#পাগল_প্রেমিকা
#পর্ব_38
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
__________
ঝিরিঝিরি বৃষ্টির পরছে আর এই বৃষ্টি তে কাক ভেজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাইকের সাথে হেলান দিয়ে এক পায়ের উপর আরেক পা ভোড় দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
অধরা বলে উঠে, ‘ কি হ্যান্ডসাম মাইরি! কি কিউট দেখ দোস্ত কিভাবে দাঁড়িয়ে আছে। এই স্টাইলের উপর আমি তো ফিদা। পুরাই ক্রাশ উফফ চুলগুলো দেখ. ‘
আর কিছু বলার আগে বৃষ্টি অধরাকে চুপ করিয়ে দিয়ে নিজে বলল, ‘ পুরাই কাকের বাসা ‘
অধরার মুড অফ হয়ে গেলো সে বলল, ‘ দেখ লাইফে ফাস্ট কাউকে দেখে ক্রাশ খাইলাম আর তুই এইসব বলছিস নোট ফেয়ার! ‘
বৃষ্টি মৃদুস্বরে বলল, ‘ প্রথম বার বলেছিস তাই কিছু বললাম না। আর হ্যাঁ ক্রাশকে দুলাভাই বলতে শিখ। ‘
অধরা চোখ ফেলফেল করে তাকিয়ে থেকে ইতস্ততভাবে বলল, ‘ ও তোর জামাই? ‘
বৃষ্টি মৃদু হাসি দিয়ে বলল, ‘ হুম হুম। ‘
বলে হাঁটতে শুরু করে রিমন সামনে এসে দাঁড়িয়ে এক ভ্রু কুঞ্চিত করে অপর ভ্রু উঁচু করল প্রশ্ন ছুঁড়ে, ‘ কি ব্যাপার আজ আমার ভার্সিটির সামনে উদয় হলেন? ‘
ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে রিমন বলে উঠে, ‘ এই দিক দিয়েই যাচ্ছিলাম ভাবলাম তোমায় সাথে নিয়েই যাই। ‘
‘ আচ্ছা? ‘
‘ এত প্রশ্ন করছো কেনো? আমার স্থানে এখন যদি ডাক্তার নীল থাকতো তাহলে কি তাকেও এইভাবে প্রশ্ন করতে? করতে না বিন্দাস চলে যেতে ‘ রিমন বলল।
‘ সে আমার ফ্রেন্ড ‘
‘ আমি তোমার বর, এখন বকবক না করে, পেছনে উঠে বসো আর ছাতা মেলে ধরো। বৃষ্টি পুরোপুরি আসার আগে আমরা বাড়ি পৌঁছে যেতে পারবো। ‘
বৃষ্টি আর তর্ক না করে হেলমেট পরে নেয়। বাইকের পেছনে উঠে বসলে রিমন বাইক স্টার্ট দেয়। এখনও ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পরছে, কিছুদূর আসতে বৃষ্টি জোরে পরতে শুরু করল৷ বাসস্ট্যান্ডের সামনে বাইক থামিয়ে দু’জনে নেমে যায়। স্ট্যানের নিচে দাঁড়িয়ে আছে, বৃষ্টির খুব ইচ্ছে করছে ভিজতে কিন্তু রিমন বৃষ্টির হাত নিজের হাতের মধ্যে মুঠি বন্ধ করে রেখেছে। রিমনের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ বাইক টা ওখানে ভিজছে তো? ‘
বিরক্তিকর মনোভাব নিয়ে তেজি কন্ঠে বলল, ‘ তাহলে কি বাইক টা কে কোলে করে এখানে নিয়ে আসবো? ‘
‘ আমি কি তা বলছি নাকি? ‘
‘ তো আপনি কি বলছেন? ‘
‘ বলছি, বাইকটার সাথে আমরাও গিয়ে চলো ভিজি ‘
‘ পাগল নাকি? এই বৃষ্টি তে ভিজলে জ্বর আসবে!’
‘ জ্বর আসবে না তুমি চলো তো আমার সাথে! ‘
হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো খোলা আকাশের নিচে ঝুম ধারায় বৃষ্টি পরছে, দুই হাত দুই দিকে ছড়িয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটায় এক অন্য রকম শিহরণ জাগছে হুট করেই আকাশ চমকালো ভাজ পরলো। বৃষ্টি ভয়ে রিমনকে জরিয়ে ধরলো। বেশকিছু ক্ষণ সেইভাবেই দু’জনে দাঁড়িয়ে রইল।
এখন কি আর এখানে দাড়িয়ে বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করে লাভ আছে? নেই কারণ মানব বৃষ্টির জন্য প্রকৃতির বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছে। তাই জোর করেই বাইকে উঠালো, বাইক স্টার্ট দিয়ে বৃষ্টিতেই দু’জনে বাড়ি ফিরে এলো। কলিংবেল চাপতে রিমি দরজা খুলে দেয়। দুজনকে ভেজা দেখে শত প্রশ্ন জুড়ে দিয়েছে। রিমন বিরক্তি নিয়ে বলে উঠে, ‘ সব ওর জন্য ওকেই জিজ্ঞেস কর ‘ বৃষ্টি কে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে চলে যায়।
বৃষ্টি ও ভেজা তাই পেছন পেছন ছুটে চলে আসে। আসার আগে বলে আসে ‘ পরে বলবো সব ‘ রুমে এসেই দেখে রিমন টাওয়াল হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকছে। পেছন পেছন বৃষ্টি ও ঢুকে পরল, #লে-ছক্কা
‘ এই তুই ভেতরে আসছিস কেন? ‘
‘ দু’জনে এক সাথে গোসল করবো তাই ‘
‘ এএ কিছুতেই না আমার লজ্জা করে তুমি বাহিরে যাও পরে আইসো প্লিজ যাও। ‘
‘ কিছুতেই না, আমি এখনই করবো আর তোমার সাথেই করবো ‘
‘ তোর লজ্জা করে না একটা ছেলের সাথে গোসল শেয়ার করতে চাচ্ছিস? ‘
‘ ছেলেটা আমার জামাই তাই লজ্জা করছে না বুঝেছো ‘
‘ কিন্তু আমি তোর সাথে গোসল করবো না। তুই আগে কর আমি পরে করে নেবো। ‘
‘ তুই করতে বাধ্য ‘
বলে হাত ধরে টেনে ঝর্ণার নিচে দাঁড় করিয়ে দিলো।
দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমিয়েছে রিমন।
রিমি বৃষ্টি কে নিজের রুমে ডেকে নিয়ে গেছে, কিছু দরকারী কথা বলার জন্য, কথা শেষ হলে রুমে এসে দেখে রিমন কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। রুমের দরজা ধীরে সুস্থে চাপিয়ে দিয়ে। চুপিচুপি আলতো পায়ে বিছানার উপর উঠে বসে, রিমনের মাথার পাশটায় বসে সে তার খোলা চুলগুলো মুঠি তে নিয়ে রিমনের মুখের উপরে দিয়ে খেলা করছে। চুলের খোঁচা খেয়ে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে বৃষ্টি দুই হাত দিয়ে বৃষ্টি কে জরিয়ে ধরে টান মেরে বিছানার উপর শুয়ে দিয়ে নিজে উপরে উঠে বসে। তার দুই হাত দিয়ে বৃষ্টির দুই হাত বালিশের সাথে চেপে ধরে বলে উঠে, ‘ এই চুল দিয়ে আমার ঘুমের ডিস্টার্ব করিয়েছো আর এই চুল দিয়েই শোধ তুলবো। ‘ বলে বৃষ্টির ঘন কালো চুলে মুখ গুঁজে দেয়।
রাত্রি বেলা রাত প্রায় ১২টা বাজতে চলল, বারান্দায় আনমনে একা একা দাঁড়িয়ে সে কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তা করছে। ঘুমের মধ্যে বিছানার এক পাশে হাত রাখে। কাউকে হাতে লাগ না পেয়ে চোখ মেলে তাকালো। বিছানার উপর বই পড়তে পড়তে কখন যে চোখ লেগে গিয়েছিল জানা নেই। রুম টাও অন্ধকার গায়ে কাঁথা জুড়ানো নিশ্চিত রিমন করেছে। তবে সে গেলো কোথায়? ভাবতেই চোখ গেলো বেলকনিতে, বেড থেকে নেমে হেঁটে যেতে লাগল।
বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে তাকে তাই কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো। পাঁচ মিনিট পর ফিরে এসে দেখল এখনও সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। এক হাত দিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল। অপর হাত সামনে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘ কফি! ‘
কফির মগটা হাত থেকে নিয়ে পাশে রেখে দেয়। বৃষ্টির দুইহাত ধরে বুকের সাথে চেপে বলল, ‘ ঘুমাওনি এখনো? ‘
বৃষ্টি প্রত্যত্তরে বলল, ‘ ঘুমিয়েছিলাম তবে তোমার অনুপস্থিতি আমাকে জাগিয়ে তুলেছে। কি ভাবছো এতো ‘
‘ কোই না তো, আমি কিছু ভাবছি না ‘ রিমন মৃদুস্বরে বলল।
‘ আমার থেকে লুকানোর বৃথা চেষ্টা করে লাভ নেই বলো কি নিয়ে চিন্তা করছো? ‘
রিমন বৃষ্টির হাত ধরে টেনে সামনে নিয়ে আসল, দুই গালে হাত ছুঁইয়ে দিয়ে বলল, ‘ তোমার জানতে হবে না। চলো রাত অনেক হয়ে গেছে ঘুমাতে হবে। ‘
‘ এড়িয়ে যাচ্ছো? ‘ বৃষ্টি প্রশ্ন ছুঁড়ল, রিমন কোনো প্রতিত্তোর করল না।
রান্না করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে, এতদিন রহিমা বা রিমি যেকোনো একজন সব কাজে হেল্প করতো কিন্তু আজ সব কিছু বৃষ্টি কে একা হাতে করতে হচ্ছে। সব কিছুই জেনো উলট পালট করে ফেলছে। এত জনের রান্না একা কি করা যায়। কিছু গেস্ট এসেছে বাড়িতে কিছু বলতে দুই তিনজন নয়। ১০/১২ জন সবার জন্য মন মতো রান্না করলে পোষানো যেতো কিন্তু নাহ একেক জনের আর্যি বউমার হাতে এটা খাবে তো আরেকজন আরেকটা খাবে এই হচ্ছে জ্বালা। একটা করলে অন্য টা বিগড়ে যাচ্ছে। দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে বৃষ্টির এমন নাজুক অবস্থা। হালকা গলা ঝেড়ে নেওয়ার জন্য কাশি দিলো নিজের উপস্থিতি বোঝানোর জন্য পেছন থেকে এসে বৃষ্টি কে জড়িয়ে ধরল আর বলে উঠল, ‘ আমি কি কিছু হেল্প করবো? ‘
হাতে খুন্তি নিয়ে পেছনে ঘুরে তাকালো। হাতে খুন্তি রিমনের দিকে তাক করে অবাক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে প্রশ্ন ছুড়ল, ‘ তুমি আর রান্না? ‘
রিমন মুচকি হেঁসে বলল, ‘ ইয়েস ম্যাম, এখন দেখো এই রিমনের চামাক্ষা ‘ বলে চোখ টিপ মারল। ভোলা ভালা বৃষ্টি হতভম্ব হয়ে চাহিয়া রইল। ওইদিকে রিমন একটার পর একটা কাজ করেই চলেছে। কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি ঠিক সামনে এসে দাঁড়িয়ে কোমড়ে হাত রেখে নিজের কাছে টেনে নিয়ে এসে বলল, ‘ শুধু কি দাঁড়িয়ে দেখবে নাকি আমার হেল্পও করবে? ‘
বৃষ্টি ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে বলল, ‘ কি কেনো শার্ট খুলতে? ‘
চলবে?