গল্পের_নাম_তুমি_আসবে_বলে পর্বঃ১

এই বৃষ্টিময় বিকেলে টিউশনি শেষ করে বাসায় পৌছালাম কাকভেজা হয়ে।বোরকা ভিজে চুপচুপ করছে ছাতা নিতে ভুলে গিয়েছিলাম মা দেখলে সর্বনাশ হয়ে যাবে পিঠে যে কয়টা পরবে তা জানানেই। বাসার গেটের সামনে দাড়িয়ে এসব ভাবছি আর বোরকার পানি গুলো হাত দিয়ে মুচরিয়ে বের করছি।দারোয়ান চাচা আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।চাচাকে দেখে ৩২টা দাঁত বের করে হাসি দিয়ে বললাম,
~চাচা আজ বৃষ্টিটা কী হলো?তাই না।
দারোয়ান চাচা তার পান খাওয়া লাল দাঁত গুলো বের করে বললেন,
~আর কইয়ো না মা যে হারে বৃষ্টি হইতাসে ঢাকা শহর ডুইবা ঝাইবো।
আমি বললাম,
~একদম ঠিক বলেছেন চাচা।
চাচা বললো,
~তুমি এই অবস্থায় ভিতরে যাইবা কেমনে? তোমাগো বাইত তো মেহমান আইসে।
আমার মাথায় আরেকটা বাঁশ পরলো হায় হায় চাচা কী বলে বাসায় বলে মেহমান আসছে মা আজ আমাকে ছাড়বে না।আমি চাচাকে বিদায় জানিয়ে সিড়ি বেয়ে উঠতে লাগলাম মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করে নিলাম আজ আর রক্ষে নেই। মা আজ কাঁচা খেয়ে ফেলবে এইটাতো একদম সিউর এসব ভাবছি তখনই পিছন থেকে কেউ বলে উঠলো,
~আপনি কী সারাদিন এভাবেই দাড়িয়ে থাকবেন?একে তো বাসার সিড়ি গুলো ছোট ছোট তার উপর আপনার মতো একটা মানুষ মাঝপথে দাড়িয়ে থাকলে যাবো কীভাবে?
এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে চুপ হয়ে যায় পুরুষালি কন্ঠটি।তার কথা শুনে রাগে শরীরের পশম দাড়িয়ে গেলো এই মানুষটিকে শায়েস্তা করা দরকার তাই আমি পিছন ফিরে যেই না কিছু বলতে যাবো তার চেহারা দেখে আমার কথা বন্ধ হয়ে গেলো। আমি শুকনো ঢোক গিলে বললাম,
~ফায়াজ ভাই আপনি কেমন আছেন?
ফায়াজ ভাই আমার দিকে ভ্রুকুচকে তাকিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বললো,
~ফিহা তোর এ অবস্থা কেন?ছাতা কী বাসায় সাজিয়ে রেখে এসেছিস।
ফায়াজ মানুষটা এরকমই সবসময় উল্টো কথা যে কথা স্বাভাবিক ভাবে বলা যায় তা সে উল্টেপাল্টে বলবেই।হয়তো এটা তার রোগ নাহলে এভাবে কথা বলবে কেন?
আমার ভাবনার মাঝে ফায়াজ ভাই বললো,
~যদি ভাবনা শেষ হয় তাহলে উপরে যাওয়া যাক খালামণি তোর চিন্তা করতে করতে শেষ।
বলেই আমার পাশ কাটিয়ে চলে উপরে উঠা শুরু করে আমিও একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উপরে হাঁটা শুরু করলাম মা তো আজ ছাড়বে না তাই আর ভেবে লাভ নেই।সিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে নিজের পরিচয়টা দিয়ে নেই

আমার নাম ফিহা ইসলাম এইবার ভার্সিটির গন্ডিতে পা রেখেছি নিজের হাত খরচ চালানের জন্য ২টো টিউশনি করি। আমার বাবার নাম সৈয়দ ইসলাম কাপড়ের ব্যবসা তার
আর মায়ের নাম রাহেলা বেগম সে গৃহিনী। আমার একটামাত্র বড় ভাই আছে তার নাম আবীর ইসলাম এই বার নতুন চাকরিতে জয়েন করেছে।সব মিলিয়ে আমরা ভালোই আছি হ্যাপি ফ্যামিলি
আর একটু আগে যার সাথে দেখা হলো সে হচ্ছে ফায়াজ হোসেন আমার খালামণির ছোট পুত্র। খালামণির দুটো ছেলে আছে বড়টার নাম ফায়েজ হোসেন তার কয়েকদিন পর বিয়ে আর ফায়াজ হোসেন সে চাকরির খোজে আছে আমার বিশ্বাস সে পেয়ে যাবে অনেক বিচক্ষন বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ সে।

ফ্যাল্টের সামনে পৌছে দেখি দরজা খোলা হয়তো ফায়াজ ভাই ভিতরে চলে যাওয়ার পর আমার জন্য দরজা খুলে রেখেছেন।আমি ভিতরে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছি ভিতরে মা আছে নাকি?তখনই মা শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে বের হয়ে বললেন,
~আসেন নবাবজাদি আপনার জন্যই অপেক্ষা করছি।ভিজে এসেছেন খুব ভালো কথা এখন আর বাসার ভিতর ঢুকতে পারবেন না।
আমি ঠোঁট উল্টে বললাম,
~মা,এবারের মতো মাফ করে দেও আর কখনো করবো না।
মা নাক ফুলিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই খালামণি বের হয়ে আসলো রুম থেকে আমাকে দেখে বললো,
~ফিহা এই কী অবস্থা মা?ভিতরে আয়
খালামণির কথার উপর কোনোদিন মা কথা বলা তো দূর টু শব্দও করবে না আমি মনে মনে ডিসকো ড্যান্স করতে করতে ভিতরে ডুকলাম।খালামণি বললো,
~যা রুমে যা চেঞ্জ করে নে ঠান্ডা লেগে যাবে সোনা।
আমি একবার মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি সে আমার দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে আছে মাকে কোনো পাত্তা না দিয়ে হুরহুর করে রুমে চলে গেলাম।জামা নিয়ে চলে গেলাম শাওয়ার নিতে আজ খালামণির জন্য বেঁচে গেলাম আল্লাহ তোমার দরবারে শুকরিয়া।

অন্যদিকে ফায়াজ ফিহাদের ছাদে দাড়িয়ে কিছুক্ষন আগের কথা ভেবে মিটমিট করে হাসছে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি তার চুলগুলোকে ভিজিয়ে দিচ্ছে।অফ হোয়াইট কালারের শার্টটা সেই বৃষ্টির পানিতে ভিজে যাচ্ছে।
প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে ফোন খোজার চেষ্টা করতেই মনে পরলে ফোন তো নিচে রেখে এসেছে।তাই সে দ্রুত পায়ে নিচে নেমে চুল গুলো ঠিক করে বাসার ভিতর চলে গেলো মা আর খালামণিকে দেখে বললো,
~তোমরা কী আমার ফোনটা দেখেছো।
ফিহার মা বললো,
~ফায়েজ তোর মোবাইলটা ফিহার ঘরে রেখেছি।
ফায়েজ আর দেরি না করে ফিহার রুমের দিকে পা বাড়ালো

শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল ঝারছি তখনই কেউ ঘরের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতে নিলো। আমি টাওয়াল বিছানায় রেখে উড়নাটা শরীরে জড়িয়ে নিলাম দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করলো ফায়াজ ভাই তাকে দেখে ভয় পেয়ে বললাম,
~ভাইয়া আপনি?
ফায়াজ ভাই শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বললো,
~দেখতো আমার ফোনটা কোথায়?
আমি বললাম,
~হয়তো ওয়ার্ডবের উপরে।
ফায়াজ ভাই ওয়ার্ডবের উপর থেকে মোবাইল নিয়ে বললো,
~চুল ভালো মতো মুছে ফেলিস ঠান্ডা লাগলে খালামণিকে বলবো লাথি মেরে বাসা থেকে বের করে দিতে।
কথা শেষ করেই সে চলে গেলো দরজাটা হালকা ভেজিয়ে।ফায়াজ ভাই যেতেই তাকে মুখ ভেংচি কেটে মাথা মুছতে শুরু করলাম

দুপুরের খাবারের পর আমি, মা,খালামণি বসে বসে কথা বলছি।ফায়াজ ভাই মোবাইলে ব্যস্ত কিন্তু আমার কথায় ভুল ধরতে তার কোনো ভুল হচ্ছে না।
খালামণি মাকে বললো,
~শোন ফিহাকে ফায়েজের বিয়ের জন্য আমাদের বাসায় নিয়ে যাবো।
মা বললো,
~ফিহার বাবাকে বলে নিয়ে যাও আমি বাপু কিছু জানি না।মেয়েকে তো কোথাও থাকতে দেয়না ওর দাদীর কাছেও যেতে দেয়না
খালামণি বললো,
~দেখছি ব্যাপারটা।ফিহা তুই যাবি তো?
আমি বললাম,
~রুপা আপুরাও তো আসবে তাই না?
রুপা আপু হচ্ছে ফায়াজ ভাইয়ের চাচাতো বোন কিন্তু ফায়াজ ভাই তাকে একটুও পছন্দ করে না।
খালমণি কিছু বলার আগেই ফায়াজ ভাই বললো,
~রুপার সাথে তোর এতো কী?যদি দেখেছি তোকে ওর
সাথে তোর খবর আছে
ফায়াজ ভাইয়ের কথায় মুখ ফুলিয়ে বসে রইলাম খালামণি ফায়াজ ভাইকে ধমক দিয়ে বললেন,
~একদম চেচামেচি করবি না।
ফায়াজ ভাই আমার দিকে তাকিয়ে ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো

সন্ধ্যার সময় ভাইয়া, বাবা,ফায়েজ ভাই চলে আসলো।আমি ভাবির সাথে ফায়েজ ভাইয়ের ফোন দিয়ে কথা বললাম ভাবির নাম প্রিয়া।সে অনেক মিষ্টি খালামণিই তাকে পছন্দ করেছে অনেকক্ষন কথা হলো ভাবির সাথে।তারপর সবাই একসাথে বসে ফায়েজ ভাইয়ের বিয়ে নিয়ে আলোচনা করলো
ভালো কথা আমার খালু নেই সে ২বছর আগেই মারা গিয়েছে।সেদিন ফায়াজ ভাই সারাাদিন খালামণির কোলে মাথা রেখে শুয়ে ছিল
বিয়ের আলোচনা শেষ করে আবীর ভাই বললো,
~ফিহা সবার জন্য চা বানা তো।এই বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় চা খাওয়ার মজাই আলাদা।
আমি মুখ বাকিয়ে বললাম,
~পারবো না এভাবেই বৃষ্টিতে ভিজে মাথা ভার হয়ে আছে।
আবীর ভাই বললো,
~মাকে বলবো তোর মাথা ভার হয়ে আছে?
আমি তাড়াতাড়ি উঠে দাড়িয়ে বললাম,
~এখনই চা বানিয়ে আনছি।
আমি হাঁটা ধরলাম রান্নাঘরে যাওয়ার জন্য চুলোয় চায়ের পানি চরিয়ে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকাতেই দেখি বৃষ্টির পরে সন্ধ্যার আকাশটা দেখতে কতোটা সুন্দর লাগছে একটু লাল আভাও ফুটে উঠেছে ইশশ একবার ছাদে যদি যেতে পারতাম নাহ মা জানতে পারলে শরীরের হাড্ডি আস্তো রাখবে না।
চা তৈরি করে সবাইকে চা দিয়ে যখন নিজের কাপটা নিতে যাবো তখনই বাবা বললো,

~ফিহা,তোর ফায়াজ ভাই ছাদে গেছে তুই ওর চা টা ওখানেই দিয়ে আয়।
আমি বললাম,
~আবীর ভাইকে বলো মা বকবে এখন ছাদে গেলে।
মা বললো,
~হয়েছে ঢং যেমন মায়ের কথা সব মেনে চলে যা দিয়ে সোজা চলে আসবি।
আমি চায়ের কাপ নিয়ে সিড়ি বেয়ে ছাদে চলে গেলাম এ বাড়িটি ৩ তলা বিশিষ্ট তাই সিড়ি উঠতে কষ্ট হয় না।আমি ছাদে গিয়ে দেখি ফায়াজ ভাই ফোনে কথা বলছেন আর তার সামনের চুলগুলো বারবার ঠিক করছেন ভাবছি মানুষটা দেখতে যতোটা সুন্দর ব্যবহার তার থেকেও জঘন্য। আমার ভাবনায় ছেদ পরলো যখন ফায়াজ ভাই বললো,
~চা নিয়ে কী মডেলিং করবি?
আমি তার কথা শুনে বললাম,
~তোমার জন্য এনেছি।
ফায়াজ ভাই ফোন কানে দিতে দিতে বললো,
~আমার হাতে দিয়ে চলে যা।এক সেকেন্ডও যাতো তোকে ছাদে না দেখি
আমি তার হাতে চা দিয়ে ভো দৌড় কে থাকে এই উজবুকের সাথে।

রাতের খাবারের পর সবাই ঘুমাতে চলে গেলো বলে রাখা ভালো আমাদের তিনটি রুম একটাতে আমি আর খালামণি আরেকটাতে ভাইয়া ফায়াজ আর ফায়েজ ভাই আরেকটাতে মা আর বাবা।খালামণিরা আগামীকাল চলে যাবে বাবা আমাকে যাওয়ার পারমিশন দিয়েছে এতে সবাই খুশি হলোও ফায়াজ ভাইয়ের মুখ আমাবস্যার মতো কালোই ছিল।
বৃষ্টিতে ভিজার ফলে আমার সর্দি লেগে গেছে একটু পর পর কাশি দিচ্ছি খালামণির ঘুম আবার অনেক গাঢ়ো সহজে ভাঙ্গে না তাই আমি নিশ্চিন্তে আছি হঠাৎ আমার ঘরের দরজায় টোকা পরলো

গল্পের_নাম_তুমি_আসবে_বলে পর্বঃ১
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন?ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰। Happy Reading🤗🤗)

(চলে আসলাম আবার আপনাদের মাঝে নতুন গল্প নিয়ে আপনাদের রেসপন্স পেলে পরের পর্ব দেওয়া হবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here