পাগল প্রেমিকা পর্ব-৪০

0
503

#পাগল_প্রেমিকা
#পর্ব_৪০
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
__________
‘ তুই জানতে চাচ্ছিস কেনো কাঁদছি, আরে সেটা বলার জন্যই তো কল দিয়েছি ‘
‘ তো কি সেটা? সেটাই তো জানতে চাচ্ছি তুই কান্না বন্ধ করে সেটা বল! এক মিনিট আমি তোর মতো সেটা সেটা বলছি কেনো? যাইহোক কি জন্য কাঁদছিস কারণ টা বলল ‘ বৃষ্টি বলল।
বর্ষা কেঁদেই যাচ্ছে, ফোনে স্পিকার দেওয়া পাশ থেকে রিমা হাসতে হাসতে বলল, ‘ আর বলিস না খুকির বিয়ে ঠিক করেছে আর খুকি বিয়েতে রাজি না। ‘
বৃষ্টি হিমালয় পর্বত থেকে নিচে পরেছে এমন একটা ভাব নিয়ে বলল, ‘ সিরিয়াসলি? ‘

বর্ষা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, ‘ আর নয়তো কি ফানি? এএএ,,, চেনা নাই জানা নাই একটা ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করে ফেলছে? এএ আমার কি হবে? ‘

রিমা ঠোঁটের উপর হাত দিয়ে মুখ টিপে টিপে হাসছে।

বৃষ্টি বলল, ‘ কান্না থামা এটা বল তুই দেখছিস তাকে, ছবিতে বা অন্য ভাবে? ‘

‘ না ‘
‘ জানিস ছেলে কি করে বা নাম কি? ‘
‘ না ‘

‘ তো জানিস টা কি?’
‘ কিছুই না ‘

‘ বাড়ি থেকে কি বলছে? ছেলে কেমন? ‘
‘ ছেলে একদম হিরার টুকরা, পুরোপুরি হিরা না তবে টুকরা ওটাই যথেষ্ট, বিয়ে হলে এখানেই হবে হুহ বাধ্যতা মূলক। ‘ রিমা বলল।

‘ এখন কি করবি? ‘
‘ তুই থাকলে না কিছু একটা করতে পারতি তোরই তো বিয়ে হয়ে গেছে। আমি বিয়ে করতে চাই না। বিয়ের দিন এক কোণায় লুকিয়ে থাকবো পরেরদিন বের হয়ে আসবো তাপ্পির মতো। ‘ বর্ষা বলল।

‘ একদম যা তা ফালতু কথা বলছিস ‘ রিমা বলল।
‘ তুই চুপ থাক টিমটিম ‘ বর্ষা রেগে ধমকের স্বরে বলল।
‘ তোরা দু’জন ঝগড়া করা বন্ধ কর। এখন আমার কথা মন দিয়ে শোন, দু’জনে আমার এখানে চলে আয় পরে ভেবে একটা উড়াধুড়া ঝাক্কাস বুদ্ধি বের করবো তোর বিয়ে ভেস্তে দেওয়ার জন্য এখন এখানে আসার ব্যবস্থা কর। ‘

‘ কিভাবে যাবো? ‘ বর্ষা বলল।
‘ দিয়ে আসবে কে? ‘ রিমা বলল।
‘ কাব্য, নাহিদ, অপূর্ব ওদের তিনজনের মধ্যে একজনকে ম্যানেজ কর পটিয়ে পাটিয়ে নিয়ে চলে আয়। আর শোন শোন কাব্য’র কাছে গিয়ে লাভ নেই ও মরে গেলেও নিয়ে আসবে না। তোরা বরং নাহিদ, নাঈম, বা অপূর্বর কাছে যা। ‘

‘ আচ্ছা ওকে ‘ বর্ষা, রিমা।
‘ আল্লাহ হাফেজ এখন রাখি। ‘ বৃষ্টি।
_____
বাড়ি পুরো মাথায় উঠিয়ে নিয়েছিল। বৃষ্টিকে দেখতে ইচ্ছে করছে ওর বাড়িতে যাবে তো যাবেই। কাব্য, নাহিদ, অপূর্ব কেউ রাজি হয়নি। শেষে নাঈম কেই যেতে হলো, উপরের তিনজন এক্কেবারে বজ্জাত নাঈম আবার সহজ সরল বোনদের কথা ফেলতে পারে না। তাদের তিনজনের আসতে প্রায় অনেক রাতই হয়ে যায়। বেশি রাত হয়ে যায় বলে বৃষ্টির শাশুড়ী মা নাঈম কে যেতে দেন না। এত রাতে যাওয়া উচিত মনে করেন না এত জার্নি করে আসছে আবার যাবে বিশ্রাম নেবে না কেমন কথা, যেতে দেননি। তাই রাতে হালকা পাতলা কিছু খেয়ে শুতে চলে যায়। এত রাতে তো আর বোনদের সাথে গল্প করা বা আড্ডা দেওয়া যাবে না। তাই ওদেরকে রুমে পৌঁছে দিয়ে নিজের রুমে চলে আসে। রুমের মধ্যে রিমন ছিল এখন নেই, দরজা লাগানোর শব্দে কান থেকে ফোনটা নামিয়ে কল কেটে প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে ফেলে, নিজেকে স্বাভাবিক করে বেলকনি থেকে রুমে আসে। সামনে বৃষ্টি দাড়িয়ে ছিল ওকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘ এত লেট করলে কেনো? তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। সবাই খেয়ে দেয়ে রেস্ট নিচ্ছে, ওদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো? ‘
বৃষ্টি প্রতিত্তোরে মাথা উপর নিচ নাড়ালো। মুখে কিছু বলল না কেনো জানি ওর মনে হচ্ছে ও রিমনকে ফোনে কথা বলতে শুনেছে৷ সত্যিই কি কথা বলছিলো নাকি চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল ভাবছে আর কথা বললে তার উপস্থিতি টের পেয়ে কল কেটে কেনো দিবে?
‘ উফফ আমিই হয়তো অতিরিক্ত ভাবছি ‘ বৃষ্টি মনে মনে বলল।

রিমন তেমন আর কিছু বলল না, তবে তাকে দেখে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে। বৃষ্টি কয়েকবার কারণ জানতে চাইলে রিমন অফিসের কাজের বাহানা দিয়ে এড়িয়ে যায়।
সেরকমই কিছু একটা ভেবে বৃষ্টি বেডের এক সাইডে শুয়ে পরে। সোজা হয়ে শুয়ে বা হাত কপালের উপর ঠেকিয়ে ভাবছে, ‘ কি করবো তার শর্ত কি মেনে নেবো? আর যদি না মানি ও তো সবাইকে, না না সবাই জানতে পারলে কেলেংকারী হয়ে যাবে। তাহলে কি করবো আমি? বৃষ্টি কেও তো কিছু বলতে পারছি না। কি করা উচিত এমতাবস্থায় আমার? ওর শর্ত কি মেনে নেওয়া উচিত? ‘

দুশ্চিন্তায় মগ্ন হয়ে আখি জোড়া বন্ধ করে রেখেছে। তবে চোখে বিন্দু পরিমান ঘুম নেই।
________

পরদিন বিকালে ছাদে বসে আছে সবাই, দুইদিন পর একটা প্রোগ্রাম আছে, সেদিনের সন্ধ্যার আয়োজন নিয়ে সবাই একত্রে বসে আলোচনা করছে কিভাবে কি কি করবে। প্লেন করছে আরকি সবটাই বৃষ্টির বুদ্ধি আর সে জন্যই বর্ষা ও রিমাকে আসতে বলা। এদিকে সবাই মিলে প্লেন করল। ওইদিকে টেনশনে মাথা কাজ করছে না সে এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সে কি করবে বা তার কি করা উচিত।

দেখতে দেখতে দুইদিন পার হয়ে গেলো। দুইবোনের সাথে হাসি ঠাট্টায় দিন কাল ভালোই কাটে।
রোজকার মতো আজও রিমন অফিসের উদ্দেশ্য বের হয়েছে। হালকা সূর্য ডুবিডুবি ভাব তখন সবগুলো একসাথে কাজে লেগে পরল।

রাত প্রায় সাড়ে আটটা, পুরো বাড়ি জুড়ে নিস্তব্ধতা ও অন্ধকার ভোড় করেছে। বাহিরে বাইক থামার শব্দ হলে সবগুলো একে অপরকে চুপ হতে বলে, রিমন বাড়ির গেইটের সামনে এসে কলিংবেল চাপতে যাবে তখন খেয়াল করল বাড়ির সদর দরজা খোলা। তা দেখে ভ্রুকুটি কুঞ্চন করে ফেলল
মনে মনে বলতে লাগল, ‘ বাড়ি তে কি চোর ঢুকছে নাকি? এত নিস্তব্ধ কেনো বাড়ির কাউকে অস্ত্র দিয়ে আবার আঘাত করেনি তো? ‘
বলে ফোনের টর্চ লাইট টা অন করল। বাড়ির ভেতর ঢুকতেই সবগুলো একসাথে চিৎকার দিয়ে উঠল, ‘ হ্যাপি বার্থডে ‘

এমন সারপ্রাইজ পেয়ে হতভাগ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। হুট করে রহিমা হল রুমের বড় ঝুমুর ও দেয়ালের ছোটছোট লাইটগুলো জ্বালিয়ে দিলো । পুরো বাড়ি আবারও আলোয় আলোকিত হলো। খুব সুন্দর করে শুধু ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে হল রুম।

এখন সবটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সবার দিকে একে একে চোখ বুলাচ্ছে, বিস্মিত স্বরে বলল, ‘ এইসব কি? ‘

সবাই কোনো কিছু না বলে আবারও ‘ হ্যাপি বার্থডে ‘ বলে চেচালো।
রিমন পায়ে হেঁটে সবার সামনে দাঁড়ালে। রিমি বলে, ‘ এইসব কিছু বৃষ্টির প্লেন ছিল, সারপ্রাইজ কেমন দিলাম তোকে আমরা? ‘

করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল, মুখে টু শব্দটিও করল না। সোহান বলল, ‘ নে কেক টা কাট আমরা অনেক ক্লান্ত হয়ে পরেছি। রুমে গিয়ে একটু রেস্ট নেবো। ‘

রিমন কেক কাটার ছুড়িতে হাত দিলে বৃষ্টি চেচিয়ে বলে উঠে, ‘ নাহহ! ‘

বর্ষা, রিমা এক সাথে বলল, ‘ না কেনো? ‘

‘ আমার কিছু গেস্ট এখনও আসা বাকি তারা আসুক তারপর কেক কাটা হবে। ‘ বৃষ্টি বলল।

পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করার পরই চলে আসল বাকিরা। রিমনের সকল বন্ধু বান্ধব দের ইনভাইট করেছিলো। তাদের জন্যই অপেক্ষা করছিল।সবাই এসেই রিমনকে জড়িয়ে ধরে ও বার্থডে উইশ করে। সবার পরে আসল ডাক্তার নীল৷ সেও এসে একই কাজ করল। সবার উপস্থিতির পর রিমন কেক কাটলো একে একে সবাইকে খাইয়ে দেয়।

এরই মধ্যে রিমা ফোট করে বলে উঠল, ‘ আমাদের বৃষ্টি অসাধারণ গান করে। ‘

বাস হয়েই গেলো, সবাই মিলে বৃষ্টি কে ঝেপে ধরেছে একটা গান করার জন্য বেচারি প্রথমত কয়েকবার না করেছে। পরে সবার জড়াজড়িতে রাজি হয়ে যায়। রিমা আছেই তো গিটার বাজানোর জন্য টেনশন কিসের। রিমা গিটারে সুর তুলছে, বৃষ্টি গান গাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে,

🌸 🌸 কোন কানুনের ফুল গো তুমি
কোন আকাশের চাঁদ গো তুমি
কোন রাখালের মধুর বাঁশির ধুন
ওওও জ্বালাইলা আগুন বুকে জ্বালাইলা আগুন

কোন ফাগুনের কোকিল তুমি
কোন নয়নের কাজল তুমি
ভোমর হয়ে করো যে গুনগুন
ওওও জ্বালাইলা আগুন বুকে জ্বালাইলা আগুন

ইচ্ছা করে তোমায় ধরে বন্ধি করে রাখি
একটিবারে হওনা তুমি আমার খাঁচার পাখি

জীবন দিলাম যৌবন দিলাম নাই যে কিছু বাকি
দিবানিশি তোমার স্বপন আমার মনে আঁকি

যেদিন তোমায় প্রথম দেখি সেদিন থেকেই আমি একি
তোমার প্রেমে হয়ে গেলাম খুন
ও ও ও জ্বালাইলা আগুন বুকে জ্বালাইলা আগুন🌸

গান শেষে সবাই প্রসংশায় পঞ্চমুখ, খুবই ভালো গান করে বলে সবাই-ই প্রসংশা করে।

তারই মধ্যে হুট করে অভ্র দাড়িয়ে এনাউন্সমেন্ট করে বলে উঠল, ‘ আমি এই চার দেয়াল ও দেয়ালের মধ্যে অবস্থান করা প্রত্যেকটি মানুষকে সাক্ষী রেখে বলছি আমি তোমাকে ভালোবাসি বর্ষা তুমি কি আমার জীবন সঙ্গিনী হবে? ‘

হুট করে এমনভাবে প্রপোজ করে বসবে অভ্র বর্ষার কল্পনার বাহিরে, ইতস্ততভাবে তাকিয়ে আছে।
উপস্থিত সবাই একবার অভ্রর দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার বর্ষা’র দিকে তাকাচ্ছে।
ভ্রুকুটি কুঞ্চন করে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো রিমন, ‘ তোর না বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে এখন আবার বর্ষাকে প্রপোজ করছিস? ‘

প্রত্যত্তরে অভ্র নিজের চুলে হাত বুলিয়ে চুল ঠিক করছে। জেনো ও কোনো কিছু শুনতেই পায়নি। বর্ষা’র কোনো উত্তর না-পেয়ে আবারও প্রশ্ন ছুড়ল, ‘ কি হলো বলো হবে কি না? হ্যাঁ বা না?’

অতিরিক্ত নার্ভাস হয়ে গেছে বারবার শুকনো ঢোক গিলছে কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। প্রপোজ করলো তো করলো আর কয়েক দিন আগে কেনো করল না। মনে মনে ভাবছে আর অভ্রর গোষ্ঠী উদ্ধার করছে। বর্ষার নিরবতা ভেঙে ফেলতে বৃষ্টি টেডি স্টাইল ভাব নিয়ে বলল, ‘ নিজের হবু বরের প্রপোজাল এক্সেপ্ট করতে এত কিসের দুশ্চিন্তা করছিস? ‘

বৃষ্টির মুখের বাণী শুনে সকলে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল, বর্ষা অস্ফুটে হয়ে বললো, ‘ মানে? কি সব বলছিস ‘

বৃষ্টি হাসতে হাসতে বলল, ‘ যা শুনেছিস ঠিক শুনেছিস। অভ্রর সাথেই তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে। ‘

বর্ষা রিমা হতভম্ব হয়ে প্রশ্ন ছুড়ল, ‘ মানে তুই জানতিস অথচ আমাদের বলিসনি? ‘

বৃষ্টি মুখের সামনে হাত দিয়ে হাই তুলে বলল, ‘ গল্পের গোটা টাই আমি, তোদের বলতাম কেন মরতে? ‘

রিমা, ‘ গোটা টা তুই ছিলি মানে পহেলিয়া কেনো পাকাচ্ছিস সোজাসাপ্টা বল। ‘

বৃষ্টি হাত দিয়ে ঘাড়ের চুলগুলো সড়াতে সড়াতে বলল, ‘ তোর বিয়ের ঘটক তো আমি, ওইদিন অভ্র আমাকে সব বলেছিল ও যে তোকে এত্তো এত্তো ভালোবাসে। তো সেই অনুযায়ী আমি বাড়িতে কথা বলি তাদেরও অভ্রকে ছেলে হিসাবে পছন্দ ছিলো। তাই তারাও দ্বিমত পেশ করেনি। তারপরেই দুই ফ্যামিলি বসে বিয়ে পাকা করে। আর এত কিছু শুধু তোর জন্যই করা। ‘

রিমা মাঝখানে আগ বাড়িয়ে বলল, ‘ ওর জন্য করা মানে কিভাবে? ‘

বৃষ্টি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল, ‘ আমি বর্ষার চোখে অভ্রর জন্য অনূভুতি দেখেছি যা তুই দেখিসনি। আমি জানি বর্ষা ও অভ্র কে ভালোবাসে শুধু বলতেই পারে না। আর ওইদিন বিয়ে ঠিক হয়েছিল বলে বর্ষা কাঁদেনি কান্না করার মূল কারণ টাই ছিল অভ্রর প্রতি ওর লুকানো অনূভুতি যা ও প্রকাশ করতে পারেনি। তাই আমি তোদের এখানে চলে আসতে বলেছিলাম এতে ওরা দু’জন একটু আলাদা সময় পেতো৷ ‘

শেষের কথাটা বলে চোখ পাকিয়ে অন্য দিকে তাকালো আর বলল, ‘ এই বার তো প্রপোজাল এক্সেপ্ট কর। ‘

বর্ষা’র চোখ ছলছল করছে উঠে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি কে জড়িয়ে ধরে গালে কপালে চুমু দিয়ে দেয়।
তা দেখে রিমন বলল, ‘ শেষ কইরা দিলো রে আমার বউটা রে ‘

রিমনের কথায় সবাই হো হো করে হেঁসে দেয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সে প্রপোজালে রাজি হয়ে যায়। আরও কিছুক্ষণ আনন্দ উল্লাসে মেতে থাকে সবাই। বর্ষা’র এখন বিয়ে তে কোনো আপত্তি নেই।
রাতে সবাই খাওয়া দাওয়া এক সাথে করে।
বিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার জন্য সদর দরজার সামনে উপস্থিত হয়। ডাক্তার নীল, ওদের দু’জন কে সাইডে নিয়ে বলে, ‘ আমাকে কয়েক মাসের জন্য ইউরোপ যেতে হবে। জানি না কবে ফিরবো ততদিনের জন্য বিদায়। ‘

নীল চলে যাবে শুনে বৃষ্টির মন খারাপ হয়ে যায়। আপত্তিকর স্বরে বলল, ‘ না গেলে হয় না? ‘

ডাক্তার নীল বলল, ‘ না রে যেতেই হবে, কয়েক মাসেরই তো ব্যাপার দেখতে দেখতে চলে যাবে। ‘

ডাক্তার নীলকে বিদায় জানানোর জন্য রিমন বাইরে অব্ধি পৌঁছে দিয়ে আসে। অভ্র বর্ষা’র সাথে আলাদা কিছু কথা বলে চলে যায়।
_______
বর্ষা ও রিমা, বৃষ্টির হাতে হাতে কিচেনে কাজ করছে তিনজনে মিলে নানান গল্প করছে। রহিমা আপত্তি করেছিল সে থাকতে কেনো উনারা লাজ করবে? উনারা দুজন তো এই বাড়ির মেহমান। তবে রহিমা আপার কোনো কথাই শুনেনি বৃষ্টি। উল্টো বলল, ‘ রহিমা আপা আপনি তো সারাদিন কত কাজ করেন আপনার ও তো একটু বিশ্রাম নিতে মন চায়। আজ আপনার ছুটি রুমে গিয়ে বিশ্রাম নেন আর আমাদের তিন বোনকে গল্প ও কাজ করতে ছেড়ে দেন। রহিমা বৃষ্টির অনূভুতি বুঝলো। বোনদের সাথে কাজ করতে করতে সময় কাটাতে চায় সেজন্য সেও চলে যায়।
এতগুলো মানুষের জন্য খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল থালাবাসন ও তো আর কম এ্যটো হয়নি তিনজনে মিলে কাজ করছে বলতে সেগুলো ধুতো করছে।

কাজকাম শেষ করে কিচেনের লাইট অফ করে বর্ষা রিমার রুমে চলে যায়। আজ রাত ওদের সাথেই থাকবে আগেই রিমনকে বলেছিল। সেও আপত্তি জানায়নি।

ঠিক বিয়ের আগের মতো তিন বোন একসাথে ঘুমাবে কতদিন পর। একটা অন্য রকম অনূভুতি বর্ষা বৃষ্টি কে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু দিয়ে বলে, ‘ একমাত্র তুই আমাদের মনের কথা বুঝিস, তুই চলে আসছিস পর থেকে বাড়িতে আর ভালো লাগে না। কেমন জানি ফাঁকা ফাঁকা লাগে। দিনই কাটতে চায় না। ‘
রিমাও বৃষ্টির উপর এক পা উঠিয়ে অভিমানী স্বরে বলল, ‘ ওর মনের কথা বুঝে ওর তো একটা হিল্লে করে দিলি এবার মুখ তুলে আমার দিকেও দেখ, আমার জন্য ও একটা ব্যবস্থা কর। ‘

বৃষ্টি রিমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, ‘ তোর কোনো পছন্দের মানুষ আছে? ‘

রিমা দু’পাশে দু’বার মাথা নাড়ালো মানে তার পছন্দের কেউ নেই।

বর্ষা রিমার হাতের কব্জির উপর থাপ্পড় দিয়ে বলে, ‘ তোর তো ক্রাশের অভাব নেই যাকে দেখিস তাকেই তোর ভাল্লাগে ‘

রিমা বলল, ‘ ভালো লাগা আর ভালোবাসা এক না বুঝলি। ‘

বর্ষা উঠে বসে মাথার বালিশ নিয়ে রিমার গায়ে এক বারি দিয়ে বলল, ‘ তোর চোখ নষ্ট আর এখন আমাকে জ্ঞান দিচ্ছিস? ‘

রিমা লাফিয়ে উঠে পেছন থেকে কোলবালিশ নিয়ে উল্টো ঢিল মারল, কোলবালিশ একটু ভাড়ি ছিল তাই সেটা গিয়ে পরল বৃষ্টির উপরে সে রেগে গিয়ে উঠে বসল। এবার তিনজনে তিনজনকে বালিশ ছুঁড়ে মারছে আর শব্দ করে হাসছে৷ দরজা আটকানো থাকলে রুমের শব্দ বেশিরভাগ বাহিরে যায় না। তাই এদের তুমুলঝগড়া মারামারি ঝগড়াঝাটির আওয়াজ বাহিরে যাচ্ছে না। এক পর্যায়ে তিনজনে ক্লান্ত হয়ে বিছানার উপর শুয়ে পরল। একে অপরের হাত নিজেদের হাতের মধ্যে মুঠি বন্ধ করে নিয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসছে।
___________

রুমের মধ্যে পায়চারি করছে কোনো কিছুতেই শান্তি মিলছে না। টি-টেবিলের উপর থেকে পানির জগ টা নিয়ে গ্লাসের মধ্যে পানি ঢালল। এক গ্লাস জল এক ঢোকে খেয়ে নিলো। রুমের মধ্যে অস্বস্তি অনুভব হচ্ছে, তাই বাহিরের তাজা হাওয়া খেয়ে অন্তর টাকে শীতল করার জন্য বেলকনিতে চলে আসল। বাহিরের শীতল ও ঠান্ডা হাওয়ায় নিজেকে উজাড় করে দিলো। কিছুক্ষণের মধ্যে মনে শান্তি চলে আসল।
মুড নরমাল হল হঠাৎ ফোনে কল আসল। ফোনটা হাতে নিয়ে ফোনের স্কিনে নাম্বার দেখে কপাল ভাজ করে ভ্রু কুঁচকালো। ফোনের নাম্বার টা দেখেই মুখের মধ্যে এক রাশ বিরক্ত প্রকাশ পেলো। ইচ্ছে করছে ফোন টা ছুঁড়ে বেলকনি থেকে নিচে ফেলে দিতে কিন্তু সেটা সে করতে পারবে না।
ফোনটা কপালের সাথে ঠেকিয়ে রেখে দাঁড়ায় আছে। একবার কল কেটে আবারও কল আসলে দ্বিতীয় বার কল রিসিভ করে। এবারও ফোনের অপরপাশ থেকে একই স্বুর ও একই কথা ভেসে আসছে। কথাগুলো বলে কল কেটে দিলো। ফোনটা হাতে নিয়েই কপালে হাত দিয়ে ফ্লোরে বসে পরল।
নিজেই নিজের সর্বনাশের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গলার মধ্যে একটা কাটা বিঁধেছে না পারছে তা গিলতে আর না পারছে না উপড়ে ফেলতে, নিজের উপর একরাশ বিরক্তি নিয়ে দেয়ালের উপর সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে পাঞ্চ মারল তারপরেও রাগ কমলো না। কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না সবকিছুই জেনো তার হাতের বাহিরে চলে গেছে।

#চলবে?

‘ কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ ‘

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here