#পাগল_প্রেমিকা
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা (লেখনীতে)
#পর্ব_৩২
দরজার সামনে তাকিয়ে এক গাল হাসি দিয়ে বেড থেকে নেমে ছুটে গেলো। ‘ বাবি আম্মু’ বলে জরিয়ে ধরতে নিলে। বেগল রাহেলা বৃষ্টি কে থামিয়ে দিলে বলল, ‘ দাঁড়া দাঁড়া একটুও ধরবি না আগে হাতের ট্রে টা টেবিলের উপর রাখতে দে। ‘
ট্রে তে করে বৃষ্টির জন্য ব্রেকফাস্ট নিয়ে এসেছে। ট্রে টেবিলের উপর রেখে বলল, ‘ আয় এবার জরিয়ে ধর। ‘
______
বৃষ্টি খেতে না চাইলেও এক প্রকার জোর করেই খাইয়ে দিয়ে রাহেলা বেগম চলে গেলেন! একা একা বেলকনিতে এসে ইজি চেয়ারে বসে আছে৷ পাশ থেকে এক চেয়ার নিয়ে বৃষ্টির সামনে বসল আর প্রশ্ন ছুঁড়ল, ‘ কি হয়েছে সবটা আমাকে বল শুরু থেকে তোর আর তোর হাসবেন্ড এর ব্যাপারে ‘!
বৃষ্টি এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে নীল এর দিকে তাকালো কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলা শুরু করল কিভাবে প্রথম রিমনের সাথে কথা হয়। তারপর থেকে একে একে সব বলতে লাগল #পাগল_প্রেমিকা হয়ে যা যা পাগলামি করেছে সব কিছুই বলল। তনিমার সাথে বিয়ে হতে গিয়ে ওর সাথে হয়ে গেছে আর আজ সকাল পর্যন্ত যা হয়েছে সব কিছুই বলল। বৃষ্টির কথাগুলো মন দিয়ে শুনেছে নীল বৃষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, ‘ এই বিষয়ে আমরা রাতে আলোচনা করবো, আমার ইমার্জেন্সি কল এসেছে হাসপাতাল যেতে হবে। ঠিক মতো থাকিস টাইমলি খেয়ে নিস আর আম্মু তো আছেই। ‘
প্রতিত্তোরে নীল এর দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করল। নীল বের হয়ে চলে গেলো। বৃষ্টি একা একাই বসে রইল, বেলকনির সামনে দিয়ে কতগুলো পাখি উড়ে যাচ্ছে সেটাই লক্ষ্য করছে ও গুনছে এটা আজব বিষয় না, কাজ না থাকলে মানুষ যা করে আর কি?
___
বিকাল প্রায় পাঁচ টা বাজতে চলল। পূর্ণা চেম্বারের বাহিরে দাঁড়িয়ে দরজায় নক করল। পারমিশন পেয়ে ভেতরে ঢুকে বলল, ‘ স্যার একজন আপনার সাথে দেখা করতে আসছে। ‘
নীল ‘ পাঠিয়ে দাও ‘…
কেবিনের মধ্যে প্রবেশ করে ডাক্তার নীল এর উদ্দেশ্যে বলল, ‘ কেমন আছেন? ‘
ডাক্তার নীল মুখ তুলে সামনে তাকালেন বিস্মিত স্বরে বলে উঠল, ‘ আপনি এখানে? ‘
‘ ডাক্তার এর কাছে পেসেন্ট-ই তো আসবে তাই না? ‘
ভ্রু উঁচু করে মেয়েটাকে লক্ষ্য করে বলল, ‘ আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে না আপনি পেসেন্ট! ‘
‘ হুম ঠিক ধরেছেন আমি পেসেন্ট নই, ডাক্তার এর চোখ তো তাই বুঝে ফেলছেন। সে যাইহোক আমি এখানে আপনার জন্য একটা অফার নিয়ে আসছি! ‘
ডাক্তার নীল ভ্রু কুঞ্চিত করে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। মেয়েটার চেয়ারের উপর হাত রেখে বলল.. ‘ মে আই? ‘
‘ ইয়াহ সিইওর! ‘ নীল বলল।
মেয়েটা চেয়ারে বসে তার প্রস্তাব রাখল ডাক্তার নীল এর ডেস্কের উপর। ভ্রুকুটি কুঞ্চন করে বেশ কিছুক্ষণ মেয়েটার মুখপানে তাকিয়ে রইল। কথার রেশ কাটিয়ে মেয়েটা কে বিদায় দিলো। মেয়ে টার হাবভাব সুবিধার লাগেনি নীল এর কাছে তাই হাসপাতাল থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
বৃষ্টি আর নীল একটা বন্ধ রুমে বসে ঘন্টা খানিক ধরে আলোচনা করছে। মাঝখানে বৃষ্টি কাউকে কল দিয়ে ‘ এমএমএস ‘ গুলো ফরওয়ার্ড করার জন্য বলে। তারপর আবারও ল্যাপটপে কাজ শুরু করে দেয়।
পরদিন…
ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে রাস্তায় রিমনের সাথে দেখা হয়ে যায়। রিমনকে দেখেও না দেখার মতো করে চলে যেতে নিলে রিমন ‘বৃষ্টি’ বলে পিছু ডাকে, পেছনে ফিরে কাঠকন্ঠে প্রশ্ন ছুঁড়ে, ‘ কি হয়েছে? ‘
‘ কিছু কথা ছিলো? ‘ রিমন বলল।
‘ আমার কোনো কথা নেউ আপনার সঙ্গে..!’
রিমন কিছু বলার আগেই সেখানে নীল তার গাড়ি নিয়ে চলে আসে। বৃষ্টি রিমনকে এভয়ড করে সোজা গাড়িতে উঠে চলে যায়।
____
দুইদিন পর বিকালে,
বিছানার চাদর ঠিক করছিল দরজার সামনে থেকে বলে উঠল, ‘ লেটেস্ট নিউজ জানিস না নাকি এখনও শুনিসনি? ‘
বৃষ্টি চাদর ঠিক করতে করতেই দরজার দিকে তাকিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ল, ‘ মানে কিসের নিউজ? আমি যে খবর দেখি না সেটা তো তুই জানিস ‘
প্যান্টের পকেটে হাত গুজে রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
‘ তোর রাইটার বাবু তো এক ঘন্টা পর এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে রওয়া দিবে। তোর রাইটার বাবু মুখ লুকাতে মালদ্বীপ পালিয়ে যাচ্ছে। ‘ ডাক্তার নীল বলল।
বৃষ্টি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ফেলফেল করে তাকিয়ে আছে। নীল দুইবার চোখের পলক ফেলল। মানে এটা সত্য রিমন সত্যি সত্যিই চলে যাচ্ছে। বৃষ্টি হতভম্ব হয়ে বলল, ‘ আমি কিছুতেই ওই কু*ত্তা টাকে যেতে দেবো না। যেভাবেই হোক আটকাবোই! ‘
কথাটা বলে নীল এর পাশ কেটে দৌঁড় দিলো। দাড়িয়ে থেকেই বৃষ্টির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। তবে হাসি টা কিসের তা সঠিক জানা নেই!
বাড়ি থেকে বের হয়ে ট্যাক্সি নিয়ে ছুটে চলল।
___
এদিকে মা বোন ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছে,
কেউ-ই তার সাথে কথা বলছে না সবাই মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। লাগেজ নিয়ে বাড়ি থেকে বের হল, গাড়িতে উঠে বসে ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে বলল, ‘ এয়ারপোর্টের দিকে চলো ‘
ড্রাইভার প্রতিত্তোরে কিছু বললো না চুপচাপ গাড়ি স্টার্ট দিলো। মাথা নিচু করে ফোন স্ক্রল করছে, স্কিনে তাকিয়ে আছে বেশ কিছুক্ষণ। মাথা তুলে আঁড়চোখে উইন্ড এর দিকে তাকালো এক নজর তাকিয়ে আবারও চোখ নামিয়ে নিলো। পরে আবারও তাকালো উইন্ড দিয়ে বাহিরে তারপর ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন ছুড়ল!
‘ এয়ারপোর্টের রাস্তা ওইদিকে আপনি এদিকে কেনো নিচ্ছেন? ‘
ড্রাইভার বেচারা নিশ্চুপ গাড়ি চালাচ্ছে তো চালাচ্ছেই। আরও একবার বলল কিন্তু ড্রাইভারের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে সিট থেকে উঁচু হয়ে সামনের সিটে দেখল আচমকা মুখ ফসকে বলে উঠল, ‘ তুই? না মানে তুমি এখানে ড্রাইভার কোই? ‘
‘ টয়লেটে গিয়ে ছিল আমি বাহির থেকে লক করে দিয়েছি ‘
‘ আরে আজব কিন্তু কেনো? ‘ রিমন বলল।
‘ আরে আমি তাকে লক না করতে সে তোমাকে নিয়ে চলে যেতো না। ‘
‘ বৃষ্টি গাড়ি ব্রেক করো! ‘ রিমন গুরুগম্ভীর কন্ঠে বলল।
‘ কিছুতেই না। তুমি সামনে আসো। ‘ বৃষ্টি বলল।
‘ ব্রেক না করলে আমি সামনে কি করে যাবো? ‘
‘ এই সামনে ফাঁকা দিক দিয়েই আসো!’
‘ পাগল হয়ে গেছো তুমি? এই জায়গা দিয়ে আমি কিভাবে যাবো আমি এত লম্বা একটা ছেলে! ‘
‘ না আসলে পেছনেই থাকো গাড়ি থামছে না। ‘
বাধ্য হয়ে এখান দিয়েই যেতে হলো কাচুমাচু হয়ে সামনে গিয়ে ফ্রন্ট সিটে বসল। বৃষ্টির দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল, ‘ এই সবের মানে কি? ‘
বৃষ্টি না তাকিয়েই পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে, ‘ কোন সবের মানে কি? ‘
‘ এই যে আমাকে এয়ারপোর্ট যেতে দিলে না আমার ফ্লাইট মিস হবে তো, কেনো করলে এমনটা? ‘
বৃষ্টি বলল, ‘ তুমি যেতে পারবে না! ‘
রিমন, ‘ কেনো’ ?
‘ কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি তাই আমি তোমাকে আমার থেকে দূরে যেতে দেবো না কিছুতেই না। ‘
‘ ভালোবাসো? কিন্তু তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো তুমি ছেড়ে চলে গেছো আরও চারদিন আগেই। ‘ রিমন বলল।
‘ না তো আমি যাইনি তোমাকে ছেড়ে, আমি কি তোমাকে ছেড়ে যেতে পারি বলো? আমি গিয়েছিলাম রহস্য খুঁজতে আর সেই রহস্য সবার সামনে নিয়ে আসতে.!’
ভ্রু কুঞ্চিত করে প্রশ্ন করল, ‘ কিসের রহস্য? ‘
‘ ও তুমি বুঝবে না তোমার বয়স হয়নি বোঝার। ‘
কথাটা বলেই জিবে কামড় বসালো বেশি বকবক করলে এমনই হয়। হালকা হাসার চেষ্টা করে রিমনের দিকে তাকালো সে বলল, ‘ আমার বয়স হয়নি আর তোমার হয়েছে পাকা বুড়ি হয়ে গেছো তুমি, এখানে বড় আমি আর বলছো আমারই বয়স হয়নি। ‘
বৃষ্টি বলল, ‘ আমি ওইভাবে বলতে চাইনি কথা টা, মুখ স্লিপ করে বেরিয়ে গেছে। ‘
‘ আমি কোনো কিছুই শুনতে চাই না। তুমি গাড়ি ব্রেক করো। ‘
‘ কিছুতেই না বললাম তো, গাড়ির স্টিয়ারিং আমার হাতে তাই বেশি বেশি করলে সোজা খাইতে নিয়ে ফেলো দেবো৷ ‘
‘ তারপর? ‘
‘ তারপর আর কি দু’জনেই উপরে চলে যাবো৷ ‘
‘ তারপরও তুমি গাড়ি থামাবে না। ‘
‘ থামাতে পারি তবে একটা শর্তে ‘
‘ কি শর্ত? ‘
বৃষ্টি, ‘ বলো ভালোবাসি ‘
রিমন, ‘ মানেহহ’
বৃষ্টি বলল, ‘ তুমি যদি এখন আমাকে ভালোবাসি বল তাহলেই আমি গাড়ি থামাবো। ‘
‘ কিছুতেই না। ‘
‘ তাহলে ঠিক আছে আমারও তাড়া নেই বাবু! ‘
বলেই গাড়ির স্টিয়ারিং ঘুড়াচ্ছে আর মুখে গান গাইছে, ‘ এ পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হবে তুমি বলো তো ‘
পাশ থেকে ফট করে রিমন বলল, ‘ অনেক বাজে হবে, আমার ফ্লাইট মিস হবে, না জানি গাড়ি কোথায় গিয়ে স্টপ হবে, সেখান থেকে ফিরে আসতে হবে। আরও অনেক দূর্দশা হবে। কোনো প্রয়োজন নেই এত প্যাড়া নেওয়ার গাড়ি ঘোরাও বাড়ি চল। ‘
‘ আমি ততক্ষণ গাড়ি থামাবো না যতক্ষণ না তুমি আমাকে ওই তিন ওয়ার্ডস গুলো না বলবে। ‘ বৃষ্টি বলল।
রিমন, ‘ কখনো বলবো না ‘
‘ তাহলে চলুক গাড়ি। ‘
_____
গাড়ি চলতে চলতে পাহাড়ি রাস্তায় চলে আসছে।
রিমন বৃষ্টির উদ্দেশ্যে বলল, ‘ দেখছো কোথায় চলে আসছি আমরা গহীন বনের পথে গাড়ি নিয়ে আসছো, এখন অনন্ত গাড়ি থামাও বলছি। ‘
বৃষ্টি বলল, ‘ গাড়ি তখনই থামবে যখন বলবে তুমি আমাকে ভালোবাসো৷ ‘
‘ আসলেই তুমি একটা পাগল। ‘
‘ পাগল নই গো শুয়ামি #পাগল-প্রেমিকা তবে এখন #পাগল_বউ বলতে পারো। ‘ বলেই রিমনের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মারল।
পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে গাড়ি যাচ্ছে দুই পাশে ইয়া বড়বড় গাছপালা তারমধ্য দিয়ে মেঠোপথ এদিকে দিন গনিয়ে আসছে। আরও গভীরে যেতেই গাড়ি আপনা আপনি থেমে গেলো। রিমন তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বৃষ্টি কে প্রশ্ন ছুঁড়ল, ‘ গাড়ি এখানে থামালে কেন আরও ভেতরে নিয়ে গিয়ে ব্রেক চাপলে বেশি ভালো হতো, ‘
বৃষ্টি প্রতিত্তোরে বলল, ‘ তা যা বলেছো কিন্তু সেটা আর সম্ভব নয়। ‘
রিমন ভ্রু কুঞ্চিত করে বৃষ্টির দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। বৃষ্টি আবারও বলল।
‘ গাড়ির তেল শেষ ‘
রিমনের মুখ থেকে অস্ফুটস্বরে বেরিয়ে আসে,’হোয়াট!’
বৃষ্টি গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে চুপ করে বসে আছে৷
রিমন বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে বৃষ্টির দিকে। বিশ্বাস হচ্ছে না। সে একটু হাসার চেষ্টা করে বলে,’তুমি কি আমার সাথে প্রাঙ্ক করছো?’
বৃষ্টি হতাশ হয়ে রিমনের দিকে তাকিয়ে বিমর্ষ হয়ে বলে,’না গো সোনা।’
রিমন উত্তেজিত হয়ে বলে উঠে, ‘ তাহলে এখন কি করবো বসে বসে মশা মাছি গুনবো? ‘
‘ ফাউল আইডিয়া! গাড়ি থেকে নেমে পেট্রোল পাম্প খুঁজবো! ‘ বৃষ্টি বলল।
‘ এই জঙ্গলে পেট্রোল পাম্প কি তোমার মাথার উপর দিয়ে আসবে? ‘
‘ এটা কেমন কথা? আমার মাথায় কেন আসবে কয়েক কিলোমিটার পেছনে গেলেই পেয়ে যাবো। ‘
‘ কিভাবে যাবো?’
‘ পায়ে হেঁটে? ‘
‘ পাগল হয়ে গেছো কয়েক কিলোমিটার পায়ে হেঁটে যাবো আবার আসবো? ‘
‘ হ্যাঁ আমাকে ভালোবাসি না বলার শাস্তি এবার চলো। ‘
দ্বিতীয় কোনো রাস্তা নেই তাই বাধ্য হয়ে গাড়ি থেকে নামতেই হলো। গাড়ি লক করে দুজনে হাঁটছে হাতে একটা ড্রাম। হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূরে চলে আসছে রাস্তা চিনতে না পেরে রিমন বলল, ‘ এই দিক দিয়ে চলো জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে গেলে শর্টকাট পাবো তারাতাড়ি পৌঁছে যাবো। ‘
শুরুতে বৃষ্টি যেতে রাজি হয়নি তবে রিমনের জোরাজুরিতে রাজি হতেই হলো।
দু’জনে হাঁটছে সব কিছুর জন্য রিমন বৃষ্টি কে দোষ দিচ্ছে। পুরো জঙ্গল তাদের কাছে একই রকম লাগছে। মনে হচ্ছে বারবার ঘুরে এক জায়গা তেই আসছে। রিমন বকবক করতে করতে আগে চলে গেছে। এদিকে বৃষ্টি হাঁপিয়ে গেছে আর হাঁটতে পারছে না একটু পানির প্রয়োজন, ইচ্ছে থাকলেও রিমনের কথার পাল্টা জবাব দিচ্ছে না। বেশ কিছুক্ষণ পর, পেছন থেকে কারো শব্দ না পেয়ে পেছনে ঘুরে তাকালো কিন্তু অবাক করা বিষয় পেছনে কেউ-ই নেই, ইতস্ততভাবে বারবার বৃষ্টি বৃষ্টি বলে ডাকাডাকি করছে কিন্তু দূরদূরান্তে কোথাও বৃষ্টির ছায়াও দেখা যাচ্ছে না। বেশ চিন্তিত হয়ে এদিক সেদিক ছুটে বেড়াচ্ছে কিন্তু কোথাও বৃষ্টি নেই। বেশ চিন্তিত হয়ে পরল ভাবছে এই গহীন জঙ্গলে বৃষ্টি একা একা কোথায় যাবে? ঠিক সেই সময় কারো আওয়াজ ভেসে আসছে। আওয়াজ টা কে ফলো করলে রিমন একটা বড়সড় গর্তের কাছে পৌঁছে যায়। গর্তের সাইজ দেখে বোঝা যাচ্ছে এটা কোনো পশু শিকার করার জন্য ফাঁদ বানানো হয়েছে৷ তবে গর্তে ফুচি দিতে দেখল বৃষ্টি সেখানে দাঁড়িয়ে আছে৷ বৃষ্টি কে এমন অবস্থায় দেখে রিমনের প্রচুর হাসি আসল। ফিক করে সে হেঁসে ফেলল তা দেখে বৃষ্টির শরীর জ্বলে যাচ্ছে রাগে সে বলে উঠল, ‘ হাতি জলে পরলে চামচিকে ও লাথি মারে আর তুমিও তাই করছো বসে বসে হাসছো? ‘
রিমন হাসি থামিয়ে বলল, ‘ মানে তুমি শিকার করছো তুমি যে হাতি? ‘
বৃষ্টি বলল, ‘ আমি কখন আমাকে হাতি বলছি ওটা কথার কথা ছিল। এখন সাহায্য করো আমাকে উপরে তুলো। ‘
‘ আচ্ছা এই না-ও ‘ উপরে বসে এক হাত বৃষ্টির দিকে বাড়িয়ে দিলো। এবার আর নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারছে না তাই বলেই ফেলল, ‘ আমি কি জিরাফ যে আপনি শুধু হাত দিয়ে বলছেন উঠতে, লাগবে না আপনার হেল্প চলে যান এখান থেকে। ‘
রিমন ডোন্ট কেয়ার এটিটিউট নিয়ে বলল, ‘ ওকে ‘
বলে উঠে চলে গেলো। বৃষ্টি অবাক দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইল নিজেই নিজের সাথে বিড়বিড় করতে করতে বলল, ‘ সত্যি সত্যি কি চলে গেলো নাকি? ‘
অনেকবার ডাকাডাকির পর রিমনের সাড়াশব্দ না পেয়ে বৃষ্টি ভেবে নিলো রিমন চলে গেছে। নিরাশ হয়ে মাটিতে বসে পরল হতাশাজনক দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
কিছুক্ষণ পর, হঠাৎ কিছু একটা পরল অনেক লম্বা কিন্তু সেটা কি তা খেয়াল না করেই বৃষ্টি চেচিয়ে উঠল, ‘ সাপ সাপ সাপ! ‘
উপর থেকে ধমকের স্বরে বলল, ‘ ওই চুপ কর কানি লাফালাফি বন্ধ করে চোখ খোল আর দড়ি টা ধরে উপরে উঠে আয়। ‘
বৃষ্টি মিটমিটিয়ে চোখ খুলে দেখল এটা দড়ি হুদ্দাই সাপ ভেবে ভয় পাচ্ছিল। তাছাড়া রিমন কোথাও যায়নি দড়ি খুজতে গেছিলো হিহি ভেবে খুশি মনে দড়িটা শক্ত করে ধরলে রিমন টেনে উপরে তুলে নেয়। দুজনে পাশাপাশি হাঁটছে বৃষ্টি রিমনকে জিজ্ঞেস করে, ‘ দড়ি কোথায় পেলে? ‘
‘ ওই দিকে পিকনিক স্পটে একটা গাছে বাধা ছিলো খুলে নিয়ে আসছি। ‘
বৃষ্টি লাফিয়ে ইচ্ছুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, ‘ আমার জন্য? ‘
‘ না এখানে একটা ইস্টুপিট মেয়ে আছে তার জন্য এইসব করতে হয়েছে। ‘
কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। মনে মনে ১৪ গোষ্ঠী উদ্ধার করেছে বৃষ্টি রিমনের।
আরও ৩০মিনিট হাঁটার পর বৃষ্টি হাত বাড়িয়ে নিজেই বলল, ‘ রাইটার বাবু খিদে পেয়েছে। ‘
এখন একটু বেশিই হয়তো বলে ফেলেছে বৃষ্টি, মাত্রারিতিক্ত রাগ ও ক্ষোপ নিয়ে গুরুগম্ভীর কন্ঠে বলল, ‘ আমাকে খাবি নে খা! ‘
বৃষ্টি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কিছুক্ষণ ভ্রু কুঞ্চিত করে তাকিয়ে থেকে ঠোঁট বাকা করে বলল, ‘ বজ্জাত ‘
এদিকে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে গেছে দু’জনে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে হাঁটছে, ঘুটঘুটে অন্ধকার চারপাশ থেকে কেমন কেমন ডাক শোনা যাচ্ছে। বৃষ্টি মনে মনে ভয় পাচ্ছে তবে রিমনের সামনে নিজেকে সাহসী প্রমাণ করার জন্য স্বাভাবিক ভাবেই চলছে। ফট করে বৃষ্টি বলে উঠল, ‘ আমরা মনে হয় জঙ্গলে হারিয়ে গেছি? ‘
রিমন পেছনে তাকিয়ে বলল, ‘ আমিতো তোমার জন্য হারিয়ে গেছি এখন না হয় তুমি আমার জন্য হারিয়ে যাও শোধবোধ! ‘
রিমনের বলা কথা বৃষ্টির পছন্দ হলো না সেটা তার মুখ ভেংচি দেখেই বুঝতে পারছে রিমন।
বৃষ্টি বারবার চারদিকে ঘুরে ঘুরে তাকাচ্ছে তা দেখে রিমন বলল, ‘ ভয় পেয়ো না তুমি থাকতে আমার কিছু হবে না। ‘
বৃষ্টি ক্ষেপে বলল, ‘ মানে কি কথাটার? ‘
রিমন বলল, ‘ না বুঝলে নাই তুমি এখনো ছোটো বোঝার বয়স হয় নাই। ‘
‘ ও আমার কথা ঘুরিয়ে আমাকেই বলছো! ‘ বৃষ্টি বলল।
‘ হো ‘ রিমন বলল।
আরও কিছুক্ষণ হাঁটার পর দুজনে লক্ষ্য করল, দু’জন লোক আগুন জ্বালিয়ে বসে আছে। বৃষ্টি রিমনকে তাদের কাছে গিয়ে হেল্প চাইতে বলল। রিমন বৃষ্টি কে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘ এদের দেখে আমার সঠিক মানুষ বলে মনে হচ্ছে না। এখনই যাওয়া ঠিক হবে না। গাছের আড়ালে লুকিয়ে কিছুক্ষণ নজর রাখা যাক। তুমিও আমার পেছনে দাঁড়াও ‘
তারপর মিনিট পাঁচেক তারা গাছের পেছনে লুকিয়ে লোক দু’টো কে দেখল। তেমন কিছুই নজরে আসল না তাই বের হয়ে তাদের কাছে গেলো।
তারাও শুরুতে ভালো আচরণ করল। দু’টো ইট এগিয়ে দিলো দুজনের দিকে তা তে বসতে বলল। রিমন দু’জন কে উদ্দেশ্য বলল, ‘ আপনারা মনে হয় বন শিকারী আমরা ঘুরতে ঘুরতে অন্য পথে চলে এসেছি। মানে পথ হারিয়ে ফেলেছি, আপনারা যদি সঠিক পথ আমাদের বলে দিতেন তাহলে হেল্প হতো আমাদের। ‘
প্রথম লোক: অবশ্যই এত তারা কিসের কিছুক্ষণ বসুন আমাদের সাথে।
দ্বিতীয় লোকটা বারবার বৃষ্টির গলার সন্ন্যের চেইনটার দিকে তাকাচ্ছে হাতে রিং গলায় চেইন কানে দুল দেখে তাদের লোভ হয়ে গেলো। রিমন হয়তো কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে তাই বৃষ্টির হাত ধরে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘ আমার রাস্তা মনে পরে গেছে, আমরা এখন আসি ধন্যবাদ আপনাদের। ‘
বলে পেছনে ঘুরে যেতে নিলে, দ্বিতীয় লোকটা বৃষ্টির হাত ধরে টান মারে। রিমন কিছু করতে যাবে তার আগে প্রথম লোকটা রিমনের হাত ধরে পেছনে নিয়ে নেয়। আর অন্য হাত দিয়ে গলায় ছুড়ি ঠেকায়। যার ফলে রিমন নড়তেও পারছে না। ওইদিকে বৃষ্টির গলা থেকে চেইন নিতে গেলে বৃষ্টি লোকটার হাতে কামড় বসিয়ে দেয়। তারপর লোকটা মুখ দিয়ে ‘আহ’ শব্দ করে বৃষ্টি কে ছাড়তেই বৃষ্টি মাটি থেকে একটা মোটা লাকড়ি তুলে প্রথম লোকটার পেছন দিয়ে ঘাড়ে আঘাত করল। হাত থেকে ছুড়িটা নিচে পরে গেলো। সাথে সাথে রিমন তাকে মেরে গায়েল করল। দু’জন লোক একসাথল ছুটে পালিয়ে গেলো। বৃষ্টি রিমনের কাছে গিয়ে হাত ধরে বলল।
‘ তোমার কিছু হয়নি তো.? ‘
‘ আমার কিছু হয়নি আর তোমার? ‘
‘ আমারও কিছু হয়নি! ‘
‘ আচ্ছা এখন মনে হচ্ছে না তারা আর আসবে চলো আগুনের পাশে বসি। ‘ রিমন বলল।
‘ তুমি তখন ঠিক বলেছিলে!’ বৃষ্টি বলল।
‘ কোন ব্যাপারে? ‘
‘ এই যে লোক গুলোকে তোমার আগেই সুবিধার মনে হয়নি। ‘
‘ ওওও ‘
বৃষ্টি আর কথা বাড়ালো না বাদ্য মেয়ের মতো গিয়ে বসল। এখন আর ভয় লুকিয়ে রাখতে পারছে না। ভয়ানক ভয়ানক আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। রিমন বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল, ‘ ভয় পেয়ো না আগুন দেখলে কোনো পশু পাখিই কাছে আসে না। আমরা রাতটা আগুনের পাশে এখানে বসেই কাটিয়ে দিবো পরে সকালে রাস্তা খোঁজা যাবে৷ গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছালেই বাড়ি যেতে পারবো। ‘
বৃষ্টি হতভম্ব হয়ে প্রশ্ন করল, ‘ গাড়ির কাছে পৌঁছালে বাড়ি ফিরবো কিভাবে? ‘
রিমন ইতস্ততভাবে বলল, ওই গাড়িতে এক্সট্রা ড্রাম আছে সেটাতে তেল ফুল আছে৷ ‘
বৃষ্টি অবাক হল, হা করে তাকালো দু’মিনিট পর উথাল-পাতাল কিলাতে শুরু করল রিমনকে আর রেগেমেগে বলল, ‘ ফাজিল অসভ্য গাড়িতে তেল ছিল তাহলে তখন কেন বলো নাই। ‘
‘ তখন বললে এমন মজাদার ট্যুর তো হতো না। ‘ বলে ফিকফিক করে হাসতে লাগল।
_____
রাত গভীর হওয়ায় বৃষ্টির আখি জোড়ায় ঘুম ভোর করছে। চোখ মেলে রাখতে পারছে না। চোখ দু’টো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, যা দেখে রিমন বৃষ্টি কে তার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাতে ইশারা করল। আর আমাদের #পাগল_প্রেমিকা কি এই সুযোগ হাত ছাড়া করবে কখনোই না। রিমনের কাঁধে মাথা রেখে তলিয়ে গেলো ঘুমের দেশে।
সকাল বেলা। দু’জনে হাঁটতে হাঁটতে গাড়ি অব্দি পৌঁছে গেছে, বৃষ্টি রিমনকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘ তুমি কিন্তু এখনো বলোনি? ‘
‘ কি? ‘ গাড়ির ডোরে হাত রেখে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলল।
‘ ভালোবাসো এখনও বলোনি। ‘ করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল।
‘ তুমি এখনো ওই খানেই পরে আছো? ‘
আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই পেছন থেকে ও-ই দুজন লোক লুকিয়ে এসে একজন রিমনের মাথায় শক্ত লাঠি দিয়ে আঘাত করল, সাথে সাথে রিমন মাটিতে পরে গেলো। রিমন বলে চিৎকার দিয়ে কেঁদে ফেলল বৃষ্টি, একজন লোক বলল, ‘ চল চল পালা হয়তো মরে গেছে। ‘ দু’জনেই ছুটে পালালো। রিমনের মাথা নিজের কোলে তুলে নিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। পাঁচ মিনিট পর চোখ খুলে তাকিয়ে বলল, ‘ আমার কিছু হয়নি পাগল আমি তো নাটক করছিলাম যা তে তারা ভয় পেয়ে চলে যায়। ‘
উঠে বসল, মাথার পেছনে আঘাত হানি জায়গা টা স্পর্শ করে দেখল রক্তাক্ত হয়ে আছে। রিমন তেমন গুরুত্ব দিলো না। উঠে গাড়িতে তেল ঢুকালো, গাড়ি বৃষ্টিই ড্রাইভ করছে কারণ এই অবস্থায় রিমন পারবে না। গাড়ি চালিয়ে এসে হাসপাতালের সামনে ব্রেক করল। হাসপাতালে যেতে নারাজ রিমন কিন্তু বৃষ্টি নাছোড়বান্দা ডাক্তার না দেখিয়ে শান্ত হতে পারবে না যদি ইনফেকশন হয় বা হিতে বিপরীত কিছু হয় তখন? এজন্যই জোর করে নিয়ে আসা। কেবিনে ডাক্তার ভালো ভাবে রিমনের ট্রিটমেন্ট করল। পাশের বেডে ছিলো আরও একটা মহিলা, হাসপাতালে এসে বাঁধলো আরও একটা কান্ড। বেড়ে গেলো বৃষ্টির ইনসিকিউরিডি আর রিমন সে তো মজা নিচ্ছে বারবার বৃষ্টি কে জ্বালানোর জন্য বলছে, ‘
চলবে?
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]