গেছি সাহস হয় কি করে বিয়াদব ফাজিল ছেলের আমাকে এই কথা বলার দিয়ে দিলাম কয়েকটা গালি + ব্লক।
রাত ২টায়…..
নিলয় এসএমএস দেয়। আর কথায় কথায় বলে আমি কাকে ব্লক দিছি।
“আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি। আপনি কিভাবে জানলেন আমি কাকে ব্লক দিছি আমি তো আপনাকে বলি নাই। ”
“বেশি কথা বলবা না আনব্লক করো বলছি! ”
“আপনি তো তাকে জানেন না আর তাকে আনব্লক করতে বলছেন ওই ছেলে আমাকে উল্টা পাল্টা কথা বলছে। ”
” কি বলছে? ”
তারপর বললাম কি বলছে তারপর সেও বললো তবুও আনব্লক করো।
“আমিও খুচাই” কেন আইডি টা কি আপনার?
” নাহ…” (কি সুন্দর নাহ বলে জন্মের মিথ্যাবাদী এক নাম্বার মিথ্যা বাদী)
“তাহলে এতবার বলছেন কেনো আগে বলেন কার আইডি তাহলে আনব্লক করবো”?
” জানি না কার আইডি আনব্লক করো।
“করবো না আগে বলেন আইডি কার?”
“আমি আপনাকে ভালোবাসি আমার যা তা বলার অধিকার আপনার আছে আপনি কিছু বললে আমি কোনো কিচ্ছু বলবো না কিন্তু অন্য কেউ বললে তাকে আমি খুন করবো সে দীপ্ত চৌধুরী হোক বা অন্য কেউ..!”
আমি মেসেজটা সেন্ট করার পর নিলয় মেসেজ সিন করে রিপ্লাই দেয়।
“তোরে অন্য কেউ কিছু কইলে আমিই তারে খুন করমু”
আহ এই মেসেজটা দেইখা একটু সিউর হইলাম ওইটা ওর আইডি।
পরে জিজ্ঞেস করলাম।
“তারমানে ওইটা আপনার আইডি…”
আইডি কার না বইলা উল্টা থ্রেড দেয়।
“যদি ওরে আনব্লক না করো তাহলে আমি আর তোমার সাথে কথা বলবো না”
ফাজিল ছেড়ার থ্রেডে ভয় পাইয়া ওই বেয়াদব টারে আনব্লক করে দেই। ৫০% মনে হয় ওর আইডি ৫০% মনে হয় ওর আইডি না।
(( আর আপনাদের তো আসল কথা বলতেই ভুলে গেছি ৬দিন আগে আমি নিলয়কে প্রপোজ করছি…!😇 বলছি!
“I.Love You writer babu…”
“সে কোনো রিপ্লাই দেয় নাই শুধু বলছে আমরা এক নই আমাদের মধ্যে অনেক তফাৎ এভাবে ভালোবাসা হয় না। ”
“তাহলে কিভাবে ভালোবাসা হয়? আর আমি আপনাকে ভালোবাসি.!”
আমি তারপরেও তাকে হাজার বার বলি ভালোবাসি। সেও দেখে ইগনোর করে।
তারপর ও বলে।
“তাহলে চলো দেখা করি”
আমার ইচ্ছা করতাছে ওরে ধইরা মাথার উপর উঠাইয়া আছাড় মারতে ভালোবাসতে নাকি দেখা করা লাগে দূর থেকে কি ভালোবাসা হয় না নাকি? (মনে মনে)
প্রতিদিন দিনে রাতে মিলিয়ে একশো টা মেসেজ দেই ভালোবাসি এতদিন হয়ে গেছে তবুও আমি নিলয়কে দেখিনি ছবি চেয়েছিলাম দেয়নি।
আমাদের এভাবে কলে কথা বলতে বলতে ২০/২৩ দিন কেটে গেলো আমি অন্ধের মতো ভালোবেসে ফেললাম নিলয়কে নিজের থেকেও বেশি নিলয় বলতে পাগল হয়ে গেছি। না দেখেই নিজের থেকেও বেশি নিলয়কে ভালোবেসে ফেলেছি শুধু ওর ভয়েস মধুর সুর শুনে।
“আমি প্রথম প্রেমে পরেছিলাম তোমার ভয়েস শুনে নিলয়…” আমি যখন যা জিজ্ঞেস করতাম নিলয় সব কিছুরই উত্তর দিতো। ওর হাবভাবে প্রকাশ পায় ও আমাকে ভালোবাসে শুধু মুখেই কিছু বলে না ও আড়াল করে। ))
আরও দশ মিনিট পর রাইটার বাবু মেসেজ দেয়।
“তুমি এখনও ওকে আনব্লক করো নাই কেনো?”
“করছি তো আনব্লক তারপরেও প্লিজ তুমি কখনো আমাকে ছেড়ে যেও না প্লিজ অনেক (রিকুয়েষ্ট করলাম) তোমাকে ছাড়া যে আর কিছু ভাবতেই পারি না প্লিজ ছেড়ে যেও না আমাকে। ”
তারপর নিলয় কল দেয় আর কিছুক্ষণ কথা বলার পর আমাকে চ্যালেঞ্জ করে আমি জেনো দীপ্তর সাথে কথা বলি কিন্তু আমি ওই লুচ্চা ছেলের সাথে কথা বলবো না সোজাসাপটা বলে দেই তারপরে অনেক কাহিনি বলবো না। । শেষে নিলয়ের চ্যালেঞ্জ এক্সেপ্ট করি।
“আমি বলছি ওকে কল দিতে…” (নিলয় এসএমএস দেয়)
রাত বাজে তিনটা নিলয়কে কতগুলা কথা শুনাইলাম ওই দীপ্তি চৌধুরী কিছুক্ষণ আগে আপনাকে নিয়া আমাকে কতগুলা কথা বলছে আপনি ভালো না আপনি আমাকে কষ্ট দিবেন ছেড়ে চলে যাবেন।
আর এখন আপনি বলছেন আমাকে ওর সাথে কথা বলতে লজ্জা করে না নিজের জিএফ কে আরেকটা ছেলের সাথে কথা বলতে বলার কথা বলতে।
আমার কথা শেষ হতেই নিলয় বলল।
“দীপ্তি চৌধুরী না দীপ্ত চৌধুরী…”
ওর এই মেসেজটা দেখে আমিও উপরের মেসেজ টা চেক করলাম রাগে খেয়ালই করিনি দীপ্তর জায়গায় দীপ্তি লিখে ফেলছি।
ধ্যাতততত। (নিজের উপরেই এখন রাগ হচ্ছে)
তার কিছুক্ষণ পরই দীপ্ত চৌধুরীর মেসেজ আসে।
“আপনি নাকি বলছেন কল দিতে..?
আমি মেসেজ টা সিন করে মেসেজ লিখছিলাম।
“আমি কল দিতে বলি নাই ওই নিলয়…. আর কিছু লেখার আগেই হারামী লুচ্চা ছেড়ায় কল দেয় আমি কল শুরুতে রিসিভ করতে চাইনি৷ এদিকে রিসিভ না করলে ওইদিকে নিলয় রাগ করবো আর আমি চ্যালেঞ্জ ও তো এক্সেপ্ট করছি এত কিছু ভাইবা কল রিসিভ করি।
ওই দিকে কল রিসিভ করতেই দু’জনেই চুপ করে আছি আমার তো বিরক্তি লাগছে। সম্পূর্ণ ৫সেকেন্ড পর দীপ্ত যখন হ্যালো বলল।
আমি তো পুরা টাস্কি খাইয়া টাংকি হইয়া গেছি।
তারপর দিলাম ইচ্ছা মতো গালাগালি।
” ফাজিল কুত্তা শয়তান বিলাই কুত্তাহহহহহ এতখন ফাজলামি করতাছিলি শয়তান ”
ভাবতাছেন তো দীপ্ত চৌধুরী কে বকতাছি কেন?
কারণ দীপ্তই নিলয় শয়তান ইইইই এত রাগ হচ্ছে না ইচ্ছে করছে ওকে উফফ সামনে পেলে বুঝাইতাম মজা।
তাছাড়া আমার আগেও সন্দেহ হয়েছিলো এটা নিলয়ের আইডি কারণ নিলয়ের একটা ছবি নীল পাঞ্জাবি পরা পেছনে ঘুরে দাঁড়ানো ছবিটা দেখে আমার সন্দেহ হয়েছিলো আর সিউর হওয়ার জন্য এত নাটক ব্লক করা আর কি?
তারপর আরও দুই ঘন্টা কথা বললাম। হারামী জন্মের রোমান্টিক। মানে রোমান্টিকের ডিব্বা যেমনটা আমি মনে মনে চাইতাম হিহিহি পুরাই পারফেক্ট।
বিয়ে থেকে ঘুরে আসো আগে তারপর নিলয় বলল তোমাকে আমাদের গ্রুপে নিবো?তারজন্য তোমাকে দুইটা কাজ করতে হবে। বিয়েতে গিয়ে তো আবার নাচানাচি করবি। (নিলয়)
বিয়েতে গিয়ে নাচানাচি করা যাবে না নাচানাচি করলে পরে গিয়ে হাত পা ভেঙে যাবে। (বৃষ্টি)
পা ভাঙলে সমস্যা নাই হাত ভাঙলে সমস্যা আছে। একটা ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে বলল নিলয়। নিলয়ের কথার মানে না বুঝে বৃষ্টি জিজ্ঞেস করল।
মানে পা ভাঙলে সমস্যা নাই হাত ভাঙলে সমস্যা আছে কি সমস্যা হবে হাত ভাঙলে?
তুই বুঝবি না। বলেই হাসতে শুরু করল শয়তান একটা। তারপর আমিও জিজ্ঞেস করলাম।
“কি কাজ..?”
“ফাস্ট তোমার আইডির নিক নাম ডিলিট করতে হবে।”
হয় হয় আইডির নিক-নাম দিছিলাম অভ্র নীল এর পাগল প্রেমিকা। 🙄 অনেক বেশি ভালোবাসি আর আমার ফেসবুকের সব পোস্টে অভ্র / নীল / রাইটার বাবু নিয়া পোস্ট ভর্তি হিহিহি আমার ফ্রেন্ড লিস্টের সবাই আমার রাইটার বাবুর প্রতি ভালোবাসা দেখে অনেক কথা বলে আমি তাদের ইগনোর করি।
তারপর কথা মতো আমি নিক নাম ডিলিট করতে চাইনি কিন্তু পরে ওর কথা শুনে নিকনাম ডিলিট করে দেই। আর দুই নাম্বার কাজ জিজ্ঞেস করলে বলে।
“তোমাকে আমায় ভুলে যেতে হবে…”
তোমাকে আমার ভালো লেগেছে তাই সারাজীবন বন্ধু হিসাবে পাশে রাখতে চাই। আমাদের গ্রুপের এডমিন সবাইকে আমি অনেক সম্মান করি। তাদের সাথে তোমাকে পরিচয় করিয়ে দেবো তুমি আগে তোমার বোনের বিয়ে খেয়ে আসো৷ তারপর আগে মেসেঞ্জার গ্রুপে এড দিবো সব কাজ বুঝিয়ে পাবলিক গ্রুপে নিবো আর ওদের সাথে মিশতে হবে আমি চাইনা তুমি মুড অফ করে রাখো আর রাখলে সেটা দেখতে আমার ভালো লাগবে না আমি চাই তুমি ওদের সাথে মিশো আর আমাকে ভুলে যাও। ”
রাইটার বাবুর কথা আমার কলিজায় গিয়ে লাগলো চোখ দিয়ে পানি জড়তে লাগল। আমি ওকে ভালোবাসি আর ও আমাকে বলছে আমি জেনো ওকে ভুলে যাই বন্ধু হয়ে পাশে থাকি। ও গ্রুপের এডমিন বানিয়ে আমাকে ওকে ভুলে যেতে বলছে কিভাবে পারলো এটা বলতে আমার জন্য কি ওর মনে কোনো ফিলিংস নেই। আমার যে কান্নায় বুক ভেসে যাচ্ছে।
“তুমি কাঁদছো কেনো…? ”
“আমি কোনো গ্রুপের এডমিন হতে চাই না আমি কিছুই চাই না আমি শুধু আপনাকে চাই আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি আপনি কেনো বুঝেন না” কাঁদতে কাঁদতে বললাম।
আর একটা কথা আগামীকাল আমার মামাতো বোনের গায়ে হলুদ আমাদের কাল যেতে হবে মামা বাড়ি। আর এখন ভোর ৫টা আর আমি কেঁদে বুক ভাসাচ্ছি।
তারপর নিলয় অনেক কিছু বোঝানোর চেষ্টা করলো আমাকে আর আমিও অভিমানে সুরে বললাম হুহহ আপনি কি চান আমি আপনার ফ্রেন্ড হয়ে থাকি? আপনার কাছে আমার কোনো মূল্যই নেই।
“তুমি কি চাও আর কি বলছো তোমার মূল্য আমার কাছে নেই মূল্য আছে বলেই গ্রুপে আমার পাশাপাশি রাখতে চাচ্ছি আর তুমি সেটা চাচ্ছো না বুঝে গেছি আমি তোমার কাছে সম্পর্ক টা ইমপোর্টেন্ট কাজটা নয়। সম্পর্ক আজ আছে কাল নাও থাকতে পারে কিন্তু গ্রুপের সুত্রে বন্ধু হয়ে আমরা সারাজীবন পাশে থাকতে পারবো।
তারপরে আমিও বললাম।
“সত্যি রাইটার বাবু আমার কাছে সম্পর্ক টা ইমপোর্টেন্ট আর তার থেকেও বেশি ইমপোর্টেন্ট আপনি আমি কোনো কিছুর মূল্যে আপনাকে ছাড়তে পারবো না ভুলতে পারবো না প্লিজ.”
তারপরেও রাইটার বাবুকে বুঝাতে পারলাম না যে আমি তাকে নিজের থেকেও বেশি চাই আর উনার থেকেও বেশি ভালোবাসি।
চোখের পানি মুছে নিলাম আর বললাম।
“আপনি চান তো আমি আপনার ফ্রেন্ড হয়ে থাকি ঠিক আছে তাই হবে আমি আপনার ফ্রেন্ড হয়েই থাকবো কল বিয়েতে যাবো চারদিন লাইনে আসবো না এই চারদিনে আপনার থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেবো এই যে এতদিন রাইটার বাবু ভালোবাসি মিস করি এইটা সেইটা বলতাম বিরক্ত করতাম আর করবো না।
পুরো চেঞ্জ হয়ে যাবো নিজেকে এমন ভাবে পাল্টে নেবো যে আগের আমিটা কে তুমি খুঁজতে বাধ্য হবে। বলেই ফেসবুক থেকে বের হয়ে ওয়াইফাই অফ করলাম বালিশের মধ্যে মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগলাম।
পেছন থেকে বর্ষা রিমা আমার কাছে এসে আমাকে ধরে উঠালো আর বলতে লাগল।
বৃষ্টি কি হয়েছে কাঁদছিস কেন? (রিমা)
কি হইছে তোর নিলয় ভাইয়া কিছু বলছে নাকি রে কিরে কথা কো কি হইছে কাঁদছিস কেন? (বর্ষা)
তারপর বর্ষা রিমাকে জরিয়ে ধরে ওদের উপর হেলে পরলাম চোখের পানি জেনো কোনো বাঁধাই মানছে না চোখের কার্নিশ বেয়ে অঝড়ে নোনা পানি গাল বেয়ে পরছে আমার যে সন নির্শ মনে হচ্ছে অনেক কষ্ট হচ্ছিল আপনাদের বলে বোঝানো যাবে না। বর্ষা বৃষ্টির দুই কাঁধ ধরে ওকে বর্ষা ওর দিকে ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করল।
কি হয়ে বল এভাবে কাদছিস কেন?
রিমা বৃষ্টির চোখের পানি ওর হাত দিয়ে মুছে দিলো বৃষ্টি ওর চোখের পানি মুছে দিলো। বৃষ্টি কান্নায় ভেঙে পরে নিজেকে সামলে নিতে একটু সময় লাগে। (আমি আর রিমা দেখেছি বৃষ্টিকে তখন সতসত্যি বলতে সেদিনই বুঝেছিলাম বৃষ্টি নিলয়কে ঠিক কত বেশি ভালোবাসে)
কাদতে কাদতে বৃষ্টির হিচকানি উঠে যায়। নাকের জলে চোখের জলে একখান রিমা টিস্যু দিলো বর্ষা পানির গ্লাস। টিস্যু দিয়ে নাক পরিস্কার করে পানি এক চুমুক খেয়ে নিজেকে সামলে বৃষ্টি বলল..!
তো…রা তোরা তো জানিস আমি নিলয়কে কত ভালোবাসি আর নিলয় বলে কি না ও চায় আমি জেনো ওকে ভুলে যাই ও চায় আমি জেনো ওর বন্ধু হয়ে সারাজীবন পাশে থাকি তোরাই বল এটা কি করে সম্ভব আমি নিলয়কে ভালোবাসি আমি থাকতে পারবো না ওকে ছাড়া আমার ভাবতেই কষ্ট হয় আমি ছাড়তে পারবো না ওকে ও কেনো বুঝে না নিলয়…. কথাগুলো বলে বৃষ্টি আবারও কান্না শুরু করে। নিজেদের চোখের সামনে নিজের বোনকে এভাবে কাঁদতে দেখতে কোনো বোনরাই সহ্য করতে পারে না বর্ষা রিমাও পারেনি বৃষ্টি কে শক্ত করে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করে। বৃষ্টি কে অনেক কিছু বুঝিয়ে শুনিয়ে ঘুম পাড়ায় বর্ষা রিমা।
পরেরদিন সকালে আপুর বিয়েতে যাওয়ার কোনো ইচ্ছেই ছিলো না বৃষ্টির কিন্তু না যেতে চাইলেই তো হয় না চাচ্চু আর চাচি আম্মু জোর করেই সাথে নিয়ে গেলো ভেবেছিল বর্ষা রিমার জন্য যেতে চাচ্ছে না তাই ওদের কেও সাথে নিয়ে যায়।
কিন্তু এদিকে যে শুধু কান্না করছে বৃষ্টি রাইটার বাবুর কথা মনে পরলেই কিন্তু আমরা কি করবো বৃষ্টির রাইটার বাবু তো বৃষ্টিকে চায় না সে তো চায় বৃষ্টি তার বন্ধু হয়ে থাকুক। ৪ঘন্টা জার্নির পর পৌঁছে গেলো বৃষ্টি ওর মামা বাড়ি। বিকালে ওইদিকে সবাই হলুদের জন্য রেডি হচ্ছে সবাই হাসিখুশি কত মজা করছে এইদিকে বাড়ির সাদের এক কোনায় একা একা বসে কাঁদছে বৃষ্টি পেছনে দাঁড়িয়ে আছে বর্ষা রিমা। এভাবে কাঁদতে কেউ দেখে ফেললে অনেক বড় ঝামেলা হবে এমনিতেই বিয়ে বাড়ি তার উপর বাড়ি ভর্তি লোক আত্মীয় স্বজন যদি কেউ দেখপ কেলেঙ্কারি বর্ষা রিমা বৃষ্টি কে আবার অনেক সান্ত্বনা দেয় অনেক রিকুয়েষ্ট করে অনেক কিছু বোঝানোর পর বৃষ্টি রাজি হয় ও হলুদে ছেলের বাড়ি যাবে। রেডি হয়না বৃষ্টি সাধারণ হলুদ জামা পরে যায়। দুইদিন আগ পর্যন্ত বিয়ে নিয়ে বাড়িতে কত লাফালাফি করছিলো বলছিলো কত আনন্দ করবে কিন্তু দুইদিন পর ওর সব আনন্দ ধুলোয় মিশে গেলো সব নিলয় চৌধুরীর জন্য,, ছেলের বাড়ি হলুদ দিতে এসেও বৃষ্টি সব কিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখে সবার আড়ালে থাকে। হলুদ দিয়ে আমাদের ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায় গাড়ির জানালার পাশে বসে জানালার বাহিরে তাকিয়ে নিরবে অশ্রু ঝরাচ্ছিল বৃষ্টি আর কেউ না দেখলেও বর্ষা রিমার বুঝতে অসুবিধা হয়নি পুরো রাস্তা বর্ষা বৃষ্টি কে জরিয়ে ধরে রেখেছিল রিমা বৃষ্টির হাত ধরে রেখেছিল। আমরা বাড়ি ফিরার কিছুক্ষণ পর ছেলের বাড়ি থেকে লোক আসে আর আপুকে হলুদ লাগিয়ে চলে যায়। বৃষ্টি এসে যে রুমে ঢুকেছিল আর বের হয়নি রাতে খায়ওনি। রাত বাজে সাড়ে বারটা বৃষ্টি নিলয়ের ছবি গ্যালারি থেকে বের করে ছবির সাথে কথা বলছে সাথে কাঁদছে এই চারদিন যত কষ্টই হোক ফেসবুকে ঢুকবে না নিলয়কে কথা দিয়েছে বৃষ্টি তাই নিলয়ের ছবির উপর সব অভিমান বের করছে। কাঁদতে কাঁদতে ফোনটা বৃষ্টি ওর বুকের মধ্যে বুকের সাথে জরিয়ে নিয়ে শব্দ করে কেঁদে দিল আর বলল.
নিলয় তোমার কি একটু কষ্ট হচ্ছে না আমাকে ছাড়া থাকতে আমার যে অনেক কষ্ট হচ্ছে অনেক মনে পরছে তোমাকে প্রিয় অনেক কষ্ট হচ্ছে তোমাকে ছাড়া থাকতে নিলয় তুমি কিভাবে পারছো আমাকে ছাড়া থাকতে মিস করছো কি তুমি আমাকে আমার অনুপস্থিত কি তোমাকে একটুও ভাবাচ্ছে না আমার কথা আমাকে কি তুমি ভুলে গেছো নিলয় তুমি কি সত্যিই বাসো না আমাকে আমি যে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি তোমাকে নিলয়। কেনো এত কষ্ট দিচ্ছো আমাকে?
ওইদিন সারারাত বৃষ্টি ঘুমায়নি বৃষ্টির সাথে বর্ষা রিমাও ঘুমায়নি। পরেরদিন ও একই কাহিনি বিয়ের জন্য কোনো আগ্রহ নেই বৃষ্টির,, এদিকে বাড়ির আত্মীয় স্বজনরা সবাই বলছে ও এত মন মরা কেনো আসছে পর থেকে হাসছে না কারো সাসাথে কথা বলছে না। কি হয়েছে কি ওর। সবার প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেনি আমরা চাচি আর চাচু ও পারেনি। একা বসে কেঁদেই চলেছে আমরা কেউ সামলাতে পারছি না।
সম্পূর্ণ বিয়ে বৃষ্টির চোখের জলেই গেলো চারদিন অনেক কষ্টে কেটেছে ফোনে নিলয়ের ছবি ছিলো ছবি বুকের সাথে মিশিয়ে মুখে ওড়না গুঁজে কেঁদেছে আমরা অনেক সামলানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি।
বৃষ্টির মন ভালো না ওইদিকে বরের সাথে আসা কয়েকটা বাদর ছেলে বৃষ্টির পেছনে পরে আছে কে দেয় ওদেরকে পাত্তা বৃষ্টি তো শুধু ওর রাইটার বাবুর নিলয় এর আর কারো না। বিয়ে শেষ হয় বউভাত শেষ হয় সব শেষে ৪দিন পর আমরা আমাদের বাড়ি ফিরে আসি হাজার কষ্ট হলেও চারদিন লাইনে আসে না বৃষ্টি তবে বাড়িতে এসে নিজেকে আর সামলাতে পারলো না রাত ১২টা বাজে বৃষ্টি সব কিছু উপেক্ষা করে ফোন হাতে নিয়ে ফেসবুকে লগ-ইন করে ঢুকে।
আইডিতে জেনো মেসেজের বন্যা বয়ে গেছে অনেকের মেসেজের সাথে নিলয় এর দুইটা আইডি থেকে দুইটা মেসেজ দিয়ে রাখছে।
অভ্র নীল:- মিস ইউ
দীপ্ত চৌধুরী:- ওই ছেড়ি।
মেসেঞ্জার এসেই ওর দুইটা মেসেজ দেখে চোখ দিয়ে পানি চলে আসে সাথে রাগও হয় প্রচুর। চারদিনে মাত্র দুইটা মেসেজ হতভাগা।
অভ্র নীল আইডিতে রিপ্লাই দিলাম: আমাকে আপনি মিস করেন কেনো?
দীপ্ত চৌধুরী আইডিতে রিপ্লাই দিলাম: জি বলেন।
আমার মেসেজ দেওয়ার পর অভ্র নীল আইডি থেকা রিপ্লাই আসলো।
” চার দিন পর লাইনে আসছো আমি এই চারদিনে তোমাকে কত মিস করছি তুমি কি জানো আর কোই আমি ভাবছিলাম চারদিন পর তুমি লাইনে এসে আমাকে খুঁজবা কিন্তু তুমি তো লাইনে এসে অন্য রকম কথা বলছো আমার মিস করাটাই বিথা গেলো। ‘” (নিলয়)
“আমি আগেই বলেছিলাম আমি বিয়ে থেকে আসলে আমাকো আর আগের মতোন পাবেন না এখন তো আমি আপনার ফ্রেন্ড আর আমি নিজেকে এই চারদিনে সেই ভাবেই Prepare করছি। ” (বৃষ্টি)
“ভালো করছো। ” (নিলয়)
তারপর রাইটার বাবুর বাচ্চা কি করলো এইটা..!
তুই চারদিন লাইনে ছিলি না জানিস আমি তোকে কত মিস করছি একটা ছেলে তোকে মিস করে মানে সে তোকে ভালোবাসে তার তোর প্রতি টান আছে।
মেসেজ দিলো মেসেজটা দেখে জানিনা কেমন একটা অনূভুতি জাগলো মেসেজটা দিয়েছিল এক মিনিট ও হয়নি নিলয় মেসেজটা ডিলিট করে দেয়।
আল্লাহ এই ছেলেটা কে যে আমি কি করবো।
তারপর আমাদের রাতে কথা হয় আবারও….
আরও দুইদিন পর মেসেজ দিলো গ্রুপে এড দিবো?
আমিও একটু এটিটিউট নিলাম আমি মেসেজ দিলে দেখে ছয় ঘন্টা পর আমিও দশ মিনিট পর মেসেজ সিন করলাম তারপর বললাম দেন। গ্রুপে আমাকে দীপ্ত আইডি দিয়ে এড দেয় আর সবাই কে বলতে বলে ওর সাথে পরিচয় দীপ্ত আইডি দিয়ে হয়েছে অভ্র নীল আইডিতে এত দিন কথা হয়েছে সেগুলো গোপন রাখতে বলে কারণ জিজ্ঞেস করলে বলে না। আমি আর জিজ্ঞেস করি না। গ্রুপে এড দিয়ে সব মেয়ে ছেলে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
আল্লাহ গ্রুপে গিয়ে আমি অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছি এখানে ছেলেদের থেকে মেয়েরা বেশি ফাস্ট আর সবগুলা এক নাম্বার লুচ্চি টোটাল বাংলা ভাষায় কথা বলতাছে ছেলে মেয়ে দু’জনই সাথে নিলয় ও আমার তো ইচ্ছা করতাছে নিলয় টাকে…
গ্রুপে গিয়ে বুঝলাম সবাই খুব ফ্রি! নিলয় বললো গ্রুপে ওর আরও একটা আইডি আছে সেটা আমাকে খুঁজতে বলল কোনটা ওর আইডি বের করতে পারলে আমি টেলেন্টেড আমিও আমার টেলেন্ট দেখানোর জন্য আইডি খুঁজতে লাগলাম। একটা আইডি খুঁজে ও পেলাম ওই আইডি টা তে রিকুয়েষ্ট পাটালাম সাথে সাথে এক্সেপ্ট করল। আমিও নিলয়কে মেসেজ পাঠালাম।
Baby tomar I’d peye gechi!
তারপর মেসেজ সিন করে নিলয় বলল। কোন আইডি আনতাজি কোন আইডিতে রিকুয়েষ্ট পাঠাইছো? আল্লাহ কি বলে নিলয়ের এই মেসেজে একটু ভয় পাই সত্যি অন্য কাউকে রিকুয়েষ্ট পাঠাই নাইতো আর সেও তো রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট করছে সাথে সালাম দিয়ে এসএমএস করছে। আমি আর মেসেজ সিন করি নাই। তারপর নিলয়কে আইডির লিংক দিয়ে বললাম এইটা তোমার আইডি না। নিলয় কুত্তা সাথে সাথে বলে। না এইটা আমার আইডি না অন্য কারো আইডি!
কার আইডি?
আমি চিনি না!
নিলয় এই চিনি না কথাটা বলে গেলে ফাইসা কারণ নিলয় ফাস্ট দীপ্ত আইডি কে জিজ্ঞেস করার পরও একই কথা বলে চিনি না ওর এই কথায় আমার মনে হয় এইটা ওরই আইডি। তারপর ওই আইডি থেকে আবারও মেসেজ আসলো।
কেউ সালাম দিলে তার রিপ্লাই দিতে হয়।
আমি কি বলবো নিলয় তো বলছে ওর আইডি না তাই মাথা নিচু করে বললাম সরি ভুল করে রিকুয়েস্ট দিছি। তারপর গ্রুপে কল আসলো আমাকে বার বার ওই আইডি থেকে বলা হচ্ছে কলে আসো আমিও কলে যেতে চাচ্ছিলাম না কারণ দীপ্ত গ্রুপে ছিল না কিন্তু এদিকে বারবার এই ছেলে লাইনে আসতে বলছে বিরক্ত হয়ে গ্রুপ থেকে বের হতে যাবো ঠিক তখনই মাথায় আসলো। ওই দীপ্ত একবার একটা গ্রুপে এড দিয়েছিল আর বারবার কলে যেতে বলছিল বৃষ্টি অন্য কেউ ভেবে কলে না গিয়ে গ্রুপ থেকে লিভ নিয়েছিল এবারও এই আইডি থেকে বারবার কলে যেতে বলছে এইটা নিশ্চয়ই নিলয় আর সিউর হওয়ার জন্য কলে তো এখন যেতেই হবে বলেই গ্রুপ কলে জয়েন্ট হলো বৃষ্টি বহা যা ভেবেছিল তাই ওই আইডি থেকে নিলয়ই কথা বলছে।
বৃষ্টি কল জয়েন্ট হতেই সবাই ওর পরিচয় জানতে চাইলো ঠিক তখনই নিলয় বলল।
শুভ পরিচয় হো আমার বৃষ্টি!
নিলয়ের কথা ধরে শুভ বলে..! তোর বৃষ্টি মানে তোর বৃষ্টি কেমনে?
শুভর প্রশ্ন শুনে কথা ঘুরিয়ে নিলয় বলে।
আমার বৃষ্টি কই বললাম আমাগো বৃষ্টি বলছি।
নিলয়ের মুখে ফাস্ট আমার বৃষ্টি শুনে অনেক শান্তি ও ভালো লাগলো। কিন্তু সাথে সাথে কথা ঘুরিয়ে ফেলল বলে কিছুটা মন খারাপ হলো। তারপর কোনো রকম সবার সাথে কথা বললাম। গ্রুপে এড দেওয়ার পর থেকে নিলয় আমার সাথে তেমন কথা বলে না গ্রিপেই সময় দেয় বেশি আগে সারারাত কথা বলতো এখন বলে না আর আমি রোজ অপেক্ষা করি ওর সাথে কথা বলার। গ্রুপে সবাই ওকে দীপ্ত বলে কেউ নিলয় বলে না। একদিন কলে আমি শুভ ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম….
শুভ ভাইয়ার কথা শুনে চোখ থেকে বেয়ে অটোমেটিক পানি গড়িয়ে পরল এত বড় ধোঁকা.

চলবে….?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here