#পাগল_প্রেমিকা
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা [লেখনীতে]
#পর্ব_৩৫
‘ পেত্নীর মতো চুল ছেড়ে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? ‘
এক রাশ বিরক্তি নিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চাপটে পেছনে তাকিয়ে বলে, ‘ আমাকে কোন দিক দিয়ে পেত্নী দের মতো লাগছে? ‘
রিমন বিছানার উপর আরাম করে বসে পেছনে হাত রেখে বলল, ‘ তোর চুল থেকে ‘
বৃষ্টি চোখ দু’টো খিচে বন্ধ করে নিলো। এক হাত ঘাড়ে নিয়ে রেখে স্লাইড করতে করতে বলল, ‘ তিন দিনে এত কষ্ট করে করলাম। কই থ্যাংকস দিবা, তা না কইরা উল্টো আমাকে পেত্নী বলে সম্মোধন করছো? ‘
রিমন বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বলল, ‘ এটা তোমার দায়িত্ব ছিলো এতে থ্যাংকস দিম কেন? ‘
বলে অন্য দিকে ঘুরে কোলবালিশ জরিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করল। এদিকে ডেসিন টেবিলের উপর হালকা ভোড় দেয় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ রিমনকে দেখে বিড়বিড় করে বলল, ‘ আস্তা একটা হারামী কোনো কৃতজ্ঞতা নেই। ‘
বলেই চুলে বেনি পাকাতে শুরু করল।
____
সকালে রিমন বৃষ্টি কে ঘুমন্ত রেখেই অফিস চলে যায়। ঘুম ভাঙ্গে বৃষ্টির সকাল দশটার লাগাত, চোখ ঢলতে ঢলতে বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াশরুমে গেলো।
ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে গেলো, ডাইনিং টেবিলে একা একা বসে নাস্তা করতে হয়েছে। কারণ এই বাড়ির সকলের আট টা লাগাত নাস্তা কমপ্লিট হয়ে যায়৷ আর আজ বৃষ্টি ঘুম থেকে উঠেছে দেরি করে।
নাস্তা শেষ করে হল রুমে এসে বসা মাত্রই ফোন বেজে উঠে, টেবিলের উপর থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল ফোনের স্কিনে ‘ শাঁকচুন্নি ‘ নাম জ্বলজ্বল করছে। বৃষ্টি ফোনের স্কিনে ভ্রূকুটি কুঞ্চন করে তাকালে, রিমি বলে। ‘ কি হল ফোনের মধ্যে কি দেখছো? কে কল দিয়েছে এভাবে তাকিয়ে আছো? ‘
বৃষ্টি ফোনের স্কিনে তাকিয়ে আনমনেই প্রত্যত্তরে বলল, ‘ শাঁকচুন্নি কল দিয়েছে ‘
রিমি বিস্মিত স্বরে বলে উঠল, ‘ কিহহ শাঁক মানে সিরিয়াসলি শাঁকচুন্নি কল দিয়েছে মানে? ‘
বৃষ্টি রিমির দিকে তাকিয়ে ইতস্ততভাবে বলল, ‘ রিমি আপু আসলে শাঁকচুন্নি বলতে আমার বোন বর্ষা কল দিয়েছে ‘
রিমি এক জোড় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে দু বার মাথা নাড়িয়ে বলল, তুই পারিস ও বোনের নাম্বার শাঁকচুন্নি দিয়ে সেভ করে রাখছিস, এখন কল টা তো রিসিভ কর কেটে যাবে নয়তো। ‘
বৃষ্টি রিমির দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে এদিকে কল এক বার রিং হয়ে কেটে গেছে। বৃষ্টি কল বেক করলে ওপাশ থেকে কল রিসিভ করে কিছু একটা বলে তাতে বৃষ্টি অনেক বেপরোয়া হয়ে উঠে, কল কেটে ছুটে যায় কিচেনের দিকে বৃষ্টি কে ওভাবে ছুটতে দেখে রিমিও পেছনে ছুটে, কিচেনে এসে মা’র সামনে দাঁড়িয়ে চোখের জল ছেড়ে দিয়ে বলে, ‘ মা আমাকে এখনই বাড়ি যেতে হবে দাদু স্টক করেছে! ‘
রিমি ও মা দু’জনেই বৃষ্টি কে কান্না থামাতে বলে এবং যাওয়ার জন্য পারমিশন ও দেয় কিন্তু কিভাবে যাবে? রিমন ও সোহান দুই ভাই’ই এক সাথে অফিসে গেছে। বৃষ্টি একাই যেতে পারবে বলে উঠল। তারাও আর আপত্তি করলেন না। বৃষ্টি রুমে এসে লাগেজে কিছু জামাকাপড় প্যাক করে নেয়। তারাহুরো করে বের হয়ে যায়। এর মধ্যে ওর মাথা থেকেই বেরিয়ে যায় রিমনকে ইনফর্ম করার কথা বাড়ির কারোরই মাথায় আসেনি।
সারাদিন অফিসের অতিরিক্ত কাজের চাপে বাড়িতে একটা কল ও দিতে পারেনি। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে আসে দুজনেই, হল রুমে সিঙ্গেল সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বসে পরল। রহিমা বড় ও ছোট সাহেবের জন্য লেবুর শরবত করে নিয়ে আসে। রিমন ভ্রুকুটি কুঞ্চন করে রহিমার দিকে তাকালো গ্লাসটা তে হাত দিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ল, ‘ তুই আজ নিয়ে আসছিস কেন বৃষ্টি কোই প্রতিদিন তো ওই নিয়ে আসতো? ‘
রহিমা প্রতিত্তোরে বলল, ‘ ভাবিমনি তো নাই ‘
সোহান পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো, ‘ নেই মানে কোথায় গেছে? ‘
শরবতের গ্লাসে ঠোঁট লাগিয়ে এপ চুমুক দিয়েছে তখনই রহিমার কথা শুনে শরবত মুখ থেকে স্লিপ করে সোজা সামনে গিয়ে ফ্লোরে পরল।
রহিমা চেচিয়ে বলল, ‘ ছোট সাহেব এটা কি করলেন আমার কাজ বাড়াই দিলেন আমি এহন এডি পরিস্কার করমু নাকি নাটক দেখতে যামু। ‘
রিমন গুরুগম্ভীর কন্ঠে বলল, ‘ রাখ তুই তোর সিরিয়াল আগে এটা বল একটু আগে কি বললি বৃষ্টি কোথায় গেছে? ‘
রহিমা চোখ নাকমুখ কোঁচকান করে কপালের চামড়া ভাজ করে বলল, ‘ কেন ভাবিমনি হের বাপের বাড়ি গেছে! ‘
রহিমার কথা শুনে রিমনের নাকে একরাশ রাগ জড় হয়েছে তা ওর চোখ আর রাগে কপাল ভাজ করা দেখে যে কেউ বুঝে যাবে। কাঁচের গ্লাসটা এমন ভাবে চেপে ধরেছে মনে হচ্ছে এখনই হাত দিয়ে ভেঙে ফেলবে। সোহান তা খেয়াল করে রিমনের হাত থেকে গ্লাস টা নিয়ে রহিমার হাতে দিলো। দুইটা গ্লাস ট্রের উপর রেখে দেয়। দু’জনের সামনে থেকে ঢেংঢেং করে চলে যায়। রাগ এমন একটা জিনিস যা অতিরিক্ত মাত্রায় অবস্থিত করলে তা কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। রিমনও নিজের রাগ কন্ট্রোলে আনতে পারছে না। সে নিজেও জানে না তার এত কেনো রাগ উঠেছে বৃষ্টি চলে গেছে শোনার পর। সোহান রিমনের কাঁধে হাত রেখে শান্ত্বনা মূলক কিছু কথা বলতে যাবে তার আগেই রিমন সেখান থেকে উঠে রুমের দিকে চলে যায়।
রাতে রিমনকে খাবার খাওয়ার জন্য রিমি ডাকতে এসেছিল তবে রিমন রিমিকে ধমকের স্বরে চলে যেতে বলে। সেও চলে যায় কারণ ওর রাগ প্রচন্ড ভয়াবহ তার সাথে সবারই পরিচয় রয়েছে। এখানে আরও কিছু ক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে জোর করলে হিতে বিপরীত হতে পারে ভেবে চলে যায়।
এদিকে কোনো কিছুতেই রিমন সুস্তি পাচ্ছে না। কোনো ভাবেই শান্তি লাগছে না অস্তিত্ব অনুভব করছে বুকের মধ্যে আনচান করছে রুমটা কারো অনুপস্থিতিতে খাঁ খাঁ করছে। রুমটায় বৃষ্টির শুন্যতা রিমনকে শান্তি দিচ্ছে না। কেনো জানে না সে শান্তি মতো বসতেও পারছে না। বারবার শুধু বৃষ্টির সাথে কাটানে মুহুর্ত গুলো চোখের সামনে ভাসছে। দুই আঙ্গুল দিয়ে চোখের উপর হাল্কা চাপ দিয়ে বিড়বিড় করে বলল, ‘এইভাবে আমি এইরুমে থাকতে পারবো না। ‘
বলেই ফোন বের করে কল দেয় আর সবার উদ্দেশ্য করে বলল, ‘ তোরা এখনই…..
চলবে?
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]
(রিচেইক করা হয়নি ভুলক্রটি ক্ষমা করবেন। ঘুমে ঢুলুঢুলু হয় লিখলাম। 😴
কেমন হয়েছে অবশ্য জানতে ভুলবেন না।)